আলো_আধারের_খেলা পর্ব_১৩

0
290

আলো_আধারের_খেলা
পর্ব_১৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

রুয়েলের চরিত্র আগে একদম ভালো ছিলো না।খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সাথে রাত দিন আড্ডা দিয়ে বেড়াতো।এক সেকেন্ড সে বাসায় থাকতো না।আর প্রতিদিন নেশা করে বাসায় ফিরতো।সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের বাসায় একটা মেয়ে আগে কাজ করতো।রুয়েল সেই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো।তুমিই বলো এটা কি কখনো আমরা মেনে নিতে পারি?কাজের মেয়ে নাকি হবে এই বাড়ির বউ!আমরা কেউই রাজি হয় নি।
এজন্য মেয়েটাকেই আর কাজে রাখি নি আমরা।ওকে কাজ থেকে বের করে দেই।রুয়েল তখন ওই মেয়েটার বাড়ি পর্যন্ত যেতো।ওই মেয়েটার বাবা মা কিছুই বলতো না।তোমার ভাই যখন শুনতে পেলো কথাটা তিনি তখন রুয়েলকে বারণ করে দিলেন।তবুও রুয়েল শোনে নি তোমার ভাই এর কথা। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমরা মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেই।রুয়েল সেজন্য অনেক পাগলামি করেছিলো।এক পর্যায়ে সে আত্নহত্যার হুমকি পর্যন্ত দেয় আমাদের।ওকে আমরা বাসা থেকে বের হতে দেই নি।আমরা খুব ভয়ের মধ্যে পড়েছিলাম ওকে নিয়ে।

তখন তোমার ভাই সিদ্ধান্ত নিলো রুয়েলকে আর দেশেই রাখবে না।তাকে ওনার সাথে সিংগাপুর নিয়ে যাবে।দুইজন মিলে একসাথে ব্যবসা করবে।এজন্যই ওকে সিংগাপুর নিয়ে গেছে তোমার ভাই।তবে রুয়েল কিছুতেই যেতে চাই নি।তোমার ভাই মিথ্যা কথা বলেছে,যে উনি ভীষণ অসুস্থ, ব্যবসা বানিজ্য একা সামলাতে পারছেন না।সেই কথা শুনে তখন যেতে রাজি হয়েছে রুয়েল।সে তো এস,এস,সি পাসও করে নি।পড়াশোনায় একদম কাঁচা ছিলো। তোমার ভাই জানতো একে দিয়ে পড়াশোনা হবে না,আর এস,এস,সি পরীক্ষা দিলে নির্ঘাত ফেল করবে,এই ভেবেই ওকে তাড়াতাড়ি করে সিংগাপুর নিয়ে গেছে।তাহলে ভাবো তোমার ভাই যদি ওকে বিদেশ না নিয়ে যেতো তাহলে ওর অবস্থান টা কোথায় যেতো?তোমার ভাই সবসময় রুয়েলের ভালোই চেয়েছে।আজও ওর ভালো চায়।

ঊর্মির কথাগুলো শুনে জান্নাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।তবে সে সেটা ঊর্মিকে বুঝতে দিলো না।জান্নাত নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো, ভাবি উনি আগে কেমন ছিলেন সেসব কথা কেনো বলছেন আমাকে?আমি ওনার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাই না।প্লিজ আর কখনো বলবেন না এসব।

ঊর্মি তখন জান্নাতের হাত ধরে বললো,কি বলছো এসব?অতীতের কথা না শুনলে তুমি বুঝবে কি করে সে কেমন ছেলে?অতীত থেকেই তো মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত।তাছাড়া তুমি আমার বোনের মতো।আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক।সেজন্যই বলছি রুয়েলের দিকে একটু নজরদারি করিও।ও কোথায় যায়?কার সাথে থাকে সব তোমাকে খোঁজ নিতে হবে। তা না হলে ও জীবনেও ভালো হবে না।আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিদেশ যেতে বলো।তা না হলে দেশে থাকলে এমন রাত বিরাতে শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।

জান্নাত এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।সে তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, ভাবি আপনারা যখন জানেনই আপনার দেবর এমন একজন দুশ্চরিত্র ছেলে তাহলে আমার মতো মেয়ের সাথে কেনো বিয়ে দিলেন?আপনারা তো জানতেনই আমি কেমন?আমার সাথে তার তো কোনো দিক দিয়েই মেলে না।আমার বাবা মা তো এতো কিছু জানতো না।ওনারা তো রুয়েলের বাহ্যিক ব্যবহার দেখেই রাজি হয়েছে বিয়েতে।কিন্তু আপনারা কেনো আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করলেন।
অল্প বয়সী জান্নাত রুয়েলের এসব অতীত শুনে খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে গেলো।তার চোখের পানি কিছুতেই থামছে না।

ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,কেঁদো না জান্নাত।এসব তো আগের ঘটনা।এখন অবশ্য কোনো মেয়ের সাথে ওর রিলেশন নাই।দেশে থাকলে হয় তো এরকম হাজার টা মেয়ের সাথে ওঠাবসা করতো।সেজন্যই তোমার ভাই বুদ্ধি করে ওকে বিদেশ পার করেছে।আর তুমি তখন বললে না বিদেশ গিয়েও তো সে খারাপ হতে পারে?কিন্তু সে সুযোগ রুয়েল কিছুতেই পায় নি।তোমার ভাই সবসময় ওর সাথেই থাকতো।এখন যদিও সিংগাপুরে থাকেন না উনি তবুও ওখানকার সকল লোকের সাথে কথা হয় ফোনে।রুয়েল কখন কি করে সব খবর তোমার ভাই সাথে সাথে পেয়ে যায়।

ঊর্মির কথা শুনে জান্নাত আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।ঊর্মি তখন বললো,আমরা ভেবেছি তোমার মতো একটা ভদ্র মেয়েকে বিয়ে করলে সে হয় তো পরিবর্তন হবে।রাত বিরাতে ঘোরাঘুরি বন্ধ করবে।কিন্তু যার যে স্বভাব,স্বভাব যে কখনো পরিবর্তন হয় না তা আমরা বুঝতে পারি নি।তোমার মতো একজন সুন্দরী বউ পেয়েও সে আর ভালো হলো না।এতো রাতেও বাহিরে ঘোরাঘুরি করছে।শুনেছো কখনো কোনো ছেলে বিয়ে করলে এভাবে নতুন বউ রেখে রাত বিরাতে ঘোরাঘুরি করে?তাহলে ভাবো কেমন ছেলে সে?

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।ঊর্মি তখন বললো নবাবজাদা মনে হয় এসে গেছে।এখন বাজে রাত ১২ টা।আর উনি এতোক্ষণে আসলেন বাসায়।এই বলে ঊর্মি তার রুমে চলে গেলো।আর জান্নাতকে বললো,আমি যে এসব বললাম তোমাকে খবরদার রুয়েলকে যেনো বলো না আমার কথা।আমি কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই বললাম।রুয়েলকে বললে সে কখনোই এসব স্বীকার করবে না।কেউ কি কখনো নিজের অপরাধ স্বীকার করে?

এদিকে কলিং বেলের শব্দ শুনে জান্নাতের শাশুড়ী উঠে এলো।আর জান্নাত কে দেখে বললো, তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছো তবুও কেনো খুলছো না দরজাটা?রুয়েল হয় তো এসেছে।এই বলে জান্নাতের শাশুড়ী নিজেই খুলতে খেলো দরজা।

এদিকে জান্নাত কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ঘরে চলে গেলো।তার কিছু ভালো লাগছে না।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না রুয়েল এতো খারাপ!ঊর্মি কি সত্যি বলছে এসব?জান্নাত ভাবতে পারছে না আর।

দুই হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রুয়েল।

জান্নাত রুয়েলকে দেখামাত্র বললো, আসসালামু আলাইকুম।
রুয়েল জান্নাতের কাছে তখন এগিয়ে এসে বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কিন্তু জান্নাত রুয়েলের কাছ থেকে সরে যেতে ধরলো।রুয়েল তখন তার হাতের ব্যাগ দুইটি টেবিলের উপর রেখে জান্নাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,কি হলো জান্নাত?আমার কাছ থেকে সরে গেলেন কেনো?
জান্নাত তখন বললো, আপনার জন্য খাবার রেডি করতে যাচ্ছি।খাবার টেবিলে দেবো না রুমে আনবো?

–আপনি খেয়েছেন?

–না।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,নিশ্চয় আমার জন্য অপেক্ষা করছেন?আমি খায় নি দেখে আপনিও না খেয়ে বসে আছেন।কিন্তু এই কাজ আর কখনোই করবেন না।আমি কখন আসি না আসি তার ঠিক নেই।সেজন্য কি আপনি এভাবে না খেয়ে বসে থাকবেন?কাল থেকে কখনোই আর আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না।যখন ক্ষুধা লাগবে তখনি খেয়ে নিবেন।
বুঝেছেন?

জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো জ্বি।

রুয়েল হঠাৎ জান্নাতের হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বললো,এখানে কিছু খাবার আছে জান্নাত।একটা প্লেট এনে এগুলো তাড়াতাড়ি সার্ভ করুন।আপনি আর আমি একসাথে আজ রুমের মধ্যেই খাবো।

জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, কি দরকার ছিলো এসব আনার?বাসার খাবার গুলো এখন কে খাবে?

রুয়েল তখন বললো,আসলে আমার বন্ধু চঞ্চল আজ একটা পার্টি দিয়েছিলো।যদি সেখানে না যেতাম ও ভীষণ মন খারাপ করতো,এমনিতেই সবাইকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি তারজন্য সবাই খুবই আপসেট।সেজন্য বাধ্য হয়ে গিয়েছিলাম।আপনাকে বলি নি,কারণ বাসার কেউ জানে না পার্টির কথা।আসলে আমার পরিবারের কেউ চায় না আমি এসব বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেই।কিন্তু তারা আমার বাল্যকালের বন্ধু।কিভাবে ভুলি তাদের?পার্টিতে অনেক খাবারের আয়োজন করা হয়েছে ।কিন্তু আমি কিছুই মুখে দেই নি।আমি জানি আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন।আপনাকে রেখে কিছুতেই খেতে পারি নি।
চঞ্চল খেয়াল করেছে ব্যাপার টা।সেজন্য সে খাবার প্যাকেট করে দিয়েছে।শুধু আমার জন্য না, আপনার জন্যও দিয়েছে।বন্ধুরা এ নিয়ে খুব মজা শুরু করেছে।আমি নাকি এক দিনেই বউ পাগল হয়ে গেছি।আপনারও কি তাই মনে হয়?আসলেই কি আমি বউ পাগল?

জান্নাত কোনো উত্তর দিলো না।সে নিচ মুখ হলো রুয়েলের কথা শুনে।

রুয়েল তখন বললো,লজ্জা পাচ্ছেন আপনি?লজ্জা পেতে হবে না আর।যান তাড়াতাড়ি খাবারগুলো সার্ভ করুন।ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।

জান্নাত তখন বললো,সরি, মাফ করবেন আমাকে।আমি ওসব পার্টির জিনিস কিছুতেই খাবো না।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, কেনো?কেনো খাবেন না?

–এমনি।

রুয়েল এতোক্ষণে জান্নাতের দিকে ভালো করে তাকালো।আর জান্নাতের মুখ টি উপরে তুলে বললো,জান্নাত কি হয়েছে আপনার?আপনি আবার কেনো কেঁদেছেন?আপনার চোখ দুইটি এতো ফোলা ফোলা কেনো?

–কই কেঁদেছি?না কাঁদি নি আমি।

–আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।আপনি অনেক বেশি কেঁদেছেন।আপনি তো মিথ্যা কথা বলেন না জান্নাত।তাহলে কেনো মিথ্যা বলছেন?এই বলে রুয়েল জান্নাতকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।আর বললো, বাড়ির কথা মনে পড়ছে?আচ্ছা ঠিক আছে কাল আপনাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবো।কয়েকদিন গিয়ে থেকে আসবেন।তবুও এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ।

জান্নাত একটা কথাও বললো না।সে তো ঊর্মির কথা মনে করে কাঁদছে।জান্নাত একবার ভাবছে তার রুয়েলকে এসব বলা উচিত, আরেকবার ভাবছে না, এ নিয়ে আবার সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হবে।যদি ঊর্মির কথা সত্য হয় তখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট সে নিজেই পাবে।আর ঊর্মির কথা যদি মিথ্যা হয় তখন সংসারে হয় তো এ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হবে।তার চেয়ে বরং তার চুপ থাকাই ভালো।

জান্নাত তার চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হলো।সে রুয়েলকে কিছু বুঝতে দিলো না।সে তখন বললো, আসলে আমি শুনেছি পার্টিতে সবাই আজেবাজে জিনিস খায়।এসব আজেবাজে জিনিস খাওয়া একদম হারাম।আর সবচেয়ে বড় কথা পার্টিতে হই হুল্লোড় নাচ গান সবকিছু হয়।সেজন্য আমি এসব পার্টি থেকে আনা খাবার কিছুতেই খেতে চাচ্ছি না।

রুয়েল সেই কথা শুনে জোরে করে শব্দ করে হেসে উঠলো। আর বললো,আপনি এইজন্য কাঁদছেন?ভাবছেন আমিও এসব আজেবাজে জায়গায় গিয়েছি আর ওসব আজেবাজে জিনিস খেয়েছি?
সেজন্য পার্টি থেকে আনা খাবারও খাচ্ছেন না?

জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলের দিকে তাকালো।

রুয়েল তখন বললো,আপনি যে এতো বোকা সত্যি আমার জানা ছিলো না।এটা কি নাটক সিনেমার মতো সেই জমকালো পার্টি ভাবছেন?যেখানে মিউজিকের তালে তালে সবাই নাচবে।মোটেও তেমন পার্টি না।একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে আমাদের সকল বন্ধুদের ট্রিট দিয়েছে সে।চঞ্চলের গার্লফ্রেন্ড পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে।সেই খুশিতে বন্ধুদের জন্য এই পার্টির আয়োজন করেছে।আর কিছু না।এই পার্টিতে কোনো হারাম খাবার ছিলো না।বিশ্বাস করুন।

জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, সরি ভুল হয়ে গেছে আমার।আমি ভেবেছি আপনি ওসব আজেবাজে জায়গায় গিয়েছেন।আর ওখানকার খাবার আমার জন্য এনেছেন?

রুয়েল তখন জান্নাতের কপালে একটা কিস করলো।আর তার মুখ টি স্পর্শ করে বললো,আপনি আমার পবিত্র একজন বউ।আমি জানি আপনি এসব পছন্দ করেন না।তাহলে জেনেবুঝে কেনো সেসব জায়গার খাবার আনতে যাবো?আর কখনোই এসব কথা মনে আনবেন না জান্নাত।আপনি যেসব জিনিস পছন্দ করেন না,আমি কখনোই সেসব কাজ করবো না।এই বিশ্বাসটুকু রাখবেন প্লিজ।
জান্নাত তখন বললো, আচ্ছা বুঝলাম আজ কোনো আজেবাজে জায়গায় যান নি।তাহলে কি আগে এসব আজেবাজে জায়গায় যেতেন,আর এসব আজেবাজে জিনিস খেতেন?

রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।সে জান্নাতের কথা এড়িয়ে গেলো আর বললো, জান্নাত এ নিয়ে আমরা আরেকদিন কথা বলবো।এখন চলুন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিই।খাবারগুলো তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।এই বলে রুয়েল নিজেই প্লেট আনলো।আর নিজেই খাবারগুলো প্লেটে রাখলো।জান্নাত সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।
রুয়েল তখন জান্নাতকে বিছানায় বসিয়ে দিলো আর এক লোকমা বিরিয়ানি জান্নাতের মুখের কাছে নিয়ে গেলো।
জান্নাত শুধু রুয়েলের দিকে দেখছে।রুয়েল তখন বললো,হা করুন জান্নাত।

জান্নাত তখন বললো,আপনি আগে খান।আমি পরে খাবো।
–না আপনি আগে।
–না আপনি আগে খান।
রুয়েল তখন নিজেই আগে এক লোকমা মুখে দিলো।তা না হলে জান্নাত কিছুতেই খাবে না।রুয়েল নিজের মুখে দিয়েই জান্নাতের মুখে তাড়াতাড়ি এক লোকমা খাবার তুলে দিলো।
এইভাবে দুইজন খাওয়া শেষ করলো।খাওয়া শেষ করে এঁটো প্লেট গুলোও রুয়েল নিজেই বেসিনে নিয়ে গিয়ে মাজতে লাগলো।জান্নাত তা দেখে বললো, কি করছেন এসব?বাসার কেউ দেখলে কি হবে?
রুয়েল তখন বললো আপনি রুমে যান জান্নাত।বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।কেউ উঠবে না এখন।
জান্নাত সেই কথা শুনে রুমে চলে গেলো।

রুয়েল ফ্রেশ হয়ে জান্নাতের কাছে চলে গেলো।আর জান্নাতকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,আপনি মনে হয় গিফটের কথা ভুলে গেছেন জান্নাত?
–না ভুলি নি।
–তাহলে এখনো সাজছেন না কেনো?গিফট গুলো কি পছন্দ হয় নি তাহলে?

–না,না।কি বলছেন এসব?অনেক পছন্দ হয়েছে।আজ তো অনেক রাত হয়েছে।সেজন্য ভাবছিলাম কাল সাজবো।

–না আজকেই সাজতে হবে।
–কিন্তু আমি যে সাজতে পারি না।
–যেভাবে পারবেন সেভাবেই সাজবেন।
–তাহলে আপনি রুম থেকে বের হয়ে যান।
–কেনো!আমি থাকলে কি হবে?
–যান,তাহলে সাজবো না।এই বলে জান্নাত রুয়েল সরিয়ে দিলো।

–ওকে যাচ্ছি।সাজগোছ কম্পিলিট হলে ডাক দিবেন কিন্তু।এই বলে রুয়েল বেলকুনির দিকে চলে গেলো।

জান্নাত কি করবে এখন বুঝতে পারছে না।ওদিকে তো রুয়েল অপেক্ষা করে আছে।জান্নাত পাঁচমিনিট আগে উল্টিয়ে পালটিয়ে শাড়িটি দেখতে লাগলো।তার সাহস হচ্ছে না শাড়ি টা পড়ার।সেদিন ঊর্মি ভাবি সুন্দর করে পড়ে দিয়েছিলো শাড়িটা।কিন্তু আজ এতো রাতে ওনার রুমে যাওয়া তো ঠিক হবে না।এজন্য জান্নাত রুয়েলকে ডাক দিলো।রুয়েল ভেবেছে জান্নাত রেডি হয়েছে।কিন্তু এসে যখন দেখলো জান্নাত এখনো রেডি হয় নি সে তখন বললো, জান্নাত আপনি এখনো রেডি হন নি?আপনি তাহলে সত্যি আজ পড়তে চাইছেন না?আমি কত শখ করে আনলাম শাড়িটা!আচ্ছা ঠিক আছে,আপনার যখন পড়তে ইচ্ছা করছে না তাহলে পড়ার দরকার নাই।এই বলে রুয়েল রাগ করে শুয়ে পড়লো।

তখন জান্নাত বললো,আপনি কি রাগ করলেন আমার উপর।বিশ্বাস করুন আমি শাড়ি পড়তে পারি না।কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।

জান্নাত তখন শাড়িটা রেখে রুয়েলের কাছে চলে গেলো।কিন্তু রুয়েল কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েছে।
জান্নাত তখন বললো,এই যে শুনছেন আপনি?রাগ করলেন কি?
রুয়েল এবারও কোনো উত্তর দিলো না।
জান্নাত তখন রুয়েলকে আর বিরক্ত করলো না।সে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে আবার শাড়ি টা হাতে নিলো।আর একা একাই পড়ার চেষ্টা করলো।জান্নাত কোনো রকমে শাড়ি টা পেঁচিয়ে নিলো।কিন্তু কিছুতেই আর হাঁটতে পারছিলো না।সে তখন চিৎকার করে বললো,এই যে শুনছেন?আমি তো হাঁটতে পারছি না।কি করবো এখন?এই যে?সাহায্য করুন প্লিজ।

রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতের দিকে তাকালো আর বিছানাতে শুয়ে থেকেই হাসতে হাসতে বললো,শাড়ি এভাবে পেঁচিয়ে রাখলে কি করে হাঁটতে পারবেন?বুঝেছি, আপনার দ্বারা শাড়ি পড়া কখনোই সম্ভব না।উন্নত মানের ট্রেনিং এর প্রয়োজন আপনার।তাড়াতাড়ি খুলে ফেলুন শাড়িটা।

–কি বলছেন এসব?শাড়ি খুলবো মানে? পারবো না শাড়ি খুলতে।এইভাবেই শোবো আমি।

–ওকে তাহলে একা একাই আসার চেষ্টা করুন।আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না।এই বলে রুয়েল বিছানাতেই শুয়ে থাকলো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here