“মালিনী” পর্ব ৮+৯
(নূর নাফিসা)
.
.
সবই শুনছে মলি, কিন্তু জেনিফা আজ এতো ভালো ব্যবহার করছে কেন তার সাথে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না!
দুপুরের দিকে নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিনের সাথে তিন-চারজন লোক এলো বাড়িতে। তারা সোফায় বসে কথা বলছে সাথে ফরহাদও আছে। ফাহিমা কিচেনে থেকে খাবারদাবার বেড়ে দিচ্ছে আর জেরিন গুছিয়ে রাখছে ডাইনিং টেবিলে। জেরিনের কাজ তেমন এগোচ্ছে না বিধায় মলিকে সহযোগিতা করতে বললো। মলি কিচেন থেকে খাবারের বাটি এনে টেবিলে রাখছে। পানির জগ ও গ্লাস ধুয়ে এনে সাজিয়ে রাখছে টেবিলে।
হঠাৎ তার ঘাড়ে আঁচড় পড়লো! হুবহু সেদিনের মতো আঁচড়, আর ঠিক সেরকমই স্পর্শ! মলি চমকে উঠে পেছনে ঘুরে তাকালো! আর দেখতে পেল এদিক থেকে সিড়ির দিকে যাচ্ছে ফরহাদ! আশেপাশে তাকিয়ে আর কাউকে দেখতে পেল না! তাহলে কি ফরহাদ ইচ্ছে করে দিয়ে গেছে! কেন করলো এটা! একই রকম কাজ, একই স্পর্শ, আবারও একই জায়গায়! সেদিন বাজারেও কি তাহলে সে ছিলো! বস্তির বাজারে সে কেন যাবে! ফরহাদের আচরণ কিছুতেই বুঝতে পারছে না মলি! নানান প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সে ফরহাদের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ফরহাদ একবার পেছনে ফিরে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। মলি তার দিকে তাকিয়েই ওড়না মাথায় দিয়ে ঘাড় ঢেকে নিলো। ফরহাদ এবার দ্রুত পায়ে দোতলায় চলে গেলো।
– মালিনী, তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? তোর কাজ শেষ, এবার যা তুই।
জেরিনের কথায় ধ্যান ভাঙলো মলির। ঠিকই তো, সে অযথা এখানে দাড়িয়ে আছে কেন! মলি তার নকশিকাঁথা হাতে নিলো। বসার জন্য উপযুক্ত জায়গা পাচ্ছে না আবার লোকজনের সামনে দিয়ে বাইরেও বের হতে পারছে না! কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অফিসের লোকগুলো যখন খেতে বসলো তখন মলি ছাদে চলে গেলো। ছাদ ময়লা হয়ে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে সিড়ির পাশেই একটা ঝাড়ু দেখতে পেল। কাথা রেলিংয়ে রেখে ঘোমটা খুলে ওড়না ভালোভাবে বেধে সম্পূর্ণ ছাদ ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললো মলি। এবার সুন্দর লাগছে পরিবেশটা! কাথার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলো ফরহাদ দাড়িয়ে! সে কখন এলো এখানে!
আজ বোধহয় আর কাথা বানানো হবে না! এখানে এসেও জায়গা ফাকা পেলো না! মলি তারাহুরো করে ওড়নার বাধন খুলে সুন্দরভাবে নিলো। দ্রুত গতিতে কাথার কাছে এসে কাথা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ফরহাদ তার হাত ধরে টেনে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দাড় করালো এবং বললো,
– নড়াচড়া করলে এখন ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো!
মলি দাড়িয়ে আছে চুপচাপ! কিন্তু ফরহাদ পেছনে দাড়িয়ে থাকায় ভেতরে যে উথাল-পাথাল করছে! মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না তার!
ফরহাদ মলির ওড়না সরিয়ে দিলো মাথা থেকে। ঘাড়ে হাতের স্পর্শ লাগতেই মলি এক লাফে সরে গেলো এবং ওড়না দিয়ে দ্রুত মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো। ফরহাদের দিকে তাকিয়ে হাপাচ্ছে সে! এমনভাবে হাপাচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ তাকে তাড়া করেছে এবং সে দৌড়ে এসেছে! ফরহাদ অন্যদিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে মলির কাছে এগিয়ে এলো এবং হাতে একটা মলম দিয়ে বললো,
– আর কখনো যদি দেখেছি মাথায় কাপড় না দিয়ে কোনো পুরুষ মানুষের সামনে যেতে কিংবা রাস্তাঘাটে চলাচল করতে তাহলে সরাসরি গলা কেটে ফেলবো।
মলির হাতে মলম দিয়ে ফরহাদ ছাদের একপাশে চলে গেলো। মলি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! সে আঁচড় দিয়ে আবার মলম লাগাতে এসেছে! এমন ভাবে কথা বলছে যেন তার উপর কত অধিকার রেখেছে সে! এমন আচরণ করছে কেন, কিছুই বুঝতে পারছে না। ফরহাদ আবার তার দিকে তাকাতেই সে চোখ ফিরিয়ে নিজের ঘাড় স্পর্শ করলো। আঁচড় পড়ে যে ফুলে গেছে এখন অনুভব করতে পেরেছে সেটা। নিজের হাতেই মলম লাগালো। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে, ফরহাদ তার সাথে এমন আচরণ করছে কেন! সে যেভাবেই চলাচল করুক, তাতে তার কি আসে যায়! ওর সাথে তো কোন রকমের সম্পর্ক নেই, তাহলে! ইচ্ছে করছে ফরহাদকে জিজ্ঞেস করে সব বিষয় পরিষ্কার ভাবে জানতে কিন্তু সাহস হচ্ছে না! না জানতেই হবে, সেদিন বাজারেও নিশ্চয়ই ফরহাদ ছিলো, তার মানে সে আরও আগে থেকেই মলিকে চেনে এটা মলির ভাবনা!
মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তখনই জেনিফার আগমন ছাদে!
– হেই ফরহাদ, তুমি এখানে কি করছো? মালিনীও দেখছি এখানে!
– মালিনীকে নিয়ে এলাম ছাদ ঝাড়ু দেওয়ার জন্য।
– অহ, আচ্ছা। মালিনী, ঝাড়ু দেওয়া শেষ হয়েছে না, যা এবার।
মলি মাথায় ঘোমটা টেনে কাথা নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে আর মনে মনে বলছে,
– কি মিথ্যুক লোক! কতো বানিয়ে কথা বলতে পারে! আমাকে কখন বললো ছাদ ঝাড়ু দেওয়ার জন্য! আমি তো নিজ থেকেই দিয়েছি! আযব মানুষ!
বাকি সময়টা মলি কিচেনে কাটালো। কাথা আর সেলাই হলো না! মেহমান চলে গেলে সে বাগানে পানি দিলো। আজ একটু আগেই কাজ সেড়ে ফিরে এলো ও বাড়ি থেকে। বাড়িতে পা রাখতেই হৃদয় দৌড়ে এসে মলির দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিলো। কাথার ব্যাগটা নিচে রেখে মলি তাকে কোলে নিয়ে নিলো।
– ফুপি চকলেট দেও।
– আজ তো মনে ছিলো না সোনামনি! এখন খেলো, একটু পর তোমাকে নিয়ে দোকানে যাবো। হুম?
– আচ্ছা।
– যাও।
মলি হৃদয়কে নামিয়ে কাথার ব্যাগটা তুলে নিজের রুমে এলো। কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো গোসল করতে। আঁচড় পড়া জায়গায় সাবান লাগতেই জ্বালা শুরু করলো! দশ মিনিটের জায়গায় চল্লিশ মিনিট লাগিয়ে দিলো গোসলে! সারাক্ষণ শুধু ফরহাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণগুলো মাথায় ভনভন করে ঘুরছে! ফরহাদ কেন এমন করছে তার সাথে! কি চায় সে! তাকে চিনেই বা কি করে!
ভাবতে ভাবতে আজ বাবার সাথে দেখা করতে ভুলে গেছে মলি! হৃদয় তার রুমে এলে তার মনে হলো দোকানে যাওয়ার কথা। তার আগে বাবার সাথে দেখা করলো। অত:পর হৃদয়কে সাথে নিয়ে দোকানে এলো। বের হওয়ার আগে মাথায় কাপড় দিতে ভুলেনি!
পরদিন ফাহিমার সাথে দেখা না করে সোজা বাগানে চলে এলো। ছোট ছোট ঘাস জন্মেছে সেগুলো পরিষ্কার করতে লাগলো। হঠাৎ কলার খোসা পড়লো তার সামনে! মলি আশেপাশে তাকিয়ে ফরহাদকে দোতলায় দেখতে পেলো! উপর থেকে কলার খোসা ঢিল মেরে ফেলছে তাও আবার টুকরো টুকরো করে! ফরহাদ উপর থেকে বললো,
– পরিষ্কার হয়নি বাগান। পেছনে ময়লা আছে। ভালো করে পরিষ্কার করো!
মলি পেছনে তাকিয়ে দেখলো এতোক্ষণ ধরে যতটুকু পরিষ্কার করে এসেছে ততটুকুতে কলার খোসার টুকরো ফেলেছে! ইচ্ছে করে করেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই কিন্তু এমনটা কেন করলো! বিরক্তি নিয়ে মলি আবার ফরহাদের তাকাতেই ফরহাদ আবার বললো,
– দুপুরে বাগানে পানি দেয়া যাবে না! সকাল ও বিকেলেই দিতে হবে সবসময়! মনে থাকে যেন!
এবার মলি বুঝতে পারলো কাল তারাতাড়ি পানি দিয়ে বাসায় চলে গেছে তাই ফরহাদের এই কীর্তি!
“ছোট সাহেবের বাচ্চা! একদিন আগে গিয়েছি বলে প্রতিশোধ নিবি! ইচ্ছে তো করছে তোর বাগান মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে! না না! বাগানের তো কোনো দোষ নেই! শয়তান তো ওই লোকটা! গিরগিটি একটা!”
মলি রেগে মনে মনে ফুসছে আর খোসার টুকরোগুলো উঠিয়ে পরিষ্কার করছে।
কাজ করে হাপিয়ে গেছে! একবারের কাজ দুবার করতে হলো তাকে! কাজ শেষ হতেই ধপাস করে এসে দোলনায় বসে পড়লো! দোলনা দুলছে আর মলির ক্লান্তি দূর হচ্ছে! আজ আর কাথা আনেনি। ছোট সাহেবের হাবভাব মলির কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না! দরকার নেই কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের! এখন থেকে আর এ বাড়িতে সময় কাটাবে না। সকালে ও বিকেলে এসে বাগান পরিচর্যা করে যাবে। এটাই যথেষ্ট!
একটু জিড়িয়ে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো মলি। ফাহিমার সাথে দেখা করলো। ফাহিমা বললো,
– কিরে, বাগানে পানি দিয়ে তারপর এসেছিস আমার কাছে?
– জ্বি আন্টি। কাজ বেশি ছিলো, ভাবলাম কাজ সেড়েই যাই!
– ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোকে, বস এখানে। নাস্তা করেছিস?
– জ্বি আন্টি।
– কাথা কোথায় তোর?
– আন্টি, আজ আনিনি। বাসায় একটু কাজ আছে তাই চলে যাবো। বিকেলে আবার আসবো পানি দিতে।
– থাক তাহলে, জরুরি কাজ থাকলে বিকেলে আর আসতে হবে না।
– না, আন্টি। তেমন জরুরি না। মানে বিকেলের আগেই শেষ হয়ে যাবে।
– আচ্ছা। তুই তো এমনিতেই কোনো ছুটি নেস না! প্রয়োজন হলে ছুটি নিয়ে নিবি।
– আচ্ছা আন্টি, যাই আমি। আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
মলি চলে গেলো। আর মনে মনে তওবা করতে লাগলো মিথ্যা বলার জন্য। তারপর আবার নিজেই বলতে লাগলো, “মিথ্যে কোথায় বললাম! বলেছি কাজ আছে! কাজ তো আছেই! এখন তো বাসায় গিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করবোই! এটা তো কাজই! শুধু এভাবে বলাটা একটা কৌশল ছিলো! হুররে!”
দাত চেপে নিজেই নিজের কাছে একটা তাচ্ছিল্য হাসি প্রকাশ করলো! খুশি মনে বাড়িতে ফিরে এলো! কাথা সেলাই করতে বসে পড়লো। কিন্তু প্রতিদিনের মতো আজ আর কাজে মজা পাচ্ছে না! এতোদিন ফাহিমার সাথে গল্প করতো আর কাথা সেলাই করতো আজ যেন কাজ এগোচ্ছেই না! হৃদয় এসে মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে যাচ্ছে। মা এসে চুপচাপ একটু সেলাই করছে। ভাবি ঘরের কাজ করতে করতে দিন পাড় করছে! সময়কে যেন ধাক্কাতে ধাক্কাতে পাড় করছে মলি! কিন্তু কিছুই করার নেই! ছোট সাহেবের নজর ভালো দেখাচ্ছে না তাই ছোট সাহেব যতদিন আছে ততদিন শুধু সকাল বিকেল যাবে ও বাড়িতে আবার কাজ শেষে চলে আসবে। এই সিদ্ধান্তেই মলি অটুট হলো।
বিকেল হতেই সে ও বাড়িতে গেলো। ফাহিমার সাথে দেখা করলো, বাগানে পানি দিলো, ফুলগুলোর সাথে একটু আধটু কথা বললো। ফুলের সাথে খেলার সময় আজ জিহানও তার সঙ্গী ছিলো। শিউলি ফুল পড়ে বিছিয়ে আছে মাটিতে, সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে একটা প্যাকেটে রাখলো। এ টুকু সময়ের মধ্যে মলি ফরহাদকেও দেখেনি এবং জেনিফাকেও দেখেনি! সাহেব আর মেডাম ঘুরতে গেছে হয়তো! মলি কিছু ফুল জিহানের কাছেও দিলো। জিহান সেগুলো নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাবে এমন সময় মলি আবার ডাকলো তাকে। জিহান দৌড়ে এসে বললো,
– জ্বি আন্টি?
– জিহান, তোমার চাচ্চু বাসায় নেই?
– চাচ্চু তো দুপুরে চিটাগং চলে গেছে।
– অহ! তোমার জেনিফা আন্টি?
– আন্টিও দুপুরে নানু বাসায় চলে গেছে।
– আচ্ছা, যাও তুমি। দাদুকে বলে দিও আমি চলে গেছি।
– ওকে। বাই।
– বাই না, বলো আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
জিহান বাড়িতে চলে গেলো আর মলি খুশি মনে বেরিয়ে এলো।
“বাহ! অতি তাড়াতাড়িই আপদ দূর হয়ে গেছে! হুহ! এখন শান্তিতে আন্টির সাথে সময় কাটাতে পারবো! এতো খুশি লাগছে কেন! ধনীরা তো খুশি হলেই পার্টি করে! আজ তো আমিও খুশি, এখন তো আমারও ইচ্ছে করছে পার্টি করতে!”
পার্সে হাত রেখে দেখলো স্বল্প পরিমাণ টাকা আছে! পরক্ষণেই নিজের সংসারের কথা মনে হলো,
” না মলি, তোর এই টাকা অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করলে চলবে না! জীবনের সময় খারাপ, অযথা টাকা নষ্ট না করে উপযুক্ত কাজে লাগিয়ে রাখ!”
নিজেই নিজেকে উপদেশ দিলো। এরপর টাকা পার্সে রেখে সোজা পথে বিরতিহীন কদম ফেলে হাটা ধরলো!
https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318
“মালিনী”
পর্ব- ৯
(নূর নাফিসা)
.
.
নিজেই নিজেকে উপদেশ দিলো। এরপর টাকা পার্সে রেখে সোজা পথে বিরতিহীন কদম ফেলে হাটা ধরলো!
বাসায় ফিরে আজ নিজের হাতে রান্নাবান্না করলো। এটাই তার পার্টি। বাবাকে খাওয়ালো, হৃদয়য়ের সাথে খেলা করলো। সবকিছু সম্পাদন করলো মনের আনন্দে! আজ কাথা সেলাই বিরত রেখেছে!
পরদিন আবার কাথা নিয়ে ও বাড়িতে এলো। বাগান দেখাশোনা, ফাহিমা আন্টির সাথে গল্পসল্প! ফাকে ফাকে জিহানের সাথে খেলা সবমিলিয়ে ভালোই কাটছে সময়!
এর তিনদিনের মাথায় সকালে মলি দশ টাকার বাদাম কিনে খেতে খেতে এ বাড়িতে এলো। গেইট দিয়ে ঢুকার সময় দেখলো গাড়ি বের হচ্ছে, তাই মলি বাইরে দাড়িয়ে রইলো। ফারদিন গাড়ি চালাচ্ছে, জিহান মালিকে দেখে হাত নাড়িয়ে টা টা জানালো। বাবার সাথে স্কুলে যাচ্ছে জিহান, ওপাশে মনে হয় তার দাদাও আছে। মলিও হেসে জিহানকে টাটা জানালো। গাড়ি বের হতেই সে গেইটের ভেতরে প্রবেশ করলো। গুনগুন করে গান ধরেছে আর বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বাড়ির বরাবর যাচ্ছে। বাদাম মুখে দিয়ে সামনে তাকাতেই তার কদম স্থির হয়ে গেলো, চোখ রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো, গুনগুনসহ মুখের নাড়াচাড়াও বন্ধ! ফরহাদ মেইন দরজায় হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে দাড়িয়ে আছে! মলির দিকেই তাকিয়ে আছে পলকহীন, ঠোঁটের কোনায় দুষ্টুমির হাসি! মলির তো এদিকে দম বন্ধ হয়ে যাবার পালা! “হায় আল্লাহ! ব্যাটা গেছে চারদিনও হয়নি, আবার বাড়িতে ফিরে এলো! কাজ নাই নাকি! আন্টি তো বলছিলো মাসখানেকও চলে যায়, আসে না বাড়িতে! কিন্তু আমি তো দেখছি দিনও যায়না হাজির হয়ে যায়! কি করি এখন! আগে জানলে তো ছুটি নিয়ে নিতাম! আল্লাহ, রহম করো!”
মলি কি করবে বুঝতে পারছে না! বাগানের দিকে যাবে? সেখানে গেলে যদি ফরহাদ সেখানেই চলে যায় আর কিছু বলে! তখন তো মলির কিছু বলার ক্ষমতাও নেই! কেননা বাগান ফরহাদের! সুতরাং সে যখন ইচ্ছে যেতে পারে সেখানে! এদিকে তো বাড়িতেও ঢুকার সাহেস পাচ্ছে না! হিরোর মতো দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে! মনে হচ্ছে শুটিং করছে! এটা কি মানুষ না মুর্তি তা ভাবতে এখন মলির মাথায় হোচট খাচ্ছে! ফরহাদ এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে মুখে হাসি নিয়ে! না আছে কোনো শব্দ আর না আছে নড়াচড়া! আর না আছে মলির কোন রাস্তা! দেখতে খারাপ লাগছে না কিন্তু ভয়ংকর লোক! মলির কাছে এখন একটাই রাস্তা ফাকা আছে, সেটা গেইট দিয়ে সোজা বেরিয়ে যাওয়া!
বের হওয়ার জন্যই মলি ঘুরে দাড়ালো। তারপর আবার ভাবলো, এসেছে কাজ করে উপার্জন করতে! এখন কাজ না করে চলে গেলে বেতন পাবে কিভাবে!
“না মলি! তোর কাজ তুই করে যা! এই ব্যাটাকে ভয় পাচ্ছিস তুই! না, তুই তো ভীতু না! এই ব্যাটা কি করবে! কিছু বললে ডিরেক্ট লুচু নামে সিল মেরে দিবি আর ইচ্ছেমতো বকে দিবি! কোনো ভয় না, ভয়কে জয় করো বাছা!”
নিজেই নিজেকে সাহস দিয়ে আবার বাড়ির দিকে কদম ফেললো। চাইছে এক দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করতে কিন্তু পা তো সেকেন্ডের কাটার সাথে তাল মেলাচ্ছে! এতো সাহস যুগানোর পরেও ভয়ে ভয়ে মলি কদম ফেলছে আর বারবার ফরহাদের দিকে তাকাচ্ছে! দরজার কাছে এসে খুব জোরে ডাকলো,
– ফাহিমা আন্টি…!
ফাহিমা তাড়াহুড়ো করে দরজার সামনে এলো। এতোক্ষণে ফরহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে কারো সাথে কথা বলার অভিনয় করছে! মলি তা দেখে চরম অবাক হয়ে আছে! কতো বড় ড্রামাবাজ! ফাহিমা এসে বললো,
– কি হয়েছে মলি? চিৎকার করলি কেন!
– হ্যাঁ! না কিছু না তো! ডেকে দেখলাম আপনি বাড়িতে আছেন কিনা!
– তাই বলে এভাবে চিৎকার করবি! আমি তো ভয় পেয়ে গেছি! ফাজিল মেয়ে!
ফরহাদ এখনো এখানে দাড়িয়েই ফোনে কথা বলছে। মলি ফাহিমার কথায় হেসে ভেতরে প্রবেশ করার সময় ফরহাদের পায়ে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলো! ফাহিমা বললো,
– আরে আস্তে!
ফরহাদ কান থেকে ফোন নামিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,
– দরজার পাশে কি জায়গার অভাব পড়েছে! আমার পায়ের উপর দিয়েই যেতে হবে! যেন কপালের নিচে চোখ নেই! যত্তসব!
ঠিকই তো! এদিকে তো আরও জায়গা ছিলো! ফরহাদের পায়েই কেন হোচট খেলো! মলি নিজের মাথায় থাপ্পড় দিতে গিয়েও দিলো না! ফরহাদ আবার ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে বেরিয়ে গেলো। মলি মনে মনে বকে ফাহিমার সাথে গেলো। ফাহিমাকে বললো,
– আন্টি, ছোট সাহেব কি বাগানে পানি দিয়েছে আজ?
– জানি না তো! আমি যাইনি সেখানে! দেয়নি মনে হয়! কাল রাত দুইটার দিকে বাসায় ফিরেছে। তাই ঘুম থেকে দেড়িতে উঠেছে।
– অহ, আচ্ছা! আন্টি আপনি কি বাইরে যাবেন এখন?
– কেন?
– না, এমনি হাটতে!
– না, আমি তো দুপুরের রান্না বসিয়েছি।
– আচ্ছা। জেরিন ম্যাডাম বাসায় নেই?
– আছে।
– আচ্ছা আমি যাই, পানি দিয়ে আসি।
– যা।
মলি কাথার ব্যাগ ঘরে রেখে বেরিয়ে এলো বাগানে পানি দেওয়ার জন্য। ফরহাদ তো এখন বাইরে গেছে। এই ফাকে পানি দেওয়া শেষ করে নেওয়া যাক!
মলি বাগানে এলো এবং দ্রুত কাজ চালাতে লাগলো। পাতাসহ যা ময়লা পড়েছে তারাহুরো করে সবটা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললো। পানির পাইপ নিয়ে পানি দেওয়া মাত্র শুরু করেছে এমন সময় দেখলো প্যান্ট ফোল্ড করে ফরহাদ বাগানে ঢুকেছে! তার দিকেই এগিয়ে আসছে! মলির ভেতরে ধুকপুকানি বেড়েই যাচ্ছে! ফরহাদ তার কাছে এসে হাত ধরলো! স্পর্শ পেয়ে মলির সর্বাঙ্গ কেপে উঠলো! ফরহাদ মৃদু স্বরে বললো,
– ডাকো তোমার ফাহিমা আন্টিকে! আর না হয় ওদিকে দাড়োয়ান আছে, তাকেই ডাকো। কেউ তো তোমাকে এখন বাচাবে! কি হলো, ডাকো!
মলি চুপচাপ আছে আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ফরহাদ তার হাত থেকে পানির পাইপ নিয়ে নিজেই ছেড়ে দিলো মলির হাত। আর বললো,
– আমি যতক্ষণ পানি দিবো, চুপচাপ এখানে দাড়িয়ে থাকবে আর দেখবে। পালানোর চেষ্টা করেছো তো বাগানেই রাত দিন কাটানোর ব্যবস্থা করবো!
মলি তার কথামতো এক কোনায় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। ফরহাদ পানি দিচ্ছে আর মলি মনে মনে বকে যাচ্ছে!
” ছোট সাহেবের বাচ্চা! তোরে তো এই কাদার মধ্যে চুবানি খাওয়ানোর ইচ্ছে করতাছে! বাগানটা আমার না বলে শুধু বেচে গেলি! কি ভাবছ, আমি বোবা! তুই বলে যাবি আর আমি শুনবো! তোর কথায় সব হবে! তোর চাকরানী আমি! আমাকে এতো ভয় দেখাছ ক্যান, এতো থ্রেড দেছ ক্যান! তোর বাগানে কাজ করি বলে যা তা ব্যবহার করবি! দূর মরা! মুখ থেকে কথা বের হয় না কেন আমার! বলছি তো ঠিকই কিন্তু ওই ব্যাটার কান পর্যন্ত যায় না কেন শব্দ!”
নিজের উপর বিরক্ত হয়েই মুখ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে। মুখের এমন ভঙ্গি দেখে পানি দেওয়া শেষ হলে ফরহাদ মলির মুখের দিকে পাইপ ধরে আবার সরিয়ে নিজের পা ধুতে লাগলো! মুখে পানি দেওয়ায় মলি তো রেগে আগুন! কিন্তু কিছু করতে পারছে না কেন এই ফরহাদের! নিজের পা ধুয়ে ফরহাদ মলির হাতে পাইপ ধরিয়ে দিয়ে চলে এলো। মলি রাগে ফুসতে ফুসতে হাত পা ধুয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আর ভেবে নিলো, এক মুহুর্তও নেই এখানে! এখনই আন্টির কাছে বলে অসুস্থতার বাহানা ধরে বাসায় ফিরে যাবে। বিকেলে আর আসবে না। প্রয়োজনে কল করে ফরহাদের খবর নিয়ে যতদিন ফরহাদ না যাচ্ছে ততদিন ছুটি কাটাবে! বেতন কাটলে কাটুক! তবুও এটাই তার শেষ সিদ্ধান্ত!
মলির খারাপ লাগছে এই ভঙ্গিতায় সে কিচেনের দিকে এলো। সে কিছু বলার আগেই ফাহিমা দেখে বললো,
– কিরে মলি? কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন? অসুস্থ নাকি?
– না।
জবাব দিয়ে নিজেই জ্বিভ কামড়ে দাড়িয়ে রইলো! এতোক্ষণ কি ভেবে এলো আর এখন কি জবাব দিলো! অবশেষে মুখ ফসকে সত্য-টাই বেরিয়ে এলো! জবাব পাল্টানোর জন্য কিছু বলতে যাবে এমনি ফাহিমা বললো,
– অহ, আচ্ছা। একটা কাজ করতে পারবি?
– কি কাজ আন্টি?
– ফরহাদের রুমটা একটু ঝাড়ু দিয়ে মুছে দে। চলে আসবে জানলে তো কালকেই পরিষ্কার করিয়ে রাখতাম। এখন এসে খ্যাচখ্যাচ করছে, বাড়িতে কাজের লোক রাখতে দেই না! দেই না যে কেন সেটা তো আমিই জানি। তাদের স্বভাব কেমন জানি না সেটা! কাউকে দেখতে পারে না! অহংকারে একএকজন পরিপূর্ণ!
মলি মনে মনে বললো, “এইটুকু জেনেছেন আন্টি, বাকিটা তো জানেন না! আপনার ছেলে তো লুইচ্চা! কেমনে বলি আপনাকে! কাজের লোক রাখলেও থাকবে না!”
মলি ভাবতে ভাবতে ফাহিমা আবার বললো,
– কিরে? দিবি নাকি?
– হ..হ্যাঁ আন্টি। দিচ্ছি।
“হুহ্! কপাল!” মলি বিরক্তি নিয়ে ঝাড়ু আর বালতি নিয়ে ফরহাদের রুমে এলো। এসে দেখলো ফরহাদ অন্য ঝাড়ু দিয়ে উপরের অংশ অর্থাৎ দেয়াল ও কর্নার ঝাড়ু দিয়ে ফেলেছে। মলিকে দেখে বললো,
– এগিয়ে দিলাম কাজ। বাকিটা করো।
মলি মনে মনে বললো, “বাকিটাও করে দিলে কি হতো!”
ফরহাদ প্যান্ট আর তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো। এই ফাকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য মলি লেগে পড়লো। ঝাড়ু দিয়ে ঘর মুছা শুরু করলো। শেষ হওয়ার একটু আগেই ফরহাদ গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলো। শেষ হওয়া পর্যন্ত বাথরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে রইলো। মলি তারাতাড়ি কাজ শেষ করে দাড়াতেই ফরহাদ বললো,
– বাথরুমে এসো।
মলি চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে! সে আবার বললো,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন! বাথরুমে এসে আমার জামাকাপড় ধুয়ে দাও।
ইচ্ছে করছে না তবুও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না! ঘর মুছার ময়লা পানির বালতি হাত থেকে থেতলে ফেলে বাথরুমে এলো। জামাকাপড় কেচে ধুয়ে দিলো। এবং বেরিয়ে আসার সময় ফরহাদ বাথরুমের দরজার পাশেই সামনে দাড়িয়ে পথ আটকে ধরলো! মলি ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে আর ফরহাদ সামনে এগিয়ে! একটু পিছিয়ে যেতেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে! ফরহাদ দুপাশে দেয়ালে হাত রেখে একদম তার কাছে এসে দাড়িয়েছে! খালি গায়ে আছে সে, তার দৃষ্টি অন্যরকম! ফরহাদ পারলেও মলি চোখে চোখ রাখতে পারছে না! এতো কাছে কোনো পুরুষের উপস্থিতি অনুভব করতে পেরে মলির শরীর কাপছে, ভেতরটা ধুকপুক করছে!
ফরহাদ এক হাতে মলির খোপা আটকানো কাটাটা খুলে চুলগুলো মুক্ত করে দিলো! মলির হাত থেকে জামাকাপড় ফ্লোরে পড়ে গেছে!
– ছো..ছোট সাহে…!
আমতা আমতা করে একটু শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু ফরহাদ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বাধা দিলো!
– হুশ! কিসের ছোট সাহেব! কে শিখিয়েছে এগুলো! টেল মি ফরহাদ! ফরহাদ হোসাইন! এন্ড ডন্ট ফিল নার্ভাস! বি ইজি!
মলির খুবই অসস্তি লাগছে! ফরহাদ আরও এগিয়ে এসেছে তার কাছে! গভীর অনুভূতি নিয়ে তার ঠান্ডা গাল মলির গালের সাথে আলতো স্পর্শ করলো। শীতল স্পর্শে মলির সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে গেলো! মলি আর ধৈর্য ধারণ করতে পারলো না! অনেক চেষ্টা করে দাতে দাত চেপে একটু শব্দ উচ্চারণ করতে পারলো।
– এসব ঠিক না ছোট সাহেব! এসব পাপ!
কান্নাজড়িত কণ্ঠ ভেসে এসেছে ফরহাদের কানে! সে চোখ বন্ধ করে একটা ঢোক গিললো যার শব্দ মলির কান পর্যন্ত চলে এসেছে! ফরহাদ সোজা হয়ে এক কদম পিছিয়ে মলির দিকে তাকিয়ে দেখলো মলির চোখে ঝরছে অশ্রু! কপালে সূক্ষ ভাজ ফেলে বললো,
– মলি!
মলি চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো! নিচে এসে কাথার ব্যাগটা নিয়ে কিচেনের বাইরে থেকেই বললো,
– আন্টি, বাবার অবস্থা এখন বেশি ভালো না। আমি কয়েকদিন কাজে আসতে পারবো না!
কথাটা বলে আর একটুও অপেক্ষা করেনি! দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো। ফাহিমা কিচেন থেকে বেরিয়ে আর তাকে দেখতে পেলো না! মেইন দরজার কাছে এসে দেখলো দ্রুত পায়ে মলি গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এমনি শার্ট পড়তে পড়তে ফরহাদ দোতলা থেকে নেমে এলো! ফাহিমাকে দেখে বললো,
– কি হয়েছে মা? এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?
– মলি তার বাবার কথা বলে তারাহুরো করে বেরিয়ে গেলো। কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না!
– হবে হয়তো কোন দরকার! যাও তুমি।
– তুই কোথায় যাচ্ছিস?
– আসছি একটু!
ফাহিমা কিচেনের দিকে চলে গেলো আর ফরহাদ দ্রুত পায়ে গেইটের বাইরে এসে দেখলো একটু দূরে মলি মাত্রই রিকশায় উঠলো! নিজের পা টা সজোরে মারলো বাউন্ডারির ওয়ালে! এটা কি করলো সে! মাথার চুল খামচে ধরে এলোমেলো করলো এবং আবার বাড়ির ভেতরে চলে গেলো!
মলি রিকশা নিয়েছে আজ! রিকশা চলছে তবুও মনে হচ্ছে পথ শেষ হচ্ছে না! ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তার! খুব জোরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না! তার সাথে এমন কেন হচ্ছে! সে তো এমন কিছু প্রত্যাশা করেনি! হয়তো ধনীদের স্বভাব এসব! তারা কি মেয়েদের সম্মান দিতে জানেনা! তাদের সৌন্দর্যের ভেতরে এতো ত্রুটি কেন! বাইরের দিক থেকে তো পরিপাটি তাহলে ভেতরটা এমন কালো কেন! তারই ভুল হয়েছে, কেনো এলো এখানে কাজ করতে! আগেই তো ভালো ছিলো! উপার্জন কম হলেও তো নিজের সম্মানের উপর কেউ নজর দেয়নি!
বাসায় এসে একা ঘরে বন্দী হয়ে অনেক্ক্ষণ কান্না করলো মলি। আর কখনও ওবাড়িতে কাজে যাবে না! সুযোগ বুঝে একদিন যাবে কাউকে সাথে নিয়ে আর ফাহিমার সাথে কথা বলে যা পাওনা আছে নিয়ে আসবে!
দুদিন হলো কাজে যায় না মলি। আজ শুক্রবার হওয়ায় মুহিত বাড়িতে। মুহিত বাজারে যাবে। মলি বাবার ঘরে বসে মুহিতকে ওষুধগুলো আনার জন্য দেখিয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ নীলিমা এসে বললো,
– এই শুনছো? বাড়িতে পুলিশ আইছে!
মুহিত আর মলি দুজনেই আশ্চর্য হয়ে তাকালো! মুহিত বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে পিছু পিছু মলিও বাইরে এসে দেখলো দুজন লোক এসেছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ আর সাথে ফরহাদ!