হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-১৭,১৮

0
808

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৭,১৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
১৭
১মাস পর,
রাত ১ টা আরু দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে।ডিসেম্বর মাসের কনকনে শীত।আরু গায়ে পাতলা একটা চাদর জরিয়ে দাড়িয়ে আছে।আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ।চাঁদ যেন নিজের আলোতে চারপাশে আলোকিত করে রেখেছে।কিন্তু আরু মন অমাবস্যার রাতের মতো ঘন কালো আধারে ঢেকে আছে।এই ১ মসে অনেক কিছু বদলে গেছে।
অনিম আর তন্নি কিছুটা কাছাকাছি এসেছে।কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দেয় না।অনিম অপেক্ষায় আছে ওদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার।তারপর অনিম ওর মা বাবাকে বলে তন্নির বাসায় পাঠাবে।আর অনিমের বিশ্বাস ওর বাবা-মা এই কথা শুনলে ওকে ফিরিয়ে দিবে না।
রাফসান আর মারিয়ার মাঝে একবার ঝগড়া হয়ে প্রায় ১ সপ্তাহ কথা ছিলো না।কিন্তু এখন ঠিক আছে।আসলে যেই কোনো রিলেশনশিপে মাঝে মাঝে ঝগড়া,দূরত্ব না হলে কেউ কারো গুরুত্ব বুঝে না।(আমার তো মাসে ৩-৪ বার ঝগড়া হয়ে কথা বন্ধ থাকে🤦‍♀️🙈)
কিন্তু আরু আর আয়ানের সম্পর্ক যেন দিন দিন অবনতি হচ্ছে।আয়ান যেন দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে।আরুর নাম শুনলে যেন মনে হয় রাগ টা আরো বেরে যায়।আয়ানের এই ব্যবহার রাফসানকে প্রতিনিয়ত ভাবায়।কী হলো আয়ানের এই ১ মাসে।সব থেকে কেমন যেন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।রাফসান অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আয়ান বারবার বলেছে কিছু হয়নি।রাফসানের সাথে আয়ানের দূরত্ব বাড়ছে।আর আয়ানও ইদানীং রিয়ার সাথে মিলামেশা বেশি করছে।রাফসান অনেক বার বলেছে আয়ান এটা ঠিক কাজ করছে না কিন্তু আয়ান বলেছে,আমার জীবন আমি বুঝবো কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক।এই কথাটায় রাফসান অনেক আঘাত পেয়েছে।এরপর থেকে ওদের দূরত্ব বেড়েছে।কিন্তু এতে আয়ানের যেন কিছুই যায় আসে না।আয়ানযেন দিন দিন বরো রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে।
আর আরু তো সব মিলিয়ে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে।প্রতিনিয়ত আয়ানের থেকে অবহেলা,পড়াশোনার চাপ,বাসায় সবার সামনে হাসি খুশি থাকার অভিনয় করে।আরুর কষ্টের সাক্ষী এই রাত গুলো।বাসার কেউ কিছু জানে না আর আরু জানাতে চায়ও না।মারিয়া আর তন্নি ওকে সব সময় সার্পোট করে এসেছে কিন্তু এতো কিছুর মাঝে আরু নিজেকে একা মনে হয়।আরু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছে গতো ১ মাসের ঘটনা গুলো।ওই দিনের পর আরু ২ বার আয়ানের কাছে গিয়েছিলো কিন্তু আয়ান বারবার ওকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছে।আয়ানের এই অপমান,অবহেলা,ব্যবহার আরুকে যেমন কষ্ট দিচ্ছে ঠিক তেমনই আবার ভাবাচ্ছে।আয়ান আরুর সাথে কেমন এমন করছে।কিন্তু কোনো ফলাফল পায় নি।আরু রাফসানের সাহায্য অনেক বার জানতে চেয়েছে।কিন্তু রাফসান বলে দিয়েছে ওর সাথে এখন আর আয়ান বেশি কথা বলে না।আরু ভাবছে কিছুদিন আগে যখন যখন আয়ানের কাছে গিয়েছিলো তখন ওকে আয়ান কি বলেছিলো।আরু আয়ানের কাছে যাওয়ার কথা শুনে তন্নি আর মারিয়া ওকে বাঁধা দিয়েছিলো কিন্তু আরু তা মানে নি।আরুকে ওরা মানাতে পারে নি বলে জেদ করে আরুকে রেখে ওরা চলে যায়।আরু ও বেহায়ার মতো আয়ানের কাছে গিয়েছিলো।নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে সেইদিন আয়ান কি বলেছিল,

আরুঃ আয়ান প্লিজ ফিরে চলো।আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই।আমি জানি তুমিও ভালো নেই।তুমিও তে আমাকে ভালোবাসো তাহলে কেন এমন করছো?
আয়ানঃ ওয়েট।কী বললে তুমি?তুমি আমাকে ছাড়া ভালো নেই তাই তো?কিন্তু আমার জানা মতে তুমি তো এখন অনেক ভালো থকার কথা নতুন মানুষ পেয়েছে কিনা।(তাচ্ছিল্য হেসে)এখন আর আমাকে কী দরকার।তাকে নিয়ে এখন ফুর্তিতে মেতে উঠেছে।
আরুঃ কী বলছো তুমি এসব?
আয়ানঃ আহা এখন কিছু জানো না তাই না?ওয়েট আর যেনো কী বলেছিলে?..হুম কে বলেছে আমি এখনো তেমাকে ভালোবাসি?আমি একবারো বলেছি?হ্যা বলেছি কিন্তু সেটা আগে এই ২-৩ মাসে তো একবারো বলি নি।তাহলে কীভাবে ভেবে নিলে আমি তোমাকে ভালোবাসি?
আরুঃ…(ছলছল চোখে শুধু আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি)
আয়ানঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি না।শুনেছ?না শুনলে কান খুলে আবার শুনে নাও আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
আরুঃ আয়ান..
আয়ানঃ ওহহ স্টপ।আর একটা কথাও শুনতে চাই না।আর এই সব ন্যাক্যা কান্না আমার সামনে আর দেখাতে আসবে না।রিয়া বেবি চলো।
রিয়া এতোক্ষন দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো আর মনে মনে বিশ্রি হাসি হাসছিলো।ও তো এটাই চেয়েছিলো।যাক তাহলে অবশেষে ওর প্ল্যান সাকসেসফুল হলো।পুরোপুরি না হলেও কয়েকদিনের মাঝে হয়ে যাবে।এই ভেবেই হাসছিলো।তখনই আয়ান ওকে যাওয়ার জন্য বলে।
রিয়াঃ হুম বেবি চলো।এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কোনো রুচি নেই।

বলেই আয়ানের হাত জড়িয়ে চলে গেলো।আর আরু ওদের যওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের বাধ ভেঙে পানি পরছে।আরু ওইখানে কিছুক্ষন থেকে চলে আসে।ওই ঘটনার পর প্রায় ২ সপ্তাহের মতো চলে গেছে।আরু আর জায়নি আয়ানের সামনে আর না আয়ান এসেছে।
আরু এতোক্ষন এসব ভাবছিল আর চোখের পানি ফেলছিলো।এখন চোখ জ্বালা করেছে তাই ভিতরে এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে শুতে চলে গেলো।

প্রায় ১৫দিন পর,
আরুরা কলেজ থেকে বের হয়েছে।আজ কলেজ একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে তাই আরু তন্নি আর মারিয়া মিলে ঠিক করলো পাশের একটা পার্কে যাবে আরুকে সারাদিন মন মরা থাকতে দেখে দেখে ওরা এই সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু এতে আরুর কোনো হেলদোল নেই।ওরা পর্কের ভিতরে ঢুকে একপাশে গিয়ে দাড়ালো।পর্কে মোটামুটি ভালোই মানুষ আছে।তন্নি আর মারিয়া ওকে বুঝাচ্ছে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।আরে শক্ত হতে।এসব কথার মাঝেই আরুর চোখ গেলো ওদের থেকে কিছুটা দূরে আয়ান আর রিয়া দাঁড়িয়ে আছে।শুধু দাড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে রিয়া আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আছে আর আয়ান রিয়ার কোমরে হাত দিয়ে আছে।(আসালে রিয়া আরুকে দেখে হটাৎ কথার ছলে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু আয়ান আরুকে দেখে নি)ওদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরুর মাথায় রক্ত উঠে গেছে।যতোই নিজের আবেগকে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন নিজের ভালোবাসার মানুষকে এমন অন্য কারো সাথে কারোই সয্য হয়।আরুও সয্য করতে পারে নি।আরু রেগে ওইদিকে ছুটলো।আরুকে এভাবে যেতে দেখে মারিয়া আর তন্নি ওদিকে তাকিয়ে দেখে এই অবস্থা।ওরা আরুকে আটকাতে গিয়েও পারলো না।এখন কি হবে তাই ভাবছে।
আরু আয়ানদের কাছে এসে আয়ানের থেকে রিয়াকে ছাড়িয়ে রাগের বসে ‘ঠাস’ করে রিয়ার গালে একটা ‘থাপ্পড়’ মেরে দিলো।(বাবাগো কওো সাহস🤭)আরুর এমন কাজে সবাই অবাক।কিন্তু আরু সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে আয়ানের কাছে গিয়ে ওর কলার ধরে বললো,
আরুঃ তুমি শুধু আমার।তেমাকে আমার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।তুমি কেন রিয়ার গায়ে হাত রেখেছ?তু….

আরু আর কিছু বলতে পারলো তার আগেই আয়ান আরুর গালে ‘কষে’ একটা ‘থাপ্পড়’ মারলো।এতো আরু দু পা পিছিয়ে গেলো।আরুর গালে পুরো পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পরে আছে।এখন পার্কের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আরুর বুক ফেটে যাচ্ছে,চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে।আয়ান দু পা সামনে এগিয়ে এসে রক্ত চক্ষু নিয়ে ওকে বললো,
আয়ানঃ তোর মতো মেয়ের সাহস হয় কী করে আয়ান রহমানের কলার ধরার।যার একজনকে দিয়ে হয় না এমন মেয়ে হয়ে আমার কলার ধরিস।আজ মেয়ে বলে ছাড় পেলি না হলে মেরে মাটির নিচে ফুতে পেলতাম।…
আরুঃ…..আয়ান….
আয়ানঃ আর কোনে দিন আমার সামনে আসবি না।তোর এই চেহারা আমি দেখতে চাই না।তোদের রাস্তায় ছেলেদের আশপাশে মানায়।এখানে না।

বলেই আরুকে ধাক্কা মেরে চলে যেতে নিলেই আরু শক্ত গলায় বলে উঠে,
আরুঃ আজকের পর আর কোনো দিন দেখবে না।কিন্তু আজকের কথা গুলো মনে রেখো।আমি জানি না আমার কী দোষ।কেনো তুমি আমার সাথে এমন করছো তবে এই কথা গুলোর জন্য যেন পরে পস্তাতে না হয়।
আয়ানঃ হু…এই দিন কোনো দিন আসবে না।
আরুঃ আসবে….একদিন আসবে তুমি আমার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য কাঁদবে,আমার প্রতি অবহেলা গুলো তোমাকে পোরাবে,আমার কাছে ফিরতে চাইবে তুমি কিন্তু তখন হয়তো আমি থাকবো না।

বলেই আরুর চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আরু আর দাড়ালো না।দৌড়ে চলে গেলো।ওর পেছন পেছন মারিয়া আর তন্নি ও গেলো।এতোক্ষন ওরা সবটা দেখছিলো কিন্তু করতে পারছিলো না।
আর আয়ান আরুর কথা গুলো ভাবছে,কী বললো আরু?আবার ভাবছে,যা মন চায় বলুক তাতে আমার কী।আমি আর ওর দিকে ফিরে না তাকালেই হলো।
এসব ভেবেই আয়ান গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেলো।
(আসলে আয়ান এমনিতেই মন মেজাজ খিটখিটে তরসাথে রিয়ার হটাৎ এভাবে জড়িয়ে ধার তারউপর আবার হটাৎ আরুর এমন কাজে আয়ানের মেজাজ পুরো বিগড়ে গিয়েছিলো।

রাত ২ টা…
আরু বসে আছে বেলকনিতে।নিঃশব্দে কাঁদছে।গয়ে কোনো গরম কাপড় নেই।আজকের ঘটনায় আরুর মনে দাগ লাগিয়ে দিয়েছে।আজ তন্নি ওর সাথে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু আরু ডিরেক্ট মানা করে দিয়েছে।তাই তন্নিও জোর করে নি।প্রায় অনেকক্ষন কাদার পর আরু চোখ মুখ শক্ত করে নিজে নিজে বলছে,
আরুঃ আর কোনো দিন আমার মুখ দেখতে হবে না তোমায় আয়ান।কিন্তু তুমি একদিন পস্তাবে।আমার মতোই কাঁদবে তুমি।…আমাকে যাতে আর কোনো দিন না দেখতে হয় সেই ব্যবস্থাই করবো আমি।

কী ব্যবস্থা করবো আবার আরু🤔

চলবে…..

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

শীতের প্রকোপ চলে গেছে গেছে অনেকটা।বসন্তের আগমন ঘটবে কিছু দিন পর।কিন্তু এই বসন্তের মাঝেও করো মনে হয়তো নতুন বসন্তের রং লাগবে আবার হয়তো কারো মনে বেরঙ করে তুলবে।
কাল থেকে আরুদের পরীক্ষা শুরু।আরুর প্রিপারেশন মোটামুটি ভালো।শুধু আরুর না মারিয়া তন্নিরও।আরু এখন হাসি খুশি থাকে সবসময়।ওকে দেখলে কেউ বলবে না ওর মনের উপর দিয়ে কী গিয়েছে।আরুও কাউকে বুঝতে দেয় না।আরু ভাবে কাউকে বুঝতে দিয়ে কী লাভ?হয়তো সবাই স্বান্তনা দিতে পারবে কিন্তু কষ্টের ভাগ তো কেউ নিতে পারবে না।আরু নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেছে,নিজেকে শক্ত করেছে।নিজের আত্মসন্মানে আর আঘাত হানতে দেয় নি।অনেক তো খোয়ালো নিজের আত্নসন্মান,অনেক চেষ্টাও করলো সব ঠিক করার কিন্তু কোনো ফলাফল পেলো না।তাই ওইদিনের ওর আরু আর চোখের পানি ফেলে নি।অবশ্য ফেলেনি বললে ভুল হবে প্রতিদিন সূর্যদয়ের সাথে সাথে আরুর নতুন দিন শুরু হয়।এই নতুনদিনে আরু সবার সামনে শক্ত,হাসি খুশির থাকার অভিনয়।কিন্তু আরুর কষ্ট-দুঃখ প্রতিটা রাত এর স্বাক্ষী।
তন্নি আর মারিয়াও অনেক অবাক হটাৎ আরুকে এভাবে বদলে যেতে দেখে।ওরা অনেকবার আরুকে জিজ্ঞেস করেছে ও ভালো আছে কি না?আরও প্রতিবার হাসিমুখে বলেছে ও ভালো আছে।বারবার বলার পর যখন আরুর উওর এক তাই ওরাও ভেবে রেখেছে আরু সব ভুলে নতুন করে বাঁচতে শিখবে।আরু ওইদিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।যা এখনো কেউ জানে না।সব গুলো পরীক্ষা শেষ হলে ও সবাইকে বলবে।ও জানে এটা বললে সহজে কেউ এটা মেনে নিবে না।কিন্তু না মানলেও ও শতো চেষ্টা করে হলেও মানাবে।
এদিকে,অনিম অপেক্ষায় আছে কবে তন্নিদের পরীক্ষা শেষ হবে আর কবে ওকে নিজের করে পাবে।অনিমের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ।ও এখন পুরোপুরি ওদের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়েছে।অনিমের এই সিদ্ধান্ত এখনো কাউকে জানায় নি।ও শুধু অপেক্ষায় আছে।কিন্তু অনিমের এই অপেক্ষার ফল কী হবে তা কেউ জানে না।
আজ আরুদের পরীক্ষা শুরু।আরু টেনশনে আছে সব কমন পরবে কী না।ওরা যথা সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছে গেলো।গিয়ে দেখলো ওদের ৩ জন ৩ রুমে।এতে আরু,তন্নি,মারিয়ার মন একটু খারাপ হয়েছিলো কিন্তু রুম ভিন্ন হলেও এক জায়গায় সবাই এতেই ওরা খুশি।

এদিকে আয়ান ভাবছে আজ থেকে তো আরুদের পরীক্ষা শুরু।ও কী একবার যাবে আরুর সাথে দেখা করতে।কিন্তু পরে ভাবলো ও কেনো যাবে?যাবে না।এখন তো আরু ওর রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়।আমি মন থেকে ভালোবেসেছি ও তো বাসে নি।তাহলে ও কেনো যাবে?কোন প্রয়োজনে?আয়ানের মন বলছে যেতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না যেতে।এতো ভাবনার মাঝে আয়ান ওর মস্তিষ্ককে প্রাধান্য দিয়ে,নিজেকে শক্ত করে অন্য দিকে চলে গেলো।

————————————
একে একে আরুদের সব গুলো পরীক্ষা শেষ।এখন শুধু প্রেকটিক্যাল গুলো বাকী।যা শেষ হতে আরো কয়েকদিন লাগবে।
আরুরা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দেখে রাফসান দাঁড়িয়ে আছে।রাফসান হাসি মুখে ওদের সামনে এসে কথা বলতে লাগলো,
রাফসানঃ কেমন আছো তোমরা আর পরীক্ষা কেমন হলো?
তন্নিঃ এইতো ভাইয়া ভালো।আর পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।এখন রেজাল্ট আসলে বুঝা যাবে।
রাফসানঃ আরে চাপ নিয়ো না।ভালো রেজাল্ট আসবে ইনশাআল্লাহ।
তন্নি ও আরুঃ তাই যেনো হয় ভাইয়া।দোয়া করবেন।
রাফসানঃ হুম অবশ্যই।আমি দোয়া করি তোমরা যেনো ভালো রেজাল্ট করো।
আরুঃ তা ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?
রাফসানঃ এই তো বিন্দাস।(আরো কিছুক্ষন কথা বলে)তা এখন তোমরা কোথায় যাবে?
মারিয়াঃ আজতো এক্সাম শেষ তাই ভাবছি ফুচকা খেতে যাবো।তুমি যাবে আমাদের সাথে?
রাফসানঃ উম…হুম যাওয়া যায়।চলো।

ওরা চলে গেলো ফুচকার স্টলে।গিয়ে চার প্লেট ফুচকা অর্ডার করলো।ওরা কথার ছলে কিছু দুষ্টামি করলো আর খেতে লাগলো।খেতে খেতে হটাৎ রাফসান ওদের ৩ জনকে বললো,
রাফসানঃ তা তোমাদের পরীক্ষা তো শেষ।এবার কোচিং শুরু করবে তো?পরীক্ষা শেষ বলে হাত পা ছেড়ে বসে থাকলে চলবে না
তন্নিঃ হুম ভাইয়া ওইটা মাথায় আছে।সবে তো পরীক্ষা শেষ হলো কিছু দিন যাক তারপর ভালো কোচিং-এ এডমিশন নিবো আশা আছে।
মারিয়াঃ দূর কোথায় ভাবলাম পরীক্ষা শেষ এখন একটু চিল মারবো তা আর হলো না।এখন আবার ছুটতে হবে এডমিশনের তাড়া নিয়ে।ভাল্লাগে না😕
রাফসানঃ তোমার তো ভালো লগবেই না।পড়া চোর একটা😒
মারিয়াঃ কী বললে তুমি😡?আমি পড়া চোর তাই তো😤।…..নিজে একটু পড়াশোনায় ভালো বলে আমাকে উঠতে বসতে কতা শুনাও🙁
রাফসানঃ যে পড়া চোর তাকে তো পড়া চোর বলবোই।এতে কথা শোনানোর কিছু নেই।
মারিয়াঃ কী এতো বড় কথা?….আজ থেকে ব্রকআপ😐।কোনো কথা নেই তোমার সাথে।
রাফসানঃ আরে আজবতো?এতে কথা না বলার কী আছে?
মারিয়াঃ যে ভালো পড়াশোনা পারে।তার কাছে যাও।তার সাথে কথা বল। আমার কাছে আর আসবে না আর কথাও বলবে না 😏।
রাফসানঃ পুরো পাগল হয়ে গেছে।
মারিয়াঃ কীহ.😡😡😡….
রাফসানঃ আব..কিছু না।তুমি যেমন আছো আমার তেমনই তোমাকে চাই।আর রাগ করো না বাবু।

মারিয়া কিছু না বলে অন্য দিকে তাকালো।তন্নি আর আারিশা এতোক্ষন ওদের ঝগড়া দেখছিলো আর হাসছিলো।রাফসান এবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
রাফসানঃ তা আরু তুমি অনিম ভাইয়ার সাথে কথা বলে ভালো কোচিং সেন্টারের খোজ করো এর মাঝে আমিও দেখি ভালো কোথায় আছে।

আরু কিছু বললো না।শুধু মাথা নাড়লো।ওর মনে চলছে অন্য চিন্তা।ওরা আরো কিছুক্ষন থেকে যে যার বাসায় চলে গেলো।আরু বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে এক লম্বা ঘুম দিলো।রাতে যেই ঝড়ের সম্মুখীন হবে তার জন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে আর তা শুধু ঘুমালেই সম্ভব।
বিকালে আরু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে ছাদে চলে গেলো।সূর্য অস্ত যাবে এই সময়টা খুবই সুন্দর।সূর্যের কমলা আভায় পুরো পৃথিবী রাঙিয়ে তুলে।কিন্তু কিছু সময়ের মাঝে রাতের অন্ধকার পুরো রং কেড়ে আধারে ঢেকে রাখে।আরু কিছুক্ষন ছাদে থেকে নিচে চলে গেলো।এখন শুধু ওর বাবা আর ভাই আসার অপেক্ষা।
রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।সবাই খাচ্ছে কিন্তু আরু প্লেটে আঁকিবুঁকি করছে।ও কথাটা কীভাবে বলবে সেটা ভাবছে।আরুকে এমন করতে দেখে ওর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ কী হয়েছে খাচ্ছিস না কেনো?
আরুঃ কই খাচ্ছি তো।
আদিরা আহমেদঃ খেলে প্লেট থেকে একটা ভাত নড়ে নি কেনো?

আরু কিছু না বলে খেতে লাগলো।ওর চোখ কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পাড়ছে না।ওর চেহারার অবস্থা দেখে আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ কী হয়েছে আমার মা’য়ের?
আরুঃ কিছু হয়নি তো বাব।
আশরাফ আহমেদঃ উহু..আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।তোমার চোখ বলছে।
আরুঃ আসলে বাবা…
আশরাফ আহমেদঃ তুমি কী কিছু বলতে চাও?…যা বলার নির্ভয়ে বলো।এখানে সবাই তোমার কাছের মানুষ।

এবার আরু অনেকটা সাহস সঞ্চার করে সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
আরুঃ বাবা আমার একটা কথা ছিলো।আমি জানি না তোমরা কীভাবে নেবে কথাটা।কিন্তু এটা আমার আবদার বলো ইচ্ছা বলো একই।
আশরাফ আহমেদঃ কী চাই তোমার বলো।
আরুঃ………
অনিমঃ চুপ করে আছিস কেনো বল?
আরুঃ——————————————

আরুর কথা শুনে সবাই স্তব্ধ।আরু যে এমন একটা কিছু বলবে কেউ ভাবতেও পারেনি।সবাইকে এমন চুপ থাকতে দেখে আরু বললো,
আরুঃ প্লিজ বাবা আমার কথাটা রাখো।এতে তোমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে আমি জানি আমারও হচ্ছে কিন্তু এটা আমার একটা ইচ্ছ বাবা।
সবাইঃ………
আরুঃ চুপ করো আছো কেনো বাবা?আমার এই কথাটা রাখবে না?

আরুর বাবা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ একটু ভাবতে দাও আমাকে আমি কাল পরশু জানাবো।

বলেই খেয়ে উঠে চলে গেলো।একে একে সবাই চলে গেলো।আরুও রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো।ওর ও কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু ওকে ভালো থাকতে হলে এটা ছাড়া যে আর কিছু করার নেই।আরু কিছু সময় পর চোখের পানি মুছে ঘুমাতে গেলো।এখন ওর বাবা কী বলে সেটাই দেখার বিষয়।
সকালে আরু ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।ওর মা কেমন যেনো ভাড় হয়ে আছে।আরু জানে কালকের ব্যপার নিয়ে।কিন্তু আরুর হাত পা বাধা।আরু ওর মা’কে এটা ওটা বলে ভুলিয়ে ফ্রী করে ফেলেছে।আরু বিকালে তন্নি আর মারিয়াকে আসতে বললো।কাল ও যা বাসায় বলেছে তা ওদেরও জানা দরকার।আরুর ভালে খারাপ সব সময়ে ওর পাশে ছিলো ওর ২ বন্ধু।এখন এই সিদ্ধান্তও ওদের জানাতে হবে।আরু জানে এটা শুনলে ওরা অনেক রাগারাগি করবে।যাই করুক আরু ওদের মানিয়ে নিবে।সেই ভেবেই আরু ওদের বাসায় ডেকেছে।

বিকালে আরু তন্নি আর মারিয়া বসে আছে আরুদের ছাদে।হটাৎ এমন করে ডেকে আনাতে ওরা অবাক হয়েছলো।ভেবেছিলো কী না কী হয়েছে।কিন্তু এসে দেখে সব ঠিকঠাক।মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ ওই এমন কইরা ডাকলি কেন?😤আমার সাধের ঘুমটা হারাম কইরা আইছি😬😴

বলই তন্নির কাধে মাথা রাখলো।তন্নি মারিয়ার মাথাটা সরিয়ে বললো,
তন্নিঃ এতো ঘুম পাইলে রাস্তায় যাইয়া শো।আমার কাঁধ কী সরকারি পাইছত?😒
মারিয়াঃ হু😼।আমি একটু মাথা রাখতে কেমন করে।আর জামাই যে আরো কী কী করবো তখন দেখমু এমন করছ নি😏
তন্নিঃ ওইটা আমার জামাইয়ের প্রাপ্য।তোর তো নাই।তুই তোর জামাইর কাছে যা।
মারিয়াঃ আজকে একটা জামাই নাই বলে😫
আরুঃ তোদের ড্রামা অফ করবি😤।আমি একটা কথা বলতে তোদের ডেকেছি।
তন্নিঃ ও হ্যা ভুলে গেছি এই শয়তানের নানির জন্য।(মারিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
আরুঃ আমি একটা কথা বলবো।কিন্তু এটা শুনার পর তোরা কোনো রিয়েক্ট করতৈ পারবি না।কথা দে?(হাত এগিয়ে দিয়ে)

তন্নি আর মারিয়া ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের চুপ থাকতে দেখে আরু বললো,
আরুঃ কী হলো?
তন্নিঃ রিয়েক্ট করার মতো হলে তো রিয়েক্ট করমুই।
আরুঃ তা জানি।কিন্তু তেরা এটাকে নরমালি নিবি।হাইপার হবি না।
তন্নি আর মারিয়াঃ বল।
আরুঃ আসলে আমি একটা ডিসিশনস নিয়েছি।আশা করি আমার এই ডিসিশনে তেরা আমার পাশে থাকবি?
মারিয়াঃ দোস্ত তুই কী বিয়া করার ডিসিশন নিছস?..আহা কী মজা!তোর বিয়ে হবে,বাসর হবে👏।
আরুঃ 🤨😤
মারিয়াঃ এমনে চাস কেন?😒
তন্নিঃ ওর বিয়া হইলে তোর এতো শখ কেন?বিয়া ওর বাসর ও ওর।তাইলে তুই এতো লাফাছ কেন🤨
তন্নিঃ আরে ইয়ার আমরাও একটু মজা করবো।বন্ধবীর বাসর বলে কথা😜
আরুঃ মারু…😬বেশি বেশি হচ্ছে।
তন্নিঃ তুই ওর কথা বাদ দে।তুই কী বলবি বল।
আরুঃ আসলে…..
তন্নিঃ কী?….
আরুঃ——————————–

আরুর কথ শুনে ওদের মাথ হ্যাং হয়ে গেছে।কী বললো আরু এটা কী বললো?কী করে আরু এই ডিসিশন নিলো।তন্নি বললো,
তন্নিঃ তোর মাথা ঠিক আছে?কী বলছিস এটা?তুই দুষ্টামি করছিস?
আরুঃ আমাকে দেখে কী মনে হয় আমি দুষ্টামি করছি?(শক্ত গলায়)
তন্নিঃ কিন্তু হটাৎ এই সিদ্ধান্ত?
আরুঃ হটাৎ না।আরো আগের থেকে নেওয়া।শুধু পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।
মারিয়াঃ আংঙ্কেল আন্টি কী বলেছে?

আরু কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বললো।সব শুনে তন্নি বললো,
তন্নিঃ তোর মনে হয়না তুই একটু বারাবারি করছিস?বা ভুল ডিসিশন নিচ্ছিস?
আরুঃ না কোনো ভুল নয়।আমি ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মারিয়াঃ আরেকবার ভেবে দেখ।অন্তত আংঙ্কেল আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে।
আরুঃ আমি জানি,আম্মু বাবা,ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের ভলোর জন্য স্বার্থপর হতে হয় মারু।

ওরা সবাই চুপ।তন্নি আর মারিয়া বুঝতে পারছে আরুর এই সিদ্ধান্ত কবে কার নেওয়া আর কেনো নেওয়া।এসব ভেবেই ওরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছড়লো।আরুকে আর কিছু না বলে।অন্য বিষয়ে আরো কিছুক্ষন কথা বলক চলে গেলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here