#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্ব:৭+৮+৯

0
439

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্ব:৭+৮+৯
#Lamyea_chowdhury

আজু,

প্রথমেই রইল এক বোতল ইথাইল অ্যালকোহলের মিষ্টি ঘ্রাণযুক্ত সরি। তুমি কি জানো তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা নিউটন-এর তৃতীয় সূত্রের মতোই সত্য। আমার এই ভালোবাসা স্প্রিং নিক্তি দিয়েও পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার ইলেকট্রন দান করে হৃদয়ের অষ্টক পূরণ করতে চাই কিন্তু মা আমাকে কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরির মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলে আর তুমিও সেই ইলেকট্রন গ্রহণ না করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ন্যায় আচরণ করো। জানো, তুমি যখনই আমার সামনে আসো তখন আমার নিজেকে হিলিয়াম গ্যাসের মতো হালকা মনে হয়, দ্রুত ওঠানামা করে হৃদয়ের ব্যারোমিটার। তাই তো কাল তোমাকে দেখে বারান্দা থেকে দৌড়ে খালি গায়েই তোমার পিছু পিছু ছুটে গিয়েছিলাম রাস্তা পর্যন্ত। কিন্তু সাথে নিয়ে গেলাম একটা কাঠের বাক্স, বাক্সবন্দি করলাম আমার সব ভালোবাসা আর তোমার সামনে যেয়ে তোমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়ে এলাম। আমি মিথ্যে কথা বলেছিলাম। বাক্সটা আমার রুমেই ছিল, ড্রয়িংরুমের সেন্টার টেবিলে ছিল না, সেখানে তোমার তো পা দিয়ে মাড়িয়ে আসা অসম্ভব। তারপরো একটা ছুতো ধরেছিলাম আরকি! তুমি কীভাবে পারলে বাসায় এসেও আমার সাথে দেখা না করে চলে যেতে? আমি কেমন আছি একবারো জিজ্ঞাসা করনি কেন? আচ্ছা তোমার মন খারাপ ছিল কেন? মা নিশ্চয় কিছু বলেছে তাইনা? তোমার মুখ ভার দেখে আমার সেই মুহূর্তে ক্লোরোপিকরিনের কথা মনে পড়ছিল।

গতবছর রিনা আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে রিনা আপুর দূর সম্পর্কের এক ভাগিনা এসেছিল। সারাক্ষণ তোমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল তাই মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এজন্যই বৌভাতের অনুষ্ঠানে তোমার যাওয়াই ক্যানসেল করিয়ে দেই। ফুফু তোমাকে অনেক বকেছিল বুঝি? আমার প্রতি তাই তোমার এত রাগ? বিশ্বাস করো পৃথিবীতে যেমন কার্নো ইঞ্জিনের অস্তিত্ব নেই তেমনি আমার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালোবাসে এমন মানুষেরও অস্তিত্বও নেই, তোমার কল্পনায় থাকলে থাকতে পারে। আর তুমি তো কত ভালো মেয়ে আমি জানিই। সেদিন তুমি একটুও কোমর দেখিয়ে শাড়ি পরোনি তারপরো মিথ্যে বলেছিলাম। ভাগ্যিস তুমি ওভাবে শাড়ি পরনি নয়তো তোমার রূপের লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জ্বালাময় ক্ষত নিয়ে আমি সেখানেই আকাশের নক্ষত্র হয়ে যেতাম।

আজু! সবসময় এমন নক্ষত্র ভাই! নক্ষত্র ভাই করো কেন? তোমার এই সুরেলা কণ্ঠে বিচ্ছিরি ভাই শব্দটি শুনলে ইচ্ছে করে ধমনীতে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে মরে যাই। তারপর তুমি খুশি হবে তো? না থাক তুমি হাসিমুখে আমাকে পটাশিয়াম সায়ানাইড এনে ধরিয়ে দিও তাহলে তোমার আঁকাবাঁকা সুন্দর গেঁজ দাঁতের হাসি দেখতে দেখতে মরেও শান্তি পাব। ভালোবাসি আজু, অনেক ভালোবাসি।

এত ভালোবাসি যে প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখি সকালে উঠে দেখব তুমি আমার মশারি, বিছানাপত্র, রুম, টেবিল, আলমারি সব গুছিয়ে রেখেছ। তারপর আমাকে টেনে ঘুম থেকে তুলবে। না উঠতে চাইলে তোমার আঁকাবাঁকা দাঁতগুলো দিয়ে আমার নাকে কামড়ে দিবে। বহু খেয়েছি মশার কামড় আর ভালো লাগে না। সবসময় মশারি টানিয়ে রাখি তাই মশারা ফাঁকফোকর পেলে মশারির ভিতর ঢুকে বসে থাকে পরে সুযোগ বুঝে ইচ্ছে মতন কামড়ে দেয়।

আচ্ছা তুমি কি কখনো ফাঁকফোকর পেলে আমার রুমে আসতে পারো না? মা তো সবসময় বাসায় থাকে না। মাঝে মাঝে তুমি যখন প্রহরের সাথে দেখা করতে আসো তখন আমার রুমেও তো একটু আসতে পারো,পারো না? আমার রুমটা একটু সাজিয়ে দেওয়া যায় না?

অগোছালো খেচর আমিকে গুছিয়ে না দিয়েই তুমি চলে যাও কেন? হুম বলো বলো জবাব দাও, কি হলো কিছু বলছ না কেন?

আর তোমাকে ঢাকা আসতে না করেছিলাম না? কেন এলে এখানে? এত কাছে থেকেও কি তোমার থেকে দূরে থাকা যায় বলো? আর তোমার বাসার ঐখানে যেতেও পাারি না, মা কেমন করে যেন জেনে যায়। আচ্ছা বাদ দাও। এখন বলো তুমি যে বললে আমি শার্ট আয়রন করি না তাহলে তুমি এসে করে দাও না কেন? চৌদ্দবছরের পুরোনো শার্ট পরি তাহলে আমাকে এসে বলতে পারো না চলো খেচর ভাই তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাব। এই সুযোগে আমিও তোমাকে সুন্দর একটা শাড়ি গিফট করতে পারতাম। অ্যাঁই তোমার কি রঙের জামদানি পছন্দ? তোমার তো আবার নাক উঁচু, বিএমডাব্লিউ আই এইট গাড়ি চাই। আমি হিসাব করে দেখেছি আমাদের কোম্পানির যে ২০ পার্সেন্ট আমার নামে আছে সেই অংশটা বিক্রি করে দিলেই আমি তোমার জন্য বিএমডাব্লিউ আই এইট কিনতে পারব। তবে আমি এটা করব না। প্রথমত মা আমাকে মেরে ফেলবে দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে গরুর গাড়িতে করে নিয়ে আসতে চাই। ঐ যে একটা গান আছে না? “আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে…”

ছোটবেলায় এই গানটা তুমি অনেক শুনতে, মনে পড়ে কি?

অনেক বলেছি এখন ইতি টানতে হবে। শেষ কথা হলো, তুমি আমার সাথে ভাব ধরবে না, একদমই না! নয়তো খবর করে ফেলব। কোন চ্যানেলের খবর করব জানো? মশারি চ্যানেলের আর নিউজ প্রেজেন্সটার হবে প্রহর। প্রহর খবর পড়বে, “মশারি রাজ্যের রাজপুত্র একটি অসহায় আজু মেয়েকে তার মশারিতে বন্দি করে রেখেছে।” তোমার জাঁদরেল মামানি হবে তখন দর্শক, সাধারণ জনগণ যার তখন কিচ্ছুটি করার থাকবে না, হুহ, মনে রেখো কথাটা। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মশারির ভিতর আটকে আমিই মশা হয়ে যাব। গট ইট আজু?

বি.দ্রঃ তোমাকে সবসময় বকুনির ওপরে রাখি যেন ভুলক্রমেও আমার ভালোবাসা তুমি টের না পাও।

ইতি,

মশারি রাজ্যের রাজপুত্র, ‘খেচর ভাই।’

এইটুকু লিখে নক্ষত্র ফাইল সেইভ করল। তারপর পাসওয়ার্ড দিয়ে ল্যাপটপ অফ করে বই খুলে বসল। পড়তে হবে তাকে, অনেক পড়তে হবে নতুবা বিএমডাব্লিউ আই এইট কেনা যাবে না।

আদুরীর সকাল আটটায় ক্লাস ছিল কিন্তু সারারাত শায়েরীর সেবা করতে করতে সকালের দিকে একটু ঘুমানোর কারণে সময়মত আর ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। আদুরীর ঘুম ভাঙল সকাল আটটা আঠারো মিনিটে তাও কলিংবেলের শব্দ শুনে। জেগে দেখল মৌন আর শায়েররী দু’জনেই ঘুমের রাজ্যে। ঘুমঘুম চোখে কোনো রকম হেঁটে গিয়ে দরজা খুলল আদুরী। দরজা খুলতে দেরি হলো কিন্তু আদুরীর নিজেকে কারও বুকে আবিষ্কার করতে দেরি হলো না। আদুরী তৈমুরের শরীর চিরচেনা গন্ধ চিনে। এত কাছেও আসতে হয়না দূর থেকে দাঁড়িয়ে তৈমুর ওকে ফলো করলেও সে বুঝে যায় তৈমুর ওর আশেপাশেই আছে। আদুরী ঘুমের ঘোরেই তৈমুরকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এই তোমার সাথে তো আমার ব্রেকআপ।’

তৈমুর বিগলিত গলায় বলল, ‘প্লিজ এমন বলো না, আমাকে দেখো একবার। চোখ মেলে তাকাও আমার দিকে।’

আদুরী বললো, ‘না আমার ক্লাসও মিস হয়ে গেছে আমি এখন ঘুমবো। কোনো তাকানো নেই।’

বলল ঠিকই চোখ মেলবে না কিন্তু ঠিকই চোখ খুলে তৈমুরের দিকে তাকাল। সাথে সাথে ছিটকে দূরে সরে গেল সে। আদুরীর মুখ পুরো তেতো হয়ে গেছে রাগে। ঝঙ্কার দিয়ে সে বলল, ‘কি হাল করেছ নিজের তুমি?’

– কেন সুন্দর লাগছে না? চুলে কালার করেছি ডিপ ব্রুনেট কালার!

তারপর আদুরীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, ‘দেখো নীল লেন্সও লাগিয়েছি। এবার তো ব্রেকআপ ক্যানসেল?’

আদুরী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, ‘গেট লস্ট! এখনি বের হও, আমার সামনে সঙ সেজে আসা হচ্ছে? এখনি যাও বলছি।’

আদুরীর কপালের রগ রাগে দপদপ করছে। তৈমুর ওকে শান্ত করার জন্য এগিয়ে যেতেই আদুরী দ্বিগুণ রেগে গেল। চিৎকার করে বলল, ‘তুমি যাবে কি না বল। নয়তো নিজ হাতে তোমাকে এখন মেরে ফেলব, জাস্ট গেট লস্ট। তাড়াতাড়ি যেমন ছিলি এমন হয়ে সামনে আয় আমার নয়তো সত্যি সত্যি ব্রেকআপ, একদম সত্যি সত্যি। ’

তৈমুর অবাক হয়ে বলল, ‘আশ্চর্য তুমিই না বললে…’

তৈমুরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদুরী তৈমুরের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘কি বলেছি তোকে? হুম বল কি বলেছি? ব্রেকআপ বললেই কি ব্রেকআপ নাকি? তোকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও বাঁচব বল? বাঁচব না। এই কি না কি বলেছি এজন্য তিনি নিজেকে পাল্টে ফেলতে এসেছেন। আসছেন আমার শাহাজান! জাস্ট হাফ এন আওয়ার টাইম দিলাম আগের মতো হয়ে এসো নতুবা আমার সাথে কন্টাক্ট করার জন্য ভুলেও ট্রাই করবে না।’

এইটুকু বলে আদুরী তৈমুরকে ধাক্কিয়ে বের করে দিল। তৈমুরের কোনো কথা শুনলো না। মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে হনহন করে রুমে এসে আবার শোয়ে পড়ল। ঘুমে তলিয়ে গেল আবার। ঘুমে স্বপ্নও দেখা শুরু করল। আদুরী স্বপ্ন দেখছে! খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন! স্বপ্নে সে তৈমুরের সাথে সী বিচে হাঁটছে, ঝড়ো হাওয়ায় আদুরীর অবাধ্য চুলগুলো চোখেমুখে এসে পড়ছে। আদুরী সরাতে চেষ্টা করতেই তৈমুর ওর হাত ধরে বাধা দিয়ে বলল, ‘এভাবেই থাকুক না! আমার ভালো লাগছে দেখতে।’

আদুরীর ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল, স্বপ্নেও আর সত্যি সত্যি ঘুমের মাঝেও।

শার্ট ইন করতে করতে সায়াহ্ন গান ধরল,

‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে

থাকবেনা সাথে কোন ছাতা।

শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায়।

ভিজে যাবে চটি, জামা মাথা।

থাকবেনা রাস্তায় গাড়িঘোড়া,

দোকানপাট সব বন্ধ…’

গান গাইতে গাইতেই সায়াহ্ন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ঝলমলে মিষ্টি রোদ। সায়াহ্নের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আজকাল আর তেমন বৃষ্টি হয় না। তার বৃষ্টি ভারিপছন্দ। তবে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেই আবার বিরক্ত হয়ে যায় সে। সায়াহ্নের তো ভালো লাগে বৃষ্টির তুমুল বর্ষণ নিষ্পলক দেখতে। তখন শুধু গান গাইতে ইচ্ছে করে। আর কারেন্ট চলে গেলে তো কথাই নেই। চারিদিক অন্ধকার করে আসা তীব্র বর্ষণে মন তখন কেমন করে উঠে। এই কেমন করে উঠা যে সায়াহ্নের কী পছন্দ!

এই কেমন করে উঠা নিয়ে সায়াহ্ন যখন একনাগাড়ে ভাবনার রাজ্যে তলিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠল। সায়াহ্ন জানালার ধার থেকে হেঁটে রিডিং টেবিলের কাছে এলো। মোবাইলের স্ক্রিনে ‘মনুরে’ লিখাটা ভেসে উঠতে দেখেই সায়াহ্ন হেসে মোবাইল রিসিভ করে বললো, ‘হ্যালো ভাইয়া! ভালো আছো?’

সায়াহ্ন মনুরেএএএএ বলে একটা টান দিল তারপর হেসে বললো, ‘আমি বিন্দাস আছি। তোর কি খবর? ’

– উফ সায়াহ্ন ভাইয়া তুমিও না একটা পাগল। কতবার বলি এমন মনুরে বলবে না। কেমন বিচ্ছিরি শোনা যায়।

– যাহ্ কি বলিস! তুই তোর বান্ধবীদের জিজ্ঞাসা করিস ওরাই তখন বলবে মনুরে শুনতে কেমন মিঠা মিঠা লাগে। বরিশালের আছে কেউ?

– ইন ইউর ড্রিমস ভাইয়া। হা হা তুমি যা দুষ্টু না!

সায়াহ্ন নিজের গলায় চিমটি কেটে বললো, ‘আই সয়্যার মৌন থেকে মনুরে বেশি জোস।’

মৌন এবার কপট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘আমি কিন্তু ফোন রেখে দেব। বরিশাল পড়তে যাওয়ার পর থেকেই আমার নামটা তুমি ওটিতে ঢুকিয়ে কেটে ছিঁড়ে বারোটা বাজিয়ে ফেলেছ।’

সায়াহ্ন আত্মসমর্পণের মত করে বললো, ‘আচ্ছা-আচ্ছা, এবার বল কেন ফোন করেছিস? টাকা পাঠাতে হবে?’

মৌন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘ভাইয়া তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’

– আরে বল না।

মৌন আমতা আমতা করে বললো, ‘না এভাবে না, কোথাও দেখা করতে পারবে? সামনাসামনি আলোচনা করলে ভালো হতো আরকি।’

সায়াহ্ন হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘উমমম্ ফ্রি তো নেই তবে তুই বললে টাইম বের করে নিব। কোথায় দেখা করবি?’

– তোমার বাসায় আসব?

সায়াহ্ন তড়িৎ বললো, ‘মাথা খারাপ তোর?’

মৌন ভারি অবাক হলো। তারপর বললো, ‘চাচী তো বলল তুমি অনেক সুন্দর বাসা নিয়েছ, একাই তো থাকো। আগের মত বাসা বা রুম শেয়ার করে তো থাকো না। তখন নাহয় যেতে পারতাম না, কে কি বলবে তাই কিন্তু এখন……’

সায়াহ্ন মৌনকে থামিয়ে বললো, ‘মনুরে তুই যে কি না? বাবা যদি শুনে তুই একা বাসায় এসেছিস আমাকে মেরেই ফেলবে। তোকে তো তোর চাচ্চু কিছু বলবে না মাঝখানে আমাকে কথা শুনিয়ে বলবে এখনও বিয়ে হয়েছে? হয়নি তো তাহলে একা বাসায় এত কিসের যাওয়া আসা? মৌন ময়না পাখিটা নাহয় ছোট তুই তো বুঝিস মানুষ কত কথাই না বানাতে জানে। এটা সেটা আরো দুনিয়ার কিছু বলবে।’

সায়াহ্নের কাছ থেকে বিয়ের কথা শুনে মৌনের অস্বস্তি হচ্ছে খুব। এর আগে বিয়ে নিয়ে চাচ্চু আর চাচীই শুধু কথা বলেছে, এই প্রথম সায়াহ্ন সরাসরি কিছু বলল। এই যে মৌন এতক্ষণ কি সাবলীলভাবে কথা বলছিল এখন সব উবে গেছে। এই সহজ সরল সম্পর্কটায় এখন বহু অস্বস্তি জেঁকে বসেছে। মৌন কোনোরকমে বললো, ‘বিকাল চারটায় তুমি ধানমন্ডি লেকের এখানে থেকো।’

মৌন আর কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো। সায়াহ্ন বাইকের চাবি আর ওয়ালেট খুঁজতে খুঁজতে আবার গান ধরল,

‘দোকানপাট সব বন্ধ

শুধু তোমার আমার হৃদয়ে

ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে

একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে

মনে পড়ে যাবে সব কথা

কথা দিয়ে কথাটা না রাখা

ফেলে আসা চেনা চেনা ব্যথা

অদূরে কোথাও কোন রেডিওতে

এই পথ যদি না শেষ হয়

আর বৃষ্টির রং হয়ে যাবে নীল

আর আকাশের রংটা ছাই

একদিন, বৃষ্টিতে একদিন

বৃষ্টিতে বিকেলে….’

শায়েরী বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠল। মৌন তখন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় ডুবে আছে। শায়েরী মৌন থেকে বইটা খপ করে নিয়ে নিল। মৌন শায়েরীর পাশেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়ছিল। শায়েরী বইটা নিয়ে শুয়ে পড়ে বললো, ‘আহ, আমার নবকুমার। সেই কবে পড়েছিলাম!’

মৌন বিরক্ত হয়ে বললো, ‘আহা দে না, আমার থার্ড রিভিশন চলছে। তোর সাথে ঐ যে একবার পড়েছি এরপর এই নিয়া আরো তিনবার পড়ছি।’

– রান্না হলো নাকি আদুরী করছে?

– নাহ ম্যাডাম অলরেডি ডেইটে চলে গেছেন।

শায়েরী সাইড টেবিল থেকে চুলের কাঠি নিয়ে চুল বাঁধতে বাঁধতে বললো, ‘আমার না এসব একদমই ভালো লাগে না। নিজেও ফাঁসবে সাথে আমাদেরও ফাঁসাবে। আদুরীর বাবা জানতে পারলে মেরেই ফেলবেন, পড়াশুনা সব বন্ধ করে দেবেন।’

মৌন সম্মতির সুরে বললো, ‘আঙ্কেল যা স্ট্রিক্ট! তারপরও আদুরীর কলিজায় পানি থাকে কি করে বুঝে পাই না।’

শায়েরী আনমনে বললো, ‘ডেইটে যায় ভালো কথা তবে না জানি কি করে। মেয়ে এত ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু তৈমুরের নাম শুনতেই যেন ওর মাথা ফাঁকা হয়ে যায়।’

– হুম, তা আর বলতে। কক্সবাজার সরকারীতে চান্স পেল সে। একমাত্র তৈমুর ঢাকায় বলে সে বাবার টাকা খরচ করে সরকারী মেডিকেল ছেড়ে ঢাকায় এসে বেসরকারিতে এডমিট হলো। কি প্রেম ভাবা যায়?

– প্রেম করে এটুকু হলে হতো কিন্তু তৈমুরের সাথে থাকার সময় হিতাহিত জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। রাস্তাঘাটে হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করে, কি করে না করে মেয়ের মাথাই ঠিক নেই।

এইটুকু বলো শায়েরী হেসে ফেলল। তারপর আবার বললো, ‘হ্যাঁরে কথায় আছে না কোনো মেয়ের বদনাম শুনতে হলে ওর বান্ধবীকে যেয়ে বললেই হয় মেয়েটা ভালো তারপরই শুরু হয়ে যায় মেয়ের বদনাম। অনেকটা এমন হয়ে গেল না?’

মৌন কিঞ্চিৎ মুখ বাঁকিয়ে বললো, ‘অ্যাহ, বললেই হলো! আমরা তো ওর ভালো চাই তাই বলি। ওর সামনেও তো বলি, এমন না যে শুধু পিঠপিছে বলি।’

শায়েরী বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো, ‘তা ঠিক, আচ্ছা রাতে কি বেশি জ্বর হয়েছিল?’

– তা একটু হয়েইছিল।

মৌন রহস্যময়ী হাসি হাসলো তারপর আবার বললো, ‘অবশ্য জ্বর যদি ঝড় তুলতে পারে তাহলে জ্বরই ভালো।’

শায়েরী খুব একটা পাত্তা দিলো না মৌনকে। আলমারি থেকে থ্রী-পিস বের করে এগোলো ওয়াশরুমের দিকে। যাওয়ার আগে দেয়ালের রেডিয়াম ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল সকালের দু’টা টিউশনিই মিস হয়ে গেছে। ইশ, মাসের শেষ দিন ছিল। রুচির আম্মু মাসের শেষ দিনেই বেতনটা দিয়ে দেন। মিস হয়ে গেল তো…। বেতনটা পেলে বাসায় কিছু টাকা পাঠাতে পারত, বাবার ঔষধ হয়তো শেষের দিকে!

সায়াহ্ন বেশ আগেভাগেই এসে পড়েছে। মৌনও বেশি একটা দেরি করল না। সায়াহ্ন তখন গুনগুন করে গান গাইছিল। মৌন পিছনে দাঁড়িয়ে ডাকল, ‘এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?’

সায়াহ্ন বললো, ‘তুই হয়তো দেরিতে এসেছিস।’

মৌন ঘড়ি দেখিয়ে বললো, ‘আমি ঠিক টাইমেই এসেছি। তুমি তাড়াতাড়ি এসে পরেছ।’

সায়াহ্ন মৌনর দিকে ভালো করে তাকাল। মৌন রাণী গোলাপি রঙের একটা লং টপস আর জিন্স প্যান্ট পরে এসেছে। কাঁধ পর্যন্ত কোঁকড়া চুলগুলো সাইড সিঁথি করে আঁচড়ানো। কানে, গলায়, হাতে ম্যাটাল এর গহনা। মেটালের আংটিও পরা। ঠোঁটের উপরে বেশ সুন্দর একটা তিল। হালকা সাজ আর সব মিলিয়ে উজ্জ্বল ফর্সা রঙের মৌনকে দেখতে অপূর্ব লাগছে। সায়াহ্ন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, ‘টিপ পরিস না তো।’

মৌন কপালের টিপ ঠিক করতে করতে বললো, ‘টিপ ছাড়া আমার চলেই না।’

সায়াহ্ন একটা ভ্রু কিছুটা উপরে তুলে বললো, ‘আমাকে বিয়ে করলে আমি তোকে টিপ পরতে দিব না কিন্তু। আগে থেকেই বলে রাখলাম।’

মৌনর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, সটান দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল সায়াহ্নের দিকে। তারপর হঠাৎ করেই সায়াহ্নর হাত ধরল। সায়াহ্ন বেশ অবাক হয়েছে। কৌতূহল ভরা চাহনি নিয়ে মৌনকে বললো, ‘ধুর হাত ধরবি না, আগের মতন চট করে হাত ধরার অভ্যাস বাদদে তো। এখন সময় পাল্টেছে।’

মৌন বাচ্চাদের মতন বললো, ‘না ভাইয়া আমি চাইনা সময় পাল্টে যাক, আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা সবসময় আগের মতোই থাকুক। ভাই-বোনের সম্পর্ক, বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক। ছোট থেকে তোমাকে কখনো ওই চোখে দেখিনি। বড় ভাই হিসেবে দেখে এসেছি।’

সায়াহ্ন কিছুটা কেশে বললো, ‘আমিও তো দেখিনি। কিন্তু এখন বিয়ে যেহেতু ঠিক হয়ে গেছে তাই দেখার ট্রাই করছি। আমি কিন্তু আসলেই তোকে টিপ পরতে দিব না। আমার টিপ ভালো লাগে না।’

মৌন আহত হয়ে সায়াহ্নের হাত ছেড়ে দিলো। দূরে কোথাও তাকিয়ে বললো,

‘ভাইয়া আমি সিরিয়াসলি বলছি আমি বিয়েটা মানতে পারব না। এমন না যে তোমার কোথাও খুঁত আছে কিন্তু আমার মন চাইছে না বিয়েটা হোক। তোমার কপালের ডান পাশে চুলগুলোর নিচে যে তিলটা আছে অথবা তুমি যখন শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখো তখন তোমার বাম হাতের মাঝ বরাবর তিলটা দেখলেই সব মেয়ের পাগল হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু আমি না ঠিক ফিল পাই না। জানি তোমার তিল দুইটা অসাধারণ দেখতে কিন্তু এরপরও আমার কোনো অসাধারণ অনুভূতি আসে না।’

সায়াহ্ন নিজের হাতের দিকে তাকাল। তারপর চোখ বড় বড় করে বললো, ‘মনুরে তুই কি অশ্লীলরে বাবা! ছিঃ! এভাবে কেউ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে?’

মৌন কিছুটা লজ্জিত হলো। ধুর! এভাবে কেউ বিয়ের জন্য না করে? মৌন কিছুটা তোতলিয়ে বললো, ‘খুঁটিয়ে দেখার কি আছে? ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি দেখতেই পারি।’

– হুম তা পারিস। এখন বল অন্য কারোর কিছু দেখে তোর ফিল আসে?

মৌন চোখ উল্টানোর ভঙ্গি করল। তারপর সায়াহ্নকে কপট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘কি বলতে চাচ্ছো তুমি? আমি কি সব ছেলেদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি নাকি?’

– না না তা হবে কেনো মনু? রাগিস না তো। এখন বল তোর চাচা-চাচী জানে? ওদের বলেছিস?

মৌন মন খারাপ করে বললো, ‘ভাইয়া আমি চাচ্চুকে কষ্ট দিতে পাারব না, চাচ্চু আমাকে কত্ত ভালোবাসে, কত্ত ভালোবাসে!’

মৌন কথাটা বলতে বলতে কেঁদেই দিলো। সায়াহ্ন হতাশ গলায় বললো, ‘মনুরে মুই তোরে বিয়া করবার চাই না, মুই তো তোর চাচার হুকুম পালন করি।’

মৌন কাঁদতে কাঁদতেই বললো, ‘ভাইয়া প্লিজ! প্লিজ….’

প্লিজ এর বেশি আর কিছুই বলতে পারল না সে। সায়াহ্ন এবার ধমক দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, ‘ধুর ছাই! ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিস না তো। যেভাবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ এর ডেমো দেখানো শুরু করলি ভুলক্রমে বিয়ে হয়ে গেলে তো আমাকে ডুবিয়ে মারবি।’

মৌন রেগে বললো, ‘আমি সহজে কাঁদি না ভাইয়া, আমি খুব শক্ত মনের মেয়ে।’

সায়াহ্ন চিন্তিত গলায় বললো, ‘তাই তো জানতাম।’

– ভাইয়া!

– উফ বাবা হয়েছে হয়েছে চিৎকার করিস না তো ভাবতেদে আমায়।

কিছু সময় দু’জনই চুপ করে রইল তারপর সায়াহ্ন খানিক ভেবে বললো, ‘তুই কী প্রেমটেম করিস?’

মৌন পার্স থেকে টিস্যু বের করে আলগোছে চোখের পানি মুছছিল যেন কাজল লেপ্টে না যায়। চোখ মুছতে মুছতেই বললো, ‘না!’

– তাহলে তো মুশকিল, কি যে করি। আমিও প্রেম করি না তুইও না তাহলে কি ছুঁতো দিব বাবাকে? অজুহাত একটা তো লাগবে, বাবা কেমন জানিসই তো, যুক্তি ছাড়া কিছুই বুঝে না।

মৌন আহত চোখে সায়াহ্নের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আবারো সায়াহ্নের হাত আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। মুখে কিছু বলল না যদিও। সায়াহ্নও এবার হাত ছাড়িয়ে নিলো না এমনকি হাত ছাড়তেও বলল না। সে এখন গভীর ভাবনায় বিভোর। তারপর বিড়বিড় করে বললো, ‘আমি কিছু বললেও তো কাজ হবার কথা না।’

মৌন কথাটা শুনতে পেয়ে আকুতির সরে বললো, ‘কিছু একটা বুদ্ধি বের করতেই হবে।’

সায়াহ্ন খানিক সময় নিলো আরও। তারপর তুরি বাজিয়ে বললো, ‘পেয়ে গেছি মনু।’

মৌনের চোখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠল। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি বলবে চাচ্চুকে?’

– কি আর বলব? বলব আমার ঘরের সিলিং ফ্যানে দুই দিন পরপর ময়লা জমে স্পিড কমে যায়, সিলিং ফ্যান মুছতে লম্বা বউ লাগবে। মনু তো আর অতো লম্বা না, দেড় ফুটের মেয়ে। তাই বিয়ে ক্যানসেল।

মৌন দাঁত কিড়মিড় করে বললো, ‘আমি পাক্কা পাঁচ ফুট, আর মেয়েদের পাঁচ ফুট হলেও চলে।’

– ইহ তোকে বলেছে! পাঁচ ফুট মোটেও চলে না। কমপক্ষে পাঁচ ফুট চার হলে আমার চলবে। এটা বলব তোর চাচ্চুকে চলবে না?

মৌন সাপের মতন হিসহিস করতে করতে বললো, ‘আমাকে বাসা অব্দি নামিয়ে দিয়ে যাও। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে আগেভাগেই না করে দিয়েছি বিয়েতে নতুবা জীবনে বহু পস্তাতে হতো। হুহ টিপে সমস্যা, হাইটে সমস্যা আরো কতো কি! বিশ্বসুন্দরী বিয়ে করো তুমি। আমিও দেখব কোন সুন্দরী তোমার বউ হয়।’

কথাগুলো বলতে বলতেই মৌন সায়াহ্নের বাইকে গিয়ে বসল। সায়াহ্নও মৌনের পিছন পিছন এলো। তারপর বাইকে বসে বাইক স্টার্ট করল।

প্রহর ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে মালাকে বললো, ‘মালা আপু দেখো তো আজকে কোন চশমাটা পরব?’

মালা ড্রেসিংটেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা দু’ডজন চশমা থেকে একটা চশমা হাতে তুলে নিলো। তারপর উল্টেপাল্টে দেখে বললো, ‘এই যে এই খয়েরীটা পরো, তোমাকে সুন্দর লাগবে।’

প্রহর মালার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মালার কথা শুনে আয়নার মধ্য দিয়েই মালার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘শুধু চশমাটা পরলেই সুন্দর লাগবে এমনিতে আমি সুন্দর না?’

মালা জিব কেটে বললো, ‘ছি ছি প্রহর তুমি তো স্পন্সের মিষ্টি পুরাই।’

প্রহর কপালে পরে থাকা চুলগুলোতে ফুঁ দিয়ে বললো, ‘আমার মোবাইলটা দাও তো মালা আপু।’

মালা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘নাও।’

প্রহর ডায়ালপ্যাডে যেয়ে তাসলিমার নাম্বার ডায়াল করল। তাসলিমা তখন একটা জরুরি মিটিং এ ব্যস্ত। দুজন চীনা এসেছে, তাদরে সাথেই মিটিং ফিক্স করা। সেই মিটিং এর মাঝে যখন টেবিলে থাকা মোবাইলটা বারবার ভাইব্রেট হতে লাগল তখন তাসলিমার মেজাজ তুঙ্গে। বারকয়েক ভাইব্রেট হওয়ার পর তাসলিমা বিরক্ত হয়ে যখন মোবাইল অফ করে দিতে নিলো তখন স্ক্রিনে প্রহরের নাম দেখেই মোবাইল বন্ধ করার পরিবর্তে মোবাইল রিসিভ করল উল্টো।

– হ্যালো মা আমি তোমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করলাম তাই বলে রাগ করেছ?

তাসলিমা শান্ত স্বরে বললো, ‘না মা রাগ করিনি।’

প্রহর হেলেদুলে বললো, ‘নতুন ফোন কিনে দিয়েছ তাই ভাবলাম প্রথম কলটাও পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট আর সুন্দর মাকে দেওয়া উচিত।,তাই নয় কি?’

তাসলিমা হেসে ফেললেন। তাসলিমার সামনে বসে থাকা চীনা মানুষ দু’ইজন অবাক চোখে তাসলিমাকে দেখছে। তাসলিমা সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে প্রহরকে বললেন, ‘তাই বুঝি?’

– তিন সত্যি মা।

– ওকে মাই চাইল্ড, ইটস মাই প্লেজার।

– আচ্ছা মা আসার সময় ড্রাইভারকে বলে স্পন্সের মিষ্টি নিয়ে এসো তো, খুব খেতে ইচ্ছে করছে।

– আচ্ছা নিয়ে আসব।

– লাভ ইউ মা, এখন রাখছি তুমি চায়না মালগুলোর সাথে মিটিং করো তো।

– লাভ ইউ টু।

প্রহর ফোন রেখে মালার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আজকে স্পন্সের মিষ্টি খাব, ওকে?’

মালা শুধু হাসলো কিছু বললো, ‘না’

প্রহরই আবার বললো, ‘শায়েরী আপির খুব প্রিয়, আপিকে কল করি ওয়েট, একসাথে খাব।’

প্রহর শায়রীকে একের পর এক কল করতে লাগল কিন্তু শায়েরী একটা কলও রিসিভ করল না। প্রহর তখন নক্ষত্রের রুমে দৌড়ে গেল। নক্ষত্র টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। প্রহর নক্ষত্রকে গিয়েই বললো, ‘দাভাই! শায়েরী আপি আমার ফোন রিসিভ করছে নাা কেনো?’

নক্ষত্র টিভি থেকে চোখ না সরিয়েই বললো, ‘আমি কি জানি? আমি কি ওর অ্যাসিসটেন্ট যে ওর সব খবর রাখব?’

প্রহর চোয়াল শক্ত করে বললো, ‘তুমি নিশ্চই আপিকে কিছু বলেছ।’

– বয়েই গেছে আমার।

প্রহর আর কথা বাড়াল না, দাভাইয়ের সাথে কথা বলে কোনো লাভ হবে না বরং মেজাজ বিগড়ে যাবে। প্রহর তাই নক্ষত্রের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। পরক্ষণেই নক্ষত্র চেঁচিয়ে বললো, ‘শায়েরীর শরীর ভালো না, হয়তো রেস্ট নিচ্ছে। এখন ফোন দিয়ে বিরক্ত করিস না।’

প্রহর নক্ষত্রের রুমে আবার ছুটে এলো তারপর বললো, ‘তুমি কি করে জানো?’

নক্ষত্র থতমত খেয়ে গেল। এখন প্রহরকে সে কি করে বলবে গতরাতে শায়েরী কল দিয়েছিল? না না একদমই বলা যাবে না। নক্ষত্র ভাব দেখিয়ে বললো, ‘আমি জানি না এমন কোনো খবর নেই।’

প্রহর নক্ষত্রকে ভেঙচি কেটে চলে এলো।

(চলবে….)
.
একশত ভাগ গ্যারান্টি দিলাম আপনাকে শারীরিক মানসিক সহ মনে প্রাণে সব দিক দিয়ে ভাল রাখবে এই পেজ এর লেখাগুলো।
AKKAS
AKKAS
বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ভালবাসার গল্প, জোকস, প্রেমের কাহিনী পেতে এখনি পেজটি লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন, আর পড়তে থাকুন মন ছুয়ে যাওয়া অসাধারণ কাহিনী।
AKKAS
AKKAS
AKKAS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here