#_ফাগুন_প্রেমপর্ব১+২

0
1065

#_ফাগুন_প্রেমপর্ব১+২
❤Bornali Suhana❤

বিদায় নিয়েছে শীতল কুয়াশার চাদর প্রকৃতিতে লেগেছে রঙের ছোঁয়া। লীলুয়া বাতাসে পাতা ঝরার শব্দ আর ডালে ডালে কচিকচি পাতার উঁকিঝুকি। কোকিলের ডাক যেনো বসন্তের আহ্বান জানান দিচ্ছে। রক্তিমবর্ণের পলাশ ফুলেরা স্বাগতম জানিয়েছে পহেলা ফাল্গুনকে।
অনেক্ষণ ধরে ইভান বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর তার বাইকটাকে পরিষ্কার করছে। বাইক বললে যন্ত্র বলা হয় কিন্তু তার কাছে ঠিক যেনো নিজের বাচ্চা। ইভানের চেহারাটা কিছুটা লম্বাটে, মুখ ক্লিন শেভ করা। উচ্চতা প্রায় ৬ফুট ২ইঞ্চিখানেক হবে। স্বাস্থ্য তার উচ্চতা অনুযায়ী সুন্দর। তারউপর জিম করায় অলরেডি six pack body আর mussels তৈরি হয়ে গেছে। গায়ের রং খুব বেশি ফর্সা না উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের। অবশ্য শ্যামলা রঙের ছেলেরাই সুন্দর। অতিরিক্ত ফর্সা ছেলেদের কেমন ফার্মের মোরগ দেখায়। গেটের কাছেই বড়সড় একটা পলাশ ফুলের গাছ। অনেকটা ফুল নিচে পড়ে আছে কিছু ফুল থেতলে গেছে। দেখতে ভালো লাগছে না এখন। ফুলতো গাছেই সুন্দর নিচে পড়লেও সুন্দর দেখায় কিন্তু যতক্ষণ তাজা থাকে ততক্ষণই। দীপু ভাইয়া ঝাড়ু হাতে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে উঠানটা পরিষ্কার করবেন। পুরো উঠান জোরে সবুজ ঘাস শুধু এই দু’তলা বিশিষ্ট ঘর থেকে গেট পর্যন্ত রাস্তাটা পাকা করা। এই বাসাতে আজ প্রথম সকাল। বাসাটা বাবাই বানিয়েছেন। এর আগে কখনো এখানে আসা হয়নি। তবে মা-বাবা নাকি বিয়ের পর অনেকবার এখানে এসেছেন। বাসা দেখতে অনেক সুন্দর আগে যেখানে জীবনের প্রায় ১৯টা বছর পার করেছি সে বাড়িটাও অনেক সুন্দর। অবশ্য সেটা একতলা বিশিষ্ট বাড়ি। পরিবেশটাও অনেক মনোরম। এই বাসাটা বিশাল জায়গা জুড়ে আছে। ডান পাশে সুইমিংপুল, সুইমিংপুলের পাশে অনেকটা গাঁদা ও গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো। সামনে একটা দোলনা ঝুলছে। বা পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। যেখানে ইভান বসে বাইক পরিষ্কার করছে। ফারহান আহমেদের কথায় তার কাজে এবং ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে।
-“কিরে আর কত পরিষ্কার করবি? এবার নিজে ফ্রেশ হয়ে চল কলেজে যেতে হবে তো।”
ইভান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“বাবা না গেলেই কি নয়? আমি না হয় পরিক্ষার সময় গিয়ে পরিক্ষাটা এটেন্ড করলাম।”
বাবার লম্বা, ফর্সা মুখটা খুব গম্ভীর দেখালো এটা সবসময় হয় না। গম্ভীর হলেই তিনি মিনিটের ভেতর হেসে দেন। এবারো তাই হলো। বাবা এক গাল হেসে পাশেই বসে গেলেন আর আমাকে বললেন,
-“আরে না তা হবেনা। কলেজে গেলে ক্লাস করলে পরিক্ষার সময় তোর জন্যই ভালো হবে। আর অনেক বন্ধুও পাবি নতুন জায়গা বন্ধুবান্ধব থাকলে সময়টাও ভালো কাটবে।”
ইভান খুব ভারী একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর বাবার দিকে তাকালো। ততক্ষণে ঈশা হাই তুলতে তুলতে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। সে তার ছোট ভাই আর বাবার কথা ব্রু কুচকে তাকিয়ে শুনছে। কিন্তু বেশিক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো না।
-“বাবা তোমার ছেলের আর লেখাপড়া এস.এস.সি তে একবার ফেল করাতে বাইক দিয়ে খুশি করেছো এইবার এইচ.এস.সি তে যখন ফেল করবে একটা BMW কার কিনে খুশি করে দিও। নয়তো তোমার বাচ্চা ছেলেটা ন্যাকা কান্না করে দেশকে না আবার বন্যা কবলিত করে দেয়। হাহাহাহাহা।”
-“হ্যাঁ বাবা এই পৃথিবীতে তোমার মেয়ে তো একাই পড়ালেখা করেছে আর কেউ করেনি।”
-“হ্যাঁ করেছিই তো। তোর মতো নই আমি। অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষেও ফাস্ট ক্লাস পেয়েছি দেখিস এবারও তৃতীয় বর্ষেও ফাস্ট ক্লাস পাবো।”
-“হুম আমাকে মিষ্টি খাওয়াস প্লিজ।”
এক গাল হেসে ইভান ঈশাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে দিলো।
-“হয়েছে ঈশা তুই থামবি? আমার ছেলেকে আর কত জ্বালাবি?”
-“এজন্যই তো বলি মা বুমনিকে বিয়ে দিয়ে দাও সব জ্বালানো খতম হয়ে যাবে।”
ঈশা আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইলো না।
-“হ্যাঁ তোমার ছেলেকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছো। আমাকে বিয়ে দেবার পরই টের পাবে।”
কথাটা বলেই ব্রাশ হাতে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওর কেমন যেনো সবকিছুই খালি খালি লাগছে এখানে। নতুন জায়গা কাউকে চেনে না। ভার্সিটি থেকেও TC নিতে হয়েছে। আগের ফ্রেন্ডগুলাও পেছনে পড়ে গেলো। হয়তো ওরা আজকেও ভার্সিটিতে যাবে। শুধু আমিই যাবো না। মিস করছি খুব বেশি।
সাহারা ইসলাম নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত আছেন। সাথে উনাকে সাহায্য করছে রানু। রানু সেই ছোট বেলা থেকেই উনাদের বাড়িতে থাকে। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে এই বাড়িতেই রেখে দিয়েছেন সাহানা ইসলাম। দীপুই হলো রানুর স্বামী। খুব বিশ্বাসী দুজন ব্যাক্তি এরা। তাই তো নিজের পরিবারের মতোই দেখেন ওদের। কখনোই কাজের মানুষ হিসেবে আড় চোখে দেখেন নি কেউ। ছেলে-মেয়ে আর স্বামীকে খাইয়ে অফিসে পাঠাতে হবে। এই রান্নাটাই তার প্রধান কাজের মধ্যে পড়ে। আগে অবশ্য একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়াতেন। কিন্তু এখন নিজের ছেলেমেয়ে আর স্বামীর খেয়াল রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
-“কি হলো সবাই খেতে এসো।”
নিচে থেকেই সবাইকে আওয়াজ দিলেন। সাথে সাথে সবাই তৈরী হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির। ইভান ফরমাল সাদা একটা শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে, এক হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি, অন্য হাতে ব্রেসলেট। চশমাটা খুলে হাতের মাঝে রেখেছে। বাইকে উঠেই চোখে লাগাবে। পারফিউমের মিষ্টি গন্ধে চারদিক ছেয়ে আছে। মনে হয় সব পারফিউম আজকেই গায়ে মেখে নিয়েছে।
নাস্তা শেষ করে ইভান মাকে জড়িয়ে ধরলো আর উনি তার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেন সাথে হাজারো দোয়া। ঈশা আজকে ভার্সিটি যাবেনা বলে ঠিক করেছে। আজকে বাসায় থেকে মাকে সাহায্য করবে এবং বিকেলের দিকে একটু বাইরে যাবে রানুকে নিয়ে। শপিং করবে একটু ঘুরবে চারপাশ ভালো করে দেখবে। হুম এটাই ঠিক হবে। নিজেই নিজের মনের মাঝে কথাগুলো বলে নিলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকতেই টের পেলো আজকে পহেলা বসন্ত। ও তো ভুলেই গিয়েছিলো। অবশ্য ভুলার কথাও বাসা পরিবর্তনসহ এতো ঝামেলা হয়েছে যে এসব মনে থাকার কথাও নয়। কত ইচ্ছে ছিলো এই বসন্ত উৎসব নিয়ে। সবাই একরকম শাড়িও কিনে রেখেছিলাম। ঈশা একবার সেই শাড়িটা লাগেজ থেকে বের করে হাতে নিয়ে হাত বুলালো। একটা ম্লান হাসি দিয়ে ফেইসবুকে বেস্ট ফ্রেন্ডদের ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দিয়ে দিলো।
-“সাদামাটা বসন্ত মোবারাক।”
`
আজ পহেলা ফাল্গুন সাথে ইভানের কলেজের প্রথম দিন। কলেজের প্রথম দিন বলতে এই কলেজে প্রথম যাচ্ছে সে। বাবার বিজনেসের কারণে যা হলো আর কি। রাজশাহীর কলেজ থেকে টিসি নিয়ে ঢাকা একটা প্রাইভেট স্কুল এন্ড কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এডমিশন নিয়েছে। আগের কলেজের সব বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ছে। কত ঘুরাফেরাই না করতো তাদের সাথে। যদিও ও এস.এস.সিতে ফেল করায় তার স্কুল ফ্রেন্ড সবাই তাকে রেখে এক বছর এগিয়ে গিয়েছিলো। ছোটদের সাথে ক্লাস করলেও দিনশেষে সেই স্কুল ফ্রেন্ডদের সাথে রাসু মামার চায়ের দোকানে আড্ডায় জমে উঠতো।
`
কলেজে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলো না। এখানে কারো সাথে পরিচিতিও নেই তবুও ফারহান আহমেদের জোরাজোরিতে যেতে হচ্ছে। তিনি একজন ব্যাংকার ছিলেন। অল্প সময়েই জব ছেড়ে এখন নিজে একটা গাড়ি কোম্পানির মালিক। বেশ নামডাক আছে উনার কোম্পানির। দা আহমেদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ নামেই সবখানে খ্যাত। এক নামেই সবাই আহমেদ গ্রুপকে চিনে। ঢাকাসহ বিভিন্ন ছোট বড় কোম্পানি উনাদের থেকে গাড়ি কালেকশন করে। ২০১৮সালে বেস্ট বিজনেসম্যান অফ দা ইয়ার এওয়ার্ডও পেয়েছেন। বিভিন্ন নতুন নতুন গাড়ি বেশির ভাগ উনার কোম্পানিই ডিজাইন করে। ঢাকায় ওই কোম্পানির একটা নতুন শাখা খুলছেন। তাই জন্য এখানে আসা।
ইভানও সেই একই পথের পথিক। আপাদত বিজনেস স্টাডিজ নিয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে বাবার কোম্পানি জয়েন করবে। ইন্টার কম্পলিট করেই তাকে পড়ার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হবে। ফারহান আহমেদ সবকিছুই আগে থেকে ভেবে রেখেছেন।
`
বাইক চলছে তার আপন গতিতে বাবা-ছেলে একসাথে যাচ্ছেন। ইভান বাইক চালাচ্ছে আর বাবা পেছন থেকে তাকে ধরে বসে আছেন। এটা উনার সবসময়ের কাজ। অফিসে যাওয়ার সময় ছেলের বাইকে করে কলেজ পর্যন্ত যান ছেলে কলেজে ঢুকে গেলেই তিনি তার নিজের গাড়ি করে অফিসে পৌঁছে যান। ছেলের সাথে বাইকে চরে যেতে উনার মাঝে এক অন্যরকম আনন্দ কাজ করে। বাইকের পেছন পেছন ফারহান আহমেদের কার খুব ধীর গতিতে চলছে। কলেজের সামনে এসেই বাইক থেকে নেমে কারে উঠে গেলেন। ইভান তাঁকে বিদায় জানিয়ে কলেজে ঢুকে গেলো।
কলেজে পা দিতেই বুঝতে পারলাম আজকে বসন্ত উৎসব। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে গেটের সামনে আসলাম। অনেক সুন্দর একটা আলপনা আঁকা। বাইকটা পাশে পার্ক করে আলপনাকে পা দিয়ে পিষে সামনে চলে গেলাম। হয়তো তাতে এই আলপনার কোন কিছুই আসে যায় না। তার তো আর বুঝার ক্ষমতা নেই। অবশ্য আলপনাটা রঙ দিয়ে আঁকা হয়েছে পা দিয়ে পিষে গেলেও তার সৌন্দর্যে কোন ঘাটতি হবেনা। কিছুদূর এগুতেই কানে সুর এসে বিঁধছে সাথে হৃদয়েও। অডিটোরিয়ামে গান হচ্ছে যার মিউজিক এখানেও ভেসে আসছে। একটা মেয়েলি কন্ঠ গান গাইছে। অসম্ভব সুন্দর তার কন্ঠ। ঠিক যেনো কোন মধুরকন্ঠী যার জন্মই হয়েছে গান গাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম একটা নজরুল গীতি গাইছে।
`💛
আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি
আহা…. আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।
দুলে আলোছায়া বন-দুকূল
ওড়ে প্রজাপতি কলকা ফুল
কর্ণে অতসী স্বর্ণ-দুল
আলোক-লতার সাতনরি।।
সোনার গোধূলি নামিয়া আয়
আমার রূপালি ফুল-শোভায়
আমার সজল আঁখি-পাতায়
আয় রামধনু রঙ ধরি’।
কবি, তোর ফুলমালী কেমন
ফাগুনে শুষ্ক পুষ্প-বন
বরিবি বঁধুরে এলে চ্যমন
আহা……রিক্ত হাতে কি ফুল ভরি’।।
আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি
আহা….আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।
`
গান শুনতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে আশেপাশে কি হয়ে যাচ্ছে সেদিকে আমার কোন খেয়ালই নেই। কারো ধাক্কায় বুঝতে পারি আমি অডিটোরিয়ামের দরজা থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটি সরি বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। পরক্ষণেই এই কন্ঠের অধিকারিণীকে দেখার লোভ জেগে উঠে। আমার পা আমার অজান্তেই অডিটোরিয়ামের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু একি গানটা আমি আর শুনতে পাচ্ছি না কেন! এবার আর দেরী না করে দৌড় দিলাম। কিন্তু এসে দেখি স্টেজে সারি বেঁধে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে এখন নাচবে। আমি স্টেজের সরাসরি দাঁড়িয়ে আছি। আমার চোখ এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো কিন্তু এমন কাউকেই দেখছিনা যে গান গাইতে পারে। আবার মনে হচ্ছে এতো মানুষের মাঝে তো যে কেউই গান গাইতে পারে কিন্তু আমি কিভাবে চিনবো! হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন আমায় উদ্দেশ্য করে বললো,
-“এক্সকিউজ মি, ওইখানে সিট আছে আপনি বসতে পারেন।”
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে। তার কথার আওয়াজ আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। আমি তো তাকে দেখতে ব্যাস্ত। এতো সুন্দর কোন মেয়ে হয় নাকি? ঠিক যেনো বনলতা সেন!
শুনেছিলাম বসন্ত মানেই পূর্ণতা, ফাগুন এলে নাকি মনে রঙ ধরে। আজকে এই বাসন্তীকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো ও আমার জীবনকে পূর্ণ করে দিতেই এসেছে। প্রকৃতি যেনো ইশারা করছে ওর হাত ধরেই হেঁটে যাবো জীবনের বাকীটা পথ।
তাহলে কি এই ফাগুনে আমার মনেও রঙ ধরা দিবে?
আমার মনেও কি উঁকি দিচ্ছে ফাগুন প্রেম!
-“এই যে শুনছেন?”
মেয়েটা আমার চোখের সামনে তুড়ি মেরে জিজ্ঞেস করতেই আমার ঘোর ভাঙে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ওকে ভালোভাবে দেখছি। আলতা রাঙা পায় দুই বেল্টের জুতো পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে সবাই বাসন্তি রঙের শাড়ি আর খোঁপায় দিয়েছে গাঁদা ফুল সেখানে এই বাসন্তী পড়ে আছে সাদা রঙের শাড়ি, হলদে রঙের ব্লাউজ। চুলগুলো একদিকে সিঁথি কেটে খোঁপা বেঁধে তার মাঝে গুজে রেখেছে দুধ সাদা আর হলুদ রঙের কাঁঠালিচাঁপা ফুল। খুব সাধারণের মাঝেও সে আজ অসাধারণ৷ সবার চেয়ে অনন্য। নজরকাঁড়া সৌন্দর্য তার মাঝে। গোলগাল মুখ আর উচ্চতা খুব হলে ৫ফুট ২ইঞ্চি হবে। ঠিক দুধে আলতা গায়ের বরণ। চোখে টেনে গাঢ় করে কাজল লাগানো। ঠোঁটে গোলাপিবর্ণ লিপস্টিক আর মুখে হালকা মেকাপ করা এর চেয়ে বেশি কিছুই নয়। মেকাপের সৌন্দর্য্য যেনো বাসন্তীর নিজস্ব সৌন্দর্য্যের কাছে হার মেনেছে।
-“বোবা নাকি? কথা বলতে পারেন না?”
আবারো বাসন্তীর কথায় আমার ঘোর ভাঙে।
`💛
-“”বসন্ত এসেছে তুমিও এলে বদনে সাদা শাড়ি,
দু’হাতে রুপালী চুড়ি।
খোপায় জড়িয়ে কাঁঠালিচাঁপা ফুল,
কানে তেমনি দুল।
ঠোঁটে আলতো গোলাপ ফুলের আভাস,
পা দুটো যেন রক্তিম পলাশ।
রূপের প্রদীপ জ্বেলে হয়েছো অনন্য,
আজ মনে লয় জম্ম আমার শুধু তোমারই জন্য।
দুরন্ত আমি ফাগুনের রঙ গায়ে মাখি,
আঁখি ভরে দেখি বাঁকা ঠোঁটে প্রাঞ্জলতার হাসি।
চপল হৃদয়ে যতনে এঁকেছি ভালোবাসার ফ্রেম।
ওগো বাসন্তী,
তুমি যে আমার অবেলায় দেখা প্রথম ফাগুন প্রেম।””
`
-“মানে?”
-“ভালোবাসি।”
-“কি যা-তা বলছেন?”
-“যা-তা নয় হৃদয়ের কথা।”
-“হু! মানে কি? আপনি কে?”
-“বসন্তপথিক।”
-“আচ্ছা! ভালোই কবি কবি টাইপের কথা বলেন দেখছি। আপনি কি এই কলেজের স্টুডেন্ট?”
-“জ্বি হ্যাঁ। আর তুমি বললে কবিই ভালো। তা আমার কথার কোন জবাব দিলেনা?”
-“আপনি কি কোন প্রশ্ন করেছেন?”
-“প্রশ্ন করিনি এটাকে প্রপোজ বলতে পারো।”
-“আপনি যে আমাকে একটু দেখেই না চেনে, না বুঝে প্রপোজ করে বসলেন জানেন আমি কে?”
-“উহু। জানিনা বলেই তো বাসন্তী নাম দিয়েছি তোমার। তবে এখন বললে জেনে নিবো তুমি কে। তার আগে আমার প্রপোজালের জবাবটা দাও।”
-“আমি কখন থেকে আপনাকে আপনি করে বলছি আর আপনি কিনা আমাকে তুমি করে বলছেন? আর কি সব ফালতু প্রপোজ লাগিয়ে রেখেছেন হু?”
-“এই দেখো কোন ফালতু প্রপোজ না। আমার প্রপোজের ইনসাল্ট করবে না। আমি এই প্রথম কোন মেয়েকে প্রপোজ করেছি। আর হ্যাঁ আমার কোন সমস্যা নেই। তুমিও আমাকে তুমি করে বলতে পারো।”
কথাটা বলেই ইভান গাল ভরে হাসি দিলো। বাসন্তী কেমন চোখ কুচকে তাকালো। বাসন্তী আনমনে ভেবে যাচ্ছে ছেলেটা কে! আর এভাবেই বা কেন কথা বলছে!
-“ইস এভাবে তাকিও না আমি তো মরেই যাবো।”
-“আপনি যদি জানেন আমি কে তাহলে হয়তো এখানে দাঁড়ানোর সাহসটাও করবেন না।”
ইভান একটু অবাক চোখে ব্রু নাচিয়ে বললো,
-“আচ্ছা তা কে তুমি? বলো না প্লিজ প্লিজ প্লিজ বলো। আমিও দেখবো কে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে আর কে যায়।”
কথাটা শেষ করতেই খেয়াল করলো পেছন থেকে একটা মেয়ে চেচিয়ে বার বার কাকে যেনো ডাকছে।
-“এই আবির, আবির এদিকে আয় তাড়াতাড়ি।”
ইভান একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে তারপর বললো,
-“এই যে এইখানে আবির কে এতো ডাকছে তবুও সাড়া দিচ্ছেন না?”
বাসন্তী রাগে মাথায় এক পাশে ডান হাতের দু’আঙুল দিয়ে ধরে দাঁত কটমট করছে।
-“এই আবির কথা কানে যায় না? কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোকে?”
মেয়েটা বাসন্তীকে ধাক্কা দিয়ে কথাটা বললো। আমি তো চমকে উঠি! এটা কেমন মিরাক্কেল! এমনও হতে পারে নাকি!
-“তোমার নাম আবির?”
ইভান তার বাসন্তীর নাম শুনে অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেছে। এতোক্ষণ যার সাথে ও কথা বলছে যার নাম সে বাসন্তী দিয়েছে তার নাম আবির? ইভান হো হো করে হেসে দিলো। বাসন্তী এবার আরো বেশি রেগে গেলো। ওর চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তবুও মেয়েটা অনেক শান্ত হয়ে আছে।
-“হাহাহা আবির? এটা তো ছেলেদের নাম এই তোমার নাম আবির কে রেখেছে হুম? আর কোন নাম পেলো না? আর কোন ভালো নাম নেই তোমার?”
আবির রাগে এবার লাল বর্ণ ধারণ করেছে। দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
-“এই তোকে না কতদিন বলেছি আমাকে আবির বলে ডাকবি না। বর্ণালী বা সোহানা বলেও তো ডাকতে পারিস। এভাবে যে কারো সামনে কেন লজ্জায় ফেলিস বলতো?”
-“আচ্ছা বাবা সরি এবার তো চল বোন আমার।”
-“ওহ তার মানে তোমার নাম বর্ণালী সোহানা?”
-“আরে না না ওর নাম বর্ণালী আবির সোহানা।”
মেয়েটা কথাটা পাশ থেকে বলে উঠলো। বর্ণালী চোখ কুচকে বন্ধ করে আবার খোলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মেয়েটার মাথায় একটা চাপড় দিয়ে দিলো। ইভান এসব দেখে হেসে যাচ্ছে একা একাই। এবার ইভান বলে উঠলো,
-“ওহ নাইস নেইম। আর আপনার নাম?”
-“আমি ইসরাত রুমানা। রুমু বলে ডাকতে পারেন। আর আপনি?”
-“আমি ইভান আহমেদ আ….আ….বির।”
ইভান আবির নামটা একটু টেনে বললো। বর্ণালী ওর নাম শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার নামও কেন আবির হতে গেলো? এতোটুকু পুচকে একটা ছেলে আমার সাথে মজা নিচ্ছে!
-“রুমু এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে চল অনেক কাজ বাকি আছে এখনো। নাহলে প্রিন্সিপাল স্যার রেগে যাবেন।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চল। আচ্ছা আসি ইভু পড়ে কথা হবে।”
-” ঠিক আছে রুমু বাই।”
ইভান দাঁড়িয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখছে। হুট করেই খেয়াল হলো আরে দেখা হবে কিভাবে ওর সম্পর্কে তো কিছুই জানিনা। শুধুমাত্র নাম ছাড়া।
-“এই বাসন্তী তুমি কোন ডিপার্টমেন্টের সেটা তো বলে যাও।”
কথাটা বলতেই বর্ণালী পেছন ফিরে বললো,
-“আমি কে তা কালকে খুব ভালো করেই জানতে পারবেন।”
রুমুর হাত ধরে টেনে রাগে গজ গজ করে বর্ণালী এখান থেকে চলে গেলো। আর ইভান পেছনে একা একাই হাসছে।
কে এই বাসন্তী? কি তার পরিচয়?
ভাবতে ভাবতেই ইভান বর্ণালীর পিছু পিছু ছুটে গেলো কিন্তু দেখা পেলো না। তাই আবারো অডিটোরিয়ামে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। হয়তো আরেকটা বার তার বাসন্তীকে দেখার আশায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাচ শেষ হয়ে এলো।
বর্ণালী নূপুর পায়ে রুমঝুম শব্দ করে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। নাচ শেষ হতেই স্টেজে মাইক হাতে নিয়ে উপস্থাপনা করতে গেলো। নিজেকে কিছুটা নার্ভাস লাগছে। ইভান ছেলেটা কেমন হেসে হেসে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এতটুকু ছেলে আর আমার সাথে এভাবে কথা বললো? আমাকে কি খুব বাচ্চা মেয়ে লাগে নাকি? না না মোটেও না। ইভানের বসে থাকা সফল হয়েছে। তার বাসন্তীকে আরেকটাবার দেখতে পেলো। মনে মনে ভেবে নিয়েছে যতক্ষণ না অনুষ্টান শেষ হচ্ছে ততক্ষণ সে উঠছেনা। ইভান পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে একটু কাত হয়ে বসে আছে আর ভাবছে প্রথম দেখায় কি আসলেই ভালোবাসা হয়?
হ্যাঁ হয়ই তো নাহলে বাসন্তীর প্রতি তার এই টানটা কি?
হ্যাঁ এটাই প্রেমে পড়ার প্রথম ধাপ মনে হয়। আগে তো কখনো প্রেমে পড়েনি তাই বুজতেও পারছেনা। কিন্তু তার প্রেমে অনেক মেয়েই পড়েছে।
সেও কম কিসে?
কয়েকদিন ঘুরেছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছে কিন্তু প্রেম পর্যন্ত কখনোই আগায়নি। তবে আজ বাসন্তীকে দেখে তার মনে প্রেম উঁকি দিচ্ছে। তাইতো সাতপাঁচ না ভেবে সাথে সাথে প্রপোজ করেই বসলো। পরে না আবার হারিয়ে যায়। আজ অবশ্য প্রপোজ করার মতো দিন। প্রথমত আজ পহেলা ফাল্গুন মানে বসন্ত উৎসব তার উপর আজকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি যাকে বলে ভালোবাসা দিবস।
#_____চলবে……..

আজ অবশ্য প্রপোজ করার মতো দিন। প্রথমত আজ পহেলা ফাল্গুন মানে বসন্ত উৎসব তার উপর আজকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি যাকে বলে ভালোবাসা দিবস। যদিও এসব আমি কখনোই মানি নি তবুও আজকে মানতে ইচ্ছে করছে।
`
ঈশা আর রানু বাইরে বের হয়েছে তাও রিকশা করে। সাহারা ইসলাম কতবার বললেন গাড়ি নিয়ে বের হতে কিন্তু ঈশা শোনার মত পাত্রী নয়। ও রিকশা করেই ঘুরতে চায়। অনেক্ষণ ধরে রিকশা চলছে। একটা শপিংমলের সামনে এসে রিকশা থামিয়ে দুজনে নেমে শপিং করতে ঢুকে গেলো। টুকটাক শপিং করে বেরিয়ে এলো। রানুর হাতে ৪টা ব্যাগ আর ঈশার হাতেও ৩টা ব্যাগ। রানু কতবার বললো,
-“বুমনি আমারে দেন না আমিই নিতে পারুম।”
কিন্তু ঈশা তা না শুনে নিজের হাতেই রেখেছে আর রানুকে বলেছে,
-“তুমি কত নেবে রানীসাহেবা আমাকেও কিছু নিতে দাও।”
ঈশা আর ইভান রানু কে রানীসাহেবা আর দীপুকে রাজাসাহেব বলে ডাকে। কেন জানি আলাদা একটা মায়া কাজ করে ওদের এই ডাকের মাঝে। ওরা এসে কিছু খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকুলো। অনেক্ষণ ধরেই রানু খেয়াল করছে একটা সুদর্শন ছেলে ওদের পিছু নিয়েছে সেই শপিংমল থেকে।
-“বুমনি দেহেন না ওই ছেলেডা কহন থাইকা আমাগর পিছু নিছে।”
-“সেটা না হয় দেখবো কিন্তু তোমাকে না কতবার বলেছি এই ভাষায় কথা না বলতে?”
রানু একটু লজ্জা পেয়ে যায়। এক গাল হেসে বলে,
-“সরি বুমনি। আসলে মাঝে মাঝে খেয়ালই থাকেনা।”
-“হুম এখন ঠিক আছে। তা কোন ছেলেটা পিছু নিয়েছে?”
-“ওই যে দেখেন পাশের টেবিলে বসে কেমন ঢ্যাবঢ্যাব কইরা সরি করে তাকাচ্ছে।”
ঈশা এদিক ওদিক তাকিয়ে ওই টেবিলের দিকে নজর দিতেই দেখলো আসলেই ছেলেটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।
-“রানীসাহেবা ছেলেটার মনে হয় তোমাকে পছন্দ হয়েছে।”
-“কি যে বলেন বুমনি। আমার কি এখন এমন বয়স আছে নাকি? হিহিহি।”
কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলেও লজ্জায় রানুর গাল লাল হয়ে গেছে। ঈশার খুব মজা লাগছে এই বিষয়টা দেখতে। কিন্তু ঈশা খেয়াল করছে ছেলেটা বার বার ওর দিকেই তাকাচ্ছে। কেমন যেনো অসস্থি লাগছে ওর। কোনরকম খেয়েই ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু রিকশাতে উঠতেই দেখে ছেলেটা আরেকটা রিকশা নিয়ে ওদের পিছু পিছুই আসছে। ঈশার মাঝে এখন এই জিনিসটা খুব ভালোই লাগছে। প্রথম এমন কিছু হচ্ছে ওর সাথে যে কোন ছেলে এভাবে ওর পিছু নিয়েছে। বাসার সামনে এসে নামতেই ছেলেটা কিছুদূর ওর রিকশা থামিয়ে দেয়। বারবার ছেলেটার চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। পরক্ষণেই দুজনে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঈশা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকে গেলো। আর এখানে দাঁড়ানোর কোন কারণ নেই। হয়তো ওই অচেনা ছেলেটাও এতক্ষণে চলে গেছে।
`
ইভান অনুষ্টান শেষে গেটের সামনে বাইকে বসে আছে। হাতের এক আঙুলের মাঝে চাবি ঢুকিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরাচ্ছে। নিজের মাঝেই একটা আনন্দ বিরাজ করছে। বর্ণালীকে একবার দেখবে বলে বেচারা অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছে।।
রুমু সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে বর্ণালীর কাজ দেখছে। মেয়েটা এক হাতে কত সুন্দর করে কাজ সামলে নেয়। এই তো সেদিন ও এখানে আসলো। আজকে সবার প্রিয় একজন। প্রিন্সিপাল স্যার সবসময় ওকেই সবকিছুর দ্বায়িত্ব দেন। ওর মতো কেউ এতো সুন্দরভাবে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেনা।
-“কিরে চল কাজ তো শেষ।”
-“হুম চল।”
দুজনে একসাথে গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যে নেমে আসতে আর বেশিক্ষণ নেই। সূর্যকুমার আর দেখা যাচ্ছেনা। হয়তো এই বিশাল বিশাল বিল্ডিংয়ের ওপারে লুকিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের শহরে ডুব দেবেন। আর জেগে উঠবেন চন্দ্রাবতী। উনার আবার অনেক ক্ষমতা। তাইতো সবসময় সাথে কোটি কোটি দাসদাসী নিয়েই মহল থেকে বেরিয়ে আসেন। যাদের বলা হয় তারারাজি। আকাশের তো সেই কি রাজ কপাল। সবসময় সুখ আর সুখ। আর সুখী থাকবেই বা না কেন তার যে সূর্যের সাথে বন্ধুত্ব আর চাঁদের সাথে প্রেম আছে। কিন্তু না আজ আকাশ অন্য কথাই জানান দিচ্ছে। চাঁদের সাথে অভিমান করেছে। আজকে আর আকাশের বুকে মনে হয় চাঁদকে দেখা যাবেনা। আকাশের বুকে মেঘ জমে আছে। শুধু চাঁদের অপেক্ষা সে কখন এসে অভিমান ভাঙাবে আর আকাশ তার অভিমান কান্নার ছলে বৃষ্টিরুপে ঝড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে নেবে। তার বুকে ঠাঁই দেবে আবারো চাঁদকে। আকাশটা যে বড্ড বেহায়া কখনোই চাঁদের সাথে অভিমান করে থাকতে পারেনা। মাঝে মাঝে সূর্যকুমারের সাথেও রাগ করে কিন্তু বন্ধুর সাথে কি আর রাগ করে থাকা যায়? কখনোই না। সূর্যকুমার খুব ভালোকরেই আকাশের রাগ ভাঙাতে জানে। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতেই বর্ণালী রুমুর হাত ধরে সিএনজি স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে বাসে করে গেলে আরও বেশি দেরি হয়ে যাবে বাসাতে পৌঁছাতে।
ইভান হা হয়ে রইলো বাসন্তী কিনা তাকে না দেখেই এড়িয়ে যেতে পারলো? সেও হাত ছাড়ার মতো নয়। বাইক নিয়ে পো পো ডাকিয়ে খুব ধীর গতিতে ওদের পেছন পেছন চলছে৷ রুমু খুব বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকিয়ে হেসে আবারো হাটা ধরলো। বর্ণালী কিছুটা অবাক হলো রুমুর কাজ দেখে।
-“কিরে কে ছিলো পেছনে? যাকে দেখে বিরক্তিকর চেহারাখানা হাস্যজ্বল হয়ে উঠলো?”
-“কে আর তোর বসন্তপথিক।”
-“পাগল নাকি? ও আমার হতে যাবে কেন?”
-“তোরই তো। দেখ তুই না নিলে আমাকে দিয়ে দে ভাই।”
-“কি মুশকিল। নে নারে ভাই কে তোকে না করলো? যা নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর। ছেলেকে দেখেছিস? কি পিচ্চি একটা ছেলে এখনো দাড়ি উঠে নি আর এসেছে প্রেম প্রস্তাব নিয়ে।”
-“আরে কি বলছিস পিচ্চি কোথায়?”
-“আর ওই তো বললো কলেজে পড়ে।”
-“তো? ও কত কিউট। ওই যে তামিল হিরো আছেনা মাহেশ বাবু? ঠিক তার মতো।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ যা আমার এতো বিয়ের আগে বাচ্চা নিয়ে খেলার ইচ্ছা নেই। হাহাহা।”
-“দেখ ও কিন্তু মোটেও বাচ্চা নয়। ওর Mussels দেখেছিস?”
-“তুই এতো কিছু দেখে নিয়েছিস এর মধ্যেই? আরে বয়সটা দেখ অন্ততপক্ষে। তোর তো আবার এসব বয়স-টয়স লাগেনা। ও তোর টাইপেরই ছেলে। তাই তো তখন কেমন বাই ইভু বলছিলি। ইভান থেকে ডাইরেক্ট ইভু। হুহ ঢংয়ে আর বাঁচিনা। যা প্রেম কর গিয়ে। কি যেনো বলছিলো হ্যাঁ ফাগুন প্রেম।”
-“সে না হয় পরে দেখা যাবে। কিন্তু তোর কেমন ছেলে পছন্দ শুনি?”
-” আমার তো খুব সাধারণ একটা বর চাই। যার সুন্দর চেহারা বা বডি না খুব সুন্দর একটা মন থাকবে। কিন্তু হ্যাঁ দাড়ি থাকতে হবে। এমন বাচ্চা টাইপের ছুলানো মোরগ না।”
-“হুম দেখ শেষে কিনা এমন হলো যে এই বাচ্চা ছেলের ফাগুন প্রেমে পড়ে গেছিস।”
-“তা কখনোই হবেনা।”
দুজনে একসাথে হেসে দিলো। ইভান এখন তাদের পাশে পাশেই চলছে। আর বার বার বর্ণালীকে দেখছে। মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী।
-“এই তোমার বাইক কি এর চেয়ে বেশি ফাস্ট চলেনা?”
রুমু ইভানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। বর্ণালী এক পলক তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
-“চলে তো কিন্তু এতো সুন্দরী বসন্তকন্যাকে দেখে তো আমার বাইকটাও আমার কন্ট্রোলে নেই।”
-“হাহাহা তাই নাকি? কিন্তু সামনে তাকাও নয়তো আবার দেখো এমন না হলো যে উপরওয়ালার কাছে পৌঁছে গেছো।”
-“উহু এতো তাড়াতাড়ি তো নয়। বাসন্তীর সাথে প্রেম, বিয়ে, বাচ্চা, নাতী নাতনী সবকিছুই তো এখনো বাকী। আগে সব হোক তারপর না হয় উপরওয়ালা নিয়ে নিলেন।”
বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। পাগল নাকি ছেলেটা! যেখানে প্রেমের কোন আভাস নাই আর সে এখনি নাতী নাতনীর স্বপ্ন দেখছে! দুজনের পা থেমে গেছে দেখে ইভান বাইকের ব্রেক কষে।
-“কি হলো থেমে গেলে?”
-“তোমার নাতী নাতনীর স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা সিএনজি স্টেশনে এসে গেছি।”
ইভান সামনে তাকিয়ে মাথা চুলকে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো,
-“ওহ তাই নাকি! কি করবো বলো বাসন্তী যে আমায় পাগল করে দিয়েছে। আমি তো আর আমার মাঝে নেই রুমু। তোমার ফ্রেন্ডকে বলো না এই অধমের লাভ রিকুয়েষ্টটা এক্সেপ্ট করে নিতে।”
-“রুমু চলতো প্লিজ। দেখ সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আর যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। আকাশের অবস্থা ভালো না।”
ইভান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হুম আকাশেরও আমার মত মন খারাপ।”
বলতে না বলতেই মেঘের বিশাল গর্জন শুনতে পাওয়া গেলো। বর্ণালী কেঁপে রুমুর হাত আঁকড়ে ধরে। ইভান বর্ণালীর ভীত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে এভাবেও অনেক মোহময় লাগছে। ওরা সিএনজিতে উঠে গেছে দেখেই আবারো বাইকে স্টার্ট দিলো। তাদের এই সন্ধ্যে বেলা একা ছাড়া যাবেনা। তারউপর আকাশের অবস্থাও ভালো নয়। সিএনজি চলছে পাশে পাশে ইভান বাইক নিয়ে চলছে। মেঘ গর্জে ওঠে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। বর্ণালীর এই বৃষ্টি জিনিসটা সবসময় ভালো লাগে। কিন্তু আজ ভালো লাগছেনা। শুধু শুধু ছেলেটাকে বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে। এই ছেলেটা পাগল নাকি? এক দিনে কি কখনো ভালোবাসা হয় নাকি? এভাবে আঠার মতো লেগে আছে কেন আমার পিছু? দেখা যাবে কালকেই গায়েব হয়ে যাবে। বয়সটা কম দেখেই এমন পাগলামো করছে। স্কুল লাইফ থেকে এমন অনেক ছেলেই দেখেছে বর্ণালী৷ কিছুদিন পিছন পিছন ঘোরাঘুরি করে যখন পাত্তা দেয় না তখনি হারিয়ে যায় অন্য কারো হাত ধরে। কিন্তু তবুও কেন জানি আজ বর্ণালীর মনে ইভানের প্রতি মায়া কাজ করছে। এটা কি কোন সাময়িক মায়া? নাকি এই মায়া চিরন্তন?
এসব কিছুই এখন বর্ণালীর বুঝের বাইরে। শুধু বুঝতে পারছে যে ছেলেটাকে এভাবে ভিজতে দেখতে একটুও ভালো লাগছেনা।
বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু ইভান পুরোপুরি ভিজে ঠান্ডায় জমে গেছে। হাত ও মুখে জমে থাকা পানি হাত দিয়ে মুছে নিলো। সিএনজি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে ওরা পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইভানও। রুমুর বাসা পাশেই একটুও হাঁটতে হয়না। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তবুও ও বাসায় ঢুকে নি। যতক্ষণ না বর্ণালীকে একটা রিকশা খুঁজে দিচ্ছে ততক্ষণ তো যাবেই না। কিন্তু এই সময় একটা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও পাওয়া গেলো তারা যাবেনা। বৃষ্টির দিনে এই এক প্রবলেম রিকশা পাওয়া খুব মুশকিল। ইভান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা ৭টা বাজে। রুমুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আমার মনে হচ্ছে এই সময় রিকশা পাওয়া যাবেনা।”
-“সেটা আমারো মনে হচ্ছে। বর্ণালী তুই আজ আমার বাসায় থেকে যা।”
-“আরে না বাসায় সবাই টেনশন করবে। আমি বরং হেঁটেই চলে যাই। বেশিক্ষণ লাগবেনা।”
-“মাথা খারাপ তোর? বেশিক্ষণ লাগবেনা মানে কি? এখান থেকে ৫০টাকার ভাড়া তোর বাসা। আর বলছিস বেশিক্ষণ লাগবেনা?”
-“কিন্তু কিছু তো করারও নেই।”
ওদের কথা শুনে আর চুপ করে না থেকে এতক্ষণে ইভান বলে উঠলো,
-“চাইলে আমি হেল্প করতে পারি।”
-“তুমি কি হেল্প করবে?”
-“আমার সাথে তো বাইক আছে আমি তাকে পৌঁছে দিতে পারি।”
-“আরে হ্যাঁ সেটা তো খেয়ালই করিনি। যাহ বর্ণালী পাশেই তোর যাওয়ার ব্যাবস্থা রেখে দুজনে টেনশনে মরছি।”
বর্ণালী চোখ বড় বড় করে রুমুর দিকে চেয়ে আছে। কি আজব ও ভাবলো কিভাবে আমি এই ছেলেটার সাথে যাবো।
-“কি হলো? দাঁড়িয়ে আছিস যে?”
-“পাগল নাকি? ভাবলি কিভাবে আমি চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলের সাথে বাইকে যাবো?”
-“তা বেগম সাহেবা বলছিলাম যে, এখানের সব রিকশাওয়ালা কি আপনার চেনা নাকি?”
-“চেনা না হলেও ওরা এখানের লোকাল।”
-“আমিও এখানের লোকাল ওকে? আর রিকশাওয়ালা তো খারাপও হতে পারে। আমি কিন্তু এতোটা খারাপ নই যতটা আপনি ভাবছেন।”
কি ভালোমানুষি দেখানো হচ্ছে বাহ! তুমি থেকে আপনিতে চলে এসেছে। কি আজব ছেলে!
-“দেখ বর্ণালী এর চাইতে কি তো কাছে আর কোন ভালো উপায় আছে? নেই তো? একটা রিস্ক নিয়েই নে।আর আমার মনে হচ্ছে ছেলেটা ভদ্র ফ্যামিলির। তাছাড়া আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিতই তো।”
-“কিন্তু….”
-“কোন কিন্তু না তুই যা। আর ইভান তোমার মোবাইল নাম্বারটা আমায় দিয়ে যাও।”
-“হ্যাঁ তুলে নাও মোবাইলে আমি বলছি।”
রুমু নাম্বার তুলে কল দিয়ে দিলো ইভানের ফোনে।
-“আমার নাম্বার সেইভ করে রেখে দিও আর হ্যাঁ ওকে নামিয়ে আমাকে একটা কল করে জানিয়ে দিও।”
`
একটু দূরত্ব বজায় রেখে বর্ণালী বাইকে বসেছে। এক হাত দিয়ে বাইকের পেছনে ধরে রেখেছে। এই প্রথম ও বাইকে উঠেছে। এর আগে কারো বাইকে চরে নি।
ইভানের তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলো। ভাবতেও পারেনি একদিনে এতো কিছু হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রথম কোন মেয়ে তার বাইকে উঠে বসেছে তাও ওর মনের মানুষ। আজ পর্যন্ত ঈশাকেই বাইকে তুলে নি। দুজনেই খুব চুপচাপ বসে আছে। ইভান মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাসে বর্ণালীকে দেখছে। যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে রাস্তাটা ওর চেনা। সকালেও এই রাস্তা দিয়ে ও এসেছে বাবার সাথে। শহর থেকে কিছুটা বাইরে যায় এই রাস্তা যেখানে ইভানের বাসা। হুট করেই বর্ণালী এক হাতে ইভানের পেটের দিকে শার্ট খামছে ধরে পিঠের মাঝে মাথা লুকায়। বর্ণালীর উষ্ণ নিশ্বাস গায়ের সাথে লেগে থাকা ভিজা শার্ট ভেদ করে পিঠে এসে লাগছে। ইভানের শরীরে যেনো ৪৪০ ভোল্টের শক লাগে। জীবনে এই প্রথম ওর এমন অনূভুতি হয়েছে। বুকটা ধুকপুক করছে। আসলে বজ্রপাতের আওয়াজে বর্ণালী ভয় পেয়ে এমন কাজ করেছে। যখন বুঝতে পারলো ও ইভানকে জড়িয়ে আছে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে ঠিক হয়ে বসে। লজ্জায় আর ভয়ে চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিশ্বাস নেয়। ইভান ওর এমন চেহারা দেখে কেমন করে তাকিয়ে আছে। বর্ণালীর চোখ লুকিং গ্লাসে পড়তেই দেখে ইভান ওর দিকে চেয়ে আছে।
-“সা….সামনে তাকান। নয়তো কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।”
-“যা অঘটন ঘটার তা তো ঘটেই গেছে।”
লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় দুজনেই। আবারো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইভান বাইক খুব ধীরে চালাচ্ছে। ইচ্ছে করছেনা এই পথটা শেষ হয়ে যাক। মন চাইছে আরো অনেক অনেক দূর এভাবেই দুজনে একসাথে থাকুক। কিন্তু তা আর হলো না।
-“থামুন এসে গেছি।”
-“এখানে?”
-“হুম।”
ইভান বাইক থামায়। বাম পাশে একটা পাকা দালানের উপর টিনের চাল দেয়া ঘর। অনেক বড় জায়গা জোরে আছে বাড়িটা। এক পাশে পুকুর অন্য পাশে একটা সুপারি বাগান। বর্ণালী নামতেই নিজের উপর কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্ষণ হতে দেখে। ওদের ডান পাশে সুন্দর সুঠাম দেহের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের বাসার গেট থেকেই বের হয়েছে। বর্ণালী কিছুটা হচকচিয়ে যায়। তবু নিজেকে শান্ত করে বাসার দিকে পা বাড়ায়। কিছুদূর গিয়ে আবারো ফিরে আসে।
-“থ্যাংক ইউ।”
-“এখন তো বিশ্বাস হলো? আমি এতোটাও খারাপ নই।”
-“আসলে সরি।”
-“আরে বাপরে এতো দেখি থ্যাংকস আর সরির বন্যা বসিয়ে দিচ্ছ। থাক এসবের কিছুই লাগবেনা আমার। বাসায় যেতে বলবেনা?”
-“হু!”
বর্ণালী কিছুটা ভয় পেয়ে যায় এভাবে যদি একটা ছেলেকে বাসায় নিয়ে যায় তাও সন্ধ্যে বেলায় না জানি বাসার সবাই কত কি ভেবে নেয়। ইভানের বুঝতে বাকি থাকলো না।
-“হাহাহা সরি মজা করছিলাম। আসি তাহলে। কাল দেখা হবে।”
-“আচ্ছা।”
-“তার মানে কাল দেখা হচ্ছে?”
মেয়েটা আবারো ভয় পেয়ে যায়। না বুঝেই নিজের অজান্তে আচ্ছা বলে দিয়েছিলো। ইভান খুব করে খেয়াল করছে পাশের গেটের ছেলেটা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন! ছেলেটা বর্ণালীর দিকে কেমন রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
-“আচ্ছা ভেতরে যাও। ভিজে যাচ্ছ তুমি। আর আমি চাইনা ভেজা শরীরে তাও সাদা শাড়িতে আমি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ মানুষ তোমাকে দেখুক।”
এমন কথা শুনে ও চোখ কুচকে তাকায়। ঠান্ডায় কেমন কাঁপছে। শাড়ির আঁচল টেনে পিঠের দিকে পেচিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। একবার সামনে চেয়ে দেখলো সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আসি আল্লাহ হাফেজ।”
-“হুম যেতে দিতে তো ইচ্ছে করছেনা তবুও যেতে দিতে হবে। যাও আল্লাহ হাফেজ।”
বর্ণালী আর কিছু না বলেই বাসার দিকে পা বাড়ায়। কাঠের তেরী গেট ঠেলে বর্ণালী বাসায় ঢুকে গেলো। দেখতে দেখতেই চোখের আড়াল। ইভান আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাইক স্টার্ট দিলো। এক পলক ওই গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটাও আর নেই।
`
কলিংবেল চেপে ধরে আছে ইভান। রানু এসে দরজা খুলে দেয়।
-“ভাইয়ার এতো দেরি হইলো যে?”
-“ওই তো একটু দেরি হয়ে গেলো আর কি।”
আমার বাসায় সন্ধ্যা ৭/৮টা বাজলেই দেরি হয়ে যায়। মা বাবার কাছে এখনো ছোট বাবুই রয়ে গেছি। বর্ণালীর বাসা থেকে আমাদের বাসা প্রায় ২০মিনিটের রাস্তা। ভালোই হলো প্রতিদিন এক সাথে যাওয়া যাবে। এসব ভেবে ভেতরে ঢুকছিলাম। রানুকে জিজ্ঞেস করলাম,
-” মা আর বুমনি কোথায়?”
-“আম্মা আর বুমনি ওই তো টিভি দেখে। আপনি তো পুরাই ভিইজা গেছেন।”
-“হু ভিজবো না! বাইরে যা পরিমাণ বৃষ্টি।”
মা আমাকে দেখেই বললেন,
-“কি রে সকালে গেলি আর এখন আসলি? কোথায় ছিলি সারাদিন?”
-“কলেজে অনুষ্টান ছিলো মা। তাই দেরি হয়ে গেছে।”
-“তোকে দেখে তো অন্য কিছুই মনে হচ্ছে।”
-“মানে কি? কি মনে হচ্ছে?”
-“তোরা থামবি? যা তো ইভান চেঞ্জ করে আয়। ঠান্ডা লেগে যাবে নাহলে। এমনিতেই ভিজে আছিস।”
-“হ্যাঁ ভেজা বিড়াল।”
-“মা দেখো বুমনি শুধু শুধু আমার সাথে লাগছে।”
-“তুই আঠা নাকি যে তোর সাথে লাগবো?”
-“ইস ইভান যা না বাবা আর কথা না রুমে যা।”
ইভান আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে এলো। শাওয়ার নেয়া প্রয়োজন নয়তো শরীর ভালো লাগবে না।
হাঁচি দিতে দিতে নিচে নেমে এলো ইভান। একে তো বৃষ্টিতে ভেজা তারউপর এখন শাওয়ার নিয়েছে। ঠান্ডা লাগারই কথা। এসেই ধুপ করে সোফায় বসে ঈশার থেকে রিমোট নিয়ে নেয়।
-“এই ভালো হবে না বলছি রিমোট দে।”
-“আরে ভালো স্টুডেন্টরা টিভি দেখে না যা গিয়ে পড়।”
-“খাবার দিচ্ছি টেবিলে খেতে আয় দুজনে।”
-“তোর একজন সাথী পেয়ে গেছি। তুই চাইলে মাকে বলে খুব শিঘ্রী বাসায় নিয়ে আসবো।”
-“বলিস কি? প্রথম দিনেই বৌ খুঁজে নিলি? দেখতে কেমন? বাড়ি কোথায়? থাকে কই? করে কি? পড়ালেখা করছে?”
-“আরে আরে ধীরে। একসাথে এতো প্রশ্ন! এসব জেনে লাভ নেই এর চেয়ে সরাসরি দেখে নিস।”
ঈশা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে ছোট ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। যেখানে ও এখনো প্রেমই করলো না আর সেখানে কিনা তারই ছোট ভাই বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে আসার কথা বলছে।
#______চলবে…………
[ নতুন কাহিনী, নতুন চরিত্র আর নতুন উপন্যাস। ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here