এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব-১৪

0
159

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ১৪
কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো মাঠের কোনায় একটা দলের সঙ্গে তিয়াসা বসে আছে, নিজের মনের মধ্যেই একটা লজ্জা লাগছে ওর, নিশ্চয়ই তিয়াসা ওদের কে সব কিছুই বলে দিয়েছে এতক্ষনে। গোটা কলেজ আজ ওর দিকেই তাকিয়ে থাকবে, ভাবতেই পা টা কেমন আড়ষ্ঠ হয়ে গেলো, আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করে টিচার্স রুমের দিকে এগোতে লাগলো অর্ক।

স্যার, আপনাকে কিছু বলার ছিলো আমার,

কখন যে তিয়াসা ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করে নি অর্ক। চমকে উঠে পেছন ফিরে তিয়াসা কে দেখেই লজ্জা লাগলো ওর, নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রেখেই ওর দিকে তাকালো অর্ক,

বলো, কিছু ডাউট আছে এখনও? অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে?

না স্যার, সে সব নয়, আমার অন্য কিছু কথা বলার আছে আপনাকে,

অর্ক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, ওর আবার কি বলার আছে!

স্যার, ম্যাম কাল বানিয়ে বলেন নি, সত্যি রিয়া ওগুলো বলছিলো ম্যাম কে, আমি রান্না ঘরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, নিজে কানে শুনেছি,

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একদম চমকে গেলো অর্ক!

এদিকে সরে এসো,

এবার মেয়েটা কে একটা সাইডে সরিয়ে আনলো ও,

তুমি শুনেছ নিজে?

হ্যাঁ, স্যার, বলছিলো ও মাঝে মাঝেই আপনাকে বাড়িতে এসে কফি করে খাওয়ায়, এই কথাগুলো শুধু কাল ম্যাম কে বলেনি স্যার, আমাদেরও বলেছে অনেক বার। আর জানেন স্যার, ও এটাও বলেছে সবাই কে, ম্যাম খুব সন্দেহ করেন আপনাকে, তাই আপনাদের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে,

প্রায় এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললো তিয়াসা, অর্ক অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। একটু চুপ করে থেকে বললো,

তিয়াসা, একটা রিকোয়েস্ট করবো তোমাকে…

আমি জানি স্যার, আমি কাউকে কিছু বলবো না, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন,

অর্ক কে থামিয়ে দিয়ে বললো তিয়াসা,

স্যার, আমিই যে এই কথাগুলো বলেছি, এটা কেউ যেনো না জানে প্লিজ। আসলে সবাই বন্ধু তো, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করতে পারবো না!

রিয়া কে একটু টিচার্স রুমে ডেকে দাও তো,

তিয়াসা ঘাড় নাড়লো,

ও আজ আসে নি স্যার, কিন্তু স্যার আপনি কিন্তু আমার নাম নেবেন না!

নেবো না, এমনি কথা বলবো, ওর ফোন নম্বর আছে তোমার কাছে?

ফোন নম্বরটা দিয়ে মেয়েটা চলে যাবার পর, অর্ক টিচার্স রুমে এসে বসে পড়লো। মেয়েটা সত্যিই এই কথাগুলো দিতি কে বলেছে! অর্ক র এখনও যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। একদম বোকা লাগছে নিজেকে! একটু পরেই অরিন্দম এসে ঢুকলো, ওকে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে একটু অবাক হলো,

কি হয়েছে? আবার অদিতির সঙ্গে ঝামেলা নাকি?

অর্ক মাথা নাড়লো,

ঝামেলা ছিলো, এখন আর নেই! আমি বুঝলি তো পুরো বোকা হয়ে গেছি!

মানে?

চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো অরিন্দম, অর্ক গত দুদিনের ঘটনা খুলে বললো।

বলিস কি! কি সাংঘাতিক মেয়েরে! কিন্তু হটাৎ এরকম কেনো করলো বলতো? ডাক মেয়েটা কে, কথা বলি ওর সঙ্গে!

আসে নি আজ, ফোন নম্বর নিয়েছি! কিন্তু কিছু প্রমাণ তো করতে পারবো না! ওই তিয়াসা নামের মেয়েটা জানে সব, কিন্তু সামনে আসতে চায় না! আগেই বলেছে ও যে বলেছে এটা কেউ যেনো জানতে না পারে! তোর মনে হয় সবার সামনে ও স্বীকার করবে? যদি না করে তাহলে উল্টে আমিই বিপদে পড়ে যাবো।

অরিন্দম চিন্তায় পড়লো,

ঠিকই বলেছিস! এমনিতেও তো দিন কয়েক পর থেকেই আর আসবে না কলেজে! মিছিমিছি জল ঘোলা করে লাভ নেই কিছু! তুই একটু সতর্ক থাক বরং, আর ফোন করারও দরকার নেই!

কোনো রকমে পর পর দুটো ক্লাস শেষ করলো অর্ক, অদিতির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব, এখন মনে হচ্ছে রাগ দেখিয়ে আজ বেরোনোর সময়ে বলেও আসেনি ওকে। অদিতি অবশ্য অভ্যাস মতোই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু বুঝতে পেরেও ও ওপরের দিকে তাকায় নি। কাল খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে ও, বাড়ি গিয়েই ক্ষমা চাইতে হবে! কিন্তু যদি সব শুনে ফোনেই চেঁচামেচি করে! তাই বাড়ি গিয়েই সবটা বুঝিয়ে বলবে ঠিক করলো ও। দুটোর পরে ওর সব ক্লাস শেষ হয়ে গেলো, অরিন্দমের এখনও একটা বাকি আছে তাই আজ একাই কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো অর্ক। বেল বাজাতেই দরজা খুললো মা, দেখে একদম চমকে গেলো ও,

তুমি ? কখন এসেছো? বাবা এসেছে?

পর পর অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেললো অর্ক, রুমা কোনো উত্তর দিলেন না, মনের মধ্যে চাপা টেনশন হতে লাগলো অর্কর। দিতি কি তবে বাবা, মা কে খবর দিয়ে এনেছে! মনে মনে ভাবতে ভাবতেই ঘরে ঢুকলো ও। সমরেশ সোফায় নাতি কে কোলে নিয়ে বসে আছেন, দিতি রান্না ঘরে কিছু করছে বোঝা যাচ্ছে, গোটা বাড়িতে একটা থমথমে পরিবেশ।

ছেলে ওকে দেখেই হাত বাড়ালো কোলে ওঠার জন্যে, এটা ওর প্রতিদিনের অভ্যাস, বাড়ি ফিরেই একবার কোলে নিতে হবে ওকে, অর্ক তাড়াতাড়ি হাত, মুখ ধুয়ে এসে ওকে কোলে নিলো। কয়েক মিনিট কোলে নিয়ে বারান্দায় ঘুরে আসার পরেই ছেলে শান্ত হয়ে গেলো, রুমা ওর কাছ থেকে ছেলে কে নিয়ে বললেন,

বাইরে যা, বাবা ডাকছেন তোকে,

মনের মধ্যে একটু অশান্তি নিয়েই এসে বসলো অর্ক, একটু পরেই অদিতি চায়ের কাপ রেখে গেলো, রুমাও নাতি কে কোলে নিয়ে পাশের সোফায় বসলেন। বড়ো কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস বুঝেই অর্ক মনে মনে প্রমাদ গুনলো।

নিজেদের সমস্যা নিজেরা মেটাতে পারো না? এরকম পরিস্থিতি কেনো তৈরি হয় বাড়িতে যে, আমাদের এসে ইন্টারফেয়ার করতে হয়? তুমি নাকি দিতি কে চলে যাবার কথা বলেছো?

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কড়া গলায় বললেন সমরেশ, অর্ক কিছু বলার আগেই অদিতি সমরেশের সোফার পেছনে এসে দাঁড়ালো,

বাবা, বিশ্বাস করো, আমি নিজেই আর থাকতে চাই না এখানে! তোমার ছেলে আমাকে পাগল প্রতিপন্ন করতে চাইছে, কিন্তু আমি তো নিজে জানি যে আমি পাগল নই! আগের বার ওকে অরিন্দম দার বন্ধু বোঝালো যে প্রেগন্যান্সি তে এমন হয়! আমি নাকি ডিপ্রেসন থেকে এসব বলছি, আমি মেনেও নিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম কাউন্সিলরের কাছে! কিন্তু এখন তো আমি প্রেগন্যান্ট নই, ছেলে কে নিয়ে আমি নাকানি, চোবানি খাচ্ছি সারাদিন, কোনো ডিপ্রেসন নেই আমার, আমি জানি! তাও ও বলতে চায় যা আমি নিজে কানে শুনেছি সব ভুল!! নিজের অন্যায়গুলো কে ও আমার ঘাড়ে দিয়ে পার পেয়ে যেতে চাইছে, সেটা আমি এবার কিছুতেই মেনে নেবো না।

অর্ক কোনো উত্তর দিলো না, এই মুহূর্তে তিয়াসার কথাগুলো বলতে যাওয়া মানে যে আগুনে ঘি ঢালা সেটা বুঝেই চুপ করে রইলো। সমরেশ বিরক্ত হলেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

তুমি জানো ও বাড়ি চলে যাচ্ছিলো! নেহাত আমি আর তোমার মা তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো বলে হটাৎ এসে গেলাম তাই! বেয়াই মশাই অসুস্থ, উনি এসব জানতে পারলে কি হতো ভেবেছো তুমি?

অর্ক অবাক হয়ে গেলো, দিতি বাবার কাছে চলে যাচ্ছিলো! ওর যা রাগ! এখন যদি ও জানতে পারে ওই ঠিক, তাহলে কুরুক্ষেত্র বাধবে, ওকে কিছুতেই সকালের কথাগুলো জানতে দেওয়া যাবে না। অরিন্দম ঠিকই বলেছে, এমনিতেও তো ওরা আর কয়েকদিন পর থেকে আসবেই না, মিছিমিছি গন্ডগোল করে লাভ নেই! তার থেকে বরং ও দিতি র কাছে ক্ষমা চেয়ে ম্যানেজ করে নেবে!

আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করেছি? উত্তর দিচ্ছ না কেনো?

ছেলে কে চুপ করে থাকতে দেখে অধৈর্য্য গলায় বললেন সমরেশ, অর্ক দিতি র দিকে তাকালো,

সরি দিতি! আমার ওইভাবে কথা বলা উচিত হয় নি, ভবিষ্যতে কোনোদিনও হবে না এরকম আর,

দিতি মাথা নাড়লো,

তোমার সরি বলা না বলায় আমার কিছু যায় আসে না! তুমি যদি আজ কথা গুলো কে উইথড্র করেও নাও তাহলেও তো এটা বোঝায় না যে আমি সত্যি কথা বলেছি! তোমার ধারণা আমি বদলাতে পারবো না, তুমি আমাকে পাগল ভাবছো, ডিপ্রেশনের জন্য কাউন্সিলিং করিয়েছো, আমি সব মেনে নিয়েছি এতদিন! কিন্তু আর না! আমি কাল সামনে দাঁড়িয়ে বলা কথাগুলো কে কল্পনা করেছি, এটা ভাবতে আমি কিছুতেই রাজি নই! আমি এই অশান্তির থেকে মুক্তি চাই এবার, তুমিও ভালো থাকবে এতে! পাগলের সঙ্গে থাকা তো তোমার জন্যেও কষ্টকর তাই না? মিছিমিছি আমার জন্যে তুমি সবার কাছে ছোটো কেনো হবে বারবার?

এবার রুমা হস্তক্ষেপ করলেন,

আমরা জানি তুই পাগল নস! তোর মত বুদ্ধিমতি মেয়ে কজন আছে? আমি তোকে বিশ্বাস করি! কিন্তু ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয় মা, পরে বুঝবি সেটা!

বরং এটার একটা হেস্তনেস্ত করা উচিত এবার! কে ঠিক কে ভুল, সেটা জানতে হবে, সেরকম হলে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিজের স্ত্রী কে বিশ্বাস না করে তুমি বাইরের একটা অচেনা মেয়ে কে বিশ্বাস করছো, এটা ভাবতে আমার অবাক লাগছে,

পাশ থেকে বললেন সমরেশ, রুমা সহমত হলেন,

হ্যাঁ, তুই তাই কর! ডাক মেয়েটা কে, জিজ্ঞেস কর সব কিছু!

অর্ক টেনশনে পড়লো, এখন কি করবে ও! ও যে সব টা জানে সেটা যদি এখন প্রকাশ করে তাহলে তো সবাই ওকেই দোষারোপ করবে! জানতে চাইবে, সব কিছু জেনেও ও কেনো চুপ করে ছিলো। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে অদিতি এগিয়ে এলো,

দ্যাখো মা! ও কিন্তু জিজ্ঞেস করতে চায় না কিছু! কারণ ও জানে আমি সব সত্যি কথাই বলেছি! নিজের দোষ চাপা দেবার জন্যেই ও মেয়েটার মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করাতে চায় না কখনো! তাহলে তো ধরা পড়ে যাবে সব কিছু! আমি এখন নিশ্চিত এই মেয়েটাই আমাকে ফোন করেছিলো!

এবার অর্ক চেঁচিয়ে উঠলো, বাবা, মায়ের উপস্থিতি সম্পূর্ন ইগনোর করে বললো,

এবার তুমি কালকের ঘটনার সঙ্গে এতদিন আগের ঘটনাকেও রিলেট করে ফেলছো! বাহ! খুব ভালো! এরপরে আর কোনো কথাই থাকে না! যা খুশি করো তুমি! আর ধরা পড়ে যাবে মানে কি? কি এমন অন্যায় করেছি আমি, যে ধরা পড়ার ভয় পাবো?

এবার সমরেশও ধৈর্য্য হারালেন, রাগের গলায় বললেন,

রিলেট তো করবেই! আমি হলেও তাই করতাম! তুমি কেনো মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে চাইছো না? আমাকে বুঝিয়ে বল সেটা! এটার দুটো মানে হয়, হয় দিতি যা বলছে সব ঠিক, তুমি সব জানো! জেনেশুনে সব কিছু আড়াল করতে চাইছো! আর নয়তো তুমি বিশ্বাস করো না যে দিতি সুস্থ! তুমি সত্যিই ওকে পাগল ভাবছো!!আমি কিন্তু ওকে সুস্থ মনে করি, তাই আমি জানতে চাই তুমি কি ভাবছো?

আর কোনো উপায় নেই দেখে এবার মুখ খুললো অর্ক,

দিতি কে পাগল মনে করি না আমি, সমস্যা মেয়েটার, সেটা আমি আজই জানতে পেরেছি! কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই! তাই মেয়েটার সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলা সম্ভব নয়! সেই জন্যেই চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার,

সোফায় বসা বাকি তিনজন বিস্ফারিত চোখে অর্কর দিকে তাকালো, রুমা বিস্মিত গলায় বললেন,

এতো বড়ো কথাটা এতক্ষন বলিস নি তুই! শুধু প্রমাণ নেই বলে এতো বড়ো ঘটনা ঘটানোর পরেও মেয়েটা কে ছেড়ে দিবি!

দিতি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো, ওর ধারণাই কি সত্যি তবে! অর্কর সঙ্গে মেয়েটার কোনো সম্পর্ক সত্যিই আছে! সেই জন্যেই ও মেয়েটাকে কিছু করতে চায় না! সমরেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন,

আমি তোমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না!! এতক্ষন ধরে তুমি চুপ করে ছিলে! আমরা তোমাকে বাধ্য করছিলাম মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে তাই আর কোনো উপায় না দেখে এই কথাটা বললে!

অর্ক মাথা নাড়লো,

আরে! সে জন্যে নয় বাবা! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো নিয়ে এগোনো যায়? তুমিই বলো! আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেই তো ও আমাকে কে বলেছে তার নাম জিজ্ঞেস করবে! কিন্তু যে বলেছে সেতো সামনে আসতে চায় না! তাহলে আমি প্রমাণ করবো কি করে! মাঝখান থেকে গোটা কলেজে ছড়াবে!

এবার দিতি মুখ খুললো,

এতদিন তো চুপ করেই ছিলে! তাতে ছড়ায় নি কিছু? সবাই তো জানে আমি সন্দেহবাতিক! সেটাও তো ছড়িয়েছে! আটকাতে পেরেছো? এবার ছড়ালে ছড়াক, তবু আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো!

তুমি আমার সম্মানের কথা ভাববে না একবারও? অরিন্দমও আমাকে ইগনোর করতে বললো এসব, আমিও ভেবে দেখলাম ওরা কদিন পরেই চলে যাবে, তাই আর এইসব নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করতে চাই না।

কলেজ থেকে চলে যাবে, তোমার জীবন থেকে যাবে কি?

অর্ক কে থামিয়ে দিয়ে বললো দিতি, অর্ক অবাক চোখে তাকালো,

আমার জীবন থেকে মানে? তুমি এখনো ভাবছো ওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক আছে! তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না!

দিতি হাসলো,

তুমি করো আমাকে? আমার বলা কথাগুলো কোনোদিনও বিশ্বাস করেছো? আর তোমাকে বিশ্বাসের কথা বলছো? বিশ্বাস করার মতো কোন কাজটা তুমি করেছো আজ পর্যন্ত? এতো লোক আছে চারপাশে, বলতো তাদের কার ফোন প্রতিদিনই বন্ধ বা সাইলেন্ট হয়ে যায় ভুলবশত? কে কোথাও বেড়াতে গিয়েও ফোন সাইলেন্ট করে কোনো খবর না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা বাইরে থাকে? একই ভুল দিনের পর দিন হয় কারো?

দিতি ঠিক বলেছে, আমি বহুদিন আগেই তোমার মা কে এই কথাগুলো বলেছি!! তোমার কাজকর্মই তোমাকে সন্দেহের তালিকায় রাখে সব সময়। যেকোনো ব্যাপারে তোমার ক্যাসুয়াল অ্যাপ্রোচ এর জন্যে দায়ী। সামান্য ব্যাপারগুলো কে তুমি নিজেই অসামান্য করে তোলো সবসময়। এই যে আজকের ব্যাপারটাই ধরো, আমরা চেপে না ধরলে তুমি কোনোদিনও এটা বলতে না আমাদের! তাহলে তো প্রশ্ন জাগবেই যে কেনো তুমি মেয়েটা কে বাঁচাতে চাইছো?

বিরক্ত গলায় দিতি কে থামিয়ে দিয়ে বললেন সমরেশ,

না বাবা, আমি মেয়েটা কে বাঁচাতে চাইছি না, কোনো প্রমাণ করার উপায় নেই তাই বাধ্য হচ্ছি। আর ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ এর কথা বলছো? হয়ত দু একবার এরকম হয়েছে, কিন্তু এটার আসল কারণ জাস্ট অশান্তি অ্যাভয়েড করা! আর কিছু না! হ্যাঁ মেয়েটা এটা বলেছে সেটা মানলাম! কিন্তু দিতিও এটা বিশ্বাস করলো তো? ও আসলে আমাকে একটুও বিশ্বাস করে না, সব ব্যাপারেই তিল কে তাল করা ওর স্বভাব। ওই যদি আমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে বাইরের লোকের আর কতক্ষন লাগবে এসব গন্ডগোল বাধাতে? শান্তিনিকেতনের কথা জানো তুমি? আমি জাস্ট একটু নিজে ক্রেডিট নেবার জন্যে বলেছিলাম যে আমি ওর গয়নাগুলো পছন্দ করেছি, ও সেটা নিয়ে কি কাণ্ডই করলো! কেনো আমি ওকে মিথ্যে কথা বলেছি, সেটা জানতে চাইলো। এটা তো মজা, এটাকেও সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো ও। তাহলে আমি কি করবো? বাধ্য হয়েই তো বলতে হয় আমাকে! আমি যখন সত্যি বলি তখনও কি দিতি আমাকে বিশ্বাস করে? করে না তো! মোবাইলটা যে আগের বার সত্যিই আমি সারারাত খুঁজে পাইনি, এর মধ্যে কিন্তু একফোঁটাও মিথ্যে ছিলো না, কিন্তু ওকে বিশ্বাস করাতে পারলাম কি? এমনকি একটা সামান্য কথা, রিয়া এখানে এসে কফি করেছিলো একবার। এটাও কি এতটাই জরুরি কোনো বিষয় যে ওকে মনে করে বলতে হবে? কিন্তু কাল এটা নিয়েই ও কতো কিছু বললো! আমি নাকি ওর কাছ থেকে ইচ্ছা করেই লুকিয়ে রাখতে চেয়েছি! তাহলে? তুমি হলে কি করতে? অশান্তি এড়ানোর জন্যে মিথ্যেই বলতে তাই না?

রাগের গলায় বললো অর্ক, রুমা কপালে হাত দিলেন, হতাশ গলায় বললেন,

তোদের দুজনেরই কোনো ম্যাচুরিটি নেই! তোরা তো নিজেরাই দেখছি ছেলেমানুষ, তোরা বাচ্চা মানুষ করবি কি ভাবে!!
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here