#Journey episode 29

0
180

#Journey episode 29

#২৯

পরদিন যথারীতি সকালে রাইফ কাজে চলে যায়,জেসমিন সেলিমকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসে।ওদের বাসার কাছেই একটা স্কুলে ওকে ভর্তি করিয়েছে।সেলিমকে স্কুলে পাঠিয়ে কাছাকাছি একটা মার্শাল আর্ট ইন্সটিটিউটে যায়।অদূর ভবিষ্যতে অপেক্ষারত বিপদের জন্য নিজেকে একাই তৈরি করছে জেসমিন,রাইফ অবশ্য এ ব্যাপারে জানে না,বেচারা স্বামী ওর অনেক কিছুই এখন জানে না।জেসমিন ওকে চিন্তিত দেখতে চায় না,এটাই বড় কারণ।যেখানে ওর নিজের ঘুম,শান্তি,খাওয়া দাওয়া সব এলোমেলো হয়ে গেছে,ও চায় না পরিবারের এরেকজন ঠিক ওর মত একই ভাবে ট্রমাটাইজ হোক।

মার্শাল আর্ট ক্লাস শেষ কর জেসমিন বাজারে যায়,কাঁচাবাজার ফ্রেশ খেতেই ওর ভাল লাগে।বাজার শেষ হতে হতে সেলিমের স্কুলও শেষ হয়ে যায়,তখন ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।বাসায় তো কাজের শেষ নেই,জেসমিন নিজেকে সেসব কাজে যতটা পারে ব্যস্ত রাখে।

বিকালের দিকে বাংলাদেশ থেকে কল আসে।
“হ্যালো,হুম বলো…… ওরা জানে কিনা জানি না,এখনও তেমন কোন লক্ষণ পাইনি,তবে জেনে যাবে।আমরা কোথায় আছি,এসব জানা কোন ব্যাপারই না!….. না না,প্রিকোশন নিব না কেন?বলেছিলাম না মার্শাল আর্ট শিখছি? আর একটা ছোটখাটো বন্দুক জোগাড় করতে পারি কিনা চেষ্টা করে দেখব…… হায় আল্লাহ,লাইসেন্স করা হোক বা হোক,একটা রাখতেই হবে আমাকে! আমি খালি হাতে থাকব না এটুকু শিওর……… না,এসব রাইফকে বলা যাবে না।ও কি না কি ভাববে,দেখা যাবে,ও বলবে যা চায়,দিয়ে দাও।এত্ত সোজা?? আমাকে বলল আর দিলাম?!নো!নেভার! আমি ফাইট করতে করতে আজ এখানে,আর আমি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একজন ফাইটারই থাকব।তাছাড়া আমার কিছু হলে সেলিমের কি হবে?আমার কারণে ওর বাবা আজ নেই,এর ক্ষতিপূরণ যতটা পারি আমি করে যাবই……. তুমি এত ভেবো না,আমি কোন কিছু বুঝলেই স্টেপ যা নেওয়ার নিব।তবে বুঝলে,লোকাল কোন মাফিয়া বা গুন্ডা জাতীয় কারো সাথে পরিচয় থাকলে ভাল হত।দেখি,একটা গোপন জীবন কত দিন গোপন রাখা যায়!…….”

এদিকে সন্ধ্যার দিকে রাইফ এসে দেখে,জেসমিন বেজমেন্টে কাজ করছে।ঘরে প্রবেশ করতেই খেয়াল করে ফোনটা ডাইনিং এ রেখে গেছে।ওদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার,দুজন দুজনের ফোনের লক জানে,কিন্তু একজন আরেকজনের অজান্তে ফোন ঘাটাঘাটি করার কাজটা একেবারেই করে না।দুজনেই বিশ্বাস করে,সম্পর্কে যেমন লুকোছাপা থাকবে না,তেমন কিছু পার্সোনাল স্পেস রাখতে হয়,তানাহয় সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।

জেসমিনের ফোনের দিকে তাকিয়ে রাইফ এই কথাগুলোই ভাবছিল।ওর অনুপস্থিতিতে ফোন ধরা,সেটা নিয়ে গবেষণা করা বিশ্বাস ঘাতকতা হবে।হেঁটে পেরোতে গিয়ে বাঁধা পায়,একটা কথা মনে উঁকি দেয়। জেসমিন তো আজ প্রায় দুমাস ধরে ওর কাছে অনেক বড় কিছু লুকিয়ে আসছে,তাহলে ওর ফোন চেক করা কেন ভুল হবে?কেন বিশ্বাসঘাতকতা হবে যেখানে জেসমিন নিজেই রুলস ভেঙেছে?নাহ,ওর ফোন চেক করা উচিত, রাইফের সম্পূর্ণ অধিকার আছে সব জানার।

ফোনটা হাতে নিয়ে লক খুলে প্রথমেই মেসেজের ইনবক্সে যায়,তেমন কিছু নেই।ডায়াল লিস্টে যায়,কিছুই থাকবে না হয়ত ভাবতে গিয়েই দেখে বাইরের কল।এটা দেশের নাম্বার না?প্রথমে মিসড কল এসেছিল,তারপর জেসমিন ব্যাক করেছে।চল্লিশ মিনিট কথা বলেছে?কিন্তু কেন?আজকাল কত এপ আছে,সেগুলো দিয়ে কথা বলা যায়,তা সত্ত্বেও ফোনে কেন?আর বলবে ভাল,কিন্তু এটা কার নাম্বার?চেনা লাগছে কি?

হুট করে পেছনে আওয়াজ শুনে রাইফ চমকে ওঠে ঘুরে।
“আমার ফোনে কি করছ?”
রাইফ আমতা আমতা করে,
“ঐ….আম…..ইয়ে হয়েছে কি,মানে আমার ফোনে…আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই,হ্যাঁ হ্যাঁ! ব্যালেন্স নেই!তাই তোমারটায় চেষ্টা করছিলাম,আর মাঝেই…”
“কই,তোমার ফোন দেখি?ব্যালেন্স তো ছিলই,এত দ্রুত আবার….?”
“আরে বাবা হয় না?কাজ থাকলে কল দিলে টাকা শেষ হয় না?হতে পারে…”
“ওকে,বুঝলাম”

রাইফ বড় করে দম নেয়,বুকের ভেতর শ্বাস আটকায়,জেসমিন কিছু না বুঝলেই হল।সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়েই পেছন থেকে জেসমিন ডাকে,
“তুমি আমার ফোন চেক করছিলে?”
রাইফ একটু ধরা পাওয়া চোরের মত চেহারা বানিয়ে ফেলে,তবে সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্যেই।খুব কনফিডেন্সের সাথে পেছন ঘুরে বলে,
“কই,না তো”
“তাহলে আমার আনরীড মেসেজ কিভাবে রীড হল?”
এবার তো ধরা!তবুও ঘুঘুর ফাঁদে ধরা দেয়া যাবে না!মুখ শক্ত করে বলে,
“তুমি আমার কাছে কথা লুকাও কেন?আমার কাছে সব বলে দাও,আমিও তোমার জন্য আমার মন আরো বড় করব,তোমার কোন কাজে মাথা ঘামাব না।তুমি কি সেটা করবে? নো! তাই আমিও আমার কাজ করে যাব,সুযোগ পেলেই করব!”

রাইফের কথাগুলো জেস চুপচাপ শুনে যায়।সত্যি,রাইফের রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে,অধিকার আছে।তবে এসব নিয়ে শেয়ার না করাই ভাল।এমনিতেই ছেলেটা এত চিন্তায় আছে,তার চিন্তা আর না বাড়ানোর চিন্তায় আছে জেসমিন।রাইফ আর কি দেখবে?এখানে কোন ট্রেস পাবে না,বুঝবেও না।যত ইচ্ছা ফোন দেখুক!মুচকি হেসে ফোন নিয়ে চলে যায়।

কয়েকদিন পরের কথা।রাইফ সকালে কাজে যাওয়ার জেসমিন সেলিম
কে নিয়ে স্কুলে চলে যায়।ওদের এবসেন্সে রাইফ বাসায় আছে জরুরি কিছু জিনিস নেয়ার উদ্দেশ্যে। বেডরুমে গিয়ে ক্লোসেট এ ঘাটতে গিয়ে খেয়াল হয়,জেসমিনের কাপড়ের মাঝে মার্শাল আর্টের ড্রেস।ইন্সটিটিউটটা রাইফ চেনে।জেসমিন কি ওখানে ভর্তি হয়েছে?কিন্তু ওকে তো কিছু বলেনি! ভেতরে ভেতরে রাগ উঠে,মানে এখন কি ও কিছুই জানতে পারবে না জেসমিনের?কিন্তু যেহেতু তাড়া আছে,আবার ওরাও বাসায় নেই,তাই এখন আর এসব না ভাবলেও হবে।

রাতে খাবারের পর দুজন মিলে সবকিছু গোছায়,থালা বাসন ধুয়ে ফেলে।এই কাজে রাইফ কখনও ইমার্জেন্সি ছাড়া জেসমিনকে একা ছাড়েনি।ওর মতে ঘরের কাজ যে বোঝা,এই কথা কোন মেয়েকে বুঝতে দেয়া যাবে না।কারণ যেদিন সে সংসারের দায়িত্বগুলোকে বোঝা ভাববে,সেদিন থেকে সে আর সংসার মন দিয়ে করবে না।

দুজনে সব গোছাতে গোছাতে রাইফ কথা তোলে,
“শুনলাম,তুমি নাকি মার্শাল শিখছ?”
“কার কাছে শুনলে?”
“যার কাছেই শুনি,এটা কি ভুল?”
“সেটা তুমি কোন সোর্স থেকে শুনেছ,তাত উপর নির্ভর করে”
“ওকে ফাইন,আমি নিজে দেখেছি ড্রেস তোমার তাকে,Can you explain me now that?”
“হুম।আমি সেখানে ক্লাস করছি”
“এতক্ষণ নাটক করলে কেন তবে?আর ক্লাস করছ ভাল কথা,এটাও কি আমাকে বলা যায় নি?আমাকে ড্রেস দেখে তারপর জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হতে হল?”
জেসমিন ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয়,
“এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না”

রাইফ রাগে হাতের প্লেট ছুড়ে মারে ফ্লোরে,ঝনঝন শব্দে সেটা ভেঙে সহস্র অযুত টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।আওয়াজ শুনে সেলিম দৌড়ে আসে,ও লিভিংরুমে বসে টিভি দেখছিল।রাইফের অগ্নিমূর্তি দেখে ছোট মানুষটা দরজার কড়িকাঠ ধরে দাঁড়ায়।ওর চোখে একটা ভয়।রাইফ রেগে সেলিমের কাছে গিয়ে ওকে সহ দোতলায় চলে যায়।দুজনে গিয়েই তৈরি হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আজ আর জেসমিনের জন্য ওরা অপেক্ষা করবে না।

সেলিম রাইফকে জড়িয়ে ধরে,
“আংকেল,আন্টি আসবে না?”
“জানি না,ঘুমা বাবা”
মুখে একটা আঙুল পুরে নিষ্পাপ বাচ্চাটা বলে,
“আন্টি আমাকে মাথায় হাত দিয়ে এমন এমন করে।এমন এমন কেউ করছে না,তাই আমি ঘুমুতে পারছি না”
রাইফের মায়া লাগে।এই মুখের দিকে তাকালে পৃথিবীর সব কষ্ট মাটি হতে বাধ্য! যদিও নিজের সন্তান না,তবুও এক পৃথিবী মায়া,না জানি নিজের সন্তানের জন্য মানুষের বুকের ভেতরটা কেমন লাগে!না জানি জাফার ভাইয়ের শেষ সময়ে কেমন লেগেছিল! এই যে জেসমিন আজকাল এত দূরে গেছে, তবুও দিনান্তে ঘরের ফেরার প্রবল টান অনুভূত হয়,আর তার কারণই হল সেলিম।একটা বাচ্চাকে আল্লাহ হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র রূপে তৈরি করেন,তা হলে এত ভালবাসা কেন জন্মাবে??

সেলিমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবে,জেসমিন কিভাবে এমন হয়ে গেল?ও তো এরকম ছিল না!এই এক্সিডেন্ট তো ও একা ফেস করেনি,রাইফকেও ভুগতে হয়েছে।তাই বলে কি ও বদলেছে?নাকি সবকিছু লুকাতে শুরু করেছে?দূরত্ব বাড়াচ্ছে? যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে,তখনই তো ঠিক হয়েছে একে অপরের সুখে দুঃখে পাশা থাকবে,যাইই হোক না কেন,তবে আজ কি হল জেসের?কেন একাই সব করতে হবে? ওদের সংসারের ভবিষ্যত কি?

জেসমিন সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্লোরে ছিটিয়ে থাকা কাঁচের টুকরোগুলো দেখছে।কত শত পরিশ্রমের পর সৃষ্টি এই প্লেট কিভাবে এক নিমেষে একটু আঘাতেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল! ঠিক যেন জেসমিনের আপন সত্ত্বা ভেঙে গেছে এই এক্সিডেন্টের পর!

আচ্ছা,ওদের সংসারও কি এভাবে ভেঙে যাবে???

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here