#Journey episode 30

0
167

#Journey episode 30

#৩০

এভাবেই কেটে গেছে প্রায় একমাস।জেসমিন আর রাইফের দূরত্ব কমেছে? নাহ,আগের মতই আছে,বাড়েও নি,কমেও নি।উন্নতির দিক থেকে একটাই উন্নতি হয়েছে,জেসমিনের মার্শাল স্কিল।ও খুব ডেসপারেটলি এটা শিখছে।একদিন প্র‍্যাক্টিস ক্লাসে অপজিট মানুষটাকে এত এত মারছিল যে মাস্টার থামতে বলার পরও থামছিল না,ঘুষি মেরে যাচ্ছিল,মেরেই যাচ্ছিল।ওকে ধরে জোর করে আলাদা করা হয় তখন।

“ব্যাপার কি জেসমিন!তোমাকে বললাম থামো,তুমি কি কিছু শুনতে পাও নি?!”
“আমি…আমি…’
“কি করেছ দেখ!নাক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে!এই উনাকে নিয়ে যাও,ব্লাড বন্ধ করতে হবে!আর জেসমিন,তোমার কি কোন শত্রুতা আছে তার সাথে?এত আঘাত করলে কেন!”
জেসমিন চুপ করে মাথা নিচু করে থাকে।লোকটা একটা রুমাল নাকের উপর চেপে মুখ উপরের দিকে ঘুরিয়ে আছে।একজন নার্স এসে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় জেসমিন লোকটার হাত ধরে,
“পাবলো,আই এম সরি।আসলে কি যেন ভাবছিলাম আর ভাবতে ভাবতেই…”
“ইটস ওকে,আমি কিছু মনে করিনি”

ওর মাস্টার রিকার্ডো জেসমিনকে ডেকে বলে,
“আমি খেয়াল করছি দিন দিন তুমি ফোকাস হারাচ্ছ।কেন?এভাবে ফোকাস হারালে খুব বেশি উন্নতি কি তুমি করতে পারবে?”
“সরি মাস্টার”
“সবসময় ফোকাস রাখবে।এটা তো হেরে যাওয়ার সময় না!”
“ইয়েস মাস্টার।”
“এদিকে এসে বসো আমার সাথে।তুমি কি কোন কিছু নিয়ে সমস্যায় আছো?আমার মনে হচ্ছে তোমার ঘুম ভাল হয় না।আমাকে খুলে বলবে কি সমস্যাটা?”
“ফ্যামিলি প্রবলেম মাস্টার”
“কার প্রব্লেম?তোমার?নাকি তোমার স্বামীর?”
“আমার”
“তোমার কি হয়েছে?”
“প্রায় তিন মাস আগে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল,তাতে আমার খুব কাছের একজনকে হারিয়েছি। তখন জানতে পেরেছিলাম,এটা প্রিপ্ল্যান্ড ছিল।কে শত্রু সেটাও জানি।কিন্তু…আমি কিছুই করতে পারছি না….পারবও না…… আমাদের জীবন রিস্কে আছে,আমার স্বামী এসব জানেনা,আমি তাকে জানাতেও চাই না।আমি এসব নিয়ে খুব চিন্তায় থাকি।এতে আমাদের মাঝে অশান্তিও বেড়েছে….আমি আসলে…”

জেসমিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।রিকার্ডো ওকে সময় দেয় শান্ত হওয়ার।জেসমিনের কান্না বন্ধ হলে রিকার্ডো বলা শুরু করে,
“আমার জীবনটা অনেক কঠিন ভাবে কেটেছে।আমার ছিল সৎ মায়ের সংসার যে কিনা আমাকে কখনও পছন্দ করত না।কারণে অকারণে মারত,খেতে দিত না।একটা সময় আমাকে অনেকেই মারতে চায়।আমার খাবারে বিষও মেশানো হয়েছিল। আমি সেটা থেকেও উদ্ধার পেয়েছি।এর একমাত্র কারণ ঠান্ডা মেজাজ।

দেখ,মার্শাল আর্টের কাজ শুধু একজন যোদ্ধা তৈরি না,সাথে সাথে তাকে বিপদের সর্বোচ্চ সময়েও মাথা ঠান্ডা রাখা।তোমাকে শিকারী চিতার মত হতে হবে।প্রচন্ড ঠান্ডা মাথার এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন।আশেপাশে কি হচ্ছে,তার প্রতিটা নড়াচড়া খেয়াল করতে হবে।মানে তোমাকে ফোকাসড থাকতে হবে প্রতিটা সেকেন্ডে! ঘুমের মাঝেও খেয়াল রাখবে যেন তোমাকে শত্রু আঘাত করতে না পারে। যদি তুমি ফোকাস হারাও,তবেই তুমি শেষ!

এই যেমন ধরো একটু আগে তুমি পাবলোকে অনেক মেরেছ শত্রু মনে করে যেখানে ও আসলে তোমার বন্ধু! আবার ধরো তোমার স্বামী।সে কিন্তু তোমাকে অনেক ভালবাসে ও তোমার প্রিয় মানুষদের একজন।তাকেও তুমি আঘাত করে যাচ্ছ।এসব করা যাবে না।যত বড় বিপদই আসুক,যদি যমও তোমার কানের কাছে চলে আসে,তখনও নিজের ফোকাস হারানো যাবে না! বুঝেছ?”
“ইয়েস মাস্টার”

এরপরের দিনগুলোতে লাগাতার ভাবে জেসমিনের ধৈর্য্য পরীক্ষা করা হয়,ওকে মানসিক,শারীরিক দুইভাবেই প্রস্তুত করা হয়।যতবার জেসমিন ভেঙে পড়ে,ততবার ওকে ত্যলে দাঁড় করিয়ে আবার প্র‍্যক্টিস করানো হয়।তার মাঝেই একদিন বিরাট ঝামেলা বেঁধে যায়।

সেদিন জেসমিন বাড়ির পেছনের বাগানে কাজ করছিল।বিকালের দিকে আকাশে তখন পরিষ্কার রোদ,সবুজ ঘাসে সেগুলো লুটোপুটি খাচ্ছে।কাজ করতে করতে জেসমিনের ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে ওঠে।কেন যেন মনে হয়,কিছু একটা ঠিক নেই,বড় কোন ঘাপলা আছে।চোখ কান খাড়া করে সচরাচর শুনতে পাওয়া শব্দ থেকে আলাদাভাবে হওয়া শব্দটুকু আলাদা করার চেষ্টা করে।আচ্ছে সেটা কি খুব কাছেপিঠে কোথাও?জেসমিন ধীরে সুস্থে কাজ করতে থাকে।ওর হাতে বাগানের আগাছা কাটার ছোট কাস্তে।আগাছা কাটতে কাটতে হুট করে দাঁড়িয়েই পেছনের অস্তিত্বটাকে বাঁ হাতে মেরে বসে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে,এক বিদেশী মুখ মাস্ক পড়ে কাতরাচ্ছে,ওর ছুরির আঘাত লোকটার গাল থেকে গলা পর্যন্ত চিড়ে দিয়েছে।

জেসমিন লোকটার চুলের মুঠি ধরে টেনে বেজমেন্টের দরজার কাছে আসে।একটানে দরজা খুলে লোকটাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।এদিকে লোকটা ছটফট করেই যাচ্ছে ব্যথায়,ইটালিয়ান আঞ্চলিক ভাষায় কি যেন বলতে থাকে।জেসমিন আবার ওকে টেনে বেজমেন্টের মাটিটে ধুপ করে ফেলে।সেখানে ফেলে কিছুক্ষণ ইচ্ছামত মারে।লোকটা ওর মার খেয়ে ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে,গাল বেয়ে রক্ত ভালোই পড়ছে।লোকটার সব পকেট ও চেক করে।মোবাইল মানিব্যাগ সহ যা যা পায় সব সরিয়ে ফেলে।তারপর ওকে চেয়ারের সাথে হাত পা সব শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধে,মুখে গুঁজে দেয় একটা কাপড়।

লোকটাকে বাঁধা শেষ হতেই ফ্লোরের উপরে থাকা রাইফের গলার স্বর শুনতে পায়।এই অসময়ে রাইফ?! জেসমিন অবাক হয়।এই ছেলে এখানে এই সময় কেন?! লোকটার মুখ এবার একটা বস্তা
দিয়ে ঢেকে দেয় যেন জ্ঞান ফিরলেও বুঝতে না পারে।

এদিকে ফ্লোরের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা রাইফকে জেসমিন মাটির নিচ থেক দেখতে পায়।রাইফ জেসমিনকে বেশ জোরে জোরে ডেকে ডেকে খুঁজছে।জেসমিন নিচ থেকে কাঠের মেঝের ফাঁকা দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এখন কি হবে?!রাইফ যদি বুঝে যায়??

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here