#Journey episode 37

0
161

#Journey episode 37

#৩৭

জেসমিন হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠে।রাইফ খেয়াল করে ঝুপ করে টাবের পানিতে কি একটা লালচে বস্তু পরে,কয়েক ন্যানো সেকেন্ড পরে ব্রেনে ক্লিক করে যে এটা ওর সন্তান! বাচ্চাটার নাভি এখনো তার মায়ের শরীর থেকে আলাদা হয়নি। রাইফ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে,মানুষের সন্তান বুঝি এভাবেই হয়?! আচ্ছা,বাচ্চাটা যে পানিতে পড়ে গেল,ও কি মারা যাবে?আচ্ছা,অকে কি ধরতে হবে?কিন্তু রাইফ তো কোন সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চাকে কোলে নেয়নি,তাহলে এখন ওকে কিভাবে ধরবে?যদি ওর ঘাড় ভেঙে যায়?!

রাইফের এত চিন্তা সব এক মুহুর্তেই মাথায় চলে আসে।তবে সে চিন্তা শেষ হবার আগেই নার্স দক্ষ হাতে বাচ্চাটাকে ধরে ফেলে।জেসমিন নিজের সব ভার রাইফের উপর ছেড়ে দেয়।নার্স বাচ্চাটাকে জেসমিনের কোলে দেয়।

“কনগ্রেজুলেশন মি. এন্ড মিসেস ড়াইফ,আপনারা ছেলে সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন”

দুহাতে বাচ্চাটাকে ধরে জেসমিন ডুকরে কেঁদে ফেলে।ওকে কাঁদতে দেখে রাইফ আর জোরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।রাইফের কান্না দেখে বাচ্চা আর মা দুজনেরই কান্না বন্ধ হয়ে যায়।জেসমিন কান্না থামিয়ে রাইফের মুখ পানে চায়, অদ্ভুতভাবে ওর ছেলেও চোখ খুলে বাবার দিকে তাকায়। ডাক্তার আর নার্স দুজনেই মুখ টিপে হেসে দেয়।জেস রাইফের বুকে হেলান দিয়ে ওর গালে চুমু খায়,আর চোখ বুঁজে কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়।

রাইফের শব্দ করে কান্না বন্ধ হয়েছে,তবে এখন ওর ছেলে কাঁদছে।আর সেজন্য রাইফ নীরবে কাঁদছে।একটা মেয়েকে যে এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় একটা সন্তানের জন্য,তা নিজের চোখে দেখার পর থেকে আবেগ ধরে রাখতে পারছে না।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে জেসকে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানের স্থানে রেখে দিতে,যেখানে ওকে কোন দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করতে পারবে না! দুজনকে বুকে চেপে ভাবছে,এভাবে যদি প্রতিটা স্বামী সন্তান জন্ম দানের সময় তার পাশে থাকত,তবে কোনদিন তাকে কিছু বলার আগে হাজারবার ভাবত!

মোটামুটি সব রকম কাজ শেষ করার পর জেসমিনকে বেডে দেয়া হয়।যেহেতু নরমাল ডেলিভারী হয়েছে,তাই একদিন থেকে পরদিনই ওরা চলে যেতে পারবে।রাইফ ওর স্ত্রী আর বাচ্চাকে ঘুরে ফিরে বার বার দেখছে।নার্স এসে বাচ্চাকে তার মায়ের উন্মুক্ত বুকের উপর ছেড়ে দেয়।বাচ্চাটা মায়ের দেহ থেকে খুঁজে নেয় এই পৃথিবীতে আগমনের পর প্রথম খাদ্য,শাল দুধ।রাইফ জেসের পাশে বসে পলকহীন দৃষ্টিতে দেখে,এই নিষ্পাপ দৃশ্যের সাথে সব মায়েরাই পরিচিত,কিন্তু কয়জন বাবা পরিচিত? হয়ত তাকেও মায়ের কাছ থেকে এভাবেই খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়েছে,একদিন সেও পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় এক প্রাণ ছিল,এমনি করে সে হাতড়ে হাতড়ে মাকে খুঁজেছে,মায়ের দেহের থেকে আলাদা হয়েও তাকে ছাড়া অচল ছিল।মা! শব্দটা এত ছোট হয়েও কেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভাড়ি শব্দ তা আজ বুঝতে পারছে।সাথে এটাও বুঝতে পারছে,একটা মেয়েকে মা হতে হলে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়!জেসকে জড়িয়ে ওর কপালে চুমু খায়,আর চোখ থেকে অজান্তেই এক ফোঁটা পানি জেসের গালে পড়ে।

“আমি অনেক ভাগ্যবান! একটা মাকে তোমার মাধ্যমে দেখেছি! তোমাকে আজ অব্দি যত কষ্ট দিয়েছি,আমাকে মাফ করে দিও!জানো,আজ যদি আমার মা এরকম না করত,তাহলে হয়ত আমি পুরো পৃথিবীটা তার পায়ের নিচে এনে দেয়ার জন্য লেগে যেতাম!”

জেস ওকে কাছে এনে গালে গাল ছোঁয়ায়।
“কেন আমার কাছে মাফ চাচ্ছো?মানুষ কি এত পার্ফেক্ট হয়?আমি অনেক লাকি জানো,তোমার মত স্বামী পেয়েছি বলে।আর তোমার মাও অনেক লাকি।তুমি ভেব না,সে এক সময় তার ভুল ঠিক বুঝতে পারবে”

এদিকে জেসমিনের বান্ধবী রেবেকার কাছে সেলিম এতক্ষণ ছিল।কিছুক্ষণ পর রেবেকা ওকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে।সেলিম বাবু দেখার সাথে সাথে দৌড়ে আসে।নার্স ওকে বাবু ধরতে বাঁধা দিলে নার্সের হাতে কামড় দিয়ে বসে!রেবেকা দৌড়ে এসে ওকে ধরে।

“সেলিম!এটা কি করলে বাবা!”
“ও আমাকে আমার ভাইকে ধরতে দিচ্ছে না কেন!আমি ওকে আরো কামড় দিব!”
“ঠিক আছে,ঠিক আছে,আমরা বাবুকে কোলে নিব,কিন্তু তার আগে আমাদের খুব ভালমত হাত ধুতে হবে,তা নাহয় বাবু তো অসুস্থ হয়ে যাবে!চলো আমরা হাত ধুয়ে নেই”

হাত ধোয়া পর খুব সাবধানে বাবুকে সেলিমের কোলে দেয়া হয়।বাউ কোলেই ও বলে ওঠে,
“বাবু এরকম ছোট খরগোশের বাচ্চার মত দেখতে কেন!”

ওর কথা শুনে সবাই জোরে হেসে ওঠে।

একদিন পর…

জেস নতুন অতিথিকে নিয়ে আজ বাড়ি ফিরছে।গাড়ি ভর্তি নতুন বাবুর জিনিসপত্র,যদিও গত নয় মাস ধরে নতুন বাবুর জন্যে কম কিছু কেন হয় নি!ওদের পেছনে সেলিম বসে একটু পর পর বাবুকে দেখছে আর বলছে,
“বাবু কেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে! বাবু খেলে না কেন! বাবু কথা বলে না কেন? বাবু শুয়ে শুয়ে পটি করে কেন?আমিও শুয়ে শুয়ে পটি করব!”

বাসার সামনে এসে রাইফ আগে গাড়ি থেকে নেমে জেসমিনকে নামায়,তারপর বাবুকে নিয়ে ওর কোলে দিয়ে বলে,
“তুমি বাবুকে নিয়ে বাসায় যাও,আমি জিনিসপত্র নিয়ে আসছি।

জেসমিন বাসার ভেতর পা রাখে।বাগান পেরিয়ে দরজার কাছে আসে।দরজায় হাত রেখে খুলে।ভেতরে অন্ধকার।ডান হাতে বাবুকে নিজের সাথে চেপে ধরে বাঁ হাতে আলো জ্বেলে দেয়।

এদিকে রাইফ জিনিসপত্র সব নিয়ে আসতে গিয়ে শুনে জেসমিন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠেছে!

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here