#আলোকিত_অন্ধকার
কলমেঃ-নাঈমা_বিনতে_আয়েশা
১০ম পরিচ্ছেদ
_____________________________
-আদিব আমি তরুকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে চাই, তুমি তোমার অফিসের ছুটি বাড়িয়ে সব কাগজপত্রের ব্যবস্থা করো। প্লিজ না করো না প্লিজ! আমি পারলে চারুকেও নিয়ে যেতাম। কিন্তু রিহান ভাইয়া আর ওর বউয়ের জন্য…
মরিয়া হয়ে একটানা কথাগুলো বলে থামলো রেণু।
আদিব রেণুর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনেই একটু হাসল “মা দের আসলেই মায়া দিয়ে তৈরি করে আল্লাহ” মনে হলো আদিবের।
-আচ্ছা বেশ কিন্তু রিহান ভাই কি রাজি হবে রেণুমণি?
দপ করে যেন জ্বলে উঠল রেণু,
-কি পেয়েছে সে! ছেলেমেয়ে তার একার না! আমার বোনেরও, মা মরা ছেলেমেয়ে গুলোকে যা নয় তার কষ্ট দিচ্ছে। সালিহার উপরে সে কিছুই বলেনা, কিন্তু কেন!
বিয়ের দশ বছর হতে চলল এত দিনের মাঝে রেণুকে এত রেগে যেতে দেখেনি আদিব। রেণুর এত রাগ সে জানতই না, রাগে কাঁপছে মেয়েটা।
-রেণু শান্ত হও প্লিজ।
-আদিব ভেবে দেখো, চারুটাকে এতটুকুন বয়সে বিয়ে দিলো, আচ্ছা বয়স নিয়ে আমি কিছু বলছি না। দিক বিয়ে, কিন্তু দেখেশুনে দিক! আমাকে আসার সুযোগটুকু দিলো না। চারু রোজ গেলে মার খাচ্ছে তাহেরের হাতে, আর সেখান থেকে সালিহা মেয়েটাকে আনতে দেবে না। রিহান ভাইয়াও তাই। এসব দেখে চারুও আর কিছুতেই আসবে না ওখান থেকে। ভাবো একটু!
চমকে উঠল আদিব, অতটুকু মেয়ে!
-রেণু তাহলে আমরা চারুকে নিয়ে যাই?
-না আদিব চারু কিছুতেই যাবে না, তার কথা তার বাবা তাকে বুঝছে না সেখানে সে কারোর কাছেই কিছু আশা করে না। ছোট বেলা থেকে দুঃখ পাওয়া ছেলেমেয়েগুলো অনেক অভিমানী হয়, অভিমান করাটা এদের মানায় না। তবুও এদের অভিমানের পাল্লা ভারি হয়। চারু খুব অভিমানিনী।
আমি তরুকে নিয়ে যেতে চাই, শুনেছি ওর হিফজ্ পড়া এই মাসেই শেষ হবে। রিহান ভাইয়া যা পারে বলুক। আমি তরুকে না নিয়ে যাবোই না। দরকার হলে আমি ত্বাসিনের সাথে তরুর বিয়ে দিবো ত্বাসিন আরেকটু বড় হলেই।
তরু ত্বাসিন আমার কাছেই থাকবে, বলে ঘুমন্ত ত্বাসিনকে চুমু দিলো রেণু।
-আচ্ছা আচ্ছা রেণু তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু! আমি ব্যবস্থা করছি আপাতত শান্ত হও, রেস্ট নাও। আমি রিহান ভাইয়ের সাথে আর তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলছি।
অবশেষে রেণুর কথাই রইল। ঠিক পাঁচমাস পরে রেণু, আদিব, ত্বাসিন আর তরু পাড়ি জমালো আমেরিকার পথে। তরুর চলে যাওয়াতে যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলো সে হলো চারু।
ভাইকে অসম্ভব ভালবাসতো চারু। যেতে দিতে মন না চাইলেও বাঁধা দেয়নি ও, শুধু একটু সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়…!
সময়ের স্রোতে পার হয়ে যায় চারুর জীবনের দিন, যদিও সেগুলো বড্ড বেরঙিন।
রিহান নিধিকে নিয়ে মাসে দু’মাসে আসে চারুর বাড়িতে। অনুষ্ঠান বা ঈদ ছাড়া চারুর বের হওয়া হয়না শাশুড়ীর দাপটে। নিধি আসলে কিছুটা ভাল লাগে। নিধিকে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। কখনো মাকে নিয়ে অভিযোগ কখনো বাবাকে নিয়ে কখনো আবার চারুর কথা মাকে বলে দেয়।
নিধি এসে কখনোবা থাকে। তাহের আবার নিধির সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না, সব ঠিকঠাক।
ইদানীং চারুর কাছে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। চারুর এই নির্লিপ্ততাও অপছন্দ মাহিমা।
পছন্দ অপছন্দ আর সুখ দুঃখের দোলাচলে কেটে গেল আরো একটি বছর….
সেই সাথে চারুর জীবনে ঘটে গেল আরো একটি ঘটনা!
.
তিন্নি প্ল্যান করছে কিভাবে আতিফকে নিয়ে যাওয়া যায় যেখানে আতিফ না বলার কোনো সুযোগ পাবে না।
মাস তিনেক আগে পরীক্ষার আগেই ফিরেছে আতিফ। আপাতত ফ্রি টাইম সবার আর ট্যুরে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। ভাবতে ভাবতে রাফিয়ার কাছে কল করল তিন্নি।
-রাফিয়া তুই কোথায়?
-তুই জানিস না আমি এখন কোথায় থাকতে পারি?
-হু হু আপনি তো আবার বাসা থেকে বের হন না! মেয়ে বলে!
বলে ভুরু কুঁচকালো তিন্নি।
-দেখ তিন্নি তোর কথা একদমই ঠিক নয়, মেয়ে বলে আমি আটকে থাকি তেমন কিছু না। আচ্ছা বাদ দে, তোর একটা খুব সুন্দর হিরের নেকলেস আছে লাস্ট বার্থডেতে তোর মা দিয়েছিল?
-হ্যাঁ, তো?
-তুই তো তেমন একটা পরিস না।
-হ্যাঁ কারণ অত দামি জিনিস পরে বাইরে গেলে আমার কেমন যেন আনসেফ লাগে। যে দিনকাল পড়েছে কি জানি ছিনতাই বা দুর্ঘটনা হয় যদি। আমার খুব প্রিয় ওটা” তিন্নির কথাতে মুচকি হাসলো রাফিয়া।
-আচ্ছা বেশ, ওটাকে কাল তোদের ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখিস। ভাল লাগবে, আর মানুষ জানবে তোর এত্ত সুন্দর একটা নেকলেস আছে!
রাফিয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল তিন্নি। একরাশ বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো,
-এ তুই কিছু খেয়েছিস উল্টাপাল্টা?
-বাজে কথা ছাড় আমার উত্তর দে!
প্রচুর রেগে গিয়েও নিজেকে শান্ত রাখল রাফিয়া।
-তাহলে উল্টাপাল্টা বকছিস কেন! অত দামী জিঞ্জস কেউ বাইরে মেলে রাখে!
-কেন তোর কি মনে হয় না ওটাকে মানুষের মাঝে না দেখিয়ে ওইটার সৌন্দর্যকে অবজ্ঞা করছিস?
-কখনোই না, আমার হিরের নেকলেস আছে তাই সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে? সবাই এমনিতেই জানবে আমার একটা সুন্দর জিনিস আছে!
তিন্নির উত্তরে হেসে উঠলো রাফিয়া,
-মেয়েদেরও তোর ওই হিরের নেকলেসের সাথে মিলিয়ে দেখ, মেয়েরা তার থেকেও বেশি দামী। অনেক বেশি সম্মানের, আরো কারণ আছে।
রাফিয়ার কথাতে থতমত খেয়ে গেল তিন্নি,
-নে নে আর জ্ঞান দিতে হবে না। যা বলতে ফোন করেছি তাই বলা হলো না, আমি আসছি তোদের বাসায়, থাকব তোদের ওখানে আজ আর এসেই বলছি।
সাবধানে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফিয়া বলে,
-আচ্ছা আয়।
কল কেটে দিয়ে মাকে একটা টেক্সট করে দিয়ে রেডি হতে লাগলো তিন্নি। যে করেই হোক রাফিয়ার বাসায় বুঝিয়ে রাফিয়াকে নিয়ে যেতেই হবে! গন্তব্য কক্সবাজার…!
রাফিয়ার বাবা মাকে রাজি করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হলো তিন্নিকে। মনে মনে যথেষ্ট বিরক্ত। শেষ পর্যন্ত তিন্নির মায়ের সাথে কথা বলে তবে রাজি হয়েছেন রাফিয়ার বাবা মা। তিন্নির মায়ের সাথে যখন রাফিয়ার আম্মু কথা বলছিলেন তিন্নি তখন মনে মনে হাসছিল।
“আমার বাবা মা আমারই খোঁজ রাখে না আর রাফিয়ার খোঁজ” মনে মনে একচোট হেসে নিলো তিন্নি। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। বললেই সব ভেস্তে যাবে!
পরদিন সকালে তিন্নি চলে গেল। রাফিয়া কলেজে যেতে পারলো ছোট বোনের জন্য, রাফিয়ার মা থাকবে না বাড়িতে। তিন্নি যাওয়ার আগে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে রইল রাফিয়ার দিকে। যেন ওর সব কিছুতেই বিরক্তি।
গাড়ির ড্রাইভিং করতে করতে হঠাৎ হেঁটে যাওয়া আতিফের দিকে চোখ পড়ল তিন্নির।
সোজা গিয়ে ব্রেক করল আতিফের পাশে।
-লিফট দিতে পারি?
তিন্নিকে অবাক করে দিয়ে আতিফ কিছু না বলেই উঠে বসলো গাড়িতে।
-কেমন আছ?
আড়চোখে আতিফের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল তিন্নি।
-ভাল, তুমি?
-আমিও।
-আতিফ একটা রিকোয়েস্ট আছে!
সোজাসুজি কাজের কথায় চলে গেল তিন্নি।
আতিফ কিছু না বলে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো তিন্নির দিকে। আতিফের উপর তিন্নির দূর্বলতা বেড়েই চলেছে। আতিফের এভাবে তাকানোতে মনে মনে রীতিমতো হোচট খেল ও। নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে বলল,
-নেক্সট উইকে আমি তোমাদের সবাইকে একটা ট্রিট দিতে চাই, আর সেটা কক্সবাজার। আমাদের ব্যাচের বেশ পরিচিত যারা রয়েছে তাদের নিয়ে যাব। পুরোপুরি আমার পক্ষ থেকে?
গাড়ি ব্রেক করে কলেজ রাস্তার একপাশে রেখে বলল তিন্নি।
-উপলক্ষ্য?
ছোট্ট করে প্রশ্ন করল আতিফ।
-নেক্সট উইকে আমার বার্থডে
-ওহ সিরিয়াসলি? কেন যাব না!
প্রথমবার উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলে আতিফ।
তিন্নির মনে খুশির জোয়ার বয়ে গেল। মুখে প্রকাশ না করলেও সেটা বাইরে থেকে প্রকাশ পেয়েই গেল।
আতিফ বাইরে তাকিয়েও বুঝতে পারল তিন্নি খুব খুশি হয়েছে। কলেজে এসে সবাইকে বলতে সবাই রাজি হয়ে গেল। তিন্নি তিন্নির খুশি আর ধরে না। তার আশা পূরণ হতে চলেছে এখন আতিফ ঠিক থাকলেই হলো।
সব কিছু ঠিকঠাক করতে তিন্নি কয়েকদিন কলেজে যেতে পারল না।
ওদের দলে দশটা মেয়ে, ছয়টা ছেলে আর ড্রাইভার মিলে সতেরো জন। তিন্নিদের নিজেদের গাড়ি নিয়েই যাওয়া হবে ঠিক হলো।
আজ তিন্নি ভীষণ খুশি। একেতো রূপসী রানি, তাতে পরীর মতো সেজেছে। সাদা গাউনে অপ্সরীর মতো লাগছে ওকে। আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল তিন্নি। এত সাজ শুধু আতিফের জন্য। “দেখি আমাকে কি করে তুমি অবহেলা করো আতিফ!” নিজের মনেই বলল তিন্নি।
গাড়ি নিয়ে আগে রাফিয়াকে আনার উদ্দেশ্যে ছুটল ও। রাফিয়া ছেলেদের যাওয়া ব্যাপারে জানেনা, জানলে যেতে চাইবে না বলে ওকে জানায়নি তিন্নি।
বড় মাইক্রোবাস থেকে অবাক হলো রাফিয়া।
-কি রে বড় গাড়ি এনেছিস কেন?
-পরে বুঝবি!
কলেজে গিয়ে অবস্থা দেখে রাফিয়া জেদ ধরে বসল সে কিছুতেই যাবেনা। কিন্তু তিন্নিও কম যায় না।
রাফিয়ার দেখাদেখি সেও জেদ করতে লাগল যাবে না। শেষে সবাই রাফিয়াকে বুঝিয়ে, রাফিয়াকে নিজের মত থাকতে দেওয়া হবে এসব বলে রাজি করালো সবাই। রাফিয়া নিজেও জানতো একবার যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে তিন্নি তাকে ছাড়বে না।
কি করে যে এই বিপরীত মেরুর মেয়েটা ওরই বান্ধবী হয়ে গেল ভেবে পায়না রাফিয়া।
গাড়িতে ওঠার সময় আতিফের দিকে একবার তাকালো তিন্নি। আতিফের চোখে নিজের প্রতি মুগ্ধতার ছাপ চিনে নিতে দেরি হয়নি ওর।
খুব কৌশল করে আতিফের পাশে বসল তিন্নি, আতিফ শুধু ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলল, তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ উল্লাসের মাঝে তিন্নিদের গাড়িটা পৌঁছে গেল কক্সবাজার। তিন্নি প্ল্যান করেই দিনে রওনা দিয়েছিল যাতে আতিফের সাথে কাটানো সময় গুলোর সামান্য অংশও মিস করতে না পারে। হোটেল আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল। ক্লান্ত শরীরে সবাই যার যার রুমে চলে গেল। আগামীকাল তিন্নির বার্থডে, সারাদিন ঘুরবে, আর তারপর রাতে বিচে বার্থডে পার্টি দেবে তিন্নি, সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।
খুব ভোরে তিন্নির ঘুম ভেঙে গেল। রাত বারটায় কাউকে উইশ করতে নিষেধ করেছিল ও। তাতে ওর আর সবারই কষ্ট হতো।
সূর্যোদয় হবে হয়তো একটু পরেই। চোখ মেলতেই অবাক হয়ে গেল। পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজানো। অথচ কেউই নেই রুমে। তিন্নি বুঝতে পারল তার বন্ধু-বান্ধবীদেরই কাজ এটা। রুমের বাইরে এসে বুঝলো কেউ উঠেনি এখনো। কি মনে হলো একাই রুম থেকে বের হয়ে বিচে চলে এলো। খালি পায়ে হাঁটতে বেশ লাগছে।
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল তিন্নি। আতিফ পাশে এসে তার হাত ধরে দাঁড়িয়েছে।
“শুভ জন্মদিন” তিন্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল আতিফ।
তিন্নির ঘোর এখনো কাটেনি। কিছু বলতে যাবে এমন সময় অন্যহাতে থাকা ফোন টা বেজে উঠল। রাফিয়ার কলটা রিসিভ করে দুই-একটা কথা বলেই রেখে দিলো তিন্নি। পাশে ফিরে আতিফ কে আর দেখতে পেল না! মনটা খারাপ হয়ে গেল তিন্নির।
সুর্যোদয় দেখতে একে একে সবাই আসলো বিচে। সবার মাঝে আতিফকে দাঁড়ানো দেখে আবার মন ভাল হয়ে গেল তিন্নির। সারাদিন মোটামুটি সবাই ঘোরাঘুরি করল, কেউ আলাদা কেউ এক সাথে, এভাবে বিচ্ছিন্ন ভাবে। তবে তিন্নিকে মাঝে মাঝেই আতিফের সাথে দেখা গেল। তবু রাফিয়া থাকাতে আতিফের সাথে বেশি ঘুরতে পারছে না তিন্নি।
এখন মনে হচ্ছে রাফিয়াকে না আনলেই ভাল হতো! যত্তসব ধর্মীয় গোঁড়ামি ওর মাঝে। আপাতত তো আর কিছু করার নেই। নেক্সট টাইম রাফিয়াকে নিয়ে আসবো না এটা বলে নিজের মনকে বোঝালো তিন্নি।
সবাই মিলে সূর্যাস্ত দেখার পর যে যার মতো বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুরে বেড়াতে লাগল আর তিন্নি হোটেলের রুমে চলে গেল। জন্মদিন পার্টির মেক আপ নিতে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও বার্থডে পার্টির অধিকাংশ বিষয়ই রাফিয়াকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে, এসব তার একদমই ভাল লাগে না, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে করতেই হচ্ছে!
তিন্নি হোটেলের ম্যানেজার কে বলে প্রায় সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেগুলোরই তদারকি করছে রাফিয়া। কোথাও কোথাও ডেকোরেশন চেঞ্জ করে নিজের মতো করে সাজাতে বলছে। বিচেই ওর জন্মদিন সেলিব্রেট হবে। বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে লাইটিং, গোলাপি বেলুন আর টাটকা লাল গোলাপ দিয়ে হয়েছে।
টেবিল দিয়ে জন্মদিনের কেক, ক্যান্ডেল সাজানো। আরেকটু দূরে খাওয়ার ব্যবস্থা। রাফিয়া বারবার ছোটাছুটি করে খেয়াল রাখছে সব যেন ঠিকঠাক হয়। এদিকটাতে কেউ নেই।
সবাই এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করছে, কেউ তিন্নির জন্য গিফট কিনতে গিয়েছে। রাফিয়ার নিজের ব্যাগেও বেশ কিছু জনপ্রিয় ধর্মীয় বই রাখা আছে তিন্নিকে দেওয়ার জন্য, তিন্নি পড়বে কিনা কে জানে।
বেছে বেছে ওর প্রিয় কোরআন, ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব স্যারের সালাতুর রাসূল (সাঃ),
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ স্যারের এর মরণ একদিন আসবেই, আদর্শ নারী,
ডাক্তার জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্রের দুই খন্ড, ড. মরিস বুকাইলির বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান,
আরিফ আজাদের প্যারাডক্সিকাল সাজিদ এর দুইটা খন্ড, আরজ আলী সমীপে সহ আরো কিছু বই রয়েছে। রাফিয়া জানে সে যে গিফট টাই দিবে অন্যদের গিফটের পাশে ফিকে দেখাবে। তাই সবচেয়ে দামি গিফটটাই দিবে রাফিয়া, এখন তিন্নি এর মর্যাদা বুঝলেই হয়!
(চলবে)
(আলোকিত অন্ধকার আর চারু তিন্নিদের চলার পথ আপনাদের কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না)