সৎ মা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ২৯

0
219

সৎ মা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ২৯

আমাদের সেই দিনগুলোতে আমার তথাকথিত আত্মীয়রা আমাদের বাড়ি আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কাওকে কাওকে তো বলতেও শুনেছি আমার বৌকে কেন ব্যাবসা সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছি আমি। কিন্তু সত্যি বলতে ও জোড় করেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। ওর পড়াশোনায় অর্জিত সবটুকু জ্ঞান আমাদের অঙ্কুরিত ব্যাবসায় ঢেলে দিয়েছে।

হুম আমি তাদের সাথে সহমত যে আমার বাবা যা রেখে গেছেন তা বসে বসে খেলে আমার মতো ছেলের জীবণ হেসে-খেলে চলে যাবে। তবে জীবণ কি সেটাই। বাবা রেখে গেছে বলো তা বসে বসে শেষ করবো আমি তার পক্ষপাতী নই।

তাছাড়া বাবার চিকিৎসায় আমাদের অনেক কিছুই শেষ হয়ে গেছে। তা পূরণ করাটাও তখন একটা চ্যালেন্জ ছিলো আমার কাছে।

এর মধ্যে নতুন এক বিপদ এলো আমাদের কাঁধে। নতুন ব্যাবসার বয়স তখনো ছয় মাসও হয় নি। এর ভিতরে অনেক বড় একটা অর্ডার সময় মতো না দিতে পারায় বড় একটা এমাউন্টের লস গুনতে হলো। এমনিতেই চারদিক থেকে বিপদ, তার উপর লস।

চারদিক থেকে যেন তলিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। কোথাও একটু ঠাঁই নেই দাঁড়াবার। বাকী যে অর্ডারগুলো ছিলো তা সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে লসের পরিমান আরো বেড়ে একেবারে নিঃস্ব প্রায় অবস্থা হয়ে যাবে।

আসলে জীবণটা সিনামা নয়, যে সেলাই মেশিনের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে টাকা কামিয়ে বড় হয়ে যাওয়া। জীবণ জীবণই… এখানে প্রতি একটাকার মূল্য যে একশ পয়সা তা আমি সেই দিনগুলোতে টের পেয়েছি।

সেইদিন গুলোতে আমার মনে হতে লাগলো আমার আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ভুল ছিলো। বাইরের লোকরা ঠিকই বলেছিলো, বেশ তো ছিলাম বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে হেসে খেলে চলে যতো।

মা আমার মন পড়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ একজন। এত ভালো করে নিজের পেটের সন্তানকেও হয়তো পড়া হয়নি তার, যার পরিনাম আজকের সীমান্ত। মা আমাকে সাহস দিলেন। বললেন জীবণে এমন অনেক ঝড় আসবে, ঐ বেসামাল ঝড়ের অনেকেই ঝড়ে যাবে কিন্তু সবলরা টিকে থাকবে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মাকে, প্রাইমারি পাশ করা মা আমার, আমাকে এমন সব উধাহরন দিয়ে অনুপ্রেরণিত করলেন আমি যেন শক্তি পেলাম। যে ব্যাপারগুলো তিনি বলেছিলেন তা যেন আমার চোখের সামনেই অদেখা কিছু ছিলো।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি সাড়ে ছয়টায়। দাঁত ব্রাশ করতেই বাথরুমের আয়নাতে চোখ গেলো, দেখি একটা স্টিকি নোট লাগানো। সেখানে লেখ ছিলো-
” If you get tired learn to rest, not quit…”

লাল রঙের ছোট্ট কাগজটাতে প্যাঁচানো হরফে লেখা কথাগুলো এক্কেবারে কলিজায় লাগলো। বাথরুম থেকে আমি বের হয়ে দেখি সারা বাড়ি রঙিন স্টিকি নোটে ছাওয়া। আমি সবগুলো নোট পড়লাম।

সবগুলো নোটেই আমাকে টেনে তোলার চেষ্টা। আরো একটা নোট আমার ভালো লাগলো সবুজ কাগজে লেখা ছিলো-
” Winners are not people who never FALL, They’re people who never QUIT….

আমি হঠাৎ হেসে দিলাম। গতকাল ছিলো প্রসূনের লাস্ট সেমিস্টারের টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। আমি ওকে টাকাটা দিতে পারিনি, সারাদিন ভেবেছিলাম কিভাবে ওকে বলবো যে টাকাটা আমি দিতে পারছি না। সেই প্রসূন যখন ওর দুঃখ ভুলে আমাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে, তখন নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হতে লাগলো। আমার কয়েক টন ওজনের ভারী মনটা নিমেষেই হালকা হয়ে গেলো।

সবগুলো নোট আমি তুলে মানিব্যাগের পকেটে রাখলাম। সকালে নাশতা খাওয়ার সময় ওকে একদম স্বাভাবিক দেখাচ্ছিলো। আজ ওর নয়টায় ভার্সিটি যাওয়ার কথা। এখন বাজে সাড়ে আটটা… তবুও ওর তাড়া নেই…
ও যেন জেনেই গেছে ওর এবার টাকাটা জমা দেওয়া হবে না…

চলবে…

previous : https://www.facebook.com/659404701187391/posts/923213914806467/
next :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=924708027990389&id=659404701187391

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here