সৎ মা, লেখা: মাহাবুবা মিতু, পর্ব: ২৪-২৫

0
299

সৎ মা,
লেখা: মাহাবুবা মিতু,
পর্ব: ২৪-২৫

আপনার সামনে কি কোন পুকুর আছে…
: না তো…
: ঘুরে দেখেন তো….

এর পরপরই আবার দলবেঁধে কুকুরের ডাক, দুপাশ থেকেই, আমি স্তব্ধ।

: হাঁটতে হাঁটতে আপনি আমাদের বাড়ির পেছনের রোডে এসে পরেছেন।
আমি চুপ…
: তুমি কি দেখছো আমাকে…
: হুম…
: তাহলে আমি কেন দেখতে পাবো না…
: আমি দেখলেই হবে, আপনার দেখা লাগবে না…
: তাহলে আমি যাই…
: আরেহ্ পেছনের বারান্দায় অন্ধকার তো….
: ও….
: তুমি কোথায় তা তো বলো….
আমি কিছু একটা কল্পনা করে নিব নি
: ইশ্ আসছে….
: আসছে মানে, ভীষন জরুরী কাজ ফেলে দৌড়ে আসছি,
সেই সাড়ে ছয়টা থেকে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি… কোন দাম নাই এগুলোর…
হুহ্
: আহারে…

আমি তিন তালার ডানপাশের বারান্দায়…
মোবাইলের আলো জ্বলছে…
দেখেছেন…?
: হুম…
: সময় কিন্তু বেশি নেই…
: হুম
: তাহলে যান,
: যাবো ই তো…
: আচ্ছা একটু দাঁড়ান…
: দাঁড়িয়েই তো আছি…
: তাহলে বসেন…
হি হি হি…

এরপর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা…
তিনতলায় যে ছায়াটা এতক্ষণ ছিলো তা সরে গেলো।
আমি বারান্দার দিকে তাকিয়ে ফোন কানে ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষায় রইলাম ঐ ছায়া ফিরে আসার….

দীর্ঘ আট মিনিট পর ঐ ছায়াটা আবার এলো। কাপড়ে মোড়া কিছু একটা ফেললো নিচে…
আমার পরম সৌভাগ্য তা গিয়ে পরলো নিচের দোকানের টিনের চালে…

কল এলো তিনতলা থেকে,
: পেয়েছেন…
: না,
: না মানে…
: সবজির দোকানের টিনের চালায় পরেছে,
: ইশ্,
আলু পটল কিছু একটা কিনতে দাড়িয়ে নিয়ে নিলেই তো হয়…
: আলু, পটল দিয়ে আমি কি করবো…
: নিয়ে যান সাথে করে, আমি গিয়ে ভর্তা করে খাওয়াব নি..
হি হি..
: তোমাদের এলাকায় এসেছি, মজা নিচ্ছো নাও,
তবে মনে রেখ এক মাঘে শীত যায় না…
: মানে কি…
: সময় এলেই বুঝাবো…
: হি, হি, হি
: আচ্ছা রাখি,
: গাড়িতে উঠে ফেন দিবেন
: হুম,

বাসস্ট্যান্ডে পৌছালাম ঠিক সাড়ে এগারোটায়, গাড়িতে উঠতেই বাসের আলো নিভিয়ে দিলো কন্ট্রাক্টর। জ্বালিয়ে দিলো মৃদু লাল আলো…

পুরো গাড়িটা যেন রহস্যপুরী হয়ে গেলো। সেই রহস্যময় আবহেই স্কার্ফটা খুললাম। খুলে দেখি একটা রেডিয়াম ঘড়ি। অন্ধকারেও সেটি নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। ঘড়ির ডায়ালে লাল হার্টসেপ টাও অন্ধকারে জ্বল জ্বল জ্বলছে। যেটা আলোতে নিস্ক্রিয় থাকে, ঘড়িরটা একহাতে রেখে ফোন করলাম প্রসূনকে।

: কোথায় আছেন
: বাসে
: স্কার্ফটা খুলে দেখেছেন
: হুম
: আপনার ঘড়ি আর মন আমার কাছে সেই কবে থেকে,
তাই আমারটাও আপনাকে দিয়ে দিলাম…
একটু খেয়াল রাখবেন…
(কথা শুনে আমি স্তব্ধ, এই মেয়ে এত কথা জানে…)
: হুম
: হুম, আবার কি… আপনি তো বোবা না…
: আমার কথা আমাকেই বলছো…!
: মজা করলাম,
ঘড়িটা আমার অতি প্রিয় জিনিসের একটি। তাই আপনাকে দিলাম। আপনি চাইলে পরতে পারেন, এটা জেন্টস্ ওয়াচ..
পছন্দ হয়েছিল তাই কিনেছি, কলকাতার নিউমার্কেট থেকে।
প্রায়ই আমি এমনটা করি…
: হুম…
: আচ্ছা, সারাদিন তো হাটলেন, এবার একটু ঘুমোন, ঘুম ভাঙলেই দেখবেন বাড়ি পৌছে গেছেন…
: হুম,
: আপনার কি হয়েছে বলেন তো, খালি হুম, হুম করছেন, শরীরটাকি বেশী টায়ার্ড…
: হুম, অনেক হেঁটেছি। ঘড়ি বলছে প্রায় পনেরো হাজার স্টেপ।
: আচ্ছা, রাখি তাহলে, রাতে আমি আর কল দিবে না, গাড়ি যখন যখন থামবে আপনিই কল দিবেন। আমি জেগেই আছি…
: নাহ, জেগে থাকতে হবে না, তুমিও ঘুমিয়ে পরো…

জানালার পাশের সীটে আমি বসা, খুবই অস্বস্তি লাগছে গরমে। আমি গা টা এলিয়ে শুয়ে পরলাম। বেশ কিছুক্ষণ ঠিক কত সময় তা আমি জানিনা…
আমার ঘুম ভাঙলো বৃষ্টির পানির স্পর্শে…
কেন যেন মনটা ভরে গেলো। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস পুরো পৃথিবীটাকে একেবারে শীতল করে দিলো।

জানালাটার দিকে হাত বাড়িয়ে পানি স্পর্শ করছি আমি, পাশের সীটের লোক বলছে আরে ভাই ভিজে যাচ্ছি গ্লাসটা আটকে দিন।

আমি তাকে উপেক্ষা করে পর্দা টেনে দিলাম। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু আমাকে কেমন যেন বিচলিত করে দিলো। বৃষ্টির মধ্যে বাসযাত্রার অভিজ্ঞতা আমার সেই ই প্রথম। দুপাশে সাড়ি সাড়ি গাছ, বৃষ্টি ভেদ করে আমাদের গাড়িটা চলছে তুমুল স্পিডে। মনে হচ্ছিলো বাসটা অপার্থিব কোন জগৎ ভেদ করে চলছে৷

প্রসূনকে ফোন দিবো ভাবতেই ওপাশ থেকে ওর কল এলো
: কি সুন্দর বৃষ্টি, দেখেছো
: হুম,
: ঘুমাও নি কেন…
: কেন যানি ঘুম আসছে না…
: তোমারকি বৃষ্টি ভালো লাগে…?
: মোটেও না..
: কেন ভাল্লাগে না…, আমারতে বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ,
: যতক্ষণ হয় ততোক্ষণই ভাল্লাগে, এরপর কাঁদা পানিতে প্যাঁচপ্যাঁচে অবস্থা , পুরোই বিশ্রী ব্যাপার..
: ও…
এরপর কথা হলো অনেকক্ষণ…,
মনে হচ্ছিলো খুব কাছ থেকে গল্প করছি দুজন।

অনেক কথা শেষে, শেষ রাতে ঘুমালাম দুজন ,

ঢাকায় পৌছলাম সকাল সাড়ে ছয়টায়, গাড়ি থেকে নেমে হোটেলে নাশতা করে বাসায় গেলাম। গেইট খুললেন বুয়া।
বাসায় ঢুকে আলু পটলের ব্যাগটা রাখলাম আমার ঘরের খাটের নিচে। বুয়াকে বললাম কেও যেন না আসে রুমে…
এরপর গোসল করে লম্বা একটা ঘুম দিলাম…

পর্ব: ২৫

সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ভরতি মানুষ। আমি তখন বাইরে থেকে ফিরেছি মাত্র। মা ব্যাস্ত রান্নাঘরে। আমাকে হঠাৎ দেখে ডাকলেন। আমি গিয়ে তার পাশে দাড়ালাম। মা বললেন কাল একটু বাইরে যাব তোমার ফুফুরা আর আমি। তুমি ফেরার পথে আমাদের পিক করবে। আমি অত ঘাটলাম না, হুম হ্যাঁ বলে চলে এলাম…

পরদিন সকাল থেকেই কাজ আর কাজ। অফিসের কাজ, বিয়ের বাজারও শুরু হয়েছে। বিকেলে আবার তারা গহনা কিনতে যাবেন। তাই সেদিন সব কাজ শেষ করে তাদেরকে পিক করলাম। মা ডেকে গহনা গুলো দেখালেন আমাকে, আমি বললাম- আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই, আমি এসবের কিছুই বুঝি না।

সেদিন বাড়ির লোকের ব্যাস্ততায় প্রসূনের সাথে কথা হলো না তেমন একটা। ওকে ও পাওয়া যাচ্ছে না ইদানীং। কথা বলার চেয়ে টেক্সটই বেশী হচ্ছে। আমার ভীষণ রকমের বিরক্তি কাজ করে টেক্সট করতে। এত ধৈর্য নেই ফোন গুতাগুতি করার।

পরদিন হলুদ কোটা, সারাদিন রঙ নিয়ে খেলা হলো, ঠিকমতো হাঁটতে না পারা দাদীকেও দেখা গেলো আবীরের সাপ্লাই দিতে। এই এক মানুষ এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও আচার আচরণ কেমন যেন। আমার এই দাদী মাকে জ্বালাতেন ভাবতেই অবাক লাগে। ব্যাপার গুলো নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না আমি….

কাজিনরা ওদের কারিশমা শুরু করলো পরদিন থেকে। আগের দিন সারারাত কাজ করলো হলুদের গেস্ট গিফট প্যাক করে। মেয়েদের জন্য মিরর, নথ, কাপড়ের সুন্দর হাত-পাখা, আর ছেলেদের জন্য পকেট পারফিউম, চাবির রিং।

হলুদের পুরো প্রোগ্রাম সাজানো শেষ ওদের, নাচ ও তুলছে সপ্তাহ জুড়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রিহার্সাল হয় ছাদের সেই ঘরটাতে। আমি ওদের এসব দেখে খুবই বিরক্ত এমন একটা ভাব ধরলেও মনে মনে হাসি পাচ্ছিলো ওদের এসব কান্ড দেখে।

মা বিকেলে ঘরে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন গহনা গুলো পাঠানোর ব্যাবস্থা করতে। আহনাফ, রাইসা, নামিরাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে। সাথে যেন আমিও থাকি।
আমি মাকে বললাম আমি যেতে পারবো না…
মা আমাকে বললেন এতগুলো গহনা ওরা ছোট মানুষ যাবে, তাই বললাম, তোমার বাবা অসুস্থ, তা না হলে তিনিই যেতেন….

আমি সত্যিই গেলাম না৷ শেষমেশ গেলো আহনাফ, নামিরা, বজলু, আর রাইসার বাবা।

ঐ দিন সন্ধ্যায় বাসায় ঢুকতেই খবর পেলাম ওরা আজ আসছে না। তারা নাকি আজ ফিরতে দেন নি। আমি সাথে গেলেও কি রেখে দিতেন, নাকি….!
ভেবে আমি একা একা হাসি।

দুইদিন পরই হলুদের প্রোগ্রাম। আমাদের বাড়ির হলুদে মেয়েরা মেজেন্টা কালারের লেহেঙ্গা আর ছেলেরা
লেমন কালারের পাঞ্জাবি, সাথে মেজেন্টা কোটী। আর আমার জন্য মা এনেছেন হালকা আসমানী রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবিটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল।

আমাদের বিয়েতে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিলো না, তবুও প্রসূনের বাবা হলুদের আগের দিন দুই ট্রাক ভরে আসবাবপত্র পাঠালেন। কাঠের আসবাব থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস গেজেট সব….

ব্যাপারটা বাবা অপছন্দ করলেন। কারন তারা একবারও এ ব্যাপারপ কিছুই বলেন নি, বললে তিনি অবশ্যই না করে দিতেন। আমার বাবা কৃপণ মানুষ, যেনতেন নয়, যুগ হিসেবে একটু বেশীই, তবুও বাবার নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট। সবসময় চাইতেন তার জমানো টাকা কিভাবে বাড়ানো যায়, কিন্তু আমি আমার বাবাকে অন্য কারো কিছুর প্রতি কখনো লোভ করতে দেখি নি। কৃপণ মানুষ গুলো একটু বেশীই হিসেবি হয়, কিন্তু তারা কখনোই লোভী হয় না…
যার প্রমাণ আমার বাবা নিজেই।

এসব আসবাব নিয়ে পুরো হুলুস্থুল কান্ড। আগের ফার্নিচাররে মধ্যে এগুলো আবার কোথায় রাখবে। মা তাই বললেন এগুলোর কিছু ছাদের ঘরটাতে আর কিছু সীমান্তর ঘরে আপাতত রাখতে, প্রসূন এসে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিবে।

আমি প্রসূনকে ফোন করে বললাম – তুমিও তো একটাবার বলতে পারতে এসব। তাহলে আমিই নিষেধ করে দিতাম৷ প্রসূন বললো- আমি অনেক আগেই বাবাকে বলে রেখেছিলাম আমার বিয়েতে তুমি আমাকে একটা কালো রঙের গাড়ি দিবে। পরে দেখলাম কালো রঙের গাড়ি আপনাদের আছে, তাই বাড়াবাড়ি করি নি। তাছাড়া আমি বংশের প্রথম মেয়ে, তাই তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন৷ এতে রাগ হওয়ার কি আছে…

এসব নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক হলেও প্রসূন একটা ছবি পাঠিয়ে আমার তর্ক করা বন্ধ করে দিলো। ছবিটা দেখে আমি একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ডুবে গেলাম ঐ ছবির সৌন্দর্যে….
ঝগড়ার মুহূর্তে আমাকে থামাতেই এ কাজটা করেছে ও তা আমি জানি। ছবিটা সেভ করে আমি সাথে সাথে অফলাইন হয়ে গেলাম।

সেদিন রাতে আর কথা হলো না ওর সাথে। বাড়ির এমন গিজগিজ ভাব দেখে আমার মনে হচ্ছিলো সবাইকে বলি- , বিয়ে শেষ হলে আমাকে খবর দিও, আমি চললাম…!

পরদিন সকাল থেকে শুরু হলুদের হুলুস্থুল। আমি সকল ব্যাস্ত তার মাঝেও শেষবারের মতো গেলাম সীমান্তদের আনতে। সীমান্ত বাসায় ছিলো না। ফোনে আমাকে বললো বিকেলের মধ্যে চলে আসবে। আমি ওদের জন্য করা শপিং গুলো দিয়ে আসলাম৷ বললাম বিকেলে তোমাদের নিতে গাড়ি পাঠাবো।

সেখান থেকে ফিরে আমি আর রাইসা গেলাম মার্কেটে। ও তে যেতেই চাচ্ছিলো না, রেডি হতে হবে তাই, জোর করেই ওকে নিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য সবার জন্য কিছু গিফট কেনা। ব্যাপারটা হঠাৎ সকালে মাথায় এসেছিলো। তখন একটা লিস্ট করে রেখেছিলাম।

যেই ভাবা সেই কাজ। লিস্ট করা থাকায় মোটামোটি কম সময়েই সবার জন্য কিছু কেনাকাটা হলো। ফুফুদের জন্য শাড়ি, ফুফাদের জন্য পাঞ্জাবি, দাদীর জন্য দামী একটা শাড়ি।মার জন্য ডায়মন্ডের একটা নাকফুল, আর বাবার জন্য একটা ঘড়ি।

এসব দিয়ে রাইসাকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার কেন যেন সংকোচ লাগলো তাদেরকে এগুলো দিতে। তাই আমি গেলাম না।

সারাদিন পরে ফোন এলো তার, রিসিভ করতেই বললাম
: ঘায়েল করাতো তো ভালোই শিখেছো..
: মানে…
: কালকের ছবিটার কথা ভুলে গেছো…
: ও…
: খুব সুন্দর মানিয়েছে তোমাকে…
: ধন্যবাদ, স্যার…
: আমি কি ভেবেছিলাম জানো তোমার সাইজ তো লিলিপুট তোমাকে লেহেঙ্গাতা একটুও মানাবেনা..
: আমি লিলিপুট…!
: রাগ করলে…
: আপনার মুখে প্রথমবার শুনেছি তো তাই অবাক হলাম..
এসব শুনে আমার অভ্যাস আছে, ব্যাপার নাহ্…
: যাক বাবা আমি ভাবলম আবার কিছু…
: আচ্ছা রাখি, চারটায় বের হতে হবে…
: কেনো…
কোথাও যাবে নাকি…
: হুম, আজ আমার গায়ে হলুদ তো, তাই পার্লারে যাবো,
: আরেহ্ তাই নাকি…! আজ তো আমারও গায়ে হলুদ…
স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার তো…! কত মিল আমাদের দেখেছো।
: হইছে আর ঢং করা লাগবে না, রাখি দেরি হচ্ছে
: আচ্ছা, বাই
: ওকে…

চলবে…
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/919389738522218/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/921698881624637/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here