অতিথি পর্ব:১৫ লেখা: মিশু মনি

0
462

অতিথি
পর্ব:১৫
লেখা: মিশু মনি
.
মিশু টিসু বের করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
মর্ম ও দ্রুত নেমে এসে বলল,কি হলো? নেমে পরলা যে?
– চা খাবো, চা।
– এখানে চা কোথায় পাবা?
– ওই যে সামনে একটা টং দোকান দেখতে পাচ্ছ? ওইখানে।
– এখানে চা খাবা!
– অবাক হওয়ার কি আছে? এইজন্যেই বড় লোকের উপর রাগ উঠে।সামান্য ব্যাপারে হা করে থাকে।এখানেই চা খাবো।
– চা খাওয়ার জন্যই হা করছি।চলো।
মিশু হেটে দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। দোকানিকে বলল দুই কাপ চা দিতে।

মর্ম ও এসে মিশুর পাশে বসলো। মিশু বাচ্চাদের মত পা নাচাচ্ছে।মর্ম মনে মনে বলল,অযথাই কাল মেয়ে টাকে এত বকা দিলাম। মিশুর মত মেয়েই হয় না।

মিশু চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,চা নাও।

মর্ম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,বাহ! দারুন তো!
– হুম।বলেছিলাম না?
– সত্যিই অসাধারণ!
– সবাই ভালো চা বানাতে পারে না।
– চায়ের কথা বলছি না।তুমি,তুমি অসাধারণ!
– আমিতো বেয়াদব মেয়ে।বেয়াদব মেয়েরা অসাধারণ ই হয়।
– মিশু প্লিজ এভাবে বলিও না।
মিশু আর কিছু না বলে চা শেষ করে উঠে পড়ল।
.
মর্ম আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মিশু চুপ করে আছে।
মর্ম বারবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।
মিশু বলল,ওই হাসছ ক্যান?
– তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
– তাই জন্য হাসতে হবে? হাস্যকর সুন্দর তাই না?
– সত্যিই সুন্দর লাগছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
– তাহলে দুই টাকা দাও।
– দুই টাকা! কেন?
– আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে,তোমার ভালো লাগছে।তাই দুই টাকা দাও।
– হা হা হা।এখন খুচরা পয়সা নেই।পরে দিই?
– সুদ সহ নিবো কিন্তু।
– আচ্ছা,চার টাকা দিবো।
– ওকে ডান।
– আচ্ছা মিশু,তোমাকে একটা ফোন গিফট করলাম। একবার থ্যাঙ্কু বললা না?
– মনে ছিল না।থ্যাংকস।
– আমি থ্যাংকস নিবো না।অন্যকিছু নিবো।
মিশু অবাক হয়ে বলল,কি নিবা?
– তুমি যতদিন ঢাকায় আছ ততদিন আমার সাথে ঘুরতে বের হবে।প্রতিদিন ই,অন্য কারও সাথে নয়।শুধু আমার সাথে।
– আহারে! শখ কত!
– হ্যা শখ অনেক। বলো ঘুরতে বের হবা তো?
– কেন?
– তাহলে আমার ভালো লাগবে।মনে হবে তুমি আমার পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড।
মিশু রেগে বলল,কি বললা? পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড?
– হুম।হা হা হা।
– আমি কোনো পার্ট টাইম হতে চাইনা।
– তাহলে ফুল টাইম?
– নাহ।কোনো টাই হতে চাইনা।আমি “অতিথি”

মর্ম হেসে বলল,হুম।তুমি অতিথি। দুদিনের অতিথি, মায়া বাড়িয়ে চলে যাবা।
– যাবো ই তো।
– আচ্ছা টিসু,তুমি প্রেম করবা কবে?
– ২০২১ সালে।
– হা হা হা।তাই নাকি? প্রেম মানে কি বুঝো?
– খুব বুঝি। প্রেম মানে তেতুল খাওয়া।
– বাহ! অনেক কিছুই বুঝো তো! প্রেম মানে তেতুল খাওয়া, একটু ব্যাখ্যা করে দাও তো।
– তেতুল খেলে সবাই চোখ মাড়ে, প্রেম পড়লে ও চোখ মাড়ে।আর তাছাড়া প্রেম মানেই বিয়ে,বিয়ে মানেই বাচ্চা আর বাচ্চা মানেই তেতুল খাওয়া।
– হা হা হা।বেশ মজার কথা বলতে পারো তো!
মিশু হেসে বলল,আমিতো জোকার।সবাইকে হাসানো আমার কাজ।
– জোকার মিশু? হা হা হা।
– এই দ্যাখো, তুমি কত হাসছ।পাঠক রাও হাসবে মিশু মনির কথা শুনে।তাহলে আমিতো জোকার ই।
– পাঠক মানে?
– পাঠক মানে যারা পড়ে।
– সেটা তো জানি।আমাদের মাঝে পাঠক আসল কোথ থেকে?
– তুমি জানো না আমি গল্প লিখি? বাসায় ফিরেই তো এটা নিয়ে গল্প লিখা শুরু করবো। গল্পের নাম দিবো “অতিথি ”

মর্ম অবাক হয়ে বলল,সত্যি তুমি গল্প লেখো?
– আজ্ঞে হা।
– বাহ! টিসু মনির কত্ত গুন!
মিশু মুচকি হেসে বলল,দুই টাকা দাও।
– আবার?
– হ্যা।আবার তোমার ভাল্লাগছে,আবার দুই টাকা দাও।
– এটাও বাকি থাক,ছয় টাকা পাবা।
– আচ্ছা।তোমার কাছে দশ টাকার নোট আছে তো?
– হুম আছে।কেন?
– আমি তাহলে মজার মজার কথা বলি? একটা মজার কথার জন্য দুই টাকা, আবার আরেকটা মজার কথার জন্য দুই টাকা। ব্যস,দশ টাকা হয়ে যাবে।আর তুমি পকেট থেকে দশ টাকা বের করে আমাকে নগদ দিয়ে দিবা।তাহলে তোমার সুদ তা কেটে দিবো, আর বিনিময়ে আরেকটা মজার কথা শুনাবো।

মর্ম হো হো করে হেসে বলল,মিশু প্লিজ থামো। আর হাসতে পারছি না।পেট ফেটে যাবে।প্লিজ থামো।
– উহু।আমি কি করে থামবো? গাড়ি চালাচ্ছ তো তুমি?

মর্ম হাসতে হাসতে গাড়ি থামালো।
মিশু বলল,থামালে কেন? হিসু করবা?
– পাজি মেয়ে,এভাবে হাসতে থাকলে accident হয়ে যাবে।আগে তোমার দশ টাকা শোধ করি,তারপর গাড়ি চালাবো।নাও,শুরু করো তোমার জোকারগিরি।
মিশু হেসে বলল,আচ্ছা।বলোতো আমি লাস্ট কবে দাত ব্রাশ করছি?
– কাল সকালে?
– উহু হয়নি।আমি বাসায় দাত ব্রাশ করছি।রংপুরে ব্রাশ করে বাসে উঠেছি।ঢাকায় আসার পর একদিন ও ব্রাশ করিনি।
– কিহ! সিরিয়াসলি?
– জ্বি।আমি অলওয়েজ সিরিয়াস কাঞ্চন।
– সিরিয়াস কাঞ্চন?

মর্ম হো হো করে হাসতে লাগল।
মিশু নাকি সিরিয়াস কাঞ্চন!
মর্ম হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল মিশুর গায়ে।
মিশু বলল,মজা পাইছ? দুই টাকা হলো কিন্তু।মোট আট টাকা।
– হুম।আট টাকা হয়ে গেল।আর দুই টাকার জোগারগিরি করো।

মিশু হেসে বলল,আমি কিন্তু আজ সকালেও দাত মেজেছি।
– তুমি না বললা সেই রংপুরে ব্রাশ করে এসেছ?
– হ্যা।আর এখানে আসার পর ব্রাশ করিনি।ব্রাশ আনতে ভুলে গেছিলাম। তাই জন্য কি দাত না মেজেই থাকবো? এই মধ্যমা আঙুলের ডগায় টুথ পেস্ট লাগিয়ে দাত ঘষে ঘষে মেজেছি।

মর্ম আবারো হাসতে লাগল।
হাসি থামাতেই মিশু বলল,আবার দুই টাকা। দশ টাকা হয়ে গেল কিন্তু।
মর্ম মানিব্যাগ বের করে দশ টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নাও।
– থ্যাঙ্কু।বাট মিশু তো সুদ খায়না।এইবার সুদের টাকা টা শোধ করতে হবে।
– হুম আবারো জোকারি শুরু করো।
মিশু বলল, দুই লাইনের কবিতা শুনাই?
– আচ্ছা শুনাও,
মিশু বলল,বৃস্টি পড়ে টাপুরটুপুর…
বদনা হাতে আব্দুল গফুর….
আকাবাকা মেঠোপথে কাজি মর্ম’র বাড়ি যায়….
মর্ম কিছুক্ষণ হেসে হাসি থামিয়ে বলল,মিশু ওরফে সিরিয়াস কাঞ্চন, তুমি সত্যিই জোকারি ভালো পারো।ট্রেন আর বাসে কিংবা ঢাকা শহরে জোকারগিরি শুরু করে দাও।ভালো ইনকাম হবে।সবার কাছে দুই টাকা করে নিবা।
– ছিঃ এত বড় কথা বলতে পারলা? আমি তোমায় ভালবাসি বলেই তোমার কাছে দুই টাকা করে নিলাম। আমি বুড়ি হলে নাতি নাতনী দের দেখাবো এই দশ টাকা টা। বলবো এটা আমার “অতিথি ” দিয়েছে।আর তুমি আমায় জোকারি করতে বললা?

মিশু মুখ কালো করে বাইরে তাকালো।
মর্ম নিজের কান ধরে বলল,সরি।মজা করে বলেছি।প্লিজ রাগ করেনা সোনামনি,মিশু মনি,হিসু মনি,প্লিজ।
মিশু তবুও মুখ কালো করে বসে আছে।
মর্ম বলল,আমার অতিথি প্লিজ রাগ করেনা।সিরিয়াস কাঞ্চন, প্লিজ রাগ করেনা।এই টিসু,
মিশু কিছুতেই হাসছে না।
মর্ম বলল,আমার গুল্লুগুল্লু,চুন্নুমুন্নু,টুনি পাখি টা।
এইবার মিশুর হাসি পেল।
মিশুকে হাসতে দেখে মর্ম বলল,আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না।এই যে কান ধরছি।
– আচ্ছা এবার গাড়ি স্টার্ট দাও।এভাবে গাড়ি চালালে আজ আর নুহাশ পল্লী যাওয়া হবে না।
মর্ম গাড়ি ছেড়ে দিলো।
.
দুজনের মনটা ভীষণ ভালো। মর্ম মনে মনে বলছে,মিশু পাগলী টা যেন আজীবন এমন পাগলী ই থাকে।
দেখতে দেখতে ওরা নুহাশ পল্লী তে পৌছে গেল।
.
গাড়ি থেকে নেমেই মিশু দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। মর্মকে রেখেই ছুটছে এদিক থেকে ওদিক।মর্ম মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই চঞ্চল মেয়েটাকে!

মিশু মর্ম’র কাছে এসে বলল,এই বাড়িতে নয় নম্বর বিপদ সংকেত ছবির শুটিং হয়েছে।তাই না?
– জানিনা।এই নামে ছবি আছে তাই জানতাম না।
– জানবাই না তো।ভালো জিনিসে তোমাদের নজর পড়ে না।
মর্ম কিছু বলল না।মিশুর পাশে হাটতে লাগল।
মিশু বলল, এখান থেকে বেড়িয়ে ভাওয়াল,সাফারি পার্ক,আর বলিয়াদি জমিদারবাড়ি যাবো কিন্তু।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,এতকিছু চেনো কিভাবে?
– মিশুকে কি ভাবো বলোতো তুমি? আমি চিনবো না? কি ভাবো আমাকে?
– আমার পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড।

মিশু ক্ষেপে গেল।মর্ম হাসতে লাগল।
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here