লীলাবালি🌺 #পর্ব_৭৩,৭৪

0
420

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৩,৭৪
আফনান লারা
৭৩

ডাক্তারের কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগা নিয়ে বসে আছে সবাই।তার মতে চিকিৎসাতে কোনো ভাল লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা।বাসায় রাখলে যেটা হতো এখনও তাই।
এর চেয়ে বাসায় থাকা ভাল মনে করে অর্ণব ওকে বাসায় নিয়ে এসেছে।তার বাবা মা আর কুসুমের বাবা মা রওনা হয়েছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।এতক্ষণ বাসায় মৃদুলের গোটা পরিবার থাকলেও এখন কেউ নেই।দুজন একা।
কুসুম হাতে পোড়া রুটি নিয়ে দেখছিল,অর্ণব বানিয়েছে।ও বাহিরের খাবার আনতে বলেছিল কিন্তু কুসুমই মানা করেছে।এদিকে মৃদুলেরা যে খাবার পাঠিয়েছে তা কুসুম খাবেনা।খাসির মাংস আর চালের গুড়া দিয়ে রুটি।এগুলো কুসুম খায়না।
অর্ণব তাই কাঁচা হাতে গমের আটার রুটি বানিয়েছিল।তাও পুড়িয়ে।
তারপরেও কুসুুম হাসি মুখে রুটিটা হাতে নিছে খাবে বলে।অথচ রুটির চেহারা দেখে তার খেতে মন চাইছেনা।কিন্তু অর্ণবের ঘাম ঝরা মুখ দেখে এক টুকরো রুটি মুখে তুললো সে।অর্ণব ওর থেকে কেড়ে নিতে চাইলো রুটিটা কিন্তু সে দিলো না।সে খাবেই।
কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে ওর চোখ গেলো কুসুমের জট বাঁধা চুলের দিকে।কাঁপা হাতে চিরুনিটা নিয়ে বসে গেলো ওর ঠিক পেছনে।ধীরে ধীরে মাথায় চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে জট খুলছিল সে।যেন আঁচড়ে ওর মাথা খালি করা হচ্ছে।
মোটা করে চুল ছুটে আসে সব।এসব দেখে অর্ণব হাত থেকে চিরুনি ফেলে দিলো।কুসুম রুটি চিবোতে চিবোতে বললো,’মেহমান আসবে বাসায় তাই চিরুনি পড়ে গেছে’

অর্ণব উত্তর দিল না।আবারও চিরুনিটা তুলে আঁচড়াচ্ছে।এত সুন্দর চুল কগুলোকে ঝরে পড়তে দেখে মোটেও ভাল লাগছেনা তার।কুসুম রুটি রেখে কাছ থেকে বইখাতা গুলোকে টেনে এনে পাতা উল্টাচ্ছে।অর্ণব আস্তে আস্তে সব জট খুলে সুন্দর করে বেনি করে দিছে ওর চুলে।তার কাজ শেষ হতেই কুসুম ওর দিকে ফিরে বসে বললো,’আমাকে একটু পড়াবেন?আমাকে চিঠি লেখা শিখিয়ে দেবেন?খুব দরকার’

অর্ণব এখন আর ওর কোনোকিছুতে না বলার সাহস পায়না।কুসুমের এই আবদারটাও সে ফেললোনা।বই হাতে নিয়ে ওকে পড়াতে চাইলো অথচ তার পড়ানো হচ্ছেনা।মন খারাপ নিয়ে কাউকে পড়ানো গেলেও বোঝানো সম্ভব নাহ।কুসুমকে সে বোঝাতে পারছেনা কিছু তার পরেও কুসুম মনযোগ সহকারে ওর পড়াগুলো রপ্ত করছে।যেন মুখস্ত গণিতের মতন।
অর্ণব আধ ঘন্টার মতন পড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।কুসুম নিজে নিজে লেখার চেষ্টা করছে এবার।

মমর আজকে এঙ্গেজমেন্ট হবার কথা ছিল,কিন্তু কুসুমের শরীর খারাপ নিয়ে পুরো বাড়িতে অসুখের ছায়া পড়ায় তারা কোনো অনুষ্ঠানে জড়াতে চাইলেননা,মানাও করলেননা।বললেন এক সপ্তাহ কেটে যাক,সবাই আয়োজন করুক।
গুছিয়ে নিক তারপর নাহয় হবে।তাড়াহুড়োর কিছু নেই।জিসানের পরিবারও মেনে নিলো।
অর্ণব বারান্দার ফ্লোরে বসে জবা গাছটা দেখছে।চোখ গাছটার দিকে রইলেও তার মন রয়ে গেছে রুমটার দিকে,কুসুমের ওপর।
কি করলে তাকে আগের জীবন দেওয়া যেতে পারে তার কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া না গেলেও সে সারাটাক্ষণ ভাবে কি করে আশ্চর্য ঘটনা ঘটানো যায়।যেটা কেউ ভাবতে পারবেনা সেটা।
অর্ণবের বাবা মা আর কুসুমের বাবা মা তখন মৃদুলদের বাসার সামনে গেট দিয়ে ঢুকছিলেন।তারা সবাই ওকে দেখেছেন বারান্দায় বসা অবস্থায়।তার ফ্যাকাসে মুখ দেখে সবার মনে ভয় জাগলো কুসুমকে নিয়ে।দেরি না করে পা চালিয়ে দ্রুত হেঁটে তারা দোতলায় চলে আসলো।কলিংবেলে চাপ দেওয়ার পর সেই আওয়াজ অর্ণব না শুনলেও কুসুম শুনেছে। সে ধীর পায়ে এসে দরজা খুলে দিলো।
ওর মা ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন।কান্নার ঢল লেগে গেলো সম্পূর্ন দোতলা জুড়ে।অর্ণব এখনও মনমরা হয়ে বসে আছে আগের জায়গায়।জাহান এত কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে অর্ধেক সিঁড়ি পর্যন্ত উঠে এসেছে দেখবে বলে।
মানুষের কান্নার আওয়াজে এক রকম বস্তু আছে যেটা কিনা চারপাশটাকে স্তব্দ করে ফেলতে পারে।চারপাশের মানুষের হাসি কেড়ে নিতে পারে।কারোর ডুকরে কান্না দেখে আপনি কখনওই হাসতে পারবেননা।জোর করে হাসলে সেটা অন্য কথা।কিন্তু মন থেকে হাসি আপনার আসবেনা।কারণ আপনি মানুষ,সেও মানুষ।
মানুষের কান্নায় আপনি হাসতে পারবেননা।সবসময় হাসিখুশি থাকা জাহান মেয়েটার বয়স পনেরো বছর।তার বাবা মা আছে তবে অনেকদূরে থাকে।ঈদের সময় সে তাদের দেখতে যায়।
কাজল দেওয়া খুব পছন্দ তার।এই কাজলই তার মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখে সবসময়।কিন্তু আজ সকাল থেকে তার একবারও কাজল দেওয়া হয়নি।যার কারণে কান্নার দৃশ্য দেখে দেখে ওর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেছে।উপরের সিঁড়িতে আর গেলোনা।বরং পিছিয়ে গেলো।চুলায় ডাল বসিয়েছে।ওটা ফুলে ফেঁপে পড়ে গেলে বসে বসে চুলা মাজতে হবে।ঝামেলা হবে ভেবে দেরি না করে সে চলে গেলো।

খাবার নিয়ে আর ভাবতে হচ্ছেনা অর্ণবকে।রান্নাঘরটাকে ব্যস্ত করে তুলেছেন দুজন মা মিলে।
অর্ণব কারোর সাথেই কথা বলছেনা।এমন কি কুসুমের সাথেওনা।ওর একটা অসুখ পুরো বদলে দিলো তার ব্যবহারের আকার আকৃতি।
এরকম নিশ্চুপ সে কখনওই ছিলনা।কুসুম একবার রান্নাঘরে তো একবার বাবার কোলে নয়ত কলির সাথে হাসির গল্প জুড়িয়ে নিলেও শেষটাতে অর্ণবের সাথে দু দণ্ড কথা বলার কমতি অনুভব করে।কয়েকবার পেছন থেকে দেখেও এসেছে। তার খুব করে ইচ্ছে হয় ওর সামনে থাকতে কিন্তু যেহেতু ওর এই ইচ্ছেটা নেই তাই সে আর বিরক্ত করেনা।দূর থেকেই দেখে।
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসে ওকেও ডেকেছিল।সাড়া না পেয়ে মা কুসুমের হাতে প্লেট দিয়ে বললেন ওর কাছে যেতে।
মা বললে সে নানান বাহানা দিয়ে খাবারটা আর খাবেনা। তাই কুসুম মায়ের কথামতন প্লেট নিয়ে ওর কাছে এসেছে।নিরামিষ তরকারি,ডাল আর বড় মাছের ঝোল।সব একসাথে সাজানো প্লেটতাতে।সুগন্ধ ছড়িয়ে গেছে গোটা বারান্দায়।কুসুম ওর পাশে নিচে বসে ঘ্রান নিয়ে বললো,’এই ঝোলটা আমার মা করেছে,কারণ গোটা গোল মরিচ দেয়া।মা ঝোল করলে গোটা গোলমরিচ দেয়।
আর নিরামিষটা মনে হয় আপনার মা করেছেন,সেটা বোঝারও উপায় আছে।তা হলো হলুদ দেননি।তিনি নিরামিষ তরকারিতে হলুদ দেননা জানি।’

এরপর নিরামিষ তরকারিতে বেগুনের টুকরোর সাইজ দেখে কুুসুম হেসে ফেললো।এই তরকারিটা নিশ্চয় কলি কেটেছে।ও এমন ত্যাড়াব্যাঁকা করে সবজি কাটে।অর্ণব ওর দিকে ফিরে বললো,’আমি খাইয়ে দেবো?’

‘এটা আপনার জন্য এনেছি’

‘আমার তো খিধে নেই’

‘আপনার চোখের নিচের কালি দাগ তুলে আমি কাজল লাগাতে পারবো।ভাবুন আপনার কি হাল হয়েছে না খেয়ে,না ঘুমিয়ে।আমি খাইয়ে দিই আপনাকে?’

‘লাগবেনা।দাও আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি’

‘কাতল মাছ পছন্দ নাহ আমার।এই সাজানো প্লেট আপনার জন্য আনা।আমি খাইয়ে দিই?’

অর্ণব আর কিছু বললোনা।কুসুম নিরবতাকে সাঁই মনে করে লোকমা সাজিয়ে ওর মুখের সামনে ধরেছে।
——
ডিভানে চিৎ হয়ে শুয়ে হাতে ম্যাগাজিন নিয়ে সেটার কাহিনীতে ডুবে ছিল জুথি।নানু ওর মাথায় কিসের যেন ক্যামিকেল লাগিয়ে দিয়েছেন।এটা দিলে নাকি চুল সিল্কি থাকে।
আর মা রান্নাঘরে।
ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে জুথি বললো,”মা জানো,মোরকো আমায় প্রোপোজ করলো’

‘তাই নাকি!তা আমার মেয়ে কি বলেছে?’

‘দেশে একটাকে রেখে এসেছি।মোরকোকে মেনে নিলে সেই পাগল এবার পাগল হওয়াতে শ্রেষ্ঠ পাগল হবার এওয়ার্ড জিতে নেবে’

‘তাহলে কি করবেন আপনি ম্যাডাম?’

‘কাউকেই মেনে নিচ্ছিনা আপাতত। আমি নিজেকে নিয়ে ভাল থাকতে চাই।নিজে ভাল থাকলে আরেকজনকে ভালবাসতে পারবো অনায়াসে।তাছাড়া নিজের দেশের ছেলে বেশি ভাল হবে আমার জন্য।’

‘তোর তো নিজের বলতে দেশ আবার দুটো।মায়ের পক্ষের আর বাবার পক্ষের।
কোনটার ছেলে বেছে নিবি?’

জুথি ম্যগাাজিন রেখে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,’মৃদুল ভাইয়াকে পাগল হওয়ার এওয়ার্ড জিততে দেবোনা’
—-
“লিখ…মৃদুল ভাইয়া।আমার রক্তের সম্পর্কের ভাই।কলিজার টুকরা,জানের জান!এই মানুষটাকে নিয়ে যত বেশি বলা হবে ততই কম মনে হবে।মানে এটা কি!!এত ভাল মানুষ হয়!
যার কপালে জুটবে সে জিতবে।’

মম কপাল কুঁচকে বললো,’আমি তোর এত কমপ্লিমেন্ট দিতাম?এর বদলে কি দিবি আমায়?’

‘পোস্ট দে।তারপর বলছি’

‘আগে ডিল’

‘একটা প্যাকেজ দেখেছিলাম।লাল শাড়ী,লাল চুড়ি,লাল টিপ,লাল কানের দুল।ঐ সেটটা তোর নামে অর্ডার করে দিব।এবার পোস্ট দে’

‘ মৃন্ময়ীকে ট্যাগ দেবো?’

“তুই কি ছ্যাসড়া?ও কি ভাববে!’

‘এই যে আমাকে দিয়ে পোস্ট দেওয়াচ্ছিস এটা তো ছ্যাসড়ামি আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স হলো তাহলে’

‘চুপ থাক।একদম জিসানকে বলে দেবো তুই ১০বছর বয়স পর্যন্ত রাতে ডায়পার পরতি’

‘ভাইয়া তুই একটা!!’

মৃদুল দাঁত কেলিয়ে ছুটলো বাহিরের দিকে।
—-
‘আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?’

“রাগ হবার তো কিছু নেই’

‘তবে দূরত্ব বজায় রাখার কারণ কি?আগে তো এমন ছিলেননা।আমি কি কোনো ভুল করেছি?’

‘তোমায় বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।চেয়েও সঠিক সংজ্ঞায় বোঝাতে পারবোনা বলে বোঝাতে আসিনা।জানি তুমি ভুলটাই বুঝবে।তবে আমি তোমার দোষে দূরে থাকছিনা।আমার নিজের দোষে থাকছি”

‘আপনার কি দোষ?’

‘আমার দোষ হলো, আমি তোমার অসুখের ব্যাপারটা নিতে পারছিনা।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,স্বাভাবিক হতে পারছিনা।’

চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৪
আফনান লারা
.
অর্ণবের ইচ্ছের বিরোধিতা কুসুম কখনওই করেনি।আজও করলোনা। ওর কথামতন ওকে একা থাকতে দিয়েছে।উঠে চলে গেছে কলির কাছে
সে ওখানে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বাদাম ভাজা খাচ্ছিল,মা আসার সময় এক ব্যাগ ভর্তি করে বাদাম নিয়ে এসেছেন।ওগুলো ভেজেছেন অর্ণবের জন্য।তার নাকি ভাজা বাদাম বীট লবণের সাথে খাওয়া খুব পছন্দের।
অর্ণব তার রুমে ঘুমাতে গেছে।দুটো দিন ধরে তার চোখ থেকে ঘুমই উঠে, চলে গিয়েছিল বহুদূর।এখন বাড়ির সবাইকে একসাথে দেখে মনে একটু সাহস লাগছে,চোখ বন্ধ হয়ে আসছে রাজ্যের ঘুমে।কুসুমও কলির সাথে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বাদাম খাচ্ছিল আর মুখস্থ বলছিল স্বরবর্ণ।
অর্ণব শুতে এসে ওর পড়া শুনছিল।অল্প কদিনের পড়াতে ঠিকঠাক বলতে পারছে দেখে তার বেশ ভাল লাগলো।কুসুম যদি সঠিক সময়ে পড়াশুনা করত তবে এতদিনে তার অনেক সুনাম অর্জিত করা হয়ে যেতো।বড় অফিসার হতে পারতো সে।নাহলে এত অল্প সময়ে কেউ বর্ণ শিখে ফেলতে পারে?যে আগে এই বর্ণের সাথে পরিচিত ছিলই না।
জানিনা হাতে কত সময় আছে।তবে ওকে আমি সব শেখাবো।তারপর বুলি শুনে প্রাণ জুড়াবো আমার।’

‘বুবু,আমার মনে হয় দুলাভাই এসেছে।মায়ে বলেছে দুলাভাই থাকলে যেন তোমার সাথে না থাকি আমি, আসি বুবু’

কুসুমের উত্তরের আশা না করেই কলি ছুটে চলে গেছে বারান্দা থেকে বেরিয়ে রুম পেরিয়ে সোজা মায়ের কাছে।অর্ণব এসেছে শুনে কুসুম বারান্দার দরজায় হাত রেখে মাথা বাঁকিয়ে ওকে দেখছিল আনমনে।অর্ণবের চোখ বন্ধ করা।
কুসুম ওখানে দাঁড়িয়ে আছে তা কেমন করে যেন সে বুঝে গেলো।চোখদুটি বন্ধ রেখেই বললো,’তোমার ঘুমাতে ইচ্ছা করেনা?’

কুসুম জবাবে বললো,’নাহ।সারাক্ষণ যে শুয়ে থাকে তার চোখে ঘুমের ঠাঁই মেলে না’

‘তবে কি চাও করতে?’

‘কিছুইনা।আপনি ঘুমান,আমি দেখি’

অর্ণব আর কিছু বলেনি।ক্লান্তির শরীর নিয়ে গভীর ঘুমে চলে গেছে সে।কুসুম বেশ কিছুক্ষণ ওকে দেখে তারপর চলে গেছে মায়ের কাছে।মা বাবা ওর অসুখ নিয়ে কথা বলছিলেন।মাকে কাঁদতে দেখে রুমের ভেতর পা রাখেনি সে।
দূর থেকে তার কান্না দেখে নিলো।এরপর গিয়েছিল অর্ণবের বাবা মায়ের রুমে।তাদের রুমের চিত্র ছিল একটু ভিন্নতর। তারা আলাপ করছিলেন বিদেশী চিকিৎসার খরচের টাকা কি করে প্রস্তুত করবেন সেটা নিয়ে।জমি নাকি একটাতে হবেনা, দুটো বিক্রি করতে হবে।
মন খারাপ করে চলে এসেছে কুসুম ওখান থেকে।তার কারণে এতগুলো টাকার জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে।

রাতে বাবা অর্ণবকে ডেকে বললেন কুসুমকে নিয়ে বাহিরে থেকে ঘুরে আসতে,হয়ত ওর মনটা একটু হলেও ভাল হয়ে যেতে পারে।বাবার কথা মতন অর্ণব ওকে নিয়ে বেরিয়েছে ঠিক, তবে কোথায় যাবে তা দুজনের একজনেও ঠিক করে রাখেনি।
শেষে কুসুম বললো সেই দিঘির কাছে গিয়ে বসবে।অর্ণব তাই করলো। ওকে দিঘির ঘাটে নিয়ে গেলো।সেখানে দুজন বসে আছে।
রাতের অন্ধকারকে চাঁদের আলো ধমকায়।
ছড়িয়ে দেয় তার যত আলো আছে সবটা।ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে গাছের পাতা ভেদ করে নামে তোহ!তাই ওমন ছড়ানো মনে হয়।চাঁদ কিন্তু মোটেও স্বার্থপর না।
সে ঠিকঠাক ভাবেই আলো পাঠায়।তার আলোর ঘনত্ব জানতে আপনাকে খোলা মাঠের মাঝে দাঁড়াতে হবে বুঝলেন!

চাঁদের দিকে চেয়ে থেকে কুসুম বললো,’জানেন আমার মতে চাঁদে পাহাড় আছে।যেগুলো দূর থেকে দেখে দাগের মতন লাগে’

‘হুম আছেই তো’

‘চাঁদের পাহাড়গুলো কি সবুজ?’

‘জানিনা’

‘জানেন, আমি চাঁদ বানান পারি।চ আকার চা,উপরে চন্দ্রবিন্দু ঁ তারপর র’

‘কে শিখিয়েছে এটা?’

‘কলি’

‘কলির কাছেই তো এতদিনে সব শিখে নিতে পারতে।তাহলে শিখোনি কেন?’

‘আপনার মতন করে সে বোঝাতে পারেনা।আপনার বোঝানোই আমি লেখাপড়া শিখে যাব আগামী কয়েকটা দিনেই।মিলিয়ে নিয়েন’

‘কি খাবে বলো’

অর্ণবের কথা শুনে কুসুম আঁচলে গিট্টু দেওয়া কাগজের খোসা বের করলো।তাতে এক মুঠ বাদাম।ওগুলো নিয়ে ওকে দেখিয়ে খেতে বললো।
সে তো লবণ ছাড়া খাবেনা।তাই কুসুম নিজেই খাচ্ছে। একটা সময়ে অর্ণব ওর খাওয়া দেখে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে লবণ ছাড়াই বাদাম খাওয়া শুরু করেছে।কিন্তু স্বাদ না পেয়ে কুসুমকেই বাদাম ছিলে দেওয়ার দায়িত্বটা নিলো।

‘তোর বাবাকে খুব মিস করছি,ভাবছি দেশে যাব সামনে।তোর কি মত?’

জুথি ফোন চার্জে দিতে দিতে বললো,’তো যাও।ফরহাদ তোমায় অনেক মিস করে।গেলে ভালই হবে’

‘মানেহ?তুই যাবিনা?’

‘আমি কেন যাব?আমি তো সবে আসলাম।’

‘তোকে ছাড়া গেলে পরিবার তো সম্পূর্ণ হবেনা’

‘বিদেশী বউ,দেশী জামাইর পরিবার এত সম্পূর্ন হওয়া লাগেনা।যাও তুমি,চিল করো।আমাকে টানিওনা।আমি প্যারা নিয়ে এসেছি।প্যারাটা গেলে নিজেই যাব ঘুরতে’
—-
‘আমার রক্তে তোমার সোহাগ
হৃদয় আমার ছেদা
গোলাপ গুলো নেতিয়ে গেছে
তাই এনেছি গাঁদা

এটা বলে প্রপোজ করে ফেল ভাই!ট্রেন্ডিং ডায়ালগ’

মমর কথা শুনে ওর গালে হালকার উপর ঝাপসা চড় একটা মেরে মৃদুল সোফায় বসে পড়েছে।পা দুলাতে দুলাতে বললো,’জুথির হাতে চড় খাওয়াতে চাস আমায়?’

‘আরেহহ আনকমন একটা ডায়ালগ!’

সুলতান শাহ লাঠি হাতে দন্ডায়মান হলেন তখন।মমর দিকে চেয়ে বললেন,’কারে প্রস্তাব দিতে বলিস?এই গরুটা আবার কোন মেয়েকে পছন্দ করেছে?’

‘বাবা জানো!!”

‘চুপ!না বাবা, ও মজা করছে।আমি ক্যান কাউকে প্রস্তাব দিতে যাব?’

‘ঠিক!তুই কেন প্রস্তাব দিতে যাবি।জনমে যে ধরা খেয়েছিলি একদা প্রেম করে। হাহাহা!!! ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম… দেয়ার ওয়াজ অ্যা গরু,এন্ড ঐ গরু এখনও গরু আছে।।হাহাহাহা’

মৃদুল রাগে কটমট করতে করতে রুমের দিকে চলে গেছে।মম খিলখিল করে হাসছে বাবার কথা শুনে।

শুধু বাদাম খাইয়ে কুসুমকে বাসায় নিয়ে গেলে বাবা খুব বকবে।তাই অর্ণব ওকে ঝালমুড়িও কিনে দিলো।
আজ হাঁটবার সময় অর্ণব একবার হাত ধরেছিল কুসুমের।কুসুম প্রথমে খেয়াল করেনি।ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে হাঁটছিল।যখন খেয়াল করলো তখন হাঁটা বন্ধ করে দিয়ে বোকার মতন দু মিনিট তাকিয়ে ছিল।অর্ণব ওর চাহনি দেখে চমকায়নি।বরং হাঁটা চালু রাখায় কুসুম ও হেঁটে চললো ওর সাথে সাথে।

‘জানো?? না খেয়ে তোমার হাত অনেক চিকন হয়ে গেছে।আগে আরও মোটা ছিলে’

‘আপনি জানলেন কি করে?আগে ধরে ছিলেন বুঝি?’

‘হ্যাঁ,রাতে যখন ঘুমোতে তখন….’

অর্ণব চোখ বন্ধ করে জিভে কামড় দিয়ে ফেললো।কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’আচ্ছা তাই?রাতে আমি ঘুমোলে আমার হাত ধরতেন?আর কি করতেন?প্রতিদিন সকালে উঠে আঁচল দিয়ে আমার পেট ঢাকা দেখি।তাহলে কি রাতে আপনি আমার পেট ঢেকে দিতেন আঁচল দিয়ে?ঐ কাজটা আপনার তাহলে?’

‘একদম না।মিথ্যে কথা এটা’

‘তাহলে তো প্রমাণ হলো, রাতে ঘটা সব কিছুতে আপনার হাত আছে।’

‘আমি শুধু হাত ধরতাম আর পেট ঢেকে দিতাম আঁচল দিয়ে কারণ ঐ দৃশ্য আমার ভাল্লাগেনা,ঘুম আসতে দেয়না।এর বাহিরে কিছু করিনা আমি।বিশ্বাস করো’

‘হুমম আর কিছু করেননা সেটা জানি।মুখ থেকে কথা বের করতে বললাম এতকিছু।’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here