রোদ্দুরের_বৃষ্টি #পর্ব_৫

0
397

#রোদ্দুরের_বৃষ্টি
#পর্ব_৫

মেয়েটাকে এভাবে জোর করে গাড়িতে তোলা কি ঠিক হলো? জোর করে উপকার হয় কখনো?
শোয়েব কণ্ঠস্বর কোমল করার চেষ্টা করলো।
-আপু আপনি কোথায় যাবেন? আসলে আমার মেজা… ও মাই গড! হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
মাথাটা এমন এলিয়ে পড়েছে কেন? ঘুমিয়ে পড়েনি নিশ্চয় এক মিনিটেই! শোয়েব গাড়ি সাইড করলো…

নাসিমা মেয়ের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে আছেন। এতক্ষণ লাগে বাজার করতে? বৃষ্টি তো কি হয়েছে? এরকম বৃষ্টিতে তো রিমি কতই ভিজে ফিরেছে! সিমি বিরক্ত ভাবে এসে বললো,
-মা রিমির অপেক্ষা বাদ দাও! সরিষার তেল দিয়ে রেঁধে ফেলো তো, আমার খালি পেটে থাকা একদম নিষেধ।

রাগে দুঃখে নাসিমার মুখ তেতো হয়ে আসছে। সারাক্ষণ খাই, খাই। খেঁদো ভুত একটা।
-তা রাঁধবো কি? শুধু ভাত হবে।
-ডিমভাজা করে ফেলো না মা। ডিম আছে দেখলাম ঘরে…

নাসিমা নিতান্ত অনিচ্ছা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলেন। জানালাটা একটু ফাঁক করে দেখলেন, বাপরে বাপ! বৃষ্টি থামবার কোনো নামই নেই! এখন আবার শুরু হয়েছে বাতাস। ঝরের লক্ষণ পুরোই। নাসিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যার পুরো জীবনই ঝড়ের, তার ঝড়ে কি ভয়! আসুক ঝড়! শুধু রিমি ফিরে আসুক তার আগে….

শোয়েব কি করতে পারে এখন? লোকজন ডাকবে? হাসপাতালে নিয়ে যাবে বা আশেপাশে কোথাও? নাকি বাসায়? শোয়েব ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে চিন্তিতভাবে মনসুরের নাম্বার ডায়াল করলো। ডাক্তার ছেলে নিশ্চয় কিছু বলতে পারবে! প্রথমবারের রিং মনসুর রিসিভ করলো না।দ্বিতীবারে ধরলো,
-হ্যালো মনসুর….
-হ্যালো, শোয়েব… একটু পরে ফোন করনা দোস্ত… আমি ক্লিনিকে এখনো… ভীষণ বিজি।
-দোস্ত রাখিস না। শোন, যাস্ট দু-মিনিট! মহাবিপদে পড়ে গেছি। মেয়েটা ফেইন্ট হয়ে গেছে…
মনসুর একটু চুপ করে থাকলো। তার বড় আজব লাগছে.. শোয়েব আর মেয়ে? মানে কি?
-কোন মেয়েটা?
-আরে একটা মেয়ে… গাড়িতে তোলে বসালাম, এখন বেহুঁশ। মুখে পানি ছিটালাম, কাজ হলো না। শরীরও কাঁপছে….
-ইয়ার্কি করার আর জায়গা পাসনা, গাড়িতে তুললি আর অমনি বেহুঁশ হয়ে গেল? কোন মেয়ে? আর বলতো, তুই হঠাৎ মেয়ে গাড়িতে তুলতে গেলি কেন?
-তুই ক্লিনিকেই তো! আমি আসছি।
শোয়েব আর কথা বাড়ালো না, ফোন রেখে দিলো। ভিজে গায়ে মেয়েটা, আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, কি জানি কি হয়? শোয়েব খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে। এক্ষুণি ক্লিনিক পৌঁছুতে হবে তাকে, এক্ষুণি। তার আগে শুকনো কাপড় দরকার মেয়েটার জন্য। কিনতে হবে… গাড়ির স্পিডটা আরো বাড়িয়ে দিলো সে…

মনসুরের সব আজব লাগছে। শোয়েব, মেয়ে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। শোয়েব তো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অত্যন্ত গুড বয়, তাহলে?

সিমি ভাত খেতে বসেই বললো,
-মা, ডিমে লবণ দাওনি কেন? কি বিষাদ লাগছে! ছি। একটা ডিমভাজিও ঠিকঠাক করতে পারোনা…
নাসিমার মাথাব্যথা করছে। ঘরে ঔষধও নেই। রাত আটটা বেজে গেছে, রিমি এখনো ফেরেনি। বৃষ্টিও তো একটু ধরে এসেছে। তাহলে? মেয়েটার কি কোনো বিপদ হলো? মোবাইলটাও সাথে নেয়নি। নাসিমা কি খুঁজতে বের হবেন? কোথায় খুঁজবেন?
সিমি খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুতে শুতে বললো,
-মা রিমিটার কান্ডজ্ঞান দেখেছো? এখনো ফেরেনি? ভালো মেয়েরা কি এত রাত অবধি বাইরে থাকে বলো?
নাসিমা জবাব দিলেন না।
-একটু সংসার চালায় বলে কত সাহস হয়েছে দেখেছো? রাত-বিরেতে ঘুরাফেরা… মা আজ আসলে কিন্তু…
নাসিমা অস্পষ্ট স্বরে বললেন,
-ফেরার দরকার কি? এই বাড়িতে ফিরে তার লাভ কি? দুটো হাতি এই বাচ্চা মেয়েটার উপর… ঘরে আসলেই শুনতে হয়, এটা নেই, সেটা নেই.. আমরা তো আছি শুধু বসে বসে গিলতে। ভালো হয়েছে আর না ফিরুক…
সিমি নাসিমার কথা শুনেই রেগে গেল।
-মা কথাগুলো তুমি আমায় বলছো তো? ঠিক আছে বাবুকে হতে দাও, মরে যাবো তো বললাম। দুটো ভাত খাই বলে এত কথা শোনাচ্ছ তো? পেটে বাচ্চা নিয়ে তো কেউ কাজ দেয় না মা… গার্মেন্টসে আমি ঠিক চাকরি করবো, দেখো…
-এই তো বললি মরে যাবি, এখন আবার গার্মেন্টসে চাকরি করবি বলছিস! তোর তো কথার ঠিক নেই দেখছি।
সিমির রাগ এবার কান্নার বিলাপে পরিণত হলো।
-তোমরা তো সবাই চাওই আমি মরে যাই। পেটে বাচ্চা বলে পড়ে আছি এখানে… না হলে তো আমার…
নাসিমা বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে গেলেন। তার কিছুই ভালো লাগছে না। সাড়ে নটা বেজে গেছে! বাইরে আবার বিদ্যুত চমকাচ্ছে; অন্ধকার আকাশ। আবারো বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। নাসিমার বুকের ভেতরটা চিৎকার করতে চাইছে। এশার নামায পড়া হয়নি। ওযু করতে করতে নাসিমা বিড়বিড় করে বললেন,
-আল্লাহ গো, মেয়েটারে তুমি কোনো বিপদে ফেলো না।তোমার কাছে আমি খুব কম জিনিস চাই। যারে তুমি রিমির মত মেয়ে দিয়েছো, তার আর বেশি কি চাইবার আছে? আল্লাহ গো মেয়েটারে কোনো কষ্টে ফেলো না।
মেঘ ডাকছে এবার। নাসিমা দৌড়ে কলতলা থেকে ঘরে গেলেন। নামাযে বসে নাসিমা নামায পড়তে পারলেন না, ক্রমাগত কেঁদে গেলেন। ও ঘরে সিমি বিলাপ করে চেঁচাচ্ছে। চেচাঁক…. নাসিমা গেলেন না জায়নামাজেই বসে রইলেন।

শোয়েব মনসুরের চেম্বারে বসে আছে। রিমিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শরীরের টেম্পারেচার অত্যন্ত কমে গিয়ে দাঁতে দাঁতে খিল ধরে গিয়েছিলো। সাডেন শকে প্রেশার ফল করে গেছে। তবে এখন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা একটু অবজার্ভেশনে রাখতে হবে। শরীর অত্যন্ত দুর্বল।
মনসুর পুরাই অবিশ্বাসী চোখে শোয়েবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো,
-তুই বলতে চাচ্ছিস তুই মেয়েটাকে কিছুই করিস নি! আজই প্রথম দেখলি?
শোয়েব রোবটের মত মাথা নাড়লো।
-আচ্ছা, তুই কি আমায় গাধা ভাবিস শোয়েব? একটা মেয়ে এমনি এমনি… আমার তো মনে হয়, প্রচুর ধ্বস্তা ধ্বস্তি করেছিস। ভিকটিমের পুরো গায়ে কাঁদা ময়লা ছিল….
শোয়েব চুপ করে থাকলো। গত এক ঘন্টা ধরে মনসুর তাকে এভাবে পুলিশের মত জেরা করছে।
-দেখ দোস্ত, তুই আমাকে সত্যিটা বল! পরে যদি মেয়েটা জেগে উঠে ভুয়া জবানবন্দি দেয়, থানা পুলিশ হতে পারে… দেখ তোরা দু-জনেই গা ভেজা ছিলি। তুই যেরকম সিলি গল্প বানিয়ে বলছিস….
শোয়েবের সব অসহ্য লাগছে। মনসুর শোয়েবের স্কুলের বন্ধু।ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত দুজন একসাথে ছিল। কত ঘনিষ্ঠ! তার নিজের এই আপন বন্ধু তাকে আজ এমন ভাবছে? পৃথিবীর এমন নিষ্ঠুরতার রূপ তাকে দেখতে হচ্ছে ঐ মেয়েটার জন্য! একবার সুস্থ হোক, তারপর থাপ্পড় মেরে মেয়েটাকে ঠিক করতে হবে। ফট করেই বেহুশ! দুনিয়াটা কি বেঁহুশখানা নাকি?
মনসুর চেয়ার ছেড়ে শোয়েবের কাছে উঠে এলো। শোয়েবের ডান হাতটা চেপে ধরে বললো,
-দেখ দোস্ত, তুই আমাকে পুরোটা খুলে বল কতটুকু কি হলো। আমি সব কাভার দিবো, ভয় পাসনা। এসব কেসে সাহসই সব, বুঝলি। প্রুফ ভ্যানিশ করা আমার বাঁ-হাতের খেলা। হয় হয় এরকম একটু আধটু ইচ্ছা আসলে… আচ্ছা, মেয়েটাওতো চরম দোস্ত! পেলি কিভাবে?
শোয়েবের ইচ্ছে করছে, মনসুরের গালে ঠাস করে একটা চড় মারে। শোয়েব পুরো ঘটনাটা এই কিছুসময়ে অন্তত চারবার মনসুরকে বলেছে।
পুরো সত্য ঘটনা মনসুরের কাছে আজগুবি লাগছে। মনসুর ঘটনাটা কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। শোয়েবও হাল ছেড়ে দিলো তাই। বিরস মুখ করে বললো,
-দোস্ত, এখানে আরো দু-সেট কাপড় আছে মেয়েটার জন্য। আমার কি এখানেই থাকতে হবে? আর কতক্ষণ?
-তুই তাহলে বলবি না? পরে থানা পুলিশ হলে কিন্তু… দ্যাখ দোস্ত, উকিল, মোক্তার আর ডাক্তার এদের কাছে কিছুই লুকাতে নেই বুঝলি!
শোয়েব হাই তুলতে তুলতে বললো,
-গাড়িতে তুলে মুখ চেপে ধরলাম, দরজা খুলে মারলো দৌড়। বৃষ্টিতে ভিজে দশ মিনিট দৌড়ে ধরে আনলাম আবার। এনেই টাইট করে হাত-পা বেঁধে যখনি…. তখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
মনসুরের হাত ধরে শোয়েব আরেকটু রহস্যময়ভাবে বললো,
-সুন্দরী মেয়ে। বৃষ্টিতে একা পেলাম, মন মানলো না। কিন্তু কিছুই করতে পারি নাইরে দোস্ত! এর আগেই…..
মনসুরের মুখে বিজয়ের হাসি।
-আমি জানতাম দোস্ত! বুঝলি, দিনে একশটা রোগী ডিল করি আর আমি বুঝবো না। তবে রাস্তা থেকে মেয়ে তোলাটা ঠিক হয়নি। রিস্কি হয়ে গেছে বেশি।
শোয়েব মাথা নেড়ে সায় দিলো। মনসুর কলম হাতে নিয়ে বিজ্ঞের মত নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,
-শোন, এসব ব্যাপারে লিংক দরকার বুঝলি। আমার একজন আছে খলিল ভাই, শাঁখারিপট্টিতে বাসা। ফোন করলেই ফ্রেশ কালেক্ট করে দেয়। স্কুলগার্ল থেকে হাউজওয়াইফ সব আছে…. তোর লাগবে আমি তো ধারণা করিইনি। এরপর থেকে আমাকে ফোন করবি। বুঝলি…
শোয়েব এবারও মাথা নাড়লো। পৃথিবী কত আজব। তার ব্রিলিয়ান্ট ডাক্তার বন্ধুর ভেতরে এমন একটা নর্দমা আছে কে জানতো? কই তাকে দেখে তো মনে হয়না ভেতরটা এতো কালো, এত কুৎসিত? সুন্দর সত্যটা বিশ্বাস করানো কত কঠিন আর নোংরা মিথ্যা মানুষ কত সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে। কি আশ্চর্য!
মনসুর সামনে রাখা ফাইলটা খুলে নিয়ে বললো,
-কি রে? কি এত চিন্তা করছিস বলতো? মেয়েটাকে যেহেতু কিছু করিসনি তাহলে চিন্তা নেই। তবে যাই বলিস না কেন মেয়েটা কিন্তু হেব্বী দেখতে। ফিগারে তো কোনো ফ্যাট নেই।এদের অ্যাপিল খুব…. আচ্ছা রেজিস্টারে মেয়েটার নাম কি লিখবো বলতো? ফেইক নাম হলে ভালো হয়।
শোয়েব এবার আগের চেয়েও বেশি রহস্যময় আর করুণভাবে বললো,
-মাথা গরম ছিল, বুঝলি দোস্ত। নামই জিজ্ঞেস করা হয়নি!
-তবে আমি এখন ফেইক নামে ওকে তোর কাজিন বলেই এন্ট্রি করিয়ে দিচ্ছি…
শোয়েব জবাব দিলো না। নিজের দিকে তাকালো, চেঞ্জ করতে হবে তার। ভিজে কাপড় গায়ের সব তাপমাত্রা টেনে শুকিয়ে যাচ্ছে প্রায়। তাছাড়া রাতে না ফেরার কথাটা
বাসায় একটা ফোন করে মাকে বলা দরকার। শোয়েব নিজের জন্য আনা কাপড়ের ব্যাগ আর মোবাইল হাতে নিতে নিতে বললো,
-আমায় চেইঞ্জ করতে হবে। ওয়াশরুমেও যাওয়া দরকার…
বলে চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলো।
চেঞ্জ করে ফোন সেরে আবার ভেতরে যেতেই শোয়েবের দিকে তাকিয়ে মনসুর প্রশান্তির হাসি হাসলো।
-নাইস শার্ট তো। তুই তো দেখি রোগীর টেনশান নিয়েও ভালো শপিং করে ফেললি!
-ঠান্ডা লেগে যাবে তাই আর কি…দোস্ত এক কাপ চা দিতে বলতো ঝটপট।
মনসুর শোয়েবের পিঠ চাপড়ে দিয়ে হেসে বললো
-চা আসছে, বলেছি। বাচ্চা একটা মেয়ে, ভয় পেয়ে গেছে তাই। তোর তো তাড়াহুড়ো বেশি, সব ঝটপট। ম্যাচিউরড ওমেন হলে ভালো হয়, তোকে সামলাতে পারবে ঠিকঠাক।আমি নেক্সট উইকেই একটা বুক করে দিবো।
শোয়েব ক্লান্তগলায় বললো,
-আমি মেয়েটাকে একটু দেখে আসি দোস্ত?
মনসুর টেবিল গুছাতে গুছাতে বললো,
-যা, বামে গিয়ে ৩০৭নাম্বার কেবিন। তবে খবরদার, নো হাংকি পাংকি। ক্লিনিকে আমার একটা ইমেজ আছে। আর আমি আধঘন্টার মধ্যেই বেরুবো…

কেবিনের ভেতরে ঢুকেই শোয়েবের ভেতর কেঁপে উঠলো।একটা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ আজ তার জন্য হাসপাতালে।কি অসুখে পরিবেশ! শোয়েব গাঢ় দৃষ্টিতে রিমির মুখের দিকে তাকালো। সুন্দর সাধারণ চেহারার মিষ্টি মুখ। অত ফর্সাও নয় আবার চাপাও নয়! যেন এক্যুরেট উজ্জ্বল! এর বেশি হলে বেমানান লাগতো খুব। খাড়া নাকের মাঝামাঝি ছোট্ট তিল। ঘন কালো পাপড়িচোখে ভ্রুদুটো এলোমেলো লেপ্টানো। ডানচোখের নিচেও আরেকটা তিল। সরু ঠোঁটের উপরের ভাগটা আহলাদী রকমের আদুরে। এজন্যই চেহারাটা আলাদা অন্যদের থেকে। থুতনিতে একটু গর্তমত। কপালের দু দিক থেকে চুলের শুরু। লম্বা বিণুনী খুলে চুলগুলো একপাশে সিথানে সাইড করা। বুদ্ধদেব বসুর নায়িকারা কি অত সুন্দরী ছিল? নিশ্চয় না। এই এত মিষ্টি মেয়েটার বুদ্ধি তো গাঁধার চাইতেও কম। আর সাহস তো বিড়ালের মত! শোয়েবের আবার রাগ লাগলো। ভীতুর ডিম ফাজিল মেয়ে। ফুঁডুরানোর ফুঁডুরানো একটা।
শোয়েব মনে মনে ভেবে ফেললো, মেয়েটাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করিয়ে নিয়েই প্রথম যে কাজটা করতে হবে
তা হলো একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ঠাটিয়ে কয়েকটা চড় মারা। প্রথম চড় বৃষ্টিতে বেরুনোর জন্য, ২য় চড় বাজার করার জন্য। এই মেয়ের বাজারে কি দরকার? এই মেয়ে ঝুম বৃষ্টির সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখবে, চুল খুলে নীল সাদা জামা পরে হাঁটবে আর মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে একটু বৃষ্টির পানি হাতে মুঠো করে নিয়ে গালে মাখাবে! ৩য় চড় শোয়েবের কথা না শোনার জন্য।
মনসুর উঁকি দিলো।
-কি বন্ধু ক্যাঙ্গারু? আটকে গেছ নাকি আবার?
শোয়েব সাইডের টুলটায় বসতে বসতে বললো,
-আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। মেয়েটা জাগলেই আমি কথা বলে নেবো সাথে সাথে। বুঝিসই তো, ঝামেলা করতে পারে। পরে দেখা যাবে তুইও ফেঁসে গেলি…..
মনসুর ভয় আর আশ্বাস দুটো মেশানো দৃষ্টিতে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
-আমি আপাতত গেলাম দোস্ত, দরকার হলে ফোন করিস। আমি চলে আসবো। হেড নার্সকে বলা আছে কাউকে রুমে এলাউ করবে না, আমি ছাড়া।

মনসুর চলে যেতেই শোয়েব রিমির বেডে আলতো হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। ঘুম পাচ্ছে তার। গাঢ় ঘুম।
(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here