রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-২৩

0
453

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-২৩

৪৩।
মিসেস ফাতেমা মেয়ের জোরাজুরিতে আরিয়া ফেরদৌসকে ফোন করে জানালেন, মাফিন আর স্বস্তিকার আক্দটা যেন এই সপ্তাহে হয়ে যায়। আরিয়া ফেরদৌস কথাটি শুনে খুশি হলেন। তিনি সূচনা ও মাহাথিকে বলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরী করতে বসে গেলেন।

এদিকে মাফিন বাসায় আসার পর যখন শুনলো তার আর স্বস্তিকার আক্দের কথাবার্তা চলছে, তখনই তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে চেঁচিয়ে বললো,
“আমি স্বস্তিকাকে বিয়ে করবো না।”

আরিয়া ফেরদৌস মাফিনের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। এবার মাহাথি বলে উঠল,
“মাফিন, কি বলছিস এসব? তোর আর স্বস্তিকার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপাকি হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজনরা এখন স্বস্তিকাকেই তোর বাগদত্তা হিসেবে চেনেন। দুই পক্ষের মধ্যে আত্মীয়তাও গভীর হয়েছে, আর এখন তুই বলছিস, স্বস্তিকাকে বিয়ে করবি না?”

মাফিন আরিয়া ফেরদৌসের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“মনে আছে, ভাইয়ার বিয়ের সময় তুমি স্বস্তিকাকে বিয়ে করার শর্ত দিয়েছিলে?”

মাফিনের কথা শুনে মাহাথি ও আরিয়ার পাশাপাশি সূচনাও চমকে উঠলো। আরিয়া ফেরদৌস মোটেও আশা করেন নি যে মাফিন এসব কথা সূচনার সামনে তুলবে।
এদিকে মাহাথিও একনজর সূচনার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মায়ের শর্তের কথা সে সূচনাকে জানায় নি। কারণ সূচনা এসব জানলে খুব কষ্ট পাবে।

মাফিন এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলল,
“মারিয়ার পড়াশোনা শেষ হবে, তারপরই আমি স্বস্তিকাকে বিয়ে করবো। এর মাঝে যদি তুমি আমার বোনকে বিয়ে দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করো, তাহলে স্বস্তিকাকেও আমি আর বিয়ে করবো না।”

কথাটি বলেই মাফিন নিজের ঘরে চলে এলো। এদিকে আরিয়া ফেরদৌস থমথমে মুখে নিজের ঘরে চলে এলেন। তিনি ইদানীং বুঝতে পারছেন যে, দিন দিন তার নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে তিনি সন্তানদের বড্ড অপছন্দের হয়ে উঠছেন। কিন্তু তবুও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারলেন না। আজ কেন যেন তার মন খুব কঠোর হয়ে পড়েছে। নিজের এই কঠোরতা তিনি নিজেও সহ্য করতে পারছেন না। তাই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। কিন্তু এই পরিবেশটি তিনি এমনই রাখতে চান। নিজের কষ্ট হোক, এতে তার কোনো আপত্তি নেই, তবুও তার মেয়ে ভালো থাকুক, তিনি এটাই চান।

অন্যদিকে সূচনা বিধ্বস্ত মুখে মাহাথির দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহাথি সূচনার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি এভাবে কি দেখছো?”

সূচনা মলিন মুখে বললো,
“মা, আমাকে মন থেকে মেনে নেন নি, তাই না?”

“কেন নেবে না? মা তোমাকে মন থেকেই মেনে নিয়েছে।”

“কিন্তু মাফিনের কথা শুনে তো আজ অন্য কিছু বুঝলাম।”

“কি বুঝেছো?”

সূচনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মা, কি ভেবেছিলো, আমি মাফিনের গলায় আমার বোনকে ঝুলিয়ে দেবো? বলো, মাহা?”

“না, সূচনা। এমন কিছুই না। তুমি কি যা তা ভাবছো।”

“তাহলে এমন শর্তের কারণ কি? এতো হুড়োহুড়ি করে মাফিনের বিয়ে কেন দিতে চাইছেন তিনি? ও তো মাত্র চাকরীতে জয়েন করেছে। ওর বিয়ের বয়স তো শেষ হয়ে যায় নি, তাহলে এতো তাড়াহুড়োর কি আছে? বলো?”

“কারণ মা চায় না, আমার মতো মাফিনও নিজের পছন্দে বিয়ে করুক। আর মায়েরও তো ইচ্ছে আছে, ছেলের জন্য নিজের পছন্দের বউ ঘরে আনবে।”

সূচনা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
“তাহলে কি আমি অপছন্দের? নিজের পছন্দ মানে কি, মাহা? যে বিয়ে করবে, তার কি মেয়েকে পছন্দ করার কোনো অধিকার নেই? মাফিন যেহেতু বিয়ে করবে, তাহলে অবশ্যই মাফিনের পছন্দের গুরুত্বটা আগে দিতে হবে। তারপর মায়ের পছন্দ। তুমি তো আমাকে পরিবারের অমতে বিয়ে করে ঘরে তুলো নি। তাহলে কেন আমি অপছন্দের আর স্বস্তিকা পছন্দের হবে?”

“কারণ তোমার আমার সম্পর্কটা প্রেমের ছিলো। আর মা প্রেম করা পছন্দ করেন না। আর তোমাকে নিয়ে মায়ের কোনো সমস্যা নেই। মা তো তোমাকে প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেছিলো। মূলত মায়ের ধারণা যারা প্রেম করে বিয়ে করে, তারা সুখী হয় না।”

“এটা মায়ের ভুল ধারণা।”

“জানি, কিন্তু মায়ের এই ধারণা কখনোই পরিবর্তন হবে না।”

“হবে। কেন হবে না? আমরা সুখী হবো, মাহা। আমরা ভালো থাকবো। তখন কি মা বুঝবেন না?”

মাহাথি সূচনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি এতো উত্তেজিত হয়ে পড়ছো কেন, সূচনা? আমরা অবশ্যই সুখী হবো। তুমি আগে শান্ত হও।”

সূচনা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
“খুব কষ্ট লেগেছে মাহা। আমার আর তোমার বিয়েটা একটা শর্তের উপর ভিত্তি করে কিভাবে হলো? মাহা, তোমাকে বোঝাতে পারবো না কষ্টটা। মা, আমাদের উপর অনেক বড় পাথর চাপিয়ে দিয়েছেন। এখন মাফিন স্বস্তিকার সাথে অসুখী হলে, আমি কখনোই এই অনুশোচনা থেকে মুক্তি পাবো না। মা, অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তুমিও বিয়ের আগে আমাকে এই শর্তের কথা না জানিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো।”

ঘরের অশান্তিগুলো মারিয়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আর সাথে নিবিড়ের ফোনের পর ফোন দেওয়াটা আরো বেশি উপদ্রব মনে হচ্ছে। কল রিসিভ করেই মারিয়া চেঁচিয়ে বলল,
“তুই বার-বার আমাকে ফোন দিচ্ছিস কেন? সমস্যা কি তোর? আর এদিকে তোর জন্য আমার জীবনের সব রঙ হারিয়ে গেছে।”

নিবিড় বিচলিত কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে, মারিয়া? তুমি রেগে আছো কেন?”

মারিয়া একটা অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করে নিবিড়কে বাজে সুরে বলল,
“তুই আমাকে জড়িয়ে না ধরলে, আজ এতো বড় ঝামেলা হতো না। তোর তো!”

নিবিড় মারিয়ার অশ্লীল ভাষা শুনে ফোন কেটে দিলো। এর কয়েকঘন্টা পর সে আবার কল দিয়ে বলল,
“আমি তোমার বাসার নিচে এসেছি। দেখা করো।”

মারিয়া কথাটি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। এবার সে আরো নোংরা ভাষায় নিবিড়ের সাথে কথা বলতে লাগলো। নিবিড় এবার রেগে গিয়ে বলল,
“চুপ করো, মারিয়া। এসব আজেবাজে কথাগুলো তুমি কোথা থেকে শিখেছো? আমি তোমাকে নিয়ে এতো নোংরা চিন্তা কখনোই করি নি। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। আর তুমি কেন রেগে আছো? আমাকে পরিষ্কার করে বলো কি হয়েছে।”

মারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ব্যস।”

“মজা করছো আমার সাথে?”

কথাটি শুনে মারিয়ার রগচটে গেলো। সে আবার অশ্রাব্য ভাষায় নিবিড়কে গালিগালাজ করতে লাগলো। নিবিড় এবার ফোন কেটে সোজা মারিয়ার বাসায় চলে এলো। তবে বাসায় আরিয়া ফেরদৌস না থাকায় কোনো ঝামেলা হয় নি। মাহাথি শান্ত কন্ঠে নিবিড়কে চলে যেতে বললো। নিবিড়ও আর কিছু বলার সাহস পেলো না।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here