এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩৭

0
645

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৭
মারসাদ ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আদিরা সকালের কেনা ঝিনুক, শামুক গুলো দেখছে। সকালে আদিরা ঝিনুকের অনেক কিছু কিনেছে। ঘরের জন্য ঝালর, দরজার জন্য ঝালর, ব্যালকনির জন্য ঝালর সাথে কতোগুলো মালা, ব্রেসলেট এসব। মারসাদ নিঃশব্দে হেসে আদিরার পাশে বসল। আদিরা মারসাদের দিকে একবার তাকিয়ে হেসে আবার ঝিনুক দেখতে দেখতে বলল,

–এই রাতেরবেলাও গোসল করলেন? তাও শীতকালে?

মারসাদ তোয়ালেটা বিছানায় রেখে বলে,
–আমরা পাঁচজন তো সমুদ্রে আবারও নেমেছিলাম ইনানীতে। তোমরা বাকিরা শুধু হেঁটেছ। তাই আমার শরীরে বালি কিচকিচ করছিল।

আদিরা মারসাদকে ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলতে দেখে চোখ-মুখ কুঁচকে তোয়ালেটা নেয় অতঃপর বিছানা থেকে নেমে মারসাদের বরাবার দাঁড়িয়ে বলে,

–ভেজা তোয়ালেটা ব্যালকনিতে মেলে দিলে কী হয় হ্যাঁ? আপনার এই স্বভাব যাবে না!

আদিরা তোয়ালেটা ব্যালকনিতে মেলে দিতে অগ্রসর হবে ঠিক তখনি মারসাদ আদিরার বাম হাতে হেচকা টান দিয়ে আদিরাকে নিজের কোলে এনে ফেলল। আদিরা হঠাৎ টানে হকচকিয়ে হালকা চিৎকার করে উঠলে মারসাদ শব্দ করে হেসে উঠে। মারসাদ বলে,

–এতো ভয় কেনো পাও হ্যাঁ? আমিই তো। তোমার হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড।

কথাটা বলে মারসাদ আদিরার কাঁধে নিজের অধর স্পর্শ করায়। আদিরা কেঁপে উঠে। কিছু বলতে নিচ্ছিল সে কিন্তু মারসাদের এমন স্পর্শে সে থতমত খেয়ে গেছে। মারসাদ এবার আদিরার গলার কাছে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,

–কিছু বলো?

আদিরা হাত দিয়ে মারসাদকে সরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
–আমি ঘুমাব। আজ কতো ঘুরাঘুরি হলো। টায়ার্ড লাগছে।

আদিরা ঠেলে উঠে যেতে নিলে মারসাদ ওকে টেনে এবার বিছানায় ফেলে। আদিরা চোখ-মুখ খিঁচে রেখেছে। মারসাদ নিঃশব্দে হেসে আদিরার বন্ধ নয়নযুগলে ফুঁ দেয়। আদিরা ঈষৎ কেপে উঠে। মারসাদ সম্মোহিত কন্ঠে বলে,

–আমার নিদ্রা কেড়ে তুমি সুখনিদ্রায় কী করে যাও মনোহারিণী?

আদিরা নিশ্চুপ। তার উজ্জ্বল কায়া অনুভূতির মহালগ্নে শিহরিত। আলো নিভিয়ে প্রিয়তমাকে গভীর আলিঙ্গনে প্রেমের শহরে আবারও অবাধ বিচরনে রজনী পার।

_________

পরেরদিন সমুদ্রপাড়ে হালকা ঘোরাফেরা করে ওরা বেলা বারোটায় ঢাকা ফিরতে রওনা হয়। পরেরদিন সকালে ঢাকা পৌঁছে ওরা। আবার শুরু আগের মতো জীবন। মারসাদ ঢাকা এসেই রুহুল আমিনের খোঁজ নেয়। কক্সবাজার থাকা অবস্থায় সেই চিন্তা নিতে চাচ্ছিল না। রুহুল আমিনের দুইটা ফ্যাক্টরির ডকুমেন্ট চেক করছে ডিবি। আর সব অবৈধ মা*লামা*ল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রুহুল আমিন মিডিয়ার সামনে আসছে না এবার কারণ তার ওই দুইটা ফ্যাক্টরিই ছিল মূল। বাকি শাখা সেগুলোর সূত্র ধরে বের হয়ে আসবে। মারসাদ প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো।

…….
সাগর নিউজে যেদিন দেখেছে সেদিন থেকে সে কিছুটা দিশাহারা অবস্থায়। কিসের সাথে সে জড়িয়ে গেছে তাই ভাবছে। এতো সলিড পরিকল্পনাও যদি ধরা পরে যায় তাহলে সাগরের সব পরিকল্পনা তো তুচ্ছ। তাছাড়া সাগরের কাছে ওর এক বন্ধু আরেকটা খবর দিয়েছিল যে, নিলয় রাত্রীর সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং ওদেরকে রেস্টুরেন্টে হাত জড়িয়ে ঢুকতে দেখেছিল। সাগরের বিষয়টা হজম না হওয়ায় সে নিলয় ও রাত্রীর উপর নজরদারী করতে বলেছিল। আজকে খবর পেয়েছে, নিলয় ও রাত্রীকে একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে দেখেছে। সাগর নিলয়কে আসতে বলেছে। নিলয় এসে সাগরকে বলে,

–হ্যাঁ দোস্ত বল। কী অবস্থা?

–ভালোই। তোর কী অবস্থা?

–এইতো ভালো। তা হঠাৎ জরুরী তলব?

–তুই হোস্টেল ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে অনেকটা চেঞ্জ হয়েছিস সেই ব্যাপারে জানতে।

নিলয় ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–কেমন চেঞ্জ?

–এই যে পুরানো প্রেম জেগে উঠেছে। খুব মা*খোমা*খো প্রেম!

নিলয় নড়েচড়ে বসে। সাগর কী কিছু সন্দেহ করল? এরকম ভয় তার। সাগর তা দেখে বাঁকা হেসে বলে,

–তোর আর রাত্রীর প্রেম তো জমে উঠেছে শুনলাম। তা কবে থেকে? আমাদের জানালি না পর্যন্ত! কী প্রেম!

নিলয় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দৃষ্টি লুকাচ্ছে। সাগর বলে,
–সত্যি বলবি। আমি শিউর হয়েই তোকে ডেকেছি। রাত্রীর জন্যই বুঝি তোর আমাদের সাথে মন নেই? সত্য না বললে আমি কী করতে পারি তা তো তুই জানিসই।

নিলয় হাত দিয়ে কপাল ঘষে চিন্তায় পরে যায়। রাত্রির পরিবারে রাত্রির বিয়ে নিয়ে আবারও কথা হচ্ছে। নিলয় মাস দুয়েক হলো একটা পার্ট টাইম জবে ঢুকেছে যা বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর টিউশন দুইটা ব্যাচ শুক্রবার সহ সপ্তাহে চারদিন করে পড়ায়। নিলয় যেহেতু বিবিএ এর স্টুডেন্ট আর তার রেজাল্ট মোটামোটি ভালো। প্রথম দুই বছর তো রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল তারপর সাগরদের সাথে হোস্টেলে উঠার পর তার রেজাল্ট আগের তুলনায় খারাপ হচ্ছিল। সে স্টুডেন্ট হিসেবে পার্টটাইম জব নিয়েছে। এখন সে লেখাপড়াতেও মনোযোগ দিচ্ছে তার সদ্য শেষ হওয়া সেমিস্টার ভালো হয়েছে। সাগরের ঝাঁকুনি দেয়াতে নিলয় কল্পনা থেকে বাস্তবে ফেরে। সাগর বলে,

–তুই আমাদের ধোঁকা দিচ্ছিস নাতো? তুই মুখে বললে ভালো আর তুই না বললেও আমি তোর সবই জানতে পারব। তখন তোকে খুব পস্তাতে হবে। আর রাত্রী তো..!

নিলয় ভয় পেয়ে যায়। নিলয় হড়বড়িয়ে বলে,
–রাত্রীর কিছু করিস না। ওর সত্যি কোনো দোষ নেই। ও এখন মারসাদদের সাথে চলাফেরাও কম করে। এইযে মারসাদরা সবাই ঘুরতে গেল রাত্রী যায়নি। ও এখন শুধু আমার সাথে থাকে।

সাগর অট্টহাসি হাসে। হাসতে হাসতে বলে,
–তুইও তো আমাদের সাথে কম চলিস। আমাদের বেশিরভাগ আড্ডায় তুই থাকিস না। শুধু ওই রাত্রীর জন্য। তাই না?

নিলয় মাথা নিচু করে আছে। নিলয় হতাশ স্বরে বলে,

–দেখ সাগর, আমরা যা করছি তাতে আমাদের লাভ তো কিছুই হচ্ছে না। রুহুল আমিন যদি তোকে ফাঁসায় তাহলে কিন্তু তোকেও জেলে যেতে হবে। প্রতিটা ধাপে বিফল। এর চেয়ে ভালো আমি দেড় বছর আগে যেমন ছিলাম তেমনটাই হয়ে যাই। আমার কোনো বড়ো ভাই নেই। বাবার রিটায়ার্ডের সময় চলে আসছে। তাছাড়া রাত্রিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি অনেক। আমি চাইনা ওর কোনো ক্ষতি হোক। তাছাড়া সি ইজ মাই ওয়াইফ!

সাগর হতভম্ব দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় হাত জোর করে বলে,
–বন্ধুত্ব বন্ধুত্বের জায়গায় আর পারসোনাল লাইফ তার জায়গায়। আমি চাইনা দুইয়ে সংঘর্ষ হোক। অনেক তো করলি। এবার অন্তত আমার দিকটা ভাব। তোকে মারসাদের কিছু করতে আমি বাধা দেইনি। সবসময় রিস্কটা জানিয়েছি। জানি আমিও সমান দোষী তোর সব কাজে। আমার পারসোনাল লাইফটাকে রেহাই দে। তোকে একদিন ইমার্জেন্সিতে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলাম আমি। তোর দুই ব্যাগের মতো রক্ত লাগত কিন্তু রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না বলে তৎক্ষণাৎ আমি এক ব্যাগ দিয়েছিলাম সেই ফার্স্ট ইয়ারে। সেইদিন কিন্তু তুই নিজের দোষেই মাথা ফা*টিয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ছিলি। তোকে আমি আরও অনেক কিছু থেকে বাঁচিয়েছিলাম প্রথম দুই বছর। তারপর তোর সাথে বন্ধুত্ব গাড়ো হয়। সেটাই বলছি, এবার আমার পারসোনাল লাইফ নষ্ট করিস না। তাছাড়া তোর কোনো কাজে আমি থাকব না যে বাধা দিব। বন্ধুত্ব কী এমনিতে থাকে না?

নিলয় সাগরের একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ভাষা বুঝল না। সে কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। নিলয় জানে সাগর নিলয়ের প্রতিটা কথা কিছুটা হলেও চিন্তা করে। অন্যদের সাথে সাগর রুড ব্যবহার করলেও নিলয়ের সাথে করেনা। নিলয় আজ নিজের পরিবার ও রাত্রীর জন্য স্বার্থপর হয়েছে। তার আর কিছুই যে করার নেই।

_________

আরও অনেকগুলো দিন চলে গেছে। শীতের রিক্ত বিদায়ে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন। ফুলের উষ্ণ অভ্যর্থনায় ঋতুরাজ তার সমস্ত রূপ নিয়ে হাজির। গাছে গাছে নতুন কুড়ি ও মুকুল। হালকা শীত, হালকা গরম। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। আদিরা আর মারসাদ বিকেলে রাস্তায় হাঁটছে। হিমেল হাওয়ায় দুজনের মন বিভোর। আজ আদিরা মারসাদকে ফোন করে আসতে বলেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ। বিকেলের টিউশনটা আদিরা সকালের দিকে পড়িয়ে ফেলেছে। মারসাদ জানতে চায়নি আদিরা কেনো ডেকেছে। তার মনোহারিণীর সাথে সে অসীম দিগন্তে হারাতে চায়। আদিরা আজ অন্য উদ্দেশ্যে হাঁটছে। অনেকটা সময় হাঁটার পর মারসাদ লক্ষ্য করল এই পথটা তার চিরপরিচিত। সে তৎক্ষাণাত আদিরার দিকে চাইল। আদিরা সামনের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে হাঁটছে। মারসাদ ভ্রুঁ কুঁচকে তীক্ষ্ম নজরে চেয়ে প্রশ্ন করল,

–তুমি এখানে কোথায় এসেছ?

আদিরার সরল জবাব,
–শ্বশুরবাড়ি!

চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here