#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩৪
*
*
হলুদের অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরতে রাত ৩টা বেজে গেলো। ভারী ড্রেস, গয়না খুলে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গেঞ্জি, পালাজো পড়ে নিলাম।হাজার দামী,ভারী ড্রেস পড়ি না কেনো.. একমাত্র শান্তি লাগে এই ঢোলা গেঞ্জি আর পালাজোতে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই একরকম শান্তি লাগছিলো।চোখ বন্ধ করা মাত্রই আজকের সব কিছুই চোখে ভেসে উঠছে। সব কিছুই একটা ঘোর আর স্বপ্নের মতো লাগছে।
সাদিফ ভাইয়ার হাসিমাখা মুখটা ভেসে আসতেই মনে একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।কিন্তু উনার মুখে শাস্তির কথা শুনে মনটা আমার কেঁপে উঠলো।উনি কি ধরনের শাস্তির কথা বলছেন তা আমি অনেক ভালো করে বুঝছি।
এসব কথা ভাবতেই লজ্জায় আমার গাল জ্বলছে।
পরক্ষণে উনি আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলেন না,এই কথাটা ভাবতেই মনে কষ্ট হানা দিলো।যাক এই লোককে নিয়ে আর ভাবা যাবে না।
সুখ,হাসি,কান্না,দুঃখ সব কিছু ঘিরেই এই লোক আমার অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে।না বলুক কথা তাও তো উনি আমার হয়ে যাবেন সারা জীবনের জন্যে।
এমনটা হাজার কথা ভাবতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।
পরেরদিন বাসায় হৈ চৈ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখলাম বেলা ১২টা বাজে। বাহ্,বেশ ঘুম ঘুমিয়েছি।
এফবিতে লগ ইন করতেই আমার আর সাদিফের
হলুদের ছবি দেখতে পেলাম।কোনো এক নিউজ চ্যানেল আমাদের ছবি পোস্ট করেছে।
সাদিফ ভাইয়ার পেজে গিয়ে দেখলাম অলরেডি উনি ছবি দিয়ে দিয়েছেন।হাজার হাজার লাইক কমেন্টসে ভরপুর উনার পোস্টটি।অনেকে তো শেয়ার করেছে।
বাহ বাহ!পলিটিশিয়ান এর বউ হয়ে তো আমি ফেমাস হয়ে গেলাম।
নিজের প্রোফাইলে গিয়ে আরো অবাক হলাম।আমাকে আর ছবি আপলোড দিতে হবে না। জুমু,রাফসান ভাইয়া,ইতি আপু,রাফিদ ভাইয়া সবাই আমাকে ট্যাগ করে ছবি আপলোড করেছে।সবাইকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে আপু আর জুমুকে দেখতে পেলাম।চারদিকে অন্যসব আত্মীয়রা নানা কীর্তি করছে।
“বউ ভাই,বসুন বসুন।আপনাকে মেহেদী লাগাতে আসবে।”(জুমু)
ইতি আপু জুমুর মাথায় গাট্টি মেরে বললো…
“এই বেআদব,কি বলিস এসব।বউ ভাই কি আবার!ভাবী ডাকবি।”
“না না,ভাবী ডাকার দরকার নেই।শেফা ডাকলেই চলবে।”(আমি)
“এই কথা ভাইয়ার সামনে বলে দেখিস শেফা। ভাই কান লাল করে দিবে তোর।যেহুতু তুই আমার অনেক ছোট তাই তোকে আমি ফুল ডাকবো কিন্তু জুমু তোকে ভাবী ডাকবে।”(ইতি আপু)
আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই জুমু বললো..
“নো মোর ওয়ার্ডস। নাস্তা খেতে বস ভাবী।মেহেদী আর্টিস্ট আসবে একটু পরেই।”
জুমুকে আমি মুখ ভেংচিয়ে বললাম..
“ওকে ননদ সাহেবা।”
আমরা তিনজন মিলে বসে নাস্তা করছি।এই সাদিফ ভাইয়াটা কি পাষাণ! আমাকে বিয়ে করবে সে, কিন্তু আমাকেই সে ব্লক করে রেখেছে।
“এই আপু,তোমার ভাইয়ার কি খবর!সে তো আমাকে ব্লক করে রেখেছে এখনো।”
(আমি এক চামচ নুডুলস মুখে পুরে দিয়ে বললাম)
“এহহ!!কি বলিস,ভাইয়া তোকে ব্লক করে রেখেছে?হা হা হা!দুনিয়ার মানুষ একদিকে আর আমার ভাই আরেকদিকে। ও হয়তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে এখনো।”(ইতি আপু)
“তো ঘুমাবেনা?ভাইয়া কালকে রাতে ঘুমাতে অনেক দেরী করেছে।”(জুমু)
“কেনো করেছে?”(আমি)
“উফ জুমু। চুপ থাকতে পারিস না?কিছু না শেফা।এমনিই আরকি কাজ ছিলো।”(ইতি আপু)
“আজিব।বলো আমাকে কি হয়েছিল রাতে?”(আমি)
জুমু বলে উঠলো…
“কিছুনা।ভাইয়া রাফিদ ভাইকে বললো ইজহার যেনো বিয়েতে না আসে।ইজহার এর মাকে তো দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু ইজহার যেনো না আসে।রাফিদ ভাইয়ার বিয়েতে আসলে কিছু বলবে না।কিন্তু তোদের বিয়েতে যেনো না আসে।এসব নিয়ে ভাইয়া বাসায় ঘ্যান ঘ্যান করছিলো।”
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম।এই ছেলেটা একদম পাগল। উনি ভাবলো কেমন করে এত কিছুর পরেও ইজহার আমাদের বিয়েতে আসবে।শুধু শুধু চিল্লাফাল্লা করতে ওস্তাদ উনি।
বিকালের দিকে মেহেদী আর্টিস্ট এসে আমাকে মেহেদী লাগিয়ে দিলো। ইতি আপু আর জুমুও লাগিয়ে নিলো মেহেদী।
আজকে ওরা আমার সাথেই থাকবে।তিন বোন মিলে সাথে বাকি কাজিনরা মিলে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম।
ঘুমানোর আগে একবার মা,বাবার রুমে গেলাম। মা আর বাবা মন খারাপ করে বসে ছিলো।আমাকে দেখা মাত্র মা আমাকে ডেকে নিলেন উনাদের কাছে।
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…
“আমার মা কতো বড় হয়ে গেলো। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি জানি তোর খালামনি তোকে অনেক ভালো রাখবে। আর সাদিফ..ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে।তোর মা থেকে কাহিনী শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।তুই কোনো চিন্তা করবি না।সবার সাথে মিলে মিশে থাকবি।বাবার বাসা তো কাছেই,বাবাকে বলবি আমি গিয়ে নিয়ে আসবো তোকে।”
বাবার কথা শুনে আমার বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে আর আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে এটা সেটা বলতে লাগলো।
আজকে আমার এই বাড়িতে লাস্ট দিন। কাল আমি অন্য কারো ঘরের বউ হয়ে যাবো।
কেনো যে এই সিস্টেমটা করা হলো, মেয়েদেরকেই বিয়ের পরে ছেলে বাড়িতে যেতে হয়!
আরো হাজারো রকমের উপদেশ দিয়ে মা আমাকে রুমে দিয়ে আসলো।
আজ আমি শেফা হয়ে শেষবারের মতো এই রুমে ঘুমাবো। কাল থেকে তো সাদিফ ভাইয়ার নাম আমার নামের সাথে জুড়ে যাবে। কাল থেকে আমি আর সিঙ্গেল থাকবো না ডাবল হয়ে যাবো।
এসব হাজারো চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম মনেই নেই।
ঘুম ভাঙতেই দেখলাম আপুরা নেই পাশে।তার মানে ওরা চলে গিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলাম।
“এই ফুল।উঠেছিস!!জলদি করে নাস্তা কর।আসরের টাইমে আকদ হবে তোর।আর তুই ঘুম থেকে উঠছিস দুপুর একটায়।হলুদ লাগাতে হবে আবার।জলদি কর।
এই মেয়ে বস না।”
(মা এক প্রকার চেঁচিয়ে কথাগুলো বলে দ্রুত পা ফেলে অন্যদিকে চলে গেলো)
ভাবী আমাকে নাস্তা দিতে লাগলো।
“ও ফুল।আজ পার্লারে যাওয়া লাগবে না।”(ভাবী)
“কেনো ভাবী?”(আমি)
“কারণ তোমার ননদ মানে ইতি বিউটিশিয়ান বাসায় আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।”(ভাবী)
“যাক ভালোই হলো।পার্লারে যাওয়া আসা খুব পেইন লাগে আমার।”(আমি)
“হ্যাঁ।আমার জন্যেও ভালো হয়েছে। না হলে আফ্রাকে নিয়ে পার্লারে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।”(ভাবী)
“হ্যাঁ সেটাই।”(আমি)
নাস্তা সারতেই মা আমাকে একটি হলুদ রঙের শাড়ি পড়িয়ে দিলো।
শাড়ি পড়ানো শেষে ছাদে নিয়ে গেলো।চারদিকে মহিলারা আমাকে ঘিরে ধরলো।একজন একজন এসে আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিলো। নানু ও মামী এসেছে একটু আগে।উনারা সাদিফ ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে এরপর আমার কাছে এলো।
হলুদ লাগিয়ে প্রথমে দুধ দিয়ে আমাকে গোসল করালো এরপর আমাকে নরমাল পানি দিয়ে গোসল করালো। মাগো মা ! কতো নিয়ম কানুন।
গায়ের উপর তাওয়াল পেঁচিয়ে নিচে নেমে আসলাম। শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ভাবী আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।
লাঞ্চ শেষ করে উঠতেই,আকদ এর জন্যে সবাই তাড়াহুড়া করতে লাগলো।
অনেক নিয়ম কানুন শেষে, অবশেষে আমিও কবুল বলে ফেললাম সাথে স্বাক্ষর করে দিলাম রেজিস্টার কাগজে।চারদিকে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলো।কবুল বলার সময় আমার বুক প্রচন্ড ভাবে কাঁপছিল সাথে তো আমার কান্না ফ্রি আছেই।
এতো জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষমেষ আমি সাদিফ ভাইয়ার বৌ হয়ে গেলাম।
মা,নানু,মামী,আরো অনেক মহিলারা এসে আমাকে চুড়ি,চেইন,নাকফুল পড়িয়ে দিলেন।
সবাই রুম থেকে যেতেই, আমি ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে গেলাম। আয়নায় চোখ পড়তেই বেশ অবাক হলাম।
নাকের ফুল, গলার চেইন, হাতের চুড়ি, সবকিছু মিলিয়ে আমাকে সত্যিকারে নতুন বউ লাগছে।
দুইহাতে মুখ ঢেকে লজ্জায় হেসে উঠলাম। হ্যাঁ আমি সাদিফ ভাইয়ার বৌ।রাগী গন্ডারের বউ আমি।
ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখলাম পার্লারের মেয়েরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি আসতেই,ওরা দ্রুত ওদের কাজ শুরু করে দিলো।
রাত আটটার দিকে আমার সাজ কমপ্লিট হলো। এতো ভারী লেহেঙ্গা, গয়না, হেয়ার স্টাইল নিয়ে আমার নিঃশ্বাস ফেলতেই ভার লাগছে।কিন্তু আয়নায় তাকিয়ে নিজের দিকেই কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিলাম। খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা টা বেশ সুন্দর। বউ সাজলে সব মেয়েদেরই এক অন্যরকম সুন্দর লাগে।
আমি গাড়ি থেকে নামতেই ইতি আপু,জুমু, মীরা আপু,তাসফিয়া সবাই এগিয়ে এলো।আমাকে ধরে আস্তে আস্তে ওরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বাব্বাহ,লম্বা জামাই এর জন্যে আমার মতো বাট্টুকে কতো বড় হিল পড়তে হলো। হলুদেও সেম কাহিনী,আজও সেম কাহিনী।যাক কষ্ট হলেও হাঁটতে তো হবেই।
একটু পরেই দেখলাম আমার পাশ থেকে আপুরা সরে গেলো।আর সাথে সাথেই আমার হাত অন্য একজনের হাতের মুঠোয় চলে গেলো।
হাতের স্পর্শেই বুঝলাম এই মানুষটা আমার হাজবেন্ড ছাড়া আর কেউ না।কেনো জানি লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেই পারছি না।
সাদিফ ভাইয়া প্রেসের সবার সাথে ইন্টারভিউ দিচ্ছিলো।গাড়ি থেকে তার প্রিয়তমাকে নামতে দেখেই হার্ট ব্লক হয়ে গেলো তার। খয়েরী রঙে তার জানকে সাদিফের কল্পনা থেকেও সুন্দর লাগছে বেশি।অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো। সাদিফ মনে মনে বললো…
“কেনো যে এতো সুন্দর তুমি।কিভাবে সামলিয়ে রাখবো তোমাকে আমি।উফফ,আমিও যে কি গাধা। টেনশনের দিন শেষ,শেফা এখন সাদিফের।আল্লাহ্ এর কালিমা পড়েই তো আজ ওকে আমার করে নিলাম।এখন থেকে কোনো খারাপ নজর ওকে আর ছুঁতে পারবে না।আল্লাহ্ ভরসা।কিন্তু আমার না ওকে এখনই আদর করতে ইচ্ছে করছে।উফফফফ!!!আমার প্রিয়তমা।”
এসব কথা ভেবে সে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তমার কাছে চলে এলো।
আজ সবাই যার যার মনের মানুষকে মন ভরে দেখছে।জুমু_রাফসান,ইতি_রাফিদ সবাই তার মনের মানুষকে ঘিরে বোনা স্বপ্নগুলো, কল্পনায় সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
“তোমাকে বলেছিলাম আমি জলদি বিয়ে করো।কিন্তু না,তুমি তো আমার কথা শুনবে না।তোমার ভাইকেই দেখো কি সুন্দর বিয়ে করে নিলো।আমারও তোমার ভাইয়ার মতো রাগী হওয়া উচিত ছিলো।”
রাদিফ এর এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে ইতি বললো…
“তুমি কি ভেবেছো? তুমি আমার ভাইয়ার মতো রাগী ছেলে হলে তোমাকে আমি বিয়ে করার জন্যে রাজি হতাম? জীবনেও না।আর আমার ভাইয়ার মতো রাগী ছেলের জন্যে শেফার মতো ভালো, শান্ত মেয়েই দরকার।আমি কিন্তু মোটেও শান্ত না।”
” ওরে আমার বাঘিনী। হয়েছে এখন। আর ভ্রু কুঁচকাতে হবে না।বিয়ে যখন মন চাই আপনি করবেন আরকি।সমস্যা নেই,আপনার জন্যে আমি বুড়া বয়সেও বিয়ে করতে রাজি আছি।”
রাফিদের এমন কথা শুনে, ইতি রাফিদের পেটে খোঁচা মারলো।সাথে সাথেই দুজনে হেসে উঠলো।
সাদিফ আর শেফা নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছে।
এতোক্ষণ এই রাগীটার দিকে তাকাতে না পারলেও আমি এখন অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কারণ ছবি তুলার জন্য উনার দিকে আমাকে তাকাতে হচ্ছেই।
উনার পড়নে খয়েরী ভারী কাজের শেরওয়ানি সাথে কাধেঁর বাম পাশে খয়রি রঙের ভেলভেটের ওড়না।দেখতে উনাকে পুরোই হিরোদের মতো লাগছে।
দাঁড়ির স্টাইল, পড়নের পাগড়ী সব মিলিয়ে উনি পুরোই পারফেক্ট।মাঝে মাঝে ছবি তুলতে পাগড়ী খুলছেন যার কারণে উনার স্টাইলিশ ঘন চুল দেখা যাচ্ছে।উনার সুন্দর চোখজোড়া,আর ঠোঁটে মন মাতানো হাসি দেখে আমার মনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
কিন্তু আফসোস,আমার সাথে উনি একবারও কথা বলেননি।শুধু নিজ থেকেই উনি আমার লেহেঙ্গা ঠিক করে দিচ্ছেন অথবা আমার হাত ধরে রাখেন।মুখে একটা কথাও বলেননি। অথচ কি সুন্দর করে হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলেছেন।
“আমাকে কি দেখতে বাজে লাগছে?আপনি আমার সাথে কথা কেনো বলছেন না?”(আমি অসহায়ভাবে বললাম)
“আমি রেগে আছি বলেছি না?আমার রাগ ভাঙ্গিয়েছো তুমি?তাহলে কেনো কথা বলবো?”(সাদিফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো)
“সরি।আমি সবকিছুর জন্যেই সরি বলছি।”(আমি)
” সরিতে কাজ চলবে না এখন।বাসায় নিয়ে মজা দেখাবো।বি রেডি বেবি।”(সাদিফ ভাইয়া এক চোখ টিপে বললেন)
উনার এমন কথায় মন কেঁপে উঠলো।এমন কথা শুনতে হবে জানলে আমি উনার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতাম না। এতো বেশরম মানুষ উনি।
–
ফ্যামিলি মেম্বার,উনার ফ্রেন্ড,আমার ফ্রেন্ড, নানা পলিটিশিয়ান সবার সাথে ছবি তোলা শেষ হতেই খাবারের পর্ব শুরু হলো।
“এই তালতো বোন”
রাফসানের এমন কথায় জুমু বেশ রেগে গেলো।
“এই ?কে তোমার বোন!”
“বোন কে বলেছে?আমি তো তালতো বোন বলেছি।”(রাফসান)
“ওহহ… আমাকে এখন তোমার তালতো বোন মনে হচ্ছে।ওকে তাহলে তো তুমি আমার খালাতো ভাই হও।রাফসান ভাইইইইয়া!!!”(জুমু)
জুমুর এমন টিটকারি মার্কা কথা শুনে রাফসান রেগে বললো…
“একবার বিয়ে করে নিই। এরপর এই ভাইয়া ডাকার মজা বের করবো।”
“কেনো ভাইইইইয়া?আমি তো বোন আপনার।আমাকে কেনো বিয়ে করবেন!”(জুমু)
রাফসান রেগে হাত দিয়ে মারতে চাইলে জুমু “আই লাভ ইউ”বলেই এক দৌরে চলে গেলো।
আর রাফসান হেসে “পাগলী” বলেই মাথা চুলকালো।
খাবারের টেবিলে আমার পাশে সাদিফ ভাইয়াই বসলেন। সব কাজিন আর উনার ফ্রেন্ডদের ঠেলায় এক প্লেটে খাবার নিলাম আমরা।আমাকে ইতি আপু খাইয়ে দিতে চাইলে সাদিফ ভাইয়া বললেন উনি খাইয়ে দিবেন আমাকে।
সাথে সাথেই চারদিকে শিস বাজালেন উনার ফ্রেন্ডরা।
টেবিলের নিচ দিয়ে আমার এক হাত চেপে ধরলেন উনি।আমি হাত ছুটাতে নিলেই উনি আরো শক্ত করে হাত ধরে নিলেন।
সাদিফ ভাইয়া নিজ হাতেই ছোট করে লোকমা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন।এরপর নিজে খাচ্ছেন।
অল্প খেয়েই আর খেতে ইচ্ছে করছে না।এক প্রকার নার্ভাসনেস এর কারণে আমার মনে ধুকপুক করছে।
উনিও আর জোর করেনি আমাকে। আমার দিকে কোল্ড ড্রিংকস এগিয়ে দিয়ে উনি নিজের খাবার খেতে লাগলেন।
বড্ড কিউট লাগছে সাদিফ ভাইয়াকে।এই লোকটা বরাবরই ভোজন রসিক মানুষ।
আস্তে আস্তে বিদায়ের সময় চলে এসেছে।আর আমার বুকে নেমে এলো এক অজানা কষ্টের ছোঁয়া।
মা বাবা আমার হাত সাদিফ ভাইয়ার হাতে তুলে দিতেই আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম।সাথে মা,বাবাও কান্না করছে। ইসলাল ভাইয়া আর ভাবী জড়িয়ে ধরার পর, রাফসান ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো অনেকক্ষণ।ভাইয়াদের কান্না মাখা চোখ দেখে মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো।
সাদিফ অবাক চোখে তার বউয়ের কান্না দেখছে। চেয়েও সে বাঁধা দিচ্ছে না।কারণ সে জানে এমন সময়ে মেয়েদের খুব কষ্ট হয়।
অবশেষে সবাইকে বিদায় দেওয়ার পর গাড়িতে বসে পড়লাম।পিছের সিটে শুধু আমি আর উনি।আর গাড়ি চালাচ্ছে ড্রাইভার।বাড়ি বেশ দূরে এই কনভেনশন সেন্টার থেকে।
বিদায়ের সম্পূর্ণ সময় ধরে সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে রেখেছিলেন। আফ্রা বাচ্চাটা তার নানুর কোলে ঘুম ছিলো তাই আর আদর করতে পারিনি তাকে।খুব মন জ্বলছে তার জন্যে।
কান্নার ফলে আমার হেঁচকি উঠে গেলো।
“আশ্চর্য!এতক্ষণ ধরে কান্না করেছো কিছু বলিনি।আর এক ফোঁটাও চোখের পানি পড়লে খারাপ হবে কিন্তু।”(সাদিফ ভাইয়া রেগে বললো)
“আপ..আপনি আমায় এমন করছেন কেনো? সবাইকে ছেড়ে আসতে আমার কষ্ট হচ্ছে না? নিজে তো ঠিকভাবে কথায় বলছেন না আমার সাথে।আমি কাঁদলেও আপনার কি? আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না!ভালোবাসলে কখনো এমন করতেন না আমার সাথে।”(কেঁদে বললাম)
“কে বলেছে এসব কথা? ভালোবাসি না এই কথাটি কে বলেছে?”(সাদিফ ভাইয়া)
“কেউ বলেনি। আমিই বলছি।আমি সব বুঝি,বাবু না আমি।”(আমি)
সাদিফ ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন। আমার কপালের এক পাশে চুমু দিলেন।
“উফফ আমার জানরে। এতো বুঝলে তো,আমাকে আরো আগে বিয়ে করা উচিৎ ছিলো।এতদিনে আমাদের বাবু চলে আসতো।”
উনার কথায় আমি কেঁপে উঠলাম।পাশ ফিরতেই উনি টুপ করে আমার ঠোঁটে একটা চুমু দিলেন।
আর আমি লজ্জায়,সবাইকে ছেড়ে আসার কষ্টে উনার কাঁধে মাথা রেখে নিঃশব্দে কান্না করে চলেছি।আর উনি আমার একসাইড জড়িয়ে ধরে কাপড়ের উপরে আমার পেটে নানা আঁকিবুকি করছেন।
টিভিতে জনপ্রিয় পলিটিশিয়ান সাদনান সাদিফের বিয়ের কথাটি হেডলাইনে দেখা যাচ্ছে।সাথে নিউজও দেখাচ্ছে পলিটিশিয়ান সাদিফ ও তার বউকে নিয়ে।
দুইজনকেই রাজা রানী থেকে কম লাগছে না।এমন সব কথা শোনা যাচ্ছে টিভির সাংবাদিকদের।
ইজহার এসব দেখে ড্রিংকস করছে।এক পর্যায়ে শেফা আর সাদিফের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে খুব জোরেই অ্যালকোহলের বোতলটি টিভিতে নিক্ষেপ করলো।সাথে সাথেই টিভির সব কথা চুপ হয়ে গেলো।
“সাদনান সাদিফ, তোর করা এই ইনসাল্ট এর বদলা তো আমি নিবো।আর তোর বউ,সে তো আমার হবেই।”
এমন সব নানা কথা বলে সে বিশ্রীভাবে হেসে চললো।
চলবে….❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।
ভাইরে ভাই! কালকে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলেছে গল্প কখন পাবো, কখন পাবো গল্প, এই কথাটি বলে। আপনারা যদি পেজ একটু ভালভাবে দেখতেন তাহলে বুঝতে পারতেন, ফ্রাইডে আমি গল্প লিখি না।
যে দুইজন আমার পেজে রিভিউ দিয়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ ❤️❤️।