প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-৩৩

0
1069

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩৩
*
*
খালামণি আমাদের চারজনকে ডেকে নিচে নিয়ে গেলো।এখন আমি একটু সেজে নিলাম।সাজবো না কেনো?আমাকে দেখতে এসেছে আমার প্রিয়তম।তাই অল্পসল্প সেজে নিলাম।

নিচে নামতেই দেখতে পেলাম রাফসান ভাইয়া, সাদিফ ভাইয়া, ইসলাল ভাইয়া তিনজনই একসাথে বসে কথা বলছে আর হাসছে।আমি ভেবেছিলাম রাফসান ভাইয়াকে সাদিফ ভাইয়ার সম্পর্কে ভালো কথা বুঝাতে হবে।কিন্তু এখন এরা তো রাজ্যের আলাপ জুড়ে দিলো।

আমরা যেতেই,রাফসান ভাইয়া আর ইসলাল ভাইয়া উঠে গেলেন।রাফসান ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রেখে সাদিফ ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলো।
আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকাতেই ভাইয়া বলে উঠলো…

“কি?কি দেখছিস এইভাবে?ভাইয়াদের মাঝে মাঝে একটু ভিলেন সাজতে হয়।”

আমার আজ কি হলো বুঝলাম না।এক অজানা লজ্জায় আমি গুটিয়ে যাচ্ছি বারবার।মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না আমার।
আগে এই দুই পরিবারের সবকিছুতেই আমি আর জুমু মিলে মাতিয়ে রাখতাম চিল্লাচিল্লি করে।কিন্তু আজ আমার গলা প্রচন্ড ভার হয়ে আসছে।ভাইয়ার কথায় আমি শুধু মুচকি হাসলাম।
আর রাফসান ভাইয়া আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জুমুর পাশে গিয়ে বসে পড়লো।

“ইতি, আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের একটা ছবি তোল।সাথে আমাদেরও নিস।”(খালু)

“ওকে বাবা। আমি তুলছি।”(ইতি আপু)

শেফা এবং সাদিফের ছবি পর্ব চলছে। আর এইদিকে রাফসান জুমুর পাশে বসতেই সে রাফসান থেকে দূরে গিয়ে বসলো।

“সমস্যা কি?এমন করছো কেনো?কাছে এসে বসো।”(রাফসান)

“ঐ চুপ একদম।একটু আগে আমার ভাইকে কি বললে আমি কি তা ভুলে গিয়েছি??”(জুমু রেগে বললো)

“উফফ আমার রাঙা বউটা।ভাইয়ার জন্যে কতো দরদ!একটু তো আমার দিকেও তাকাতে পারো তাই না।তো,বেবি আমাদের বিয়ে কখন হবে?”(রাফসান)

“কিসের বিয়ে?আমি করবো না তোমাকে বিয়ে।”(জুমু)

রাফসান জুমুর পিছে হাত দিয়ে পিঠে জোরে একটা চিমটি দিয়ে বললো…

“বিয়ে তো আমি করবোই।একবার অনার্স কমপ্লিট করে নাও।এরপর এসব রাগ আমি আদর দিয়ে ভালো করে দিবো।”

পিঠের চিমটিতে জুমুর পিঠ চিনচিন করে উঠলো। সে রাগী চোখে রাফসানের দিকে তাকাতেই রাফসান ঠোঁট চোখা করে চুমুর মতো দেখালো।আর এসব দেখে জুমু কিটকিট করে হেসে উঠলো।

খালামণি সাদিফ ভাইয়ার হাতে একটা রিং ধরিয়ে দিলেন।

“সাদি এই রিংটা তোর বউকে পড়িয়ে দে।”(খালামণি)

সাদিফ ভাইয়া খালামণি থেকে রিং নিয়ে আমার বাম হাতের অনামিকা আঙুলে রিং পড়িয়ে দিলেন।এরপর সবার সামনেই আমার বামহাত ধরে একটা চুমু দিয়ে দিলেন।

আল্লাহ্!কি লজ্জা!সবাই বড়জন বসে আছেন।আর এই লোক কি করলো এইটা!
সাদিফ ভাইয়ার এমন কাণ্ডে সবাই কিটকিট করে হেসে উঠলো।মা আর খালামণি তো মুখ আঁচলে ঢেকে হাসছে।কি অবস্থা সবার।

নাস্তার পর্ব শেষ করে সবাই বিয়ের ডেইট ফাইনাল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আমি তো খুব আয়েশেই ডাইনিং এ ইতি আপুদের সাথে বসে আছি।কারণ আমি জানি বিয়ের তারিখ আরো তিন বছর পরে হবে।কারণ আমার অনার্স শেষ করতে প্রায় তিন বছরের বেশি লাগবে।

হঠাৎ করেই জুরাইন এসে বললো…

“আপু,তুমি তো আগামী মাসেই আউট হয়ে যাবে এই ঘর থেকে।”

“মানে?”(আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম)

জুরাইন নাচতে নাচতে বললো…
“মানে,আজকে তো এপ্রিলের ২৯তারিখ।আর তোমার বিয়ে হবে মে এর ১০তারিখ।ইয়াহু!!ইতি আপুর আগেই তোমার বিয়ে হবে।”

এই কথা শুনে আমার দুনিয়া ঘুরে উঠলো। এতো তাড়াতাড়ি কিসের বিয়ে।খালামণি,মা,নানু আর মামী এসে আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো।ইতি আপু আর জুমুর মুখে প্রশান্তির হাসি।ভাবীও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিলো।সবার মুখেই এখন এক আনন্দের ঝিলিক দেখতে পারছি।
কিন্তু আমার মনে শান্তি নেই। এতো তাড়াতাড়ি আমাকে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে,সেটা ভাবতেই আমার বুকে মোচড় মারলো।

বিয়ের তারিখ পিছাতে হবে।যেকোনো কারণেই হোক,আমাকে পিছাতেই হবে।

এখন চিন্তা করছি কার সাথে কথা বলবো।এই ব্যাপারে সাদিফ ভাইয়া ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারবেন না।কারণ আমি জানি এই ডিসিশনটা উনারই।

তাই জুমুকে বললাম উনাকে গেস্ট রুমে আসতে বলার জন্যে।আমি আগে থেকেই গেস্ট রুমে অপেক্ষা করছিলাম।মা,খালামনি সবাই ব্যস্ত খাবারের আয়োজন নিয়ে।

গেস্টরুমে আমি বেডে বসে উনাকে কি কি বলবো সেটা ভাবছি।দরজার আওয়াজ হতেই আমি দরজার তাকিয়ে দেখলাম সাদিফ ভাইয়া রুমে প্রবেশ করলো।

উনাকে দেখামাত্রই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আর সাদিফ ভাইয়া এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো।

আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসলেও আমি চোখ বন্ধ করলাম না।নরম সুরে উনাকে বলে উঠলাম…

“বিয়ের তারিখ এতো আগে দিলেন কেনো?আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।আপনি যদি চান আকদ করে রাখুন।কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান আমার অনার্স কমপ্লিট হলে তবেই করবেন প্লিজ!”

আমার কথা শুনে সাদিফ ভাইয়ার চেহারার রঙ পাল্টে ফেললেন। মানে একটু আগের ফুরফুরা চেহারাটা এখন রাগী চেহারায় পরিণত হলো।

সাদিফ ভাইয়া আমার কোমরে জোরে চিমটি দিয়ে বললো…

“কেনো এখন বিয়ে করলে কি সমস্যা?আমাকে ভালবাসতে কি তোর আরো সময় লাগবে?বিয়ে তো আমি ইতির বিয়ের আগেই করবো। আমার বউ হয়ে গেলে কেউ আর তোর দিকে চোখ দিবেনা। আসলে কেউ তোর দিকে তাকানোর সাহস পাবে না। সো আমার টেনশন অনেকটাই কমে যাবে। কারণ আমি চাইনা আমার প্রিয়তমার দিকে কেউ নজর দিক, তাই বিয়েই একমাত্র সমাধান।”

চিমটির স্থানে ব্যাথা করে উঠলো।আমি সেসব ব্যাথা সাইডে রেখে উনাকে বললাম…

“দেখুন আমার এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। আমার বয়সই বা কতো হলো! তাছাড়া আমি এখন স্টাডিতে আছি। এভাবে পড়ালেখার মাঝখানে বিয়ে!”

“কেনো?বিয়ের পরে আমি তোকে পড়াবোনা, সেটা কি আমি একবারও বলেছি?অবশ্যই পড়বি তুই।পড়ালেখা অনেক জরুরী।কিন্তু তার আগে বিয়ে করতেই হবে।”(রাগী ভাবে বললেন)

“পরে করলে কি সম..”
কথাটা বলার আগেই সাদিফ ভাইয়া আমাকে একেবারে মিশিয়ে নিলেন।

“তুই।তুই আমার সমস্যা।তোকে আমার সাথে কল্পনা করে আমি আর কতো বছর কাটাবো?আমি জাস্ট ডেসপারেট হয়ে গিয়েছি। না তোকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত ভালো লাগে।না তোকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে চাই। আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ।আমার তোকে প্রয়োজন। ভালোবাসিস না ঠিকাছে।কিন্তু আমার কষ্টটাও একটু বুঝার চেষ্টা কর। তোকে ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগে।আমি আর পারবো না তোকে ছাড়া থাকতে।তোর সব কথা মানতে রাজি আমি। শুধু অনার্সের পর বিয়ে করবি, এই কথাটি ছাড়া।”

আমি এক নজরে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার চোখে আমার জন্যে ভালোবাসা,আমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা সব দেখতে পারছি আমি।তাও,এত তাড়াতাড়ি বিয়ে!এই জিনিসটাই মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। আর উনি বারবার ভালোবাসিস না ভালবাসিস না করছে,উনি কি জানেন না আমি উনাকে কতো ভালোবাসি?

“প্লিজ,এভাবে মা বাবাকে ছাড়া এত দ্রুত আমি শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাই না। আমি আরো কিছুদিন আমার হয়ে থাকতে চাই। তাই বলছিলাম আরো কিছুদিন যদি…”

আবারও আমার কথা শেষ করার আগেই উনি বলে উঠলেন…

“যথেষ্ট সময় আছে।এই কয়দিন একসাথে ভালোভাবে থাক এই বাসায়।কিন্তু বিয়ের ডেইট পেছানো হবে না। যখনই আমি মেজাজ ভালো রাখার চেষ্টা করি তখনই তুই আমার মেজাজ খারাপ করিস।ইচ্ছে তো করছে তোর গাল ফাটিয়ে দিই।কিন্তু আমি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলি না।”

বিয়ের ডেইট পিছাতে না পেরে আমার মনে চাপা কষ্ট হানা দিলো।আমি কেঁদেই দিলাম।

আমার কান্না দেখে আরো রেগে গেলেন।

“ধেত,কি এক অবস্থায় পড়লাম আমি। এই মেয়ে, আমাকে এতটা অপছন্দ তোর!এভাবে কাঁদছিস কেনো?কান্না কর আর যায় কর,বিয়ে তো তোকে আগামী মাসেই করতে হবে।আর তুই যে আমাকে দেরীতে বিয়ে করার জন্যে কাঁদছিস, এর শোধ আমি তুলবোই।”(চিল্লিয়ে)

এতোক্ষণ সাদিফ ভাইয়া আমাকে উনার পেটের সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।কিন্তু এখন আমাকে উনি ছেড়ে দিলেন।হনহন করে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারো আমার কাছে এলেন।

আমি উনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই, উনি হুট করে আমার গলায় একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।

“উফফ!জ্বলে উঠলো”

কামড় খেয়ে আমার চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কামড়ের স্থানে উনার ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই চোখ খুললাম আমি।

আমি উনাকে স্পর্শ করতে যাবো এর আগেই উনি হনহন করে চলে গেলেন রুম থেকে।

আর আমি গলায় হাত দিয়ে খাটে বসে পড়লাম।উফফ এই রাগী বোম্বটা আবারো রাগ করেছে।উনার সাথে কিভাবে সারাজীবন কাটাবো আমি আল্লাহ্ জানেন।

উনি কতদিন আমার সাথে কথা বলবেন না এখন এটাও আমার জানা নেই।
এতো রাগ এই লম্বুটার!
এসব কথা ভাবার মাঝেই জুমু এলো রুমে।

“ঐ কি হলো রে?ভাইয়া তো চলে গেলো। শ্বশুর বাড়ির খাবার না খেয়ে চলে গেলো কেনো?”(জুমু)

আমি গলা থেকে হাত সরিয়ে বললাম…

“চলে গেলো? তোর ভাইকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? শুধু বলেছিলাম স্টাডি শেষে বিয়ে করবো। ব্যস তোর ভাইয়ের রাগ দেখে কে!”

“ওমাগো!ফুল…বিয়ের আগেই লাভ বাইট নিয়ে বসে আছিস। বাহ্ বাহ্।”

আমি আবারও গলায় হাত দিতে গেলেই জুমু বলে উঠলো…

“যা দেখার দেখে ফেলেছি। এখনতো তুই আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারবি না।
আর ভাইয়াকে বিয়ের ডেইট পিছানোর কথা বলার তোর সাহস কেমনে হয়? জানিস না ভাইয়া তোকে নিয়ে কত ডেস্পারেট! ভাগ্যিস থাপড়িয়ে গাল লাল করেনি তোর।জলদি জলদি আমাদের বাসায় চলে আয়।ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।দেখিস ভাইয়া তোকে রাণী করে রাখবে।”

“আমি জানি জান।উনি আমাকে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু এতো রেগে যাওয়ার কি আছে বুঝলাম না।এভাবে রেগে গেলে সামনে কিভাবে চলবো আমি!দেখবি এখন আমার সাথে বিয়ের দিনও কথা বলবেন না। এতো বাজে তোর ভাই।”(আমি)

“আরে বলবে বলবে।বিয়েতে না বললেও বাসরের টাইমে বলবে।(জুমু এক চোখ টিপে বললো)

আমি জুমুকে ধুম করেই একটা থাপ্পর দিলাম পিঠে। এরপর দুইজনই হেসে উঠলাম।মুখে হাসি আসলেও এই বাসরের কথা মাথায় আসতে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

আট তারিখ গায়ে হলুদের দিন ঠিক করা হলো। যেহুতু এনগেজমেন্ট পার্টি করা হয়নি,তাই আমাদের বিয়ে এবং গায়েহলুদ একসাথেই করা হবে।
এনগেজমেন্ট পার্টি করার জন্যে সবাই অনেক জোর দিয়েছিলো।কিন্তু আমার জন্যে এই পার্টি করা হয়ে উঠেনি।
কারণ যেহেতু আমাকে তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে বিদায় করা হচ্ছে, তাই আমি সবার থেকে একটা শোধ নিলাম। সেটা হলো এংগেজমেন্ট পার্টি না করা।
আমার এই ডিসিশনে সবাই অনেক রেগেছিলো। কিন্তু আমিও কম না। কেঁদে কুটে অবশেষে সবাইকে রাজি করিয়ে নিলাম।

মে মাসের ছয় তারিখ চলে এখন।শপিং,ফেসিয়াল,হেয়ার কালার করা এসবের মাঝে আমার দিন যাচ্ছে।শপিং এ সবার প্রথমে নিজের জন্যে মোবাইল নিয়ে নিলাম।
এই কয়দিনে সাদিফ ভাইয়া আমার সাথে একটুও দেখা করতে আসেনি।ইনফ্যাক্ট,আমাকে সোশিয়াল মিডিয়া থেকেও আনব্লকড করেনি।ইচ্ছে তো করছিলো উনাকে গলা চেপে ধরি। একটা ফোন পর্যন্ত করলেন না।
কিন্তু আমি এ ব্যাপারে আর মাথা ঘামালাম না। যতবারই বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলের দিকে তাকায় ততবারই আমার মনের প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়।কিছুদিন পরেই আমি মিসেস সাদিফ হবো।

হেয়ার কালার করানোর পর চুলগুলো আরো বেশি সুন্দর লাগে দেখতে।আমি তো আমার লুকেরই প্রেমে পড়ে যায় বারবার।

ইতি আপু আর জুমু সারাক্ষণ এইবাসা আর ঐবাসায় আসা যাওয়া করে। জুমুর মোবাইল থেকে সাদিফ ভাইয়ার প্রোফাইল দেখেছিলাম।

উনি সেইদিনের আমাদের আংটি পড়ানোর দৃশ্যের একটা ছবি উনার প্রোফাইলে দিলেন।আর ক্যাপশন দিলেন “বউ”।সবাই সেখানে লাইক কমেন্ট করে উড়িয়ে ফেললো।
উনার পেজেও আমাদের ছবি দিলেন।কিন্তু সেখানে মেয়েদের এত এত কমেন্ট দেখে আমার গা জ্বলে উঠলো।যায় হোক,করুক কমেন্ট কিন্তু বান্দা তো আমার জামাই।এসব ভাবতেই আমি মনে মনে নাগিন ডান্স দিচ্ছি।

হলুদের দিন সকালেই পার্লারে চলে গেলাম।কারণ আমাদের হলুদের অনুষ্ঠান বিকাল থেকেই স্টার্ট হবে।এইসব প্ল্যানিং সাদিফ ভাইয়া করেছেন।
আমাদের অনুষ্ঠান কোনো হলে হবে না বরং একটা বড় পার্কে হবে।

হলুদ আর পিংক রঙের সংমিশ্রণের একটি লেহেঙ্গা পড়লাম।সাথে ম্যাচিং ভারী গয়না,যার মাঝে ফুলের সাথে কুন্দন পাথর আছে।
দীর্ঘ তিন ঘণ্টা মেকোভারের পর আমার সম্পূর্ণ লুক কমপ্লিট হলো।
ইতি আপু,রাফা, মীরা আপু,জুমু সবাই আমার সাথেই এসেছিলো পার্লারে।আমাকে দেখে ওরা চারজন হা করে আছে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই…
ওরা চারজন একসাথে বলে উঠলো…

“ফুল!!মা শাহ্ আল্লাহ্…. পরী লাগছে তোকে।ভাইয়ার তো আজকে অবস্থা খারাপ হবে।”

ওদের এমন তারিফ শুনে আমার বেশ লজ্জা লাগলো।

পার্কে পৌঁছাতেই চারপাশের প্রেসের লোকজন গাড়ি ঘিরে ধরলো।আমি বেশ নার্ভাস হয়ে আছি। জীবনে এসব কিছুই আমি ফেস করিনি।ওরা প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবো কিছুই বুঝছিনা।

ইতি আপু নেমে দাড়ালো গাড়ি থেকে। জুমুকে যেই বলতে যাবো সাদিফ ভাইয়াকে কল দেওয়ার জন্যে,অমনিই দেখলাম সাদা ডিজাইনিং পাঞ্জাবির উপরে হলুদ প্রিন্টেড কোটি পড়ে ড্যাশিং স্টাইলে গাড়ির দিকেই আসছে।
উনাকে দেখে আমার বুক ধুকপুক করতে লাগলো।কতদিন পরে দেখলাম উনাকে।গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমি নামতেই আমার দিকে তাকালেন।আমি উনার দিকে একটু তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললাম।চারদিকে প্রেসের সবাই ঘিরে ধরলো আমাদের।সবাই উনাকে প্রশ্ন করছেন।কিন্তু উনি এখনো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

সাদিফ আজ মনে মনে ভীষন খুশি।তার প্রিয়তমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে বলার বাহিরে।তার কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে তার জানকে।

“এই,কি ব্যাপার!সবাই প্রশ্ন করছে আপনার থেকে।আর আপনি হা করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে!”
আমার কথায় উনার হুঁশ ফিরে এলো।
একে একে উনি সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন।
পলিটিশিয়ান এর হলুদ হওয়াতে চারদিকে পুলিশ, গার্ড নিরাপত্তার অভাব নেই।

সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করছেন।এত বড় হিল পরে হাঁটতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু আমার জন্যে সাদিফ ভাইয়াও আস্তে আস্তে হাঁটছে।
এই লোকটা আজকে বেশ মুচকি মুচকি হাসছে।হাসবে নাই বা কেনো নিজের মন মতো সব করতে পারলে যে কেউ অনেক খুশি হবে।

পুরো পার্ক ভর্তি মানুষ।প্রায় মানুষ সাদিফ ভাইয়ার মতো পলিটিক্সের সাথে যুক্ত।

বিকালের দিকেও আমরা অনেক ফটোশুট করলাম। আস্তে আস্তে সূর্য ডুবে গেলো।
সন্ধ্যায় বিভিন্ন রঙিন লাইটে চারপাশ আরো মুখরিত লাগছে।

তাসফিয়া এলো রাতে।সবাই মিলে স্টেজে উঠে কেক কাটলো,ছবি তুললো।
সবাই নাচানাচি করছে মজা করছে।রাফিদ ভাইয়াও ফরেইন থেকে এসে গিয়েছেন।উনার এক মাত্র শালার বিয়ে উপলক্ষে কিছুদিন ছুটি নিয়েছেন কাজ থেকে।

সব কিছু ভালো ভাবেই চলছে। সাদিফ ভাইয়া আমার সাথে হেসে হেসে অনেক ছবি তুলেছেন।কিন্তু একটা কথাও বলেননি আমার সাথে।

“আপনি কি খুশি না?আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?”(আমি)

আমার কথায় উনি আমার দিকে ফিরলেন।এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে,আমার গা ঘেঁষে বসলেন।আমি অবাক চোখে তাকাতেই খে করলাম উনি আমার জামার পিছে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে জোরে একটা খোঁচা দিলেন।

আমি চোখ বুজে নিলাম।হঠাৎ কানে উনার শব্দ ভেসে এলো…

“পাগল করেছো তো অনেক আগেই।ইচ্ছে তো করছে তোমার বডির প্রত্যেকটা পার্ট এই আমার নিশান বসিয়ে দিই।আমার রাগ এখনো কমেনি।আমার ভাবতেও অবাক লাগছে, তুমি আমাকে দেরিতে বিয়ে করতে চেয়েছো।”

এতদিন মুখে একটা কথা কি দেখতেও এলেন না।আর এখন কি বেশরম কথা বলছে।

আর তাকালাম না উনার দিকে।চুপচাপ সবার সাথে এঞ্জয় করছি অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের লাস্ট দিকে খাবার খেয়ে সবাই একসাথেই নাচতে আরম্ভ করলো।আমি আস্তে আস্তে নাচতে লাগলাম।অবশ্য হাত নাড়াচ্ছি শুধু। সাদিফ ভাইয়া এতক্ষণ উনার ফ্রেন্ড আর ভাইয়াদের সাথে নাচ ছিলেন। উনিও যে এতো ভালো নাচতে পারেন সেটা আমার জানা ছিলো না।

হঠাৎ কোমরে কারো স্পর্শে কেঁপে উঠলাম।পিছে ফিরতেই দেখলাম সাদিফ ভাইয়া।

আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আশ পাশ তাকিয়ে দেখলাম সবাই যার যার তালে নাচ করছে।
আমি উনার থেকে ছুটতে চাইলেই উনি আমাকে উনার সাথে আরো জোরে মিশিয়ে নিলেন।
আস্তে আস্তে কোমর দুলিয়ে উনি আমাকে নিয়ে গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে আরম্ভ করলেন।
আমি উনার দিকে তাকাতেই সাদিফ ভাইয়া আমাকে এক চোখ টিপ দিয়ে আমার একদম কাছে এসে বললেন…

“পরশু বিয়ে।এরপর থেকে বুঝবে তোমার জামাই এর অত্যাচার কেমন হয়।আমি কিন্তু এখনো রেগে আছি তোমার উপরে।নাচানাচি করছি বলে এই ভেবে বসে থেকো না আমি এখনো স্বাভাবিক হয়েছি তোমার সাথে।আমি জাস্ট আমার বউয়ের সাথে মুহূর্তটা ফিল করছি।তোমার সাথে হিসাব নিকাশ সব পরে হবে।”
কথাগুলো বলেই সাদিফ ভাইয়া আমার হাতের মাঝে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।
এরপরই সাথে সাথে আমার কপালে উনার ঠোঁট ছোঁয়ালেন।

আর আমি উনার কথা আর কাজ দেখে পুরোই কনফিউজড। সাদিফ ভাইয়া আমার উপর রেগে আছে বলছেন আবার আমার সাথেই রোমান্স করছেন।

এই মানুষটাকে বুঝে উঠা সত্যিই অনেক মুশকিল।আল্লাহ্ যে কি দিয়ে বানিয়েছেন উনাকে সেটা আল্লাহ্ ই ভালো জানেন।

চলবে…❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।

অনেকেই বলেন আরেক পার্ট দিতে।কিন্তু আমার এক পার্ট লিখতেই হাত ব্যাথা হয়ে যায়।আমার হাতে ব্যাথার প্রব্লেম আছে এটা অনেকেই জানো। সো, সরি।তোমাদের জন্যে এক পার্ট ই লিখতে পারি আমি।আর যারা যারা লাইক কমেন্ট করেন তাদের আমি অনেক ভালোবাসি।যদিও আমি কমেন্টের রিপ্লাই দিতে পারি না।কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে মন থেকে অনেক ভালোবাসি❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here