প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-৩২

0
1021

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩২
*
*
ভাবী আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে আর আমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে।গত এক সপ্তাহ ধরে আমি যতটুক কান্না করেছি আমার জীবনে এমন কান্না আমি একবারও করিনি।

ভাবীকে এতবার জিজ্ঞেস করলাম ভাবী কিছু জানে কি না এই ব্যাপারে,কিন্তু বারবার ভাবীর একটাই উত্তর “না ফুল জানিনা”।
শাড়ি পড়ানো শেষে ভাবী আমাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে বসিয়ে দিলেন।আয়নাতে তাকিয়ে নিজের চেহারার দিকে তাকালাম।এই চেহারা দেখে যে কেউ ভয়ে পালাবে।কারণ আমার নাক,কপাল,চোখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে কান্নার ফলে।যাক একটু স্বস্তি পেলাম। হয়তো বা এই চেহারা দেখে ছেলেপক্ষ আমাকে পছন্দ করবেন না।
ভাবী আমাকে হালকা সাজিয়ে দিচ্ছে।আর আমি ভাবছি ইতি আপুরা সবাই আমার সাথে এতো অদ্ভুত বিহেভ কেনো করছে আল্লাহ্ জানে।ইতি আপুকে কল দিয়েছিলাম।কিন্তু তার মোবাইল অফ ছিলো।কাহিনী কি আমি কিছুই বুঝছিনা।
সাদিফ ভাইয়াকে একবার হাতের কাছে পায়,উনার সব চুল ছিড়ে ফেলবো আমি।

ভাবী আমাকে সুন্দর করে চুল বেঁধে দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমি ভাবীকে মানা করে দিলাম।

“ভাবী তুমি যাও নিচে।কোনো হেয়ারস্টাইল করা লাগবে না।আমি এমনিও বিয়ে করবো না।তাই আমি চাচ্ছি আমাকে পঁচা লাগুক দেখতে”।

“হ্যাঁ ফুল।আমিও চাচ্ছি না হোক এই বিয়ে। সাদিফ কতো কেয়ার করে তোমার।আর দরকারের টাইমে এই ছেলে কোথায় আল্লাহ্ জানে।”(ভাবী)

“খালামনিরা কেউ আসবে না?মা ওদের আসতে বলেনি?”(আমি)

“কিজানি।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। মা আমাকে জোরে ধমক দিলো।কখনো তো এমন করে না।আজ কি হলো আল্লাহ্ ভালো জানেন।”(ভাবী)

“হুম। বাদ দাও।”(আমি)

ভাবী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।

আর আমি আমার ঠোঁটে দেওয়া লাল লিপস্টিক মুছে ফেললাম।যার জন্যে সাজার কথা সেই যখন আসবে না তাহলে সেজে কি লাভ।পারলে তো এই সুন্দর মেরুন রঙের শাড়িটাও খুলে ফেলতাম।

টুল থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিলাম।সব কিছু চেক করা শুরু করলাম।মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি,এই বুঝি সাদিফ ভাইয়া আমাকে আনব্লক করলেন।কিন্তু না,আমার কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই।এখনো সব জায়গাতে আমি ব্লক করানো।

রাগে আবারো চোখে পানি চলে এলো।আমাকে ভালবাসতে শিখিয়ে উনি নিজেই কেনো গায়েব হয়ে গেলেন আমার লাইফ থেকে?

আমার মনের মাঝে কি চলছে এইটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।রাগে দুঃখে মোবাইলটা জোরে ফ্লোরে নিক্ষেপ করলাম।সাথে সাথেই আমার প্রিয় মোবাইলটা ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেলো।
বেডের উপরে বসে আছি আমি।ইচ্ছে তো করছে সবাইকে মেরে ফেলি একদম।আর যে শয়তানটা দেখতে আসছে তাকে তো সুযোগ পেলে আমি গলা চিপে মেরে ফেলবো।শালা, কুত্তা দুনিয়ায় আর মেয়ে পাসনি।
আর সাদিফ ভাইয়া,আপনাকে আমি সামনে পেলে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।
আমার সাথে কোনো ছেলে কথা বললেই তার অবস্থা আপনি বারোটা বাজিয়ে দেন।আর আজকে যেখানে আমাকে কেউ দেখতে আসছে বিয়ে করবে বলে,সেখানে আপনার কোনো দেখা নেই।ভালই,আসলে উনি আমাকে কখনো ভালোবাসেনি।আমিই বোকা।
আমিই ভেবেছিলাম উনি আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু যে আশা করে উনি আমার এত যত্ন করেছিলেন সেগুলোর উত্তর আমি উনার থেকে নিয়েই ছাড়বো।

গাড়ির হর্নের শব্দে বুঝে গেলাম,মায়ের অতিথিরা চলে এসেছে।যার আসার আসুক।এসে মরুক।আমি আমার মতোই থাকবো।

বেশ কিছুক্ষণ পরে মা এলো আমার রুমে।আমি এক নজর তাকিয়ে চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলাম।

“কিরে!এভাবে অসহায় সেজে বসে আছিস কেন?ইরা সাজিয়ে দিয়ে যায়নি?চুলের এই অবস্থা কেনো?”(মা)

“সমস্যা কি তোমার? যা যা বলবে সব শুনতে হবে নাকি? শাড়ি পড়তে বলেছো পড়েছি।আবার সাজগোজ নিয়ে লাগলে কেনো তুমি?”
(আমি বিরক্ত হয়ে বললাম)

“দেখে তো মনে হচ্ছে আমি তোকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।আচ্ছা আয় নিচে চল।মেহমান চলে এসেছে।”(মা)

মায়ের কথায় আমার বুকে ধুকধুক ভাব শুরু হয়ে গেলো। শাড়ি হালকা ঠিক করে আমি মায়ের সাথে যেতে নিলে মা আমাকে থামিয়ে দিলেন।

“আশ্চর্য, এভাবে চুল খুলে পাগলের মত যাবি নিচে?”(মা)

“মা তুমি কি চাচ্ছো আমাকে খুলে বলবে?”(আমি)

“চুলগুলো অন্তত হাত খোঁপা করে মাথায় কাপড় দে।”(মা)

“সব যখন তোমার মনের ইচ্ছা মতো হচ্ছে, তাহলে এটাও কেন আমি বাদ রাখবো?”

চুলগুলো একপাশে করে একটা হালকা হাতখোঁপা করে নিলাম। এরপর আঁচলটা মাথায় টেনে দিলাম।

“খুশি এইবার তুমি?”(আমি)

“হ্যাঁ অনেক খুশি।”(মুচকি হেসে)

অন্যান্য সময় মায়ের হাসি মুখ দেখার জন্য আমি প্রচন্ড ছটফট করতাম। কিন্তু আজ মায়ের হাসি দেখে আমার গা জ্বলে গেলো।

মা আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো।

নিচে নামতে নামতে আমি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।খালামনির শব্দ শুনতেই আমি মায়ের হাত ছাড়িয়ে খালামনির দিকে দৌড় দিলাম। লিভিং রুমের দিকে চোখ না দিয়ে আমি একবারে ডাইনিং এর দিকে ছুটলাম।
ডাইনিং টেবিলের পাশেই খালামণি দাঁড়িয়ে ভাবীর সাথে কথা বলছেন।আর উনার কোলে আফ্রা।
কিছু না ভেবে খালামণিকে জড়িয়ে ধরে বললাম..

“সকাল থেকে তোমাকে কয়বার কল করেছিলাম।এক বারও পায়নি তোমাকে।মোবাইল বন্ধ ছিলো কেনো তোমার?ল্যান্ডলাইন এ পর্যন্ত কল যাচ্ছিলো না। কোথায় ছিলে তুমি?”

অাফ্রাকে ভাবীর কোলে দিয়ে খালামণি আমাকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরলেন।

“কি হয়েছে আমার ফুলের?? তোর কণ্ঠস্বর এত দুর্বল শোনাচ্ছে কেনো?”(খালামণি)

“কিছু হইনি।মা আমাকে জোর করে ছেলেপক্ষের সামনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি বিয়ে করবো না খালামণি।”(আমি)

“আমার মোবাইল তো সকাল থেকে ইতির কাছেই ছিলো।আর ল্যান্ডলাইন তো ডিস্টার্ব দিচ্ছে ফুল।আর জোর করে বিয়ে মানে?”(খালামণি)

আমি কিছু বলার আগেই সামনের দিক থেকে শব্দ ভেসে এলো…

“সারপ্রাইজ….”!

আমি খালামণি ছেড়ে সামনে তাকালাম।মা,ইতি আপু,ভাবী,জুমু, ইসলাল ভাইয়া সবাই কিটকিট করে হাসছে।

“রুবি..!!তুই মেয়েকে কিছু জানাসনি?”(খালামণি)

“নাহ আপা।তোমার মেয়েগুলো আমাকে হুমকি দিয়েছে।আর আমিও আমার মেয়েকে একটু চমকিয়ে দিলাম আরকি।”(মা)

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।আমার মাথায় সত্যি কিছু আসছে না।

“আরে কি ব্যাপার? মেয়ে দেখতে এসেছি।আমরা লিভিংরুমে বসছি।খালামণি তুমি মেয়ে নিয়ে আসো।আর মা তুমি এইখানে কেনো?তোমার না লিভিংরুমে বসে থাকা উচিত?”(ইতি আপু)
কথাগুলো বলেই ইতি আপু খালামণিকে নিয়ে চলে গেলো লিভিংরুমে।ওদের পিছু পিছু বাকি সবাই চলে গেলো।
আমি শুধু দাঁড়িয়ে আছি আর আমার পাশে মা আছে।আমার মাথা এখনো হ্যাং হয়ে আছে।
কাহিনী আসলে ঘটছে কি?

“কই মেয়ে নিয়ে আসো।আমরা আর কতক্ষণ বসে থাকবো?”(জুমু)

“আসছি বাবা।বস তোরা।
এই ফুল মা।চল তো।”
বলেই মা আমার হাত ধরে লিভিংরুমে নিয়ে যাচ্ছে। আমার নিজেকে পুতুল মনে হচ্ছে।যে যেইভাবে বলছে আমি সেভাবে হাত পা চালাচ্ছি।

লিভিংরুমে গিয়ে আমি অবাক শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলাম।

বাবা, খালু,ইতি আপুর শ্বাশুড়ি, রাফা,জুমু,ইতি আপু,নানু,মামা,মামী,জুরাইন,খালামণি সবাই বসে আছে।আর সবচেয়ে অবাক হলাম খালামনির পাশের বসা মানুষটিকে দেখে।
স.. সাদিফ ভাইয়া!!কি সুন্দর করে বসে আছেন।আর উনার রূপ কি দিন দিন বাড়ছে?এই যে উনি এখন ডিপ মেরুন রঙের শার্ট পড়ে আছেন,উনাকে দেখে আমার মনটা আবারো কেঁপে উঠলো।উনার উপর আমি আবারও ক্রশিত হয়েছি।যেটা জঘন্য হলেও সত্যি।

কিন্তু এই এক সপ্তাহ ধরে আমাকে উনি অনেক কাঁদিয়েছেন তাই আমি আর উনার দিকে তাকাবো না।
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

খালামণি একটু সরে আমাকে বসার জন্যে জায়গা করে দিলেন।

“এইদিকে আয় আমার পাশে বস।”(খালামণি)
আমার হাত ধরে খালামনি আমাকে উনার আর সাদিফ ভাইয়ার মাঝখানে আমাকে বসিয়ে দিলেন।
সাদিফ ভাইয়া একফোঁটাও নড়েননি।আমার গায়ের সাথে লেগে বসে আছেন।অথচ,উনার পাশে আরও কতো জায়গা আছে।সামনে খালু,বাবা বসে আছে।উনার কি কোনো কমনসেন্স নেই?

“কি ব্যাপার? মেয়ে কি রাজি না বিয়েতে? মেয়ের চোখ মুখ এমন ফোলা কেনো?”(জুমু)

জুমুর কথায় সবাই কিটকিট করে হেসে উঠলো।
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।

“বাবা সাদিফ তুমি কি আমার মেয়েকে পছন্দ করেছো?”(বাবা)

বাবার প্রশ্নে আমি বেশ অবাক হলাম।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।

“আরে ভাই,কি বলো তুমি এইসব। মেয়েকে পছন্দ করেছে বলেই তো আমরা পুরো পরিবার নিয়ে হাজির হলাম।”(খালু)

হঠাৎ রাফসান ভাইয়া বলে উঠলো..
“কিন্তু আমি রাজি না। সাদিফ ভাইয়ার লাইফ অলোয়েজ রিস্কে থাকে।আমি চাই না আমার বোনের লাইফ কষ্টে কাটুক।”

ওর কথা শুনে নিশ্চয় সবাই বেশ অবাক হবে।কিন্তু আমার বুকের ভিতর হুহু করে উঠলো।রাফসান ভাইয়া এসব বলার মানে কি!

“আমি জানি তুই এসব কেনো বলছিস রাফসান।আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেনা কার মৃত্যু কখন হবে।সো,তুই যদি বলতে চাস তোর বোন কে আমার সাথে বিয়ে দিবি না তাহলে ঐটা ডাইরেক্ট বল।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার কোনো মানে নেই।”(সাদিফ ভাইয়া)

“না ভাইয়া।আমি এইভাবে বলতে চাইনি।”(রাফসান ভাই)

“এই রাফসান তুমি চুপ করবে?তোমাকে আমি পরে সব বুঝিয়ে বলবো।”(জুমু)

জুমুর কথায় রাফসান ভাইয়া চুপ হয়ে গেলো ।মা বাবাও প্রচন্ড রেগে গিয়ে রাফসান ভাইয়াকে বকা দিলো অনেক।
আমি বুঝিনা সব কথা মৃত্যুতে গিয়ে কেনো ঠেকে।এসব কথা শুনলে ইচ্ছে করে কানটাই কেটে ফেলি।

“আচ্ছা এসব কথা ছাড়। সাদি আর শেফা তোরা আলাদাভাবে কথা বল।আমরা মুরব্বিরা কথা বলি কিছু।”(খালামণি)

“হ্যাঁ,আমরা এগিয়ে দিয়ে আসি। জুমু, রাফা চলো।”(ইতি আপু)

আমি,আপু, জুমু আর রাফা আগে আগে হাঁটছি আর সাদিফ ভাইয়া পিছে হাঁটছে সাথে ফোনে কথা বলছেন।

আমার রুমের সামনে গিয়ে ইতি আপু বলে উঠলেন…

“ভাই তোমরা রুমে কথা বলো।আমরা ছাদ থেকে হেঁটে আসি।”

“ওকে,যা।”
(সাদিফ ভাইয়া)

রুমে গিয়ে আমি উলটো দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলাম।উনার দিকে ফিরতে ইচ্ছেই করছেনা।কেনো করবে ইচ্ছা।এতদিন কি আমাকে কম কষ্ট দিয়েছেন উনি?

“কিছু না বললে আমি চলে যাচ্ছি।আর তুই মনে হচ্ছে বিয়েতে রাজি না।সমস্যা নেই তোর ভাইও রাজি নেই।নিচে গিয়ে বলে দিচ্ছি, তুই বিয়েতে রাজি না।”(সাদিফ ভাইয়া)

উনি চলে যাচ্ছেন এই ভেবে আমি পিছনে ফিরলাম।কিন্তু উনি এখনো দাঁড়িয়ে র‌ইলেন।আর আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।

আমি সব রাগ অভিমান দূর করে এক দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলাম।কি যে শান্তি লাগছে বলার বাহিরে।

আগে উনি আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরেছিলেন আর আমার কোমরে হাত রেখেছিলেন।কিন্তু আজ শুধু আমি উনাকে জড়িয়ে ধরেছি।আমার এক হাত দিয়ে প্রথমে উনার বাম হাতটা আমার কোমরে রাখলাম এরপর ডান হাতটা ধরে ওইটাও আমার কোমরের উপরে রাখলাম।

হ্যাঁ, এখন একদম পারফেক্ট লাগছে।যদিও আমি উনার হাত আমার কোমরে রেখেছি কিন্তু উনিও যে আমার কোমরে হাল্কা করে প্রেস করছেন এটা উনি বুঝাতে না চাইলেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি।
রুমের ঢুকার পর পায়ের জুতো গুলো খুলে রেখেছি।যার কারণে আমি মাথাসহ মাত্র উনার বুক সমান হয়েছি।

উনার বুক থেকে মাথা তুলে উনার দিকে তাকালাম। সাদিফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

“আপনি এতো এতো খারাপ কেনো?আপনি জানেন এই এক সপ্তাহ আমি কতবার আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে চেয়েছি?আপনি জানেন আমি আপনাকে কত মিস করেছি?আপনি থাইল্যান্ড যাবেন আমাকে বলেছেন?তার উপর আমাকে ব্লক করে রেখেছেন!কেনো?আমি কি এত বাজে?আমাকে কি আপনার একটুও পছন্দ না?বিদেশিনী পেয়ে কি আমাকে ভুলে গেছেন?”

আমার কথায় উনি হালকা মুচকি হাসলেন।

“চুপ কেনো?আরো বাকি আছে কথা?”(উনি)

“আমি এতগুলো কথা বললাম আর আপনি কি বলছেন?”(আমি)

“কি বলবো আমার মতো গুন্ডার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না তুই।এই ভেবে এসব কাজ করা।তাছাড়া,তোর ভাই তো বললো..আমার লাইফ রিস্ক আছে।আমাকে শত্রু পক্ষ যেকোন টাইমে মের..”
উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি পা বেশ উঁচু করে উনার শার্টের কলার ধরে উনাকে আমার মুখের সামনে ঝুঁকিয়ে নিলাম।আর উনার ঠোঁটে ডিপ্লি একটা চুমু দিয়ে উনার মুখটা বন্ধ করে দিলাম।

সাদিফ সেই অনেক আগে থেকেই নিজের ফিলিংস কন্ট্রল করতে চেয়েছে। তার প্রিয়তমাকে শাড়িতে দেখে তার মাথা ভনভন করছিলো।তার উপর তার জানের চোখ মুখ ভীষন ফুলে লাল ছিলো, তাকে দেখতে সাদিফের স্ট্রবেরি মনে হচ্ছিলো।
আর এখন শেফা নিজে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালে সাদিফ নিজের উপর কন্ট্রল হারিয়ে ফেলে আর সাথে সাথেই তার প্রিয়তমার কোমর চেপে ধরে উচুঁ করে নিয়ে খুব সফ্টলি কিস করতে লাগলো।

সাদিফের এমন রেসপন্স পেয়ে শেফার মনে খুশির হওয়া বয়ে গেলো।আনন্দে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।

দরজায় নক শুনে আমার হুঁশ ফিরলো।কিন্তু আমি এখনো সাদিফ ভাইয়া থেকে নিজের ঠোঁট ছাড়াতে পারছি না।জুমু,ইতি আপু দরজা নক করতেই আছে তাই আমি কোনো উপায় না পেয়ে উনার ঘাড়ে জোরে খামচি দিলাম।উনি অন্যমনস্ক হতেই আমি ঠোঁট ছুটিয়ে নিলাম।

দুইজনই হাঁপাতে লাগলাম।উনি আমাকে কোলে নিয়েই বেডে বসে পড়লেন।

“আমাদের কথা এখনো শেষ হয়নি।একটু পরে আয় ইতি।”(সাদিফ ভাইয়া)

“ওকে ভাই।টেক ইউর টাইম।”(ইতি আপু)

লজ্জায় আমি মাথা উঁচু করতে পারছিনা। সাদিফ ভাইয়া আমার মুখ ধরে উনার দিকে ফিরালেন।

“যেই কাজটা আমি এতো বছর ধরে মনে সাজিয়ে এসেছি,কিন্তু কখনো করার সাহস পায়নি।সেই কাজ তুমি করিয়ে নিলে আজ।কি পরিমান সাহস তোমার,আমাকে কিস করেছো!”(সাদিফ ভাইয়া)

“সরি,আপনার মুখে ঐসব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না।এমন কথা আর কখনোই বলবেন না আমাকে আপনি।আর এখন নিচে গিয়ে বলবেন আমি বিয়েতে রাজি।”
(উনার গা ঘেঁষে বসে বললাম।)

উনি আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললেন….
“বিয়েতে রাজি না হলে আমি জোর করে তুলে নিয়ে করতাম বিয়ে।আর এভাবে কাঁদতে হয়?চেহারার কি হাল বানিয়েছো!”

“আপনি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেননি।কেমন আছেন না আছেন আমি কিছুই জানতাম না। জুমুও আমাকে বলতো না কিছু।আপনাদের বাসায়ও যায়নি।ইনফ্যাক্ট কারো সাথেই কথা বলিনি।শুধু আপনাকে খুঁজতাম।”

“সরি,সরি জান।আমার মেজাজ খারাপ ছিলো তাই জানাইনি কিছু।আর আমি সব জানতাম তুমি কি করতে না করতে।খুব মায়া লেগেছে জানো তোমার কান্না মাখা মুখ দেখে।এখন থেকে আর এক ফোঁটাও কান্না না। আই মিসড ইউ সো মাচ বেবি।”
বলেই উনি আমার গলায় ঠোঁট ছোয়ালেন।
আমি কেঁপে উঠে নিজের শাড়ি খামচে ধরলাম।

“আমিও আপনাকে অনেক মিস করেছি।”(আমি)

“শাড়িতে কিন্তু খুব হট লাগছে তোমাকে।ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি।বাট আই হেভ টু কন্ট্রল।বিয়ে করে নিই একবার।এরপর সাদিফের অত্যাচার বুঝবে জান।এখন আমি নিচে যায়।সবাই অপেক্ষা করছে।”(আমার গালে চুমু দিয়ে বললেন)

আমি উনার কোল থেকে নেমে দাঁড়ালাম।

“আচ্ছা সবাই কেমনে জানতো আপনি আমাকে দেখতে আসবেন?আর তাছাড়া,সবার ব্যাবহারে মনে হলো সবাই আগে থেকে সব জানে।”(আমি)

“বলবো বলবো… সময় হলে সব বলবো।আমি আসছি এখন। বি রেডি টু বিকাম মিসেস সাদিফ।খুব জলদি আমার হবে তুমি।”
কথাগুলো বলেই উনি আমার গালে চুমু দিয়ে দরজা খুলে চলে গেলেন।

আমি দাঁড়ানো অবস্থায় গালে হাত ছোঁয়ালাম।মনে মনে ভাবতে লাগলাম,অনার্স কমপ্লিট করার আগে কিসের বিয়ে। হাহাহা! মিস্টার সাদিফ আপনাকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে।

ইতি আপু,জুমু,রাফা রুমে প্রবেশ করলো।

“কি ব্যাপার!একটু আগে মুখে কষ্টের ছাপ ছিলো।আর এখন মুখে তো হাসির ঝিলিক দেখতে পারছি।তাছাড়া ঠোঁট এতো লাল কেন? মাথায় কাপড় কই গেলো!”
(জুমু)

“চুপ কর তুই।তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।ইনফ্যাক্ট তোমাদের কারো সাথে আমার কথা নেই।”(আমি)

“উফফ ময়না। এতো রাগ ভালো না। সব কিছু সাদিফ ভাইয়ার কথা মতোই করেছি আমরা।ভাইয়া বাসায় আসলো গত পরশু রাতে। কাল সারাদিন ঘুম ছিলো।”(ইতি আপু)

“তো?আমাকে তোমরা কিছুই বলোনি কেনো?আমি উনাকে দেখার জন্যে কতো কান্না করেছি তোমরা জানো?”(আমি)

জুমু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো…

“তুই দেখিসনি ভাইয়াকে।কিন্তু ভাইয়া তোকে দেখেছে।আমি ভাইয়াকে তোর পিক, ভিডিও করে পাঠাতাম। ভার্সিটিতে ফিসফিস করে আমার ভাইয়াকে তোর আপডেট দিতাম।তোর এই উদাস মন দেখে ভাইয়া আর্লি ব্যাক করেছে বাংলাদেশে।যদিও এখন ভাইয়ার বিয়ের কোনো কথা ছিলো না। কিন্তু কাল মায়ের মোবাইলে কল আসে‌।রাফিদ ভাইয়ার এক বন্ধু তোকে লাইক করেছে।তাই বিয়ের কথা বলতে এইখানে আসতে চায়।মা তো রেগে গেলো অনেক।কারণ তুই অনেক আগে থেকেই আমার ভাইয়ার জন্যে বুকড হয়ে ছিলি। ঐ পাশ থেকে বাড়াবাড়ি করায় মা ফোন ভাইয়াকে দিয়ে দেয়। ব্যস,শুরু হলো কাহিনী।ফোন কেটে দেওয়ার পরে ভাইয়া মায়ের সাথে চিল্লাচিল্লি করতে থাকে।শেষমেশ বলেই ফেলে আজ তোকে দেখতে আসবে।খালামণিকে যেনো ফোন করে বলে দেয় এই কথা।কিন্তু তোর বয়স কম বলে মা চাচ্ছিলো ভাইয়া আর কিছু বছর ওয়েট করুক।কিন্তু ভাইয়ার ধারণা যতদিন পর্যন্ত ভাইয়ার নাম তোর নামের সাথে জড়াবে না ততদিন এইসব প্রপোজাল আসতে থাকবে।যেটা ভাইয়ার মোটেও পছন্দ না।জানিস, কালকে ভাইয়া এক নাগাড়ে তিন ঘণ্টা মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছে।সেন্টার টেবিল লাথি মেরে ভেঙেছে,ফুলের টব ভেঙেছে আর কিছু ভাঙার আগেই মা রাজি হয়ে যায়।আর রাতের ১টায় খালামণিকে জানায়।”

আমি কাহিনী শুনে হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছি।

“মা অবাক হয়নি কেনো উনার প্রস্তাবে?”(আমি)

“অবাক হবে কেনো?ভাইয়া যে তোকে চার বছর আগের থেকে ভালোবাসে এটা আমরা সবাই জানি।শুধু জুমু জানে কিছুদিন আগে থেকে।”(ইতি আপু)

আমি আরো চরম অবাক হলাম।উনি চারবছর ধরে আমাকে ভালোবাসে।তাও উনি কখনোই আমাকে কিছু বলেননি। অলওয়েজ আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছেন।নিজের আবেগকে কন্ট্রল করেছেন।আর আমি সামান্য কিছুদিন যেতে না যেতেই উনার জন্যে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিলাম।
সাদিফ ভাইয়ার পার্সোনালিটি আসলেই মন কাড়ার মতো।

চলবে…❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here