প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-২৭

0
923

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২৭
*
*
সিড়ি দিয়ে অর্ধেক পথ নামতেই চারদিকের কোলাহল শুনতে পেলাম। কতো মানুষ এসেছেন আল্লাহ্ ই জানেন।যাক ঐদিকে আর মন দিলাম না।দ্রুত পায়ে হেঁটে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।ভাবী আর খালামণি মহা ব্যস্ত কাজ নিয়ে।আমাকে আর জুমুকে দেখে ভাবী বলে উঠলেন…

“প্রিয় ননদেরা,নিজেরাই খাবার নিয়ে খেয়ে নাও।ভাবী বা খালামনির আশায় বসে থেকো না”।

“ওকে ভাবী”।(জুমু)

ভাবীর কথায় আমরা নিজেরাই বসে পড়লাম খেতে।যদিও এখন টেবিলে নাস্তার অভাব নেই,তবে আমার মোটেও খেতে ইচ্ছে করছে না।এইদিকে আবার খাবারের লোভও সামলাতে পারছিনা।

কিছু চিকেন মুখে পুরে দিয়ে খালামণিকে জিজ্ঞেস করলাম..

“খালামণি,মা কোথায়”?

“রুবি তো মেহমানদের ঐখানে।আসলে আমি কাজ করছি তো, তাই তোর মাকে মেহমানদের সাথে কথা বলার জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছি”।(খালামণি)

“ওহহ আচ্ছা।ভালই করেছো”।(আমি)

“হ্যাঁ রে,তোরা তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে নে।ইতি আসলে ওর সাথে গিয়ে মেহমানদের সাথে পরিচিত হয়ে নিস ফুল।”(খালামণি)

“নাহ।আমি যাবো না।আমার ভালো লাগে না এতো মানুষ।”(আমি)

“এই মেয়ে এগুলো কোনো কথা বলিস তুই? সাদিফ আছে,ইতি আছে,তোর মা আছে সেখানে। এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে?না গেলে সবাই খারাপ ভাববে।নাস্তা করে নে চুপচাপ।”(খালামনি)

“আচ্ছা আচ্ছা।যাবো।শান্ত হও তুমি।”(আমি)

আমার কথায় খালামণি এসে হাসিমাখা মুখে আমার কপালে একটা চুমু দিলেন।
জুমু আর আমি মনের সুখে নাস্তা করে নিলাম। আমাদের নাস্তা শেষ করা মাত্রই ইতি আপু এলো ডাইনিং এ।

“কি মহারানী নাস্তা করা শেষ আপনাদের?”(ইতি আপু)

“জ্বী শেষ আপু।আমাদের নাস্তা করা শেষ।”(আমি)

“নাহ আপু আমার এখনো শেষ হয়নি নাস্তা করা।আমি আরো খাবো,আজকে শুধু আমি খেতেই থাকবো”।(জুমু হেসে বললো)

“আগে মিট কর ওদের সাথে এরপর আবার আসিস খেতে।মেহমানরা এলো সে অনেক্ষণ আগেই।”(ইতি আপু)

“আরে বেবস চিল।আসছি তো আমরা তোমার পিছু পিছু।জুমু খাদক এমনি তোমার সাথে দুষ্টুমি করছে”।(আমি)

“হয়েছে অনেক মশকারি। এবার আয় তো।”(ইতি আপু)

আমি, ইতি আপু আর জুমু একসাথে লিভিং রুমের দিকে আগালাম। লিভিং রুমে গিয়েই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। এতো মানুষ কেনো ভাই!কিছু অচেনা মানুষের মাঝে চেনা মানুষ দেখতে পেলাম।উনারা হলেন, সাদিফ ভাইয়ার ফুফু আর ফুফাতো ভাইবোন। খালুরা এক ভাই,এক বোন।তাই খালুর দিকের আত্মীয় শুধু উনার এই বোনটাই আছে।
সাদিফ ভাইয়াদের লিভিংরুমটা কোনো হল রুম থেকে কম না।মুরুব্বীরা সবাই একপাশে বসেছেন। আমাদের সেদিকে নিয়ে ইতি আপু ওর শ্বাশুড়ি মানে রাফিদ ভাইয়ার আম্মু, উনার বোন,আরো কিছু আত্মীয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।এরপর যেখানে ইয়াং ছেলেমেয়ে বসে আছে ঐখানে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সাদিফ ভাইয়ার কাজিনদের তো আমি আগে থেকেই চিনি।

হঠাৎ জুমু আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললো…

“দোস্ত কর্নারের সোফায় দেখ,কে বসে আছে”!

জুমুর কথায় আমি কর্নারের সোফায় তাকালাম। এতক্ষণ শুধু আপু যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন,তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।কিন্তু এই মানুষটা আমার চোখেই পড়েনি।কিছু বুঝে উঠার আগেই ইতি আপু আমার হাত ধরে ঐ মানুষটার সামনে নিয়ে গেলেন।

“এই যে মশায়,মিট মাই কাজিন শেফা”।

ইতি আপুর কথায় ছেলেটি মাথা তুলে তাকালেন।
ইজহার ভাইয়া হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমাকে দেখা মাত্রই নিজের মোবাইলটি পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন।
আর সাথে সাথে বলে উঠলেন..
“ভাবী আমি ওকে চিনি,অনেক ভালো করেই চিনি”।

” ওকে কেমনে চিনো? দেবর সাহেব”!(ইতি আপু অবাক হয়ে বললো)

“চিনবো না কেনো?ভার্সিটি থেকে পরিচয় হয়েছে আমাদের। রাফিদ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেছিলাম,কিন্তু কার সাথে ঠিক হয়েছে এসবের আমি কিছুই জানতাম না।নাহলে তো ওদের আমি আরো ভালো ভাবে ট্রিট করতাম।আফটার অল আমার ভাবীর বোন বলে কথা”।(ইজহার ভাইয়া)

ইজহার ভাইয়ার চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করছে এটা স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে।কিন্তু এতো খুশি কিজন্য হয়েছেন, এটা আল্লাহ্ ই জানেন একমাত্র।ইজহার ভাইয়ার কথায় আমি মুচকি হাসলাম।অল্প কিছু কথা বলে আমি অন্যদিকে চলে গেলাম।

ইজহার আজ ভীষন খুশি।আর শেফাকে এইভাবে দেখে তার মন যেনো একটু বেশিই কাঁপছে আজ। সাদিফদের বাসায় আসামাত্র ইজহারের মনে এই কথাটি বারবার বলছিলো..আজকে শেফা আসতে পারে এই বাসায়।আফটার অল,শেফা সাদিফদের কাজিন।তার ধারণায় ঠিক হলো। শেফাকে খোলা চুলে আরো মোহনীয় লাগছে,এমনটাই মনে হলো ইজহারের কাছে।
সে আড়চোখে শেফাকে দেখতে লাগলো।

*

আমরা মেয়েরা একদিকে বসেই আড্ডা দিচ্ছি।সবাই খুবই মিশুক টাইপের মেয়ে। এইদিকে জুমু শয়তান ইজহার ভাইয়ার বোন সুজানাকে বলে দিয়েছে তাসফিয়া ইজহার ভাইয়ার উপর ক্রাশিত।আমি অনেক মানা করেছিলাম এসব না বলতে।কিন্তু জুমু বলে দিলো সব।তাসফিয়া শুনলে নিশ্চয়ই রাগ করবে। জুমু এমনিই বেশি বেশি করে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে লিভিংরুমে এলো সাদিফ ভাইয়া। চকলেট কালার শার্টটি কুনই পর্যন্ত ফোল্ড করা, ব্ল্যাক জিন্স আর পায়ে স্লিপার,বুকের দিকের দুইটা বোতাম খোলা, যার কারণে উনার সাদা বুক দেখা যাচ্ছে।আমি বুঝলাম না এতো ঢং করার কি দরকার?? এমনি এমনি তো মেয়েরা উনার উপর ক্রাশ খাইনা।এভাবে বুক,সাদা হাত শো করলে তো মেয়েরা ক্রাশ খাবেই।
উনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনে মনোযোগ দিলাম।কিন্তু এখন মাথার মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কারণ রাফিদ ভাইয়ার অন্য কাজিনরা সাদিফ ভাইয়াকে নিয়ে কানাঘুষা করছে।
কাছাকাছি বসে থাকার কারণে ওদের কথাগুলো আমি ঠিকই শুনছি।ওদের কথাগুলো এমন…

“ভাই এতদিন সাদিফ ভাইয়াকে শুধু ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম আর টিভিতে দেখেছি।বাস্তবে উনি আরো বেশি জোস।উফফ উনাকে দেখে তো আমি ফিদা হয়ে গেলাম”

আরেকজন বললো…

“হ্যাঁ ভাই।ইয়াং পলিটিশিয়ান এর মাঝে উনিই বেশি আকর্ষণীয়।কিন্তু ভাই উনি সেই লেভেলের রাগী।তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলার সাহস নেই আমার”।

এভাবেই একেকজন একেক কথা বলছে।আর আমার গায়ে যেনো আগুন জ্বলে উঠলো।

এইদিকে সাদিফ ছেলেদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো।কিন্তু হঠাৎ ইজহারের চোখ গেলে, সাদিফ ইজহারের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো… সে একমনে শেফার দিকে তাকিয়ে আছে।যদিও শেফার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।কারণ শেফা উল্টো দিকে ফিরে আছে।কিন্তু তার পিঠ তো দেখা যাচ্ছে।খোলা চুলগুলো একপাশে সরে যাওয়ার কারণে পিঠ দেখা যাচ্ছে।তবে এতটাও বাজে লাগছে না।কিন্তু সাদিফ তো সাদিফই ,সে তো পারছেনা এখনই ইজহারের নাক ফাটিয়ে দিতে।

“ইজহার,আর ইউ ওকে”?(সাদিফ বেশ রাগী সুরে বললো)

“জ্বী ভাই।ভালো আছি আমি অনেক”।(শেফার দিকে তাকিয়ে)

সাদিফ এবার বেশ রেগে গেলো।মুখে কিছু না বলে সে ইজাহারের সামনে দাঁড়িয়ে গেলো।ইজহার সাদিফ এর এমন কাণ্ডে বেশ অবাক হলো।কিন্তু সাদিফ হাসি মুখে বললো..

“চলো,বাগান থেকে হেঁটে আসি।এখানে কি আর করবো বসে বসে।বাবা আর আঙ্কেল এলে,ইতি আর রাফিদের বিয়ের আলোচনা করা হবে”।
এরপর সাদিফ রাফিদ কে ডেকে বললো…

“রাফিদ ব্রো,চলো একটু বাগান থেকে হেঁটে আসি”।

রাফিদ আর ইতি কথা বলছিল এতক্ষণ। সাদিফের কথা শুনে রাফিদ উঠে এলো।ওরা সবাই বাগানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো।

এত মেয়ের মুখে সাদিফ ভাইয়ার তারিফ আর সহ্য করতে না পেরে আমি আড্ডা থেকে উঠে গেলাম।
দ্রুত পা ফেলে কিচেনে চলে গেলাম।কিচেনে তো সবাই কাজে ব্যস্ত।একপাশে কাজের মহিলা প্লেট,ডিনার সেট এগুলো ধুচ্ছে, খালামনিরা খাবার গরম করছে।মা আর সাদিফ ভাইয়ার ফুফি এখনো কথা বলছে মেহমানদের সাথে।

“খালামণি! ভাবী কই”?(আমি)

“গেস্টরুমে ফুল। আফ্রা কান্না করছিলো,তাই ওকে ঘুম পাড়াতে গেলো।কিছু খাবি”?(খালামণি)

“না। আমি খাবো না কিছু ।গেস্টরুমে আমি যাচ্ছি তাহলে”।
কথাটা বলেই আমি চলে গেলাম।

শেফার হঠাৎ ভিতরে চলে যাওয়াটা সাদিফ দেখে থেমে গেলো। তখন সব ছেলেরাই বাহিরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।

“আবির..তুই ওদের নিয়ে বাগানে যা।আমি আসছি একটু পরেই”। কথাটা বলেই সাদিফ ভিতরের দিকে এগিয়ে গেলো।

“ওকে ব্রো।”(আবির)

আবির মানে সাদিফের কাজিন বাকি সবাইকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেলো।

সাদিফ,শেফার কাছে গিয়েছে।ইজহার এই ব্যাপারটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে।এক অজানা হিংসা ইজহার এর মনে চেপে বসেছে।

গেস্ট রুমে যেতেই দেখলাম ভাবী রুম থেকে মাত্রই বের হলো।আমার দিকে মুচকি হেসে আবারো ভাবী কিচেনের দিকে চলে গেলো।

আমি গিয়ে বেডে শুয়ে গেলাম বাবুর পাশে।তবে হঠাৎ রুমে কারো প্রবেশের শব্দ পেয়ে উঠে বসলাম।

সাদিফ ভাইয়া আমার দিকে দ্রুত পায়ে এসে আমার উপর ঝুঁকে আমার গাল চেপে ধরলেন।

“চুল খোলা কেনো?মানা করেছিলাম না চুল খোলা রাখতে বাহিরের মানুষের সামনে?আর তাছাড়া মাথায় কাপড় কই”?(রাগী কণ্ঠে)

মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।উনি এখনো আমার উপর ঝুঁকে আছেন। আমি উনার বুকের দিকে খোলা শার্টটি ধরে বললাম…

“এইগুলো কি?নিজের শার্টের বোতাম খোলা কেনো? নিজের শরীর মেয়েদের দেখাচ্ছেন সেটা কিছু না? আমি মাথায় কাপড় না দিলেও দোষ?নিজের সাদা বুক দেখা যাচ্ছে যার কারণে মেয়েরা তাকে হট বলছে সেগুলো কিছু না”?(আমিও রাগ দেখিয়ে বললাম)

আমার কথা শুনে সাদিফ ভাইয়া উনার শার্ট থেকে আমার হাত ছুটিয়ে নিলেন।একহাতে আমার হাত ধরে অন্য হাতে একটি বোতাম লাগিয়ে নিলেন।আমার হাতে চুমু দিয়ে বলতে লাগলেন…

“আমি কোনো মেয়েকে ইমপ্রেস করতে ড্রেসআপ করি না।আমার যেমন স্টাইল পছন্দ তেমনই ড্রেসআপ করি।যদি তোর ভালো না লাগে তাহলে মেরে দিলাম শার্টের বোতাম।হ্যাপী এখন?আর হ্যাঁ,মাথার কাপড় ছাড়া যেনো না দেখি আর বাহিরে।দেখলে কিন্তু খবর করে দিবো তোমার।তাছাড়া,পেট ব্যাথা কমেছে”?

“হ্যাঁ,হ্যাপী আছি অনেক এখন। মেয়েদের দিকে চোখ দিবেন না একদম। হ্যাঁ কমেছে।এবার যান তো বাহিরে।কেউ দেখলে কি ভাববে”।

“দিই না নজর।একজনকে দেখি শুধু।আচ্ছা রেস্ট কর তুই।আমি আসছি।আর আমার কথা মাথায় রাখবি,কি কি বলেছি”।
আমার হাতে আরেকটা চুমু দিয়ে সাদিফ ভাইয়া চলে গেলো।

আর আমি চুমু দেওয়া হাতটা বুকের উপর চেপে ধরে বেডের উপরে বসে রইলাম। সাদিফ ভাইয়া নামক রোগে আমি খুব বাজে ভাবে আক্রান্ত হয়ে গেলাম।এই ব্যাপারটা জুমুকে জানাতে হবে খুব শীঘ্রই।

চলবে..❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।
এখন থেকে প্রত্যেকদিন ছোট পার্ট হলেও, গল্প পোস্ট করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here