প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-২৯ *

0
1032

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২৯
*
*
আগামীকাল ইতি আপুর এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হবে।তাই খালামনির নির্দেশে আমরা আজ বিকালেই রওনা দিবো খালামনির বাসায়।জুরাইন,মামা,মামী,নানু সবাই সকালেই চলে গিয়েছেন ঐখানে।
খালামণি আমাদেরও বলেছিলেন সকালে চলে যেতে,কিন্তু বাবার শরীর খারাপ থাকায় সকালে যায়নি আমরা কেউ।
যদিও মা বলেছিলো একেবারে কাল যাবে কিন্তু খালামনির ধমকে বিকালে যেতে রাজি হয়েছে।

জুরাইন একবার ঐবাসায় আরেকবার আমাদের বাসায় আসছে।একটু আগেও এসেছে সে।তবে আমি আর যেতে দিইনি ওকে।আমাদের সাথে যাওয়ার জন্যে তাকে রেখে দিয়েছি আমি। বিকালের দিকে রেডি হয়ে নিলাম।সাথে ব্যাগ গোছাতে লাগলাম কালকের অনুষ্ঠনের জন্যে।জুরাইন নিচে রাফসান ভাইয়ার সাথে টিভি দেখছে।

যদিও সবাই রাতেই বাসায় চলে আসতে পারে।কিন্তু আমি আসবো না,ইতি আপু আর জুমু বলে দিয়েছে আজ কোনোমতেই আমাকে বাসায় আসতে দিবে না।তাছাড়া ইতি আপু আর জুমুর সাথে অনেক মজা করতে চায় আমি।

ব্যাগ গুছানোর মাঝে আমি আফ্রার কান্না শুনতে পেলাম।বেডের উপরে ব্যাগ রেখে আমি এক দৌড়ে ভাবীর রুমের দিকে ছুটলাম।আমার পাশের রুমটাই ভাবীদের রুম।যদিও প্রেগনেন্সির টাইমে ভাবী নিচের রুমে থাকতো। কিন্তু বাবুর জন্মের এক সপ্তাহ পরেই ভাবীকে উপরের রুমে শিফট করা হলো।

ভাবীর রুমে গিয়ে দেখি বাবু ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে।আর ভাবী মনে হয় ওয়াশ্রূমে।
আমি দেরি না করেই বাবুকে কোলে নিয়ে নিলাম। বাবুর নষ্ট কাঁথা চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে ওয়াশ্রুমের দরজায় নক করলাম।দুই তিনবার করার পরেও কোনো রেসপন্স আসেনি ভিতর থেকে। তাই এখন আমি খুব জোরে বলে উঠলাম…

“ও ভাবী তুমি কি আছো ভিতরে”?

এইবার ভাবী শুনতে পেলো।আসলে এতক্ষণ পানির শব্দের কারণেই ভাবীর কাছে আওয়াজ পৌঁছায়নি।

“ফুল কিছু কি বলবে তুমি”?(ভাবী)

“তোমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি। সে কখন থেকে কান্না করছি তুমি শোনোনি”? (আমি)

“না গো আমি শুনিনি। তুমি বাবুকে কিছুক্ষণ রাখো। আমি অল্প সময়ের মধ্যে আসছি।”(ভাবী)

“ঠিক আছে। ওকে আমার রুমে নিয়ে গেলাম।”(আমি)

বাবুকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলাম আমার রুমে। এই বাচ্চাটা আবার ঘুমিয়ে গেলো।উফফ কি কিউট লাগছে বাবুকে।কপালের এক পাশে একটা চুমু দিয়ে ওকে আমার বেডে সুন্দর করে শুইয়ে দিলাম।

আমি আবারও আমার ব্যাগ গুছানোর কাজে লেগে পড়লাম। আমার ব্যাগ গুছানো শেষ হতেই ভাবী এলো আমার রুমে।

“বাবু আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ্! এই মেয়ের ঘুম তো পুরাই এর বাবার মতো”।(ভাবী)

“হ্যাঁ,ভাইয়ার মেয়ে ভাইয়ার মতই তো হবে।তুমি রেডি হয়ে নাও না ভাবী”।(আমি)

“এখনই হয়ে যাবো রেডি।বেশিক্ষণ লাগবেই না।তুমি তো একেবারে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছো”।(ভাবী)

“হ্যাঁ। কি আর করবো বলো?জুমু আর ইতি আপুর নির্দেশ,কাল ওদের সাথে পার্লারে যেতে হবে আর আজ ভুলেও আমি যেনো বাসায় আসার নাম না নিই”।(আমি)

“আহহা।সেই ভালো।আচ্ছা আমি আসি কেমন।জলদি তৈরি হয়ে নিই”।(ভাবী)

“ওকে ভাবী”।(আমি)

বিকাল ৫ টার দিকে আমরা খালামনির বাসায় চলে গেলাম। ইতি আপুর ফুফুর ফ্যামিলির সবাই চলে এসেছেন। উনার ফুফু অনেক ভালো মানুষ। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যায়।খালামনির সাথে দেখা করেই আমি উপরে চলে গেলাম।
আমাকে দেখা মাত্রই জুমু আর ইতি আপু আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

“তোর হাতে আমি যদি আজ ব্যাগ না দেখতাম!তোকে মেরে আমি আলুভর্তা বানিয়ে ফেলতাম”।(ইতি আপু)

“তোমার মাইরের ভয়েই তো আমি এই ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম”।(আমি)

“আচ্ছা,এসব মারপিটের কথা ছাড়। চল আমরা একটু ডান্স করি”।(জুমু)

“এহহ…পারবো না আমি। মীরা আপুকে নিয়ে নাচো ভালো করে”।

মীরা আপু মানে সাদিফ ভাইয়ার ফুফাতো বোন বলে উঠলেন…

“ফুল ভাই।আমি এসব নাচ গানে নেই।তুমি তো বেশ ভালো নাচ করো।জুমু বলেছে আমাকে”।

“আপু এই মেয়ের কথাই অর্ধেক মিথ্যা। জুমু একটু পাঁচ চামচ বেশি বলে”।(আমি)

আমার কথায় জুমু আমাকে মারতে আসলে আমি দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হতে নিচ্ছিলাম।কিন্তু আমাকে জুমু ধরে ফেললো।

“এইবার কোথায় পালাবে সুন্দরী”?(জুমু শয়তানি ফেস বানিয়ে বললো)

কেউ কিছু বলার আগেই খালামণি রুমে আসলেন।

“তিনজনকে বলছি আমি,কানে ভালো করে আমার কথার ঢুকিয়ে নে। নাস্তা সেরে সবাই ড্রইংরুমে নাচানাচি শুরু করবি। আমার মেয়ের বিয়ে হবে বলে কথা।বুঝেছিস”?(খালামণি)

আমি খালামণিকে জড়িয়ে ধরে বললাম…

“আমি নাচ পারি না খালামণি।আর এত মানুষের সামনে নাচতে লজ্জা করবে আমার”।(আমি)

আমার কথা শুনে খালামণি আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।

“অহমা!কই নিয়ে যাচ্ছো তুমি আমাকে”?( আমি অবাক হয়ে বললাম)
নাহ! খালামণি কোনো উত্তর দিচ্ছেন না।

সাদিফ ভাইয়ার রুমে এনে খালামণি থামলো।

খালামণি দরজা ঠেলতেই সাদিফ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।শর্ট প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে বসে বসে উনি ল্যাপটপ চালাচ্ছেন।দরজার শব্দ শুনতেই উনি একনজর আমাদের দিকে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে মন দিলেন। আমি উনার কাপড়ের এই অবস্থা দেখে অন্য দিকে ফিরে গেলাম।উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললেন…
“মা,কিছু বলবে”?

“অনেক কিছুই বলবো, আগে কাপড় পড়।দেখছিস না লজ্জায় তোর দিকে তাকাতে পারছে না মেয়েটা”!(খালামনি)

“পড়বো না কাপড়। আর তুমি কি এই শর্ট প্যান্টটা দেখতে পারছো না? আমার তো কোনো লজ্জা লাগছে না”।(সাদিফ ভাইয়া)

“উফ!লাগামহীন কথা বলা বন্ধ কর সাদি।আচ্ছা যে জন্যে এসেছি.. শেফাকে একটা নির্দেশ দে। ও যেনো আজ নাচে,সাথে এইও নির্দেশ দে, ও যেনো ইতির হলুদে অনেক গানে নাচ দেয়”।(খালামণি)

খালমনির কথায় উনি ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলেন। ল্যাপটপ বন্ধ করার শব্দে আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি কেমন রাগী ভাবে তাকিয়ে আছেন।

“মা! এখন নাচবে কি নাচবে না সেটা ওর ব্যাপার!আর বাসায় নাচুক আমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু ইতির হলুদে শত মানুষের সামনে নাচার পারমিশন আমি দিবো না ওকে”।(রাগী ভাবে বললেন)

খালামণি এবার চেঁচিয়ে উঠলেন…

“দেখ দেখ আমি কার কাছে কি চাইতে এসেছি। পোড়া কপাল আমার।এই ফুল আয় তো।এই পাথরটা কখনো মানুষ হবে না”।(খালামণি)

আমার হাত ধরে চলে যেতে নিলেই, সাদিফ ভাইয়ার কথায় থেমে গেলেন খালামণি।

“মা!ভালো করেছো,এই ব্যাপারে কথা বলে।আমি একা ওকে মানা করলে ওর ভালো লাগতো না ব্যাপারটা।কিন্তু এখন তোমার সামনে বলে ভালোই করেছো”।(সাদিফ ভাইয়া)

“এই ছেলে চুপ কর একদম। কার মতো হয়েছিস তুই? নাচলে কি হবে?কেউ খেয়ে ফেলবে ওকে?আমরা চৌদ্দ গোষ্ঠী থাকবো না সেখানে”?(খালামণি চেঁচিয়ে বললেন)

এই দুই মা ছেলে তো এখন লড়াই করবে।খালামণি কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম…

“স্টপ!আপনারা দুইজন ঝগড়া করছেন কেনো?আর সাদিফ ভাইয়া আপনার কি সমস্যা আমি নাচলে?খালামণি চলে আসো তো।আমি নাচবোই,তোমার ছেলের সমস্যা হলে চোখ বন্ধ করে রাখুক”।

আমার কথা শুনে সাদিফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ালেন।আমার দিকে তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবেন…এমন টাইমে আমি ভোঁ দৌড় দিলাম।

এক দৌড়ে ইতি আপুদের রুমে চলে এলাম।বুকে হাত দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।আমাকে দেখে বাকি তিনজন এগিয়ে এলেন।

“কি ব্যাপার?মামী তোমাকে কই নিয়ে গিয়েছিলো?এভাবে হাঁপাচ্ছো কেনো”?(মীরা আপু)

“বাঘের খাঁচায় নিয়ে গিয়েছিলো।আরেকটু হলে তো বাঘ আমাকে খেয়েই ফেলতো”!(আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম)

“কোন বাঘ”?(মীরা আপু)

“মা তোকে সাদিফ ভাইয়ার রুমে কেনো নিয়ে গেলো হঠাৎ”?(ইতি আপু)

“প.. পরে বলবো।এখন আমাকে একটু পানি দাও”।(আমি)

জুমু পানি এগিয়ে দিলে আমি এক নিমিষেই গ্লাস ফাঁকা করে দিলাম।এরপর সবাইকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
আমার কথা শুনে তিনজনই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

“মাও না এক পাগল। বাঘ থেকে মাংস খাওয়ার পারমিশন নিতে গেলো!হা হা হা”।(ইতি আপু)

ইতি আপুর কথা শুনে আবারো চারজনের মাঝে হাসির রোল পড়ে গেলো।

সবাই মিলে রাতে অনেক আড্ডা দিয়েছিলাম।অল্প করে নেচেও নিয়েছিলাম আমরা সবাই।আড্ডা শেষ করতে করতে রাত তিনটা বাজলো।
মা,ভাবী আর যায়নি বাসায়।ওরাও থেকে গেলো।বাবা আর ভাইয়ারা দুইটার দিকে চলে গিয়েছিলো বাসায়।
আড্ডা শেষে আমি,জুমু,ইতি আপু আর মীরা আপু আমরা চারজন একসাথে ঘুমিয়ে গেলাম।

*

সকালে চারদিকের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো।চোখ খুলতেই দেখলাম,আমি আর জুমু বেডে শুইয়ে আছি।আমার পালাজো হাঁটু পর্যন্ত উঠে আছে।আর গায়ের টি শার্ট পেটের একটু উপরে উঠে আছে।আল্লাহ্ ঘুমানোর টাইমে হুঁশ কেনো যে থেকে না!

আমি কাপড় টেনে চোখ বন্ধ করতে যাবো,অমনিই কারো শব্দ কানে ভেসে এলো।

“এভাবে কাপড় উল্টিয়ে ঘুমানো লাগে?তুই কাপড় ঠিক না করলে আমিই ঠিক করে দিতাম যাওয়ার সময়”।

এমন কথা শুনে ফট করে চোখ খুলে ফেললাম।জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাদিফ ভাইয়া জানালার গ্লাস টেনে লক করে তাতে পর্দা টেনে দিচ্ছেন। আশ পাশ থেকে পাতলা কম্বলটা হাতিয়ে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে বসে পড়লাম।

“এই! আপনার কি কোন লজ্জা শরম নেই? এভাবে দুইটা মেয়ে ঘুমাচ্ছে আর আপনি ঐ রুমে ঢুকে পড়লেন”!(আমি)

সাদিফ ভাইয়া সব জানালা আর ব্যালকনিতে পর্দা জড়িয়ে দিতে দিতে বললেন…

“আমি কোনো পর নারীর রুমে যায়নি। এই রুমে যে দুইজন ঘুমিয়ে ছিলো ওরা দুইজনই আমার আপন মানুষ।আর এই রুমে আমি ছাড়া অন্য ছেলেকে আসতে বলবো নাকি এই ব্যালকনির দরজা জানালা বন্ধ করে তাতে পর্দা লাগিয়ে দিতে? পুরো বিল্ডিং এ লাইটিং করা হচ্ছে। আশপাশ সব রুমের দরজা,জানালা বন্ধ করে এখন এই রুমে এসেছি।মহিলারা সবাই নিচে।শুধু তোরা দুইজন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস।এত মহিলা কোত্থেকে এসেছে আল্লাহ্ মালুম।তাই আর ইতিকে ডাকতে পারিনি।যার কারণে তোদের রুমে আমাকে আসতে হলো।নাহলে তো বাইরের লাইটিং ম্যান তোর ফর্সা পেট,পা দেখতে পেতো। একে তো হেল্প করলাম তার উপর আবার আমাকে দোষ দিচ্ছিস!! নট ফেয়ার”।

লাস্টের কথাগুলো শুনে শরীর কেঁপে উঠলো।এই লুচু আমার পেট দেখে ফেলেছেন! ছি ছি।

“আপনি যতো ভালো হোন,আপনি আমার পেট দেখেছেন আবার সেটা আমাকে বলছেন!আপনার উচিত ছিলো চোখ বন্ধ করে নেওয়া।আপনি আসলেই লুচু”।(আমি)

“আমি শুধু তোর জন্যেই লুচু,তোর জন্যেই লোভী,তোর জন্যেই খারাপ, তোর জন্যেই সব আমি। অন্য কোনো মেয়ের জন্যে না”।
সাদিফ ভাইয়া কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে গেলেন।

উনার কথা শুনে আমি হ্যাং মেরে বসে রইলাম কিছুক্ষণ।মাথা চুলকিয়ে চুপচাপ উনার বলা কথাগুলোর হিসাব মিলাতে লাগলাম।

দুপুরের খাবার খেয়ে আমি,ইতি আপু,জুমু, মীরা আপু আমরা চারজন পার্লারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

সিম্পলের মাঝে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন বিউটিশিয়ান আপুটি।ইতি আপুকে তো পুরোই একটা ডল লাগছে ভারী সাজে আর ড্রেসাপে।

আমি একটা সিম্পল গারারা পড়েছি বাট আমার মনে হচ্ছে এই সিম্পল কাপড়টা অনেক ভারী। সব চেয়ে ভালো লেগেছে আমার হেয়ারস্টাইল।সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে।

সবার মেকাপ কমপ্লিট হওয়া মাত্রই আমরা চারজন ডিরেক্ট কনভেনশন সেন্টারে চলে গেলাম।চারদিকে মানুষ গিজগিজ করছে।

ভিতরে যেতেই চোখ আটকে গেলো সাদিফ ভাইয়ার দিকে।উনি এখন প্রেসের সাথে কথা বলছেন।উনাকে দেখেই বুকে ধুকধুক করতে লাগলো। ব্ল্যাক শার্টের উপরে ব্ল্যাক আর সিলভার কালারের উপর ডিজাইনিং কোট পড়েছেন উনি।চুলেও নতুন স্টাইল দিয়েছেন।ফর্সা গায়ের সাথে এই কালো রংটা বেশ লাগছে উনাকে।

আশে পাশে কতো মহিলা পুরুষ মেয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। থাকবে নাই বা কেনো? উনার মতো একটা ছেলেকেই তো সবাই নিজের মেয়ের জামাই বা নিজের হাজবেন্ড হিসেবে চাই।
এসব কথা ভাবতেই আমার গলা বেশ ভার হয়ে এলো।কান্না করার কোনো ইচ্ছেই নেই আমার এখন।উনি আমার কপালে নেই ব্যাপারটা আমি বেশ বুঝে গিয়েছি।আমার দিকে উনার চোখ পড়তেই কেনো জানি বুকটা কেঁপে উঠলো।
দেরি না করেই আমি অন্যদিকে চলে গেলাম।তাকাবোনা আমি আর উনার দিকে। জীবনে কতো ছেলে প্রোপোজ করলো কাউকে লাইফে আসতে দিইনি।কিন্তু এখন যার উপর মন এসেছে, সেই আমার কপালে নেই।আল্লাহ্!

সবাইকে দেখছি আমি তবে জুমুকে দেখতে পারছিনা। কোথায় গেলো মেয়েটা!এইদিকে ছেলেমেয়ে দুই পক্ষের মানুষে পুরো হল গিজগিজ করছে।পিছনে ফিরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। কোট দেখে চিনতে দেরি হলো না উনি সাদিফ ভাইয়া।
মাথা উঁচু করে উনার দিকে তাকাতেই উনি এক ভ্রু উঁচু করে বললেন…
“এইখানে ঘুরঘুর করছিস কেন? আশে পাশে কতো মানুষ দেখছিস না? জুমুর কাছে যা”।

“আমার যেইখানে মন চায় আমি যাবো।আপনার কি?আমি আমার খালাতো বোনের এনগেজমেন্ট পার্টিতে এসেছি।আপনার অনুষ্ঠানে আসিনি”।(রাগী ভাবে বললাম)

সাদিফ ভাইয়া উনার হাত দ্বারা আমার হাত আটকে নিয়েছেন।
আমি হাত ছুটাতে নিলেই উনি আরো শক্ত করে আমার হাত ধরে নিলেন।

“এই হাত ছুটানোর চেষ্টাই করবি না।আল্লাহ্ ছাড়া কারো শক্তি নেই এই হাত ছাড়ানোর”।(সাদিফ ভাইয়া)

উনার কথা শুনে আমি আরো চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু উনি এবার আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

এইদিকে জুমু তাসফিয়ার সাথে কথা বলছে।বেশ কিছুক্ষণ হলো তাসফিয়া আর তাসিফ এসেছে।জুমু আর তাসফিয়া শেফাকে খুঁজছে। কলও দিতে পারছেনা কারণ শেফার মোবাইল জুমুর কাছে।
তাসিফ আসা মাত্রই ইজহারের সাথে সঙ্গ দিয়েছে।

ইজহার মুগ্ধ নয়নে শেফাকে দেখছিলো… কিন্তু সাদিফ এসে শেফার হাত ধরা, তাদের হাত ছাড়ানোর দৃশ্য,শেফার কাছে সাদিফের গা ঘেঁষে দাড়ানো সব কিছু দেখে ইজহার রাগে ফুঁসতে লাগলো।
তাসিফও এসব দেখে সুযোগ বুঝেই ইজহারের মনে বিষ ঢুকিয়ে দিতে লাগলো…

“জানেন ভাই,এই মেয়ের সাথে কথা বলার কারণেই সাদিফ ভাই আমাকে অনেক মেরেছে।শেফা উনার সঙ্গ লাইক করে না, তাও উনি বার বার শেফার সাথে এমন বিহ্যাভ করে”।

ইজহার রেগে বলে উঠলো…

“আজই, সাদিফ ভাইয়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলা লাগবে”।

শেফার গা ঘেঁষে দাঁড়ানো অবস্থায় সাদিফ ভাবছে… শেফাকে লক্ষ্য করেই তখন প্রেস থেকে ব্রেক নিয়ে তার পিছে ছুটলাম।আমার জানকে এত সুন্দর লাগছে ইচ্ছা করছিলো খেয়ে ফেলি ।কিন্তু শেফাকে একা দাঁড়ানো দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তার উপর শেফা যে স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেদিকে ইজহার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।শেফা যে আমার,এমন ইঙ্গিত ইজহারকে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই শেফার এতো কাছে আসা।

আজই একে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে।শেফার দিকে তাকানোর ফল বেশ বুঝিয়ে দিবো আমি, এই ইজহার নামক অমানুষকে।

চলবে….❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।
পার্ট ছোট লাগলে মনে করবেন আমি ব্যস্ত আছি কিন্তু তাও গল্প পোষ্ট করেছি।আর, যদি দেখেন আমি পোস্ট করছি না তাহলে বুঝে নিবেন আমি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here