#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২৬
*
*
সাদিফ ভাইয়া থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইতি আপুর সাথে ভিতরে চলে গেলাম।ভাগ্যিস মেইন দরজার পরেই একটা লম্বা গলি আছে।এই গলিটা ক্রস করেই লিভিং রুমে যেতে হয়। যার কারণে উনার এইসব ফালতুমি কেউ দেখেনি।খালামণি আর মা কাজে প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে গেলো।আমি কিচেনে যেতেই খালামণি হাত ধুয়ে আমার কাছে চলে এলো দ্রুত।
আমাকে জড়িয়ে ধরে খালামণি বলতে লাগলো…
“কিরে!খালামনির বাসায় আসতে এত তাল বাহানা করা লাগে?আসতে চাসনি কেনো প্রথমে”?
“আমার খারাপ লাগছিলো খালামণি।তাই আসতে চাইনি”।(আমি)
খালামণি এবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো..
“ওমা আমার ফুলের আবার কি হলো? ও রুবি মেয়ের কি হলো?কিছু তো আমাকে বললি না”।
“আরে তেমন কিছু না।তোমার আদরের ফুলের পিরিয়ড হয়েছে।তাই সে ব্যাথার জ্বালায় আসতে চাচ্ছিলো না। এই মেয়ে অল্পতে এমন, তাহলে শ্বশুরবাড়ির কাজ কিভাবে করবে আল্লাহ্ জানেন”।(মা)
“উফফ এমন বলছিস কেনো?তোর মেয়ে কে কি আমি কাজ করাবো এমন সময়ে? ও শুধু তোর মেয়ে না আমারও মেয়ে। তুই তো ভালো করেই জানিস এই মেয়েটা আমাদের পরিবারের জন্যে কি”!(খালামণি)
এই দুইবোন তো আমাকে নিয়ে তর্ক বিতর্ক লেগে গেলো।আর এইদিকে আমার পেটে ব্যাথা বাড়ছে।কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে শুনে রইলাম ওদের কথা।ইতি আপু আর ভাবী অন্য ডিশ বানাচ্ছে।
এর মধ্যে ভাবী আমাকে জিজ্ঞেস করলো…
“আফ্রা কার কাছে শেফা”?
“সাদিফ ভাইয়ার কাছে।উনি কোলে নিয়েছিলেন আফ্রাকে”।(আমি)
“ওহহ আচ্ছা।”(ভাবী)
সবাই এক দম নিয়ে কাজ করছে।
আমার ভালো লাগলে আমিও কিছু কাজ করতাম।কিন্তু পেট,কোমর যেনো এখন ব্লাস্ট হবে।আমি একপাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আর মা,খালামনির কথা শুনছি।
হঠাৎ করে খালামণি আমাকে বলে উঠলো…
“ফুল মা,যা উপরে গিয়ে রেস্ট নে তুই।আর মেহমান এলে আমি ডেকে আনবো তোদের।তোর বোন আরেকটা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে উপরে”।
আমি যেতে নিলেই খালামণি আবার আমাকে ডাক দিলেন…এক বাটি ফ্রুটস আমার দিকে এগিয়ে দিলেন..
“শেফা! এইগুলো খা উপরে বসে। পিরিয়ড হলে বেশি বেশি ফ্রুটস আর পানি খাবি”।
খালামনির কথার মাঝেই সাদিফ ভাইয়া প্রবেশ করলো কিচেনে।লাস্টের কথাটা সাদিফ ভাইয়া শুনলে তো শেষ।ইজ্জত চলে যাবে একেবারে।আমি এক ঢোক গিলে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে একটু তাকিয়ে
ভাবীকে বললেন..
“ভাবী নাও ওকে। বাবু ঘুমিয়ে পড়েছে”।
ভাবী দ্রুত এসে আফ্রাকে নিয়ে চলে গেলেন।কারণ বেশি দেরি হলে বাবুর ঘুম ভেংগে যেতে পারে।বাবুকে ভাবীর কোলে দিয়ে সাদিফ ভাইয়াও ভাবীর পিছে চলে গেলেন।
আমি এখনো হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছি।আসলে আমার কেমন লাগছে আমি নিজেও জানিনা।এক প্রকার ফিলিংলেস লাগছে নিজেকে।
হঠাৎ খালামনির ডাকে হুঁশ আসলো আমার।
“এই যে,এই বাটি নিয়ে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি”?
আমি খালামণি থেকে বাটি নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগালাম।
উপরে পৌঁছাতেই হঠাৎ কারো স্পর্শে কেঁপে উঠলাম।কেউ একজন আমার হাত ধরে ফেললো।এই ছোঁয়াটা আমার বড্ড পরিচিত।
ঘাড় ফিরিয়ে পিছে ফিরতেই আমার ধারণা সঠিক হলো। সাদিফ ভাইয়া আমার এক হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন।
আমি হাত নাড়তেই উনি হাত ছেড়ে দিলেন আমার।
“কিছু বলবেন”?
আমার কথায় উনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।
এরপর নরম কণ্ঠে বলে উঠলেন..
“আমার রুমে বড় ড্রয়ারের নিচের দিকে একটা হটব্যাগ আছে,রুম থেকে ঐটা নিয়ে নে। জুমুর রুমে গিয়ে গিজার থেকে গরম পানি নিয়ে পেটের উপরে রাখ বা কোমরের নিচে রাখ আরাম লাগবে তোর”।
সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।এইভাবে উনি এই কথা বলবেন সেটা আমি কখনো ভাবিনি।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।
সাদিফ ভাইয়া আবারো বলে উঠলো..
“আজব এত লজ্জা পাওয়ার বা অস্বস্তির কি আছে? পিরিয়ড একটা নরমাল জিনিস।এটা হওয়া মানে তুই সুস্থ আছিস,তোর হেলথ ভালো আছে এই জিনিসটাই বুঝায়।একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে তুই এই বিষয়ে লজ্জা কেনো পাচ্ছিস”?
“আশ্চর্য! আমি কখনো এইসব বিষয়ে কোনো ছেলের সাথে আলোচনা করিনি।হঠাৎ আপনি এসে এগুলো বললে তো লজ্জা লাগবেই।আর ধন্যবাদ আপনাকে আমার চিন্তা করার জন্যে।তবে আমার কোনো হটব্যাগ লাগবে না”।(আমি)
সাদিফ ভাইয়া আমার হাতে রাখা বাটি থেকে দুই পিস আম মুখে পুরে নিয়ে, আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন।
“এই ভাইয়া, ছাড়ুন আমাকে।বললাম তো কোনো হেল্প লাগবে না”।
আমি এক মনেই উনার হাত ছাড়ানোর জন্যে যুদ্ধ করছি।কিন্তু এই মোটা গন্ডারের সাথে আমি পেরে উঠছি না।
উনার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে বেডের উপরে চেপে ধরে বসিয়ে দিলেন।আমি উঠতে নিলেই আমাকে একটা বড় ধমক দিলেন..
“সমস্যা কি তোর?আমি যে কাজ করতে বলবো সেটার উল্টোটাই কি তোর করতে হবে?অন্যসব ব্যাপারে তোর বাচ্চামি মেনে নিলেও,তোর হেলথের সাথে আমি কোনো রিস্ক নিতে চায় না”।
এক ধমকেই আমার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। উনার সাথে বাহাদুরি দেখানোর মজা সাদিফ ভাইয়া আমাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেন।পা গুটিয়ে উনার বেডের উপর বসে রইলাম আর উনি ড্রয়ারে হটব্যাগ খুঁজছেন।
নিচের ড্রয়ার থেকে উনি মুটামুটি সব জিনিসই বের করে ফেললেন তবে উনার হটব্যাগের দেখা মিলছে না।বেশ কিছুক্ষণ পরে আবারো জিনিসগুলো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলেন।কিছু একটা ভেবে উনি উনার জিম জোনের সেইদিকে গেলেন,আর সেখানে রাখা ছোট্ট ড্রয়ার খুলে উনার বিখ্যাত হাটব্যাগ উদ্ধার করে নিলেন।
“এই সামান্য জিনিসটা খুঁজতে আপনার এতক্ষণ লেগেছে”!
আমি বাটি থেকে ফ্রুটস খেতে খেতে বললাম।
“আসলে গত পরশু জিম করার পর ব্যাক পেইন করছিলো,তাই হটব্যাগ ইউজ করে সেখানেই রেখেছিলাম।কিন্তু ব্যাপারটা আমার মনেই ছিলো না”।
(সাদিফ ভাইয়া)
আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে প্রশ্ন করলাম…
“ওহহ আচ্ছা, তাই বলেন।আপনার বডি তো মাশাআল্লাহ আছেই,জিম কেনো করতে হয় আবার”?
আমার প্রশ্নে উনি উনার দুই হাত বুকের সামনে নিয়ে শয়তানি সুরে বললেন..
“একটা অসহায় ছেলের বডি দেখতে তোর লজ্জা লাগে না? ছি!তোর নজর তো ভীষন খারাপ।পঁচা মেয়ে”।
সাদিফ ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি বেশ বিষম খেলাম।যার কারণে গলায় ফল আটকে গেলো আর আমার কাশি শুরু হলো।আমার অবস্থা দেখে সাদিফ ভাইয়া এক দৌড়ে আমার কাছে চলে এলেন।মাথায় আর পিঠে মালিশ করে দিতে লাগলেন।
“ইচ্ছে তো করছে তোকে থাপ্পড় দিয়ে তোর গাল ফাটিয়ে দিই।সামান্য কথায় এভাবে বিষম খাওয়ার কি আছে?বুঝি না আমি,কেমন মানুষ তুই”।(চিল্লিয়ে)
কাশতে কাশতে আমার মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না।আর এখন কথা বলা মানে উনার হাতের শক্ত চড় খাওয়া।
বেডের পাশের জগ থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে আমাকে অল্প করে খাইয়ে দিলেন। যার কারণে কাশি কমে গিয়েছে।
আমার মাথায় মালিশ করতে করতে সাদিফ ভাইয়া বললেন…
“নিজের খেয়াল নিজে রাখতে শিখ। স্টুপিডের মতো কাজ করবি না। বড় হয়েছিস এখন,নিজের ভালোটা নিজে বুঝতে শিখ”।
উনার কথায় আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।
বেড থেকে নামতে আবার উনি আমার হাত ধরলেন।আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
জুমুর রুমে নিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলেন।বেডের উপরে আফ্রা আর জুমু ঘুমে বেহুঁশ। সাদিফ ভাইয়া ওয়াশরুমে গেলেন হাতে হটব্যাগে নিয়ে।
উনি আসার আগেই আমি রিলেক্সে বেডে শুইয়ে গেলাম আর গায়ের উপরে পাতলা চাদর দিয়ে দিলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সাদিফ ভাইয়া আমার তলপেটের উপরে হালকা করে হটব্যাগ রেখে বললেন…
“যেখানে পেইন হচ্ছে সেখানে দে ব্যাগ।আর ফ্রুট শেষ করে তারপর ঘুমাবি।বেশি খারাপ লাগলে নিচে নামার দরকার নেই।বুঝেছিস?আর হ্যাঁ,নিচে নামলেও আমি যেনো তোর মুখে কোনো মেকাপ না দেখি।মাথায় কাপড় দিয়ে রাখবি”।
উনার কথায় আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। আর উনি উনার চুলের উপরে হাত চালিয়ে ধপ ধপ পা ফেলে চলে গেলেন।আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিলেন না।যাক ভালই হলো।ভালো লাগে না আমার এসব অপরিচিত মেহমান।নিচে না গেলেই বেঁচে যায় আমি।
ফ্রুটস গুলো টুপ করেই খেয়ে নিলাম আর কোমরের নিচে হটব্যাগ দিয়ে দিলাম। আহহ…বেশ আরাম লাগছে এখন।এই লম্বু গন্ডার আমাকে শত অত্যাচার করলেও, এখনের হেল্প করার জন্যে উনার সব দোষ মাফ করে দিলাম।
*
রুমে কারো অনবরত কথা বলার কারণে আমার ঘুম ছুটে গেলো।হালকা চোখ মেলতেই কিছু অচেনা মুখ দেখতে পেলাম সাথে জুমু আর ইতি আপুকে দেখতে পেলাম।ঘটনা কি হচ্ছে আমি এখনো তার কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আলসেমি কেটে উঠে বসলাম বেডে।চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিলাম।
“এই ভাই উঠেছিস তুই এখন?? রাত আটটা বাজে।মেহমান এসেছে সেই কবে। আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।ভাইয়া আর মা তোকে ডাকতে নিষেধ করেছিলো তাই আর ডাকলাম না তোকে”।(জুমু আমার পাশে এসে বললো)
“ওমা,কি বলিস। এতোক্ষণ হয়ে গেলো!খালামণি আর তোর ভাইয়া একটু বেশিই করে।আমাকে ফেলে তোরা কত মজা করেছিস।উফফ সব মিস করলাম আমি”।
“আরে না।মেহমান এসেছে বেশিক্ষণ হলো না।আচ্ছা এদের সাথে মিট কর।
একজন রেড কামিজ পড়া মেয়েকে দেখিয়ে বললেন..এই হচ্ছে রাফা তোর রাফিদ ভাইয়ার বোন,এতদিন অস্ট্রেলিয়া তে ছিলো তাই আগে দেখিসনি আর আরেকটি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ানো মেয়েকে দেখিয়ে বললো.. এই হচ্ছে সুজানা তোর ভাইয়ার কাজিন।
আর রাফা অ্যান্ড সুজানা ও আমার কাজিন শেফা”।
(ইতি আপু)
“হাই আপুরা।সরি আমি এতক্ষণ ঘুম ছিলাম। দাঁড়িয়ে আছেন কেনো আপনারা বসুন প্লিজ”।(আমি)
“সমস্যা নেই স্লিপিং কুইন।তুমি সিক, ভাবী আমাদের বলেছে”।(রাফা আপু)
সবার সাথে হালকা কথা বলেই আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম জুমু ছাড়া কেউ নেই রুমে।
“বেবি আর্লি তৈরি হও।ক্ষুধা লেগেছে বেশ।মেহমানরা নাস্তা করে ফেলেছে অলরেডি”।(জুমু)
“তুই যা খেয়ে আয়।অপেক্ষা করার কি আছে”?(আমি)
“এহহ? ঠেকা পড়েছে আমার? তোকে রুমে একা রেখে চলে যাবো!আমি ভাইয়া আর মা থেকে মার খেতে চায় না।আর তাছাড়া তুই আমার জান তোকে ছাড়া খেলে খাবারে স্বাদ আসে না”।
জুমুর এমন ড্রামাবাজ কথায় আমি হালকা হাসলাম।
হঠাৎ করেই জুমু চিল্লিয়ে উঠলো…
“উফফ দোস্ত?আসল সারপ্রাইজ তো এখনো বাকি আছে।নিচে গেলে টাস্কি খাবি। দেখিস তুই”।
আমি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম..
“কি সারপ্রাইজ”?
“আমি এখন বলে ফেললে এটা আর সারপ্রাইজ কেমনে হবে বল তো”?(জুমু)
“ওকে।বলিস না”।
হালকা করে ঠোঁটে লিপজেল দিয়ে,চুল খোলা দিয়ে, ওরনা গায়ের উপর জড়িয়ে জুমুর সাথে নিচে চলে গেলাম।
চলবে..❤️
সিচুয়েশন যেমন হোক না কেনো,আমি তাও কষ্ট করে গল্প দিই।বাট যারা সাইলেন্ট রিডার্স চুপি চুপি গল্প পড়ে চলে যাও লাইক না দিয়ে,তোমাদের কি একটুও বিবেকে বলে না যে লেখিকা মানুষটা কষ্ট করে গল্প লিখছে ও কি একটা লাইক ডিসার্ভ করে না?
এই গল্প যখন বিভিন্ন ফেমাস গ্রুপ,পেজে পোস্ট করতাম আগে তখন লাইকের অভাব হতো না।আজ আমার পেজ ফেমাস না বলে আমি এত অবহেলিত হচ্ছি।যাক আল্লাহ্ ভরসা,একদিন সফল হবো আমি। ইন শাহ্ আল্লাহ্🙂