যখন_দুজনে_একা ৫৮ পর্ব

0
679

#যখন_দুজনে_একা

৫৮ পর্ব

নিঝুম হঠাৎ করেই সবখানে একা হয়ে গেছে। রিয়ার বিয়ের পর রিয়া শ্বশুরবাড়িতে থাকে! বাসায় আম্মু তার সংসার, আব্বু র শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যস্ত । হসপিটালে কেন জানি সবার সঙ্গে কথা বলে উৎসাহ পায় না‌ আগের মত। খুব ক্লোজ বান্ধবী রা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত দুই মিনিট কথার পরেই শুরু হয় শ্বশুর বাড়ি আর কাজের বুয়া সমাচার।
নিঝুম এসবে উৎসাহ পায় না! এসব ঝামেলা তার নেই বলেই তার কথা এগিয়ে যায় না।
ইদানিং হসপিটাল থেকে ফিরে সে ছবি আঁকতে বসে।
পুরনো এই অভ্যাস টা আবার নতুন করে চর্চা করতে ভালোই লাগছে।
ক্যানভাসে তার মনের একাকিত্ব, ইচ্ছা, স্বপ্ন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা সে করছে।
অনেক দিন চেষ্টার পর সে এক জনের জন্য একটা পেইন্টিং তৈরি করেছে। তাকে মাথায় রেখেই ছবিটা এঁকেছে।
আজ সে ছবিটা দেয়ার জন্যই ছবি সহ রেস্টুরেন্টে এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
বনানী থেকে গুলশান আসতে তার সময় বেশি লাগেনি কিন্তু সে বের হতেই সময় লাগিয়েছে বেশি।
পেইন্টিং টা হাতে নিয়েই সে লিফট দিয়ে উপরে উঠে এলো! ইচ্ছে করেই সে নিজে হাতে করে নিয়ে এসেছে , ড্রাইভার কে না করলো সঙ্গে আসতে।
নিয়াজ ওকে দেখেই দূর থেকে এগিয়ে এলো। ওর এসব ছোটখাটো ব্যাপার গুলো ভালোই লাগে নিঝুমের!
: এটা কি নিঝুম?
: আগে বসি তারপর বলি কি এটা ?
: সরি দাও আমি নিচ্ছি , বলে নিয়াজ পেইন্টিং টা নিজে নিয়ে এসে ওদের জন্য নির্ধারিত টেবিলে র পাশে রাখলো।
নিঝুমের চেয়ার টা সেই টেনে দিল!
বসতে বসতে নিঝুম বলল,
: সরি নিয়াজ অনেকক্ষণ তোমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম!
: অপেক্ষা আর আমি সমার্থক শব্দ নিঝুম, ব্যাপার না তাও তো তুমি এলে !
: না কি যে বলো আমি নিজে আসতে বলেছি আজ তোমাকে!
: আমার ধৈর্য্য দেখে কি মনে হয় তোমার নিঝুম , আমি এই ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে এগিয়ে।
: নিঝুম হাসলো ! আচ্ছা এটা তোমার জন্য খুলে দেখো কি ?
: নিয়াজ পেইন্টিং টার উপর থেকে কাগজটা সরিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল !
: অদ্ভুত সুন্দর নিঝুম, তুমি সত্যিই জিনিয়াস !
: ছবির ভেতরের এই মানুষটা তুমি নিয়াজ ! রাতের আকাশের তারা আর তুমি ! এই তারা ভরা আকাশ আঁকতে আমাকে অনেক সময় দিতে হয়েছে।অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে তারপর মনের মত হয়েছে!
: এমেজিং , আমি কি দেখছি জানো নিঝুম রাতের আকাশের নিচে একজন অপেক্ষারত মানুষ কে ! কোন নাম দিয়েছো ছবিটার ?
: আমার আঁকা ছবির আবার কি নাম !
: আমি তো জানি আর্টিস্ট রা তার শিল্পের একটা নাম ঠিকই দেন !
: আচ্ছা তুমিই দাও তাহলে একটা নাম !
: কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিয়াজ বলল, অপেক্ষা !
: অপেক্ষা ?
: হুম , রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে কারো জন্য অনেকটা আমার‌ই মত !
: নিঝুম হাসলো আচ্ছা যাও এটার নাম অপেক্ষা !
: এই ছবির কি কোন সিক্যুয়াল আঁকবে নিঝুম ?
: এই ছবির আবার সিক্যুয়াল আঁকতে হবে কেন ?
: আমি এই অপেক্ষার পর কি আছে সেটাই দেখতে চাই ‌।
আর তোমার হাতেই এই অপেক্ষার কি ভবিষ্যত ,এর পরিণাম জানতে চাই !
: তাহলে আরো অপেক্ষা করতে হয় যদি ?
: করলাম না হয় আরো একটু অপেক্ষা !
: তাহলে করো ! দেখি কি আছে এই অপেক্ষার পর !
: এখন খাবার অর্ডার করো নিঝুম !
খাবার অর্ডার করে নিঝুম নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল ‌,
: অনেক দিন পর দেখা হলো আমাদের!
: হুম তুমি ব্যস্ত মানুষ দয়া করে সময় দিলে আমাকে তবেই না দেখা হবে !
: সেরকম কিছু না নিয়াজ , কিছু ফ্যামিলি কমিটমেন্ট এর জন্য ব্যস্ত ছিলাম ! আর সত্যিই ছবি আঁকা নিয়ে থাকতে ভালো লাগে এখন !
: ভালো তো এরকম ক্রিয়েটিভ কিছুতে ব্যস্ত থাকা।
: আমি তো তাই থাকতে চাই কিন্তু আমার আশেপাশের লোকজন চায় আমি বন্দী হয়ে যাই !
: মানে ?
: বিয়ে করি সংসার করি !
: বিয়ে করা সংসার করা কি বন্দী হয়ে যাওয়া ?
: নয়তো কি ?
: আমার তো বিয়েকে মনে হয় কারো সঙ্গে জীবনকে একসঙ্গে ভাগ করে নেয়া, সুখ, দুঃখ, হাসি, আনন্দ, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ সব !
: বাহ্ খুব সুন্দর বললে তো নিয়াজ !
: কিন্তু তোমার তো ধারনা বিয়ে মানে বন্দী হয়ে যাওয়া !
: একটা মানুষের নিজস্বতা কে বিসর্জন দিয়ে পরাধীন হয়ে যাওয়া নয়কি নিয়াজ?
: নিঝুম পৃথিবীতে কমপ্লিট স্বাধীন এক মাত্র পাগল ! পাগলদের যা ইচ্ছা তাই করার স্বাধীনতা থাকে এছাড়া আর সবাই কে আশেপাশের মানুষের সঙ্গে অন্তত কিছুটা এডজাস্ট করতে হয়!
: তারমানে বিয়ে মানে এডজাস্টমেন্ট , নিয়াজ?
: অবশ্যই বিয়ে মানে এডজাস্টমেন্ট, কিছুটা মেনে নেয়া, কিছুটা মানিয়ে নেয়া, কিছুটা গড়ে নেয়া সব কিছু মিলিয়ে ই বিয়ে ! আমি তাই ভাবি!
: তো এডজাস্টমেন্ট টা করবে কে শুধু স্ত্রী ?
: কে বলল তোমাকে শুধু স্ত্রী, এডজাস্টমেন্ট দুজন‌ই করে ! একটা মানুষ কে নিজের ঘর নিজের বেড শেয়ার করতে দিয়ে প্রথম স্টেপ টা তো হাজব্যান্ড ই নেয় এডজাস্টমেন্ট করার !
: তাই না খুব বলেছো, হাসতে হাসতে নিঝুম বলল নিজের রুম নিজের বেড ছেলেরা খুশিতে নাচতে নাচতে ই শেয়ার করে ঠিক আছে এটাকে ছেলেদের এডজাস্টমেন্ট বলো না নিয়াজ !
: কি বলে আমার কাছে তো ভালো লাগায় ভরা একটা এডজাস্টমেন্ট এটা ! একটা মানুষের সঙ্গে নিজের আলমারি, নিজের আয়না নিজের চায়ের কাপ টা পর্যন্ত শেয়ার করাতেও একটা আনন্দ থাকে ।
চায়ের কাপ বলার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুমের মনে পরে গেল মাহি আর রুবার এক চায়ের কাপ শেয়ার করার কথা টা। মাহি রুবার চা শেয়ার করে , আচ্ছা কেউ কি তার সঙ্গেও এভাবে শেয়ার করবে ? ভাবতেই একটা অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে মনে !

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে নিয়াজ বলল,
: চলো নিঝুম হাটি কিছুক্ষণ !
: এই রাস্তায় ?
: হুম , চলো পাশের দোকান থেকে চা খাই ! তোমার গাড়ি চলে গেছে না ?
: হুম তুমি নামিয়ে দিবে বলেই ছেড়ে দিয়েছিলাম আচ্ছা চলো চা খাই আগে !
নিয়াজ চা খেতে খেতে বলল, নিঝুম তুমি কিন্তু অবশ্যই এই ছবির পরবর্তী পার্ট টা একে দিবে আমাকে । দুটো এক সঙ্গে আমার ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো থাকবে!
: আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি দেখি কি আঁকতে পারি !
: বুঝে শুনে আঁকবে নিঝুম আমার নিজের জীবন, ভবিষ্যৎ সব থাকবে সেই ক্যানভাসে নিয়াজ হাসছে।
নিয়াজের হাসিটা দেখে নিঝুমের এত ভালো লাগলো।

ঐ রাতের পর প্রায় দেড় মাস পর নিঝুম আবার নিয়াজের জন্য একটা ছবি তৈরি করেছে ! সেই ছবি টা দেয়ার জন্য নিঝুম নিয়াজ কে নিজের বাসায় ইনভাইট করেছে।
নিজের হাতে রান্না করেছিল সেদিন নিঝুম । রিয়া আর সাজ্জাদ ও ডিনার করতে এলো বাসায়।
ডিনারের পর নিয়াজ আর সাজ্জাদ যখন গল্প করছিল নিঝুম কফি দিয়ে দুজনকে বলল,
: নিয়াজ চলো ছাদে যাই , সাজ্জাদ ভাই যাবেন ছাদে ?
: না তোমরা যাও আমি একটু শ্বশুরের সঙ্গে টাইম‌ পাস করে আসি উনার রুমে!
নিয়াজ ছাদে যাওয়ার দুই মিনিটের ভেতর নিঝুম পেইন্টিং আর কফি হাতে নিয়ে হাজির হলো!
এই দুই মিনিটের মধ্যে নিয়াজ খেয়াল করলো নিঝুম চুল ঠিক করেছে, চোখে কাজল দিয়েছে কি সুন্দর একটা মিষ্টি পারফিউম এর ঘ্রাণ আসছে ওর কাছ থেকে। লাল সেলোয়ার কামিজে খুব সুন্দর লাগছে নিঝুম কে।
: তোমার কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই না , আমি আবার নিয়ে এসেছি কফি!
: নিঝুমের হাতে পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়ে নিয়াজ বলল,
: এটা কি সেই পেইন্টিং নিঝুম যেটাতে আমার ভবিষ্যৎ আছে ?
: কি জানি দেখো খুলে !
: আমি তো নার্ভাস ফিল করছি নিঝুম , তাকিয়ে দেখো আমার গা হাত পা কাঁপছে বলে নিয়াজ হাসছে!
: এতটা ও নার্ভাস হ‌ওয়ার মত কিছু নেই !
: বলছো তো নিঝুম !
: হুম খুলে দেখো!
নিয়াজ পেইন্টিং এর উপর থেকে কাগজটা সরিয়ে একবার পেইন্টিং এর দিকে একবার নিঝুমের দিকে তাকালো!
: আমি বুঝতে পারছি না নিঝুম!
: কি বলো , এতটা না বোঝার মত কিছু তো আকিনি ! আগের ছবিতে তোমাকে এঁকেছিলাম রাতের আকাশের তারা দেখছো !
: হুম অপেক্ষারত আমি কিন্তু একা !
: এবার কি দেখছো , ছবিতে যা দেখছো তাই !
: দেখছি একটা লাল জমা পড়া মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে !
: হুম ঠিক অবজারভেশন !
: ছবির ছেলে টা যদি আমি হ‌ই তাহলে পাশের মেয়েটা কে নিঝুম?
: যে কেউ হতে পারে , তুমি যাকে পাশে নিয়ে আকাশ দেখতে চাও !
: নিঝুম আমি যাকে নিয়ে আকাশ দেখতে চাই বললেই কি সে আসবে ?
: বলে দেখো আসতেও পারে !
: আমি তো দেখছি লাল ড্রেস পড়ে তুমি এই মুহূর্তে আমার পাশে আছো তাহলে কি বলতে পারি ছবিটার মতো তুমি সারাজীবন আমার পাশে থেকে আকাশ দেখবে ?
নিঝুম চোখ তুলে তাকালো নিয়াজের দিকে ,
: আমি দেখতে চাই নিয়াজ !
: সত্যি বলছো তো নিঝুম ?
নিঝুম হেসে দিল সত্যি বলছি ! তুমি বললে না একদিন, বিয়ে একটা সুন্দর এডজাস্টমেন্ট এক সঙ্গে জীবন ভাগ করে নেয়া, সুখ, দুঃখ ভাগ করে নেয়া, এক সঙ্গে আলমারি ভাগ করে নেয়া, এক মগের কফি ভাগ করে নেয়া! আমার মনে হচ্ছে হ্যাঁ সময় এসেছে, এখন এই সব কিছু কারো সঙ্গে ভাগ করে নেই !
: আমার বিশ্বাস হচ্ছে না নিঝুম!
: কেন বিশ্বাস না হ‌ওয়ার কি হলো ?
নিয়াজ নিঝুমের হাতটা ধরলো তুমি কিন্তু দুটো কফির মগ এনেছো কিভাবে বিশ্বাস করি এক মগের কফি ভাগ করে নিতে চাইতো?
: নিঝুম একটা মগের কফি ঢেলে ফেলে দিল , এখন হবে তো ?
: খুব হবে !
চলো তাহলে কফি দিয়েই জীবনের শেয়ারিং এর গল্প টা শুরু করি নিঝুম!
: চলো !
ঐ রাতের দুই সপ্তাহ পর এক ছুটির দিনের সন্ধ্যায় নিয়াজ তার বাবা মা কে নিয়ে নিঝুম দের বাসায় আনুষ্ঠানিক ভাবেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো!

সাফিয়া বেগম সন্ধ্যা থেকে একা বসে আছেন! হঠাৎ হঠাৎ একা তার এত অসহ্য লাগে ! বাসাটা এত ফাঁকা । মাহি আর রুবা বাহিরে গেছে । মাহির বাবা নিজের স্টাডি রুমে গল্প করছে কোন এক ক্লায়েন্ট এসেছে !
ইদানিং তার মনে হয় আরো ছেলে মেয়ে থাকলে ভালো হতো ! শিহাব চলে গেছে এখন শুধু এক মাহি । মাহি রুবা যদি বাসায় না থাকে তাহলে এই বাসাটা এত বেশি খা খা করে বুকে এসে লাগে নিরবতা টা।
রুবা আর মাহিকে বলবেন একদিন, তোমাদের অনেক গুলি বাচ্চা নিতে হবে , এই বাসাটা ভরে আছে আমি দেখব!
নিজের ভাবনায় নিজেই হাসছেন তিনি ! আজকালকার দিনে সবাই একটা বাচ্চা নিয়েই হিমসিম খাচ্ছে সেখানে অনেক বাচ্চা তো সামলাতে পারা কঠিন।
মনে মনে ঠিক করলেন মাহির বাচ্চাদের উনি নিজের হাতে যত্ন করে বড় করবেন! যে যত্ন তিনি মাহিকে করতে পারেন নি ,সেই যত্ন তিনি মাহির বাচ্চাদের করবেন!
হঠাৎ লিভিং রুমে রুবা আর মাহির গলা শুনে অবাক হলেন , এসে গেল ওরা এত তাড়াতাড়ি!
তিনি এগিয়ে গেলেন ওদিকে!
রুবা গাল ফুলিয়ে বসে আছে !
রুমে ঢুকে সাফিয়া বেগম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ,
: কি হয়েছে মাহি রুবার মুড অফ কেন ?
: ওকে জিজ্ঞাসা করো মা ?
: রুবা কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেন, মাহি রাগারাগী করেছে?
: মা আমি ওর সঙ্গে কোন রাগারাগী করি নাই শুধু শুধু গাল ফুলিয়ে রেখেছে রুবা !
: মা আপনার ছেলের সঙ্গে স্যান্ডেল কিনতে ঢুকেছি এক দোকানে ,তো স্যান্ডেলের দোকানে কি হয় সেলস ম্যান স্যান্ডেল পড়িয়ে দেয় !
: হুম !
: সেলস ম্যান কেন আমার পায়ে হাত দিয়ে স্যান্ডেল পড়াল এতে ই সে সেলস ম্যান এর সঙ্গে রাগারাগী শুরু করলো!
: রুবা ঐ ফাজিল লোক স্যান্ডেল পড়ালে শুধু কিছু বলতাম না ও তোমার পায়ে টাচ করে রাখছিল অযথাই !
: মা আপনি ই বলেন একটা পর একটা স্যান্ডেল পড়াচ্ছিল একটু হাত তো পায়ে লেগেছে। আমার পা আমি জানি না জাস্ট হাত লেগেছে কিন্তু না আপনার ছেলে চিল্লাচিল্লি করে দোকান মাথায় তুলেছে আমি টেনে আনছি দোকান থেকে !
: মা এদের তুমি চিনো না এরা কেমন খারাপ থাকে !
: ঠিক আছে যাও এখন থেকে স্যান্ডেল কেনার সময় তুমিই আমার পায়ে পড়িয়ে দিও কেমন!
: ইয়েস অফকোর্স রুবা তাই করব !
: দেখেন মা আপনার ছেলে কত পজেসিভ মাইন্ডেড ?
: ইয়েস আই এম পজেসিভ এবাউট ইউ কোন ডাউট আছে বলেই মাহির খেয়াল হলো মা হাসছে !
: রুবা উঠে রুমে চলে এলো !
সাফিয়া বেগম হেসে বললেন,
: রুবা খুব রাগ হয়েছে মাহি !
: অযথাই মা ও রাগ করছে, বলো তো ?
: না তুমি লোকজনের সামনে সীন করেছো সে এমবেরেস ফীল করেছে , আর তুমি রাগারাগী করলে কতটা আউট অব কন্ট্রোল হ‌ও আমি জানি !
: মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল মা ঐ লোকের কান্ড দেখে !
: এখন দেখো কি করবে রুমে মন‌ খারাপ করে বসে আছে হয়তো!
: যাই এখন মান ভাঙ্গাই কি আর করব !
: যাও , যাওয়ার সময় খাওয়ার টেবিলের উপর ডাবের পানি আছে নিয়ে যাও খেতে চেয়েছিল !
: ডাবের পানি ! ডাবের পানি পছন্দ করে , জানি না তো?
: আজ খেতে চেয়েছিল বাসার পিছনের গাছ গুলো দেখে !লোক এনে পাড়ানো হয়েছে ওর জন্য ,সঙ্গে নিয়ে যাও খুশি হবে রাগ তাড়াতাড়ি ভাঙবে!
: ঠিক আছে নিয়ে যাচ্ছি !

মাহি ডাবের পানি সঙ্গে নিয়ে রুমে ঢুকলো ! রুবা সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে !
মাহি গ্লাস দুটো টেবিলের উপর রাখলো !
: রুবা তুমি নাকি ডাবের পানি খেতে চেয়েছিলে এই নাও !
রুবা কথা বলছে না চুপ করে আছে !
: সরি রুবা সরি বললাম তো তাকাও !
: তুমি এভাবে সীন ক্রিয়েট কেন করলে ?
: মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল !
: মাথায় এত রক্ত উঠে কেন , ট্রিটমেন্ট করাও !
মাহি রুবার পায়ের কাছে এসে বসলো ,
: তোমার পা ধরার সঙ্গে সঙ্গে ই রাগ উঠে গিয়েছিল বুঝলে ! তোমার পা গুলো আমার অনেক পছন্দ তুমি জানো না?
ঐ ব্যাটা ধরতেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল ,সোনা সরি !
মাহি রুবার পায়ে কিস করলো !
: এই কি করো ছাড়ো ঢং করতে হবে না এখন !
: ঢং না সত্যি বলছি ! রাগ ভেঙেছে কিনা বলো?
না হলে আমি পায়ে কিস করতেই থাকব !
: আচ্ছা আচ্ছা রাগ ভাঙছে !
: সত্যি ?
: হুম সত্যি !
: তাহলে উঠো তোমার জন্য ডাব গাছে উঠে ডাব পেড়ে নিয়ে আসছি খাও!
: তুমি গাছে উঠেছো , চাপাবাজি শুধু !
: ব‌উ এর সঙ্গে চাপাবাজি করাই যায় একটু!
: তাই !
: হুম !

ডিনার শেষ করে ঐদিন রাতে যখন মাহি আর রুবা রুমের দিকে আসছে সাফিয়া বেগম পিছনে ঢেকে বললেন,
: মাহি একটা দারুন খবর আছে শুনে যাও !
মাহি মায়ের কাছে এসে দাঁড়ালো , পিছনে রুবা।
: কি খবর মা ?
: তোমার খালামনি মাত্র ফোন দিয়েছিল নিঝুমের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে !
: ও !
রুবা উচ্ছাস প্রকাশ করবে কিনা বুঝতে পারছে না মাহি কি ভাবে ! শুধু বলল ছেলে কে মা ?
: মাহি আর নিঝুমের বন্ধু নিয়াজ ! আমি রিয়ার বিয়ের সময় দুজনকে দেখেই ভেবেছিলাম, দুজনকে ভালোই লাগছিলো ! মাহি ছেলে কেমন নিয়াজ?
: ভালো ছেলে মা !
আমি রুমে যাচ্ছি মা ,রুবা তুমি আসার সময় পানির একটা বোতল নিয়ে এসো!
রুবার মনে হলো , মাহির গলাটা কেমন ঠান্ডা শোনাচ্ছে !
রুবা ইচ্ছে করেই শ্বাশুড়ি র সঙ্গে একটু বসলো , মাহির একটু একা থাকার কি প্রয়োজন না এখন!

মাহি রুমে গিয়ে নিয়াজ কে কনগ্রাচুলেশন জানিয়ে মেসেজ দিল !
নিয়াজ ফোন দিল সঙ্গে সঙ্গে ,
: দোস্ত খবর টা শুনলাম অনেক ভালো লাগছে!
: থেঙ্কস মাহি !
: অনেক ভালো থাক দুজন দোয়া করি!
: মাহি স্প্যাশল থেঙ্কস তোকে !
: কেন আমি কি করলাম , সব ভাগ্য তোরা দুজন এক জনের ভাগ্যে আরেকজন ছিলি নিয়াজ!
: তারপরও বলব তুই নিঝুম এর সঙ্গে তোর বিয়ের পর সামান্য একটু পশ্রয় দিতি যদি তাহলেই নিঝুম ঐ খান থেকে কখনো ই বের হতে পারতো না !
: আমি দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকার মানুষ না নিয়াজ !
: সে জন্যই তো তোকে থেঙ্কস বললাম বন্ধু !
: ভালো থাকিস তোর হবু বউ কে উইস করি ! এখন তো করাই যায় !
: শিওর পরে কথা হবে , বাই !
মাহি নিয়াজের সঙ্গে ফোন রেখে নিঝুম কে মেসেজ দিল ! কনগ্রাচুলেশন !
পাঁচ মিনিট পর নিঝুম ফোন দিল,
: কনগ্রাচুলেশন !
: থেঙ্কস !
: অনেক শুভকামনা !
: জানি নিঝুম হাসলো তোর ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম !
: তাই ?
: হুম আম্মু যখন খালাম্মা র সঙ্গে কথা বলছিল তখন থেকেই অপেক্ষা করছিলাম । ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম মন বলছিল ফোন দিবি তুই । মেসেজ দেখে আমিই দিলাম ফোন!
: আমি আগে নিয়াজ কে উইস করলাম ! খুব হ্যাপি সে !
: হ্যাঁ দুই সপ্তাহ থেকেই খুব এক্সাইটেড ও !
: ভালো লাগলো ওর সঙ্গে কথা বলে !
: মাহি দেখিস আমি আর নিয়াজ তোর আর রুবার মত হ্যাপি হব !
: ইনশাআল্লাহ অবশ্যই হবি । নিয়াজ খুব ভালো ছেলে !
: আর আমি মাহি?
: তুই ও ! আমি আমার জীবনে সব সম্পর্ক ই ভালো পেয়েছি নিঝুম কথাটা আগেও বলেছি তোকে ! প্রেমিকা হিসেবে তুই ভালো ছিলি!
: না রে তোর ভালোবাসা মনে হয় অতি সহজেই পেয়ে গিয়েছিলাম তাই তুই যে কেয়ার টা চাইতি আমার কাছ থেকে কিংবা কেয়ার করতি আমাকে, আমি সেটা হ্যান্ডেল করতে পারি নাই!
আমি তোর ভালোবাসা র উন্মাদনা টা তে পৌঁছাতে পারিনি যেটা রুবা একটা টান্সফর্ম রিলেশন এ এসেও পেরেছে!
: আমি বললাম না সব রিলেশন এ আমি হ্যাপি রুবাও আমার তাই ! তুই অনেক অনেক ভালো থাক আমার আর রুবার চেয়েও বেশি সুখী হ আমি মনে প্রাণে চাই !
: থেঙ্কস মাহি !
: কবে কি হচ্ছে প্রোগ্রাম?
: নিয়াজ এর যাওয়ার আগেই হয়তো আকদ হবে তারপর সুবিধা মত সময়ে এ রিসিপশন !
: ওকে ভালো থাকিস !
: মাহি আমি ঠিক ডিসিশন নিয়েছি তো ?
: আমার তো মনে হচ্ছে অবশ্যই !
: বাই !
: হুম!

রুবা পানির বোতল নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকার আগেই শুনছিল মাহি কথা বলছে ফোনে !
তার বুঝতে বাকি নেই ফোন টা নিঝুম আপুর সঙ্গে ই ছিল !
ইচ্ছে করেই সে আর রুমে ঢুকে নাই ! করিডোরে রাখা চেয়ারে বসে ছিল সে।
মাহি আর নিঝুম আপুকে ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করলো না তার ! এমনিতেই সে ওদের দুজনের জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে।
মাহি তাকে যত‌ই ভালোবাসুক আজ হয়তো নিঝুম আপুর বিয়ের কথা শুনে একটু অন্যরকম লেগেছে মনে ,কিছু না হলেও ফেলা আসা দিন গুলোর কথা ই তাদের মনে পড়ছে হয়তো।
এই ঘরেই কত গল্প করতো ওরা দুজন! ছাদে গিয়ে গল্প করতো আজ তারা ভিন্ন পথের পথিক ! জীবনের লিখা যিনি লিখছেন তিনিই একমাত্র জানেন , কার গন্তব্য কোথায় ?
রুবা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সোয়া বারটা এখন রুমে ঢুকে যাই মা বাবা কেউ ওকে এখানে দেখলে চিন্তিত হয়ে পড়বে!
রুমে ঢুকে দেখে মাহি ওয়াস রুমে!
মোবাইল বেড সাইড টেবিলে রাখা। রুবা পানির বোতল রেখে বিছানা ঠিক করলো ঘুমের প্রস্তুতি হিসেবে।
নিজের ড্রেস চেঞ্জ করলো ! এর ও কিছুক্ষণ পর মাহি গোসল করে ওয়াস রুম থেকে বের হলো!
: গোসল করলাম বুঝলে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিল!
রুবা মনে মনে বলল , এটা শরীরের অস্বস্তি না মাহি এটা মনের অস্বস্তি ! এবং ন্যাচারাল !

রুবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মাহি বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল টিপছে!
রুবাকে দেখে হাসলো শুধু!
: ঘুম পাচ্ছে তোমার ?
: তোমার ঘুম পাচ্ছে না রুবা?
: প্রায় একটা বাজে তোমার কালকে সকালে উঠতে হবে না !
: হুম আলো নিভিয়ে দিব ?
: দাও!
বিছানায় শুয়ে রুবা বলল, আচ্ছা নিঝুম আপু আর নিয়াজ ভাই কে নিয়ে চলো একদিন ডিনার করি কোথাও কি বলো?
: তোমার ইচ্ছা রুবা , বলতে পারো !
: ঠিক আছে !
: তুমি কথা বলে নিঝুমের সঙ্গে ডেট ফিক্স করে নিও আমি পারব না এসব !
: ঠিক আছে !
: তাহলে ঘুমাই গুড নাইট বলে মাহি রুবার কপালে চুমু দিল!
রুবা চুপচাপ শুয়ে রইল কিছুক্ষণ! যদিও তার ইচ্ছে করছিল মাহির সঙ্গে গল্প করে মাহির মন হালকা করে দিতে!
কিছুক্ষণ পর সে মাহিকে খুব আবেগ নিয়ে জড়িয়ে ধরলো! মাহির বুকে মুখ ঘসে দিল পায়ে পা।
অন্য কোন রাতে হলে এতটুকু তেই অনেক কিছু শুরু হয়ে যেত আজ মাহি শুধু তাকে বুকেই টেনে নিল ! তারপর শুধু বলল, ঘুমাই রুবা !
রুবা জানে আজ মাহির একটু স্পেস দরকার সে সরে যেতে নিল পাশে ।
মাহি বুকের কাছে আটকে রাখলো ।
:বুকের কাছে থাকো রুবা প্লিজ!
রুবা চুপচাপ মাহির বুকের সঙ্গে জড়িয়ে র‌ইলো। রুবা ভাবছে প্রথম প্রেম , ভালোবাসা মনে হয় এমন‌ই থাকে সবার জীবনে! জীবন যত‌ই ভাসিয়ে নিয়ে যাক যেখানে খুশি সেখানে প্রথম প্রেম পাথর চাপা বিবর্ণ ঘাসের মতো মনের কোথাও পড়ে থাকে!
কখনও কখনও অলস দুপুরে, কিংবা নির্জন রাতে কিংবা কোন ঘটনার দোলাচলে মনে পড়লে বুকের ভেতর কাঁপে যেমন আজ হয়তো মাহির ভেতরে কাঁপছে।
কোন কোন দিন শিহাবের জন্যে ও তার বুকে কাঁপে !
রুবা আস্তে করে নিজের চোখে র পানি টা মুছলো! তারপর মাহির ঠোঁটে চুমু খেল !
ততক্ষণে মাহি ঘুমিয়ে গেছে !
সে মাহিকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে রইল!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here