এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ৪

0
570

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৪

সবাই বসে হাসি মজা করতে ছিল এমন সময় কে এসে বললো যেনো ছেলের বাড়ির লোক এসেছে হলুদ নিয়ে। অনু আর নুসু সেদিন চলে গেলো হলুদ আর কি নিয়ে আসছে তাই দেখার জন্য। তখনই কেউ বলে উঠলো ওয়াও ভাবি তোমাকে তো একদম সেই লাগছে একদম হলুদ পরী।মানুষ টা আর কেউ না জাকিয়াই বলেছে কথাটা।।ভাই যদি এই সময় তোমায় দেখতো না নিশ্চিত এখনই তোমায় তুলে নিয়ে যেতো।আমি ওদের কথা শুনে লজ্জাই আরো লাল হয়ে গেলাম। তখনই তাসু আপু(তাসনিম আপুকে সবাই তাসু বলে) বলে উঠলো দেখতে হবে না ভাবিটা কার সুন্দর তো হতেই হবেই। এমন সময় রনিত ভাইয়া এসে হাজির আমাকে বলে কিরে বুড়ি কেমন আছিস। ভাইয়া আমাকে সব সময় বুড়ি বলে খেপাই 😬। আমি বললাম ভালো তখনই রনিত ভাইয়ার চোখ যাই তাসু আপুর দিকে আর এক পলক ভাবে তাকাই থাকে।তাসু আপুর ও সেই একই অবস্থা। দুইজন যেনো কোথাই হারাই গেছে।এমন সময় একটা ছেলে পিছনে থেকে বলে উঠলো এটাই আমাদের ভাবি তাহলে। একদম পরী। আমার তো ইচ্ছে করছে ভাই এর আগে আমি বিয়ে করে ফেলি।সবাই ওর কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে আছে।আর আমি বোকার মতো দেখছি তাকে।কে এই ছেলে।তখনি জাকিয়া বলে উঠলো ভাইয়া তুই ও না৷ তনয় ভাইয়া যদি থাকতো না তাহলে দেখতি তোর কি অবস্থা করে দিত।তাই বলে হাসতে লাগলো। তখন ছেলেটা এসে বললো হাই আমি অনিক তোমার অনলি ওয়ান দেবর।

( জাকিয়ার ভাই অনিক।জাকিয়া আর অনিক দুই ভাই বোন। মানে আমার চাচা শ্বশুর আব্রাম চৌধুরীর ছেলে মেয়ে এরা। জাকিয়া ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আর অনিক অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। আর তাসু আপু অনার্স ১ম বর্ষে।)

জাকিয়া বলে উঠলো ভাবি এটা আমার ভাইয়া। আমি একটু হেসে সালাম দিলাম। এইদিকে রনিত ভাইয়া তো তাসু আপুকে দেখতেই আছে।তাসু আপুও হলুদ শাড়ি ফুলের গহনাতে অনেক সুন্দর লাগছে।জাকিয়াও সেই সাজ।সবাইকে সুন্দর লাগছে দেখতে। তখনি রহিত ভাইয়া এসে রনিত ভাইয়ার মুখের সামনে তুরি বাজার ভাইয়া সাথে সাথে চোখ নামাই দেয়।আর তাসু আপু একটু হাসি দেয়।
________________

আমাকে একে একে সবাই হলুদ লাগাতে শুরু করলো সাথে সবাই হাসি আনন্দ তে মেতে উঠলো। এই দিকে অনিকের আবার নাবুকে দেখে তার হার্টবিট ভালবাসার জানান দিচ্ছে নাবুও আড়ে আড়ে অনিক ভাইয়াকে দেখছে। এই ভাবে হাসি মজা দিয়ে হলুদের পর্ব শেষ করে তাসু আপুরা চলে গেলেন। এইদিকে সবাই অনেক প্লান করেছে যে নাচ গান করবে কিন্তু আমার বাবা তো এটা মানতে নারাজ। তিনি বলেন ইসলামের বাইরে কিছু হবে না।অনেক বুঝানোর পর সবাই বাবাকে রাজি করাতে পারে তবে তার কথা বেশিক্ষন কিছু হবে না।সবাই এতেই যেনো অনেক খুশি
তারপর নাবু আর অনু চলে গেলো নাচ করার জন্য। ভালোই নাচতে পারে তারা।তারপর রনিত ভাইয়া একটা গান বলেছে। নুসু আর নাহিদ মিলে অনেক মজার মজার জোকস বলে সবাইকে হাসিয়েছে।এইভাবেই শেষ হয় হলুদ অনুষ্ঠান।

আজ বিয়ের দিন। চারিদিকে হৈচৈ হট্টগোল। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। আমি আমার ঘরে বসে আছি। আমার সাথে নাবু,নুসু, অনু,আমার বন্ধু মেহরুবা ও আছে।ছোট কাকি এসে আমাদের খাবার জন্য বলে গেলেন সবাই চলে গেলো আমি বসে আছি কাকি বললেন আমি তোর খাবার ঘরে নিয়ে আসি।আমি কাকিকে ধরে কেদে দিলাম।কাকির চোখেও পানি।তাও আমাকে শান্ত দেওয়ার চেষ্টা করছে।তারপর বলেলন আরে আমরা তো যাব মাঝে মাঝে আবার তুই আসবি আমাদের ছেড়ে কি একবারে চলে যাচ্ছিস না।।কাদে মা জানিস তো তোর কান্না আমার ভালো লাগে না।আমি ও চোখ মুছে কাকির চোখ মুছে দিলাম তারপর কাকি বললো থাক আমি খাবার নিয়ে আসি আমি মাথা ঝাকালাম।সব কিছু শেষ করে এখন আমাকে সাজাতে বসেছে সবাই মিলে।নিজেকে কেমন পুতুল পুতুল লাগছে।একটু নড়াচড়া করতে পারছি না।।একটু নড়ে উঠতেই নাবু আর মেহু ধমক দিয়ে উঠছে আর নুসু অনু হাবিবা হাফসা মিটিমিটি হাসছে।

আমাকে সাজিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছে তারপর সায়ন কোথায় থেকে ছুটে এসে বললো আপু তোমার বর এসেছে। আমার বুকের মাঝে যেনো ধক করে উঠলো কথা টা শুনে সাথে একরাশ ভয়।আর কিছুক্ষন আছি আমি এই বাড়িতে ভাবতেই চোখে পানি এসে গেলো। বর এসেছে শুনে ঘরেই সবাই ছুটে গেলো সেদিন। কারণ সবাই মিলে গেট ধরে টাকা আদায় করবে বরের পক্ষ থেকে তাই।এর প্রধান উৎস অবশ্য রহিত ভাইয়া। বর পক্ষ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর নাবু,নুসু,অনু,নাহিদ,হাবিবা,মেহু (মেহরুবা) হাবিবা,হাফসা অপর পাশে আছে।তাদের দাবি ২০ হাজার টাকা দিয়ে তবেই ভেতরে আসতে পারবে। ওই পাশে জাকিয়া,তাসু আপু,অনিক ভাইয়া আর তনয়ের বন্ধুরা সবাই আছে তারা এতো টাকা দিবে না বলে জেদ ধরে আছে আর বেচারা তনয় চেয়ে চেয়ে শুধু এদের কান্ড দেখছে।

তারপর মিটমাট হয় যে তারা ২০ হাজারএ দিবে তবে অনিক বলে যে নাবুকে আজ সারা দিন তার দেখাশুনা মানে যতখন থাকবে সকল প্রয়োজনীয় কাজ নাবুকেই করতে হবে সবাই প্রথমে না না করলেও পরে রাজি হয়ে যাই।বেচারা নাবু তো গিয়া ফাইসা 😛।আর একদিকে তো একজনের চোখ শুধু একজনকে খুজে চলে তবে তার দেখা মিলে না।তাসু আপু এদিক সেদিক তাকিয়ে রনিত ভাইয়া কে খুজে চলেছে কিন্তু ভাইয়া তো সেই কাজে ব্যস্ত। খাওয়ার দিক টা দেখছে সে।

সব কিছু ঠিকঠাক ভেবে মিটে গিয়ে বিয়ে টা শেষ হয়ে যায়।তবে অনিক তার বন্ধুরা মিলে অনেক জ্বালিয়েছে নাবুদের৷ নাবুরাও কম যাইনা। বরসহ সবার জুতা লুকাই রেখে খুব হয়রানি করেছে তাদের। এর জন্য অবশ্য বড়দের বকাও শুনতে হয়েছে বেচারিদের।এখন বিদায়ের পালা তাই যেনো থমথমে পরিবেশ…………….

চলবে….

(ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।রিচেক হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here