#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৯
সময় যেনো খুব দ্রুত বয়ে চলেছে তার নিয়মে।আরো ২ মাস পার হয়ে গেছে দেখতে দেখতে।এই ২ মাস নিয়ম করে কোচিং যাওয়া সজিয়ার সাথে আড্ডা আর বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়ে গেছে আমাদের।সাথে আরো বন্ধুও হয়েছে।।আমাদের ক্লাসে সবাই অনেক ভালো প্রায়। সহজে সবাই প্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই ২ মাস তনয় নিয়ম করে আমাকে পড়তে বসিয়েছে।কোনো রকম ফাকি দেওয়ার সূযোগ রাখেনি।আসলে আমি বছরের মাঝে ভর্তি হয়েছি তাই সামনে পরিক্ষা তাই অনেক চিন্তা আর বেশি পড়ার চাপ।মানুষটা আমাকে নিয়ে কত ভাবে অনেক কেয়ার ও করে।সত্যি কেউ দেখলে আমাদের বলবে না আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রী কোনো সম্পর্ক নেই।আমরা শুধু বন্ধু একে অপরের কাছে।তবে আমি আস্তে আস্তে ওই মানুষটা কে অনেক ভালবেসে ফেলেছি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো তার কাছে শুধু দায়িত্ব আর বন্ধু। এর বেশি আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই তার কাছে।জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে।কখনো তার ভালবাসা পাবো কিনা।এই সকল কথা ভাবতে ছিলাম।আর রেডি হচ্ছিলাম।
আপনাদের তো বলাই হয়নি। আমরা আজ আমাদের গ্রামে যাচ্ছি কারণ টা হলো আমার বন্ধু মেহরুবার কথা বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয় তার জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই পাত্র সহ আমরা আজ তাকে দেখতে যাচ্ছি। দেখতে যাও ফর্মালিটি মাত্র মেয়ে তো আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছে পাত্র। পাত্র আর কেউ নয় তনয়ের বন্ধু অন্তর ভাইয়া। আমাদের বিয়ের রিসিপশনে যে আমাকে বোনের আসনে বসিয়ে ছিল।
অন্তর ভাইয়া বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে তার কোন ভাই বোন নেই। সে পড়াশোনা শেষ করে তনয়ের মতো বাবার অফিস সামলাচ্ছে। আমাদের বিয়ের দিন অন্তর ভাইয়া মেহু কে দেখে আর পছন্দ হয়ে যাই।তারপর তনয়কে বলে মেহুর কথা। প্রেম করার যেহেতু আর বয়স নেই। বাড়ি থেকে ও বিয়ের চাপ দেই প্রতিনিয়ত তাই ভাইয়া বাড়িতে মেহুর কথা জানাই।তাই আজ আমরা সবাই মিলে যাচ্ছি মেহুর বাড়ি বিয়ের কথা বলতে।
এমন সময় তনয়ে বলে উঠলো আর কতখন লাগবে তোমার। কিছু তো করছো না তাও আয়নার সামনে এই ভাবে দাড়িয়ে কেনো।আমি তার কথাই লজ্জা পেলাম একটু সত্যি তো আমার তো হয়ে গেছে অনেক আগে তাও আমি আয়নার সামনে বসে বসে নানান কথা চিন্তা করতে ছিলাম।তারপর আমরা বের হয়ে গেলাম মেহুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
____________________
আমরা সবাই এখন আমাদের গ্রামে মেহুর বাড়ি বসে আছি।আমি অবশ্য এসেই মেহুর ঘরে চলে গিয়েছি।তাকে রেডি করাচ্ছি। মেহু এবার অনার্স প্রথম বর্ষে। আমি তার সাথেই ছিলাম।কিন্তু আমার বাবা তো টেন পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়তে দেয়নি তাই আমার আর পড়া হয়ে উঠেনি। আমার সাথে জাকিয়া ও আসছে।সে অনেক বকবক করছে আর আমরা শুনছি আর হাসছি।এর মাঝে ডাক এলো বসার ঘর থেকে মেহুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তারপর আমরা তাকে নিয়ে বসার ঘরে গেলাম।অন্তর ভাইয়া তো মেহুকে দেখে হা করে তাকাই আছে। আসলে মনের মানুষটা যেমন এ হোক না কেনো।প্রিয় মানুষের কাছে সব সময় সুন্দরী লাগে। অন্তর ভাইয়ার হা করে তাকাই থাকা দেখে তনয় কনুই দিয়ে একটা গুতা দিল অন্তর ভাইয়ার কোমরে।সাথে সাথে অন্তর ভাইয়া আহ করে উঠলো। এই দিকে আমি জাকিয়া আর মেহু দেখে মিটিমিটি হাসছি।
সব কিছু শেষে বিয়ের দিন ঠিক করা হলো আজ থেকে ১৫ দিন পর বিয়ে হবে।মেহুকে সবার খুব পছন্দ হয়েছে। অন্তর ভাইয়া রা সাথে করে আংটি ও নিয়ে এসেছিল সেটা মেহুকে পড়িয়ে দিল। অন্তর ভাইয়ার মা একজোড়া সোনার বালা পড়িয়ে দিলেন।এবার আমাদের বিদায়ের পালা।
আমার খুব ভালো লাগছে ২ বন্ধু আর যাই হোক এক শহরে থাকতে পারবো এই ভেবে।আমরা আমাদের বাড়ি মানে বাবার বাড়ি আসলাম অন্তর ভাইয়াদের ও আসতে বলেছিলাম কিন্তু তাদের নাকি কি কাজ আছে তাই চলে গেছে তারা। আমি তনয় আর জাকিয়া আমাদের বাড়ি এসেছি। আমরা সকালে বের হয়ে ছিলাম।এখন বিকেল আমরা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি।আমাদের দেখে নুসু,অনু,নাবু,নাহিদ,সায়ন, তন্নি খুব খুশি হয়েছিল।সবাই অনন্দে নেচে উঠেছিল।। আমি ছোট কাকির সাথে বসে আছি। সবাই অনেক মজা করছে।তার সাথে যোগ দিয়েছে তনয়। তাকেও মনে হচ্ছে ওদের সাথে বাচ্চা হিয়ে গেছে।তখনি ছোট কাকি বলে উঠলো কেমন আছিস তানু। তুই ভালো আছিস তো।আমি হেসে বললাম হ্যাঁ কাকি আমি অনেক ভালো আছি। আমার আবার কি হবে কত ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি বলো।কাকি আমার দিকে কিছুখন তাকাই থেকে আবার বলল সত্যি বলছিস তুই।আমি জানি কাকি কিছু বুঝতে পেরেছে তাই এমন বলছে আসলে এই একটা মানুষ জানি না কিভাবে বুঝে যাই আমাকে।
আমি কাকির হাতটা আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম আমি ভালো আছি কাকি।চিন্তা করো না।সবাই আমাকে খুব ভালবাসে আর খুব যত্ন করে।কাকি তখনি বললেন আর তনয় সে তোকে ভালবাসে। আমার মুখটা মলিন হয়ে গেলো এই কথা শুনে তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম হ্যাঁ হ্যাঁ। সে তো আমাকে চোখে হারায়।আমার অনেক যত্ন করে আমার সব দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেখো না আমার পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলেন কেমন। ভালো না বাসলে এমন করে কেউ বলো।কাকি বললেন সত্যি তুই ভালো থাকিস মা এই দোয়া করি।তোর মনের সকল নেক আশা পুরন হয় যেনো। তবে আমি অনেক খুশি তো কত সপ্ন ছিল পড়াশোনা করার শেষ পর্যন্ত সেটাও হচ্ছে।এর থেকে আনন্দের আর কি আছে।
সবার সাথে হাসি মজা আড্ডা দিয়ে এখন রাত ৯ টা বাজে আমাদের ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। বাবা তনয়কে অনেক বার থেকে যাওয়ার জন্য বলেছে। কিন্তু সে থাকবে না তার নাকি কাজ আছে।অন্য একদিম আসবে বলেছে।।আমার তো মন খারাপ হয়ে আছে ফিরে যেতে হবে এটা ভেবে।কতদিন পর আসলাম এক রাত অন্তত থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তনয় থাকবে তাই আমার ও থাকা হবে না জানি। তখনি মা বলে উঠলো বাবা তনয় তানুকে যদি আজ রেখে যেতে ভালো লাগতো বাবা।কত দিন পর আসলো মেয়েটা।আজই চলে যাবে।।তখন তনয় বললেন আন্টি আমরা আর একদিন আসবো কথা দিচ্ছি।আসলে কি বলুন তো সবে তানু ভর্তি হয়েছে।অনেক পড়াশোনা ল্র চাপ।সামনে আবার পরিক্ষা। তাই এখন তাকে রেখে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।আমি তার কথা শুনে আর কিছু বললাম না সত্যি অনেক পড়ার চাপ।তাও মন খারাপ যেনো সরছে না।তারপর তনয় আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি চুপচাপ বসে আছি। ভালো লাগছে সারাদিন কত মজা করেছি সবাই কত খুশি সব কথা মনে পড়ছে। আসার সময় নাবু,নুসু,অনু কান্না করে দিয়েছিল। তখনি তনয় জাকিয়া কে বললেন জাকিয়া তোর ভাবিকে বলে দে এই ভাবে মুখ করে না থাকতে তাকে দেখতে একদম পেত্নী লাগছে এই ভাবে।তনয়ের কথা শুনে জাকিয়া ফিক করে হেসে দিল আর আমি ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আবার বললেন তিনি এই ভাবে কি দেখছো ঠিকি বললাম বিশ্বাস না হলে আয়নায় দেখো তুমি নিজে।আমি বুঝতে পারলাম তিনি আমার সাথে মজা করছে তাই আমি আর কিছু না বলে আবার চুপ করে থাকলাম তখন তনয় বললেন আবার তো আসবো আমরা মেহুর বিয়েতে তখন না হয় থেকে যেও। বিয়ের তো বেশিদিন নেই।তোমার একমাত্র বন্ধুর বিয়ে বলে কথা তোমাকে তো থাকতে হবেই।তনয়ের কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সত্যি তো আমি তো আবার আসবো কিছুদিন পর মেহুর বিয়েতে তো আমি থাকব এখানে।
তানুকে হাসতে দেখে তনয়ের ঠোটের কোনেও হাসি ফুটে উঠলো। কেনো জানি না তানুর মন খারাপ সহ্য হয়না তনয়ের।কিন্তু কেনো এমন অনুভূতি তার জানা নেই।হয়ত এভাবেই সুচনা হবে ভালবাসার আর নয় তো দায়িত্ব থেকে যাবে……………
চলবে…………..
( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন)