তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১৪

0
358

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৪

বদলায় সময়,বদলে যায় দিন।পাল্টে যায় মানুষ,পাল্টে যায় ঋতু।জীবন থেকে যা চলে যায় তা কোন দিনও ফিরে আসে না।যে দিনটি চলে যায় তা-ও ফিরে আসে না।কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ফিরে আসে ঠিক তাঁর পুরাতন সময়ে।কিন্তু নতুন রূপে নতুন দিনে।নতুন কোন স্বপ্নে।তুমি যদি বদলে যেত পারো আমি কেন নয়? তুমি যদি ভুলে থাকতে পারো আমি কেন নয়।তুমিও মানুষ আমিও মানুষ তাহলে আমার বেলায় কেন ভিন্নতা। কারণ তুমি বেঈমান আমি ভালোবাসার কাঙাল।এটাই তোমার আর আমার পার্থক্য।কথা গুলো বলেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ভাই বোনের দিকে তাকাল ধূসর। আর সবাই বাহ বাহ বলে হাততালি দিচ্ছে। দরজার কোণে দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভোর শুনছিলো।মানুষটা যে তাঁর উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলেছে তা ভোর ভালোই বুঝতে পারছে।কিন্তু অনেক সময় চেয়েও তো কিছু করা সম্ভব নয়।সেদিন ধূসরের বুকে মাথা গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে সে কখন সেন্স হারিয়েছে সে বুঝতে পারেনি।তারপর যখন সে চোখ খুলেছে তখন সে আনতা বেগমের কোলের মাঝে নিজেকে পেয়েছে। তিনি কতো সুন্দর করে ভোরকে আগলে রেখেছিলো।তারপর কেটে গেছে পুরো একটা দিন।এখন সে অনেকটাই স্বাভাবিক। আর তাকে স্বাভাবিক করতে সবার কতো পরিশ্রম। সত্যি আল্লাহ কিছু কেঁড়ে নিলে তাঁর হাজার গুন ফিরিয়ে দেয়।এবার তাঁকে প্রতিশোধ নিতে হবে।কঠিন প্রতিশোধ।তাঁর সাথে হওয়া তাঁর বাবা-মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ।নিজের ভালোবাসাকে নিজের করতে না পারার প্রতিশোধ। সব কিছুর হিসেব। তাই তাঁকে যতদ্রুত সম্ভব ফিরে যেতে হবে শহরে। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো তাঁকে কতটা ভালোবাসে।ভাবলেই ভোরের চোখেমুখে খুশি উপচে পড়ে।কিন্তু সে চাইলেও সেই খুশি গুলো ওই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর সামনে দেখাতে পারে না।সবাই তো ধরেই নিজেছে ভোর এই রাগী চেহারা থেকে কখনোই বেরোতে পারবো না।কিন্তু সে নিজেকে সবার মাঝে উপস্থাপন করতে চেয়েও পারে না।কিন্তু ওই যে চেয়েও সব করা সম্ভব নয়।তবুও অবাধ্য মনটাকে শাসিয়ে দরজার কোণ থেকে সরে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো ভোর।তখনই তাঁর ধূসরের দিকে নজর পরলো। এতোক্ষণ ধূসরের মুখ ছাড়া ভোর কিছু দেখেনি। তাই ধূসর যে লুঙ্গি আর একটি গেঞ্জি পড়ে আছে তা দেখতে পায়নি।কিন্তু এখন এমনটা দেখে ভোরের খুব লজ্জা লাগছে।ইসস লোকটাকে কেমন দেখাচ্ছে। শহরে মানুষ হয়েও কেমন করে গ্রামের পোষাক পড়ে কি করে নিজেকে সাজিয়েছে।ভাবতেই কেমন করে উঠলো মনটা।ভোরের এই আকাশ পাতাল ভাবনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ধূসর বললো–

ওভাবে কি দেখছেন? আগে কখনো আমায় দেখেননি।নাকি আমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছি।সবাই ধূসরের কথা শুনে হেঁসে দিলো।

ভোর ধূসরের কথায় থতমত খেয়ে গেলো।কিভাবে তাঁকে লোকটা লজ্জা দিলে সবার সামনে।আসলেই লোকটা ভারি পাঁজি। তাই সে বললো–

আপনায় না। আমি দেখছি আপনাকে কেমন জোকার জোকার লাগছে। একটু আগের হাসির রোলটা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।এবার ধূসরও খুব লজ্জা পেলো।অন্যকে লজ্জা দেওয়া এবার বোঝ কেমন ঠেলা।ধূসরের লজ্জা পাওয়া দেখে ভোর মুচকি হেঁসে দিলো।তাঁকে লজ্জা দেওয়া বেস হয়েছে।

হেই চলো সবাই। আজ একটা খেলা হয়ে যাক।( মেঘ)

কি খেলা( রূপা)

কোন রকম চিটিংবাজ খেলা খেলবো না( বৃষ্টি)

আরে আগে পুরো কথা তো শোন সবাই।

আচ্ছা বলো কি খেলা

সবাইকে একটা চিরকুট দেওয়া হবে।সেই চিরকুটে যা লেখা থাকবে তাঁকে তাই করতে হবে।আর হ্যা কোন রকম পাল্টি খাওয়া যাবে না।তাই যাঁরা খেলতে ইচ্ছুক নয় তাঁরা আগে থেকেই বলে দাও।সবাই মেঘের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।ভোর,ধূসরও রাজি হলো।তারপর মেঘ এক দৌড়ে তাঁর ঘর থেকে এক বাক্স চিরকুট নিয়ে এলো।একে একে সবার হাতে চিরকুট তুলে দিয়ে নিজে একটা তুলে নিলো।তারপর সবার চিরকুটে কি লেখা আছে জানতে চাইলো।

আমাকে একজনকে একটা থাপ্পড় দিতে হবে।( বৃষ্টি)

আমার মনের মানুষ কে তাঁর নাম বলতে হবে( রূপা)

আমাকে ভাবি আর ভাইয়ার উপর নজর রাখতে হবে।ভাইয়া দেখো তো তোমার কি এসেছে। ধূসর চিরকুট খুলতেই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।তাঁকে কিনা এখন লুঙ্গি কাছা দিতে হবে।ইসস কি বিচ্ছিরী বেপার। না সে পারবে না।তাই সে বলে উঠলো।

আমি পারবো না। তোরা এটা ইচ্ছে করে করেছিস তাই না।আমি বুঝতে পারছি।কিছুতেই সম্ভব না।আমি কিছুতেই লুঙ্গি দুকাচাটি দিবো না।( যাঁর এই লুঙ্গির কাছা দেওয়া বোঝেননি।তাঁদের বলছি। আমাদের বাবা ভাইয়েরা দেখবেন যখন গাছে বা কোন শক্ত কাজ করেন তখন তাঁরা লুঙ্গি কিন্তু কেমন করে যেন পেঁচিয়ে তাঁদের পিছনে গোঁজেন। বিষয়টা আমি বুঝিয়ে বলতে পারছি না।তাই সরি।সবাই সবার মতো করে বুঝে নিন।) আরে ভাইয়া ভাবির চিরকুটে কি আসছে সেটা তো দেখো।

আচ্ছা

না-ও ভাবি চিরকুট খোলো।

মেঘ ভাইয়া যদি কোন উল্টো পাল্টা কিছু থাকে আমি কিন্তু খেলবো না।

আরে ভাবি আমি কি অতটা খারাপ নাকি।আগে খুলেই দেখো।

ভোর চিরকুট খুলতেই দেখলো সেখানে খুব সুন্দর করে লেখা।ভাইয়া যদি তাঁর চিরকুটে পাওয়া কাজটা করে তাহলে ভাইয়া যা বলবে ভাবিকে তাই করতে হবে।চিরকুটটা ছিটকে ফেলে দিয়ে ভোর বললো–খুব বাজে একটা বেপার। এটা একদমই হবে না।আমি এটা পারবো না।ভোরের এমন ছেলেমানুষী দেখে ভোরের ফেলা দেওয়া চিরকুটটা ধূসর তুলে নিলো।চিরকুটটা পড়ে তাঁর মস্তিষ্ক বললো।ধূসর এই তো সুযোগ লাগাও কাজে।আর ওদিকে নিজেদের চিরকুটের কথা ভুলে সবাই ভোর আর ধূসরের চিরকুট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ধূসর রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু ভোর কিছুতে রাজি হচ্ছে না।ধূসর যে ফাজিল তাতে যা খুশি তাই করতে পারে।তাই সে কিছুতেই রাজি না এই খেলায়।অনেক চেষ্টা করার পর ভোর রাজি হলো।তা-ও একটা শর্ত দিয়ে।আর শর্তটা হলো।ধূসরকে আগে বলতে হবে সে কি করতে বলবে ভোরকে।সবাই রাজিও হলো।তারপর সবাই ধূসরের দিকে তাকাল।ধূসর বললো– আমি যদি লুঙ্গি কাছা দিয়ে দেখাতে পারি।তো ভোর আপনি আমায় এমন কিছু খাওয়াবেন যা আমি আপনার থেকে কখনোই খাইনি।আর এটা কোন রান্না করা খাবার নয়।এমন কিছু যা আমি কল্পনাতেও দেখিনি।সবাই হৈচৈ শুরু করে দিলো ধূসরের কথা শুনে। একটা হুল্লোড় পরিস্থিতি তৈরি হলো।ভোর ধূসরের কথার মানে বুঝে চোখ মোটা করে তাকালো।আর ধূসর সেটা উপেক্ষা করে বললো– তো বলুন রাজি।

কখনো না।আপনি জেনেশুনে আমাকে এমন একটা কাজ দিয়েছেন যা আমি কখনোই পারবো না।

তাহলে আর কি করার আমিও তাহলে লুঙ্গি কাছা দিবো না।

ধূসরের কথা শুনে সবাই ভোরকে চেপে ধরলো।বেচারি ভোর তো নাকানিচুবানি খাওয়ার মতো অবস্থা। অবশেষে সে বললো ঠিক আছে সে রাজি।কিন্তু তাঁকে দশ মিনিটের জন্য তাঁর ঘরে যেতে দিতে হবে।সে দশমিনিট ভাববে।যথারিতি তাঁকে সময় দেওয়া হলো।ভোর চলে যেতেই মেঘ বললো।

কি ভাই কেমন দিলাম।

দারুন দিয়েছিস।দেখতে হবে না ভাইটা কার।এবার দেখবো ভোর সাহেবা কি করে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন আমার থেকে।

ভাইয়া আমরা যা ভাবছি। ভাবি সত্যি তোমায় কিস করবে তো?(রূপা)

আরে না করে কই যাবে আপু।(বৃষ্টি)

ওই বৃষ্টি তুই ছোট ছোটদের মতো থাকবি।এতো কথা কিসের তোর।আর তুই এখন যা তোকে দিয়ে কাজ নেই।

ইসস তোমারা সামনাসামনি সিনেমা দেখবে তাও সত্যি সিনেমা আর আমি কিনা বাদ। হবে না কিছুতেই হবে না।এই যে আমি বসলাম দেখি কে আমায় এখান থেকে সরায়।

তুই বড্ড পেকেছিস।তোকে বড় কাকিকে দিয়ে মা’র খাওয়াতে হবে।

সে তোমরা যাই করো।সিনেমাটা দেখার পরই করো।

রূপ বাদ দে আগে ভাবি আসুক।দেখি কি ভেবে চিন্তে বুদ্ধি নিয়ে আসে।

হুম দেখি।

তোদের কি মনে হয় তোদের ভাবি আসবে।

আরে ভাইয়া না এসে কই যাবে।সে জানে তিনি না এলে আমরা তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসব।

আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসতে হবে না।আমি এসেছি।আপনার ভাইয়াকে বলুন লুঙ্গি কাছা টাইট করে দিতে।

ওকে সবাই তৈরি।

হ্যা তৈরি।

তারপর অনেক কষ্টে নিজের লুঙ্গি ধূসর কাছা দিলো।যখন ধূসরের হাঁটুর উপর চলে এলো কাছা।ভোর চোখ বন্ধ করে নিলো।ইসস এরা কি খেলার আয়োজন করলো।এটাকেও কেউ খেলা বলে।জোর করে খেলা গুলো চাপিয়ে দেওয়া।অবশেষে অনেক কষ্টে নিজের লুঙ্গির কাছা টাইট করে দিতে সক্ষম হলো ধূসর। তো এবার ভোরের পালা।ধূসর লুঙ্গি ছেড়ে খুব আয়েশ করে একটি চেয়ারে বসলো।আর সবাই অধির আগ্রহ্য নিয়ে চেয়ে রইলো ভোরের দিকে।দেখা যাক তাঁরা যা ভেবেছে ভোর সেটা করে কিনা।ভোর উপায় না পেয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে রইলো ধূসরের দিকে।আর ধূসর চোখ বুঁজেই ভোরের আগমনের অনুভূতি অনুভব করতে রইলো।ভোর যেতে যেতে একদম ধূসরের কাছাকাছি চলে এলো।সবাই খুব কৌতূহলে তাকিয়ে রইলো।ধীরে ধীরে ভোর ধূসরের পুরোপুরি কাছে চলে এলো।ধূসরের মনে মনে তো চকলেটের হাজারটা লাড্ডু ফুটতে রইলো।সে গাল খুলে যেই আপন মনে হেঁসে দিলো। ওমনি ভোর তাঁর মুখের মধ্যে কিছু একটা ঢুকিয়ে দিয়েই বললো–

নিন আমার কথা আমি রেখেছি।আমার বিশ্বাস কোন রমনীয় আপনায় এই জিনিসটা খাওয়ায়নি।এটা রান্না করাও যায় না।আর এটা আপনি প্রথম খাচ্ছেন। সবার আশায় পানি ঢেলে দিলো ভোর।তা দেখে সবাই জোরে একটা ফাঁকা নিশ্বাস নিলো।আর বেচারা ধূসর মুখ লাড়াতে পারছে না।কিন্তু তাঁর মুখে কি দিলো তা বুঝতে পারলো না।তাঁকে যে এত বড় ছেঁকা দেওয়া হলো সে সেটা মেনে নিতেই পারলো না।অতি দুঃখে তাঁর এখন ইচ্ছে করছে এখনি লুঙ্গি খুলে ফেলতে।

সবাই নিজেদের আশায় পানি পড়তে দেখে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রইলো।কোন রকম নিজেদের সামলে বললো।

কি এমন খাওয়ালে ভাইয়াকে যা ভাইয়া আগে কখনো খায়নি।আর কি জিনিস যা কোন রমনী ভাইয়াকে খাওয়ায়নি।

কাঁঠালের মুচড়ে ভর্তা।খুব চেস্ট।চাইলে তোমরাও,চেকে দেখতে পারো।আমার বিশ্বাস এটা তোমার ভাইয়া কেন তোমরাও কখনো খাওনি।নানা ভাইয়ের গাছে নতুন নতুন কাঁঠালের মুচড়ে বেরিয়েছে। সেটাই আন্টি ভর্তা করছিলো সবার জন্য। অবশ্য আমিই আন্টিকে বলেছিলাম।এটা তৈরি করতে আমি খাবো তাই। আন্টিই বললো তোমরাও কখনো এটা খাওনি।তাই আমিই খাইয়ে দিলাম।কি খুশি তো সবাই। কথা ছিলো এমন কিছু খাওয়ানোর।যা আমার থেকে তোমার ভাইয়া খায়নি।তো সবাই খুশি তো?

সবাই তখন ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে বললো।হায় আল্লাহ। ভাবলাম কি আর হলো কি?

চলবে,,

জানি আজ পর্বটা এলোমেলো হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমি অসুস্থ। তাই গেছে কাল গল্প দিতে পারিনি।আজও দিতে চাইনি।কিন্তু অনেকেই পেজে এবং আয়ডিতে মেসেজ দিয়েছেন। তাই আজ সারাদিন ধরে এইটুকু লিখলাম।দোয়া করবেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই যেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here