তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১৩

0
357

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত সুমি
পর্ব ১৩

সত্যি যতোই অপ্রিয় হোক না কেন? তোমাকে তাঁর মুখোমুখি হতেই হবে।জীবন তোমাকে কি দিয়েছে তাঁর হিসেব না করে,তুমি জীবনকে কি দিয়েছো সেটা হিসেব করো।দেখবে নিজেকে খুব হাল্কা লাগবে।প্রাপ্তির খাতায় যদি অপ্রাপ্তির কালিতে কালো হয়ে থাকে। তাহলে হয়তো সেই খাতায় লেখা বন্ধ করতে হবে,না হলে সেই খাতা ছিঁড়ে ফেলতে হবে।জীবনে করা ভুল গুলো তো সেদিন থেকেই মোছা বন্ধ হয়ে গেছে। যেদিন থেকে পেন্সিল ছেড়ে আমরা কলম ধরেছিলাম।কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের হতে হয় একেক রকম।কখনো নরম মাটির মতো কখনো বা সেই মাটির তৈরি ইটের মতো।জীবন যেখানে যেমন তোমাকে ঠিক তেমন ভাবে তৈরি হতে হবে।কেউ যদি তোমায় বারবার আঘাত করে।তুমি পাল্টা আঘাত না করতে পারলেও তোমাকে করা আঘাত গুলো সামলাতে শিখতে হবে।তোমার দিকে কেউ ইট ছুঁড়লে তুমি পাটকেল না মারলে সমস্যা নেই। কিন্তু তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে অপর দিকের ব্যক্তি যেন তোমায় ইট মেরে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে।তাই তাঁর ছুঁড়ে দেওয়া ইটটা তুমি তোমার হাত দিয়ে সামলে নিও।রমনী তোমার কত রূপ। কত সইতে পারো।ইচ্ছে হলেই জড়িয়ে ধরেই ছুঁড়ে দিতে পারো।অল্প আঘাতেই যে ভেঙে পড়ে সে কাঁদলে খারাপ লাগে না।কিন্তু কঠিন মনের মানুষটা যখন ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটিতে হামাগুড়ি খায়। তখন সবার খারাপ লাগে।এই মুহূর্তে ধূসরের এমনটাই লাগছে।তাঁর বুকে এখনো ভোর নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। কত মিনিট কিনবা ঘন্টা কেটেছে তা ধূসর জানে না। সে শুধু জানে ভোর এখনো নিজেকে সামলে নিতে পারছে না।কান্নার গতি কমে গেলেও তাঁর চোখের জল পড়া একটুও কমেনি।গড়িয়ে চোখের জল ধূসরের শার্ট ভেদ করে বুকের ভেতরের পশম গুলো ভিজিয়ে দিয়েছে। বারবার শিহরিত হয়ে উঠছে শরীর।রমণীর কান্নায় এতটা আবেগ মিশে থাকে ধূসর কখনোই জানত না।বুকটায় লুকিয়ে থাকা এই মুখটা কতটা প্রিয় সেটা ধূসরের হৃদয় জানে।সেই প্রিয় মুখের হৃদয়টা আজ কষ্টে আছে।ভেতর থেকে তাঁরও যে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তবুও তাঁকে শক্ত থাকতে হবে।তাই-তো ধীরে ধীরে ভোরকে ডাকতে রইলো– ভোর আপনি নিজেকে সামলান।এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে বলুন।আপনি যদি এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেন তাহলে কি করে হবে।আপনার উপর অনেক দায়িত্ব। আপনাকে যে শক্ত হতে হবে।আপনার বাবা-র সামনে আপনাকে দাঁড়াতে হবে।তাঁকে যে একমাত্র আপনিই সত্যির মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেন।খালামনির শেষ ইচ্ছে আপনাকেই পূরণ করতে হবে।যে যন্ত্রণা নিয়ে সে পৃথিবী ছেড়েছে তাঁকে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে হবে।আপনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারবে না।ওই বাড়ির সবাইকে শাস্তি দিতে হবে আপনায়।নিজেকে তৈরি করুন। যেন তাঁরা আপনায় আর কখনো আঘাত করতে না পারে।ভোর শুনতে পারছেন।ভোর কিছু বলুন এভাবে চুপ করে থাকবেন না।ভোর কিছুতো বলুন।না ভোর কথা বললো না।সে সেভাবেই পড়ে রইলো ধূসরের বুকে।ধূসর ভোরের মাথা তুলতেই আঁতকে উঠল। কারণ ভোরের নাক থেকে গলগলিয়ে রক্ত ঝড়ছে।ধূসরের সাদা শার্ট কয়েক মুহূর্তে রক্তে রঙিন হয়ে উঠেছে।ধূসর ভোর বলেই চিৎকার দিলো।কিন্তু ভোর সে-তো নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে ধূসরের হাতের উপর।

———–

যদি তুমি প্রেম বিরহে মরো তাহলে তুমি নিজের হাতেই বিষ খেয়ে জীবন ধন্য করো।
কথাটা বলেই খুব বাজে ভাবে চেয়ে রইলো আফিম ইলমার দিকে।ইলমা সেই নজরের মানে বুঝতে পেরে থুথু ছিটিয়ে দিলো আফিমের মুখে।আফিম তা হাত দিয়ে মুছে হেসে দিলো।

তোদের চোখ দিয়ে গিলতে আমার হেব্বি লাগে।কি সেক্সি দেখতে তুই ইলমা।আর থুতু ছিটিয়ে কি বোঝাতে চাস তুই। তুই খুব সতীসাবিত্রী। আচ্ছা বলতো বিয়ের আগে কীভাবে তুই আমার সাথে রাত কাঁটালি। ইসস সেদিনের কথা ভাবলেই আমার তোর মাঝে আবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।আয় না একটু কাছে আয়।আমি একটু তোর মাঝে ডুব দেই।

তুমি এতটা নোংরা আমি আগে জানলে কখনোই তোমার জালে পা দিতাম না।ছি্ তুমি এতটা খারাপ। আচ্ছা তুমি সত্যি ভোরকে ভালোবাসো তো?

কেন তোর কি সন্দেহ হয়।

সন্দেহ না আমি পুরোপুরি বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি তুমি ভোরকে কখনোই ভালোবাসিনি।কথাটা শুনেই আফিম ঘর কাঁপিয়ে হাসতে রইলো।যে হাসি শয়তানের হাসির থেকেও খারাপ।ইলমা মুখটা ফিরিয়ে নিতেই। আফিম ইলমার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।আর বললো–আমার বাবা তিনটা ধর্ষণ করছে।একটা আমার জন্মের আগে। একটা আমার জন্মের পর।আর একটা আমার সামনে।তাঁর রক্ত আমার শরীরে বুঝতে পারছিস তাহলে আমি কী?

তুই জানোয়ার।

ঠিক তাই। বুঝতে পেরেছিস।আচ্ছা তুই এতো ভালো আমাকে কি করে বুঝিস।এতটা আমার মা-ও আমায় বুঝতে পারে না।

পাপ বাপ কেও ছাড়ে না।তুই কি করে ভাবলি তুই আর তোর বাপ বেঁচে যাবি।ভোর ফিরবে তোদের সব কটার হার মাংশ আলাদা করার জন্য।

তুই না খুব ভালো জোক্স বলতে পারিস।ভাবছি তোকে কোন জোক্স কমপিটিশনে নাম দিয়ে দিবো।ভালো হবে তাই না বল।

কোন দুঃখে যে আমার ফুপি তোর বাবাকে বিয়ে করতে গেলো।

আরে তোর ফুপিও যে আমাদের পার্টনার।তাঁর গায়ে তোদের রক্ত বইলেও কথা কিন্তু আমাদের হয়েই বলে।তুই কেন এমন হলি।কথাটা বলেই ইলমার গাল টিপে ধরলো।

তোর মতো জানোয়ারদের মতো না হ’য়ে হরিণের মতো জীবন শেষ করা অনেক ভালো।

আরে তাই নাকি।তাহলে কর না করনা জীবন শেষ। একটু দেখি কেমন জীবন শেষ করতে পারিস।আবারও ঘর কাঁপিয়ে হাসতে রইলো আফিম। আর ইলমা ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিলো।

———-

আকাশ থেকে খসে পড়ছে চাঁদের আলো।ধরনীর বুকে জড়িয়ে রয়েছে কুয়াশা।টিপটাপ শিশিরের বিন্দু জানিয়ে যাচ্ছে এখনো শীত বিদায় নেয়নি। দক্ষিণা খোলা জানালা থেকে চাঁদের আলোয় আলোকিত করেছে ঘরের প্রতিটা কোণ।সেই আলোয় অপূর্ব লাগছে ভোরকে ধূসরের কাছে।তখন ভোরের নাক থেকে রক্ত পড়া দেখেই ধূসরের হৃদপিণ্ড চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাড়ির প্রতিটা মানুষ ভোরের এমন অবস্থা দেখে খুব ভয় পেল? বুঝি আর শেষ রক্ষা হলো না।মেঘ অতিদ্রুত ডাক্তার ডেকে আনে।ডাক্তার জানায় অতিরিক্ত মানুষিক চাপের জন্য প্রেশার হাই হয়ে গেছে। যাঁর ফলে অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নাক বেয়ে পড়েছে। প্রেশার লো হওয়ার পরই ডাক্তার তাঁর চেম্বারে ফিরে গেছে।ইনজেকশন আর কিছু ঔষধ দিয়ে গেছেন।তারপর কেটে যায় অনেক সময়।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে ধরনীর বুকে।আর এখন ধরনীর বুকে গভীর রাত।সেই থেকে এখন অবধি ধূসর ভোরের হাত আঁকড়ে আছে।মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।অনেক করেও আনতা বেগম ধূসরকে সরাতে পারেনি।সে অনেক বার বলেছিলো সে থাকুক।কিন্তু ধূসর ভোরের দায়িত্ব কাউকে দিতে রাজি নয়।এই অচেনা অজানা মেয়েটার জন্য তাঁর কত কষ্ট হচ্ছে আজ।আর সেদিন কত ঝামেলা হলো মেয়েটিকে নিয়ে। ভাবা যায়। সেদিনের কথা মনে পরতেই ধূসরের খুব আফসোস হলো।ইসস সেদিন ওতটা রিয়াক্ট না করলেও হত।কেন যে সব না বুঝেই এমন পাগলামিটা করেছিলাম।হঠাৎ ভোর নড়ে উঠতেই ধূসরের ভাবনায় বিচ্ছেদ পড়লো।ভোর ঘুমের মাঝেই কিছু একটা খুঁজছে। বারবার তাঁর হাত কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে চাইছে।কিন্তু সেটা ভোর পাচ্ছে না।ঘুমের মাঝেই তাঁর কপালটা একটু কুঁচকে গেলো।ধূসর সেটা দেখে মনে মনেই হাসলো।ঘুমের মাঝেও কিভাবে নিজের উপর নিজে বিরক্ত ভোর। সত্যি মেয়ে মানুষকে বোঝা আর আকাশের তারা গোনা এক।কিন্তু ধূসর বুঝতে পারলো না ভোর আসলে কি খুঁজছে। তখন ভোর ঘুমের মাঝেই বললো– মা তুমি আবার তোমার হাত সরিয়ে নিয়েছো।আমি কিন্তু আর ঘুমাব না ভাতও খাবে না।যা-ও রাগ করেছি।দাও তোমার হাতটা।কি হলো দাও।ধূসর তাড়াতাড়ি নিজের হাতটা ভোরের মাথার নিচে দিলো।ধূসরের হাতটা খুব যত্ন করেই নিজের মাথার নিচে নিয়ে ভোর তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে। এতোক্ষণ ধূসর পাশে বসে থাকলেও এখন তাঁর বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।কিন্তু কারো অজান্তে তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়াটা কি ঠিক হবে।সে নিজেই তো সেদিন কত বড় বড় কথা বললো। আর আজ যদি ধূসরকে ভোর ওর এতটা কাছাকাছি দেখে কি ভাববে।না না এমনটা করা ঠিক হবে না।কিন্তু সে হাত টাও সরাতে পারবে না।তাহলে ভোরের ঘুম ভেঙে যাবে।ধূসর এক প্রকার দোটানায় পড়ে গেলো।তবুও সব দোটানা দূরে সরিয়ে ভোরের পাশে শুয়ে পড়লো।ধূসর শুয়ে পড়তেই ভোর ধূসরকে আরো আঁকড়ে ধরলো।ধূসরের শরীরের উস্নতা পেয়ে আরো লেপ্টে জড়িয়ে ধরলো ভোর।ধূসরের হৃদপিণ্ডটা তখনই দ্রুত গতিতে ধুকপুক করতে রইলো।হয়তো কখনো কোন নারীর সংস্পর্শ আসা হয়নি বলে নিজের সহধর্মিণী কাছে আসায় এমনটা হচ্ছে।হঠাৎ করেই শাসিয়ে রাখা মনটা বলে উঠলো– তুইও জড়িয়ে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে নে।আদর করে তোর ঠোঁটের প্রথম ছোঁয়াটা ছুঁয়েই দে।তোর সিগারেট পোড়া ঠোঁট জোড়া দিয়ে চাঁদের কপালে একটা ছোট্ট ভালোবাসার টিপ পড়িয়ে দে।ভয় নেই সে তোরই।আরে এতে কোন পাপ নেই। এটা হালাল ভালোবাসার ছোঁয়া। এই ভালোবাসায় রহমত আছে পাপ নেই।তোর ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়াটা না-হয় সে নাই জানলো।সাক্ষী হয়ে না-হয় ওই চাঁদ,তারা, আর রাতজাগা কিছু পাখি থাকলো।সাথে আমিও আছি তোর মন।এতো কি ভাবছিস। এমনই দ্বিধা দন্ধের মাঝে সত্যিই ধূসর টুপ করে ভোরের কপালে একটি ভালোবাসার টিপ পড়িয়ে দিলো।আর তখনই ভোরের ঠোঁট জোড়া হেঁসে উঠলো। কিন্তু সেই হাসি রাতের আঁধারেই মিলিয়ে গেলো।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here