তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১২

0
361

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১২

বাবা-মায়ের আদরের ছোট মেয়ে আমি।নাম ইনু।বড় বোন আনু।বড় বোন যতটা শান্তশিষ্ট আমি ততোটাই চঞ্চল। আর এই জন্যই বাবা-র খুব আদরের।মায়ের কম আদরের নই।কিন্তু একটু ফাজিল টাইপের তাই তিনি সব সময় বকাঝকা করতেন।সাত বিঘা জমিতে নিজেদের ফলগাছ থাকা সর্তেও অন্যের গাছের ফল চুরি করা আমার স্বাভাব।দিনে কম হলেও ছয়-সাতজন নালিশ নিয়ে আসত বাড়িতে।মা তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাগানের ফল দিয়ে বিদায় করতেন।সন্ধ্যায় বাবা এলে তাঁকে নালিশ করতেন আর আমায় বকতেন।কখনো কখনো রাতের ভাত বন্ধ করে দিতেন।আর বাবা একে তো আমায় কিছু বলতো না তাঁর উপর রাতের আঁধারে মায়ের থেকে লুকিয়ে খাবার নিয়ে আসতেন।যেটা আমরা দুই বোন ভাগাভাগি করে খেতাম।অন্যায় আমি করলেও শাস্তি মা দুই বোন কে-ই দিতেন।কারণ মায়ের অভিযোগ ছিলো আপু বড় সে কেন আমাকে সামলে রাখতে পারে না।তাই মা দু’জনকেউ শাস্তি দিতেন।আমি ছোট থেকে চঞ্চল হলেও নিজের সম্মানকে অনেক ভালোবাসতাম।এতটাই ভালোবাসতাম যে, কেউ যদি স্কুল ফেরার পথে বলতো কথা আছে শুনে যা।আমি বলতাম যা কথা বাড়িতে আসবেন সেখানেই হবে।আর যদি কোন ছেলে হতো সেই লোক।তাহলে সোজা বলতাম।যা বলার বাবা-র কাছে বলবেন তিনি আমায় বলে দিবে।এই জন্য কম মানুষের কম কথা শুনিনি।বাবা গ্রামের সুনামধন্য মানুষ থাকায় কেউ তেমন কিছু বলার সাহস পেত না সামনে।যা বলতো আমার পিছনে বলতেন।।স্কুল শেষ করে কলেজে উঠতেই বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেলো।স্বামী নিয়ে সে পাড়ি জমালো বিদেশে। অনেক কেঁদেছি আপু চলে যাওয়ায়।কিন্তু নিয়তির নিয়ম।একদিন মেয়েদের শ্বশুর বাড়ি যেতেই হবে।একা হয়ে গেলাম আমি।কলেজ থেকে শুরু করে কোচিং সেন্টারেরও একাই যেতাম।একদিন কলেজ থেকে ফেরার পর দেখলাম আমাদের বাড়িতে অনেক মেহমান। কিন্তু কাউকেই আমি চিনি না।পর্দার ফাঁক থেকে কিছু অচেনা মানুষের মুখ আর টুকটাক কথা ছাড়া কিছুই শুনতে বা দেখতে পেলাম না।তখন একজন আমার বাবা-র বয়সী লোককে বলতে শুনলাম। তাঁর দুই ছেলে সফিউল মোর্সেদ,সমিউল মোর্দেদ তাঁর সাথে বেড়াতে এসেছে। ছোট ছেলে সমিউল মোর্সেদকে বিয়ে দিবেন ভালো মেয়ে পেলেই।বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছে বছর হয়েছে। এখন ছোট ছেলেকে বিয়ে দিতে চায়।বাবা তাঁর কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বললেন– আমার মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না।বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি সে এখন দেশের বাহিরে থাকে।ছোট মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বাড়িটা ফাঁকা করতে চাই না।লোকটা বাবা-র কথা শুনে আর কিছু বললেন না।তারপর তাঁরা চা নাস্তা খেয়ে চলে গেলেন।আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন খুব হেসে ছিলাম। বাবা-র সিদ্ধান্ত শুনে।পরদিন বাবা কিছু কাজের জন্য হাঁটে যান।বাগানের কিছু সমস্যার জন্য একজন লোক আমায় ডেকে নিয়ে যায়।নিজেদের বাগান সেখানে গেলে কখনো আমার ক্ষতি হতে পারে এটা আমি কল্পানাও করিনি।কিন্তু সেই কল্পনা না করা ঘটনা আমার সাথে ঘটলো।বাগান থেকে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।গ্রামের বাড়ি সন্ধ্যা নামার আগেই অন্ধকার হয়ে যায়।একে তো ঘনোবাগান তার উপর সন্ধ্যার আগে তাই একটু বেশিই অন্ধকার। বাগান থেকে বেরিয়ে আসতেই কেউ আমার মুখ বেঁধে আড়ালে নিয়ে যায়।চিৎকার করার আগেই লোকটা আমার মুখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।মানুষটা যে একজন পুরুষ তা তাঁর শক্তি দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম।অনেক চেষ্টা করেও আমি তাঁর শক্তির কাছে পেরে উঠিনি।অবশেষে আমার নিস্তেজ শরীর সব ভর ছেড়ে দিলো।একটি অন্ধকার রুমে আমি পুরো এক ঘন্টা আঁটকে ছিলাম।চারিদিকে দু’একটা অচেনা পাখির ডাক ছাড়া কিছুই শোনা যায়নি।ভয়ে আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।আমার দম আঁটকে আসছিলো। লোকটা আমার চোখ বাদে সব কিছুই বেঁধে দিয়েছিলো।হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে আমি থমকে গেলাম।খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলাম এই কন্ঠের লোকটাকে আমি চিনি কিনা?কিন্তু না লোকটাকে আমি চিনি না।হঠাৎ অন্য একজন বলে উঠলো– আরে সমিউল ভাই আপনি এখানে কেন কোন সমস্যা ? আর কিছু শুনতে পাইনি। কারণ তাঁরা কথা বলতে বলতে হয়তো দূরে চলে যাচ্ছিলো।কিন্তু নামটা শুনে আমার ফাঁকা মস্তিষ্ক জানান দিলো গেছেকাল যে তাঁর ছেলের জন্য বাবা-র কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁর ছোট ছেলের নাম ছিলো সমিউল। তাহলে কি তিনি আমায় ধরে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কেন? তাঁর কোন উত্তর পেলাম না।হঠাৎ করেই দরজা খোলার আওয়াজে আমার সন্ধি ফিরে এলো।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার কালো অবয় ছাড়া আমি আর কিছুই দেখতে পাইনি।লোকটা কোন কথা বললো না। পাশে রাখা হয়তো কোন চেয়ার ছিলো যাতে তিনি খুব আয়েশ করে বসলেন।আমি সব কিছুই ঝাপসা চোখে দেখেই বোঝার চেষ্টা করছিলাম।তিনি খুব আরাম করে বসে থেকে হঠাৎ বলে উঠলেন– আমার বাবা আমার জন্য আপনার বাবা-র কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু আপনার বাবা খুব সুন্দর করে তা ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার যা লাগবে তা আমি আদায় করে নেই।আপনাকে আমার ভালো লেগেছে তাই আমার আপনাকে চাই।এই জন্যই আমার এতো আয়োজন। চিন্তা করবেন না আজ রাতে যা হবে তা আমি কাউকে বলবো না।শুধু কাল সকালে গিয়ে আপনি আপনার বাবাকে বলবেন আপনি আমায় বিয়ে করতে চান।ব্যস আর কিছু না।আর আমি শুনেছি আপনি নাকি আপনার সম্মানকে অনেক ভালোবাসেন।তাহলে আজ রাতে যে অসম্মানটা আপনার হবে তাতে করে হয় আপনার ইচ্ছে হবে মরে যেতে না হয় আমায় বিয়ে করতে।আমি চাই মৃত্যুকে এত সহজে গ্রহন না করে আমাকে বিয়েই করুন।আমি সমিউল মোর্সেদ যা চাই তা আমার যেকোনো মূল্যে চাই।তারপর লোকটা অন্ধকারে তলিয়ে থাকা ঘরটা কাঁপিয়ে হাসতে রইলো।এবং কিছু সময় পর ঝাপিয়ে পড়লো আমার শরীরের উপর।আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি।কারণ সে কোন পথই খোলা রাখেনি।আমার এতোদিনে তিলতিল করে জমিয়ে রাখা সম্মান সে এক মুহূর্তেই নষ্ট করে দিলো।আমার পুরো শরীরলকে করে দিলো অপবিত্র। আমি চিৎকার করে কাঁদতেও পারিনি নিজের কষ্ট সইতে না পেরে।শুধু চোখ দিয়ে দেখেছিলাম নিজের সাথে হওয়া অন্যায়কে।ফজরের আজান পড়তেই তিনি চলে গেলেন এবং বললেন–আজই যেন আমি বলি আমার বাবাকে তাঁর সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা। সে যেমন অন্ধকারে এসেছিলো তেমনি অন্ধকারেই চলে যান।শুধু পার্থক্য এটাই, তিনি যখন আসেন তখন আমি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিলাম।আর তিনি যখন চলে যান আমার বাঁধন গুলো খুলে দিয়ে যান।নিস্তেজ শরীরটা বিছিয়ে ছিলো খড়কুটোর উপর। সেদিন এতো কষ্ট হয়েছিলো যা আমি কখনোই কাউক বোঝাতে পারিনি।কিন্তু সেদিন কষ্ট আমার শরীরে নাকি মনে হয়েছিলো আমি জানি না।চারিদিকে যখন আলো ফুটলো তখন আমাদের বাড়ির একজন কাজেরলোক আমায় বাগানের ঘরে দেখতে পায়।বেচারা বোবা ছিলো তাই চিৎকার করতে পারেনি।কিন্তু সাথে সাথেই বাবাকে ডেকে এনেছিলো।নিজের বন্ধ চোখটাকে খুলে যখন নিজেকে নিজেদের ফল রাখা বাগানে ছোট্ট একটা ঘরে দেখেছিলাম। তখন মনে হলো ঘরের শত্রু বুঝি এটাকেই বলে। কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আঁটকে গিয়েছিলো।অনেক চেষ্টা করেও সেই কষ্টটা আমি ভুলতে পারিনি।বাবা এসে যখন আমায় ওভাবে দেখলেন নিজেকে সামলাতে পারলেন না।আমাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে রইলেন।আর এটাই বলতে রইলেন।আমার জায়গায় আমারি সম্পদকে কে নষ্ট করলো? বাড়িতে ফিরে আমি সব বললেও ধর্ষণের কথাটা লুকিয়ে যাই।কারণ আমি চাইনি আমার জন্য আমায় বাবা-র মানসম্মান নষ্ট হোক।বাবা সবাইকে ডেকে পাঠালেন।সেদিন সবার সামনেই সমিউল বিষয়টা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে এরিয়ে যায়।কিন্তু সমিউলের বাবা আমার বাবাকে খুব ভালো করে চিনতেন।তিনি জানতেন আমার বাবা কখনোই মিথ্যা বলবেন না।তাই তিনি সবার সামনেই সমিউলকে অনেক মারলেন।পুরো শরীর রক্তাক্ত হওয়ার পরেও সমিউল নিজেকে নিদোর্ষ বলে দাবি করছিলো।সব শেষে বাবা বললেন সমিউলকে জেলে দিবেন।কিন্তু বাঁধ সাদি আমি।আমি বলি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। বাবা শুনে আমায় বোঝায়। আনু আপু ফোন করে আমায় বোঝায়। কিন্তু আমি নিজের সিদ্ধান্ত থেকেও একটু সরে আসিনি।এক সময় লোকসমাজের সামনে বাবাকে অপমান করে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসি সমিউলের বাবা-র হাত ধরে।কারণ আমি যদি সেদিন বাড়ি থেকে না আসতাম তাহলে সমিউল এতবড় পাপ করে রেহাই পেয়ে যেত।কারণ সে সব কিছু তৈরি করে ফেলেছিলো বিদেশে যাওয়ার জন্য। এক প্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে করতে হয় সমিউলকে।সেদিন থেকে শুরু হয় আমার উপর অত্যাচার।সমিউলের একটাই কথা আমি ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি।কিন্তু সত্যিই কি আমি ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলাম।ওই বাড়ির কেউ আমায় পছন্দ করতো না একমাত্র আমার শ্বশুর ছাড়া। আর সমিউল সে তো আমি যে পথে হাঁটতাম সে পথে ও আসতো না।এভাবে প্রায় তিনমাস কেটে যায়।বাবা,বোন ফোন দিয়ে সব সময় বলতো ফিরে আসতে।কিন্তু আমি বরাবরই বলেছি না।একসময় আমি সবার থেকে আড়ালে চলে যাই।তাঁরা চেয়েও আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি।আর তখনই জীবনের দু’টো সত্যির মুখোমুখি হই আমি।একটা হলো সমিউল আর সফিউল দুজন আলাদা মায়ের সন্তান। সমিউলের মায়ের কোন সন্তান হয়নি বলে আমার শ্বশুর দ্বিতীয় বিয়ে করেন।কিন্তু প্রথম বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো গভীর। পরিবারের চাপে পরে সে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও প্রথম বউয়ের সাথে তাঁর গোপনে সম্পর্ক ছিলো।আর ফলস্বরূপ সফিউল মোর্সেদ জন্ম নেওয়ার এক বছর পরই সমিউলের জন্ম।কিন্তু সমিউলের ভাগ্য খারাপ তাই তাঁকে জন্ম দিয়েই তাঁর মা না ফেরার দেশে চলে যায়।তাই আমার শ্বশুর সমিউলকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কুহেলি বেগমের কোলে তুলে দেয়।খুব সহজেই আমার শাশুড়ী সমিউলকে মেনে নেয়।আমার শ্বশুর মনে করলেন হয়তো তাঁর স্ত্রী সত্যি সমিউলকে মেনে নিয়েছেন।কিন্তু না সে সার্থের জন্য সমিউলকে মেনে নেয়। কারণ সমিউলের নামে অনেক সম্পত্তি। যা তাঁর মা তাঁর নামে রেখে গেছে। কিন্তু এই সত্যি সমিউল জানে না।সে আসলে যাকে মা বলে জানে সে তাঁর মা নন।আরেকটা সত্যি জানার পর আমার চারিদিকে সব অন্ধকার হয়ে যায়।আর সেটা হলো।আমাকে সেদিন সমিউল নয় সফিউল ধর্ষণ করেছিলো।আর তাঁর কারণ ছিলো সম্পত্তি।সফিউল আর তাঁর মা কুহেলি ভেবেছিলো সমিউলের নামে এতো বড় অভিযোগ উঠলে আমার শ্বশুর তাঁকে সম্পত্তি থেকে বাদ করবেন।কিন্তু বিষয়টা যে এভাবে ঘুরে যাবে তাঁরা তা বুঝতে পারেনি।আর সব থেকে বড় সত্যি এতো কিছু জানার পর আমার কিছুই করার ছিলো না। কারণ আমি তখন অন্তসর্তা দুই মাসের।আমার সন্তানকেও সমিউল অস্বীকার করে।কারণ সে এটা জানে। সে আমাকে কখনোই ছুঁয়ে দেখেনি তাহলে আমি কি করে প্রেগনেন্ট হলাম।কিন্তু সে নিজের অজান্তে একদিন আমার ঘরে আসে।সে নিজের ঘরেই আসে।কিন্তু সে ভুলে যায় সেদিন, আমি তাঁর ঘরে থাকি তখন।ঘুমের ঘোরে আমার শরীরের কিছু কাপড় এলোমেলো হয়ে ছিলো।যাঁর জন্য নিজের পরুষত্ব সেদিন সে আঁটকে রাখতে পারেনি।যাঁর জন্য ভোরের জন্ম।কিন্তু সে তাঁর সন্তানকেও অস্বীকার করে।মহান আল্লাহ তায়ালা এবং একজন মা জানেন তাঁর সন্তানের বাবা কে? আমার সন্তানের বাবা সমিউল।ভোরের যখন সাত বছর তখন তিনি বিয়ে করেন দ্বিতীয়।অনেকবার তাঁকে সত্যি বলতে চেয়েছি কিন্তু তিনি তা কোনদিনও শুনতে চাননি।তাই যখন আমি সব ছেড়ে চলে আসতে চেয়েছি তখন আমার শ্বশুর আমাকে দিব্যি দেন আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস যেন এই বাড়িতেই ত্যাগ করি।আর তিনি সেই কথা রাখেন তাঁর নিঃশ্বাসের শেষ সময়ে।তাই আমি চেয়েও পারিনি ওই বাড়ি ছেড়ে আসতে।ততোদিনে আমার বাড়ির সব কিছু পাল্টে গেছে। আমি চলে আসার এক মাস পর-ই মা মা-রা যায়।বাবা ভেঙে পড়েন।কোন মুখ নিয়ে বাবা-র কাছে ফিরবো। তাই আর ফেরা হয়নি আপন ঠিকানায়।হঠাৎ সেদিন সফিক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়।তাঁকে সব খুলে বলতেই তিনি জানান আজও আমার বোন আমার জন্য কাঁদে আর তাঁরা এই শহরেই আছে।আমার জীবনে আর নতুন কিছু পাওয়ার আশা নেই। তাই তাঁর কাছে অনুরোধ করি আমার মেয়েটাকে ওই নরক থেকে বাঁচানোর জন্য। তখন তিনি বলেন তাঁর বড় ছেলের জন্য তাঁরা মেয়ে খুঁজছে বিয়ে দিবে বলে।তাহলে ভোরকেই না-হয় তাঁদের বাড়ির বউ করবে।আমি রাজি হয়ে যাই এবং প্ল্যান করি সব কিছুর। আর বাকিটা তো তুই জানিস মা।আমাকে ভুল বুঝিস না।আমি তোর ভালো চেয়েছি।এতোদিন এই কথা গুলো নিজের বুকে চাপিয়ে রেখেছিলাম।এখন কেন জানি মনে হচ্ছে আমার সময় হয়তো শেষ। তাই তোকে সব জানানো উচিত। মারে কেউ আমার কষ্টের জন্য দায়ী না।দায়ী আমি দায়ী আমার ভাগ্য। তাই আমি চাই তুমি ধূসরের সাথে সুখে থাকো।আফিমকে ভুলে যাও।তোমার বাবাকে মিথ্যা সাগর থেকে সরিয়ে সত্যির মুখোমুখি করবে।ওদের সবাইকে শাস্তি দিবি।এই দু’টি দায়িত্ব আমি তোমায় সঁপে দিয়ে গেলাম।

ইতি তোমার
মা

ভোর ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।এতো কষ্ট বুকে জমিয়ে জীবনের এতটা সময় তাঁর মা কি করে বেঁচে ছিলো।সে কথা ভাবতেই কান্না আসছে ভোরের।কোন রকম নিজেকে সামলে সে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। একটি ফাঁকা ঘরে দরজা চেপে বালিশে মুখ বুজে কাঁদতে রইলো।অনেক চেষ্টা করেও নিজের কান্না সে আঁটকে রাখতে পারছে না।এতো কষ্ট কেন হচ্ছে তাঁর। তাঁর বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন? তাঁর সাথে আর তাঁর মায়ের সাথেই কেন এমন হলো।কি অন্যায় ছিলো তাঁর মায়ের।এটাই সে নিজের সম্মানকে বেশি ভালোবাসত।না পারছে না ভোর নিজেকে সামলাতে।তাই বালিশ খামচে ধরে নিজেকে কন্ট্রোল করছে।তবুও যেন তাঁর কষ্ট কমছে না।তখনই কোথা থেকে ধূসর এসে বললো–

ঠোঁট কামড়ে বৃথা কান্না না আঁটকে রেখে কাঁদতেই পারেন।আর বালিশে মুখ গুঁজে না কেঁদে আমার বুকটা খালি আছে এখানেই মুখ গুঁজে কাঁদুন। আমার গায়ের এই শার্টটা যদি আপনার চোখের হিরার মতো দামি জল দিয়ে না ভেজাই তাহলে আমার এই শার্টের কদর থাকবে না।তাই আপনার ওই দামি চোখের জলটুকু দিয়ে আমায় আর আমার শার্টকে ধন্য করুন।কিন্তু কথা দিতে হবে আর কখনো ওই চোখ থেকে কোন জল ঝড়বে না।

এমন একটা মানুষেরি অপেক্ষায় ছিলো হয়তো ভোর।তাইতো ধূসর বলতেই ভোর ঝাঁপিয়ে পড়লো ধূসরের বুকে।

আমার সাথেই কেন ধূসর এমন হয়।আমার আপন মানুষ গুলো কেন আমার থেকে দূরে সরে যায়।কেন বলতে পারেন ধূসর?

চলবে,,

আজ অন্তত কিছু বলে যান।আজ অনেক বড় পর্ব দিয়েছি।আজ অন্তত বড় করে একটা কমেন্ট করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here