তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১৫

0
353

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৫

ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ, তোমার মনেরো মন্দিরে।

এক লাইনের এই রবীন্দ্রনাথের সংগতি গেয়ে পড়ের লাইন আর খুঁজে পেলো না ধূসর। তারপরের লাইনটা যে কি তা সে আকাশ পাতাল ভেবেও বের করতে পারলো না।নিজের উপর এখন সে খুব বিরক্ত। এতো সুন্দর মুহূর্তে গানটা কিনা তাঁর মনে আসছে না।ইসস পাশে সুন্দর রমনী। যে কিনা আয়নার সামনে বসে নিজের চুল ঠিক করছে।বাহিরে তুমুল বৃষ্টি। এমন মুহূর্তে একটা গান মনে পড়লো তা-ও এক লাইনের। ইচ্ছে তো করছে এখন মনকে ধরে দু’চারটা গাট্টা দিতে। কিন্তু ওটা তো এমন জায়গায় থাকে।চাইলেও ছোঁয়া যায় না।এসব চিন্তা করতে করতে জানালার কাছ থেকে সরে ভোরের পাশাপাশি এসে দাঁড়াল। তখন ভোর মাত্র চুলের বেনি ঠিক করে মুখে কিছু একটা লাগিয়েছে।তখনই ধূসর বললো–

ওই চোখে কাজল না দিলে ভালো লাগছে না।

কিহহ

বললাম চোখে একটু কাজল দিন।

আমি চোখে কাজল দেই না।

কেন?

এলার্জি আছে।

সত্যি

হুম

আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না।আপনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছেন।

যদি বলেও থাকি তাহলে কি করবেন।সত্যি এটাই আমার চোখে কাজল দেওয়া পছন্দ নয়।

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে চলুন বৃষ্টিতে ভিজি।

অসম্ভব। আপনি কি পাগল হয়েছেন নাকি।এখন বৃষ্টিতে ভিজবো।

এখানে পাগলের কি আছে।

নেই মানে। এই শীতে বৃষ্টিতে ভিজবো।আমি তো বৃষ্টির দিনেও বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করি না।আর আপনি কিনা এই শীতের বিকালে বৃষ্টিতে ভিজতে বলছেন।আপনি সত্যি পাগল হয়েছেন।

সামান্য বৃষ্টিতেই তো ভিজতে বলেছি
সাগরে তো ডুবতে বলিনি। এখানে পাগলের কি করলাম।

করেননি মানে? এই বলছেন কাজল দিতে চোখে।এখন আবার বলছেন বৃষ্টিতে ভিজতে। তাহলে লোক আপনায় পাগল বলবে না তো কি বলবে।

আপনি চোখে কাজল দেওয়া অপছন্দ করেন। বৃষ্টিও অপছন্দ করেন? তাহলে আপনি পছন্দ করেনটা কি?

কিছু না।

হায় আল্লাহ এ-কার সাথে তুমি আমার ভাগ্য লিখলে।

এই কি বললেন

কিছু না,আপনি থাকেন আমি গেলাম।নিজের প্রেম গুলো জমিয়ে রেখেছিলাম বউয়ের জন্য। এখন দেখি বউ আমার আনরোমান্টিক।কলেজ লাইফে যে রোমান্টিকের জন্য খেতাব পেলাম,তা দিয়ে আর কি হবে বউ তো আমার আনরোমান্টিক।কষ্টে দুঃখে ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজে ফাটাই।হঠাৎ ধূসরের ফোন বাজতেই ধূসর তা কানে তুলে নিলো।

হ্যা বাবা বলো।

এখনি ভোরকে তৈরি হতে বলো।আমরা এখনি শহরের দিকে রওনা হবো।

এখন এই বৃষ্টিতে

বৃষ্টি থামলেই আমরা রওনা হবো।তাই যা বলছি তাই করো।সমস্যা হয়েছে। এখন ভোরকে নিয়ে না ফিরলে পরে সমস্যা হতে পারে।আর হ্যা ভোরকে কিছু বলার দরকার নেই। শুধু বলবে অফিসে অনেক কাজ,আর কিছু সমস্যা হয়েছে যাঁর জন্য এখনি আমাদের শহরে ফিরতে হবে।

কি হয়েছে বাবা আমায় বলো?

দারোয়ান ফোন করেছিলো।আফিম বাড়িতে এসে অনেক ঝামেলা করছে।ভোর কোথায় সেটা দারোয়ানের কাছে জানতে চেয়েছে। দারোয়ান না বলায় ওকে মেরেছে। আর তখন থেকে বাড়ির সদর দরজায় বসে আছে।অনেক চেষ্টা করেও নাকি সরানো যায়নি।আর সে নাকি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে।দারোয়ান উপায় না পেয়ে আমাকে ফোন করেছে।যতটুকু বুঝলাম ভোরকে না দেখা অবধি আফিম শান্ত হবে না।আর এই মুহূর্তে গ্রামের বাড়ির খবরও ওই পরিবারের কাউকে দেওয়া যাবে না।তাই যতদ্রুত সম্ভব আমাদের ফিরতে হবে।বাড়ির সবাই তৈরি হচ্ছে শুধু ভোর আর তুমি বাকি।এই তো বৃষ্টিও কমে গেছে চলে আসো।

ধূসরে হঠাৎ ভোরকে হারিয়ে ফেলার ভয় হলো।এমন করছে কেন আফিম।ও কি ভোরকে তাঁর থেকে কেঁড়ে নিবে।এই অল্প সময়ে ভোরকে যে সে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। কিছুতেই সে ভোরকে অন্য কারো হতে দিবে না।

ধূসর কি হলো কি ভাবছো।

হঠাৎ বাবা-র কন্ঠে ধূসর নিজের হুঁশে এলো।

জ্বি আব্বু আমি আসছি।ফোনটা রেখে ধূসর আবার ঘরে চলে গেলো। ঘরে যেতেই দেখে ভোর তৈরি। তাহলে কি তাঁকে ফোনে কথা বলতে শুনে নিয়েছে।না না কখন শুনলো।

চিন্তা নেই আমাকে রিনা ফোন করে সব বলেছে।তাই আমি তৈরি হয়েছি।আঙ্কেল ফোন করেছেন নিশ্চয়ই। আমার সব কিছু গুছানো শেষ। আপনার সব কিছু আন্টি একটু আগেই গুছিয়ে দিয়ে গেছে।

হুম।

তারপর সবাই বিদায় নিয়ে রওনা হলো শহরের উদ্দেশ্যে।আসার সময় সবাই যেমন ভাবে এসেছিলো যাওয়ার সময়েও ঠিক সেভাবেই যাচ্ছে। বাহিরে বৃষ্টি কমে গেলেও আকাশটা মেঘলা। কিছুক্ষণ পর পর শরীর হিম করা শীতল বাতাস বইছে।শা শা বেগে গাড়ি ছুটছে।আগের বার সবার গাড়ির পিছনে ধূসরদের গাড়ি থাকলেও এবার সবার আগেই আছে।গাড়ির জানালটা লাগিয়ে দিয়ে ভোর ধূসরের দিকে ছুঁড়ে দিলো প্রশ্ন।

আচ্ছা আফিম ভাইয়া এমন কেন করছে?

মুখটা গম্ভীর করে ধূসর উত্তর দিলো।
সেটা আমি কি জানি।

সে কি সত্যি আমায় ভালোবাসে।

আগের গম্ভীর ভাব মুখে কয়েক দফা বেড়ে গেলো এমন প্রশ্ন শুনে ধূসরের।
হয়তো বাসে।

তাহলে আগে কেন এমন করলো?

এতো প্রশ্ন আপনি আমাকে কেন করছেন।

না আপনিও ছেলে, সে-ও ছেলে তাই আরকি।

আফিমের সাথে ভোর ধূসরের তুলনা করছে।তারমানে ভোর ধূসরকে কতটা খারাপ ভাবে।কথাটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে সরাসরি নাড়া দিতেই গাড়ি ব্রেককষলো ধূসর আর চিৎকার করে বলে উঠলো —

ভুলে যাবেন না ভোর।পুরুষ আপনার বাবা ও আর আমার বাবা ও। কিন্তু ফারাক আকাশ পাতালের।তাই আপনার আফিম ভাইয়ের সাথে আমাকে গোলাবেন না।

আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন?

এমনই, আমার রোগ আছে হঠাৎ করেই রেগে যাওয়ার সরি।তারপর ধূসর আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।ভোর আর কিছু বললো না।বাকিটা পথ তাঁদের আর কোন কথাই হলো না।ধূসর কয়েকবার আড়চোখে ভোরকে দেখলেও ভোর একবারের জন্যও তাকায়নি।সে খুব নিরব ভাবেই জার্নিটা শেষ করেছে।ধূসর যতোই ভোরকে দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে। আসলে এই মেয়েটা কি ধাতু দিয়ে তৈরি। নিজের জায়গায় সে অটুট। এক-পা-ও এদিক ওদিক সরবে না।একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে গাড়িটা তাঁদের বাগানে এসে থামলো।আর ঠিক তখনই দেয়াল ঘড়িটা জানান দিলো।এখন সে রাত দু’টোর ঘরে পা দিয়েছে। ধূসরদের গাড়ি থামতেই বাকি গাড়ি গুলোও এসে বাগানে থামলো।ভোর গাড়ি থেকে নেমেই সামনে এগিয়ে গেলো।তখন দারোয়ান চাচা এগিয়ে এলো ভোরের সামনে।বৃদ্ধলোকটার চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট। মাথার কিছু অংশ ফুলে গেছে। রাতের আঁধারে বা এই অল্প লাইটের আলোয় ভোর সেটা ভালো করে বুঝতে পারছে না।তাই সে তাঁর উদ্দেশ্যে বললো।

কোথায় ও

কথাটা ধূসরের বুকে তীব্র গতিতে গিয়ে বিধলো। ও শব্দটা তো খুব আপন মানুষের জন্যই আমরা তুলে রাখি।মাথাটা বার কয়েক ঝাঁকি দিলো ধূসর। সামনে এগিয়ে যেতে নিলে। ভোর হাত উঁচু করে বারন করলো। তারপর ভোর এগিয়ে গেলো সামনে।পিছনে এক দল অবাক চোখে চেয়ে রইলো। ভোর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো আফিমের দিকে।আফিম তখন নেশায় বুদ হয়ে আছে।ভোর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আফিম চোখ তুলে তাকায়। ভোরকে দেখে তাঁর অশান্ত চোখটা চকচক করে উঠলো।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে চাইলো।কিন্তু তাঁর নেশাগ্রস্ত শরীরটা তা সায় দিলো না।আবারও নেতিয়ে পড়লো নিচে। তা দেখে ভোর হাটুগেরে বসে পড়লো আফিমের সামনে।ভোর বসতেই আফিম ভোরকে বুকে জড়িয়ে নিলো।যা দেখে ধূসরের সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো।সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে সফিক ইসলাম ধূসরের হাত ধরে ইশারা করলেন চুপ করে দাঁড়াতে। ধূসর হাতটা ঝাঁকি দিয়েই মুখটা ফিরিয়ে নিলো। ভোর বা আফিমের মাঝে কি কথা হলো বোঝা গেলো না।কিছুক্ষণ পর ভোর ফিরে এসে আনতা বেগমকে বললেন।

আন্টি বাড়িতে কোন খালি রুম আছে।

আছে

বাকি রাতটা ওকে ওই ঘরেই থাকতে দিন অনুরোধ করছি।নেশারঝোঁকে গাড়ি চালালে এক্সিডেন্ট হতে পারে।তাই এই অবস্থায় এতো বড় রিক্স নিতে চাইছি না।প্লিজ আন্টি ও আর কিছু করবে না।আমায় বিশ্বাস করুন।নেশা কেটে গেলেই ও নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে।আমায় ভরসা করুন।আনতা বেগম অসহায় চোখে সফিক ইসলামের দিকে চাইলেন। সফিক ইসলাম হ্যা ইশারা করতেই আনতা বেগম একটি চাবি দিলেন ভোরের হাতে।যেটা বাগানের পাশে একটা ঘরের।ভোর সেটা নিয়ে আফিমকে সঙ্গে করে চলে গেলেন।একে একে সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।ভোর আফিমকে সেই ঘরে নিয়ে গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে শুইয়ে দিলো।ফিরে আসতেই আফিম আঁকড়ে ধরলো ভোরের হাত

ফিরে আসবি তো আমার জীবনে।

হুম আসবো।

কথা দিচ্ছিস তো?

তখন তো কথা হলোই এখন আবার এসব তুলছো কেন? নেশা কেটে গেলে এই বাড়িতে আর এক সেকেন্ড থাকবে না।যদি কোন কথা থাকে আমায় ফোন করবে আমি দেখা করবো।

ওই ধূসর জানো–য়ার যদি তোকে যেতে না দেয়।

সেটা আমি দেখবো।আমি অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি আমাকে এবার উঠতে হবে।

আচ্ছা,সকালে দেখা করবি যাওয়ার আগে।

না

কিন্তু

আর একটা কথাও বললে আমি কিন্তু?

আচ্ছা

ভোর ঘরের লাইট অফ করে বেরিয়ে এলো।দরজা লাগিয়ে বাহিরে আসতেই ধূসরের মুখোমুখি হলো।ধূসরের চোখ থেকে যেন রক্তের দলা বের হচ্ছে। নিজের রাগ যে সে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে তা ভোর ভালোই বুঝলো।কিন্তু সেই রাগ সম্পূর্ণ এড়িয়ে সে ধূসরকে ডিঙিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।ধূসর যেন খুব আঘাত পেলো ভোরের এমন ব্যবহারে।তাই সে হাঁটু গেরে বসে পড়লো মাটিতে।

চলবে,,

আমি চেয়েও নিয়মিত হতে পারছি না।তবুও এখন থেকে চেষ্টা করবো।যাঁর কাছেই গল্প যাবে প্লিজ রিয়াক্ট করবেন।অনেকেই হয়তো জানে না গল্প দিয়েছি।আর প্লিজ গঠন মূলত কমেন্ট করুন।অসুস্থ তাই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে আমাকে পুরোপুরি সুস্থ করে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here