দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ২১

0
406

#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২১

– সবাইকে সবটা বলে দিলেই পারতি!অহেতুক এতগুলো মিথ্যে কথা বলার দরকার ছিল না।

হসপিটাল থেকে গোধূলিকে বিকালের আগেই বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।ফ্রেশ হয়ে হালকা পাতলা খাবারও খাওয়ানো হয়েছে।গোধূলি ওর রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পায় যে সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে।আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। এই সময়টা যে গোধূলি ছাদে একা কাটাতে ভালোবাসে এটা মোটামুটি বাড়ির সবারই জানা।তাই গোধূলিকে কেউ কিছু বলে নি।শুধু সাবধানে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।তাও আদিবাই গোধূলিকে ছাদে দিয়ে আসে।কালকে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে যা অবস্থা হয়েছে।তাই আদিবা গোধূলিকে একা যেতে দেয় নি।আদিবা ছাদে গিয়ে গোধূলিকে দোলনাটায় বসিয়ে দিয়ে বলে এসেছে শান্ত হয়ে যেন ওইখানেই বসে থাকে একটু পরে ও এসে আবার নিয়ে যাবে।ছাদের চারপাশের রেলিং আর লাইটগুলোর জন্য ঠিকঠাক ভাবে সূর্যাস্তটা দেখা যাচ্ছিল না।তাই গোধূলি দোলনা থেকে উঠে গিয়ে রেলিং এর কিনার ঘেঁষে দাঁড়ায়।সূর্য ডুবার পরমুহূর্তেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে ওই সীমাহীন আকাশের বুকে।গোধূলি চারপাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই ব্যস্ত।মাত্র ফুট দেড়েক দূরত্বে কেউ এসে যে ওর দাঁড়িয়ে আছে সেই দিকে কোনো খেয়ালই নেই।হঠাৎ দীপ্তের গলার আওয়াজ পেয়েও ওর মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি।গোধূলি খুব স্বাভাবিক ভাবেই দীপ্তের দিকে ফিরে।ওকে দেখে যে কেউ ভাববে যে,হয়তো গোধূলি জানতো দীপ্ত আসবে!ক্ষুদ্র একটা শ্বাস ফেলে বললো,

– এখানে মিথ্যে বলে যদি আমি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে তার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আফসোস বা অনুশোচনা, কোনোটাই নেই।আমার যা ভালো মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে জল না গড়ানোই ভালো।শুধু মাত্র একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আমার পরিবারের চোখে ছোট হয়ে যাক এটা আমি চাই নি।এতটাও মনুষ্যত্বহীন হতে পারি নি।আমি চাই নি আমার ফুপি তার নিজের বাড়িতে আসতে লজ্জা পাক।আপনাকে সবাই এতটা ভরসা করে আমি সেই ভরসার জায়গাটা এমনি এমনি তো ভেঙ্গে দিতে পারি না।জানি না তখন কেন আমার এতো কান্না পাচ্ছিল যদি বাসার কেউ দেখে নিতো তাহলে তাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত! আমি হয়তো রাগের মাথায় তাদেকে সবকিছু বলেও দিতাম!তারপর যা হতো সেটা নিশ্চয়ই খুব বেশি ভালো কিছু হতো বলে আমার মনে হয় না।নিজেকে আর কান্নাকে আড়াল করতেই বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে বসে ছিলাম!তখন ফ্লোরে রক্ত দেখি।পরে কপালে এত রক্ত দেখে ভয় পেয়েই হয়তো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।হতে পারে বাথরুমে পড়ে যাওয়ায় কাটা অংশে আবার আঘাত পেয়েছি বলে ক্ষতটা একটু বেশিই হয়েছিল।সামান্য একটা ভুলের জন্য কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে এতটা অন্যায়ও কেউ করে নি।

কথাগুলো শেষ করে মলিন মুখে একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে গোধূলি চলে আসতে নিলেই দীপ্ত গোধূলির হাতটা ধরে ফেলে।দীপ্তের এহেন কান্ডে কিছুটা হকচকিয়ে যায় গোধূলি।গোধূলি বেশ অবাক হয়ে তাকায় ওর হাতের দিকে, পর পরেই দীপ্তের দিকে।ততক্ষণে দীপ্তও নয়ন জোড়া তোলে গোধূলির দিকে থাকায়।ওর ব্যান্ডেজ করা হাতের উপর গোধূলির হাতগুলো রেখে অপর হাতের সাহায্যে আবদ্ধ করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

– গোধূলি!যদি আমি তোর কাছে কিছু চাই তুই কি আমায় ফিরিয়ে দিবি?

….

– বল!ফিরিয়ে দিবি?
– আপনাকে কিছু দেওয়ার মতো সামর্থ্য কি আমার আছে?
– প্লিজ বল না দিবি!

গোধূলির খুব ভয় হচ্ছে।দীপ্ত এমন করছে কেন?উনাকে দেওয়ার মতো ওর কাছে কিই বা থাকতে পারে?দীপ্ত ওর কাছে কি চাইবে?আচ্ছা আগে তো শুনতে হবে দীপ্ত কি বলতে চাইছে?মনে সাহস জুগিয়ে গোধূলি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

– কি?
– সুযোগ!
– মানে?
– ভুল শুধরানোর সুযোগ!
….
– আমি কি সেই সুযোগটুকু পাওয়ারো যোগ্য নয়?
…..
– কি দিবি না?
– দিলাম!

গোধূলি একটু সময় নিয়ে উত্তরটা দেয়।দীপ্তের চোখে মুখে খুশির ঝলক।ও যে এতক্ষণ এই উত্তরটাই প্রত্যাশা করছিল।হাত ছেড়ে দিয়ে গোধূলিকে জড়িয়ে ধরে দীপ্ত।হঠাৎ করেই দীপ্তের এমন অপ্রত্যাশিত ছোয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় গোধূলি।গোধূলি অপ্রস্তুত হয়ে চাপা স্বরে বললো,

– কি করছেন?
– সরি!

গোধূলিকে ছেড়ে দেয় দীপ্ত।

– আসলে বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম।সরি হে!তুই কিছু মনে করিস না!

দীপ্তের কথায় কপাল কুঁচকায় গোধূলি।পরক্ষণেই দীপ্ত
গোধূলির দুগাল মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়!এবার গোধূলি চোখ গোল গোল করে তাকায় দীপ্তের দিকে।দীপ্তের এমন হুটহাট স্পর্শ করাটা গোধূলির কাছে ঠিক হজম হচ্ছে না।

– সরি রে!আমি বুঝতে পারি নি থাপ্পড় গুলো এতো বেশি জুড়ে লেগে যাবে!তুই যদি সবার সামনে ওই ভাবে না যেতি তাহলে ওই বনির বাচ্চাও তোকে দেখে ওই কমেন্ট করতে পারতো না আর আমি তোকে মারতামও না।

গোধূলি ওর গাল থেকে দীপ্তের হাতগুলো সড়িয়ে দিয়ে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাস করে,

– বনি আমাকে কি বলেছিল?

গোধূলির প্রশ্নে দীপ্ত মুখটা গোমড়া করে বলে,

– তোকে হট বলেছিল!

দীপ্তের কথা শুনে গোধূলি আশ্চর্য হয়ে বললো,,

– কি!সিরিয়াসলি?এই একটা শব্দের জন্য আপনি আমার কপাল ফাটিয়ে দিলেন?তাও আবার যেখানে আমার কোনো দোষই নেই।
– সব দোষই তোর!তুই যদি না যেতি তাহলে এই যে এইসবের কিছুই হতো না।

দীপ্ত গোধূলির দিকে ওর কপাল-হাত আর গোধূলির কপাল দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো কথাটা।গোধূলি অবাকের চরম পর্যায়ে।ও বুঝতে পারছে না যে ওর যাওয়া না যাওয়ার সাথে দীপ্তের কপাল বা হাতের কি সম্পর্ক।তাই সন্দিহান চোখে দীপ্তের দিকে তাকিয়ে বললো,

– আমার সাথে আপনার এই সবের কি সম্পর্ক?

হকচকিয়ে যায় দীপ্ত।কথাটা ওর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।পরিস্থিতি সামাল দিতে দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

– ওই সব তুই বুঝবি না!

গোধূলি কিচ্ছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে দীপ্তের দিকে।তারপর কঠোর কন্ঠে বললো,

– আমার বুঝার দরকারও নাই।তবে আপনার বুঝার দরকার আছে।রায়ান ভাইয়া আমার দুলাভাই হয়।তার সাথে আমি একটু ইয়ারকি ফাজলামি করতেই পারি। এতে আপনার এত রিয়েক্ট করার মতো আমি তো কিছু দেখছি না।আর রইলো বাকি বনি?উনি বিদেশি আদব কায়দায় বড় হয়েছেন।আপনিও তো অনেক বছর বিদেশে ছিলেন আমার থেকে সেটা আপনার ভালো জানার কথা!ওই শব্দ গুলো ওইখানকার কমন ল্যাঙ্গুয়েজ। সো এতে এত রিয়েক্ট করার কিছু নাই।হতেই পারে উনি হয়তো পজিটিভলি বলেছিলেন সেটা আপনি নেগেটিভ ভাবে নিয়েছেন?

গোধূলির কথা শুনে দীপ্ত কড়া গলায় বললো,

– থাপ্পড় খাওয়ার পর দেখছি তোর সাহস বেড়ে গেছে!মুখে মুখে তর্ক করছিস!তুই আমাকে পজেটিভ নেগেটিভ শিখাবি?

– আমি কোনো কালেই আপনাকে ভয় পাই নি।সময়ের সাথে সাথে হয়তো আচারণে কিছু পরিবর্তন এসেছে।বয়সের ব্যবধানে মান্যতার খাতিরে সম্মোধনে পরিবর্তন এসেছে। তাই বলে এটা ভেবে নিবেন না, আমি ভুলটাকে ভুল আর ঠিক’টাকে ঠিক বলতে ভুলে গিয়েছি।আমি আগেও যেমন ছিলাম এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও থাকবো।আর আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে?আপনি বাঘ না ভাল্লুক?অন্যায় থাকলে বড় ভাই হিসেবে আমাকে শাসন করতেই পারেন।

আসলেই গোধূলি অপকটে সত্যি বলতে কখনো ভয় পায় না।ওর যেটা অনুচিত মনে হবে সেটা কখনোই করবে না।তবে কখনো কখনো উচিত কাজগুলোকে অনুচিত ভেবে চুপ থাকাটা ভালো।এতে হয়তো অনেকের মনে প্রশান্তি হলে হতেও পারে!গোধূলির কথা খুব শক্ত মনে হলো দীপ্তের কাছে।ভাই!এই মেয়ের মনে কি দয়া মায়া নাই?সত্যি কথা বলে,বলে কি সব সত্যি এইভাবে মুখের উপর বলে দিতে হবে?দীপ্ত এই প্রসঙ্গে আর থাকতে চাইছে না।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

– আঘাত না পেলে বাঘ বা ভাল্লুকও কারো ক্ষতি করে না!জানিস তো?বাদ দে ওই সব কথা।তুই কি আমার উপর রেখে আছিস?

দীপ্তের কথা শুনে এক ঝাক অভিমান এসে ভীড় করেছে গোধূলি মনের আকাশে!শক্ত গলায় বললো,

– হ্যাঁ আছি!সবাইকে সত্যিটা বলি নি বলে এটা ভেবে নিবেন না যে আমি সবকিছু ভুলে গেছি!

পরক্ষণেই গোধূলি স্মিত হেসে আবার বললো,

– তাই বলে এটা ভাববেন না, এর জন্য আমি বদলা নেবো।রাগটা ক্ষণস্থায়ী!কিছুদিন পরে হয়তো আর থাকবে না।

গোধূলি কথাটা শেষ করেই আদিবার আশায় না থেকে নিজেই চলে গেল।দীপ্ত অবশ্য সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু গোধূলি বাঁধা দেয়।গোধূলির বলা প্রথম কথাটা দীপ্তের বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধেছে।তবে শেষের কথাটায় একটু হলেও আশায় আলো দেখিয়েছে।কিন্তু কেন যেন অজানা ভয় আশংকা ঘিরে ধরেছে দীপ্তকে।অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো গোধূলির চলে যাওয়ার পথের দিকে।

সন্ধ্যার পরে রায়ানদের বাসার সবাই গোধূলিকে দেখতে আসে সাথে বনি বহ্নিও এসেছে।গোধূলি সবার সাথেই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে।ইনফ্যাক্ট বনির সাথেও।কিন্তু বনিকে দেখে আরেকজন লুচির মতো ফুলছে।না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে!দীপ্ত সোফায় বসে ভাবছে কিভাবে বনিকে একটু শায়েস্তা করা যায়।পরের আমানতের দিকে চোখ গোলগোল করে কেন তাকিয়ে থাকতে হবে?মুখটাকে কেন এত চলতে হবে?মুখে যা আসবে তাই বলে দিতে হবে?ওর একটা কথাকে কেন্দ্র করে কত কিছু হয়ে গেলো।এখন আবার মাল্টা, আপেল,আঙুর নিয়ে এসে সহানুভূতি প্রদর্শন করা হচ্ছে!

– এই লতিকা,যা সবাইকে খাওয়ার জন্য বলে আয়।

জাকিয়া বেগমের বলা কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই দীপ্তের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।কিছু একটা ভেবে চিন্তিত মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠলো।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে।কিন্তু অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।অন্যদিন খাবার পরিবেশনায় থাকেন, জাকিয়া বেগম নয়তো শিখা বেগম।কিন্তু আজ আছে দীপ্ত আর ইহান।দীপ্তের এহেন কান্ডে সবাই অবাক হলেও দীপ্ত সবাইকে সামলে নিয়েছে পাকা হাতে।

– আরে দীপ্ত ভাইয়া তুমি এটা কি করছো?তরকারিতে এইভাবে শুকনো মরিচের গুঁড়ো দিচ্ছো কেন?

ইহান দীপ্তের এহেন অদ্ভুত কান্ডে অবাক হয়ে ব্যস্ত স্বরে বলল কথাটা।কিন্তু দীপ্তের কর্ণগোচর হলো না।ও ওর মতোই কাম সারছে।সামনে থাকা পায়েসের বাটিতে ইচ্ছা মতো নুন দিচ্ছে আর গুনগুনিয়ে গান গাইছে দীপ্ত।এটা দেখার পর ইহানের চক্ষু চড়াকগাছ।কিছু বলার জন্য ফের মুখ খুললো,

– দীপ্ত ভাইয়া……..

দীপ্ত চোখ রাঙিয়ে ইহানের দিকে তাকাতেই ইহান ভয়ে কথাটা শেষ না করেই চুপ হয়ে যায়।ইহান এমনিতেই ভীতু।দীপ্ত যে রগচটা মানুষ,বেশি কিছু বললে হয়তো এই মরিচ গুঁড়ো আর নুন একসাথে মিক্সড করে ওকেই খাইয়ে দিবে।কি দরকার আগ বাড়িয়ে কিছু বলার!তার থেকে ভালো, যা হচ্ছে সেটা চুপচাপ দেখে যাক।ইহান শুকনো একটা ঢোক গিলে মুখে কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়ে রইলো।

সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছে।বনিকে একটু পর পর পানি খেতে দেখে বহ্নি অবাক হয়ে বললো,

– কি তুই পানি খাচ্ছিস কেন?পানি খেয়েই পেট ভরবে নাকি?
– আমার একটু ঝাল লাগছে।
– কি বলিস?তরকারি তো খুব ভালো হয়েছে।ঝাল নুন একদম ঠিক আছে।আমরা সবাই তো খাচ্ছি।

বহ্নির কথায় সবাই সায় দিলো।বনি বুঝতে পারছে না তাহলে,তরকারিটা ওর এতো ঝাল লাগছে কেন?তবে কি ওর মুখে আবার ঘা টা গিয়ে গেলো নাকি?কিন্তু সামান্য একটু ঝাল বেশি হলেও তো মুখের ঘা’য়ে এত ধরার কথা না।বনি ধূর্ত মস্তিষ্ক।ওর কেন জানি না মনে হচ্ছে, তারকারিটাতে কেউ ইচ্ছে করে মরিচের গুঁড়ো দিয়ে দিয়েছে।সত্যতা পরখ করে নেওয়ার জন্য বহ্নিকে ফিসফিস করে বললো,

– বহ্নি তুই আমার এখান থেকে এক টুকরো মাংস খেয়ে দেখ তো তোরও ঝাল লাগছে কিনা?আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমার তরকারিতে ঝাল মিশিয়ে দিয়েছে।আচ্ছা,দীপ্ত নয় তো।

– ধ্যাৎ!কি বলিস না বলিস।দীপ্ত কেন তোকে ঝাল তরকারি দিতে যাবে।

বহ্নির চাপা ধমকে থমথম খেয়ে যায় বনি।কাচুমাচু মুখ করে বললো,

– না মানে তারকারিটা তো দীপ্তই দিয়েছে।

দুই বন্ধুর মধ্যে চলা কথোপকথন আর কেউ না শুনলেও দীপ্ত বুঝতে পারছে বনির সন্দেহের তীর ওর দিকে।দীপ্ত এগিয়ে এসে বনির প্লেট থেকে এক টুকরো মাংস নিয়ে বললো,

– কোথায় তরকারি ঝাল হয়েছে দেখি তো!

কথাটা বলেই মাংসের টুকরোটা পুরে দেয় ইহানের মুখে।ইহান না পারছে মুখ থেকে ওটা ফেলতে আর না পারছে দীপ্তকে কিছু বলতে।ইহান চিবাচ্ছে না বলে দীপ্ত চোখ পাকায়।ইহান সাথে সাথে টপ করে মাংসের টুকরোটা গিলে ফেলে।মেকি হেসে বললো,

– কোথায় ঝাল বনি ভাইয়া! ঠিকই তো আছে।

ইহানের কথায় বনির সন্দেহ দূর হয়।মুখ টিপে হাসছে দীপ্ত।খাবার পরিবেশ করার জন্য দীপ্তের সাথে আহানই যেতে চেয়েছিল।কিন্তু আহান গেলে দীপ্তকে এই সব করতে দিতো না।ইহান বোকা আর ভীতু বলেই দীপ্ত ওকেই নিয়েছে। মুখে ঘা’ই হয়েছে ভেবে এক ঢোক পানি আর এক লুকমা ভাত মুখে দিচ্ছে বনি।দীপ্ত সুযোগ বুঝে ঠেসেঠেসে বনিকে দুই বাটি তরকারি খাইয়েছে।আজকে বাসায় যেয়ে বনির খবর আছে!শেষ পাতে যখন পায়েস দেওয়া হলো তখন নুনের তীব্রতা বেড়ে গেলো বনির জিভে!বনি শুনেছে পায়েস নাকি মিষ্টি হয়!কিন্তু নুনে তেঁতো পায়েস জীবনের এই প্রথম অভিজ্ঞতা।আবার সেই সন্দেহ!পরীক্ষক সেই ইহান!এটাও মুখে ঘা এরই প্রভাব!অযুক্তিক হলেও বনিকে এটাই মানতে হলো।কারণ ইহান পরীক্ষা করে দিয়েছে।

খাওয়া দাওয়া করেই চলে যায়।গোধূলির রুমে আজ আদিবা থাকবে।ওকে একা রাখা ঠিক হবে না বলে আদিবা চলে এসেছে থাকবে বলে।নার্সদের আসতে বারণ করে দিয়েছে দীপ্ত! সবাই জিজ্ঞাস করায় বলে,”বাড়িতে এত মানুষ থাকতে নার্সের কি দরকার।পরিবারের লোকজনদের থেকে কি নার্সরা বেশি যত্ন নিবে নাকি?সব ফাঁকিবাজ!রাতের বেলায় নাক ডেকে ঘুমাবে তখন তোমাদের মেয়ে আবার বাথরুমে গিয়ে পড়ে মাথা ফাটাবে।”

দীপ্তের কথা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায় শুধু গোধূলি ছাড়া।রাতে ওর দেখাশোনা করতে নার্স আসবে শুনে বেশ খুশিই হয়েছিল।কিন্তু দীপ্ত গোধূলির সেই খুশিকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলো না।ফলে মনমরা হয়েই শুয়ে পড়েছে গোধূলি।আদিবা ঘুমিয়েছে অনেকক্ষন হয়েছে কিন্তু গোধূলির চোখে ঘুম নেই।হঠাৎ করেই আদিবার ফোনে কল আসতেই গোধূলি ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে।আদিবা তড়িঘড়ি করে উঠে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।আদিবা চলে যেতেই চোখ খুলে মুচকি হাসি দেয় গোধূলি।রায়ান কল দিয়েছে।রুমে কথা বললে গোধূলির ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে বলে আদিবা রুম থেকে চলে গেছে।ব্যালকনিতে বাল্বটা জ্বালানো বলে রুমের ভিতর থেকে আদিবাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।গোধূলি আদিবার কথা শুনতে না পেলেও আদিবা যে রায়ানের সাথে প্রেমালাপ করছে তা ঠিকই বোঝা যাচ্ছে।বোনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল গোধূলি।পরমুহূর্তেই দেখতে পেলো ওর দিকে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে!

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here