দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ২২

0
377

#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২২

ড্রিম লাইটের আলোয় তাঁর অবয়ব দেখে বুঝা যাচ্ছে উক্ত বিশাল দেহের ছায়ামূর্তিটি কোনো পুরুষ মানুষের!গোধূলি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে।অনেকক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে গোধূলি কাঁথার ভেতর থেকে অনুমান করছে হয়তো সেই ছায়ামূর্তিটি চলে গেছে।তাই মুখের সামনে থেকে কাঁথাটা হালকা সড়িয়ে উঁকি দিতে নিলেই ওর পঞ্চআত্মা উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।ছায়ামূর্তিটি ঠিক ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।গোধূলি তড়িঘড়ি করে আবার কাঁথার আড়ালে মুখ লুকিয়ে জুড়ে জুড়ে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে।পরক্ষণেই বুঝতে পারে কাঁথা সমেত ওকে কেউ পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে।আকস্মিক এমন গোধূলি খুব ভয় পেয়ে যায়।নিজের ব্যালেন্স রাখতে গিয়ে সেই ছায়ামূর্তির গলা আঁকড়ে ধরে।বিশাল দেহের ছায়ামূর্তির কাছে গোধূলি আয়তন খুবই সামন্য!গোধূলি অনুভব করতে লাগলো ওকে কোলে তোলে নিয়ে নির্বিকার ভাবে হেঁটে কোথাও চলে যাচ্ছে!

– ও আব্বু আম্মু তোমাদের সাথে আমার দেখা হলো না গো।আজরাইল এসে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে জান কবজ করবে বলে।তোমাদের মেয়েকে তোমরা হয়তো আর খুঁজে পাবে না গো!এই দেখো সিঁড়ি দিয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে!আমাকে নিয়ে মনে হয় আকাশে উঠে গেছে এখন এইখান থেকে আজরাইল আমাকে ঠাস করে ছেড়ে দেবে।আমি টুস করে অক্কালাভ করবো গো আব্বু!

গোধূলি বিলাপের ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে।গোধূলিকে এইসব আবোলতাবোল বলে বিড়বিড় করতে শুনে ছায়ামানবটি থেমে যায়।গোধূলির মুখের কাছে কান দিয়ে শুনার চেষ্টা করে, গোধূলি কি বলছে?গোধূলির বিড়বিড় শুনে চরম হাসিতে মেতে উঠে সেই ছায়ামানব!হাসির মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে গোধূলি সারা শরীরে ঝাকি লাগছে। হাসির আওয়াজ শুনেই থমকে যায় গোধূলি।ওর কাছে হাসির আওয়াজটা খুব চেনা চেনা লাগছে।তাই সব ভয় ডর সাইডে রেখে চোখ বুজে মাথার উপর থেকে কাঁথাটা এক টানে সড়িয়ে ফেলে।পিটপিটিয়ে চোখে মাথা তুলে তাকায় উপরের দিকে।কাকে দেখছে ও?এটা যে দীপ্ত!বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গোধূলি।মুহুর্তেই ওর রাগ উঠে যায়।গলা স্বর উঁচু করে বলে,

– আপনি?

দীপ্ত গোধূলির দিকে বিরক্তিকর লুক দিয়ে বলে,

– তা নয় তো কি?আজরাইল?সিরিয়াসলি গোধূলি! তোর মাথায় আর অন্য কোনো কিছুর কথা এলো না?ডিরেক্ট আজরাইল!সো ফানি। হা হা হা…

গোধূলির রাগ যেনো থরথর করে বেড়ে চলেছে।ছটফট করতে করতে চোখ রাঙিয়ে বললো,

– একদম হাসবেন না বলে দিচ্ছি!আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আমাকে কোল থেকে নামান বলছি।

দীপ্ত বিরক্তির সুরে বলল,

– হে হে নামাচ্ছি!আমারও কোনো ঠেকা পড়ে নি যে তোকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরবো!

গোধূলি চিৎকার দিয়ে বললো,

– তো নিয়েছেন কেন?আমি বলেছি আমাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরতে?

– হুসস!আস্তে কথা বল।তোর গলা শুনতে পেয়ে আদিবাপু চলে আসবে!এই তুই এত জোরে কথা বলিস কেন রে?বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে দীপ্ত।

– চলে আসুক!তাতে আমার কি!আর আপনি আমাকে আমার ঘর থেকে এমন চোরের মতো নিয়ে আসলেন কেন?
– তোর জন্য!
– মানে?
…..

– ধুর!এই আপনি আমাকে নামান তো!নামান বলছি।তা না হলে এখন আমি কিন্তু চেচাবো!একবার তো মাথা ফাটালেন!এখন কি পুরোপুরি মেরে ফেলার জন্য ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার প্ল্যান করছেন নাকি?
কথা বলেই জিভ কাটে গোধূলি!মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা।

– সরি সরি সরি!আমি ওই ভাবে বলতে চাই নি!আসলে মুখ ফসকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে!
– হে তা তো বেরুবেই!আমি যখন ভুল করেছি তার জন্য কথা তো আমাকে শুনতেই হবে!
– সরি!

মুখটা গোমড়া করে বলল গোধূলি।দীপ্ত শীতল কণ্ঠে বললো,

– হয়েছে থাক আর সরি বলতে হবে না।আমি কিছু মনে করি নি।
– সত্যি তো!
– হুম!
– তাহলে এমন গম্ভীরমুখে বলছেন কেন?
– এমনি!
– ঠিক আছে!এখন তো অন্তত আমাকে কোল থেকে নামান!আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে!

দীপ্ত আর এক সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে না থেকে গোধূলিকে দোলনাটায় বসিয়ে দিয়ে বললো,

– অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম ঘুমাতে পারছিলি না!চাঁদহীন বা চাঁদনী রাত আর মেঘলা বা মেঘমুক্ত আকাশ দুটোই তোর খুব প্রিয়!মুর্দা কথা রাতের আকাশ দেখা তোর পুরানো অভ্যাস! ভাবলাম হয়তো সেই অভ্যাসের জেরেই ঘুম আসছে না।তুই অসুস্থ ঠিক সময় ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর খারাপ করবে।তাই ছাদে নিয়ে আসলাম যাতে আকাশ দেখার জন্য আর নির্ঘুম না থাকতে হয়!

দীপ্ত এবার কর্কশ গলায় বলে,

– হয়েছে এবার!উত্তর পেয়েছিস?শান্তি মিলেছে তোর!নে এবার এই চাঁদ তারা হীন অন্ধকার আকাশ দেখে আমাকে উদ্ধার কর!

এত্তক্ষন তো ভালো ভাবেই কথা বলছিল।আর এখন কথার ছিরি দেখো!মনে মনে বলে গোধূলি।পরমুহূর্তেই গলার স্বর উঁচু করে বললো,

– তা আমি কি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে ছাদে নিয়ে আসতে?

….

– এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড!আমি যে রাতে ঘুমানোর আগে ছাদে আসি এটা আপনি জানলেন কি করে?

…..

– কি হলো বলুন!

….

– এখন কেন কথা বলছেন না?এত্তক্ষন তো অনেক কথা বলছিলেন!

…..

– ধুর!

গোধূলি দীপ্তের কোনো উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হয়ে আকাশ দেখায় মনোযোগ দেয়।অন্যদিকে আদিবা রুমে এসে গোধূলিকে দেখতে না পেয়ে ভাবে হয়তো ওয়াশরুমে গেছে।আদিবা গিয়ে দেখে গোধূলি ওয়াশরুমে যায় এই নি!হঠাৎ করেই আদিবার ছাদের কথা মনে পড়ে।

– মেয়ের সাহস দেখেছ!এই রাতের বেলায় অসুস্থ শরীর নিয়ে ছাদে চলে গেছে!বড্ড বার বেড়েছে দেখছি।এবার তো ওকে একটু বকনি দিতেই হবে!
আদিবা ছাদের উদ্দেশ্য ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।

এইদিকে গোধূলি ঘুমে টলোমলো করছে।দীপ্ত আস্তে করে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ে।তা না হলে ঘুমে ঢলে পড়ে গিয়ে নাক মুখ ভেঙ্গেচুরে আরেক কান্ড বাধাবে!

– সাজি!সা…

আদিবা ওর পুরো কথা শেষ করতে পারে নি।দীপ্তকে দেখে থেকে গিয়ে বলে,

– দীপ্ত তুই এখানে?
– হুসস!

দীপ্ত ঠোঁটের কাছে আঙ্গুল নিয়ে মাথা নাড়িয়ে আদিবাকে কথা বলতে বারন করে।আর ইশারায় বুঝায় ও ঘুমিয়ে গেছে।
গোধূলি দীপ্তের কাঁধে হেলান দিয়ে দিব্যি ঘুমাচ্ছে।এই দিকের কিছুই ওর কান অব্দি যাচ্ছে না।

– গোধূলি তো ঘুমিয়ে গেছে রে দীপ্ত। এখন ওকে আমি ঘরে নিয়ে যাব কি রে?
– কেন আমি আছি কি করতে!আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে না!অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কথাটা বলে দীপ্ত।
– হে! কিছু বললি দীপ্ত?

দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

– না!আমি আবার কি বলব!
– না আমার মনে হলো তুই কিছু একটা বললি!যাকগে বাদ দে।দেখ তো সাজি তো ঘুমিয়ে গেছে।এই সাজি উঠ।সাজি…

আদিবাকে দীপ্ত থামিয়ে দিয়ে বলে,

– আপু থাক।ও যখন ঘুমিয়ে পরেছে তাহলে আর ডাকার দরকার নেই।আমি না হয় ঘর অব্দি দিয়ে আসি!
– হুম সেটাই ভালো হবে।তুই একটু নিয়ে যা তো ভাই আমি আসছি।

দীপ্ত গোধূলিকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।ঘর থেকে চলে আসার আগের গোধূলির ঘুমন্ত চেহেরাটার দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যান্ডেজ করা জায়গাটায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েই চলে আসে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here