দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ২৩

0
369

#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২৩

– সাজি,এই সাজি উঠ মা!আর কত ঘুমাবি!দেখ বাড়ি ভর্তি কত মানুষ সেই কখন থেকে এসে বসে আছে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস!পরে তো বলবি আমাকে কেউ কিছু জানাও নি কেন?

জাকিয়া বেগম গোধূলিকে ডাকছেন আর নরম গলায় এইসব বলছেন।মাথা চেপে ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসলো গোধূলি।গোধূলিকে মাথা চেপে ধরে থাকতে দেখে জাকিয়া বেগম উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন,

– কি হয়েছে সাজি?
– তেমন কিছু না বড়মা।মাথাটা একটু ব্যাথা করছে।

ধীর কন্ঠে বলল গোধূলি।জাকিয়া বেগম হতাশার সুর টেনে বললো,

– জানি রে মা,তুই অসুস্থ।কিন্তু আমি কি করবো বল তো?ওই দিকে আমার বাপের বাড়ির লোক রায়ানদের আত্মীয় স্বজন সবাই সকালে এসে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত!বলা নেই কওয়া নেই এইভাবে চলে আসলো।আমি আহানের মামাকে জিজ্ঞাস করায় ও বলল তোর বাবাই নাকি ওদের আসতে বলেছে!রনিত ভাইজানও বলল তার বন্ধুই নাকি তাদের আসতে বলেছে।তোর বাবাইকে জিজ্ঞাস করলাম হঠাৎ করে তার এমন কি জরুরি কাজ পড়ে গেলো যে সবাই ডেকে পাঠিয়েছে?সে কি উত্তর দিয়েছে জানিস?

– কি?

– তার মেয়ের এনগেজমেন্ট নাকি খুব ধুমধাম করে করবে তাই সবাইকে আসতে বলেছে।সবার সাথে আলোচনা করে তাদের মতামত নিতে হবে তাই।তোকে ছাড়া তো তোর বাবাই চোখে কিছু দেখেই না।মেয়েকে একেবারে চোখে হারায়!তাই আমাকে বলল তোকে যেন সে চোখের সামনে দেখতে পায়।আমি বলেছিলাম কি দরকার মেয়েটাকে শুধু শুধু উপর নিচ করানো?সবে এত বড় একটা দখল গেছে ওর উপর দিয়ে।কিন্তু কে শুনে কার কথা!তাই তোকে ডাকতে এলাম।তোর কাকিয়াও তো বাড়িতে নেই।ওর মায়ের নাকি শরীরটা আবার খুব খারাপ করেছে তাই সকাল সকালেই বেড়িয়ে গেছে।ওদের ছাড়াও তো কিছু করা সম্ভব নয়।অবশ্য তোর কাকাইয়ের সাথে তোর বাবাই কথা বলেছে।ওরা বলল সবাই যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই ওদেরো সিদ্ধান্ত।

গোধূলি মলিন হেসে বললো,

– ও।তুমি আর আম্মু সব কিছু সামলাতে পারবে?চল আমি তোমাদের হেল্প করে দেই?

– ওরে আমার লক্ষ্মীসোনা রে!নিজের যে হাল বাঁধিয়ে রেখেছেন সেটা আগে ভালো হোক তার পর না হয় আমাদের হেল্প করতে আসবেন। তোর ফুপি আসছে।ওকে নিয়েই সবটা সামলে নিবো।তুই বরং লাজুককে একটু আসতে বল।

– কেন?লাজুবু এসে কি করবে?

– রায়ানদের বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা আদিবাকে দেখতে চাচ্ছে। ওকে একটু রেডি করে দিতে হবে না!নতুন কুটুম বাড়ি এমনি এমনি তাদের সামনে যাওয়া যায়?একটু শাড়ি টাড়ি পড়িয়ে দিলে ভালো হবে না!তোর মা তো কাজ করতে করতে সময়ই পাচ্ছে না।তুইও তো অসুস্থ।তার চেয়ে বরং এইটা ভালো হয় না? লাজুক চলে আসুক।

– আচ্ছা আমি লাজুবুকে কল দিচ্ছি,তুমি যাও।
– আচ্ছা ঠিক আছে।আর শুন মা তুই কিন্তু সাবধানে চলাফেরা করিস কেমন।
– ওকে।
– ও হে শোন না সাজি।তাড়াহুড়োয় একদম ভুলে গেছি। আহান আর ইহান বাজারে গেছে ওদেরও হয়তো মনে নেই।তুই একটু দীপ্তকে ফোন করে বলে দে তো ও যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসে।

জাকিয়া বেগমের কথা শুনে টাশকি খেয়ে যায় গোধূলি। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

– চলে আসবে মানে?উনি কি আমাদের বাসায় না?
– আমাদের বাসায় থাকতে যাবে কেন।দীপ্ত তো কালকে রাতে রায়ানরা চলে যাওয়ার আগেই চলে গেছে।
– কি বলছো?
– হে তো।কেন কিছু কি হয়েছে?আরে এই সাজি!কোথায় হারিয়ে গেলি?

গোধূলির ভাবনায় সুতো ছিড়ে জাকিয়া বেগমের উচ্চ স্বরে।ফিচেল হেসে বললো,

– না মানে আসলে…না কিছু না বড়মা!তুমি বরং নিচে যাও বাবাইকে গিয়ে বলো আমি আসছি।
– হুম আয় তাড়াতাড়ি।

জাকিয়া বেগম চলে যেতেই গোধূলি ভাবতে লাগলো।ব্যাপারটা কি হলো?কালকে রাতে দীপ্ত তো ওদের বাড়িতেই ছিল।আর সেটা তো রায়ানরা চলে যাওয়ার অনেক পরে! তখন হয়তো ঘড়ির কাঁটা ১টার উপর তাহলে ওর বড়মা কি বলে গেল।দীপ্ত নাকি চলে গিয়েছিল!তাহলে ওকে যে দীপ্ত কোলে করে ছাদে নিয়ে গেল।ওর সাথে কথা বলল।সেটা কি সত্যি ছিল না?

ছাদের কথা মনে হতেই গোধূলির মনে পড়ে,ও তো হেঁটে হেঁটে ঘরে আসি নি!তাহলে ওকে ঘরে কে নিয়ে এলো?দীপ্ত?সেটাও তো সম্ভব না!সে তো এখানে ছিলই না!না ছিলই তো ওকে যে ছাদে নিয়ে গেলো!আর ওটা যদি দীপ্ত না হয় তাহলে কে ছিল?দীপ্তের রূপ ধরা সত্যি সত্যি কোনো আজরাইল নয় তো!তাহলে গোধূলিকে ঘরে কে নিয়ে আসলো?ওই আজরাইলই নয় তো!আজরাইল কি ওর উপর করুনা করে জান কবজ না করে আবার ঘরে রেখে গেছে!নাকি গোধূলি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল?

মাথা চেপে বসে আছে গোধূলি।এইসব কি আবোল তাবোল ভাবছে ও?একমুহূর্তে গোধূলির নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে!সব হয়েছে দীপ্তের জন্য!গোধূলি মনে মনে দীপ্তের চোদ্দগুষ্টির নাম উদ্ধার করছে।যে দীপ্ত এখানে উপস্থিত না থেকেও ওর মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে সেই দীপ্তকে কল দিবে গোধূলি! তাহলেই হয়েছে।গোধূলি দীপ্তকে ওর ফোন থেকে কল বা মেসেজ কোনোটাই করে নি।গোধূলি আদিবাকে দিয়ে বলিয়েছে,দীপ্ত যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসে।

– তাহলে সবাই ওই কথাতেই রইলাম।আগামী শুক্রবার মুনলাইট রিসোর্টে আদিবা আর রায়ানের এনগেজমেন্ট হচ্ছে।

রনিত সাহেবের কথায় সায় দিয়ে আহসান সাহেব বললো,

– হ্যাঁ।
– আমরা এখন উঠি কেমন।আমাদেরও তো ছেলের বিয়ে অনেক কিছু এরেঞ্জ করতে হবে।আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।
– ঠিক আছে সাবধানে যাস।

রায়ানরা সবাই চলে যেতেই আহসান সাহেব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– তোমরা সবাই এখানে থাকো।তোমাদের সাথে আমার কিছু আলোচনা করার আছে।আমার মেয়ের বিয়ে আমি মহা ধুমধামে দেবো আর তার আগে এনগেজমেন্ট পার্টিও অনেক বড় করে থ্রো করবো।সাজি মা তুই তোর যত ফ্রেন্ডস আছে সবাইকেই ইনভাইট করে দে।আহান ইহান তোরাও।ও হে দীপ্ত, তুইও।

দীপ্ত গোধূলিকে খেপানোর জন্য ওর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললো,

– মামু,সবার ফ্রেন্ডদের বলাটা কি খুব দরকার?
– কেন?
– না মানে “যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পরশির ঘুম নাই ” অনেকটা ঠিক এই প্রবাদ বাক্যের কথার মতো হয়ে যাচ্ছে না!
– মানে কি বলতে চাইছিস তুই?
– নাহ তেমন কিছু না!আসলে যার বিয়ে,মানে আদিবাপু!তাকে কোনো কিছু না বলে সোজা তোমার সাজি মাকে বলছো মনে হচ্ছে বিয়েটা ওরই!
– আদিবা আর সাজি দুটোই আমার মেয়ে। আমি যেটা আদিবাকে বলবো সেটা সাজি মেনে নেবে আর যেটা সাজিকে বলবো সেটা আদিবা মেনে নেবে।আদিবা সাজি আমি কি ঠিক বললাম ?

গোধূলি আহসান সাহেবের পাশে এসে বসে বললো,

– একদম ঠিক বলেছো বাবাই।আসলে আমাকে যে সবার আগে বলেছো এটা অনেকেরই সহ্য হয় নি!তারা হয়তো এটা জানে না যে,বুবুর ফ্রেন্ডরা আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে অলরেডি রৌনা হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো চলেও আসবে!বাবাই, বুঝতে পারছো না,হিংসা হিংসা!গোবর গনেশ লোক!মাথা মোটা বুঝলে বাবাই।

শেষের কথাটা আহসান সাহেবের কানে ফিসফিস করে বললো গোধূলি।গোধূলি কথাটা ফিসফিসিয়ে বললেও দীপ্ত ঠিকই শুনতে পেয়েছে।দীপ্ত তেতে গিয়ে বললো,

– গোধূলি তুই কিন্তু…….

দীপ্ত আঙ্গুল উচিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু ওর আব্বুকে দেখে থেমে যায়।গোধূলি দীপ্তকে মুখ ভেঙচিয়ে এখান থেকে উঠে ওর ঘরে চলে যায়।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here