#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-২৪
– আম্মু তুমি দেখলে ও কি বলে গেল?
ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো দীপ্ত।দীপ্তি বেগম ছেলের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
– দীপ্ত তুইও না!কি দরকার ছিল ওকে খুঁচা মেরে কথা বলার।তুইয়েই তো আগে শুরু করিস!তারপর ঔ তার সাথে তাল মেলায়!
মায়ের কথা শুনে দীপ্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
– বাহ!ভালোই!কোথায় ছেলের পক্ষ নিবে!তা না করে ভাইঝির পক্ষ নিচ্ছো!দিস ইজ নট ফেয়ার আম্মু!
– হয়েছে হয়েছে!তোকে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না!ওতে আমি গলছি না!আমার অনেক কাজ আছে আমি যাই।
দীপ্তি বেগম মুখ টিপে হেসে চলে যাচ্ছেন।দীপ্ত অবাক স্বরে বললো,
– যাক বাবা!আমি আবার কখন তোমায় ব্ল্যাকমেইল করলাম আম্মু?চলে যাচ্ছ কেন বলে যাও?
দীপ্তি বেগম ছেলের কথার পাত্তা না দিয়ে চলে গেলেন।আর এই দিকে উপস্থিত সবাই দীপ্তের এই অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।একমাত্র গোধূলিই ওকে জব্দ করতে পারে।দীপ্তের সাথে আর কেউ কথায় পারুক বা না পারুক গোধূলি ঠিকই পারে।আদিবা ওর হাসি দমিয়ে রেখে বলে,
– দীপ্ত!আমার সাথে একটু আয় তো!
– কোথায় আদিবাপু?
– তুই আগে আয়।তাহলেই তো দেখতে পাবি!আমি আমার ঘরে গেলাম তুই আয় কেমন।
– ওকে।চল যাচ্ছি।
★
দীপ্ত সেই কখন থেকে আদিবার ঘরে বসে আছে কিন্তু আদিবার কোনো খবরই নাই।অপেক্ষা করতে করতে এক সময় দীপ্ত আদিবার বিছানায় শুয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।কালকে রাতে এ বাড়ি ও বাড়ি করে ঘুমটা হয় নি!আর সকালেও মায়ের ডাক আর আদিবার ফোন পেয়ে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি।তাই এই ভর দুপুরে খুব ঘুম পাচ্ছে আর দীপ্ত ঘুমিয়েও গেছে।
– বুবু বুবু!ও বুবু….
আদিবার বিছানায় কাউকে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে গোধূলি ওর পুরো কথা না বলে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে যায়।কিচ্ছুক্ষণ বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,
-ওমা!বুবু তুমি এই ভর দুপুরবেলা এইভাবে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছো কেন?তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?বুবু!
আদিবার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে গোধূলি বিছানার কাছে গিয়ে বারকয়েক ডাকে। কিন্তু আদিবা তো কোনো কথাই বলছে না।গোধূলি ভাবছে আদিবা হয়তো ইচ্ছে করে কথা বলছে না।গোধূলি আদিবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির রেখে ভারী কন্ঠে বললো,
– আচ্ছা বুবু তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না?দশ মিনিটও হয় নি তুমি ঘরে এলে এর মধ্যেই তোমার ঘুম পেয়ে গেলো!বুঝি বুঝি আমি সব বুঝি!এই সব ভনিতা না করে উঠে বসে তো তাড়াতাড়ি।তোমার সাথে আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।বুবু!আরে এই বুবু উঠো না।
অনেকটা জোরেই আদিবাকে ডাকছে গোধূলি।কিন্তু আদিবার তো উঠার নামেই নেই বরং নড়েচড়ে আরো ভালো করে শুইয়ে পরলো।দীপ্তকে আদিবা ভেবে গোধূলিও এসে শুয়ে পড়ে দীপ্ত যেদিকে মুখ করে শুয়ে আছে সেই দিকে।শুয়ে শুয়ে গোধূলি ভাবছে,হয়তো রাত জেগে রায়ানের সাথে কথা বলায় ওর বুবুর ঘুমটা হয় নি!আর সকালেও তো ঘুমাতে পারে নি।
গোধূলির ভাবনার মাঝেই দীপ্ত গোধূলিকে অনেকটা পাশবালিশের ভঙ্গিমায় জড়িয়ে ধরে।যদিও সেটা অঅনিচ্ছাকৃত ভাবেই,ঘুমের ঘোরে।কম্বলসহই দীপ্ত গোধূলিকে জড়িয়ে ধরলো।গোধূলিকে এইভাবে জড়িয়ে ধরায় গোধূলি বেশ অবাক হয়।কেননা ও প্রায় সময়ই আদিবার সাথে ঘুমোয় কিন্তু এর আগে কখনো আদিবা ওকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরে নি।তাই হঠাৎ করে দীপ্তের এমন জড়িয়ে ধরাটা গোধূলির কাছে কিছুটা অস্বস্তিকর লাগছিল।পর মুহূর্তেই গোধূলির মনটা বিষাদে রূপান্তরিত হয় এটা ভেবে যে,আর তো মাত্র কয়েকটাদিন!তারপর তো আদিবা আর এই বাড়িতে থাকবে না চলে যাবে শ্বশুর বাড়ি। যদিও কাউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো বা শুয়ার অভ্যাস গোধূলির নেই।কারণ এই অভ্যাসে গোধূলি অভ্যস্ত নয়। আর ওর এইভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো ভালোও লাগে না।কেউ ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর দম বন্ধ লাগে।
কিন্তু, এখন গোধূলি কোনো নড়াচড়া না করে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে শুধু এটা ভেবে যে, ওর বোন ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।গোধূলিও এবার আদিবা ভেবে দীপ্তকে জড়িয়ে ধরলো।দুইজনে কতক্ষণ ওইভাবে শুয়ে ছিল কে জানে!যখন গোধূলির ঘুম ভাঙ্গে তখন ঘড়ির কাঁটা বলছে ৪টা বেজে ২৫ মিনিট।
ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে একটা লম্বা হাই তুলে গোধূলি।ওর পেটের উপর থেকে দীপ্তের হাতটা সড়িয়ে পাশে তাকাতেই গোধূলির চোখ কোটর থেকে রেরিয়ে আসার উপক্রম।খাট থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে চোখ বুজে দেয় এক গগনবিদায়ী চিৎকার।গোধূলির চিৎকারে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে দীপ্ত।দীপ্ত উঠে বসতেই গোধূলি আবার দেয় এক চিৎকার। ঘটনা কি ঘটলো দীপ্তের বুঝতে একটু সময় লাগলো।অবশ্য লাগারই কথা।দীপ্ত কারো চিৎকারের ফলে ঘুম থেকে সজাগ হয়। তারপর আবার যখন গোধূলির চিৎকার করে তখন দীপ্ত পাশে তাকিয়ে দেখে এটা গোধূলি!গোধূলি যখন আবার চিৎকার করতে যাবে দীপ্ত তখন তড়িৎ গতিতে এসে গোধূলির মুখটা চেপে ধরলো।গোধূলির এমন চিৎকারে বিরক্ত হয়ে চোয়াল শক্ত করে চাপা স্বরে বললো,
– কি হয়েছে এই ভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?
– উম্মম উম্মম…
দীপ্ত গোধূলির মুখ চেপে ধরে আছে ফলে গোধূলি কথা বলতে পারছে না।দীপ্ত গোধূলিকে মুখে ওইরকম শব্দ করতে দেখে গোধূলির মুখটা ছেড়ে দিয়ে একটু সড়ে দাঁড়ায়।গোধূলি ছাড়া পেয়ে বুকে হাত দিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে দীপ্তের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বাজখাঁই গলায় বললো,
– চিল্লাবো না তো কি করবো!আপনি বুবুর ঘরে কি করেন?
গোধূলির কথায় দীপ্ত বেশ অবাক হয়ে বললো,
– আমি কি করি মানে?তুই দেখতে পাস নি আমি ঘুমোচ্ছিলাম?
– হুম।
– তো?
গোধূলি কর্কশ গলায় বললো,
– তো?আপনি জানেন কি করেছেন?
– কি করেছি?
– আপনি আমাকে জড়ি….
এতটুকু বলেই গোধূলি থেমে যায়।মুখ চেপে ধরে মনে মনে বললো,এ আমি কি বলতে যাচ্ছিলাম!নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো কাজ করতে যাচ্ছিলাম!ইসস,এখন যদি আমি বলে দিতাম যে উনি এতক্ষণ আমার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলেন।ইসস কি লজ্জাজনক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তাম তাহলে!লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহ এই মহাবিপদ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
গোধূলিকে চুপ থাকতে দেখে দীপ্ত রুদ্ধ গলায় বললো,
– আমি তোকে কি?কি হলো বলছিস না কেন?
দীপ্তের ধমকে আঁতকে উঠল গোধূলি।এই কথা কি আর বলা যাবে,ছিঃছিঃ।গোধূলির গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– না মানে আসলে কিছু না।আমি টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!তাই চিৎকার করেছি!
দীপ্ত গোধূলির দিকে কিছুক্ষণ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকে।গোধূলি মিথ্যা বলছে সেটা খুব ভালোই আন্দাজ করতে পারছে দীপ্ত।কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে যায়।দীপ্ত চলে যেতেই বাড়ির সবাই এসে আদিবার ঘরে জমা হয়।গোধূলি এমনিতেই অসুস্থ তার উপর ওর এমন চিৎকার শুনে সবাই খুব চিন্তিত মুখে তাকিয়ে গোধূলির দিকে।গোধূলির এমন চিৎকার করার কারণ জানতে চাইছে সবাই।কিন্তু গোধূলির তো সবাইকে দেখে গলা শুকিয়ে গেছে।ও এখন কি বলবে?সত্যি কথাটা তো আর বলতে পারবে না।কিন্তু কিছু একটা তো বলতে হবে।গোধূলি মেকি হেসে বললো,
– আরে কিছু হয় নি আমার।আসলে আমি একটা টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই চিৎকার করি যাতে আমার চিৎকার শুনে টিকটিকিটা চলে যায়!
গোধূলি মিথ্যা বলে না।সবাই জানে গোধূলি টিকটিকিকে খুব ভয় পায়।তাই কেউ ওকে আর কোনো কিছু জিজ্ঞাস না করেই চলে যায়।সবাই চলে যেতেই গোধূলিও রাগে গজগজ করতে করতে আদিবার ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।ওর রুমের দিকে যেতে যেতে রাগে চাপা গলায় বলছে,
– শয়তান!হনুমান!বজ্জাত লোক!এলিয়েন কোথাকার। সবাইকে আমার মিথ্যে বলতে হয়েছে শুধু উনার জন্য।বাড়িতে কি ঘরের অভাব পড়েছিল নাকি? উনাকে কেন ওই ঘরেই ঘুমাতে হবে?শরীরে কি পারফিউম মাখে কে জানে!কেমন বিদঘুটে গন্ধ!ইয়াক!
গোধূলি ওর ঘরে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হবে বলে।
চলবে…..