দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ২৬

0
351

#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-২৬

সন্ধ্যা নেমেছে অনেক্ষণ আগেই।আদিবার সব ফ্রেন্ডরাও চলে এসেছে।সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।

– আদিবা তোর কিউটি বোন গোধূলি কোথায়?সেই কখন এলাম তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না।

ইফতির কথায় আদিবার টনক নড়ে।এতক্ষণ গোধূলির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।আদিবা করুন স্বরে বললো,

– তোদের বলতে ভুলে গেছি রে ও একটু অসুস্থ।

– কি হয়েছে?

আদিবা সবাইকে সবটা খুলে বলে।তারপর ওদের সবাই এখানেই বসতে বলে আদিবা গোধূলির ঘরে চলে গেলো।আদিবা চলে যেতেই ইফতি, রোহান, সিফাত, সোনিয়া, মুক্তি,রুহি,নিজেদের মতো করে আলোচনা করতে থাকে।

জাকিয়া বেগম জ্যোতি বেগমের মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো।তাই জ্যোতি বেগমকে কল দিয়ে জেনে নেন উনার মা কেমন আছেন।জ্যোতি বেগম বললেন,আগের থেকে এখন একটু ভালো আছেন।জাকিয়া বেগম কথা বলা শেষ করে ফোনটা রেখে রাতের জন্য কি রান্না করবেন তার বন্দবস্ত করছেন।ফ্রিজ থেকে মাংস আর মাছ নামিয়ে ভিজিয়ে রাখলেন।

জাকিয়া বেগমকে ফোনে কথা বলতে দেখেছিলেন শিখা বেগম।কিন্তু উনাকে আহসান সাহেব ডাক দেওয়ায় আর রান্না ঘরের দিকে আসতে পারেন নি।আহসান সাহেবের কথা শুনে এসে টি পট থেকে চায়ের কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললেন,

– কার সাথে কথা বলছিলে বুবু?
– জ্যোতির সাথে।
– ওহ কখন আসবে বলল।
– রাতেই চলে আসার জন্য বলছিল আমি বারণ করে দিয়েছি।দুইটা বাচ্চা নিয়ে এত দূরের রাস্তা রাতে আসার দরকার নেই। বলেছি কাল সকালে আসতে।
– ভালো করেছ।এই নাও ভাইজান চা চেয়েছিলো।এটা নিয়ে তুমি উপরে যাও।আমি বরং এই গুলো আদিবার বন্ধুদের দিয়ে আসি।

জাকিয়া বেগম আহসান সাহেবের জন্য চা নিয়ে চলে যান।আর শিখা বেগম বাকি চায়ের কাপ গুলো নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে চলে যান।

– সাজি….

আদিবার গলার আওয়াজ শুনে গোধূলি দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়ে।গোধূলির পিছন পিছন আদিবা হুড়মুড়িয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে।বিছানার কিনারায় বসে গোধূলির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞাস করে,

– সাজি এই ভর সন্ধ্যা বেলায় এইভাবে শুয়ে আছিস কেন?আজকে ছাদেও যাস নি?শরীরটা কি খারাপ লাগছে?
– ভালো লাগছে না বুবু।
– খুব খারাপ লাগছে কি?
– নাহ!
– তাহলে?
– এমনিতেই ভালো লাগছিল না তাই শুয়ে আছি।বুবু বড়দা ভাইকে একটু ডেকে দেবে?

খুব করুন সুরে কথাটা বলে গোধূলি।আদিবা গোধূলির মাথার পাশ থেকে উঠে সামনে এসে বসে।গোধূলির চোখ দুটো ছলছল করছে।ওর চোখে পানি দেখে আদিবা আঁতকে উঠে।আদিবা উৎকন্ঠিত স্বরে জিজ্ঞাস করলো,

– বোন তোর কি হয়েছে?তুই কাঁদছিস কেন?আমাকে বল, কি করতে হবে?
– বুবু আমার খুব খারাপ লাগছে।আমার এই বাড়িতে একদম ভালো লাগছে না।তুমি একটু বড়দা ভাইকে ডেকে দাও না।

নিজের কাঁন্নাকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না গোধূলি।আদিবাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদেই উঠলো।ঘটনাটা আদিবার কাছে একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।কি করবে বুঝতে পারছে না।এই দিকে বোনের কাঁন্নাও সহ্য হচ্ছে না।গোধূলি কিছু বলছেও না।শেষে উপায় না পেয়ে আহানকে কল করে আসতে বলে আদিবা।সন্ধ্যা বেলায় সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় গোধূলির কাঁন্নার আওয়াজ তাঁদের কান অব্দি এসে পৌছায় নি।আহান আদিবার কল পেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে।

– সাজি!

আহানের আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে গিয়ে আহানকে জড়িয়ে ধরলো গোধূলি।কাঁন্নার পরিমানটা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।গোধূলিকে এইভাবে কাঁদতে দেখে আহানও বোনকে জড়িয়ে ধরে।বোনের মাথায় চুমো একে দেয় বারকয়েক।বোনকে শান্ত করার জন্য আহান গোধূলির হাতগুলো ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।থুতনিতে ধরে মুখটা উপরে তুলে দুগাল ধরে বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্যে চোখ মুছিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো,

– কি হয়েছে আমার লক্ষ্মী বোনটার?

গোধূলি আবার আহানকে জড়িয়ে ধরে।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।আহান আগের ভঙ্গিতেই ফের প্রশ্ন করলো,

– তোকে কি কেউ বকেছে?

আহানকে জড়িয়ে ধরেই মাথা ডায়ে বায়ে নাড়িয়ে বুঝালো ওকে কেউ বকে নি।অতিরিক্ত কাঁন্নার করার ফলে গোধূলির হেঁচকি উঠে গেছে।আহানের কথার উত্তর দিতে পারছে না।তাও অনেক কষ্টে টেনে টেনে কথাটা বলল,

– দাভাই আমার এই বাড়িতে দম বন্ধ লাগছে আমাকে তুমি বাহিরে নিয়ে চলো।

– চল।

ছোট বেলা থেকেই হঠাৎ হঠাৎ গোধূলির কি যেন হয়ে যেতো।নিজেকে ঘরবন্দী করে নিতো।বাড়ির সবাই কত্তো চেষ্টা করতো গোধূলিকে স্বাভাবিক করার।কিন্তু কেউই পারতো না।একমাত্র আহানেই গোধূলিকে সামলাতে পারতো।আহানকেই ওর সাথে পাশে থাকতে দিতো।ধীরে ধীরে একসময় আহান গোধূলির কাছে আস্তার ঠিকানা হয়ে গেছে।একটু আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি অন্য সবার থেকে গোধূলি আহানকেই বেশি ভরসা করে আর ভালোবাসেও।আহানও ঠিক তেমনি!গোধূলির এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে একবার তো এক্সাম হল থেকেই চলে এসেছিল আহান।ভাগ্য ভালো ছিল সেটা প্রথম সেমিস্টার এক্সাম ছিল।বহুবার আহান এমন করেছে।বোন অন্ত প্রান এক্কেবারে যাকে বলে আহানের ক্ষেত্রেও তাই।গোধূলির এমন করার কারণ অজানা।অনেকবার ডাক্তারও দেখানো হয়েছে।ডাক্তার বলেছে,অনেক সময় এমন হয়ে থাকে। একাকিত্বের ফলে আকাশ কুসুম চিন্তা করে ফ্রাস্ট্রেশনে এমন করে থাকে।কিন্তু গোধূলিকে তো কখনো একা রাখা হয় নি।তাহলে কেন এমন করে?ওকে জিজ্ঞাস করলে প্রতি বারই চুপ থাকতো।এর উত্তর কোনোদিনও গোধূলি দেয় নি।ও মাঝে মাঝেই এমন করতো।অনেক বছর হয়ে গেছে গোধূলির এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটে না।তবে আজ আবার কেন?সারা রাস্তা পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে আসছিল আহান।কল আসায় গাড়ির ব্রেক কষে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দীপ্ত কল করেছে।

– হে দীপ্ত বল।

এতক্ষণ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিল গোধূলি।সারাটা রাস্তা ও এইভাবেই ছিল।ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আহান অনেকবার বোনের মাথায় হাতও বুলিয়ে দিয়েছে।দীপ্তের নাম শুনা মাত্রই মাথা তুলে চকিতে আহানের দিকে তাকায় গোধূলি।অপর পাশের মানুষটির কথা শুনা যাচ্ছে না।পরমুহূর্তেই আহান কল কেটে দিয়ে ফোনে কিছু একটা করে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে গাড়ি ধামায় আহান।গাড়ি থামতেই গোধূলি চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে তারা কোথায় আছে।আহানের দিকে তাকাতেই আহান ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি টেনে বলে,

– আগে গাড়ি থেকে নাম।তাহলেই বুঝতে পারবি।

আহান গাড়ি থেকে নেমে গোধূলিকে সাবধানে নামায়।

– আরে আহান দাদুভাই যে! অনেকদিন পর এলে যে বড়।এতদিনে বুঝি আমাদের কথা মনে পড়লো?ওমা সাজি বুড়িকেও বুঝি আজকে নিয়ে এলে?

পরিচিত কন্ঠ শুনে সামনে তাকাতেই আব্দুল্লাহ মিয়াকে দেখে আহানের দিকে ছলছল চোখে তাকায় গোধূলি।
অন্ধকারে বুঝতে পারে নি আহান ওকে কোথায় নিয়ে এসেছে।কিন্তু এখন আব্দুল্লাহ মিয়াকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আহান ওকে ওদের ”ঠিকানায়”নিয়ে এসেছে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here