#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩১
– এই দীপ্ত এতক্ষণ কোথায় ছিলি রে?
দীপ্তকে বাসায় ঢুকতে দেখে আদিবা জিজ্ঞাস করলো।দীপ্ত স্মিত হেসে বললো,
– আদিবাপু আমি একটু কাজে আটকে গিয়েছিলাম।এখন বলো কি করতে হবে।
– তোকে কিছু করতে হবে না।তুই ছাদে যা সবাই ওইখানেই আছে।
– আম্মু কোথায় গো?
– ফুপি একটু বাসায় গেছে।কাল সকালে আসবে।তোর ফোন সুইচ অফ ছিল তাই তোকে জানাতে পারে নি।ফুপি বলে গেছে রাতে তোকে আমাদের বাসাতেই থেকে যেতে।এখন তুই ছাদে যা আমি আসছি কেমন।
– ওকে।
_________
– আরে দীপ্ত যে!এই বুঝি তোমার আসার সময় হলো!তোমাকে সবাই ফোনে কত ট্রাই করছিলাম বাট তোমাকে তো পাওয়াই যাচ্ছিল না!যাকগে এখন তুমি এসে গেছো তো গাইস লেটস স্টার্ট!
– এক সেকেন্ড সিফাত ভাইয়া!আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!শুরু করবে মানে? কি শুরু করবে?
– আরে দীপ্ত আগে তুমি এখানে এসে বসো তো!দেন তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি!
রোহান উঠে এসে দীপ্তকে টেনে নিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসালো।দীপ্ত বললো,
– ঠিক আছে এখন তো বসলাম!এবার বলুন কিসের কথা বলছিলেন?
– দীপ্ত!ভাই আমার আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি।
ইফতির কথায় এতক্ষণে দীপ্ত ওর দিকে তাকায়।যদিও ভালো মনে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে ছিল।কিন্তু মন আর বেশিক্ষণ ভালো রইলো না। ইফতির ঠিক বাম পাশে গোধূলিকে বসে থাকতে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল!ও তো কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই ইফতি আসার পর থেকেই গোধূলির সাথে সব জায়গায় কেন এইভাবে ছায়ার মতো লেগে থাকে।আর গোধূলিকেও বলি হারি! এই ইফতিকে এত পাত্তাই বা দেওয়ারই বা কি আছে।আচ্ছা ও মানছে,ওর মামীর বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলে আদিবারো বেস্ট ফ্রেন্ড!তো কি হয়েছে?সব সময় গোধূলিকে কেন এই ইফতির সাথে বসে থাকতে হবে?
– আরে এই দীপ্ত ভাইয়া!কোথায় হারিয়ে গেলে?
ইহানের ধাক্কায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে দীপ্ত।নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
– জ্বি ভাইয়া আপনি যেন কি বলছিলেন?
– আমি,রোহান,সিফাত,সোনিয়া,মুক্তি,রুহি,ইহান,
আহান,লাজুক,গোধূলি,তুমি,আদিবা আমরা বারো জন আছি।সো আমরা এখন পালাবদল খেলবো।
– হোয়াইট ইজ পালাবদল?আর এইসব খেলা এখন ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে।
– তো?
– তো এই খেলা ক্যান্সেল।গাইস আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে পারি!এটা তাও ইন্টারেস্টিং আছে।যারা ট্রুথ নিবে তাঁদের মাধ্যমে আমরা অনেক সিক্রেট তথ্য জানতে পারবো,আর যারা ডেয়ার নিবে তাঁরা নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে।খুব ভালো হবে না ব্যাপারটা?বেশ ইন্টারেস্টিং হবে!সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম আর তার আগে আমার কিছু…..
– নাআআ!
দীপ্তের কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই গোধূলি চিৎকার করে উঠে।
– কি হলো গোধূলি?তুমি আবার দাঁড়িয়ে গেলে কেন?
– রুহি আপু আমার একটা কাজের কথা মনে পরে গেছে তোমরা বসো আমি আসছি।
গোধূলি আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে চলে যেতে নেলেই দীপ্ত বলে উঠে,
– ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে হবে এটা শুনে অনেকেই ভয় পাচ্ছে রুহি আপু।ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক!সবাই তো আর সাহসী না!কিছু মানুষ ভীতুও হয়।
কয়েক কদম এগিয়ে দীপ্তের কথায় থেকে যায় গোধূলি।হনহন করে চলে এসে আবার আগের জায়গায় বসতে বসতে বলে,
– রুহি আপু….
– না গোধূলি তোমার কাজ থাকলে যেতে পারো!আমরা না হয় একটু অপেক্ষা করবো!
– তার আর দরকার নেই আপু।গোধূলি এত ভীতু নয় যে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে ভয় পাবে!
– ওহ রিয়েলি গোধূলি? তাহলে আমি যখন বলছিলাম তখন ওমন নাআআ বলে চেঁচালি কেন?
দীপ্ত কিছুটা মুখ ভেঙচিয়ে কথাটা বলে।দীপ্তের উপর গোধূলির বিশাল রাগ হচ্ছে।না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে।রাগে শুধু ফোঁসফোঁস করে দম ছাড়ছে।মনে মনে ভাবছে,ধুর চলে গেলেই তো ভালো হতো।কেন যে এই বদ লোকটার কথায় ফিরে এলাম!কি না কি ট্রুথ ডেয়ার দিয়ে দিবে শেষে আমাকে লজ্জায় পড়তে হবে।এমনিতেই এখানে আমি সবার থেকে কত ছোট। কারো কথা ফেলতেও পারবো না!
– আরে এই গোধূলি!তুই এত কি ভাবছিস বল তো?
লাজুকের ডাকে গোধূলি ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
– হুম!কিছু না লাজুবু।আচ্ছা আমি একটা কথা বলছিলাম কি কালকে তো অনেক কাজ আছে তো আজকে সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া দরকার!তা না হলে সকালে উঠতে পারবে না তোমরা!
– আমাদের এইসব উনিশ বিশ বুঝাতে আসবি না!সবার কথা তোকে ভাবতে হবে না।তুই বাচ্চা মানুষ! যা তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
– আমি কি বলেছি আপনাকে আমার ঘুম পাচ্ছে?আর আমি তো ভালো কথাই বললাম।
– তোর ওই ভালো কথার মানে আর কেউ না বুঝলেও আমার বুঝা হয়ে গেছে। সো এত ড্রামা না করে সোজাসাপ্টা বলে দিলেই হয় তুই এই গেইমটাই খেলতে চাস না।তুই খুব ভয় পাচ্ছিস আর…..
দীপ্তের কথায় ফোঁস করে উঠলো গোধূলি।ওর পুরো কথা না শুনেই গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– বড়দা ভাই শ্যাম্পেনের বোতলটা আমার কাছে দাও তো।খেলাটা না হয় আমিই আগে স্টার্ট করি।
গোধূলির মুখ থেকে এই কথা শুনবে বলেই তো সেই কখন থেকে হাপিত্যেশ করছিল দীপ্ত!আহানের কাছ থেকে শ্যাম্পেনের বোতলটা নিয়ে গোধূলি যেই ঘুরাবে ওমনি দীপ্ত বলে উঠলো,
– এক মিনিট!আগে খেলার নিয়মটা ভালো করে শুনে নিবি তো নাকি?
– আপনার কি মনে হয় আমি নিয়ম জানি না?
– উফফ গোধূলি তুই না বেশি বুঝিস!আমার পুরো কথাটা তো শুনবি!
– আচ্ছা দীপ্ত গোধূলির কথা বাদ দে।তুই বল কি বলবি।
– সেটাই তো করতে যাচ্ছিলাম আহান!কিন্তু তোর বোন তো আমাকে বলতেই দিচ্ছে না।
– আচ্ছা এখন বল!
– আমরা এইখানে দুইটা বক্স রাখবো।একটাতে ট্রুথ এর জন্য প্রশ্নের চিরকুট রাখা হবে আরেকটাতে ডেয়ার এর চিরকুট রাখা হবে।যে যেটা চুজ করবে তাকে সেটাই দেওয়া হবে। ট্রুথ নিলে প্রশ্নের অনেস্টলি উত্তর দিতে হবে!আর ডেয়ার নিলে চিরকুটে যা লেখা থাকবে সেটাই করতে হবে!আর একটা কথা এটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট।যার যখন টার্ন থাকবে সে বোতল ঘুরানোর আগেই একজনকে চুজ করে নিবে।আর সে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে যাকে চুজ করবে সে উল্টো ট্রুথ অর ডেয়ার দেওয়ার সুযোগ পাবে।
– বাহ!দীপ্তের এই ভিন্ন ধরনের আইডিয়াটা তো বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে!তাহলে আর দেরি কেন খেলা শুরু করা যাক।
– দাঁড়ান মুক্তি আপু!ইহানকে বক্স আর কাগজ-কলম আনতে পাঠিয়েছি।আগে সবকিছু লিখে নেইইই!
গোধূলির বেশ সন্দেহ হচ্ছে এবার।কারণ লাস্টের কথাটা দীপ্ত অনেকটা টেনে বলেছে!তাও আবার গোধূলির দিকে তাকিয়ে!
____________
এতক্ষণ খুব ভালো ভাবেই খেলা চলছিল কিন্তু দীপ্তের টার্ন আসতেই দীপ্ত গোধূলিকে চুজ করে নিলো!আর গোধূলি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে যাতে দীপ্ত ব্যর্থ হয়!শেষ রক্ষা আর হলো না!এতক্ষণ কেউ ঠিকঠাক নিশানায় লাগাতে পারে নি।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীপ্ত ঠিকই গোধূলিকে তাক করছে!
– বাব্বা!দেখেছ আমরা এতক্ষণ কেউই ঠিকঠাক নিশানায় লাগাতে পারি নি দীপ্ত ঠিকই জিতে গেলো!
সবাই সমস্বরে বাহবা দিচ্ছে দীপ্তকে।দীপ্ত ভাব নিয়ে বললো,
– তা গোধূলি এখন তুই চুজ কর কি নিবি ট্রুথ অর ডেয়ার?
– আমার বোন কি ভীতু নাকি যে ট্রুথ নিবে?সাজি ডেয়ার নিবে।দাঁড়াও দীপ্ত ভাইয়া আমি হেল্প করছি সাজিকে!
ইহানের কথা শুনে গোধূলির সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।কি দরকার ছিল ওকে আগ বাড়িয়ে বলতে যাওয়ার?আবার ওইখান থেকে উঠে চলেও এসেছিস ওকে হেল্প করতে।আমি কি তোকে হেল্প করতে বলেছি?ইচ্ছে করতে এক ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেই!কি না কি ডেয়ার লেখা আছে একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানেন।দাঁড়া আমাকে ফাঁসালি তো তুই এর মজা আমি তোকে পরে বুঝাবো!গোধূলি মনে মনে এইসব বলছে আর ইহানের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
ইহান এসে ডেয়ারের বক্স থেকে একটা চিরকুট নিয়ে ইফতির কাছে দেয়!ইফতির কাছ থেকে একে একে হাত বদল হতে থাকে!সবাই চিরকুটটা এক নজর দেখেই অন্য জনকে দিয়ে দিচ্ছে! এইভাবে এক সময় চিরকুট গোধূলির কাছে এসে পৌঁছায়।গোধূলি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না!চিরকুটটা হাতে নিতেই মুখ হা হয়ে আসে গোধূলির। সবার প্রায় একই পোজ দেখে দীপ্ত গোধূলির হাত থেকে চিরকুটটা রীতিমতো জোর করেই নিতে নিতে বিরক্তির স্বরে বললো,
– আমি বুঝতে পারছি না এই চিরকুটটাতে কি এমন আছে যে, যেই হাতে নিচ্ছে সেই এইরকম স্ট্যাচু হয়ে যাচ্ছে।
সবার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দীপ্ত চিরকুটটায় তাকাতেই ওর চোখ ছানাবড়া।ও নিজেও এটা এক্সপেক্ট করে নি।ইনফ্যাক্ট যেখানে অন্য ছেলেরা আছে সেখানে এই ডেয়ার লেখার প্রশ্নই আসে না।এই চিরকুটটা ও লিখেই নি।
চলবে……..