#পতিতা_বউ
১৯তম পর্ব
সেলিম নিজের দলবল নিয়ে মহুয়া পল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
নুহা আফিফের সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।
>>আজ এক্সাম কেমন হয়েছে?
>>অনেক ভালো।
>>কালকে এক্সাম আছে?
>>না নেই আজকে সারারাত গল্প করে কাটাবো কিন্তু ঘুমাতে দিবোনা তোমাকে।
>>এমনেও কোন রাতে ঘুমাতে কি দিয়েছো? সারারাতই বক বক করো।
>>হিহি আজকে আরো বেশি করবো।
>>হুহ তো আসছো কখন?এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। আটটা তো বেজে গেছে।
>>হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি একটা কাজে আটকা পড়েছি। আমার বৌ টা বুঝি আমায় মিস করছে?
>>হুহ একদম না। তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু বাই।
নুহা কল টা রেখে দিয়ে একটু হাসলো। আফিফের পাগলামি দিন দিন বাড়ছে। আর এই পাগলামি গুলোই যেন নুহা বার বার তার প্রেমে পড়ে যায়। আফিফ যে তাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে তা সে এতদিনে হারে হারে বুঝে গেছে।
সেলিম তার দলবল নিয়ে হুরমুর করে কুঠির ভেতরে ঢুকে পড়লো। শবনম বেগম সেলিমকে দেখে ঘাবড়ে গেলেন।
>>কিরে তুই এহানে কেন আইসোস?
>>নুহারে নিয়া যাইতে আইসি।
>>নুহা এইখানে নাই। তোরে আমি আগেও কইসি নুহা রে আমি আরেক কুঠিতে পাঠাইয়া দিছি।
>>মিথ্যা কইবানা শবনম আপা। আমি জানি নুহা এই কুঠিতেই আছে। সোজাসুজি ওরে আমার কাছে দিয়া দাও আপা নাহয় আমি রক্তারক্তি কান্ড ঘটাইয়া ফালামু।
>>খবরদার সেলিম নুহার গায়ে হাত ও দিবি না তুই। নাহয় আমার থেইকা খারাপ কেউ হয়বোনা।
>>আমারে বাধ্য করলা আপা। ওই উনারে ধইরা রাখ।
সেলিমের কথা শুনে তার লোকজনেরা শবনম বেগমকে ঘিরে ধরলো। সেলিম উপরে চলে গেলো নুহার রুমে। নুহা ঘুমিয়ে ছিলো তাই বাহিরের এত শোরগোল তার কানে যায়নি। ঘুমন্ত নুহা কে দেখে যেন সেলিমের লালসা আরো বেড়ে গেলো। সে নুহা গায়ে হাত বুলাতে লাগলো। নুহা ভাবলো হয়তো আফিফ। সে ঘুম হতে উঠতে উঠতে বললো,
>>এসেছো তুমি?
কিন্তু নুহা চোখ খুলে সেলিম কে নিজের এতটা কাছে দেখে প্রচণ্ড ভয় পেলো। সেলিম কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে গায়ের কাপড় আর ওড়না ঠিক করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
>>আ..পনি এখা..নে কেন?
>>তোমারে নিয়া যাইতে আইসি পাখি।
>>মা..মানে?
>>মানে বুঝোনাই তোমারে আমার সাথে নিয়া যামু আমার রক্ষিতা বানাইয়া রাখমু। চলো আমার সাথে।
নুহা এই কথা টি শুনে যেন তার ভয় আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। সে কেঁদে দিলো,
>>ন.না আমি আপনার সাথে যাবোনা।
>>তুই যাবিনা মানে আমি তোরে নিয়াই যামু।
সেলিম নুহার হাত ধরে টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে যেতে লাগলো। শবনম বেগম চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছেন নুহাকে ছেড়ে দিতে।
সেলিম যেই না নুহাকে নিয়ে বের হবে আফিফ এসে দরজায় দাঁড়াই।
আফিফ এসে দেখে সেলিম নুহার হাত ধরে টানছে আর নুহা কেঁদে কেঁদে বলছে “প্লিজ ছেড়ে দিন আমায় আমি যাবোনা”
আফিফ রাগী গলায় সেলিম কে বললো,
>>নুহার হাত ছাড়ো।
>>ওই পোলা কে তুই? ওরে আমি নিয়া যাইতাসে। সর সামনে থেইকা।
>>ওর হাত ছাড়। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
>>কি খারাপ করবি তুই? তুই চিনোস আমারে? খুন কইরা গাঙে ভাসাইয়া দিমু।
>>তোরে আমার চিনার দরকার নাই। কিন্তু হয়তো তুই আমাকে চিনোস না। তোর মত যত অনেক গুলারে আমি পালি। আমারে খুন করার ভয় দেখাস। আমার পরিচয় টা তোরে দিতেই হবে মনে হয়।
>>কেডা তুই হ্যা সেলিম রে ভয় দেখাস।
>>আমি আফিফ আফসার। নিশ্চয় জানোস ভালোভাবে আমি কে? চুপচাপ দলবল নিয়ে এখান থেকে এক্ষুনি বের হো। নাহয় তুই ভালই জানোস আমার ক্ষমতা কতটুকু।
এটা শুনার সাথে সাথে সেলিম নুহার হাত ছেড়ে দিলো। তারপর তার দলবল নিয়ে বের হয়ে গেলো। নুহা পুরাই থ। আফিফের এত ক্ষমতা নুহার তা ধারণাতেই ছিলোনা। শবনম বেগম কাঁদতে কাঁদতে নুহা কে জড়িয়ে ধরলেন। নুহা ও কাঁদছিল। শবনম বেগম আফিফ কে বললেন,
>>আপনাকে লাখ লাখ ধন্যবাদ সাহেব। আমার কলিজা টারে বাঁচানের জন্য।
আফিফ মুচকি হাসলো। কিন্তু আফিফ প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। তার মনে হচ্ছিলো যদি তার আসতে এক মিনিট ও লেইট হতো তবে নুহাজে সে হারিয়ে ফেলতো। শবনম বেগম নুহাকে বললেন,
>>আমি জানি সেলিম কিন্তু আবারো আইবো তরে নিয়া যাইতে। তরে আমি কেমনে রক্ষা করমু ক মা আজকে যদি তোরে নিয়া যাইতো তাহলে তো আমার বুক খালি হইয়া যাইতো।
এটা বলে শবনম বেগম নুহা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আফিফ শবনম বেগম কে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো। তারপর তার এক হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো,
>>আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তবে আমি আজই আর এই মুহূর্তে নুহাকে বিয়ে করে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই।
আফিফের কথা শুনে শবনম বেগম আর দু’জনেই অবাক হলো। আফিফ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললো,
>>আপনি চিন্তা করবেন না মামুণি আমি ওকে সবসময় সুখে রাখবো আর রক্ষা করবো।আমি নুহাকে খুব ভালোবাসি। আমি তাকে নিজের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। প্লিজ আপত্তি করবেন না।
শবনম বেগম নিজের কান্না মুছে বললেন,
>>এতে আপত্তি কিসের এটা ভাগ্যের ব্যাপার আমার মাইয়া টার জন্যে। আমার মাইয়া টা সুখে থাকলেই হয়লো। আমার কোনো আপত্তি নাই।
>>তাহলে আমি কাজী ডেকে আনছি আপনি নুহাকে তৈরি করে দিন। আজই ওকে বউ করে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো।
>>আলহামদুলিল্লাহ বাবা।
আফিফ নুহার দিকে তাকিয়ে একটি শুভ্র হাসি হাসলো। নুহার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। এসব তার কাছে যেন স্বপ্নের মত।
আফিফ বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে নুহাকে কানে কানে বললো “একটু বাহিরে আসো”
নুহা চোখ মুছে আফিফের পেছন পেছন যায়। আফিফ কার হতে একটি শাড়ী বের করে নুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
>>এটি এনেছিলাম ভেবেছিলাম তোমায় নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়ে একটু মন ভরে দেখবো। তারপর দু’জনে হাটতে বের হবো। কিন্তু কে জানতো আজ এত কিছু হয়ে যাবে। আর এই শাড়ী টা তোমার বিয়ের শাড়ীর মর্যাদা পাবে। যাই হোক এটার সাথে কিছু জিনিষপত্র ও রাখা আছে দেখে নিও।
>>আচ্ছা।
>>আর শুনো একদম মিষ্টি বউয়ের মত করে সাজবে কেমন।
এটি বলে আফিফ নুহার কপালে একটি চুমু দিলো। নুহার কেমন যেন সব সুখ সুখ লাগছে। আজ তার জীবন টা আরো একধাপ পাল্টাতে যাচ্ছে।
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan