পতিতা বউ – পর্ব ২০

0
280

#পতিতা_বউ

২০তম পর্ব

আফিফের কথা মত শবনম বেগম নুহা কে সাজিয়ে দিলেন। আফিফের দেওয়া সেই শাড়িটি নুহার অনেক পছন্দ হলো। সেটি ছিলো লাল রঙের পাড় গুলো ছিলো গাঢ় নীল,কমলা, আর সবুজ। অসম্ভব সুন্দর শাড়িটা।
সাজ গোজের পর নুহাকে যেন চাঁদের মত দেখাচ্ছিলো। সেই শাড়িটা তাকে বেশ মানিয়েছে। শাড়ির রঙের সাথে ম্যাচ করে আফিফ চুড়ি ও এনেছে সেগুলো দুই হাত ভর্তি করে পড়েছে। হালকা করে সেজেছে। কপালে টিপ। ঠোঁটে লিপস্টিক। তাকে যেন পরীর মত দেখাচ্ছে।

শবনম বেগম ছলছল চোখে নুহার কানের পেছনে একটি কালোটিপ দিয়ে বললেন,

>> জানিস মা আমি মেলা স্বপ্ন দেখতাম। তোরে বিয়া দেওনের তোরে নিজের হাতে বউ সাজানের দেখ এই স্বপ্ন গুলা আইজ পূরণ হয়লো। আল্লাহ তোর কপালে অনেক সুখ লিইখা রাখছে দেইখা নিস। আজকে তুই বউ হবি। সাহেব তোরে বিয়া কইরা নিয়া যাইবো। ওই বাড়িতে যাইয়া এই দুঃখিনী মা টারে ভুইলা যাইস না রে মা।

শবনম বেগম ঢুকরে কেঁদে উঠলেন নুহা উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখেও জল চিকচিক করছে।

>>তোমাকে কি কখনো ভুলতে পারবো মামুণি বলো তো? আজ আমি যা সব তো তোমারই অবদান। তুমিই তো আমার মা। মা কে কখনো মেয়েরা ভুলতে পারে? বলো?

প্রায় অনেকক্ষণ তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছিল।

আফিফ কাজী নিয়ে কুঠিতে ঢুকলো।
নুহার দিকে চোখ পড়তেই যেন আফিফের দুনিয়া থমকে গেলো। তার বউ টাকে আজ সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে। সব শেষে আজ সে নুহাকে নিজের করে নিচ্ছে এতে সে খুবই খুশি।

খুব সাধারণ আর সুন্দর ভাবেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। নুহা কাঁদতে কাঁদতে হয়রান। সে তার মামুণি কে খুব ভালোবাসে। উনাকে ছাড়া থাকার কথা সে ভাবতেও পারেনা।
শবনম বেগম ও আড়ালে কাঁদছেন। নুহাকে নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন তিনি। নুহাকে নিজের বুকেই রাখতেন। নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। আরো কত কি।আজ তার বুক খালি হতে যাচ্ছে। আফিফ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে শবনম বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,

>>মামুণি আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আপনার কলিজার টুকরা টা আমার কলিজা হয়ে থাকবে। আপনার যখনি ওকে দেখতে ইচ্ছে হবে তখনি চলে আসবেন আর নাহয় আমাকে একটা কল দিলেই হবে আমি ওকে নিয়ে চলে আসবো।

>>বাবা আমার আমানত টা এখন তোমার হাতে তুইলা দিছি। আমার মাইয়া টারে কখনো কোনো কষ্ট দিওনা।

>>দোয়া করবেন মামুণি। আজ আসি। চলো নুহা।

নুহা যাওয়ার আগে শবনম বেগম কে জড়িয়ে ধরে আরেক দফা কেঁদে ফেললো। অঞ্জনা দি,ফুলি এরাও কাঁদছে তাকে জড়িয়ে ধরে। আফিফের নুহার কান্না সহ্য হচ্ছিলো না। অবশেষে তারা বেড়িয়ে পড়লো।

আফিফ ড্রাইভ করছে আর নুহা তার পাশের সিটেই বসে আছে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক সে কারণ আফিফ তাকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা প্রতিদিন ভার্সিটির পরে মামুণি কে দেখতে যাবে।
আফিফ বার বার আড়চোখে নুহা কে দেখছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে। চোখের নিচে কাজল অনেক টা নেমে গিয়েছে। অপ্সরীর মত দেখাচ্ছে তাকে।

আফিফ এসে আফসার ম্যানশনের সামনে গাড়ি দাঁড় করালো। সঙ্গে সঙ্গে গার্ডরা গেইট খুলে দিলো। সে গাড়ি নিয়ে একদম ঘরের সামনে চলে গেলো। বিশাল বড় বাড়ি। একজন গার্ড এসে দরজা খুলে দিতেই আফিফ নেমে পড়লো। তারপর নুহার দিকের দরজা টা খুলে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নুহা আফিফের হাতটা ধরে বেড়িয়ে এলো।

নাহিদা তখন ড্রয়িং রুমে বসেই টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই তিনি দরজা খুললেন। আফিফের পাশে নুহা কে দেখে তিনি রীতিমত অবাক।

>>এটা কে আফিফ?

>>আমার স্ত্রী। মিসেস আফিফ আফসার। আর তোমার বউমা।

>>হোয়াট ননসেন্স আফিফ! এভাবে যে কাউকে ধরে এনে তুমি নিজের বউ বানিয়ে ফেলবে নাকি?

>>এনাফ ইজ এনাফ। আমি আমার বউ নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাই না। তোমার কাজ আমাদেরকে বরণ করে নেওয়া তা করে নাও। আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি নিজের ভালো টা নিয়ে বুঝি।

নাহিদা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সেখান থেকে চলে গেলো। রাফী আগেই ওদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে এসে পড়েছিলো। সে প্রচণ্ড খুশি। রাফি দৌড়ে এসে আফিফ কে জড়িয়ে ধরলো,

>>বাহ ব্রো তলে তলে এই ও করে ফেললি?
যাই হোক আমি অনেক অনেক হ্যাপি তোমাদের জন্য। ওয়েলকাম নুহা।

রাফি তাদের বরণ করে নিলো। তারপর তারা আফিফের রুমে চলে গেলো।

নাহিদা নিজের রুমে এসে একটি ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙ্গেছে রাগে।
” আগে শুধু আফিফ ছিলো আর এখন তার বউ ক’দিন পর বাচ্চা। আমার উচিত ছিলো আগেই একে শেষ করে দেওয়া। উফফহ নতুন নতুন ঝামেলা আর ভালো লাগেনা”

>>খবরদার ভাই আর ভাবির কোন ক্ষতি করার ট্রাই তুমি করলে আমার থেকে খারাপ কেউই হবেনা।

হঠাৎ রাফির গলা শুনে নাহিদা ফিরে তাকালেন। রাফি রাগী চোখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি আবারো বললো,

>>আমি সবসময়ই ওদের প্রোটেক্ট করার জন্য তাদের পাশে থাকবো। আর যদি তুমি কিছু করেছো তাহলে আমি এবার ভাই কে সব সত্যি বলতে বাধ্য হবো।

রাফি হন হন করে চলে গেলো। নাহিদা বিছানায় বসে পড়লেন ধপ করে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here