পতিতা বউ – পর্ব ২১

0
291

#পতিতা_বউ

২১তম পর্ব

আফিফ নুহা কে তার রুমে নিয়ে গেলো। বিশাল বড় রুম। রুমের মাঝ বরাবর একটা বেড। দু’পাশে বেড টেবিল এ দুই টা ল্যাম্প। এক কোনায় একটা ড্রাম সেট গিটার আর পিয়ানো। সেই পাশে একটা একটি বড় জানালা। অন্য এক কোণায় একটা কাউচ। রুমের সাথেই বিশাল বড় ব্যাল্কুনি। তবে সেটা এখনো দেখা হয়নি।

নুহা রুমে ঢুকে বসলো। একটু পরেই সার্ভেন্ট রা নুহার লাগেজ গুলো দিয়ে গেলো। আফিফ দরজা অফ করে দিলো। আফিফ কেমন যেন আজকে গম্ভীর হয়ে আছে। রুমে আসার পর থেকে নুহার সাথে তেমন কোনো কথায় বলেনি আর।
নুহা ও চুপচাপ বসে আছে। একটু পর কে যেন এসে দরজা নক করলো। আফিফ দরজা খুলে দিলো,

>>স্যার আপনি যা অর্ডার করেছিলেন তা এসে গেছে।

সার্ভেন্ট অনেক গুলো শপিং ব্যাগ এনে রাখলো ঘরে। নুহা বসে বসে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। ব্যাগ গুলো রাখা শেষে তারা আবার চলে গেলো। আফিফ ডোর লক করে সেই প্যাকেট গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে একটি প্যাকেট হাতে নিয়ে নুহার দিকে এগিয়ে দিলো।

>>এই নাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এই শাড়িটি পড়ে নাও।এদিকে চেঞ্জিং রুম আছে।

>>আচ্ছা।

নুহা প্যাকেট টি হাতে নিয়ে শাড়িটি বের করে নিলো। গাঢ় জাম কালারের একটা শাড়ি ছাই কালারের পাড়। হাল্কা স্টোনের কাজ করা। সাথে ম্যাচ করা ব্লাউজ পেটিকোট ও পেলো।
নুহার এই শাড়ি টিও বেশ পছন্দ হয়েছে। নুহা শাড়িটি নিয়ে বসে আছে কারণ সে শাড়ি পড়তে পারেনা। সে মাথা নিচু করে বললো,

>>শাড়ি ছাড়া কি আর অন্য কোন কাপড় নেই? আসলে আমি পড়তে জানিনা।

>>তুমি পড়তে না জানলে কি হবে আমি তো পড়াতে জানি তাই না? আমি নাহয় পড়িয়ে দেবো। তুমি বাকি গুলো পড়ে আসো।

আফিফের কথায় নুহা কিছু টা লজ্জা পেয়ে বললো,

>>আচ্ছা।

নুহা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আফিফ সার্ভেন্ট ডাক দিলো। সার্ভেন্ট আসতেই তাকে বললো,

>>তোমাকে কল দিয়ে যা বলেছিলাম তা কি করেছো?

>>জি স্যার আমরা অল্প সময়ের মধ্যে যতটুকু পারি করেছি। আর একটু সময় লাগবে।

>>ওকে ১১টার আগে যাতে কমপ্লিট হয়। আর খাবার অর্ডার করেছো?

>>জি স্যার।

>>ওকে। সব কোন এরেঞ্জমেন্ট এ যাতে ত্রুটি না থাকে। আর আমরা উপরে গেলে যে টাইমটা পাবে তার মধ্যে এই রুমটা সিম্পল করে সাজিয়ে দিবে।

>>জি স্যার।

>>ওকে নাও গো।

সার্ভেন্ট চলে গেলে আফিফ আবারো গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালো।
আজকে সে তার বাবাকে অনেক মিস করছে। হয়তো বাবা থাকলে অনেক খুশি হতো। এসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।

নুহা অনেক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলো। তারপর চুল বেধে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে শাড়িটা কোনরকম পেঁচিয়ে বের হলো। নুহার ভীষণ লজ্জা লাগছে। নুহাকে দেখে আফিফ তার দিকে এগিয়ে গেলো। শাড়িটা সরিয়ে নিলো।
নুহা লজ্জায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আফিফ যত্নসহকারে নুহাকে শাড়ি পড়ানো শুরু করলো। নুহার শরীরে আফিফের হাল্কা ছোঁয়া লাগলেই নুহার মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যেতে লাগলো।
আফিফ শাড়ির কুচি গুজার জন্য নিচে বসে পড়লো। কুচি গুলো গুজার সময় নুহার নাভীর ঠিক একদম নিচের একটি তিলে তার নজর আটকে গেলো। আফিফ সেটায় তার ঠোট ছুঁইয়ে দিতেই নুহা অনেকটা কেপে উঠলো। আফিফের প্রত্যেকটা ছোঁয়াই অন্যরকম ভালোবাসা মিশ্রিত। কুচি গুঁজে আফিফ উঠে দাঁড়ালো। নুহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আফিফ নুহার মাথার থেকে টাওয়াল টা সরিয়ে নিলো। নুহার ভেজা চুল গুলো ছড়িয়ে পড়লো। আফিফ এক দৃষ্টে তার মায়াবতী কে দেখছে। শাড়িটাই বেশ মানিয়েছে। ভেজা চুলে যেন নুহাকে অপরূপ লাগছে। আফিফ নুহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

>>একটু ওয়েট করো বউ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মাথা নিচু রেখেই নুহা উত্তর দিলো,
>>আচ্ছা।

আফিফ চেঞ্জিং রুম থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নুহা রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে ব্যাল্কুনি তে চলে গেলো। ব্যাল্কুনি তে গিয়ে নুহার চোখ আটকে গেলো। একপাশে একটা টেবিল আর ছোট একটা সোফা। ঝুলন্ত একটা দোলনা। আরেকপাশে কয়েকটা ফুলের গাছ। ব্যাল্কুনির সামনের দৃশ্য টাও সুন্দর। একটা দীঘির মত যার চারপাশে গাছ পালা। আর কৃষ্ণচুড়া গাছ বড়সড়। সেই গাছটি ফুলে ভরে আছে। রাতের চাঁদের আলোতে সব অপূর্ব দেখাচ্ছে।নুহা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব।

আফিফ বের হয়ে নুহা কে রুমে না পেয়ে ব্যাল্কুনির দিকে পা বাড়ালো। গিয়ে দেখলো নুহা দাঁড়িয়ে আশেপাশে নজর বুলাচ্ছে। নুহার ভেজা চুল গুলো যেন তাকে কাছে টানছে।
আফিফ গিয়ে নুহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আফিফের এভাবে জড়িয়ে ধরাতে নুহা প্রায় অবাক আর লজ্জিত। আফিফ নুহার চুলগুলো সব একপাশে এনে নুহার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।আফিফের সেই গরম নিঃশ্বাস গুলো এসে নুহার ঘাড়ে আর গলায় পড়ছে। আফিফের এভাবে জড়িয়ে ধরে আদর করাটা নুহার বেশ ভালো লাগছে। নুহা আফিফের হাত খামছে ধরে আছে। বেশ কিছুক্ষণ তারা এভাবেই ছিলো। দরজায় নক পড়তেই আফিফ নুহাকে ছেড়ে দিলো।

>>এক মিনিট দেখে আসি কে এসেছে।

>>হুম যাও।
নুহা লজ্জায় আফিফের দিকে ফিরতে পারছেনা। আজকে কেন জানি একটু বেশিই লজ্জা লাগছে তার।আফিফের আজকের ছোঁয়া গুলো একদম অন্যরকম। কারণ আজকে থেকে তাদের সম্পর্ক টা নতুন মোড় নিয়েছে। সব কিছুতেই নতুনত্ব। নুহা মনে মনে আল্লাহর শুকড়িয়া আদায় করে।

চলবে…

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here