পতিতা বউ – পর্ব ২৫

0
254

#পতিতা_বউ

২৫তম পর্ব

নুহা বিছানা ছেড়ে যখন উঠলো তখন প্রায় দশটা।আফিফ আবারো ঘুমাচ্ছে। নুহা উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে জামা কাপড় পড়ে রুম থেকে বের হতেই রাফির সাথে দেখা হয়ে গেলো,

>>ওয়াটস আপ নতুন বউ? বর কে তো দেখি কাল থেকে একাই ছাড়ছোনা।

রাফির কথায় নুহা লজ্জা পেলো খুব। তারপর বললো,
>>আমি না উলটা তোমার ভাই আমাকে ছাড়ছেনা। আমাকে রুম থেকে বেরই হতে দেয়না। একটু ঘর টাও ঘুরে দেখা হলোনা।

>>ইশ কত্ত ভালোবাসা। অনিমাকে বলছিলাম আমি তোমাদের কথা আমার ও মন চাচ্ছে ওকে বিয়ে করে নিয়ে আসি। কিন্তু তার সাহসে কুলোয় না। চলো ভাবি আমিই নাহয় তোমাকে ঘর দেখিয়ে আনি।

>>হ্যাঁ চলো।

নুহা রাফির সাথে ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখতে লাগলো। রাফির সাথে টুকটাক কথাও হলো বেশ ভাব জমে গেলো রাফির সাথে নুহার। রাফি নুহাকে কথার এক পর্যায়ে বললো,

>>ভাবি একটা কথা বলার ছিলো।

>>হ্যাঁ ভাই বলো।

>>আসলে তোমাকে বলছি প্লিজ মাথায় রেখো কথাটা। মায়ের কাছ থেকে সাবধানে থেকো। মা কখন কি করবে বুঝতেও পারবে না। উনার চালচলন সুবিধার নয়। এছাড়া আরো অনেক কথা আছে যা আমি তোমাকে পড়ে বলবো। আপাতত এটাই বলছি মায়ের কাছ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখো। এসব কথা ভাই কে বলে লাভ নেই তাই তোমাকে বলছি। আর আমি সবসময় ই তোমাদের দু’জনকে প্রোটেক্ট করার জন্য আছি কিন্তু তাও তোমরা সাবধানে থেকো।

>>আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এমন কেন বলছো?

>>আছে অনেক কারণ আছে। সব জানতে পারবে। এক কথায় এটাই বলবো আমার মা কে যতটা ভালো ভাবো তোমরা উনি ততোটাই খারাপ।

রাফির কথার আগামাথা নুহা কিছুই বুঝলো না। তবে এটা মনে গেঁথে নিলো যে ছোট মার থেকে ওর সাবধানে থাকতে হবে। রাফি উনারই নিজের সন্তান যেখানে রাফি এমন কিছু বলছে সেখানে নুহার এসব নিয়ে হেলাফেলা করা উচিত হবেনা। নিশ্চয় অনেক কারণ আছে আড়ালে।

নুহাকে নিয়ে রাফি কিচেনের দিকে গেলো। সেখানে গিয়ে রাশু খালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো,

>>ভাবি ইনি হলেন রাশু খালা। রান্না বান্নার কাজ আর কিচেনের কাজ উনিই করেন। আমাদের অনেক পুরোনো মানুষ। পরিবারের একজনই।

নুহা রাশু খালাকে সালাম করতেই তিনি নুহাকে জড়িয়ে ধরলেন। নুহা রাশু খালার কাছ থেকে ঘরের সবার টুকটাক কথা জেনে নিলো। নুহা চেয়েছিলো দুপুরের রান্নার কাজে হেল্প করতে কিন্তু রাশু খালা বারণ করে বললেন,

>>মা তুমি নতুন বউ। আমাগো এইহানে নতুন বউ আড়াইদিন পড়েই চুলা আর কাজকর্ম ধরে। তাই আইজকা তুমি কিছুই করতে পারবানা।

>>জি খালামনি। যেমন আপনি বলেন।

নাহিদা রাশু খালাকে কি যেন বলতে এসেছিলো কিচেনে কিন্তু নুহাকে দেখে থমকে গেলেন। নাহিদার চোখে মুখে রাগ আর বিরক্তি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো। নুহার চোখ তা এড়াইনি। নাহিদা আর কিছু না বলেই চলে গেলেন। নুহা তা বুঝতে পারলো।
তখনি আফিফ নুহাকে ডাক দিলো। আর নুহা তড়িঘড়ি করে আফিফের কাছে আসলো। আসার আগে রাশু খালা কে বললো দু’কাপ চা দিতে রুমে। নুহা রুমে এসে দেখে আফিফ রেডি হচ্ছে। নুহা আফিফকে বললো,

>>কোথাও যাচ্ছো?

>>হ্যাঁ একটা কাজ আছে।

>>আচ্ছা। ফিরবে কখন।

>>ঠিক নেই। তবে তাড়াতাড়িই ফিরবো।

>>আচ্ছা সাবধানে যেও।

আফিফ নুহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।। আফিফের পেছন পেছন নুহা ও নিচে নেমে এলো। আফিফ তার কাজে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর রাশু খালা নুহাকে দুইকাপ চা দিয়ে গেলো। নুহা ভেবেছিলো আফিফ আর সে বসে খাবে কিন্তু আফিফ তো চলে গেলো। নুহা কিছু একটা ভেবে সেই দু’কাপ চা হাতে নিয়ে নাহিদার ঘরের দিকে হাটা দিলো।

নাহিদা তখন কি একটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো। হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই সে চমকে উঠে তার হাতের ফাইল টা পড়ে যায়। নাহিদা দরজায় দেখে নুহা দাঁড়িয়ে আছে। সে এক প্রকার চিল্লিয়ে বলে,

>>এই মেয়ে কেন এসেছিস এখানে। দিলি তো কাজ বাড়িয়ে।

>>সরি ছোটমা। আসলে আমি চা নিয়ে এসেছিলাম।

>>চা টা রেখে এখান থেকে দূর হ।

নুহা কাপা কাপা হাতে চায়ের কাপ টা সাইড টেবিলে রেখে চলে গেলো। নাহিদার আচরণে নুহা ভীষণ আঘাত পেয়েছে। সে কোনমতে নিজের চা টা শেষ করে নিজের রুমে এসে ব্যাল্কুনি তে গিয়ে বসে পড়লো।
নুহার অনেক কান্না পাচ্ছে সেই সাথে মামুণির কথা ও খুব মনে পড়ছে। নুহা সবসময়ই তার মামুণি কে নিয়ে একসাথে বসে চা খেতো। এছাড়া আরো অনেক কিছু। নুহার কাছে উনি তার মায়ের চেয়েও বেশি। নুহা ভেবেছিলো হয়তো সব মায়েরাই এমন কিন্তু নাহিদার আচরণে সে কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই রাফির কথা মনে পড়ে গেলো। সে নাহিদা কে নিয়ে যা যা বলেছিলো সব মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো নুহার।

চলবে….

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here