#পতিতা_বউ
২৮তম পর্ব
আফিফ আর নুহা দু’জনেই মহুয়া পল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পৌছে গাড়ি থেকে নেমে নুহা সোজা দৌড়ে কুঠির ভেতরে গেলো। কুঠির ভেতর গিয়ে দেখলো শবনম বেগম বসে আছেন আর সুপারি কাটছেন। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে আছেন তিনি।চোখ মুখ ফুলে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কান্নাকাটি করেছেন। নুহা হুট করে উনাকে জড়িয়ে ধরলো। শবনম বেগম প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও শক্ত করে নুহাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। দু’জনেই কাঁদছে। আফিফ রুমে ঢুকে তাদের এই অবস্থা দেখে বললো,
>>আরেহ আমি কি কান্নাকাটি করার জন্য এনেছি নাকি তোমাকে? দেখি ছাড়ো মামুণি কে।
নুহা শবনম বেগম কে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। আফিফ শবনম বেগম কে সালাম করে সোফায় বসে পড়লো। নুহাও নিজের বোরকা আর নিকাব খুলে বসে পড়লো। নুহাকে দেখে শবনম বেগম বলে উঠলেন,
>>মা-শাহ-আল্লাহ আমার কলিজাটারে তো একদম পরীর মত লাগতাছে। আয় মা বুকে আয়।
নুহা গিয়ে শবনম বেগমের বুকে হেলান দিয়ে বসলো। এরপর তারা অনেক ক্ষণ কথা বললো তিন জনে মিলে। হাসাহাসি করছিলো। নুহাকে দেখতে কুঠির বাকি মেয়ে গুলো ও আসলো। ময়না নুহাকে দেখে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। মনে মনে ভাবলো,
“করতে গিয়েছিলাম একটা হয়লো আরেকটা। ক্ষতি করতে যাইয়া উলটা ভালা কইরা দিলাম। বাহ! কত দামী দামী গয়না পড়ছে। আল্লাহ এমন কেন করলা। ইশ সব ভালো নুহার কপালেই দিলাম।”
অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর নুহা আর আফিফ বাসাই ফিরে এলো। নুহার ভীষণ খুশি লাগছে কিন্তু মুহূর্তেই নাহিদা কে দেখে তার আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। নাহিদা আচমকা নুহাকে জড়িয়ে ধরে ফেললো। তারপর বললো,
>>সকালের খারাপ বিহেভের জন্য মাফ করে দিস মা। আয় খেয়ে নিবি আয়। আফিফ তুই ও আয়।
নুহা তো অবাক। সে আফিফের দিকে তাকাতেই সে পলক ফেলে আশ্বস্ত করলো। খাওয়ার টেবিলে নাহিদা নুহার প্রতি একটু বেশিই আদিক্ষেতা দেখালো। নুহার এসব যেন আলগা আলগা লাগছিলো। রাফির ও সব কিছু বিরক্ত লাগছিলো। একমাত্র আফিফ ভেবে নিয়েছিলো যে নাহিদা নুহা কে মেনে নিয়েছে।
এরপর অনেক সময় গড়িয়ে যায়। আফিফ ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ করে এখন অফিস জয়েন করেছে। নুহা ও নিয়মিত ভার্সিটি আসা-যাওয়া করে ক’দিন পরে ওর ও এক্সাম।
হঠাৎ একদিন একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। নুহা সিড়ি থেকে নামার সময় পা স্লিপ করে পড়ে গেলো। মাথায় ভীষণ আঘাত পাওয়ার দরুন প্রচুর রক্ত ঝরে। আফিফ আর রাফি তড়িঘড়ি করে হসপিটাল নিয়ে যায়
তাকে।
হসপিটাল নেওয়ার ডক্টর তাদের জানা যায় নুহার বাম হাত টাও কিছুটা ভেঙে গিয়েছে। সেই সাথে আরো বড় ধরণের একটি শকিং নিউজ ছিলো নুহা প্রেগন্যান্ট ছিলো। এত উঁচু থেকে পড়ার কারণে তার মিসক্যারেজ ও হয়ে যায়।
একে তো নুহার অবস্থা দেখে আফিফ অনেক টেন্সড তার উপর এইকথা গুলো শুনে আফিফ অনেক টা ভেঙ্গে পড়ে। নুহা তখনো জ্ঞান ফেরেনি।
একমাত্র নুহার এভাবে পড়ে যাওয়া টা রাফিকে ভাবিয়ে ছিলো। সে আফিফকে হসপিটালে রেখে দ্রুত বাসাই আসলো। সিড়িতে সম্পূর্ণ কার্পেট বিছানো তাই স্লিপ করার প্রশ্নই আসেনা। রাফি বেশ কিচ্ছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখার পরে একটি চিকন রশি জাতীয় কিছু পেলো যা সিড়ির এক রেলিং হতে অপর রেলিং এর সাথে বাধানো ছিলো আর মাঝখানে ছেড়া। রাফির বুঝতে বাকি রইলো না কাজ টা কার। সে প্রচণ্ড রাগ নিয়ে নাহিদার ঘরের দিকে গেলো।
নাহিদা তখন ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলো। রাফি গিয়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়লো। নাহিদা রাফিকে দেকে বললো,
>>আরে রাফি আয় বোস মায়ের কাছে।
রাফি রেগে আগুন হয়ে বললো,
>>আমি এখানে বসার জন্য আসিনি।আর ছিঃ তোমাকে আমার মা ডাকতে তো আগে থেকেই লজ্জা করতো এখন মনের ভেতরে যা একটু টান ছিলো তাও শেষ আজকে। তুমি ভাবিকে সিড়ি থেকে ফেলেছো তাই না?
রাফির কথা শুনে নাহিদা একটুও অবাক হলোনা। একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো,
>>আমি কি জানতাম নাকি যে ওই মেয়েটা পড়বে? গর্ত কুড়েছিলাম এক জনের জন্য পড়লো আরেকজন। যাক তাও ভালো হয়েছে।
>>মানে কি এসবের? তুমি নিশ্চয় আবার ভাই কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে?
>>যাক তুই আমার সন্তান যে তার প্রমাণ পেলাম একদম ঠিক ধরেছিস। আফিফের জন্যই এত আয়োজন করেছিলাম আর পা দিলো ওই মেয়েটা।
>>তুমি এতটা নিচু ছিঃ। আমি আজই ভাইয়া কে সব খুলে বলবো। আগের ঘটনা গুলোও। তারপর দেখবো তুমি কি করো?
>>বলবি? ঠিক আছে বলে দিস। কিন্তু আফিফ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে আমার উপর। আমার মনে হয়না ও তোর কথা মানবে। তাও চেষ্টা করে দেখতে পারিস।
এইটুকু বলে নাহিদা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো যা দেখে রাফির রাগ আরো বেড়ে গেলো। সে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
চলবে…..
#Razia_Binte_SuLtan