গোধূলি লগ্ন – পর্ব ৩১-৩৩

0
220

#গোধূলি_লগ্ন

#Writer_Tabassum_Tajnim

#part_31+32+33

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো। চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। সে অবশ্য প্রকৃতিপ্রমী না। তাই এইসব ভালো লাগলো না, হঠাৎ চোখ টা গাছের নিচে গেলো। সেখানে কেউ বসে আছে? কে এই ছেলেটা???

বারান্দার গ্রিলটা ধরে খানিকক্ষণ থাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। ছেলেটা কে হতে পারে ভাবতে লাগলো। অনেক ভাবনা চিন্তার পর কোনো কুল কিনারা করতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলো। যেই হোক এটা তার ভাববার বিষয় না। চায়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঘুরলো, রুমের দরজায় গিয়ে ঘুরে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো। তারপর আবার ঘুরলো। এই কৌতূহল জিনিস টা খুব খারাপ। কৌতূহলের বসেই যতো উল্টো পাল্টা কাজ করা হয়। বাঙালি নারীদেরই বেশি কৌতূহল থাকে। আর তারাই বেশি উল্টো পাল্টা বোকাটে টাইপের কাজ করে।

“তৃপ্তি কন্ট্রোল কর,,তোর কৌতূহল কন্ট্রোল কর।”

বিড় বিড় করতে করতে চা টা শেষ করলো। চায়ের কাপটা হলরুমে টেবিলের উপর রেখে পূন্যর রুমে গেলো। তৃপ্তি রুমে গিয়ে দেখে পূন্য বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ছে।

তৃপ্তি বারান্দায় রাখা আরেকটা চেয়ারে বসে পড়লো, চোখ সেই গাছটার নিচেই চলে গেলো। চোখ সরিয়ে পূন্যর দিকে আনলো। এখনো পত্রিকা দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছে? নিশ্চয় বিনোদন পাতা। বুবুন পত্রিকায় শুধু বিনোদনের পাতায় পড়ে, খুব ভালো করে, খুটিয়ে খুঁটিয়ে। পত্রিকার এই একটা পাতা দিনে তিন থেকে চার পড়ে, সবগুলো খবর মুখস্থ করে ফেলে। তৃপ্তি হাত দিয়ে পূন্যর মুখের সামনে থেকে পত্রিকাটা নামিয়ে দিলো। পূন্যকে দেখে একটা হাসি দিলো।

পত্রিকার বিনোদনের পাতাটা পূন্য খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। এইসময় কেউ বিরক্ত করলে পূন্যর মারাত্মক রাগ উঠে। তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে পূন্য রাগি গলায় বললো,

–তৃপ্তিইইইই,,

— বুবুন, এই একটা পাতা কয়বার পড়িস?

— একবারও পড়ি নি। এই পড়তে বসলাম। আচ্ছা তৃপ্তি এখানে দুই রুম ভাড়া পাওয়া যাবে!

— কেনো রে? তুই হঠাৎ ভাড়া বাড়ি খুঁজছিস কেনো? এতো বড় বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠবি নাকি!

তৃপ্তি হেসে হেসে কথাটা বললেও একবার ভাবলো, বুবুন হঠাৎ করে ভাড়া বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো কেনো? ভাবলো হয়তো কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করেছে।

পূন্য তৃপ্তি কথা শুনে মাথা নেড়ে হাসলো। তারপর পুলকের দিকে তাকালো। ছেলেটা এখনো বসে আছে এখানে! কেনো যাচ্ছে না! সকাল থেকে এখানেই বসে আছে,খাওয়া দাওয়া ও হয়তো করে নি।

তৃপ্তি ও পূন্যর সাথে সাথে ঐদিকে তাকালো। বুবুন এমন করে কি দেখছে?? আচ্ছা বুবুন কি ছেলেটাকে চিনে? হয়তো চিনে। আরেহ্ না, চিনবে কি করে? ও তো বের হয় না বাসা থেকে।জিজ্ঞেস করে লাভ নেই।

পূন্য চোখ লাল হয়ে আছে। এতো ঘুম পাচ্ছে চেয়ারে বসেই ঝিমাতে লাগলো। চোখ লেগে যাচ্ছে, আর বারবার চোখ টেনে খুলছে। এখন না ঘুমালেই না হবে। তৃপ্তিকে বললো,

–আমাকে একটু ঘুমাতে হবে।

— হুম সে তো দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আচ্ছা তুই ঘুমা আমিও একটু ঘুমাবো।

পূন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। কাঁথা টা দিয়ে সারা শরীর ঢেকে নিলো।

তৃপ্তি রুমে এসে আবার বারান্দায় গেলো, ঐ ছেলেটাকে দেখার জন্য। বারবার কেনো এই ছেলেটাকে দেখছে সে? এটাই বুঝতে পারছে না। রুমে এসে ব্যাগ থেকে পথের পাঁচালী উপন্যাস টা বের করে পড়তে লাগলো। দূর্গা চরিত্র টা তার খুব ভালো লাগে।

নিবিড় গাড়িটা ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে হাওয়ায় মিঠাই গুলো দেখলো।তারপর গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো। ছেলেটা তাকে দেখেই হাসলো। বললো,

— ভাইজান, আজকে আপা কই?

— আপা ওর শশুরবাড়ি তে।

ছেলেটা কিছুই বুঝলো না হয়তো,তাই হেসে বললো,

— আগে এক দুই সপ্তাহ পরে পরে আসতেন,এখন এই মাস দুয়েক ধরে আসেন না কেন?

নিবিড় বুঝলো একে বলে লাভ নেই ও কিছুই বুঝবে না। তাই বললো,

— কাজের চাপ, তাই আসতে পারি না।

— ও,, তো আজকে আপারে নিয়ে আইলেন না কেন?

— আপার কাজ আছে, তাই আনতে পারি নি। চারটা হাওয়ায় মিঠাই দাও।

ছেলেটা হেসে দুইটা গোলাপি আর দুইটা সাদা রংয়ের হাওয়ায় মিঠাই দিয়ে বললো,

— আপার জন্যই তো নিবেন! আপা তো সব সময় দুই রঙয়েরেই নিতো।

নিবিড় মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বললো। তারপর হাওয়ায় মিঠাইয়ের টাকা দিয়ে নিবিড় গাড়িতে বসলো। হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে হাসলো। সত্যি পূন্য কি ছেলেমানুষিই না করতো। পূন্যকে নিয়ে যতবার ঘুরতে বেরিয়ে ও হয় হাওয়াই মিঠাই, নয় চা, আর নয়তো আইসক্রিম খেতো। এছাড়া অন্যকিছুই ওকে খাওয়ানো যেতো না, কতো বার বলেছে চলো রেস্টুরেন্টে যায়, কিন্তু সে না করে দিতো। বেশি জোর করলে বলতো যখন তুমি নিজে অফিসে বসবে,নিজে রোজগার করবে তখন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবো। আর এই ছেলের দোকানে এসে সব সময় দুইটা হওয়ায় মিঠাই কিনতো, একটা গোলাপি আর একটা সাদা। কখনোই নিবিড় ওর কাছ থেকে একটুও হাওয়ায় মিঠাই খেতে পারে নি। অনেক পাগলামো করতো, ওর আবদারগুলোও বেশ অদ্ভুত ছিলো।রেগে গেলে একটা কোন আইসক্রিম দিলেই ঠান্ডা হয়ে যেতো। আইসক্রিম দেওয়ার পর পূন্যর হাসিটা অনেক ভালো লাগতো।
নিবিড় হয়তো কোনোদিনও পূন্যকে ভূলতে পারবে না। ভালোবাসা হয়তো এমনি, ভূলতে চাইলেও ভুলতে পারবে না।

রাতের শহরটা অনেক সুন্দর। ল্যাম্পপোস্টের আলো বড় রহস্যময় লাগে, তবে তিয়ান ভালো লাগে এই রহস্যময় বিষয়টা। সাদা রংয়ের শার্ট পরিহিত, কালো প্যান্ট পড়ে হাঁটছে তিয়ান,, পাশেই হাটছে আলভী। আলভী হাতের সিগারেট টা তিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো। তিয়ান ওর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে আলভীর দিকে তাকালো,

আলভী হেসে বললো,

— কিরে এমন চোখ মুখ করে রেখেছিস কেনো?আরে বাবা তুই তো সুখীই আছিস, এমন সুন্দর একটা বউ পেলি, কি সুন্দর চোখ, ফি…..

আলভী তিয়ানের চোখ দেখে থেমে গেলো। যতোটুকু বলেছে ততোটুকুই যথেষ্ট এর বেশি কিছু বললে হয়তো তার জন্য খারাপ হয়ে যাবে।
তিয়ান ঘন ঘন সিগারেট টানতে লাগলো,

আলভীর চোখে এখনও পূন্য লেগে আছে। চোখ বন্ধ করলেই ওকে দেখতে পায়। উফফ, পূন্যকে যদি নিজের বউ হিসাবে পেতো তাহলে,,,,

তিয়ান বললো,

— আমি তো সুখীই আছি। তো তুই কবে বিয়ে করছিস?

— মেয়ে পাচ্ছি না তো। মনে হয় আমার ভাগ্যে যে মেয়ে ছিলো, সেটা তুই দখল করে নিয়েছিস। একা দুজনকে ভোগ করলি।

তিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে ড্রাইভারকে কল দিয়ে গাড়ি আনতে বললো। তারপর আলভীর দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি এই দেশে থাকবো না। মাস দুয়েকের মধ্যে সব কাগজ পত্র চলে আসবে।

আলভী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

— আর তোর বউ?? ও কি এই দেশেই থাকবে??

— আমি চলে গেলে আমার বউকে এই দেশে কোন সুখে রেখে যাবো?

— তোর মা থাকবে তো এই দেশে, ওনাকে দেখা শুনা করবে! আর ওকে রেখে গেলেই তোর লাভ। নতুন মেয়ে পাবি!

তিয়ান কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই গাড়ি এসে গেলো। তিয়ান ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়িতে বসে গেলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। আলভীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিয়ান গাড়ি স্টার্ট করলো। এইখানে থাকার ওর কোনো ইচ্ছা নেই। এখন সমস্যা একটাই মা কোথায় থাকবে!

রাত ১১ টা এলোমেলো পায়ে হেঁটে নিজের রুমে ঢুকলো পুলক। তারপর ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। অনন্যা আমাকে ঠকিয়েছে। ঠকিয়েছে, আমাকে না বলেই চলে গেছে। যদি যাওয়ারই ছিলো তাহলে বলে কেনো গেলো না। শুধু একটা সরি বলেই চলে গেলো। দায় সারা কাজ করে চলে গেছে। আমি কোনোদিন ও ক্ষমা করতে পারবো না। বড় অদ্ভুত ব্যাপার অনন্যা মারা গেছে শুনেও সে কাদলো না। চশমাটা খুলো বালিশের পাশে রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লো। বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই মায়ের প্রশ্ন ছিলো,
“কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি!” প্রশ্নটার উত্তর দেয়া হয় নি। এখন খুব ঘুম পাচ্ছে, পুলক চোখটা বন্ধ করতেই অনন্যার মুখটা ভেসে উঠলো।

তিয়ানের হাতটা পূন্যর উপরে পরতেই পূন্যর ঘুম ভেঙে গেলো। পূন্য ওর হাতটা তিয়ানের হাতের উপর রাখলো। তিয়ানের দিকে ঘুরলো, লোকটা তাকে ঠকিয়েছে। এতো বড় একটা সত্যি লুকিয়ে রেখেছে তার কাছ থেকে। অনন্যাকেও ঠকিয়েছে। তার সন্তান কে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। অনন্যার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায়েই তো ছিলো না। এই লোকটাই অনন্যাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। একভাবে বলতে গেলে খুন করেছে। কিন্তু কেনো করলো? দুই দুইটা প্রান চলে গেছে, অনন্যা আর অনন্যার বাচ্চার। অনন্যা অনেক বড় ত্যাগ করে চলে গেলো। তিয়ানের বুকে মুখ লুকালো, খামচে ধরলো তিয়ানের পিঠ। এমন কেনো করলে তিয়ান? কেনো? আমি তো কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না! চোখ বেয়ে টপটপ করে দুফোটা পানি বিছানায় পড়লো।

তিয়ানের ঘুমটা ভেঙে গেলো। পূন্যকে এইভাবে দেখতে ওর ভালোই লাগে। গুটিশুটি হয়ে ওর বুকের ভিতর ঢুকে যাওয়াটা তিয়ানের বড্ড ভালো লাগে। ইচ্ছে করে বুকের ভিতর ঢুকিয়ে নিতে। তিয়ান পূন্যকে একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো।

পূন্য নড়লো না, শুধু তিয়ানের সাথে মিশে রইলো, তিয়ানকে বুঝার চেষ্টা করছে,

নিস্তব্ধ রাত, নির্ঘুম দুটো মানুষ শুধু একে অপরের মনের কথা বুঝার চেষ্টা করছে।

লুৎফা বেগম পুরো রুমটা জুড়ে পায়চারি করছেন। হাতে থাকা তাজবি টা গুনছে, ঠোঁট দুটো নড়ছে। সারারাত তজবিহ জপে, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েই কাটিয়ে দেয় তিনি। এতো বছর ধরে এটাই করে আসছেন তিনি। তার একবছরের ছোট্ট মেয়েটাকে ঐ বাড়িতে রেখে বেরিয়ে আসতে হয়েছিলো, তার জন্য সারারাত ছটফট করতে থাকতো। নিরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিলো না। তিনি এটা ভেবেই বেশি কষ্ট পায়, যে তার মেয়েকে সে কোনোদিন দেখতেই পারবে না। হয়তো মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে, বিয়েও হয়ে গেছে হয়তো। আচ্ছা মেয়েটা সুখী আছে তো? হুম হয়তো সুখী আছে! নিশ্চয়ই ঐ বাড়িতে কেউ ওকে আদর করে নি। হয়তো ওর বাবা বিয়ে করে নতুন বউ এনেছে, সেই বউ মনে হয় তার মেয়েকে দেখতেই পারতো না।
এসব কথা ভেবেই তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ঠোঁট গুলো কেঁপে উঠলো, চোখ ভিজে উঠলো। হঠাৎ মনে হলো তিশা এখনো জেগে আছে। পাশের ঘর থেকে ফিসফিস কথার আওয়াজ আসছে মনে হয়! এতো রাতে তিশা কার সাথে কথা বলছে। তিনি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে তিশার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজায় নক করতেই দরজাটা খুলে গেলো।

একটা শব্দ হলো,দরজা খুলার আওয়াজ ,, তিশা চোখ বন্ধ করে মোবাইল টা বালিশের নিচে রেখে শুয়ে রইলো। হাত পা শক্ত করে শুয়ে আছে। মাথাটা কাথা দিয়ে ঢাকা, উপরে ফ্যান চলছিলো,,
কিন্তু প্রচন্ড গরম লাগছে,

লুৎফা আক্তার কাথাটা তিশার মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিলো, নাহ, তিশা তো ঘুমিয়ে আছে। তাহলে তিনি মনে হয় ভূল শুনেছেন৷ তিশার শরীরটা মাথাট, মুখ পুরো ঘেমে আছে। তিনি তিশার গা থেকে কাথাটা অল্প নামিয়ে দিলো। তারপর বললো,

— ইস, কি অদ্ভুত মেয়েরে, এতো গরমের মধ্যে এভাবে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে। ঘেমে একেবারে গোসল করে ফেলেছে।

লুৎফা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দরজা লাগনোর আওয়াজ শুনে তিশা চোখ খুললো, উফফ বাঁচা গেলো। বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করলো। তারপর বললো,

— সরি, আম্মু এসে গিয়েছিলো। তাই,,,

— হুম, বুঝতে পারছি। আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।

রূপন্ত ওপাশ থেকে নরম গলায় বললো। তিশা ওর কথা শুনে হাসলো। এইজন্যই রূপন্তকে এতো ভালো লাগে ওর। তিশা বললো

— হুম। শুভ রাত্রি।

রূপন্ত উঠে একগ্লাস পানি পুরো খেয়ে নিলো। তারপর মোবাইল টা চার্জে লাগিয়ে শুয়ে পড়লো।

খুব সকালে পুলকের ঘুমটা ভেঙে গেলো। বালিশের পাশ থেকে চশমা টা নিয়ে চোখে দিলো। খুব সকাল না, সাতটা বেঁজে গেছে। কাল রাতে চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়েছে। কোনো মতে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। উফফ,, অনেক দেরি হয়ে গেলো, অনন্যার বাসায় যেতে হবে তো। না খেয়েই বেরিয়ে গেলো পুলক।

গাছটার কাছে এসে মনে পড়লো, অনন্যা তো আর নেই,,,

চলবে,,,
#গোধূলি_লগ্ন

#Writer_Tabassum_Tajnim

#Part_32

,
,
,

খুব সকালে পুলকের ঘুমটা ভেঙে গেলো। বালিশের পাশ থেকে চশমা টা নিয়ে চোখে দিলো। খুব সকাল না, সাতটা বেঁজে গেছে। কাল রাতে চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়েছে। কোনো মতে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। উফফ,, অনেক দেরি হয়ে গেলো, অনন্যার বাসায় যেতে হবে তো। না খেয়েই বেরিয়ে গেলো পুলক।

গাছটার কাছে এসে মনে পড়লো, অনন্যা তো আর নেই,,,মাথাটা কেমন যেনো ছিনছিন করে ব্যাথা পড়ছে, গাছের নিচে তাকা বেঞ্চটায় বসে পড়লো। দু হাতে মাথাটা চেপে ধরলো, অনন্যা তুমি জীবনটা শেষ করে দিলে।কেনো মারা গেলে তুমি! তুমি শুধু মরে গিয়ে ক্ষান্ত হও নি, তুমি আমাকেও মেরে ফেলেছো, জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখে গেলে। ভাবতে ভাবতেই উপরে অনন্যার রুমটার দিকে তাকালো। একি! রুমের দরজা খুলছে? তাহলে কি অনন্যা বেঁচে আছে। রাজ্যের খুশি এসে চোখে মুখে বের করলো, গত দিনে ঠোঁটের কোনে একট ফোটা হাসিও ছিলো না। আজ সেই হাসিটা ফিরে এসেছে, অনন্যা বেঁচে আছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো। না এই মেয়েটা তো অনন্যা নয়। অনন্যার মাথা ভর্তি কুকড়ানো চুল ছিলো,ও অনন্যা নয়। অনন্যা কোনোদিনও আসবে না। অনন্যা বেঁচে নেই, অনন্যা সত্যি সত্যিই মারা গেছে। আবার বেঞ্চটায় ধপ করে বসে গেলো।

তৃপ্তি বেশ অবাক হলো, বারান্দায় দাড়িয়ে ধোয়া উঠা চায়ের কাঁপে চুমুক দিলো। গরমের মধ্যে গরম চা, গলায় নামার পর পেটের নাড়িভুঁড়ি কয়েক সেকেন্ডের জন্য গরম হয়ে যায়। নাকের ডগায় ঘাম জমে গেছে। নাক ঘামলে নাকি স্বামী ভালোবাসে বেশি। তৃপ্তি হাসলো, কি অদ্ভুত সব কথা বার্তা বলে সবাই। তৃপ্তির চোখটা আটকে গেলো সেই মানুষটার উপর, আচ্ছা লোকটা কি কাল বাড়িতে যায় নি! এখানে বসে ছিলো সারারাত! আচ্ছা লোকটা কি সুস্থ আছে, না পাগল?? কিন্তু পোশাক আশাক দেখে মনে হচ্ছে না লোকটা পাগল। বেশ ভালো পরিবারের মনে হয়। খুব কষ্ট হচ্ছে লোকটার জন্য। হঠাৎ করে অচেনা অজানা একটা লোকের জন্য কষ্ট অনুভব হওয়ার কোনো মানে খোঁজে পেলো না তৃপ্তি, এখন কেউ যদি শুনে এই কথা তাহলে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারে। চায়ে আবার চুমুক দিলো,, ইসস চা টা ঠান্ডা হয়ে একদম শরবত হয়ে গেছে। অবশ্য এই গরমের দিনে শরবত টাই ভালো। এক চুমুকে পুরো চা টাই খেয়ে নিলো।

পূন্যর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে তিয়ান বেশ অবাক হলো, এখনো চোখগুলো ছোট ছোট করে তার দিকে আছে, তিয়ান বুঝতে পারলো না সে কি কিছু ভূল বলেছে? না ভূল কিছু তো বলে নি। তাহলে তাকে এভাবে কেনো দেখছে পূন্য। পূন্যর দিকে থেকে নজর সরিয়ে আয়নায় চোখ রাখলো, টাই বাঁধতে বাঁধতে বললো,

— না, এখন না। কাগজপত্র রেডি হতে হতে আরো দুই তিন মাস লেগে যাবে।

পূন্য এতক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে ছিলো বিছানায়। এবার পা গুলো উঠিয়ে নিলো বিছানায় । মনে হলো যেনো আসনে বসছে সে। তারপর এদিক ওদিক তাকালো, তিয়ানকে কেনো জানি তার দেখতে ইচ্ছে করছে না, হেসে বললো,

— মাস তিনেক!! সে তো অনেক দেরি। তার আগে যদি মরে যায়, তাহলে!!!

কুচকানো শাড়ির আঁচল টা টেনেটুনে সোজা করতে চাইছে পূন্য।

তিয়ান কথা টা শুনে পূন্যর দিকে তাকালো,কিন্তু পূন্য তখন শাড়ির আঁচল সোজা করতে ব্যস্ত। তিয়ান বুঝতে পারলো দেশের বাইরে যাওয়ার কথা বলতেই পূন্য এমন রিয়েক্ট করলো কেনো? তিয়ান টাইটা এখনো বাধা হয় নি। পূন্যকে বললো,

— টাই টা একটু বেধে দাও,

কথাটা বলে নীল রংয়ের শার্টের হাতের বোতাম গুলো লাগাতে লাগলো। পূন্যকে উঠে দাড়াতে দেখে বেশ অবাক হলো। সে আশা করেছিলো পূন্যর থেকে না উত্তর পাবে। এর আগে কখনো ওকে টাই বাঁধতে বলে নি। আজই প্রথম বললো, তাও এমনি এমনিই।

পূন্য খুব মনোযোগ দিয়ে তিয়ানের টাই বাধতে লাগলো, কালো রংয়ের টাই টা বেশ ঘুরিয়ে পেচিয়ে বাধলো। তবে তা ইচ্ছা করেই। শার্টের কলার টা নামাতে নামতে তিয়ানের দিকে তাকালো।এতোক্ষন মনে হয় তিয়ান ওকেই দেখছিলো। চোখে চোখ পড়ে গেলো।

তিয়ান হাসলো,, পূন্যর কোমরে হাত রেখে ওকে একটু কাছে টেনে আনলো, কিন্তু অবলীলায় ওর হাত সরিয়ে দিলো পূন্য।

পূন্য দরজার দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বললো,
— অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। খাবার বেড়ে দিয়েছে,খেয়ে অফিসে চলে যাও।

তিয়ান রাগটা ধীরে ধীরে প্রখর হয়ে যাচ্ছে। দুদিন পরে পরে পূন্যর এমন অভিনয় মানতে একদম নারাজ সে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে চড়া গলায় কিছু বলতে, কিন্তু পরক্ষনেই সব কিছু ঠান্ডা হয়ে যায়। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না সে। তার অফিসে যাওয়ার জন্য ইদানিং তার থেকেও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে পূন্য। পূন্যর আচরণে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে অফিসে চলে গেলেই বেঁচে যায় পূন্য। নিজেকে ঠান্ডা করে নিলো। রাগ দিয়ে সব কিছু হয় না। বরং হিতে বিপরীত হয়ে যায়। হাতে ঘড়িটা লাগাতে লাগাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সোজা গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

তৃপ্তি প্লেটে রুটি নিয়ে বসে আছে, রুটি টা কে ভালো করে দেখছে। আদৌও কি একে রুটি বলে!কেমন যেনো ছিড়া ফাড়া রুটি!!আগে কখনো সে এমন রুটি দেখে নি, ঠোঁট বেঁকিয়ে চোখ নাক উল্টিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা শেষে শিউর হলো, নাহ্ আগে সে কখনো এমন রুটি খায় নি, খাবে কি চোখেও দেখে নি।
বেশ কৌতূহল নিয়েই জিজ্ঞেস করলো,

— আন্টি এই রুটিটার নাম কি??

— ছিট রুটি। খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।

মোর্শেদা বেগম হেসে জবাব দিলেন। তিনি তৃপ্তির কাছ থেকে এমন কিছুই আসা করেছিলেন। এর আগে পূন্যও অবাক হয়েছিলো এই রুটি টা দেখে।

তৃপ্তি প্লেটে অল্প মাংসের ঝোল নিয়ে একটু রুটি নিয়ে মুখে দিলো,, নাহ্ এসব প্যাচ লাগানো রুটি টা খেতে খারাপ না, ভালোই লাগে। বাড়িতে গিয়ে মাকে বলতে হবে এই ছিট রুটি বানাতে।

মোর্শেদা বেগম খেয়ে দেয়ে পান খেতে বসলেন। পাশে তৃপ্তিও বসলো। তিনি পান বের করতেই তৃপ্তি বললো,

— আন্টি আমি পান বানিয়ে দিই???

মোর্শেদা বেগম হেসে পানের বটুয়া টা তৃপ্তির দিকে এগিয়ে দিলো। তৃপ্তি নিজের জন্য একটা পান বানালো আর আন্টির জন্য একটা বানিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিলো।

মোর্শেদা বেগম পানটা হাতে নিয়ে বললো,

— ও বাবা,, তুমি জর্দা দিলে কেন পানে?? জর্দা তুমি খেতে পারবে না। মাথা ঘুরাবে!! শোভা জর্দা খেয়ে আমিই ঠিক থাকতে পারি না, আর তুমি তো পিচ্চি মেয়ে,,

— না না,, ঠিক আছে। আমি খেতে পারবো।

তৃপ্তি পান নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। পান মুখে নিয়ে চিবাতে লাগলো,, বেশ কিছুক্ষণ পর তৃপ্তি বুঝতে পারলো, তার কান দিয়ে ধোয়া বেরুচ্ছে, মাথা গরম হয়ে গেছে।গলার মধ্যে কিছু আটকে আছে,, উফফ এমন লাগছে কেনো?? তারাতারি বারান্দায় এসে মুখের পান টা বাইরে ছুড়ে ফেলে দিলো। ও বাবা মাথা ঘুরাচ্ছে কেনো?? বিছানায় এসে কোনো মতে শুয়ে পড়লো। চুন, খয়ের, জর্দা আরও কতো কিছু পানটা সাজিয়েছিলো! আর জীবনেও পান খাবো না, এই ফার্স্ট এই লাস্ট। পান খেয়ে মরতে যাচ্ছিলাম আর কি।

পূন্য তৃপ্তির রুমে ঢুকে দেখলো, তৃপ্তি ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। অর্ধেক শরীর বিছানায়, আর অর্ধেক শরীর নিচে। পূন্য বেশ কিছুক্ষণ তৃপ্তিকে দেখে বললো,

— কি রে তুই এমন করে শুয়ে আছিস কেনো?

বুবুনের গলার আওয়াজ শুনে তৃপ্তি উঠে ফ্লোরে বসলো। ওড়না দিয়ে কপাল মুখ আর গলার ঘাম মুছলো। তারপর বললো,

— মরিতে মরিতে বাঁচিয়া গিয়াছি। খনিকের জন্য মনে হইয়াছিলো এই বুঝি আমি মরিয়া গিয়াছি। পান খাইবার অনুভূতি বড়ই তিক্ত তাহার সহিত ভয়ানক ও বটে।

পূন্য মনোযোগ দিয়ে তৃপ্তির কথা শুনলো।হাসতে হাসতে নিজেরও ফ্লোরে বসে পড়লো।

সাথে তাল মিলিয়ে তৃপ্তি ও হাসলো।কিন্তু সত্যিই কিছুক্ষণের জন্য তার মনেই হয়েছিলো সে বুঝি এই মরে গেলো।

পূন্য বললো,

— বাহ, তোর ঠোঁট দেখি অনেক লাল হয়েছে। জানিস ঝগড়াটাদের ঠোঁট বেশি লাল হয়।

তৃপ্তি ঠোঁট বাকিয়ে নিজে দেখার চেষ্টা করলো। তারপর বললো,

— কে বলেছে??

— দাদু বলতো,,

— এ্যাহ্, চুন আর খয়ের খেয়েছি তাই লাল হয়ছে।আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

— কি কথা?

— আয় আমার সাথে,

তৃপ্তি পূন্যর হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলো। তারপর পুলককে দেখিয়ে বললো,

— ইনি কে? তুই চিনিস?

পূন্য কিছুক্ষণ পুলককে দেখলো, আবার এসেছে কেনো ও? কাল তো চলে গিয়েছিলো। পূন্য বললো,

— হুম।ও পুলক,, অনন্যাকে ভালোবাসতো। অনন্যা যখন মারা যায় ও তখন এখানে ছিলো না। কাল এসে জানতে পেরেছে অনন্যা মারা গেছে। আগে সব সময় অনন্যার জন্য এখানেই বসে থাকতো প্রায়সময়।

তৃপ্তি পূন্যর কথাগুলো শুনছিলো আর বেশ অবাক হয়ে পুলককে দেখছিলো, সত্যিই কিছু কিছু ভালোবাসা তার মনকে নাড়িয়ে দেয়। বেচারি অনন্যা এইরকম একটা ভালোবাসা ফেলে চলে গেলো। কিন্তু অনন্যা কেনো মারা গিয়েছিলো? কি কারনে ও আত্মহত্যা করেছে? পুলককের দিকে তাকিয়েই বললো,

— বুবুন,, অনন্যা কেনো আত্নহত্যা করেছিলো?

পূন্য তৃপ্তির কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পরলো। পূন্য স্বাভাবিক গলায় বললো,

— আমি কি করে জানবো?আচ্ছা আমি আসছি।

তৃপ্তি পূন্যকে ঘুরে দেখলো। বুবুনের চোখে মুখে এক অস্বস্তির ছাপ, কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা, আরোও প্রশ্ন করতে পারে এই ভয়ে পালিয়ে যাওয়া, তৃপ্তি বেশ অবাক হলো। হাসলো, ঘুরে ফিরে এসে তাকে বলবেই। তাই এত বেশি ভাবলো না এসব নিয়ে। এই বাড়িতে তেমন বেশি ভালো লাগছে না তৃপ্তির তাই প্ল্যান করেছে চলে যাওয়ার আজকে নয়তো কালকে চলে যাবে।

নিবিড়ের ফোনটা আবার বেজে উঠলো, স্ক্রিনে মিতুর নামটায় ভেসে উঠেছে। মহা ঝামেলায় পড়া গেলো তো এই মেয়েটাকে, এই নিয়ে পনেরো বার কল দিলো। কল দিয়ে তো কিছুই বলছে না শুধু উল্টো পাল্টা কথা। মাঝে মাঝে ভালো থাকে, আবার মাঝে মাঝে মাথার পোকাটা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে, তাই পাগলামো করতে থাকে।

নিবিড় কলটা রিসিভ করে বললো,

— এই মেয়ে এই, তোমার সমস্যা টা কি? শুধু কেনো কল দিচ্ছো? পাগল হয়ে গেছো নাকি? এই শুনো আমি একদম চাই না তোমার জন্য আমার কাজের কোনো সমস্যা হোক। আরেকবার কল দিলে এক চড়ে তোমার সবগুলো দাত ফেলে দিবো। বুঝলে,,,

ফোনটা কেটে দিলো নিবিড়, মাথা ঠান্ডা করে আবার টেবিলের উপর রাখা কাগজগুলোতে নজর দিলো। ভাগ্যিস মিতুকে কথা বলার সুযোগ দেয় নি, যদি একবার কথা বলতে শুরু করতো তাহলে আর থামতো না।

ফোনটা কানেই ধরে রাখলো আয়েশা আক্তার। কেটে দেওয়ার আওয়াজটাও শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। তারপরেও ধরে রেখেছে।
মিতুর দিকে একবার তাকালো,

মিতু বললো,

–মা কথা বলুন।

— ফোন কেটে দিয়েছে।

আয়েশা আক্তার মোবাইল টা মিতুর দিকে এগিয়ে দিলো। মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবেই মোবাইল টা নিলো। এদেরকে দেখে যতোটা সুখী মনে হয়েছিলো এরা ততোটাও সুখী নয়। নিবিড় কি ধরনের আচরণ করে মিতুর সাথে! আচ্ছা মিতু নিবিড় আদৌ সুখে আছে তো? নিবিড় এতো বাজে ব্যবহার করে মিতুর সাথে? কিন্তু কই মেয়েটাকে দেখে তো বুঝা যায় না। না আজকে আসলে নিবিড়কে বুঝাতে হবে। এভাবে আর কতোদিন চলবে!!

তিয়ান হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো। হাসপাতালের ডাক্তারকে টাকা টা দেওয়া হয়ে গেছে।পরিচিত বলেই এতোদিন অপেক্ষা করেছিলো। আর তার কাজটাও করে দিয়েছে। ভাগ্যিস পোস্টমর্টেম করা হয় নি, নাহলে তো!!! ঐদিন তিয়ান অনন্যার বাবাকে মনে মনে কতোবার যে ধন্যবাদ দিয়েছিলো তার হিসেব নেই। অবশ্য তিনি না বললেও পোস্টমর্টেম করতে দিতো না তিয়ান, আর করলেও রিপোর্ট টা পাল্টে দিতো। অনন্যা প্রেগন্যান্ট ছিলো সেটা সে কাউকে জানতে দিতে চায় না, এই জন্যই এভাবে টাকা ছড়ানো। টাকা দিলে সব হয়। পুলিশ অফিসারকেও টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। আর কেউ জানতে পারবে না। মোবাইলটা বারবার কেঁপে উঠছে। vibrate mood এ আছে, কেউ মনে হয় কল দিয়েছে। মোবাইলটা বের করতেই সীমা নামটা ভেসে উঠলো। তিয়ান হেসে মোবাইলটা কানে ধরলো,,,

চলবে,,,,
#গোধূলি_লগ্ন

#Tabassum_Tajnim

#Part_33

কলটা রিসিভ করে কানে তুললো,

ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,

— কি ব্যাপার সব কিছু ঠিক ঠাক আছে তো?

— হুম,সব কিছু ঠিকঠাকেই আছে। কেনো তুমি কি মনে করেছিলে??

— নাহ, এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো, এরপরে সব কিছু ঠিক নাও থাকতে পারে। তা শুনলাম তুমি নাকি দেশের বাইরে চলে যাবে?

— হুম,, কাগজ পত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু তোমাকে কে বললো?

— আলভীর কাছে শুনলাম। তাই ভাবলাম একটু ফোন করে জিজ্ঞেস করি। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??

— হুম।

— আমার প্রতি কি তোমার কোনো ফিলিংস নেই??

— কিসের ফিলিংস??

— এই পূন্যর প্রতি যেমন ফিলিংস আছে,,, অনন্যার প্রতি যেমন ফিলিংস ছিলো?

— নাহ্,,, তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস কাজ করে না। আগেও তো কতোবার বলেছি।
ইদানীং তুমি আলভী আলভী বেশি করছো? ব্যাপার কি?

ওপাশ থেকে শুধু হাসির শব্দই ভেসে এলো।
—হাসলে যে??

— এই প্রথম তুমি আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলছো। তাই হাসি পেলো আর কি। আলভীর সাথে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।জাস্ট ফ্রেন্ড।

এরপর ফোনটা কেটে দিলো। ফোন কেটে দেওয়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । তিয়ান ফোনটা পকেটে রেখে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো।

আকাশটা মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। একরাশ কালো মেঘ কিছুক্ষণের জন্য ধমধম করে আসবে, ভেজাবে, সকল দুঃখ কষ্ট ধুয়ে মুছে চলে যাবে। এমনেই মনে হচ্ছে পুলকের। চশমাটা খুলে হাতের মুঠোয় রেখে দিয়েছে অনেকক্ষণ। মাথাটা নিচু করে বসে আছে, ঘাস দেখছে। অনন্যা নেই তবুও এই জায়গাটা ছেড়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার। বারবার মনে হয়, অনন্যা তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে ঐ বাসা থেকে, সে চলে গেলে অনন্যা কষ্ট পাবে। কি যেনো গোলাপি একটা দেখা যাচ্ছে, অস্পষ্ট ভাবে, ঝাপসা লাগছে। চোখে চশমা টা পড়ে নিলো। এবার সব স্পষ্ট হয়ে গেছে। সব কিছু দেখতে পাচ্ছে। একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে তার দিকে! গোলাপি রংয়ের জামা, সাদা ওড়না সাদা পায়জামা পরনে। মেয়েটা দেখতে সুন্দর। ছোট ছোট চুলগুলি বারবার সামনে চলে আসছে। মেয়েটা সরানোর কোনো প্রয়োজনবোধ করছে না। সে হাটছেই, রাস্তা শেষ হচ্ছে না। আজব মেয়েটার এই অল্প রাস্তা টা আসতে এত দেরি হচ্ছে কেনো? মেয়েটা আসলেই সে জিজ্ঞেস করবে, “এই টুকু রাস্তা আসতে এতো সময় লাগে?” একটু রাগ নিয়েই জিজ্ঞেস করবে মেয়েটাকে, তার এমন প্রশ্নে হয়তো মেয়েটা ভড়কে যাবে, কি উত্তর দিবে তা নিয়ে হয়তো বিড়ম্বনায় পড়ে যাবে। পুলক হাসলো, হুশ ফিরে এলো, সে কি ভাবছিলো? একটা অজানা মেয়েকে এমন প্রশ্ন করাটা অস্বাভাবিক আর অপ্রয়োজনীয় তো বটেই। কিন্তু মেয়েটা কেনো আসছে তার দিকে? আচ্ছা এমন নয়তো ওকে অনন্যা পাঠিয়েছে এটা বলার জন্য যে অনন্যা বেঁচে আছে। মেয়েটা যতোই তার কাছে আসছে, পুলকের মনে ততোই আশার বীজ বপন হচ্ছে। এলোমেলো ভাবনারা এসে ভর করছে তার মাথায়। মেয়েটা তার সামনে দাড়াতেই পুলক প্রশ্ন করলো,

— অনন্যা বেঁচে আছে তাই না?

তৃপ্তি পুলকের কথায় বেশ ভড়কে গেলো, লোকটাকে নিছক পাগল বইকি আর কিছুই মনে হচ্ছে না। হয়তো লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তৃপ্তি নরম গলায় জবাব দিলো,

— না, সে তো কবেই মারা গেছে।

পুলক কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো, তারপর ধমক দিয়ে বললো,

— আমাকে কি দেখে পাগল মনে হয়??? কেনো এসেছেন এখানে?? যান এখান থেকে,,,

— হুম, তা যা বলেছেন। দেখে তো মনেই হচ্ছে আপনি পাগল। মাথার চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। গালে খোচা খোচা দাড়ি, জামাকাপড় গুলো অনেক নোংরা, কাল মনে হয় এগুলো নিয়েই শুয়ে পড়েছিলেন, শার্টটা দেখেন কেমন কুচকে আছে, ময়লাও হয়েছে। মনে হচ্ছে না আমি একদম শিউর আপনি পাগল হয়ে গেছেন।

পুলক মেয়েটার দিকে তাকালো, মেয়েটা কেমন নাক মুখ উল্টিয়ে কথা গুলো বললো। এখন সে কি বলবে বুঝতে পারলো না, উত্তর নিয়ে বিড়ম্বনায় পরে গেলো সে নিজে। কিন্তু একটু আগেই সে ঐ মেয়েটাকে এই বিড়ম্বনায় ফেলতে চেয়েছিলো, এখন সে নিজের পরে গেছে। পুলক নিজের শার্টটা দেখলো, সত্যিই শার্টটাতে কেমন কেমন ভাঁজ পরে গেছে,ময়লাও হয়ে গেছে। গালে হাত বুলালো, হুম খোঁচা খোচা দাড়ি আছে। কাজের চাপে শেইভ করা হয় নি। আর এখন তো,,, মাথার চুলগুলোরও একি অবস্থা। পুলক লজ্জায় পরে গেলো একটু। কোনো মেয়ে তাকে এভাবে বলবে সে ভাবতেও পারে নি।

তৃপ্তি বুঝতে পারছে পুলক বেশ লজ্জায় পরে গেছে। তৃপ্তির অবশ্য তাকে লজ্জায় ফেলে দেওয়ার কোনো ইচ্ছায় ছিলো না।কিন্তু এমন ধমকে কথা বললো তাই তাকে এই কথাগুলো বললো। এসেছিলো পুলকের সাথে কথা বলতে, এভাবে কেউ বসে থাকে নাকি। যে চলে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে, তার জন্য শোক প্রকাশ করে লাভ কি?

তৃপ্তি ধীর গলায় বললো,

— এখানে বসে থাকেন কেনো?

পুলক কি বলবে ভাবতে লাগলো। কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

— হয়তো জানেন আমি কেনো বসে থাকি। আর যদি না জানেন তাহলে বলছি, আমি আমার প্রেমিকার জন্য বসে আছি।

— কিন্তু সে তো মরে গেছে। তাহলে কেনো বসে আছেন! নাকি সবাইকে দেখাচ্ছেন যে আমি প্রেমিক, দেবদাস। এখানে বসে প্রেমিকার বিরহে প্রান বিসর্জন দিবো।

পুলক মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। বড্ড ব্যঙ্গ করে কথা বলছে মেয়েটা। কিন্তু প্রত্যেকটাই সত্যি কথা, প্রকৃত সত্য। সত্যিই সে কি করছে এখানে বসে! আচ্ছা মেয়েটার নাম কি? পুলক ধীর গলায় বললো,

—আপনার নাম কি?

—তৃপ্তি।

— ওহ

— আচ্ছা আপনি এখন আসেন। আর কখনো এখানে আসবেন না। আর শুনুন আবেগ কন্ট্রোল করতে শিখুন। জীবন টা এতো সহজ নয়, বুঝলেন। কেউ সব কিছু পেয়ে ভালোবাসা পায়। আর কেউ সব কিছু হারিয়ে পায়।

তৃপ্তি যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু আবার ঘুরে বললো,
— শুনুন, আপনাকে দেবদাস লুকে একদম মানায় না। বড্ড বাজে দেখতে লাগে। বাসায় গিয়েই এই লুকটা চেঞ্জ করবেন। আর এটা কি ধরনের চশমার ফ্রেম লাগিয়েছেন!! এখন অনেক সুন্দর সুন্দর ফ্রেম আছে, ঐগুলো ইউজ করবেন।

কথাগুলো বলে তৃপ্তি আর দাড়ালো না। হাটা শুরু করে দিলো।

পুলক তৃপ্তির দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার কথা বলার ধরণ একদম অন্যরকম। যা বলে স্পষ্ট ভাবে বলে। প্রথম দেখায় কারো সাথে এইভাবে কথা বলা যায়, আজ পুলক প্রথম দেখলো। কিছুক্ষণ অনন্যার রুমটার দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর ঐ মেয়েটার দিকে তাকালো, বাসার গেইটের কাছাকাছি চলে গেছে সে। পুলক ও উঠে দাঁড়ালো, তাকেও যেতে হবে। সত্যিই অনন্যার শোকে তার মাথা কাজ করছিলো না,মেয়েটা তার হুশ ফিরিয়ে দিলো।

নিবিড় সোফায় বসে দু হাত কচলাতে লাগলো। বড্ড অসস্তি তার। এভাবে অপরাধীর মতো মায়ের সামনে বসে থাকার কোনো মানে নেই। কিন্তু চাইলেও উঠে যেতে পারছে না। তাহলে তার মাকে একপ্রকার অসম্মান করা হবে। কিন্তু তিনি কিছু বলছে না কেনো?
নিবিড়েই কথা শুরু করলো,

— কেনো ডেকেছো? কি বলবে? তারাতারি বলো।

— তোর কাজ আছে নাকি?

— না,,

নিবিড় আর কিছু বললো না,
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আয়েশা আক্তার বললো,

— দেখ,, আগে যা হয়ে গেছে তা সব ভুলে যা। পুরনো সম্পর্কের ফেরে তুই নতুন সম্পর্ক টাকে অবহেলা করছিস। তুই মিতু কে কষ্ট দিচ্ছিস। সকালে তুই মিতুকে যা নয় তা বললি।

নিবিড় তার কথার কিছুই বুঝলো না। সে আবার সকালে কি বললো মিতুকে? সকালে তো ফোনে!!!আয়েশা আক্তার বলেই যাচ্ছে,,
—তুই সকালে কত কিছু বললি, চড় লাগিয়ে দিবি, আরও কতো কিছু। তোদের তো বিয়ে হয়েছে এই কদিন। তাতেই বউয়ের এমন আচরণ করছিস। আর তোর বাবা আজ পর্যন্ত আমার সাথে উচু গলায় কথায় বলে নি। আমি যদি আজ মোবাইল টা না করতাম তাহলে বুঝতেই পারতাম না তার ছেলে ছেলের বউয়ের সাথে এমন আচরণ করে।

নিবিড় এতক্ষণ পর বড় সরো একটা ধাক্কা খেলো। তাহলে সকালে মিতু নয় মা ফোন ধরেছিলো!!! নিবিড় তাকে কতোকিছু বলেছে মিতু ভেবে। এই জন্যেই তো তিনি এতো জ্ঞান দিচ্ছেন।

নিবিড় বললো,
— দেখো মা আমি ওর সাথে কোনো খারাপ আচরণ করে নি। তুমি ওসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না।
উঠে দাড়ালো, আয়েশা আক্তার বললো,

— দেখ আগের সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমি সব কিছুর দায় মেনেও নিয়েছি। আমাকে মাফ করে দিস,, আর মিতু কে কষ্ট দিস না।

নিবিড় রুমে এসে মিতুকে দেখতে লাগলো। ইচ্ছা করছে সত্যি সত্যিই এই মেয়ের গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে।
মিতু বললো,

— মা কি বললো আপনাকে?

— না, কিছু বলে নি। আচ্ছা সকালে তুমি ফোন দিয়ে মাকে দিয়ে দিয়েছিলে কেনো?

— আসলে ওনিই তো আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো তাই আমি দিয়েছিলাম ওনার, কিন্তু আপনি কি যেনো বলে কেটে দিলেন৷ কেনো কি হয়েছে?

— না,, কিছু হয় নি।

মিতু হাসলো। বেশ আল্লাদি গলায় বললো,

—আজকে রাতের শহর টা ঘুরে দেখাবেন আমায়?

নিবিড় মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে না বলতে চেয়েও না বলতে পারলো না,, মুখ দিয়ে হ্যা শব্দটাই বেরুলো। মিতুর খুশি আর দেখে কে!
লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।মিতু প্ল্যান করলো রাত দশটা এগারো টার দিকে বেরুবে। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে, এটা অবশ্যই নিবিড়ের প্ল্যান।

দশটা বাজে,
কালো রংয়ের মধ্যেই লাল পাড়ের কালো শাড়ি পেঁচিয়ে পড়েছে৷ কপালে কালো টিপ, হাত ভর্তি লাল কাঁচের চুড়ি, পায়ে আলতা, চোখে মোটা কাজল, ঠোঁটে কড়া লাল রং য়ের লিপস্টিক। কপালের টিপ টা কেমন যেনো লাগছে। লাল হলে বেশ ভালো হতো, আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাসলো পূন্য। কিন্তু তিয়ান তো বলেছে কালো টিপ পড়তে। রুমটা হালকা নীলচে আলো, টেবিলের উপরে কয়েকটা মোমবাতি রাখা, বেশ অন্য রকম ভাবেই রুমটা সাজিয়েছে পূন্য। তৃপ্তি সন্ধ্যার দিকে চলে যাওয়ার পর এসব করেছে পূন্য। আয়নার সামনে দাড়িয়ে খোঁপায় গোলাপ আটকে দিলো। কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখলো। আজকে শুধু মাত্র তিয়ানের ইচ্ছা পূরণের জন্যই এতো কিছু। কিন্তু তিয়ান কখন আসবে? এতো দেরি করছে কেনো? খুট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো।
পূন্য আয়নার দিক থেকে ঘুরে দরজার দিকে তাকালো।

তিয়ান রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। মৃদু নীল আলো, কয়েকটা মোমবাতি, পুরো রুমের চেহারায় পাল্টে দিয়েছে৷ কিন্তু চোখটা আটকে গেলো পূন্যর উপরেই। পা থেকে মাথা পর্যন্ত, আবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখলো পূন্য। হালকা সাজে কাউকে যে এতো অপরুপ লাগে তিয়ান কখনোই জানতো না৷ এতোদিন পুন্যকে এই রুপেই দেখতে চেয়েছিলো সে। তবে সে আশা করেছিলো পূন্য লাল সাদা শাড়ি পড়বে, কিন্তু লাল কালো শাড়ি তে তাকে আরোও বেশি সুন্দর লাগছে। যেনো তার সৌন্দর্য টায় ফুটে উঠছে, কালো রং টা।
ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পূন্যর দিকে। তারপর বললো,

— এতো কেনো সুন্দর লাগছে তোমাকে?

— তোমার জন্য।

তিয়ান হাসলো, পূন্যর কোমর দুহাতে ধরে কাছে নিয়ে এলো। ওর গালের সাথে গাল ঘষলো, পূন্য হাত দিয়ে গাল চেঁপে ধরলো। খোচা খোচা দাড়ি গালে লেগেছে। চুল গুলো খুলে দিলো, গোলাপ গুলো ফ্লোরে পড়ে গেলো।চুলে নাক ডুবালো। অন্যরকম এক সুভাসে মাতাল হয়ে গেলো। কালো শাড়ির মধ্য দিয়েও দেখ যাচ্ছে ফর্সা পেট। পাজা কোলে করে বিছানায় নিয়ে এলো পূন্যকে।
আর একমুহূর্তের জন্যেও পূন্যকে দূরে রাখতে চায় না সে। পুরো ভরটায় পূন্যর উপর, পূন্য গলা জড়িয়ে আছে তিয়ানের। ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
পূন্য এর থেকে বেশি কিছু তিয়ানের কাছে আশা করে নি। ওর কাছে শরীরটায় যে সব আরেকবার প্রমান দিয়ে দিলো। কিন্তু এই তিয়ানেই আরেকদিন বলেছিলো, শারীরিক সম্পর্ক নয়, মনের সম্পর্কই সবচেয়ে বড়। তিয়ান পূন্যর গলায় নাক ডুবালো। পূন্য হালকা হাতে তিয়ানের চুলগুলো মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here