গোধূলি লগ্ন – পর্ব ৯+১০

0
252

#গোধূলি_লগ্ন

#Writer_Tabassum_Tajnim

#Part_9_10

চাপড় খেয়ে নিবিড়ের হুশ ফিরলো,, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মিতুর দিকে তাকালো,, ততক্ষণে মিতু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে।

জীবনে দ্বিতীয় বার কোনো মেয়ের হাতে চাপড় খেলো নিবিড়। একবার পূন্য দিয়েছিলো,,আর আজকে এই মেয়ে!!! একটু রাগি গলায় নিবিড় বললো,

— এই তুমি আমাকে মারলে কেনো??

মিতু হাত নামিয়ে একবার দেখলো নিবিড়কে,,তারপর একটা ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো,

— আপনি তো কথা বলছিলেন না, অন্যমনস্ক হয়ে ছিলেন, চাপড় দিলাম যাতে আপনি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন।

নিবিড় কিছু বলতে গিয়েও বললো না, মেয়েটার হাসিটা অনেক সুন্দর,, তবে হাসির সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে একটা গ্যাজা দাঁতের জন্য। একি! নিবিড় কি তবে ঐ মেয়ের মায়াতে পড়ছে? না,, এটা হতেই পারে না। কিন্তু এই মেয়ের সাথে কথা বলা কঠিন গলায় কথা ও বলতে পারে না নিবিড়,,তারপরও যথেষ্ট কঠিন গলায় বললো,,
— দ্বিতীয় বার আর যেনো এমন ভূল না হয়।
মিতু একটু হেসে বললো,,

— হ্যা,, সেটা আপনার মনোযোগের উপর নির্ভর করবে।

— কি???

— না কিছু না। আপনি ঘুমাবেন না??

— না,, ঘুম চলে গেছে।

কথাটা বলেই নিবিড় উঠে দাড়িয়ে গেলো। তারপর গিয়ে জানালাটা খুলে দিলো। খুব সুন্দর একটা সকাল,, হালকা রোদ এসে পড়েছে মিতুর মুখে,, হলুদ মুখটা আরোও হলুদ হয়ে গেছে সূর্যের আলো পড়ে। হাত দিয়ে চোখ গুলো ঢেকে নিলো মিতু,, নিবিড় ঘুরে দাড়ালো, অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চোখটা মিতুর উপরেই পড়লো। বড্ড বেশিই সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে,,,

কালো রংয়ের শার্টটা গায়ে দিয়ে, শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুম বেরিয়ে গেলো নিবিড়। কারন এই ঘরে থাকা মানে মিতু নামক একটা আজব প্রানীর সাথে থাকা,, যা থাকে অদ্ভুত ভাবে কাছে টানে,, অনেকটা চুম্বকের মতো।

মিতু হা করে নিবিড়ের যাওয়া দেখলো,, ইয়া লম্বা,,, ব্যায়াম করে শরীরটা একেবারে সিনেমার নায়কের মতো করে ফেলেছে,, গায়ের রংটাও বেশ সুন্দর। মিতুর মনে কেমন জানি এক ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। এটা ভালো না খারাপ তা বুঝতে পারছে না সে।

তবে এখন নিবিড়ের একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে, একটু আগেই সে বলেছিলো যে এই রকম বিহেইভিয়ার নিয়ে নাকি শশুড়বাড়িতে থাকা যাবে না। তবে কি তাকে পাল্টাতে হবে। যোগ্য হতে হবে এই বাড়ির?? মিতুর কাছে এই ভারী ভারী কথাগুলোর ভার নিতে কষ্ট হচ্ছে। এসব তার মাথায় কোনোদিন ও আসতো না, যদি না তার মা এসব কথা বলতো।

মিতুর স্পষ্ট মনে আছে বিয়ের কয়েকদিন আগেও মিতুর মা তাকে বলেছিলো, “মিতু তোর এই ধরনের আচরণ ঐবাড়িতে চলবে না। তোকে পাল্টাতে হবে,, ঐ বাড়ির যোগ্য হতে হবে।”

হুম,, আজ এই লোকটাও বলে গেলো এই একই কথা।

কাধে ব্যাগটা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো অনন্যা। কিছুদূর এগিয়ে আবার পিছনে ঘুরে দেখলো, সেই ছেলেটা, তার পিছু পিছু আসছে। হাত দিয়ে ইশারা করছে থামার জন্য। অনন্যা চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার, কেউ নেই। দাড়ালো,, এই পোলক ছেলেটা পুরোই পাগল।।

পোলক দৌড়ে অনন্যার কাছাকাছি আসতেই অনন্যা হাটতে শুরু করলো। পোলক ও ওর পাশে হাটতে শুরু করলো।
অনন্যা সামনের দিকে তাকিয়েই পোলককে উদ্দেশ্য করে বললো,

— “তোমাকে কতোবার না করেছি। যে তুমি এখানে এইভাবে বসে থাকবে না। লোকে দেখলে কি বলবে??”

পোলক হাসলো,,,অনন্যার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“প্রেমের কি সাধ আছে বল যদি নিন্দার কাটা না বিধিল গায়ে” কথাটা লালন বলেছিলো। প্রেমে তখনি সাধ পাওয়া যায় যখন নিন্দার কাটা গায়ে বিঁধে।

অনন্যা থমকে দাড়ালো, পোলকের দিকে ঘুরে বললো,,
— কিসের প্রেম?? আমি প্রেম ট্রেম করি না। তাই আমার গায়ে নিন্দার কাটা বিধাতে চায় না। তুমি আর কখনো এইখানে বসে থাকবে না।

পোলক অনন্যার দিকে তাকালো। অনন্যা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। পোলক ও দূরে দৃষ্টি দিয়ে বললো

— আমি করি। আমি তোমাকে ভালোবাসি,, অনেক ভালোবাসি।

—কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তাই আমি চায় না তুমি আমার বাড়ির সামনে বসে থাকো, আমি যেখানে যায় সেখানে যাও। আমি রাতে না ঘুমানো পর্যন্ত ঐ খানেই বসে থাকো। আমার বিরক্ত লাগে।

— আমার বিরক্ত লাগে না। ভালোবাসায় বিরক্ত শব্দটার কোনো জায়গা নেই। আমি ক্লান্তহীন ভাবে বলতে থাকবো আমি তোমাকে ভালোবাসি,, একদিন তুমি বলবেই যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো।

অনন্যা শব্দ করে হাসলো। কারন পোলকের কথাগুলো কেমন যেন। কবি কবি ভাব চলে এসেছে ওর মধ্যে। ছেলেটা তাকে ভালোবাসে,,কিন্তু তার ভালোবাসা যে অন্য কেউ। পোলকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
— আমিও ক্লান্তহীন ভাবেই বলে যাবো আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমার পিছু নেওয়া ছেড়ে দাও,, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

কথাটা বলে অনন্যা চলে গেলো। একবারের জন্যও পিছনে ঘুরলো না।

পোলক,, উজ্জ্বল শ্যামলা রংয়ের মাঝারী উচ্চতার, চোখে চশমা, সুরু নাক, একটু লম্বা মুখ,স্বাস্থ্যবান একটা ছেলে। সব মিলিয়ে সুদর্শন চেহারার অধিকারী বললেও ভূল হবে না। বিগত এক মাস যাবৎ অনন্যার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথম প্রেম,, প্রথম ভালো লাগা,
কিন্তু এই অনন্যা কিছুতেই তার ফিলিংস গুলো বুঝতে পারে না। শুধু এক কথায় বারবার বলে,সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
পোলক মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে একটা দৌড় দিলো,, অনন্যার পিছু পিছু যাবে।

মোর্শেদা বেগম পূন্যর হাত থেকে চা টা নিয়ে পূন্যকে ইশারা করে বসতে বলেন। পাশের চেয়ার টায়। পূন্য চুপচাপ বসলো। চায়ের চুমুক দিয়ে পূন্যকে বললেন,,
— রান্না বান্নাটা তুমি বেশ ভালোই পারো। আর চা টাতো অসাধারণ বানাও। এখন শুনো, তোমার ফুপা সকাল থেকে আমাকে কল দিচ্ছে, তোমাকে আর তিয়ানকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি বলেছিলাম বিকালের দিকে পাঠাবো, কিন্তু ওনি বললেন দশটা এগারোটার দিকেই চলে যেতে। তুমি আর তিয়ান বারোটার দিকে চলে যাবে, আমি বলে দিয়েছি। তোমার ফুপা মনে হয় তোমাকে বেশ আদর করেন।

পূন্য মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। তার যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। পূন্য মোর্শেদা বেগমকে বললো,,
— বলছিলাম কি আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। না গেলে হবে না।

— সেকি কথা। ওনি আমাদেরকে দাওয়াত করেছেন তার উপর পাঁচ ছয় বার কল দিয়েছে, আমিতো যেতে পারবো না, বাতের ব্যাথার জন্য, এখন যদি তোমরা না যাও তাহলে এটা খারাপ দেখাবে।

পূন্য দাড়িয়ে পড়লো। যাওয়ার জন্য বাড়ালো,, পিছন থেকে মোর্শেদা বেগম বললো,,
— তিয়ান কি এখনো উঠে নি??

— না।

— যাও যাও তাড়াতাড়ি ডেকে তুলো। এত বেলা করে কেউ ঘুমায় নাকি।

পূন্য রুমে ডুকলো। তিয়ান শার্ট গায়ে দিচ্ছে,, পূন্যকে দেখে তিয়ান এগিয়ে এলো, আরেকবার সরি বলতে হবে। কিন্তু তিয়ান বলার আগেই পূন্য বললো,
— চা খাবেন?? নাকি কফি??
— পূন্য,, I’m sorry,,,
— চা খাবেন?? না কফি??

তিয়ানের রাগ উঠে গেলো,, ও আর নিতে পারছে না সে একটা বলছে আর পূন্য আরেকটা,, রোবটের মতো আচরণ করছে তার সাথে।রাগের মাথায় সে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গেলো। পূন্য তখনো দাড়িয়ে আছে দেখে বললো,,
— দাড়িয়ে আছো কেনো??

— আপনি বললেন না তো আপনি চা খাবেন না কফি??

— যতদিন পর্যন্ত তুমি আমার সাথে এই রোবট টাইপের আচরণ করবে ততদিন পর্যন্ত আমি তোমার হাতে কিছুই খাবো না।
পূন্য কিছু বললো না। তিয়ান ও আর ওর থেকে উত্তর আশা করলো না। কারন জানে পূন্য আর কোনো উত্তর দিবে না, তাই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। পূন্য বিছানায় বসে পড়লো।

পূন্য আর তিয়ান দুপুরের দিকে নিবিড়ের বাসায় আসলো। মিতুর সাথে কথা বলে পূন্যর মনটা হালকা হয়ে গেলো। বাচ্চা একটা মেয়ে,, আর নিবিড়।
— তোমার ঘাড়ে এটা কিসের দাগ?? দেখে তো বাইটের দাগ মনে হচ্ছে!!

কথাটা শুনে পূন্য চমকে উঠলো, পিছনে ঘুরতেই দেখে নিবিড় দাড়িয়ে আছে। পূন্য ঘাড়ে হাত দিলো,, মনে হয় কাল রাতে তিয়ান!! চুল গুলো খুলে দিলো যাতে দাগ টা লুকিয়ে যায়।
পূন্যকে চুপ থাকতে দেখে নিবিড় আবার বললো,,
— কি হলো?? চুপ করে আছো কেনো?? শুধু ঘাড়ে না গলায় ও আছে,,বলো এগুলো কিসের দাগ??

পূন্য কি বলবে??

চলবে,,
#গোধূলি_লগ্ন

#Writer_Tabassum_Tajnim

#Part_10

— কি হলো?? চুপ করে আছো কেনো?? শুধু ঘাড়ে না গলায় ও আছে,,বলো এগুলো কিসের দাগ??

পূন্য কি বলবে?? অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে পূন্য কঠিন গলায় বললো,
–আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই। কে তুমি??

— তুমি আমাকে বলতে বাধ্য। আর আমি কে সেটা তুমি আমার থেকে ভালো জানো।

— পুরোনো কাসুন্দি ঘেটে লাভ কি বলো। তুমি নতুন জীবনে পা দিয়েছো। আমি নতুন জীবনে পা দিয়েছি। তাহলে কেনো অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করছো?? তুমি তোমার নতুন জীবন নিয়ে থাকো, আমি আমার নতুন জীবন নিয়ে থাকি।

কথাটা বলে পূন্য পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য। নিবিড় কিছুক্ষণ থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। তারপর পূন্য কে ডাকলো,,
— দাড়াও,,পূন্য। আমার কথা তো শেষ হয় নি।

–আবার কি??

–তাহলে দাগ গুলো কি নতুন জীবনে পা রাখার চিহ্ন???

তিয়ান এসে দাড়ালো পূন্যর সামনে। পূন্য আর কিছু বললো না। তিয়ান নিবিড়ের দিকে এগিয়ে গেলো,,তারপর বললো,,

— কেমন আছো নিবিড়??

— হুম ভালো, তুমি??

— এইতো ভালো। তো বউ পছন্দ হয়েছে তো??

— পছন্দ না হলেও তো এখন ফেলতে পারবো না। আচ্ছা চলো খেয়ে নিবে এখন।

তিয়ান এগিয়ে গেলো। নিবিড় পূন্যর পাশে এসে দাড়ালো, পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো,
— উত্তর পেলাম না!!

— সব প্রশ্নের উত্তর আশা করা ভূল। আমি আমার অতীত ভূলে গেছি।

নিবির মুচকি হেসে বললো,
–রবীন্দ্রনাথের কি বলেছিলো জানো,,”পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমের মত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছু নাই। প্রথম যৌবনে বালিকা যাহাকে ভালোবাসে তাহার মতো সৌভাগ্যবান ও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিতই থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকা কে সারাজীবন পোড়ায়”

পূন্য পা বাড়ালো,, মাথা ঝাঁকিয়ে “সর্বগ্রাসী প্রেম” কথাটা আওড়াতে লাগলো। সত্যিই প্রথম প্রেম সর্বগ্রাসী প্রেম৷ পূন্যর কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তার সুখটাও পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে, থাকে পোড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পূন্য এসে মিতুর কাছে বসলো। মিতুর দিকে তাকিয়ে হাসলো। এই মেয়ের প্রেমে নিবিড় খুব শীঘ্রই পড়বে। যার এতো মিষ্টি চেহারা, তার প্রেমে না পড়ে থাকতে পারবে না নিবিড়।

মিতুর পূন্যকে খুব ভালো লেগেছে। খুব নরম গলায় কথা বলে, কি সুন্দর বুঝিয়ে বুঝিয়ে কথা বলে আর দেখতেও অনেক সুন্দর । আর ঐ নিবিড় টা,, লম্বু কেমন ধমকিয়ে ধমকিয়ে কথা বলে। কিন্তু এখন পূন্য কথা বলছে না, শুধু মিতুর হাত ধরে বসে আছে।
মিতুর ওর সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছা করছে, তাই মিতুই বললো,

— আচ্ছা পূন্য আপু,, তুমি এতো সুন্দর কেনো??

পূন্য তুমির কথা শুনে হাসলো, মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,

— তুমি সুন্দর তাই।

— বললে না তো। আচ্ছা বলতে হবে না। এখন বলো তুমি আবার কবে আসবে??

— কেনো??

— তুমি না আসলে আমি ঐ লম্বুকে নিয়ে তোমার বাসায় চলে যাবো।

— লম্বু কে??

— আরে নিবিড়,, নিবিড়।

পূন্য আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না,, নিবিড় লম্বু!!
মিতু পূন্যর হাসি দেখে একটু ভয় পেলো, আবার লজ্জাও পেলো, কিন্তু থেমে গেলো না,, পূন্যকে আবার বললো

— আচ্ছা, তুমি ঐ লম্বু কে বলে দিয়ো যাতে আমাকে আর না বকে,, কাল থেকে বকা শুরু করছে।

পূন্য কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, তারপর মৃদু হেসে মিতুর গালে হাত দিয়ে বললো,

— তুমি শুধু নিবিড় যেমন যেমন বলবে, তেমন তেমন করো তাহলেই আর তোমাকে বকবে না। নিবিড় কে বেশি সিগারেট খেতে দিবে না। যখন দেখবে নিবিড় বেশি রেগে গেছে তখন একদম চুপ করে থাকবে। নিবিড়ের একটা লাইব্রেরী আছে। ঐটাতে গিয়ে অনেকরকম বই পড়তে পারবে, তবে ওর অনুমতি নিয়ে যাবে। অনুমতি ছাড়া গেলে শাস্তি দিবে।

— তুমি কখনো শাস্তি পেয়েছো??

— হুম,, পেয়েছে,,

দুজনেই নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় হুটহাট করে কখন কোথায় চলে আসে বলা মুশকিল।
নিবিড় পূন্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,

— তিয়ান তোমাকে খুঁজছে??

পূন্য দাড়িয়ে পড়লো। মিতুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পূন্য পা বাড়ালো। নিবিড় ও পিছু পিছু আসলো। পূন্য তাড়াতাড়ি পা বাড়ালো,,নিবিড় হেসে বললো,
— পালাতে চাইছো?অতীতের থেকে?

— একদম না, পালাবো কেনো?

–সেটা তুমিই ভালো জানো। আচ্ছা যাও যাও,, তোমার হাজবেন্ডের কাছে, সে দাড়িয়ে আছে।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে পূন্য গাড়িতে উঠে বসলো।

গাড়ি চলছে,,অনেক্ষণ চুপচাপ থাকার পর তিয়ান বললো,
— আচ্ছা, তুমি যতক্ষন ঐ বাড়িতে ছিলে ততক্ষণ হাসি খুশি ছিলে। গাড়িতে উঠার পর থেকেই এই আবার আগের রূপ ধারন করেছো। কেনো?? আমি কি তোমার স্বাভাবিক আচরণের যোগ্য নই??

পূন্য কিছুক্ষণ তিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,,
— কেনো আমি কি অস্বাভাবিক আচরণ করি?? আপনি যদি বলেন তাহলে আমি মিতুর মতো আচরণ ও করতে পারি।

তিয়ান পূন্যর কথা শুনে হাসলো। পূন্যও তাল মিলিয়ে হাসলো। তিয়ান পূন্যর দিকে তাকালো, এই ভালো তো এই খারাপ, যাক একটু তো ভালো করে কথা বলেছে এটাতেই তিয়ানের তৃপ্তি।

অনন্যা রুমের জানালা দিয়ে তাকালো। পোলক এখানেই বসে আছে। যতক্ষণ না ও রুমের লাইট বন্ধ করবে, ততক্ষন ছেলেটা ঐখানেই বসে থাকবে। অনন্যার মাঝে মাঝে রাগ হয় ওর উপর, আবার মাঝে মাঝে ভালো লাগে। এমনও কেউ আছে, যে কিনা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে,,

অনন্যা লাইটটা অফ করে দিলো। যাতে পোলক চলে যায়। চলেও যাবে,, পাগল ছেলে,,

কিন্তু অনন্যা ওর ভালোবাসার যোগ্য না। আর অনন্যা ওকে ঠকাতে পারবে না। ঠকে কষ্ট পাওয়ার থেকে এমনিতেই কষ্ট পাওয়া অনেক ভালো। অনন্যা ডায়েরি টা হাতে নিলো। হাত বুলালো ডায়েরির উপর। যা কেউ জানে না সেটা এই ডায়েরি টা জানে। ভাগ্যিস, ডায়েরি কথা বলতে পারে না। না হলে সব কথা সবাই কে বলে দিতো।

অনন্যা ডায়েরি টা মেলে অনন্যা লিখতে বসলো।

“পোলক নামটা মনে আসলেই মন টা পোলকিত হয়। কিন্তু তোমার নামটার মতো দাগ কাটতে পারে নি এখনো। আমি যে তোমাকে সব দিয়েছি, ভালোবাসা, সুখ, আর মুক্তি ও। তোমাকে মুক্ত করে দেওয়ার পরও তুমি এসেছো, আমি বাধা দেই নি। কারন তোমাকে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।

আরোও অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করলেও লিখলো না। মোবাইলপর টর্চ টা নিভিয়ে ডায়েরি টা বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

পূন্য বেলকুনির গ্রিলটা ধরে দাড়িয়ে আছে। পাশে তিয়ান দাড়িয়ে আছে। তিয়ান বুঝতে পারছে না পূন্য কি বলবে,,

পূন্য বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। পূন্য তিয়ানের দিকে না তাকিয়েই বললো,,

— আমি আরও একটু সময় চেয়েছিলাম,, কিন্তু,,, যাক গে যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আমার আপনাকে কিছু বলার ছিলো, যেটা আগে বলার দরকার ছিলো, কিন্তু সময় টাই উল্টো ছিলো। যাই হোক এখন বলি,, তারপরে আপনি ঠিক করবেন আপনি কি করবেন।

তিয়ান বুঝতে পারছে না, পূন্য কি বলবে। যাই বলুক না কেনো, সে পূন্যকে কখনোই ছাড়বে না। কারন সে পূন্যকে ভালোবেসে ফেলেছে,, তাই ছাড়ার প্রশ্নই উঠে না।

পূন্য কিভাবে শুরু করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না,, তারপরেও বললো,,

— আমি নিবিড়কে ভালোবাসি। আপনার সাথে তো নিবিড়ের পরিচয় হয়েছে।

তিয়ান বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে,, কি বলবে,,
পূন্য কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,
–হয়তো আপনার মনে এখন প্রশ্ন আসছে, সব কয়টা প্রশ্নের উত্তর আমি আপনাকে দিতে পারবো না,, বা সব কয়টা প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
— শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে। তুমি কি আমার সাথে থাকতে চাও?? নাকি নিবিড়ের কাছে?

পূন্য তিয়ানের কথা শুনে ওর দিকে ঘুরলো। অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে বললো
— আপনার সাথে থাকতে চাই,,কিন্তু আমি জানি না আমি আপনাকে কতোটুকু ভালোবাসা দিতে পারবো। হয়তো আমি আপনাকে বারবার ঠকিয়ে যাবো।

তিয়ান পূন্যর কথা শুনে চোখ বুঝলো। মনের ভিতরের সব তোলাপাড় এক নিমিশে বন্ধ হয়ে গেলো। এক পরম শান্তি অনুভব করলো। দুপা এগিয়ে পূন্যর কাছাকাছি আসলো। দু হাতে পূন্যর মুখটা তুললো। চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। তারপর বললো,,

— তুমি যতোটুকু ভালোবাসা দিতে পারবে,, আমার তাতেই হবে। এর বেশি আমি কখনো চাইবো না তোমার কাছে। আমি জানি তুমি স্বেচ্ছায় যতটুকু ভালোবাসবে আমাকে, সেটা খাটি। তার থেকে বেশি আমার প্রয়োজন নেই।

তিয়ান খানিক টা সময় নিলো। পূন্য চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। তিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— আমি আগেই বলেছিলাম, তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তাই এসব নিয়ে ভেবো না। আমি তোমাকে যতটুকু ভালোবাসতাম আগে,, এখনো ততোটুকুই ভালোবাসি। এই কথা শুনার পর, আমার ভালোবাসা কমে নি,, উল্টো বেড়ে গেছে,, কারন আমাদের সম্পর্কটা আরও সহজ হয়ে গেছে। এখন কোনো বাঁধা নেই।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here