রোদেলা,পর্ব: ৬৮

0
490

#রোদেলা,পর্ব: ৬৮
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু

বিয়েটা ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো। ছোট খালা বলেছিলো-
ওরা না হয় যাক, রোদেলা তুই একটু থাক তোর মায়ের কাছে, ছোট মেয়েটার বিয়ে এ সময় তুই কাছে থাকলে তার কষ্ট কম হবে। রাগে রোদেলার গা জ্বলে যায়। তারা সবসময় শুধু তাদেরটাই বোঝে। পেয়েছে বলদ এক মেয়ের জামাই। তা না হলে ওদের বাড়ির বিয়ের ঝামেলা রেখে কেও শ্বশুর বাড়ির ঝামেলাও পোহায়। তবুও সুফিয়ান দুইদিকের ঝামেলাই শক্ত হাতে সামলেছেন। বিয়ে বাড়ির কম কাজ? তাছাড়া প্রিসিলাকে তো তাকেই বরন করতে হবে। এদিকে অনিমার শ্বশুর অসুস্থ, ওকে যে দায়িত্ব দিবে তাও সম্ভব না। রোদেলা বিরক্তি হজম করে ছোট খালাকে বলেছিলো-
মেয়ে গেছে তো কি হয়েছে। তার সবচেয়ে প্রিয় যে আপনারা, তারা তো তাকে ঘিরেই আছেন। কথাটা শুনে ঘরে থাকা সবাই তাকায় রোদেলার দিকে। কেউ কিছু না বললেও রোদেলা অনুতপ্ত হয় এমন কথা বলে ফেলায়। বুঝতে পারে এ কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয় নি ওর। কিন্তু ও নিজেও তো মানুষ। তারা কোন আক্কেলে এ কথা বলে। বেআক্কলের মতো কথা বলে ওকে দোষী করলো। এসব যে তাদের চালাকি তা ও ঠিকই বোঝে। বোঝে না শুধু ওর মা। সেখান থেকে নিচে এসে পরে রোদেলা। কথাটা না বললেই পারতো ভাবতে ভাবতে। আবার ভাবে কি থাকবে ও ওর মা একটি কথাও বলে নি ওর সাথে। এ কথা যদি নাসিমার কানে যায় তাহলে ওর প্রতি বিরক্তি বাড়বে না কমবে নাসিমার…?

তিনি এত গুলো কথা শুনিয়েছেন, অহংকারের ভার আল্লাহ সহ্য করেন না এ কথাটা বলতেও তার বাঁধে নি। এ কথাটার মানে কি এত সোজা…? এ কথার মানে হচ্ছে রোদেলা অহংকারী, আর আল্লাহ ওর ধ্বংস করবে।
এত কিছু বলার পরও তার কষ্ট লাঘব হয় নি। একটা বার ভাবে নি এত বড় কথা যে সে বললো তার মেয়ে কষ্ট পেয়েছে কি না। সেসব ভাবার সময় তার কই…?

তিনি নাকি খুব কষ্ট পেয়েছে রোদেলার এমন আচরণে এটা পরদিন রোদেলাকে বলেছে তার ছোট মামী। তিনি প্রিসিলার সাথে এসেছেন ওদের শ্বশুরবাড়িতে। নানী থাকলে হয়তো তিনিই আসতেন। রোদেলা এ কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে তা বুঝতে পারলো না।

একটু সময় বিরতি নিয়ে শুধু বলেছিলো-
: মামী আমার কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই, সবার সব রূপ দেখে ফেলেছি তো তাই এখন আর কষ্ট লাগে না। কারো কোন দোষ নেই, দোষ হচ্ছে আমাদের কপালের। তা না হলে আমাদের মা কেন আমাদের বোঝে না…? কেন আমাদের কষ্টে তার কষ্ট হয় না। এই যে আমাদের সারা দুনিয়ার সাথে বুঝতে হচ্ছে, সারা দুনিয়ার চোখে আমরা খারাপ তা কেন জানেন নিশ্চয়ই,
আমরা করি মা মা,
মা করে ভাইবোন, ভাইবোন।

মেঝো খালার সাথে এই যে এত ভাব, অথচ তিনিই কিন্তু বিশাল রকমের দুঃখ দিয়েছিলেন তাকে। তিনি তা বেমালুম ভুলে গেছেন। কষ্ট কি তার ছোট বোন বা আপনার স্বামী কম দিয়েছেন..?

তার স্বামীর কথা তুলতেই তার মুখটা কেমন চুপসে গেলো। রোদেলা বলে,
: আপনার স্বামীর কথা শুধু তুলেছি, এতটুকুতেই এ অবস্থা, আমার পুরো কথা শুনলে তো তাহলে অজ্ঞান হয়ে যাবেন, বলে একটা কপট হাসি হাসার চেষ্টা করে রোদেলা। এই হাসি যেন তাকে আরো বিব্রত করে তোলে।

মামী আমার আজও মনে পরে, মেঝো খালার ননদের ছেলের জন্য যখন মেয়ে খুঁজতে লাগলো হন্য হয়ে, বিয়ে করে বৌ বিদেশ নিয়ে যাবে সময় শেষের দিকে তাই । লিপি খালা মানে ঐ যে আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন, তিনি একদিন বলেছিলেন –
: মেঝো আফা আপনের এত সুন্দর ভাগনী থাকতে আপনে মানইষের বাড়িত মেয়ে খুঁজেন ক্যান….
উত্তরে তিনি তখন একটা কথা বলেছিলেন, সে কথাটা আমার আজও মনে আছে। শুনবেন কি বলেছিলো-

মুখ ম্লান করে অসহায় ভাবে রোদেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি। কারন তিনি সেদিন সেখানেই ছিলেন। এবং ননাশের কথার পিঠে দু-একটা কথা তিনিও জুড়েছিলেন রসালো করে।

মামী আমার মা বলে আমি নাকি অতীত ভুলে গেছি…
কথাটা যে কত্ত ভুল তা তিনি জানেন না। জানবেনই বা কিভাবে বলেন। অন্য একটা লা*শ*কে যে নিজের মেয়ে ভেবে নেয় তার নিজের সন্তানদের জানাশোনায় যে কত ভুল তা তো আর বলার অপেক্ষা থাকে না তাই না….

মামী প্রসঙ্গটা তুলেছিলো রোদেলার সাথে দূরত্ব ঘুচিয়ে ভাব জমাতে। উল্টো নিজেই জমে গেলেন। রোদেলা ব্যাস্ত ভঙ্গিতে উঠে পরে রান্নাঘরের দিকে যায়।

কাজের খালাকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সুফিয়ানকে ডাকতে যায় ঘরে। বেচারা ভোররাতে এসেছে পার্টি সেন্টার থেকে।
উপুর হয়ে বেঘোরে শুয়ে আছে সুফিয়ান, গরমে নাজেহাল অবস্থা। ভাদ্র মাসের বিশ্রী গরমে নাজেহাল ও নিজেও।
রোদেলার মায়া লাগে ডাকতে। কিন্তু উপায় নেই আজ বৌভাত নানান কাজের ঝামেলা। কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আস্তে আস্তে ডাকে ও।
: এ্যাই সুফি, সুফি….. উঠেন তো…
: উহ্
: উহ্ না, আজ এত বড় অনুষ্ঠান, আপনি ঘুমালে চলবে কেন…?
: একটা স্বপ্ন দেখছি, সেটা শেষ করে উঠছি।

হাসি পায় রোদেলা, স্বপ্নটা কি নিজে থেকে দেখছে যে বাকীটা শেষ করে উঠবে। ঘরের ফ্যান বন্ধ করে ও। ডাকাডাকি করে লাভ নেই। ফ্যান বন্ধ করলে এমনিতেই উঠে পরবে। ঘরের এসিটা কি যেন সমস্যা হয়েছে। দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থাকায় কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো। এমন একটা সময়ে এটা নষ্ট হলো যে একটা মিস্ত্রি এনে যে দেখাবে সে ফুরসত ও ওর নেই।

রোদেলা আলমারি খুলে কাপড়চোপড় আগে থেকে ঠিকঠাক করে রাখতে। কি পরবে তা নিয়ে কোন পূর্বপরিকল্পনা করে নি ও। মানসিক ভাবে কিছুটা বিক্ষিপ্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত নিজের জন্য শাড়ি কিনবে ভেবেও কেনা হয় নি। মনে শান্তি থাকলে সব ভালো লাগে আর তাঁর কাছাকাছি থাকলে মানসিক শান্তি কখনোই পায় না ও। এ বিয়ে উপলক্ষ্যে সবার জন্য কেনাকাটা করেছে ও নিজ হাতে। নিজের বাবার বাড়ির মানুষ, শ্বশুর বাড়ির মানুষ, অনিমার শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছে দু’হাতে ভরে।

এদিকে অনিমা বেচারী ওর শ্বশুর অসুস্থ থাকায় থাকতে পারে নি, গতকাল রাতে নতুন বৌকে এ বাড়িতে এনেই চলে গেছে। আজ দুপুরে সরাসরি পার্টি সেন্টারে আসবে সবাইকে নিয়ে বলেছে সকালে রোদেলাকে।

কাপড় বের করে ওয়ারড্রবের উপরে রাখলো ও। আলমারীর কপাট লাগাতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠে ও,
বিছানায় ঘুমে তলিয়ে থাকা সুফিয়ান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে কবাটের পেছনে। মুচকি হেসে বলে-
: ভয় পেয়েছো….?
: কি যে আপনি করেন, ভয়ে আমার আত্মা উড়ে যাবার মতো অবস্থা…
: কাছে আসো সুরা পড়ে ফুঁ দিয়ে দি…
: হইছে… সকাল সকাল এসব ঢং করা লাগবে না…
যান দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেয়ে ওখানে গিয়ে দেখেন কি অবস্থা…
: সূরা পড়ে ফুঁ দিবো বললাম, এটা তোমার কাছে ঢং মনে হলো..
: আপনি যে কি পড়বেন তা আমার চেয়ে ভালো কে জানে…?
মুখটা খানিকটা বাকিয়ে বলে-
: বাইরের দুনিয়া জানে আহা…
কি ভালো ছেলেটা, কত ভদ্রলোক…!
আরে আমি তো জানি আপনি কি…?
: মানে কি…? আমি আবার কি করলাম…?
: কি করেন নি তাই বলেন আমাকে…
: বিয়ে করা বৌকে একটু আদর করি, ভালোবাসি তাতেও দোষ…! আচ্ছা, ঠিকাছে…
: আদর….! আর ঠিকাছে মানে… ঠিকাছে মানে কি…?
: বৌকে ভালোবেসে তো ইজ্জত পেলাম না…, দেখি কার কাছে ইজ্জত পাই…

একথা শুনে রাগান্বিত ভঙ্গিতে তেড়ে আসে রোদেলা। ওর গায়ে থাকা টিশার্টের গলার দিকটা মুঠো করে ধরে বলে এক্কেবারে জানে মে*রে ফেলবো…
: ওরে বাবা, ভয় পাইছি। বলে দু হাত উঁচিয়ে রাখে সারেন্ডার ভঙ্গিতে। বাম হাতে থাকা কাপড় ফেলে দিয়ে সুফিয়ানকে জড়িয়ে ধরে রোদেলা। সুফিয়ানও যোগ দেয় সেই আলিঙ্গনে।
বেশ কিছু সময় পর মাথাতে চুমু খায় সুফিয়ান। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে-
: আই লাভ ইউ,
রোদলা বন্ধনে আবদ্ধ থেকেই বলে
: আই লাভ ইউ টু……..
: এমনি করে সবসময় আমাকে শাসনে রাখবে, আমি আসলেই খুব খারাপ…
: আমাকেও এমনি করেই ভালোবাসবেন….

চলবে….
(বোনাস পর্ব দিলাম…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here