বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব 16

0
600

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৬
#লেখনীঃ Gazi pingke-All story
কান্নার আওয়াজ কানে আসলেও আদি ঘুরে তাকাল না হন হন করে এগিয়ে গেল কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরেই আদিবা দৌড়ে এসে আদিকে জড়িয়ে ধরল। আদিবা ভিষন রকমের ভয় পেয়েছে বুঝে মনে মনে আনন্দ পেল আদি।
কিন্তু পরক্ষনেই অবাক হল কারন আদিবা আদিকে আঁশটে পিশটে জড়িয়ে আছে ছাড়ার নামেই নিচ্ছে না। আদি যতটুকু জানে কোন ছেলেকে এতক্ষন জড়িয়ে রাখার মেয়ে আদিবা না তাই আদির কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লাগল।
-“কি হয়েছে এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি কী সত্যি সত্যি তোকে রেখে চলে যেতাম নাকি?
আদিবা জবাব দিল না বরং আদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আদিত্য ব্যাপারটা পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারল কেউ আদিবার পিছু নিয়েছে।
কয়েকটা লোক এগিয়ে আসছে। দেখার সাথে সাথে আদিবাকে আঁড়াল করে নিজে সামনে দাঁড়াল,
লোকগুলোর মধ্যে একজন এগিয়ে এসে বলল,
“”” ও তাহলে এই ব্যাপার,ফুলটুসি একা আসে নি?
লোকটার কথায় আদি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
-“কি সমস্যা..? কিসব বলছেন উল্টা পাল্টা..?
“”” উল্টাপাল্টা কি বললাম হ্যা..?? এই বিকালে জংগলের মাঝখানে মেয়ে নিয়ে কি করছিস?
“”” তার কইফত আপনাকে দিতে হবে?
“” আলবাত দিতে হবে চিনিস আমরা কে? মেয়ে নিয়ে ন*স্টা*মি করিস আবার গলা উঁচিয়ে কথা বলিস?
“” ওহ আমরা ন*ষ্টা*মি করছি আর আপনারা এখানে মহাভারত শুদ্ধ করতে এসেছিলেন তাই তো..?
-“তোর সাহস তো কম না বলেই ছেলেটি এগিয়ে আসল।
আদিত্য আদিবাকে ধ্বাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে লোকটাকে আটকানোর চেষ্টা করল। আদি লোকটাকে এত জোরে মে*রে*ছে যে ছেলেটার নাক মুখ থেকে র*ক্ত পড়ছে।
সাথে থাকা অন্য লোক গুলো তাতে ক্ষেপে গিয়েছে। তারা যেই এগিয়ে আসতে চাইল আদি বলে উঠল,
-“আমি জানি ভুল করে ফেলেছি। তোরা আমাকে ছাড়বি না সেটাও জানি কিন্তু আমাকে একটু সময় দে কথা দিচ্ছি আমি তোদের, আমাকে মারার সুযোগ দিব। বলেই আদি নিজের মানিব্যাগ থেকে মোটা অংকের টাকা বের করে আদিবাকে ইশারা করে বলল যদি ওকে যেতে দিস যত টাকা আছে সব দিয়ে দিব। বিনিময়ে শুধু ওকে যেতে দে।
সাথে সাথে পড়ে থাকা লোকটা চেঁচিয়ে উঠল
-“আজ তোর সামনেই তোর প্রেমিকাকে সবাই ছিঁ*ড়ে খাবে বুঝেছিস? তোর এত সাহস আমার গায়ে হাত দিস এই দাঁড়িয়ে কি দেখিছিস মার সা*লা*কে…
বলতে বলতেই ব্যাপারটা হাতাহাতি থেকে মা*রা*মা*রিতে রুপ নিল। লোকগুলো যেমন প্রাণপন চেষ্টা করছে আদিকে মা*রার আদিও তেমন নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছে। মা*রা*মা*রির এক পর্যায়ে লোকটার সাথে থাকা অন্য লোক গুলি পালিয়ে গেল। আদি যে ব্যাথা পায়নি ব্যাপারটা তা নয় সেও ব্যাথা পেয়েছে তবে তুলনামূক কম পেয়েছে। অন্যরা বেশি পেয়েছে তাই পালিয়েছে। সুযোগ থাকলে এই লোকটিও পালাত সন্দেহ নেই কিন্তু আদি সে সুযোগ দেয়নি। সে লোকটাকে সমানে মে*রে চলেছে। অবস্থা খারাপ দেখে আদিবা এগিয়ে গিয়ে আদিকে থামানোর চেষ্টা করল,
-“ভাইয়া কী করছেন ছেড়ে দিন ম*রে যাবে তো…
আদি অনেক আগেই নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে তাই আদিবা বাঁধা দিতে যাওয়ায় রাগে আদিবাকেও আঘাত করে বসল। সে আদিবাকে খেয়াল করেনি আদিবা ছিটকে পড়ে গেল বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে।আদিবা আহ বলে চিৎকার করতেই আদির হুঁশ ফিরল।
সে লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে আদিবাকে টেনে তুলল কিন্তু অনুশোচনা মূলক কিছু বলল না। নিজের মানিব্যাগ থেকে সব টাকা বের করে লোকটার উপড় ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
-“আমি ভাল করেই জানি যেখানে সেখানে মেয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমি আসতাম না বাধ্য হয়েই এসেছিলাম যাইহোক আমি সহজে কাউকে মা*রি না বাড়াবাড়ি না করলে মা*র*তাম না. চিকিৎসা করে নিস।
বলে আদিবার হাত শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটতে লাগল আদি।আদিবা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তারউপড় আদি বেশ শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে হাতেও ব্যাথা লাগছে তাই আদিবা আস্তে করে বলল,
-“ভাইয়া একটু আস্তে ধরুন আমার লাগছে।
বলতেই আদিত্য আদিবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল আদিবার গালে। আদিবা কারন টা বুঝতে পারল না। তবে প্রশ্ন করার আগেই আদি উত্তর দিল,
-“কোন সাহসে এত ভিতরে এসেছিলি..? আমি তোকে রাস্তার পাশে থাকতে বলেছিলাম তা না করে তুই কি করলি..? তোকে যেখানে নিয়ে এসেছিলাম তুই যদি সেখানে থাকতি তাহলে এত সমস্যা হত না।চাইলেই যেখানে সেখানে যাওয়া যায় না জানতি না? আচ্ছা তুই যে বনের ভিতরে চলে গেলি যদি আমি তোকে খুঁজে না পেতাম তোর কি অবস্থা হত?কিংবা ওরা যদি আমার চেয়ে বেশি মা রা মা রি পারত? চোখের সামনে তোকে ছি*ড়ে খেত আর আমার সেটা দেখতে হত এটাই চেয়েছিলি..?
আদিবা বুঝতে পারল ভুল করে ফেলেছে তাই কোন উত্তর দিল না। আদি আবার বলল,
-” আজ একবার বাসায় যাই তারপর তোর হবে..
বলে আবারো হাত ধরে হাঁটতে লাগল।
-“যা বলার বাসায় গিয়ে বলবেন এখন একটু আস্তে হাঁটুন প্লিজ আমি আপনার সাথে তাল মিলাতে পারছি না।
-“তোর জন্যে অপেক্ষা করতে থাকি সে ফাঁকে ছেলেগুলো এসে আবার ঝামেলা করুক তাই না?
আদিবা আর কিছু বলল না চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসল। আদি ড্রাইভ করছে আদিবা পাশে বসে আছে কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। আদি রাগ করেছে সন্দেহ নেই বাসায় গেলে আদিবাকে মার খেতে হবে সেটাও জানে তাই আদিবা মনে মনে সেটারেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম হটাৎ আদি ব্রেক চাপল।
“”” গাড়ি থেকে নাম।
“”” এখানে নামব…???
“”” অন্য কোথাও নামার হলে অন্য কোথাও এই বলতাম তাই না.?
আদি রেগে আছে তাই কথা বাড়াল না আদিবা নেমে দাঁড়াল। নামার সাথে সাথেই আদি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
আদির কান্ডে অবাক হল আদিবা। শাস্তি পাওয়ার কথা ছিল ঠিকি কিন্তু এভাবে..?? এখন সে কোথায় যাবে? এই রাস্তাটা তার চিনা নয়। তাছাড়া আসার সময় আদি তাকে জোর করে নিয়ে এসেছিল তার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। একে তো অচেনা জায়গা তার উপড় হাতে টাকাও নেই। টাকা থাকলে হয়ত রিক্সা নিয়ে বাসায় যেতে পারত কিন্তু এখন কি করে যাবে? কিছু ভাবতে পাচ্ছি না শুধু কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাতে কার কি যায় আসে আদি যে পরিমান রেগে আছে আদিবার দিকে একবার ঘুরেও তাকায় নি চলে গিয়েছে।



আদিবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল হটাৎ পরিচিত মুখের দেখা মিলল,
-“আদিবা তুমি এই রাস্তায়..? কোথায় গিয়েছিলে..?
আদিবা তাকিয়ে অবাক হল,
-“নীলয় ভাইয়া আপনি..?
-“একটা কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম সেখান থেকেই ফিরছি কিন্তু তুমি এই রাস্তায় কি করছো..?
-“না মানে আমি..?
-“যাই হোক বাসায় যাবে তো নাকি? এসো আমি ছেড়ে দিচ্ছি।
-“না ভাইয়া লাগবে না আমি একাই যেতে পারব।
-“এখানে কোন যানবাহন পাবে না সন্ধ্যা হয়ে আসছে জায়গাটা ভাল না তাছাড়া তোমার বাসা এখান থেকে অনেক দূরে যেতে সময় লাগবে চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
আদিবা উপায় না পেয়ে গাড়িতে উঠল। তবে তার বুক ধুঁকপুক করছে এই মানুষটার জন্য তাকে ছয় বছর ধরে শাস্তি পেতে হচ্ছে। আজ এতদিন পর কাকতালীয় ভাবে দেখা হবে কে জানত কিন্তু আদি যদি কোনভাবে এই ব্যাপারটা জানতে পারে আদিবাকে জ্যান্ত ক ব র দিবে এতে কোনরকম সন্দেহ নেই। আদিবা যখন নিজের ভাবনায় ব্যাস্ত তখন নীলয়ের প্রশ্নে ভাবনায় ছেদ পড়ল,
-“তারপর বলো কেমন আছো…?
-“ভালই আছি ভাইয়া আপনি.?
-“যেমন দেখতে পাচ্ছো শুনলাম অরিনের এনগেইজমেন্ট হয়েছে?
-“ভাইয়া আসলে..
-“আরে তুমি বিব্রত হচ্ছো কেন? আসলে অরিন কোনদিনি আমায় ভালবাসে নি.অনেক তো বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ও বুঝে নি তাই আর বিরক্ত করিনি। ওকে পাওয়ার আশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।
-“তারপরেও খোঁজ তো রেখেছেন এতবছর পরেও..
-“কি করব বলো আমার ভালবাসা তো মিথ্যা ছিল না। অরিনকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালবাসি।
-“ভাইয়া আপনি যদি আপুর সাথে একবার কথা বলতেন?
-“এখন আর কথা বলে কী হবে যা হওয়ার তাত হয়ে গেছে। বিয়ে করছে সুখী হোক সেটাই চাই। যাইহক ছাড়ো এসব তোমার কথা বলো..?কী করছো এখন? অনার্স কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে তাইনা?
-“ভাইয়া আমি মানে..আমি মাধ্যমিকের পরে আর পড়াশোনা করিনি.
-“মানে কী? কি বলছো এসব?(খুব অবাক হয়ে)
প্রশ্নটায় আদিবা বিব্রত হচ্ছে বুঝতে পেরে নীলয় প্রসঙ্গ বদলে বলল,
-“তা বিয়ে কবে করছো..? অরিনের পর এবার তো তোমার পালা.. দিন কিভাবে চলে যায় তাই না? দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলে।
নীলয়ের কথায় আদিবা হাসল।গাড়ি এসে থামল রাস্তার মোড়ে..
নীলয় রিক্সা ডেকে দিয়ে বলল,
-“বাসা পর্যন্ত গেলে সবাই হয়ত মাইন্ড করবে তোমার সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া আমি আর অরিনের সামনে যেতে চাই না।
-“আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাব ভাইয়া? আপনি না থাকলে আজ বিপদে পড়ে যেতাম।
-“আরে এটা কোন ব্যাপার হল নাকি বোকা মেয়ে.. আচ্ছা যাও এখন,সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।
-“ভাইয়া, আসি তাহলে..?
আদিবা ফিরে আসবে তখন নীলয় এগিয়ে এসে বেশ ইতস্ততা নিয়ে বলল,
-“আদিবা যদি কিছু মনে না করো তোমার ফোন নাম্বার টা পেতে পারি? আসলে…থাক সমস্যা হলে দিতে হবেনা।
নীলয় নিজেই বিব্রত হচ্ছে দেখে আদিবা মানা করতে পারল না দ্বিধাবোধ হলেও শেষ পর্যন্ত নাম্বারটা দিল তারপর বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা হল।



চলবে..!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here