তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 21+22

0
217

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২১+২২
সিয়াকে এভাবে হুড়মুড় করে নিচে নেমে আসতে দেখে দোলা আর শিউলিও বেশ অবাক হয়। তবে সিয়া সারা হলরুমে পাগলের মতো করে টিভির রিমোট খুঁজে যাচ্ছে৷ প্রথমে টেবিলের ওপরে তারপর সোফার ওপরে খুঁজছে কিন্তু নেই৷ সিয়াকে এভাবে হন্নে হয়ে কিছু একটা খুঁজতে দেখে শিউলি বলে ওঠে……
শিউলি;; কিরে কি খুঁজছিস এভাবে?
সিয়া;; আরে টিভির রিমোট টা কোথায় গেলো?
দোলা;; ওখানেই তো আছে। তবে তুই এতো হন্নে হয়ে খুঁজছিস কেনো?
সিয়া কিছু না বলেই কাপাকাপা হাতে রিমোট টা নিয়ে টিভি অন করে দেয়৷ আর অন করার সাথে সাথেই চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে যে “সিনিয়র রাজনীতিবিদ সাগর চৌধুরীর আচমকা মৃত্যু”। এটা দেখে সিয়া যেনো একদম সিওর হয়ে গেলো তেমনই দোলার হাত থেকে একটা কাচের গ্লাস পরে ভেঙে যায়। শিউলি অবাক হয়ে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে। আর আদিবাও বেশ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া সোফাতে গিয়ে বসে পরে৷ আসলে সকাল বেলা ফোন করেছিলো সিয়ার বন্ধু সোয়াদ। নিউজ টা একেবারে পাবলিক হয়ে গেছে। কীভাবে কি হলো? কখন মারা গেলেন উনি আর কি করে মারা গেলেন? আরো না জানি কতো শত প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দোলা সিয়ার দিকে তাকায়। সিয়া দ্রুত নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই ফোন টা হাতে নিয়ে সোজা অর্নীল কে ফোন দেয়। কিন্তু ধরছে না। বারবার লাগাতার একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ফোন শুধু বেজেই যাচ্ছে পিক করার কোন নাম-গন্ধ নেই। সিয়া ফোন টা বিছানার ওপর ছুড়ে মারে। জানে যে তার বাবার সাথে অর্নীলের তেমন কোন ভালো একটা সম্পর্ক নেই তবুও না জানি অর্নীল এখন কি করছে! সিয়া ওয়াসরুমে রুমে গিয়ে মুখে চোখে পানি দিয়ে আসে। সিয়া আবার নিচে চলে যায়। নিউজে শুধু সাগর চৌধুরীর লাশ দেখাচ্ছে আর হাবিজাবি কত্তো কথা। সিয়া ভাবে যদি নিউজে অর্নীল কে দেখায়! তবে না সেখানে সাগর চৌধুরী আর তার কিছু গার্ড কে বাদ দিয়ে আর কাউকেই দেখাচ্ছে না। দোলা ব্যাপার টা বুঝে। আসলে সেও বেশ অবাক।
হাহ্, যে কিনা অন্যকে মারার হুমকি দেয় আজ কিনা তারই হায়াত শেষ হয়ে গেলো। দোলা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মিনিট পর সেই নিউজ পাল্টে অন্য নিউজ দেখায়। দোলা টিভি বন্ধ করে দেয়। সিয়ার দিকে বার কয়েক তাকায়। সিয়ার মুখ টা মলিন। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। যেনো ওর মন টা কেমন আকুপাকু করছে। দোলা তা টের পেয়ে বলে….
দোলা;; সিয়া!
সিয়া;; _____________________
দোলা;; সিয়া
সিয়া;; হ হ্য হ্যাঁ
দোলা;; অর্নীলের কাছে যাবি?
সিয়া তার মায়ের কথায় ফট করে মাথা তুলে তাকায়। সে ভাবে নি দোলা তাকে এমন কথা বলবে।
দোলা;; যাবি?
সিয়া ভরকে গিয়ে দুই পাশে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ না। তারপরেই আবার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে।
দোলা;; সিয়া!!
সিয়া তার মায়ের দিকে তাকায়।
দোলা;; যাবি??
এবার আর সিয়া থাকতে না পেরে ফটাফট মাথা ওপর-নিচ করে যার অর্থ হ্যাঁ।
দোলা;; যা।
সিয়া অবাক হয়, কেননা দোলা অর্নীলের কাছে যেতে বলেছে তাকে। যাই হোক সিয়া বাসা থেকে বের হয়ে পরে৷ রিকশা দিয়ে গিয়েছে। রিকশা বাসার সামনে নামতেই সিয়া দ্রুত নেমে অর্নীলের বাসার ভেতরে চলে যায়। যেতেই দেখে বাড়ির কিছু স্টাফ আর বেশ কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া আস্তে আস্তে ভেতরে যায়। আরো একটু ভেতরে গিয়ে দেখে ফ্লোরে সাগর চৌধুরীর লাশ কে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার পাশেও প্রায় অনেকগুলো মানুষ। সিয়া সবদিকে তাকিয়ে অর্নীল কেই খুঁজে যাচ্ছে। কিন্তু অর্নীল সেখানে হলরুমে নেই। সিয়ার কেমন যেনো একটু ভয়-ভয়ই লাগলো সাগর চৌধুরীর লাশ টাকে দেখে। খানিক বাদে রামু সিয়াকে দেখে। উনি সিয়া কে চিনতেন।
রামু;; সিয়া মা
সিয়া;; আরে কাকা, অর্নীল কোথায়? ওকে খুঁজছি। কোথায় ও?
রামু;; অর্নীল বাবা ওর রুমে। দরজা খুলে না। সব লাগিয়ে রেখে দিছে। আমি অনেক ডাকছি তবুও খুলে না। ডাকলে সাড়াও দেয় না। মা তুমি গিয়ে একটু দেখো না যদি তোমার কথায় সাড়া দেয়।
সিয়া ওপরে অর্নীলের রুমের দিকে তাকায়। তারপর ওপরে এসে পরে। তবে আশ্চর্য ভাবেই দরজা তে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। সিয়া আলতো পায়ে রুমের ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে অর্নীল বিছানার ওপর বসে আছে। করিডরের দরজা টা খোলা। সেদিকেই এক মনে তাকিয়ে বসে আছে। সিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অর্নীলের কাধে হাত রাখে। স্পর্শ পেতেই অর্নীল বুঝে যায় যে এ সিয়া৷ তবুও সে কিছুই বলে না। সিয়া গিয়ে অর্নীলের পাশে বসে পরে। তার হাত টা ধরে বলে….
সিয়া;; অর্নীল, কি করে হলো এইসব? মানে কীভাবে? আর কখন মারা গিয়েছেন আংকেল?
অর্নীল;; কাল রাতেই।
সিয়া;; কাল রাতেই মানে, কীভাবে?
অর্নীল;; বাবার প্রচুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে বহু বছর যাবত। বাবা ইনহেলার ব্যাবহার করতো। কিন্তু কাল রাতে আমি বাড়ি ফিরি প্রায় রাত তিন টার দিকে। বাসায় বেশি একটা স্টাফ ছিলো না। রামু কাকা উনার বাসায় চলে যান আর বাবা সবসময় নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে থাকেন। আমি এইসবের কিছুই বলতে পারবো না। বাসায় আসি আমি। তবে বাবা কে আর ডাক দেই নি। ভেবেছি এতো রাত হয়েছে হয়তো ঘুমোচ্ছে। আর দরজাও ভেতর থেকে লক করা থাকে। আজ সকালে মর্নিং ওয়ার্কে গিয়েছিলাম আমি। তারপর ওয়ার্ক শেষে বাসায় আসি। এসে দেখি এখনো বাবা তার রুমের দরজা খুলে নি। আমি অবাকই হই কেননা প্রতিদিন ওয়ার্ক শেষে আমি এসে দেখি বাবা উঠে পরেছে। কিন্তু আজ তার ব্যাতিক্রম ছিলো। আমি তখনও ভেবেছি যে বাবা ঘুম। তারও ঘন্টা খানিক পার হয়ে যায় তবুও যখন বাবা দরজা খুলছিলো না তখন আমার কাছে ব্যাপার টা সুবিধের মনে হয় না। আমি ডাক দেই, তবে কথা নেই কোন। একটা সময় বাধ্য হয়েই দরজা ভেঙে ফেলি আর দেখি সারা ঘরের জিনিসপত্র বেশ এলোমেলো হয়ে আছে। কতো গুলো কাচ ভেঙে পরে ছিলো আশে পাশে। আর বাবা, বাবা নিচে পরে ছিলেন। আমি দ্রুত বাবার কাছে যাই। কিন্তু পার্লস চেক করে দেখি কোন রেসপন্স নেই। শ্বাসও চলছিলো না। বুক টা কেমন যেনো ছাত করে উঠে। স্টাফ দের ডাক দেই, সবাই ছুটে আসে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব ডক্টর কে কল করি। বাট ডক্টর বলেন বাবা গতকাল রাতেই মারা গিয়েছেন। ইনহেলার খুঁজে পাচ্ছিলেন না, বুকে চাপ দিয়ে ধরেছিলো, শ্বাস প্রায় ফুরিয়েই গিয়েছিলো। এক সময় শরীরের জোরও শেষ হয়ে আসে। নিচে পরে গিয়ে মাথার পেছনেও বেশ আঘাত পান। চিৎকার করার বা কাউকে ডাক দেওয়ার সুযোগ টাও পান নি। মারা গেলেন।
সিয়ার কিছুটা খারাপই লাগে সব শুনে। বেশ কষ্ট পেয়ে তিলে তিলে মরেছেন সাগর চৌধুরী। আর অর্নীল এইসব কিছু এক মনে নিজের সামনে তাকিয়ে তাকিয়েই বলছিলো। সিয়া একটা টুলের মতো কিছু টেনে এনে অর্নীলের সামনে বসে পরে। অর্নীলের দুই গালে হাত রেখে তাকে নিজের দিকে করে। অর্নীল সিয়ার দিকে তাকায়৷
সিয়া;; মৃত্যু অবধারিত। আজ হোক কাল হোক সবাই কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। প্লিজ মন খারাপ করবেন না। এখন আপনার বাবা নেই এভাবে সবকিছুর ওপর থেকে হাল ছেড়ে দিলে হবে না। সবকিছু আপনাকে সামলাতে হবে। মন খারাপ করবেন না, জানি আমি ব্যাপার টাই এমন। কিন্তু তবুও….
অর্নীল;; তুমি এখানে!?
সিয়া;; আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে ফোন করে এই কথা বলেছে তারপর নিউজে দেখি আর এসে পরি৷
রামু;; অর্নীল বাবা!
অর্নীল ঘাড় টা একটু বাকিয়ে দেখে রামু দাঁড়িয়ে আছে।
রামু;; অনেক মানুষ জন আসছে নিচে। সবাই তোমার সাথে দেখা করতে চায়। আর কিছুক্ষন পর বড়োসাব রে মাটি দিতে হইবো।
অর্নীল সিয়ার দিকে তাকায়। সিয়া চোখের ইশারাতে অর্নীল কে নিচে গিয়ে সবার সাথে কথা বলতে বলে৷ অর্নীলও উঠে চলে যায় সোজা নিচে।
অর্নীলের নিচে যেতেই সবাই এক এক করে তার কাছে আসে। নানা ধরনের কথা বলতে থাকে৷ অর্নীল কে অনেকেই শান্তনা বাণী শোনাচ্ছে। যা নিতান্তই তার কাছে বেশ বিরক্তিকর ঠেকছে। তবুও যেহেতু একজনের মৃত্যু হয়েছে তো এই কথা গুলো বলাই স্বাভাবিক, তাই সব মুখ বুজে সহ্য করছে। সবাই যখন কান্নাকাটি তে ব্যাস্ত তখন অর্নীল আরেক বার নিজের রুমে যায়। গিয়ে দেখে দিয়া দুই পা গুটিয়ে বসে আছে
অর্নীল;; সিয়াজান!
সিয়া;; হুমম
অর্নীল;; তুমি বাসায় যাও৷
সিয়া;; কিন্তু আপ……
অর্নীল;; কিছু হবে না এখন যাও তুমি বাসায়৷
সিয়া;; জানাজা কখন?
অর্নীল;; মাগরিবের আজানের পর।
সিয়া;; ওহ
অর্নীল;; সিয়া যাও।
সিয়া অর্নীলের কাছ থেকে এসে পরে। বাড়ির বাইরে বের হয় তখন দেখে রামু কাকা বাগানের সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া তার দিকে এগিয়ে যায়।
সিয়া;; কাকা!
রামু;; হ্যাঁ মা কও।
সিয়া;; আমি এখন চলে যাচ্ছি। আপনি প্লিজ অর্নীল কে দেখে রাখবেন। যতোই হোক অর্নীলের বাবা। ওকে দেখবেন, দরকার পরলে বুঝাবেন।
রামু;; ও তো বুঝে না। কথাই শুনে না।
সিয়া;; কাকা তবুও আপনি একটু দেখবেন। আমি যাই। আর আমি পারলে এখানে আরো একবার আসবো।
রামু;; আইচ্ছা।
এই বলেই সিয়া চলে যায়। অর্নীল একা একা বসে আছে। তার কাছে একটা ছবি আছে৷ অবশ্য অনেক পুরনো। সেখানে অর্নীল ছোট, সে সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর তার পেছনেই অর্নীলের বাবা-মা। সবার হাসিমুখ। অর্নীল ছবি টা বের করে দেখতে লাগে। আগে শুধু মা ছিলো না আর এখন বাবাও নেই। হোক না শুধু মুখে ডাকা বাবা। তাও তো আর রইলো না। অর্নীল ছবি টা রেখে দেয়। ওয়াসরুমে গিয়ে আয়নাতে কতোক্ষন নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর একসাথে অনেক গুলো পানির ছিটা মুখে দিতে লাগে। এভাবেই দেখতে দেখতে বেশ সময় চলে যায়। তবে অর্নীল এক মিনিটের জন্যও তার বাবার লাশের পাশে গিয়ে বসে নি। দূর থেকেই দেখে গেছে। সবাই নিচে থাকলেও অর্নীল নিজের রুমেই ছিলো। তখন রামু আসে….
রামু;; অর্নীল বাবা৷
অর্নীল;; হ্যাঁ
রামু;; আর কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান দিবো তার পরেই বড়োসাবের জানাজা। তুমি…….
অর্নীল;; হুমম বুঝে গেছি।
রামু;; হুমমম।
রামু চলে আসে। বেশ কিছু মৌলভি ব্যাক্তি এসেছেন। সাগর চৌধুরী লাশ কে তারাই দেখেছেন অর্থাৎ পাক-পবিত্র করে দিয়েছেন। অর্নীল একেবারে সাদা পাঞ্জাবি পরে। নিচে নেমে আসলে সবাই কেনো জানি অর্নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাগর চৌধুরীর লাশ কে তাদের পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করা হবে৷ তাকে খাটিয়া তে শুইয়ে দেওয়া হয়। অর্নীলের কেনো যেনো খুব বেশিই অদ্ভুত লাগছে। হাত কাপছে তার এক অজানা ভয়ে। সে এর আগে কখনো কোন লাশ তার নিজের কাধে নেয় নি। অর্নীলকে এক মনে তাকিয়ে থাকতে দেখে একজন মৌলভি তার দিকে এগিয়ে যান, বেশ কিছু বলেন। অনেক বুঝান। অতঃপর অর্নীল গিয়ে কাধে তার বাবার লাশের খাটিয়া টা তুলে নেয়। যেতে যেতে কবরস্থানে চলে যায়। সাড়ে তিন হাত কবর খোড়া হয়। সেখানে সাগর চৌধুরী কে শুইয়ে দিয়ে মাটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরিশেষে জানাজা শেষে সবাই এসে পরে। তবে অর্নীল সেখানে থেকে যায়। মাথায় টুপি পরে ছিলো তা খুলে ফেলে। তার বাবার কবরের দিকে তাকিয়ে আছে অপলকহীন ভাবে। কয়েক মূহুর্ত পর হঠাৎ টুপ করে অর্নীলের চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরে৷ অর্নীল এসে পরে। শুনেছে কবর থেকে চল্লিশ কদম এগিয়ে এসে পরলে ভেতরে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। অর্নীল হাটছে আর গুনছে। চল্লিশ কদমে অর্নীল একদম কবরস্থানের বাইরে এসে পরে। চল্লিশ কদম শেষ হতেই অর্নীল তার পেছন ঘুড়ে আরেক দফা কবরের দিকে তাকায়৷ তারপর এসে পরে। তবে অর্নীল বাসায় যেতেই দেখে সিয়া হলরুমে বসে আছে৷ সিয়া অর্নীল কে দেখে দাঁড়িয়ে পরে। অর্নীল এসে সোজা সিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
সিয়া;; অর…….
অর্নীল;; খারাপ লাগছে।
সিয়া;; সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
অর্নীল;; তুমি কখন এলে?
সিয়া;; বেশি না একটু আগেই।
অর্নীল;; এখন আবার আসতে গিয়েছো কেনো? কাল আসলেই হতো।
সিয়া;; না মানে আপনি এখানে একা তো তাই ভাবলাম…..
অর্নীল;; কাল থেকে অফিসে যেতে হবে, আবার সবকিছু সামলাতে হবে৷
সিয়া;; হুমমম।
অর্নীল;; চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
সিয়া;; আরে ম……..
অর্নীল;; চলো।
অর্নীল সিয়াকে নিয়ে চলে যায়। অর্নীলই ড্রাইভ করছে। অর্নীল এক মনে সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আর সিয়া মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছে। যে কিনা সারা রাস্তা বকবক করতো সে এখন চুপ। করার কিছুই নেই, নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হবে তবে ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। সিয়ার বাসার সামনে চলে আসলে সে গাড়ি থেকে নেমে পরে। সিয়া অর্নীল কে অনেক কিছু বলে। এভাবে একা একা বসে থাকতে মানা করে। মন খারাপ থাকলে যেনো তাকে ফোন দেয় আরো না জানি কত শত কথা। অর্নীল চলে যায়৷ সিয়া বাসায় এসে পরে৷ বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ওহ হ্যাঁ, অর্নীলের বাবার জানাজা তে আদিবার হাসবেন্ড জাবেদও ছিলো। আদিবা চলে গিয়েছে। আর জাবেদ কে বাসায় বলে দেয়। তবে আদিবার বাবা অর্থাৎ বিল্লাল তার যেনো নিজের ভাইয়ের খুন কে নিয়ে ক্ষোভ রয়েই গিয়েছে তাই সে জানাজা তে যান নি। দোলা দেখে সিয়া আসছে….
দোলা;; এসেছিস?
সিয়া;; হুমম।
দোলা;; অর্নীল কেমন আছে এখন?
সিয়া;; কোন রকম।
দোলা;; এভাবে একজনের হুট করেই মৃত্যু হলে যে কেউই শকড হয়ে যাবে৷ সেখানে হাজার হলেও অর্নীলের বাবা। যাই হোক দোয়া করি উনার কবরের আজাব মাফ হোক। পরপারে শান্তিতে থাকুক।
সিয়া;; হুমমমম।




চলবে~~
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২২
এভাবেই দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে যায় আরো এক মাস। সবকিছু ভালোই চলছে। সিয়ার বাড়িতে সিয়া তার মা তার নানু সবাই ভালোই আছে। সিয়া রোজ কলেজ যায়। আবার অর্নীলের সাথে দেখা করে। অর্নীল আসলে নিজেই আসে। অর্থাৎ তাদের লাভ লাইফ ভালোই চলছে। তবে দিন শেষে যখন অর্নীল বাসায় যায় তখন কেমন যেনো নিজের মাঝে একটা শূন্যতা কাজ করে। কেমন একটা একাকীত্ব কাজ করে। এমন ফিল হবার মানে খুঁজে পায় না অর্নীল। কেননা যখন তার বাবা বেঁচে ছিলো তখনও অর্নীল এভাবেই চলাফেরা করতো। প্রয়োজন ছাড়া তার বাবার সাথেও কথা বলতো না সে। আগেও সে একাই ছিলো আর এখন একাই। তবে পার্থক্য শুধু এটাই যে আগে এই একাকিত্ব ফিলিং টা আসতো না কিন্তু এখন আসে। তবে সিয়া আছে না! সিয়ার ফলেই অর্নীল যেনো এখন ভালো আছে। এখন ঠিক আছে। সিয়ার মা দোলা সায়নের সাথে সিয়ার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আরো এক জায়গায় সিয়ার বিয়ের আলোচনা করেছিলো কিন্তু ওই আলোচনা করা অব্দিই শেষ। দোলা বুঝে যে সিয়া এখন আবার অর্নীলের সাথেই রয়েছে তাই দোলা ইচ্ছে করেই সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে।


এখন রাত। সিয়ার আজ একটু বেশিই মাথা ব্যাথা ছিলো তাই সে ঘুমিয়ে পরেছে। আর অর্নীল নিজের রুমে বসে আছে তার হাতে একটা স্ট্রেচ বল নিয়ে আছে। হঠাৎ অর্নীল উঠে পরে হাটতে হাটতে গিয়ে তার বাবার রুমে চলে যায়। সাগর চৌধুরী যবে থেকে মারা গিয়েছে তখন থেকে শুরু করে অর্নীল এই রুমে আসে নি। উনার মারা যাওয়ার পর আজই প্রথম আসলো। অর্নীল তার চোখ ঘুড়িয়ে রুম টা দেখতে লাগে৷ মারা যাওয়ার দিন স্টাফ দের বলে রুম টা এত্তো সুন্দর করে ক্লিন করেছে যে তারপর আর একোমেলোই হয় নি। অর্নীল লক্ষ্য করে দেখে রুমের এক পাশে একটা বুক সেল্ফ রয়েছে, তার পাশেই কাবার্ড। সারা ঘর জুড়ে তার বাবার জিনিস৷ আসলে সত্যি বলতে অর্নীল চায় নি এগুলো এমন করে রাখতে,, সে চেয়েছিলো রুম টা একেবারে তালা মেরে দিবে বা তার বাবার সব জিনিসপত্র অন্য জায়গায় সেট করে দিবে। কিন্তু অর্নীলের মন চায় না যে তার বাবার একটা জিনিসও সে ধরুক। কিছুক্ষণ পর সেই রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ফোন টা হাতে নিয়ে এক এক করে সিয়ার ছবি গুলো দেখছে। সিয়ার হাজারো ছবি রয়েছে তার কাছে। এক একটা এক এক রকম ভঙিতে তোলা। অর্নীল সেগুল দেখতে দেখতেই ফিক করে হেসে দেয়। রাত টা এভাবে যায়।


সিয়া;; মা আমি কলেজে যাচ্ছি।
দোলা;; কিছু তো খেয়ে যা।
সিয়া ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল হাতে নিয়ে নিলো। আর তা খেতে খেতে বের হয়ে পরলো। কলেজে গিয়েই দেখে বেশ কিছু স্টুডেন্ট একজোট হয়ে বসে আছে। সিয়া এগিয়ে গিয়ে দেখে সবগুলা গোল হয়ে বসে আছে আর এক একটার মুখে খালি চিন্তার ছাপ।
সিয়া;; কিরে কি হইছে, সবগুলার মুখ এমন কালো কেনো?
অনু;; আজকে নাকি টেস্ট আছে।
সিয়া;; কিসের টেস্ট?
শান্তি;; আরে টেস্ট পরিক্ষা।
সিয়া;; ওহ আচ্ছা তাহলে আমার আর কাজ কি। আমি যাইগা।
সোয়াদ;; এই খাড়া কই যাস?
সিয়া;; টেস্ট আছে আগে বলবি না। আমি কলেজেই আসতাম না।
শান্তি;; আরে আমরা কেউই জানি না। এতোক্ষন ক্লাস রুমে ছিলাম হঠাৎ স্যার আইসা বলে যে আজকে নাকি আমাদের সারপ্রাইজ টেস্ট আছে।
সিয়া;; হ, বাঁশ টাই সারপ্রাইজ।
অনু;; আমি কিছুই পাই না, কেউ দেহা আমারে।
সিয়া;; এহহহহহহহহহহ, মরন আমার। নিজেই পাই না। ভাই আমি ডাহা ফেইল করমু। এফ পামু।
সোয়াদ;; আর আমি তো যেমন হাইস্ট পামু।
সিয়া;; আমি সত্যি ই থাকবো না। আমি চলে যাবো। আমি কিছুই পারি না। সারপ্রাইজ এর খেতা পুড়ি। আগে যদি বলতো তাহলে একটু পড়ে আসতাম। কিছুই পড়ি নাই, পারি না।
শান্তি;; এখন তাহলে কি করমু?
সোয়াদ;; মুড়ি ভাইজ্জা বালু খা।
সিয়া;; এই শোন একটা বুদ্ধি আছে!
অনু;; যাক তোর কুবুদ্ধি মানে সুবুদ্ধি উদয় হইলো এতোক্ষণে।
সিয়া ঠাস করে একটা বসিয়ে দেয় অনুর পিঠে।
সিয়া;; এহহ, তুমার তো তাও নাই আবার চাপা মারাও। এখন শুন আমরা এখানে মানে আমাদের গ্রুপের মোট চারজন আছি তাই না।
সোয়াদ-শান্তি-অনু;; হুমমমম।
সিয়া;; আল্লাহ”র ওয়াস্তে চোখ দুইখানা বন্ধ কইরা চারজন চারদিক দিয়া ভো দৌড় লাগাবি বুঝছোস। কেউ থামবি না কোন দিক তাকাবি না। সবাই তাকায় থাকলে থাকুক। তাও দৌড়ে পালাবি। আর শোন কেউ যদি থামছোস তাহলে মনে রাখিস আইজকাই কিন্তু কলেজের শেষ দিন না আরো দিন আছে। আগামীকাল আইসা পেদানি খাবি। এখন যা ভাগ।
সবগুলা মাঠে বসে ছিলো, এক এক করে যার যার ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে পরে।
সিয়া;; গুণার সাথে সাথে দৌড় দিবি। তারপর কলেজের বাইরে আয় দেখা করি।
শান্তি;; আইচ্ছা।
সিয়া;; ১ ২ ৩…………..
ষাড় গরু গুলারেও বহুদিন বাইন্ধা রাইখা পরে হুট করে ছাইড়া দিলে এভাবে দৌড়ায় না যা আজ এই চার গরু মানে চারজন মিলে দৌড় দিছে। মানে সব ভাইংা চুইড়া দৌড়। সোয়াদের আর কোন হদিস নেই সে এই যে দৌড় দিয়েছে তো দিয়েছেই। শান্তি আর অনু কলেজের পেছনের দিক দৌড় আর সিয়া যেইদিক দিয়ে এসেছে সেইদিক দিয়েই দৌড়। অর্থাৎ চারজন চারদিক। সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে৷ কিন্তু কি আর করার। সবাই বাইরে বের হয়ে পরে। সিয়া যেভাবে দৌড়ে বাইরে গিয়েছে এতে অলিম্পিক জেতার চান্স ছিলো। শান্তি আর অনু এসে হাপাচ্ছিলো তখন সিয়া আসে। সবাই হাপাচ্ছে। সিয়ার ব্যাগে পানির বোতল ছিলো তা থেকে তিনজনেই পানি খাচ্ছে। সিয়া পানি খাচ্ছিলো আর এদিকে শান্তি আর অনু সোয়াদ কে আশে পাশে খুঁজছে। কেননা সবাই এখানে কিন্তু সে নেই। ও আরো ছেলে মানুষ। দৌড়ের গতি বেশি। ওর এখানে আগে থাকার কথা। সবাই তাকে সামনে খুঁজছে আর এদিকে সোয়াদ এসে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে কপাল মুছছে।
অনু;; এই সোয়াদের বাচ্চা কই গেলো রে?
সোয়াদ;; তোর বড়ো বোন রে নিয়া ভাইগা গেছি।
দোয়াদের এমন কথায় সিয়ার পানি একেবারে নাকে মুখে উঠে যায়। আসলে হুট করেই পেছন থেকে এমন ভাবে বলেছে যে চমকে গিয়েছে। অনু পেছন ঘুড়েই হাতে যতো কোলায় আচ্ছা মতো মেরে দেয়। অনুর মারা শেষ হলে সিয়ার হাতে যে ওয়াটার পট ছিলো তা দিয়ে মাথায় একটা ঠাস করে মেরে দেয়।
সোয়াদ;; এত্তো মারোস কেন তোরা আমারে? আমি কি গাঙের জলে ভাইসা আসছি। মাওরা পাইছোস আমারে। বউ এর হাতে মাইর খাওয়ার আগে তোরাই আমারে আধা মরা কইরা দিবি।
অনু;; আমার বোনের দিকে নজর দিবি না বেশরইম্মা। বড়ো বোন লাগে তোরও।
সোয়াদ;; উনি আমার সিনিয়র কেরাশ (ক্রাশ)
অনু;; চুপ কর হারামি।
আসলে অনুর একটা বড়ো বোন আছে। দেখতে বেশ ভালো। আর সোয়াদ নাকি খালি সিনিয়র আপু দের ওপর ক্রাশ খায়। বাদ যায় নি তা থেকে অনুর বোনও। এখন শুধু সোয়াদ অনু কে চেতায়। মাঝে মাঝে শালিকা বলেও।
সিয়া;; এই চল ঝালমুড়ি খাই। আজকে ফুসকা ওয়ালা মামা আসে নাই।
শান্তি;;; এএএএএএএএ, আসলে আমার কাছে টিহা (টাকা) নাই।
সিয়া;; ফকিন্নি 🙂
অনু;; দুলাভাই!
সোয়াদ;; খাইছে রে 🌚
অনু;; ওওওও দুলাগাই মানে ভাই। ভাই ভাই ভাই দুলাভাই।
সোয়াদ;; কিতা?
অনু;; আপনি না আমার দুলাভাই লাগেন। আমার বোন রে পছন্দ করেন। এখন তাহলে মুড়ি খাওয়ান। দুলাভাই রা শালি দের কতো কিছু না কিনে দেয়, খাওয়ায়। আপনিও কিনে দেন। ওওও দুলাভাই।
সোয়াদ;; ভালোই প্যাচ মারতে পারো, জীবনে কইরা খাইতে পারবা।
সিয়া;; এহন কি তুই ঝালমুড়ি খাওয়াবি?
সোয়াদ;; আরে বাবা আনতাছি তো।
সোয়াদ গিয়ে ঝালমুড়ি আনতে যায়। আর এদিকে তিনজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কিছু সময় এভাবে থাকার পর হুট করেই একটা বাইক এসে সিয়ার সামনে দাঁড়ায়। কিছুটা চমকে গিয়ে সবাই কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। অর্নীল সে।
অনু;; ল্যালা কি মাজনু আইসা গেছে।
শান্তি;; আফা, এখন কি আপনি চলিয়া যাইবেন?
সিয়া;; জানি না দেখি কি বলে।
অনু;; আরে নিয়ে যেতেই তো এসেছে তোকে।
শান্তি;; এই শোন না আমাদেরও নিয়ে যা তোদের সাথে।
সিয়া;; হ্যাঁ আয়, না করছে কে। তোদের বাইকের পেছনে দড়ি দিয়া বাইন্ধা নিয়া যাই, আয় আয়।
অনু;; হ হ যাও তুমি।
সিয়া অর্নীলের দিকে এগিয়ে যায়। অর্নীল জেকেটের হাতা গুলো গুটিয়ে নিতে নিতে বলে ওঠে…
অর্নীল;; এই মেয়ে কলেজ টাইমে বাইরে কি?
সিয়া;; আরে ধুরু এতো পড়াশোনা কইরা কেডা এতো বড়োলোক হইছে।
অর্নীল;; ফাজলামি কম করো। আমি কি বলি! বাইরে কি এই সময়ে?
সিয়া;; সারপ্রাইজ টেস্ট ছিলো পারি না কিছুই এর জন্য পালিয়ে এসে পরেছি।
অর্নীল;; বাহহহ চমৎকার।
সিয়া;; তাই না! হিহিহিহিহি আমি জানি তো।
অর্নীল;; চুপ বাদর মেয়ে।
অর্নীলের ধমকে সিয়া চমকে যায়।
অর্নীল;; উঠো।
সিয়া;; না
অর্নীল;; কি?
সিয়া;; উঠছি।
সিয়া বাইকে ওঠে পরে তখনই সোয়াদ হাতে চারটা ঝালমুড়ি নিয়ে আসে। এসে দেখে সিয়া বাইকে উঠছে। সিয়া সোয়াদ কে বলে….
সিয়া;; আমি যাই, আমার ভাগের টাও তোরা খেয়ে নিস।
সিয়ার এটা বলার সাথে সাথেই সোয়াদ, অনু আর শান্তির মাঝে ঝালমুড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি বেধে যায়। এটা দেখে অর্নীল নিজেও মুচকি হেসে দেয়। তারপর সাই করে চলে যায়। সিয়া অর্নীলের পেছনে বসে তার কাধে এক হাত দিয়ে রেখেছে।
সিয়া;; আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
অর্নীল;; তুমি কোথায় যাবে বলো?
সিয়া;; পার্লার!
অর্নীল;; হুয়াট? সেখানে গিয়ে সং সাজতে হবে না।
সিয়া;; আরে ঘোড়ার আন্ডা আইসক্রিম পার্লার।
অর্নীল;; তো আইদক্রিম বলতে পারো না!
সিয়া;; আপনি বুঝে নিতে পারেন না!
অর্নীল;; হায়রে চাপাবাজ রে।
অর্নীল সিয়াকে আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়েই ধপ করে বসে পরে। তিনটা আইসক্রিম অর্ডার দেয় সিয়ার জন্য আর অর্নীল কোল্ড কফির। আইসক্রিম আসতে দেরি কিন্তু তাতে হানা দিতে না। সিয়া খাচ্ছে আর অর্নীল তার দিকে তাকিয়ে আছে মাঝে মাঝে কোল্ড কফি তে চুমুক দিচ্ছে।
সিয়া;; যদি, যদি আমার পেটে সমস্যা করেছে দেইখেন আমি আপনার কি করি।
অর্নীল;; আন্টি জানে এগুলো?
সিয়া;; কোন গুলো?
অর্নীল;; এই যে আপনি যে এতো সুন্দর করে কলেজ বাঙ্ক করেন।
সিয়া;; তেমন ভাবে জানে না তবে কিছুটা টের পায়। এছাড়াও আম্মু আমাকে কিছুই বলবে না আমি জানি। হিহিহিহিহিহিহিহিহি 😁
অর্নীল;; দাঁতে আইসক্রিম লেগে আছে।
সিয়া;; খেতে দিন আমাকে।
অর্নীল;; আল্লাহ,, যেভাবে পালিয়ে এলে এর থেকে ভালো হতো যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা টা করতে।
সিয়া;; আপনি কি আগে মাস্টার মশাই ছিলেন নাকি। ওই যে টাক মাথা, ভুড়ি, রাগি মুখ। আরে ওইযে গোপাল ভাড়ের পন্ডিত ওরফে মাস্টার মশাই এর মতো??
অর্নীল;; তুমি জানো তুমি খুব বাজে বকো।
সিয়া;; হ ভালা হইছে। বাই দি ভাঙা রাস্তা আজকে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতাছে। মানে এশ কালারের জেকেট পরেছেন তো তাই আরো বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে।
অর্নীল;; আচ্ছা আমি না একটা কথা ভাবছি।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; আমি একদম ক্লিন সেভ করবো মানে এইযে খোচাখোচা দাড়ি গুলো রাখবো না।
সিয়া;; কিসের মতো লাগবো আপনি জানেন। ছোলা মুরগি।
এই বলেই সিয়া হেসে দেয়। এমন ভাবে হাসে যে সিয়ার হাস্যার শব্দে অর্নীল নিজেও হেসে দেয়।
অর্নীল;; আস্তে হাসো কাশি উঠবে।
সিয়া;; হেহেহেহেহে,, এহ আসছে ক্লিন সেভ করবো। ছোলা মুরগি অর্নীল 🤣
অর্নীল;; সিয়াজান ফাইজলামি করতাছিলাম। এমন কিছুই করবো না আমি।
সিয়া;; হুম বুঝলাম।
সিয়া দেখে তার আইসক্রিম গুলো গলছে তা দেখে আবার গপগপ করে খাওয়া শুরু করে দেয়।
অর্নীল;; আরে বাবা আস্তে খাও না, রাক্ষস।
সিয়া;; 😒
অর্নীল;; না না এমনি বলছি জান, খাও তুমি খাও।
সিয়া;; আমি খামু না।
অর্নীল;; আরে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে খাও খাও আচ্ছা দরি আর বলবো না। সো সরি, খাও।
সিয়া;; আমি রাক্ষস, আমি আর খামুই না।
অর্নীল;; আচ্ছা না খাইলা। থ্যাংকস।
এই বলেই অর্নীল সিয়ার সামনে থেকে ছো মেরে আইসক্রিম টা নিয়ে নিলো। নিয়ে নিজেই খাওয়া শুরু করে দিলো। তা দেখে সিয়ার চোখ বড়ো বড়ো।
সিয়া;; আপনি! আপনি নিয়ে নিলেন?
অর্নীল;; ওমা, তুমিই না বললা যে খাবা না। তো আমিই খাই।
সিয়া;; আমার আইসক্রিম ফেরত দেন।
অর্নীল;; দিমু না।
সিয়া;; আমি চইল্লা গেলাম।
সিয়া উঠে সত্যি সত্যি চলে যাবে তখনই অর্নীল পেছন থেকে সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের ওপর ফেলে দেয়। এতে সিয়া সোজা অর্নীলের কোলে গিয়ে বসে পরে।
অর্নীল;; হুম নাও৷
সিয়া;; যেটুকু খেয়েছেন সবটুকু ফেরত দেন।
অর্নীল;; এখন কি আমি আমার পেট কেটে বের করবো নাকি!
সিয়া এবার হো হো করে হেসেই দেয়। অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীল খেয়াল করে যে সিয়ার ঠোঁটের পাশে কিছুটা আইসক্রিম লেগে আছে। তা অর্নীল নিজের হাত দিয়ে মুছে দেয়। সিয়া কয়েক মূহুর্ত অর্নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ টুপ করে একটা চুমু একে দেয় তার গালে।
অর্নীল;; এখন আমি একটা দেই?
সিয়া;; না।
অর্নীল;; না না আমি কারো ঋণ রাখি না। সব পরিশোধ করে দেয়। এখন রিটার্ন তো নিতেই হবে তাই না।
এই বলেই অর্নীল সিয়াকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ঠোঁটের ঠিক পাশেই চুমু দিয়ে দেয়। এভাবে দুই লাভ বার্ড বেশ সময় স্পেন্ড করে এসে পরে। অর্নীল নিজেও আজ তার অফিসে যায় নি। সিয়াকে নিয়েই ছিলো। এখন যাবে অফিসে। তার আগে সিয়াকে তার বাড়ির সামনে ড্রোপ করে দিয়ে আসে৷ দোলা বাগানে গাছপালা সব কাচি দিয়ে কাটছিলো তখন এই দুইজন কে সে দেখে। সিয়া বিদায় জানিয়ে এসে পরে বাড়ির ভেতরে৷ তখনই পাশে তাকিয়ে দেখে দোলা কাজ করছে।
সিয়া;; আম্মু!
দোলা;; হুমমম।
সিয়া;; কি করো?
দোলা;; এইতো আগাছা হয়েছে কত্তোগুলো দেখ। এগুলো একটু ছেটে দেয়। এগুলোর জন্য নতুন ডাল-পাতা গজাচ্ছে না।
সিয়া;; আচ্ছা আমি করে দিচ্ছি?
দোলা;; আরে না এগুলো তুই ধরিস না তো। হাত নষ্ট হবে।
সিয়া;; আরে রাখো, দাও আমাকে।
এই বলেই সিয়া নিজের ব্যাগ টা কোন রকমে সোফার ওপর ছুড়ে দিয়ে এসে তার মায়ের কাছ থেকে কাচি টা নিয়ে নেয়। দোলা কে বাগানে একটা বেতের চেয়ারের ওপর বসিয়ে দেয়। ওরনা টা কোমড়ে বেধেছে সিয়া। সুন্দর লাগছে।
সিয়া কাজ করছে আর তার মা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
দোলা;; অর্নীলের ফোন নাম্বার আছে না তোর কাছে?
সিয়া তার মায়ের দিকে তাকায়। হঠাৎ এই কথা কেনো!?
দোলা;; ওই আছে তর কাছে?
সিয়া;; আব… হ হ্যাঁ আছে।
দোলা;; আমাকে দিস তো।
সিয়া;; কেনো?
দোলা;; ওইটা তোর না জানলেও চলবে।
সিয়া;; হুমম।
দোলা;; আজ কেনো কলেজ পালিয়েছিস বল?
সিয়া;; আব…. হিহিহিহিহি। আমার ভালা আম্মা, আমার সুন্দর আম্মা, আমার লক্ষি, টিয়া, ঘুঘু, শালিক, ময়না।
দোলা;; উশঠা না খাইতে চাইলে ক।
সিয়া;; আরে কলেজে গিয়ে শুনি আজ নাকি সারপ্রাইজ টেস্ট। আমি কি পারি নাকি। মানে বলা নেই কওয়া নেই টেস্ট তার আবার তার নাম দিছে সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজ না ছাই। পরে আমি, শান্তি, অনু, আর সোয়াদ গরু সবগুলা পালিয়েছি। দারুন না মা!
দোলা;; অনেক বেশিই দারুন 🙂। এই না হইলো আমার মাইয়া।
শিউলি;; তো আর মন্দ কি? তুই কি স্কুলে থাকতে কম পালাইছিস নাকি। আহা, প্রতিদিন কার নালিশ শুনতে শুনতে আমি হয়রান ছিলাম।
সিয়া আর দোলা তাকিয়ে দেখে হাতে ট্রে তে করে শরবত নিয়ে আসতে আসতে শিউলি বেগম দোলা কে বলছে এগুলো।
শিউলি;; সিয়া, বোন এদিকে আয়। যে গরম এটা খেয়ে নে তারপর যা করার কর।
সিয়া;; আসছি। মা তুমিও স্কুল পলাইতা৷ ওয়াহহহহহ, আরে আগে বলো নাই কেনো।
দোলা;; আরে মাঝে মাঝে আরকি বেশি না।
শিউলি;; তোর মাছ ঢাকার জন্য শাক কম পরছে রে দোলু।
দোলা-সিয়া সবাই হেসে দেয়।




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here