তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২৪

0
184

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৪
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনির রাগ চরম পর্য়ায়ে পৌঁছে গেছে।রাগে মাথা ফেটে আসছে তার।বাপ্পি এতটা নিচু মন মানসিকতার সে কল্পনাতেও ভাবেনি।হনহনিয়ে হোটেলের রুমে এসে দরজা লাগাতে যেতেই বাপ্পি হাত দিয়ে আটকে ফেলে বললো,’আহা রাগ করছো কেন?’

‘আপনি তো কোনো কথাই বলবেন না আমার সাথে।আপনার ব্যবহার এরকম ছিঃ!চিন্তাধারা এতটা নিচু!থাকেন ঐ মেয়েকে নিয়ে অন্যরুমে।খবরদার যদি আমার সাথে থাকতে আসছেন তো’

বাপ্পি জোর করে রুমে ঢুকে বললো,’আমি তো আলাদা রুম বুক করিনি।’

তটিনি ওমনি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,’তাহলে সব মজা ছিল?’

‘না সেটাও তো বলছিনা।আসলে যে মেয়েটার সাথে থাকার কথা সে এখানে এসে থাকবে।তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে শুধু’

তটিনি আরও রেগে গেলো।এরপর বাপ্পির গলা চেপে ধরে বললো,’চৌধুরী বংশের ছেলের ইজ্জত ধুই দিব আমি।যতই আদরের ছেলে হয়ে থাকেন না কেন আপনি।আমার মেজাজ গরম করলে আমি অপমান করতে ছাড় দিব না।’

বাপ্পি তটিনির কোমড়ে হাত দিয়ে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো,’দিও না ছাড়।আমি চাইনা তুমি আমায় ছাড়ো।’

তটিনি বাপ্পির গলা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’একসাথে দুই নৌকায় পা দিতে চান তাই না?মেরে ফেলবো দুটোকে।দাঁড়ান ফোন করছি আপনার মাকে।ওনার ও জানা উচিত ওনার কলিজার টুকরা ছেলে কত বড় লম্পট! ‘

এই বলে তটিনি নিজের ফোন খুঁজে বাপ্পির মাকে কল লাগায়।তিনি সেসময় ঘুমাচ্ছিলেন কারণ তখন ভোর সাড়ে চারটা বাজে।রিং হলো কিন্তু কেউই ধরলোনা।বাপ্পি মিটমিট করে হাসছে শুধু।
তটিনি ঠাসঠুস করতে করতে ব্যাগপত্র রেখে বিছানায় উঠে বসে।বাপ্পি ফোন নিয়ে এগিয়ে ধরে বলে,”আবার কল দিয়ে দেখতে পারো।বাবা হয়ত উঠে গেছে’

তটিনি ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বসে থাকে।বাপ্পির কি ভয়ভীতি বলে কিছু নেই? বেশরমের মতন নিজেই এগিয়ে দিচ্ছে বিচার দেয়ার জন্য।বিচারটা দিলে ওর কি হতে পারবে সে কি জানেনা!হয়ত ভাবছে তার মা বাবা এইসব শুনেও বলবে আমাদের ছেলে বেস্ট।কিন্তু চান্দু তুমি কি জানো এইসব কথা কোনো বাবা মাই সহ্য করেননা।
ভাবতে ভাবতে তটিনি দেখে বাপ্পির বাবা কল রিসিভ করেছেন।

‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি রে মা?এই সময় কল দিলে।তোমরা ওখানে ঠিকঠাক পৌঁছাইছো তো?’

‘হ্যাঁ।আসলে একটা কথা জানানোর জন্য ফোন দিলাম।আর সেটা হলো আপনার ছেলে কি করতেছে জানেন?সে হোটেলে একটা মেয়ের সাথে আলাদা সময় কাটাতে চাইছে। আমি থাকার পরেও।আপনি ওনাকে বুঝান নাহয় আমি কিন্তু এখান থেকে সোজা বাবার বাড়ি ফিরে যাব’

‘হাহাহা!বাপ্পি তোমার সাথে মশকরা করছে তাও কি বুঝছোনা?এতটাই অবুঝ তুমি?’

‘এটা মোটেও মশকরা নয় বাবা।উনি আমার চোখের সামনে ম্যানেজারকে একটা মেয়ের সন্ধান দিতে বলেছেন’

‘হতে পারে,তবে তার পুরোটাই হয়তবা নাটক ছেলে।বাপ্পি জীবনে এমন কাজ করার মতন ছেলে না।তোমার হয়ত কিছু ভুল হচ্ছে।’

তটিনি রাগ করে ফোন রেখে দিলো।বাপ্পি নিজের গায়ের শার্ট চেঞ্জ করে অন্য একটা পরে আয়নার কাছে ঘেঁষে মাথার চুল ঠিক করছে।

তটিনি গাল ফুলিয়ে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।হলেও হোক মশকরা।মুখে কেন আনবে ওরকম কথা??এটা তো ভাল মানুষেরা বলেনা।
‘উনি কোন সাহসে এই কথা আমার সামনে আরেকজনকে বললেন!এতই যখন আমায় পছন্দ করে, তবে আমায় নিয়েই পড়ে থাকুক না।আবার অন্য মেয়ে আনছে কেন মাঝখানে!
——–
আসিফ ভেরে নামাজ পড়তে উঠে দেখে রিনি ওর বালিশটা তুলে নিয়ে বুকের মধ্যে লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে।সে জোর গলায় রিনিকে বললো নামাজ পড়তে উঠতে।কিন্তু রিনির খবর নেই।সে কানে হাত দিয়ে আরও গভীর ঘুমের দিকে ধাবিত হলো।আসিফ এবার ওর হাত ধরে জোর করে উঠিয়ে বসিয়ে বললো,’নামাজ পড়তে বলছি তোকে,
পড়তেই হবে!আমার সাথে থাকতে হলে আমার কথামতন চলতে হবে।আমি কিছু শুনতে চাইনা আর।উঠে অজু করে নামাজ পড়বি আয়’

রিনি চোখ ডলতে ডলতে বললো,’মাইয়ারা কোন সময় নামাজ হড়ে না?’

‘কোন সময়?’

‘অসিব্বর মতন আবার জিগাইতেছেন!’

রিনি এটা বলে আবার শুয়ে পড়েছে।আসিফ বেকুবের মতন অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকার পর তার বুঝে আসলো আসলে রিনি কেন নামাজ পড়ছেনা।তাই আর ডাকাডাকি না করে নিজেই নামাজ পড়তে চলে গেছে।
এরপর নামাজ পড়ে এসে রুমের লাইটটা নিভিয়ে জানালার পর্দা টেনে রুমটা আরও অন্ধকার করে দিলো সে।তারপর নিজেও রিনির একপাশে শুয়ে পড়ে।রিনি মাথায় কদুর তেল দেয় সবসময়।গন্ধটা খুব তীব্র। রিনির মাথার কাছে শুয়েছে বলে আসিফের সেই তেলের গন্ধে একেবারে মাথা ধরে গেছে।
রিনির মাথায় চাদর টেনে দিয়ে দূরে সরে গেছে আসিফ।রিনি মাথায় হাত দিয়ে চাদর পেয়ে বললো,’তটিনি বুবুর তেল মাতাত দিয়াম এলদরি’
[তটিনি বুবুর তেল মাথায় দিব এখন থেকে]

‘তটিনি কখনও মাথায় তেল দেয়না’

‘তেল না দিলে মরি যাইয়াম মাথা ব্যাথাত’

‘আমি তো মানা করিনি তোকে’

‘আন্নের যে অসুবিধা অয়তাছে আঁই বুঝতাম হারি।আইচ্ছা বিনাগন্ধ আলা তেল দিয়াম এলদরি’

‘এত সেক্রিফাইসের দরকার নাই।মাথায় চাদর দিয়ে ঘুমালেই হবে’

‘কোনোদিন তটিনি বুবুর মাথা হুংগী চাইছেন?’
[কখনও তটিনি বুবুর মাথা শুঁকে দেখেছেন?]

‘এইসব কথা কেন জিগাইতেছস?’

‘আঁর তো জানোন লাইগবো আঁর জামাই কিচ্চে কিচ্চে’

‘আমাকে সন্দেহ করে কিছুই পাবিনা।কারণ আমি কখনও তটিনিকে ছুঁয়েও দেখিনি’

‘ধরি না চাইলেও প্রেম অন্যভাবেও হয়’

‘তুই থামবি?নাকি গিয়ে আবার নোয়াখালী রেখে আসবো?
——
তটিনি বাপ্পির মা,এমন কি বকুল আপুকেও কল দিয়ে বাপ্পির নামে বিচার দিয়েছে কিন্তু তার ফলাফল শূন্য।
তার কথাটাকে কেউ কোনো লাত্তাই দিলো না।উল্টে বলে দিলো বাপ্পির কথামতো চলতে।এরা কি এই ছেলের জন্য এতটাই অন্ধ?এমন করে কেন কথা বলছে সবাই?তটিনি কি এতই তুচ্ছো?

বাপ্পি তটিনির পাশেই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর এদিকে তটিনির ঘুম গায়েব হয়ে গেছে এত চিন্তায়।শেষে সে দরজা খুলে বেরিয়েই গেলো।সোজা একেবারে ম্যানেজারের কেবিনের কাছে।সেখানে এসে ঠাস করে টেবিলে হাত রেখে বললো,’কোন মেয়েকে রেডি করেছেন মিঃ বাপ্পির জন্য?’

ম্যানেজার থতমত খেয়ে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।বাপ্পি টাকা দিয়ে গেছে রাতের সারপ্রাইজের জন্য।এখন সেটা বলে দিলে যদি বাপ্পি চড়াও হয়?সেই ভয়ে কিছু বলতেই পারছেনা।এদিকে তটিনি গলা চেপে ধরেছে কথা বের করার জন্য।

‘কি হলো বলুন!কোন মহারানীকে রেডি করেছেন?’

‘আপনি ভুল ভাবছেন ম্যাডাম।ওটা তো স্যার মজা করে বলছিলেন?’

‘সত্য?’

‘হ্যাঁ।ম্যাম বসুন না। জুস খাবেন?’

‘করলার জুস আছে?পাঠিয়ে দেন।এত স্বাদের মশকরা করার জন্য আপনাদের স্যারকে ওটা খাওয়াবো।জলদি পাঠান!’

এই বলে তটিনি রুমে ফিরে আসে।কিন্তু বিছানায় বাপ্পি ছিল না।
তটিনি হন্য হয়ে ওকে খোঁজা ধরলো।এত কম সময়ে ঘুম ভাঙ্গলো আবার গায়েব ও হলো?আশ্চর্য!
তটিনি সবখানে বাপ্পিকেই খুঁজছিল ঠিক সেসময় বাপ্পি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।
তটিনি ভ্রু কুঁচকে বলে,’কোথায় গেছিলেন?’

‘এত পছন্দ করো?’

‘কে?কাকে?’

‘তুমি,আমাকে’

‘মোটেও না’

‘মোটেও হ্যাঁ।
বেশ দেখছি থার্ড পারসন আসলেই গায়ে আগুন ধরে যায় তোমার।প্রেমে বিরাট রকমের পাগল হলে মানুষ এমনটা করে।আমি খুব গর্বিত এমন একটা বউ পেয়ে।শুরুতে জানতাম ও না তুমি আমাকে নিয়ে এতটা পসেসিভ’

‘থামেন।আর জ্ঞান দিতে হবেনা।আমি মোটেও আপনাকে পছন্দ করিনা ‘

‘তাহলে আমার অন্যদিকে নজর গেলে তোমার এত জ্বলে কেন?’

তটিনি আর কিছু না বলেই সরে যেতে চাইলো কিন্তু আজ আর বাপ্পি তাকে যেতে দেয়নি।পথ আটকে জবাবের উত্তর জানতে চাইলো।
তটিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।জবাবটা তার নিজেরও জানা নাই।এদিকে বাপ্পি জেনেই তারপর ছাড়বে।
তটিনি মাথা নিচু করে আছে।বাপ্পি অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে শেষে হাত ছেড়ে দেয়।উত্তর তটিনি বলেনি কিন্তু বাপ্পি তার উত্তর পেয়ে গেছে।
তটিনি ঠিক কাদা মাটির মতন।তাকে নিজের মতন করে গড়ে তোলা যায়।একেবারেই অসাধ্যের কিছু না।প্রথমদিন যেটা ভেবেছিল সে আসলে সেরকম না।তটিনি আজীবন অতীত নিয়ে পড়ে থাকার মতন মেয়ে না।তার মনে নতুন আশা,ভালবাসা জাগার স্থান এখনও বাকি আছে তাই ভেবে বাপ্পির খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে।সে এটাই তো চেয়েছিল!তটিনিকে নিজের মতন করে তৈরি করে নিতে!তটিনির যে ওর প্রতি বিন্দু পরিমাণ ও অনুভূতি কাজ করে তার হরেক রকমের প্রমাণ সে পেয়েছে।আর প্রমাণ দরকার নেই।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here