তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২৫

0
184

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ ভার্সিটিতে চলে গেছে রিনি ওঠার আগেই।বাড়িতে ছিল তটিনির বাবা,মা,ঐশী।আর কেউ ছিল না।তারা কেউই রিনিকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করেননি।পরের বাড়ির মেয়ে,পরে আবার কি না কি ভেবে বসবে সেই ভেবে তারা রিনির রুমের কাছেও আসেননি। এদিকে গড়াগড়ি করতে করতে রিনি সকাল দশটা বাজে ঘুম থেকে উঠলো।তাকে এ বাড়িতে কেবলই মেহমানের মতন দেখা হচ্ছে।কিন্তু এই বিষয়টা তার ভাল লাগছেনা।সে তো এখানে কদিনের জন্য আসে নাই।আর তাই তাকে মন খারাপ করে সোফার একটা কোণায় গাপটি মেরে বসে থাকতে দেখে তটিনির মা হাতের কাজ ফেলে এসে জানতে চাইলেন কেউ তাকে কিছু বলেছে কিনা।রিনি ওমনি তার হাতটা জোড় করে ধরে বলে উঠলো তাকে যেন ঐশীর মতন করে আদর করা হয়।মানে কাজের বেলায় কাজ করাবে,খাওয়ানোর বেলায় খাওয়া।তাকে যেন মেহমান হিসেবে না ধরা হয়।
রিনির এমন কথায় তটিনির মা বেজায় হাসলেন।হাসবারই কথা।রিনিকে তিনি মেহমান করে আদর করছিলেন যাতে করে সে নিজেকে ছোট না ভাবে।কিন্তু সে দেখি উল্টো ভেবে বসে আছে।
হাসি শেষ করে তিনি রিনির থুতনি টেনে দিয়ে বললেন ‘শুরুতেই কি কেউ খুব আপন হয়ে যায়,যাকে ফরমায়েশ করা যায়?তুমিই বলো,আমি যদি বলি আমার পায়ে মালিশ করে দিতে। তোমার বিষয়টা কেমন লাগবেনা?কিন্তু ঐশী কিংবা তটিনির সেইটা কেমন কেমন লাগবেনা।আবার একই কাজ তারা তোমার মায়ের করবার সময় তাদের কেমন কেমন লাগবে।তাই আপন হতে হলে সময় নিতে হয়।শুরুতেই কেউ খুব কাছের হয়ে যায়না।বুঝলে বোকা মেয়ে?আর তুমি যে আমার বাসার সদস্য হতে চাও তাতে আমি বেশ খুশি হয়েছি।চেষ্টা করবো তোমার সাথে সেরকম করেই ব্যবহার করতে’

ঐশীর মায়ের কথায় রিনির কলিজাটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।সে ঠিক করেছে আজ থেকেই উদ্যোগ শুরু করে দিবে।
——–
বাপ্পি তটিনিকে নিয়ে সকাল সকাল সমুদ্রে চলে এসেছে।এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।আর তা হলো ওর রুমটাকে সাজানোর দায়িত্ব সে ঐ ম্যানেজারের ঘাড়ে চাপিয়ে তারপর এসেছে।তটিনিকে ছোটখাটো একটা সারপ্রাইজ দিবে।সে হয়ত এরপরেও বাপ্পির প্রতি আকৃষ্ট হবেনা তার পরেও কিছুটা হলেও তার মন গলবে।কারণ এখানে আসার পর থেকেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।
তটিনি সমুদ্রে এসে মানুষের আনাগোনা কম দেখে খুশি হয়।খুশি হয়ে বলে এইসময়টাতে এসে ভালই হয়েছে।মানুষ বেশি থাকলে সমুদ্রের আসল স্বাদ নেয়া যায়না।
বাপ্পি তখন জানায় সে ওকে অন্য সাউড দিয়ে এনেছে। এই জায়গায় টুরিস্ট আসেনা বলে যেকোনো সময়তেই এটা ফাঁকা থাকে।
তটিনি ফ্রি বলে তার ফোন থেকে একবার মাকে কল দেয় বাবার খবর নিতে,বাপ্পি ওর জন্য কি যেন আনতে গেছে একটু দূরে।

মায়ের কাছ থেকে বাবার খোঁজ নিয়ে ফোন রাখতে যাবে ওমনি রিনি এসে বলে সে তটিনির সাথে কথা বলবে।রিনি ওখানে আছে শুনে তটিনির বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠলো।সবকিছুর শেষে সে এখনও আসিফকে ভুলতে পারেনি,আসিফের পাশে রিনি মেয়েটাকে মেনে নিতে পারেনি।এখন আবার তার নাম উঠে আসায় বুকের ভেতর কেমন যেন জ্বালা করছে।

‘তটিনি বুবু,ভালা আছেননি?’

‘হুম ভাল।তুমি?’

‘আঁইও ভালা।ফোন কইচ্চি এককান কামে।আর হেইডা অইলো আন্নে কি বাপ্পি ভাইয়ের লগে ভালা আছেননি?’

‘হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?’

‘হুইনতাম চাই’

‘ভাল না থাকলেও আমার তো কোথাও যাবার পথ বাকি নেই।দুজন মানুষকে সুখী করে রাখার জন্য আমি এই পথে এসেছি।এখন আর ভাল খারাপ জেনে লাভ আছে?’

‘তবে এককান কথা কই।বাপ্পি ভাইরে বিয়া না করে আন্নে যদি আসিফ ভাইরে করইতেন আন্নে সুখী হইতেন না।কারণ হেতেনে বড়ই আনরোমান্টিক।প্রেমভালবাসার কিছু জানেনা।অন্যদিকে বাপ্পি ভাই আন্নের যে কেয়ার করে!!আন্নে ভাগ্য করি এইন্না জামাই হাইছেন।আন্নের ভাগ্য ভালা বলেই আন্নে হেইদিন এই মানুষটারে নিজের করে হাই গেছেন।কজনে এমন মানুষ নিজের জীবনে হায়??আঁই তো হাই নো।আঁরে উনি এক্কানাও ভালবাসেনা।আঁর যে কষ্ট হয় সেটা??আন্নে হয়ত অন কইবেন কারণ আসিফ তোমায় ভালাবসেনা।এটা আসল কথানা,ভাল না বাসলেও আঁই তার বউ লাগি।ভেতর তন ভালবাসা দৌড়ায় দৌড়ায় আনের কথা, যতই প্রেম আগে থাকুক না ক্যান।কিন্তু তার কিছুই হইলোনা।বেক বেডা আসলে ভালবাসতে জানেনা!!’

বাপ্পির গলা শুনে তটিনি কল কেটে দেয়।বাপ্পি হাতে প্যাশন ফ্রুট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটা তটিনির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো,’এগুলা নাকি খুব মজা।তাই নিয়ে আসলাম।খেয়ে দেখো’

তটিনি বাপ্পির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,’আচ্ছা যদি আজ আমার জায়গায় অন্য একটা মেয়ে হতো আপনার বউ হয়ে, তখনও কি এমনই করতেন?’

‘তখনও এমন করতাম কিনা জানিনা।তবে তটিনির বেলায় নিশ্চয় করতাম’

‘সব ছেলেরা এমন করে?’

‘সেটা তো জানিনা।কেন বলতো?এমন প্রশ্ন কেন করছো?’

‘কিছুনা।আমি হোটেলে ফিরতে চাই’

‘এখন না।আমরা তো সারাদিন ঘুরবো ফিরবো। এখনও আরও কত জায়গায় যাব।কেন তোমার টায়ার্ড লাগছে?’

‘কোথায় যাব?’

তটিনিকে কেমন অন্যরকম লাগছে বাপ্পির নিজের কাছে।ও তো এত ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কথা বলেনা!কি হলো হঠাৎ করে?
——-
আসিফ ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় এক ফুল বিক্রেতা তাকে জোর করে দুইটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়েছিল যার কারণে সে ফুলগুলো নিয়েই বাড়ি ফেরে।রিনি দরজা খুলে ওর অপেক্ষায় বসে ছিল অনেকক্ষণ ধরে।আসিফ আসছে দেখে তার সাথে ওর হাতে গোলাপ ঝুলতে দেখে রিনি চোখে মুখে তারা দেখছিল।এক দৌড়ে কাছে গিয়ে সে আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’আন্নে আঁরে এত ভালবাসেন😇?’

আসিফ তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে উঠোনের মধ্যিখানে।পাড়া প্রতিবেশীরা সব জানালা খুলে ওদের দেখে মিটমিট করে হাসছে।
আসিফ ওদের সবাইকে হাসিঠাট্টা করতে দেখে রিনিকে বুক থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো,কিন্তু রিনি গোলাপ ফুল দেখে আসিফকে এত শক্ত করে ধরেছে যে তার ইচ্ছা ছাড়া কেউ ছুটাতে পারবেনা।

‘রিনি ছাড় আমাকে।মানুষ হাসছে”

‘আঁই কি হরা বেডারে দইচ্ছিনি।আঁই তো আর জামাইরে ধইচ্ছি’

‘মানুষ কত কি বলছে! ছাড় আমায়।নাহলে খুব মারবো”

রিনি আসিফকে ছেড়ে ওর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বললো,’আন্নে আঁরে এত ভালবালবাসেন যে আঁর লাই গোলাপ আইনছেন।আঁই আরও মাইনসেরে কই আন্নে ভালবাসতে জানেন না।আন্নে তো আরও ভালা করি ভালবাসতে জানেন।উম্মাহ জানু😘’

‘কিহহ!এইসব কে শেখায় তোকে?’

‘ঐশীকে ফোনে বলতে দেখেছি।কারে জানি বলছিল।কেন?এইডাতে খারাপের কি আছে?’
——-
সারাদিন এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালে সানসেট দেখা শেষে করে অবশেষে তারা হোটেলে ফিরলো।বাপ্পি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করছিলো সব ঠিক রেখেছে কিনা।ম্যানেজার জানায় সে সব করে ফেলেছে।তটিনি বাপ্পিকে রেখেই রুমের দিকে চলে গেছে।সে অনেক বেশি ক্লান্ত ছিল বলে আর অপেক্ষা করে নাই।
রুমে এসে আলো জ্বালাতেই তটিনির চোখ কপালে উঠে গেছে।সেখানে রুমটা পুরোপুরি সাজানো থাকলেও সেখানে একটি মেয়েও উপস্থিত ছিল।মেয়েটি তটিনিকে দেখে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে।নড়ছেনা,কোনো কথাও বলছেনা।তটিনি ওর দিকে তাকিয়ে আছে এল দৃষ্টিতে।সেসময় ম্যানেজার আর বাপ্পি আসলো রুমের সাজানো দেখতে।এসে এই অবস্থা দেখে বাপ্পির আগে ম্যানেজারই অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেছে।তটিনি ঐ মেয়ের থেকে চোখ সরিয়ে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’আমি তো জানি এই মেয়েটা এই হোটলেরই স্টাফ।উনি কি ভেবে অজ্ঞান হলেন?’

বাপ্পি পানি এনে ম্যানেজারের মুখে ছিঁটাতে ছিঁটাতে বললো,’উনি ভেবেছেন হয়ত তুমি ভাবছো এই মেয়েটাকেই আমি রাতে থাকার জন্য বলেছি।তাই ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন”

তটিনি রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে বললো,’আমি এত নেগেটিভ মাইন্ডের না’

ম্যানেজারকে আরও দুজন এসে তুলে নিয়ে গেলো।এদিকে বাপ্পির মাথায় হাত চলে গেছে।সে চেয়েছিল সারপ্রাইজ দিবে তটিনিকে।এত এত পরিকল্পনা সব কিছুতে পানি ঢেলে দিবে ওরা তা ও ভাবতেই পারেনি তটিনির মন হয়ত আরও খারাপ হয়ে গেছে।

তটিনি মোমবাতি একটা নিভিয়ে বললো,”লাইট জ্বলার সময় মোমবাতি জ্বলানো আমার পছন্দ না।কারেন্ট না থাকলেই মোমবাতি জ্বালাতে আমার ভাল লাগে কেবল
যাই হোক,সাজানোটা খুব সুন্দর হয়েছে।আই লাইক ইট।আপনার কারণেই হয়ত ওরা এমন করে সাজিয়েছে।আপনাকেও থ্যাংকস’

বাপ্পি ঢোক গিললো তাও গলা ভিজলোনা।তটিনিকে এভাবে চুপচাপ হতে দেখে ওর কোনো কিছুই হজম হচ্ছেনা।আগের তটিনিই ভাল ছিল।
চলবে♥
(“”তোমার নামে””বইটির পাণ্ডুলিপি নিয়ে বেশ ব্যস্ত আছি বলে গল্প দিতে দেরি হয়)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here