তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৩৪

0
167

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৪
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি সেই বিয়ের শুরুর দিকের মতন করে মাঝখানে বালিশ রেখে দেয়াল বানিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে এক পাশে।
বাপ্পি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখে গেলো।তটিনি চোখ বুজতেই বাপ্পি ওর পায়ের কাছে এসে হাত দিয়ে ছুঁলো কাটা জায়গায়।তটিনি টের পায়নি।সে মনে মনে বাপ্পির উপর রাগের সাথে যুদ্ধ করছে।বাপ্পি হাত বুলিয়ে দিয়ে মাথা তুলে তটিনির মুখের দিকে তাকায়।আজ এই এক্সিডেন্টের চোটে তটিনির একটুও সাজগোজ করা হয়নি।শুধু শাড়ীটাই পরা হয়েছিল।তার পরেও যে মানুষটাই নতুন বউ দেখেছে সেই মানুষটা মাশাল্লাহ বলে গেছে।
বাপ্পি নিজের পছন্দের উপর নিজেই আজ ভীষণ সন্তুষ্ট।নিঃশব্দে হাসতে হাসতে উঠে রুমের আলো নিভাতেই দরজার ওপার থেকে শোনা গেলো রিনির কন্ঠ।সে বলছে’দুলাভাই কিছু লাগবে?’

বাপ্পি মুচকি হেসে দরজায় হাত রেখে বলে,’একটা শালি এনে দাও।তোমাদের আপু ঘুমানোর নাটক করছে’

‘আঁই আই?’

বাপ্পি হেসে বলে,’নাহ তুমি বরং আসিফের কাছে যাও।ঘুমালেও বউ তো বউই!’

তটিনি ততক্ষণে উঠে বসে গেছে আবার।বাপ্পির গলা শুনতে পেলেও কি কি বললো সে তার কিছুই সে বোঝেনি।বাপ্পি বিছানার কাছাকাছি আসতেই ড্রিম লাইটের আলোয় তটিনিকে বসে থাকতে দেখে বললো,’একি তুমি ঘুমাওনি?’

‘কার সাথে কথা বলছেন?’

‘রিনি’

তটিনি আর কিছু বললোনা।আবারও শুয়ে পড়ে।বেশ কয়েক মিনিট শেষ হবার পর সে টের পায় বাপ্পি ওর কাছে।শরীর ছোঁয়নি কিন্তু তার শ্বাস প্রশ্বাস সে শুনতে পায়।
তটিনি যেভাবে শুয়েছিল সেভাবেই শুয়ে থেকে বললো,’আমার পারমিশন ছাড়া যদি ছুঁয়েছেন তবে বেশ ভারী খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি’

‘বাব্বাহ!বলতে চাইছি একটি কবিতা।হয়ত আমি কবি নই তবুও প্রেমে পড়ে অনেক মানুষই কবিত্ব রুপ লাভ করে।

বলছি—–
আসিফের কথা ভুলে যেদিন বাপ্পির জন্য মন পুড়বে সেদিন এসো,,,,নিজে ছুঁয়ে দেখো এই আমায়…
এই শরীর,এই প্রাণ তোমারই অপেক্ষায় আজ নিস্তেজ
তুমি ছুঁয়ে ফিরিয়ে দাও শত সতেজতা!’

তটিনি মিটমিট করে হাসছিল।সব রাগ সব ক্ষোভ এক নিমিষে কেমন বদলে গেলো।তার হাসি বাপ্পি দেখলোনা কিন্তু ওর হাত দিয়ে মুখ ধরে হাসার সময় চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ কানে লাগলো ভীষণ।বাপ্পি আন্দাজ করে বলেই ফেললো,’তুমি কি হাসছো?’

‘নাহ তো’
——-
রিনি করিডোর দিয়ে শুধু শুধু হাঁটাচলা করছিল।পরে আসিফ এসে ওর কান ধরে রুমে নিয়ে এসে বলে,’এইসব করছিস?’

‘তো কিত্তাম?’

‘নাচ একটু!’

রিনি দাঁত কেলিয়ে গায়ের ওড়না খুলে কোমড়ে পেঁচিয়ে আসিফকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে শুরু করলো একটি হিন্দি গানের সঙ্গে নাচা।তার সাথে ওর চিৎকার করে গান গাওয়া ফ্রি!

শেষে আসিফ বাধ্য হয়ে রিনির মুখটা চেপে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,”হইছে।নাচ দেখার শখ আমার আজীবনের জন্য গুচে গেছে।ক্ষেমা দে’

রিনি আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে ওর মাথার চুলগুলো নাড়িয়ে দিয়ে বললো,’আমারে কেমন লাগে?’

‘অসহ্য’

‘আর!’

‘বিরক্তিকর ‘

‘আর?’

‘ইমম্যাচিউর’

‘আর?’

‘আর কিছুনা।’

‘কিছুনা?’

আসিফ পিছোচ্ছে আর রিনি এগিয়ে চলছে কথাগুলো বলতে বলতে।আসিফ যেতে যেতে খাটের শেষ প্রান্তে এসে স্থির হতেই রিনি সরে গেলো।তারপর বালিশ কোলে ধরে বললো,’আম্মা কইছে বেডা মানুষরে জোর না করতে’

আসিফ ব্রু কুঁচকে দম ফেলে সহজভাবে বসে বললো,’কেন?’

রিনি চট করে আসিফের গায়ের দিকে তেড়ে এসে বললো,’জোর কইরলে হেতারা ডরাই যায়।এর হরে আজীবন বউরে ডরায়!’

কথাটা রিনি ফিসফিস করে বললো।কেমন যেন ভূতুড়ে লাগলো।তখন রিনি আসিফের ঠোঁটজোড়া মনযোগ দিয়ে দেখছে দেখে আসিফ ঠোঁট গুটিয়ে বললো,’ওমন করে ছেলেদের ঠোঁট দেখা কে শিখিয়েছে তোকে?’

‘এগুলা শেখানো লাগেনা।এরকম টস…….!!’

‘এই চুপ!কি অশ্লীল! ছিঃ!!’

আসিফ বিছানা থেকে উঠে বালিশ টান দিতেই রিনি কপাল কুঁচকে বলে,’এগিন মাইয়ারা কয়!হোলারা কইলে খাডে?’
[এগুলা মেয়েরা বলে,ছেলেরা বললে মানায়?]
———
বাপ্পি ঘুমাচ্ছে।তটিনি নিজে নিজে বিছানা থেকে নামলো।এরপর ধীরে ধীরে পা রেখে রুম থেকে বের হয় সে।সে ভেবেছিল সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু দরজা খুলতেই সে দেখে সোফার রুমের সবাই টিভি দেখা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এখন।তটিনি এটার জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিল না।

বাবা চশমা ঠিক করে বললেন,’কি রে মা?কিছু লাগবে?’

‘না কিছুনা’

‘তবে বের হলি যে?বাপ্পি কোথায়?’

‘ঘুমায়’

বাবা উঠে এসে তটিনির হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালেন তারপর বললেন ভাল না লাগলে টিভি দেখতে।তটিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার বাবার দিকে চেয়ে বললো,’ঘুমাবেনা?’

‘আমি আজ ঘুমের ঔষুধ খাইনি।খাব!না খেলে ঘুম আসবেনা।চেয়েছিলাম না খেয়ে ঘুমাতে।কিন্তু দেখ!ঘুম আসতেছেই না’

তটিনি কিছু না বলে বাবার ঘাড়ে মাথা রাখে।বাবা ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,’জানি রে মা!কাউকে অল্প কদিনে এক্সেপ্ট করা কঠিন।কিন্তু কি জানিস।যা হয় ভালর জন্যই হয়।তুই হয়ত সেদিন বুঝিস নাই!কিন্তু একদিন ঠিক বুঝবি!’
——
বাবা চলে যাবার পর তটিনি আর রুমে ফেরেনি।সোফায় পা তুলে লম্বা হয়ে শুয়ে মাথার নিচে কুশন দিয়ে শুয়ে শুয়ে টিভির চ্যানেল বদলাচ্ছিল।হঠাৎ মুখোর সামনে এক বাটি পপকর্ণ দেখে রিমোট রেখে মাথা তুলে তাকায় সে।বাপ্পি ওর দিকে বাটিটা ধরে রেখেছে।দশ মিনিট ধরে রান্নাঘরে কিছু একটার আওয়াজ সে পেয়েছিল বৈকি।ওটা যে বাপ্পি ছিল সেটা ও জানতোনা।
তটিনি পপকর্ণের বাটি টা হাতে নিতেই বাপ্পি চলে যাচ্ছিল তখন সে ওকে একটু বসতে বলে।বাপ্পি যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল।চট করে সেও বসে গেলো তটিনির পাশের সোফায়।তটিনি বাটিটার দিকে তাকিয়ে ছিল,তারপর কৌতূহল নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি করলেন?’

‘নাহ আমার জমজ ভাই করছে।’

‘খাবেন আমার সাথে?’

‘আমি বাজারের গুলা খাই।নিজের বানানো টাতে মজা পাইনা।তাও তুমি খেয়ে দেখো”
——–
রিনি আজ খুব একটা অন্যরকম মুডে আছে।বিছানার সব জায়গা দখল করে ত্যাড়াব্যাঁকা হয়ে শুয়ে শুয়ে চোখ দিয়ে আসিফকে চিবিয়ে খাচ্ছে।
আসিফ এতক্ষণ পড়াতে মন দেয়ার চেষ্টা করলেও এখন কিছুতেই পারছেনা আর পড়তে।একটু ঘুমানো জরুরি।কিন্তু রিনি এরকম চিংড়ি মাছের মতন বেঁকে আছে কেন!

‘এই সর!আমি ঘুমাবো’

‘ঘুমান না!মানা কইচ্ছি?’

‘তুই এরকম সাপের মতন নড়ছিস কেন?সোজা হয়ে শুতে পারিস না?তোর এই দৃশ্য দেখে আমার ঘুম পালিয়ে যাচ্ছে’

রিনি সোজা হয়ে বসে ওকে এইবার আসতে বললো।আসিফ ধীরে ধীরে বিছানায় বসে বালিশে মাথা রেখে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে।
চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করছে।রিনি কিছু করছেনা কেন?আসিফ তাই ভাবছিল।প্রথমে তো ভেবেছিল শোয়ার পরই রিনি ঝাপটে ধরবে।কিন্তু তা না করে সে এত শীতল কেন?
আসিফ ভয়ার্ত চোখে পেছনে মাথা ঘুরায়।ঘুরাতেই দেখে রিনি আগে থেকে দাঁত কেলিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘তুই ঘুমাসনি?’

‘আন্নে যেরকম আঁর ডরে ঘুমান না।তেমনই আঁই ও আন্নেরে ডর লাগান বিদে ঘুমাইতন ন’

‘কককককককি করবি তুই?’

রিনি ঠাস করে আসিফের মাথায় হাত রেখে বলে,’ঘুম পাড়াই দিয়াম’
——
বাপ্পি একটা শো দেখছিল মনযোগ দিয়ে। তটিনি গপাগপ পপকর্ণ চিবোতে চিবোতে বাপ্পিকেই দেখছিল।বাপ্পি ওর সাথে মিলিয়ে আজ গোলাপি পাঞ্জাবি পরেছে।এত কিছুর মাঝে সল এটা খেয়াল করেনি।এখন নজরে পড়ায় দেখছে মনযোগ দিয়ে।
বাপ্পি বুঝতে পারছিল তটিনি তাকে দেখছে তাই সে টিভিতে চোখ রেখে বললো,’আসিফ কি পরেছিল জানো?’

তটিনি ঘোরের মাঝে ছিল।সে উত্তর দিলো,’জানিনা’

‘আর বাপ্পি?’

‘গোলাপি পাঞ্জাবি,সোনালী লেইস!’

বাপ্পি মুচকি হেসে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে তটিনির দিকে তাকাতেই তটিনির হাত কেঁপে উঠলো সাথে সাথে।নিজেকে ঠিক করে সে হন্তদন্ত হয়ে টিভির দিকে তাকায়।বাপ্পি উঠে যেতে যেতে বলে গেলো,’ভাঙবে তবু মচকাবেনা!’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here