তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৩৫

0
176

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
‘তটিনি একটা কথা শুনবে?’

‘কি?’

‘আমার দিকে তাকাও’

তটিনি টিভিটা বন্ধ করে তাকালো।বাপ্পি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,’You fell in love with me’

এটা বলেই সে নিচু হয়ে তটিনিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে চলে আসে।তটিনি কেবল হা করে তাকিয়ে ছিল বাপ্পির দিকে।ওকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বাপ্পি আবার বললো,’জোর করছিনা!’

এই বলে সে পাশেই শুয়ে পড়ে।তটিনি এবারও হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি কি বললো!আসলেই কি তাই।এত জলদি মানুষ প্রেমে পড়ে?
হঠাৎই বাপ্পির উপুড় হয়ে থাকা পিঠে মাথা রেখে তটিনি চুপ করে নিজের রুমের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।সেখানে ওর হাই স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে তোলা কিছু ছবি ঝোলানো।বাপ্পি এক হাত দিয়ে তটিনির খোলা চুলগুলা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল তখন।দুজনেই চুপ।এরপর হঠাৎ বাপ্পি প্রশ্ন করে তটিনির শরীর ঠিক আছে কিনা।তটিনি ছোট্ট করে জবাব দেয় সে ভাল আছে।
———-
আসিফের আজ অনেক কাজ হয়েছে বলে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই তার ঘুম এসে যায়।কিন্তু রিনি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।কি মায়া এই লোকটার মুখে। স্ত্রী হয়েও কতগুলো বছর সে এই মায়ায় ধারের কাছেও আসতে পারেনি।
আসিফের কপালে হাত রেখে ওর চুলে হাত বুলিয়ে রিনি মুচকি হাসছিল হঠাৎ করে আসিফ চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিনি থতমত খেয়ে একটু সরতে নিতেই আসিফ ওর হাত ধরে বলে,’আমাকে খুব ভালবাসিস তাই না?’

রিনি কিছু বলেনা।শুধু তাকিয়ে থাকে।আসিফ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলে,’তটিনিও বাসতো’

‘আঁর আর বুবুর তফাৎ কইতে হাইরবেন?’
[আমার আর বুবুর তফাৎ বলতে পারবেন?’]

‘পারবো।তটিনি আমায় ভালবেসে পায়নি,আর তুই পেয়েছিস।’

‘আর আন্নে কারে ভালবাসেন?’

আসিফ রিনির চোখের দিকে চেয়ে থাকে।এর বেশি কিছুই বলেনা।ধীরে হাতটা ছেড়ে দেয় ওর। রিনি তার উত্তর পেয়ে যায়।সেও শুয়ে পড়ে।এতক্ষণ যে ঘুমকে সে আটকে রেখেছিল সেই ঘুমটাকে খুব যত্নে নিয়ে আসলো চোখে।তলিয়ে গেলো গভীরের চেয়ে গভীরতর ঘুমে।
——–
বাপ্পির পিঠের উপর নিজেকে সবচাইতে বেশি উষ্ণতায় অনুভব করছিল তটিনি। এর আগে এমনটা হয়নি,সে করেও দেখেনি।বাপ্পির পিঠের উপর থাকতে থাকতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে দুজনের একত্রে ঘুম ভাঙ্গে ঐশীর গলা শুনে।
সে দরজায় আস্তে আস্তে বাড়ি দিতে দিতে বলছে দরজা খোলার জন্য।তটিনি চোখ ডলতে ডলতে বাপ্পির পিঠ থেকে সরে যায়।বাপ্পি উঠে পিঠে হাত দিয়ে বলে,’তোমায় দিয়ে তেল মালিশ করাবো।পিঠ শেষ আমার!৫৪কেজির একটা মানুষ পিঠের উপর শুয়ে থাকা গোটা একটা রাত।এটা কি ছোট কিছু?’

তটিনি চুপটি করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।বাপ্পি পিঠ চাপতে চাপতে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে ঐশী হাতে নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

‘কি গো শালি!কি খবর?সকাল সকাল তোমার মুখ দেখলাম।দিন তো ফাটাফাটি যাবে তবে’

ঐশী লজ্জায় লাল হয়ো ট্রেটা বাপ্পির হাতে দিয়ে দৌড়ে পালালো।বাপ্পি ট্রে এনে টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেছো।তটিনি ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে ছিল বসে।রিনি মাথা বের করে রুমের ভেতর তটিনিকে দেখছিল,বিছানা দেখছিল,বাসর ঘরের হাল দেখছিল।সব দেখি যেভাবে সাজিয়েছিল সেভাবেই আছে।তবে কি তটিনি বুবু!!
তটিনি মাথা ঘোরাতেই রিনিকে দেখে ফেলে।তাই ওকে ভেতরে আসতে বলে।রিনি ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে ভয়ে আসে সেখানে।তটিনি জানতে চায় সে কিছু বলবে কিনা

‘না এক্কানা চাইতেছিলাম যে হুলগুন কত ভালা আন্নে গো লাই এবো তাজা রই গেছে।
[না একটু দেখছিলাম ফুলগুলো কত ভাল।তোমাদের জন্য এখনও তাজা রয়ে গেলো’]

তটিনি বুঝলো আবার বুঝলোনা।রিনির কথায় কোনো জবাব নেই বলে সে তাকিয়ে থাকলো।রিনি বিছানায় উঠে বসে পড়েছে তটিনির।তারপর তটিনির গায়ে শুঁকে বললো,’কোন পারফিউম দেন?’

তটিনি কিছু বলবে তখনই সেখানে আসিফ আসে।সে করিডোর দিয়ে যাবার পথে রিনিকে দেখতে পায় এখানে।সে ঠিক বুঝে গেছে রিনি তটিনিকে বিরক্ত করতে এসেছে।

‘এই তুই এখানে কি করিস?’

‘গল্প করি’

‘গল্প করতে হবেনা আর’

এটা বলে আসিফ রিনির হাত ধরে টান দিয়ে নামিয়ে নিলো।তটিনি তখন বললো,’থাক না।ওর কথা বলতে ইচ্ছা করেছে যখন থাকুক’

‘কিসের থাকুক!তুই ওরে চিনিস না।সুবিধাবাদি একটা!বাসর ঘরের পরেরদিন কেউ ঐ রুমে ঢোকে? কমন সেন্স নাই ওর!’

আসিফ বকতে বকতে রিনির কান টেনে রুম থেকে নিয়ে চলে গেলো।সেসময় বাপ্পি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে বললো,’কেউ এসেছিল?’

‘হ্যাঁ।’

‘কি বলে গেলো?’

‘বললো আমাদের ভাগ্য অনেক।যার কারণে বাসর ঘরের ফুল আমাদের জন্য এখনও তাজা রয়ে গেছে’

বাপ্পি অবাক হয়ে জানতে চাইলো এই কঠিন কথাটা কে বলেছে।তটিনি রিনির কথা বলে।বাপ্পির বিশ্বাস হয়না এই কথা রিনির মতন ছোট একটা মেয়ে বলবে!
—–
রিনিকে রুমে এনে তারপর কান ছাড়ে আসিফ।রিনি কান ঘঁষতে ঘঁষতে বলে, ‘এটা ভালা করেন ন!!আঁই কিচ্চি🐸?’

‘তুই কিচ্ছস?’

আসিফ রিনিকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে।রিনি যা যা বলতে চেয়েছিল তার সব ভুলে বসে আছে।আসিফের এমন আচরণে সে হতভম্ব’

আসিফ ওর গাল টিপে ধরে বলে,’তটিনিকে জ্বালাবি না। এমনিতেও ও শরীর, মন দুটোই ভাল নেই’

‘তাই বলে গাল টিবি দিবেন😼?’

এই কথায় আসিফ রিনির গাল ছেড়ে দেয়।এরপর ওর কান আবারও টেনে ধরে বলে,’ আজকে তটিনি বাপ্পিকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকবে।তুই যদি ওদের ধারের কাছেও গেছিস তো এই কান ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দিবো’
——-
তটিনি একটা গোলাপ হাতে নাড়িয়ে দেখছিল।গোলাপটা দেখে আসলেই তাজা মনে হচ্ছে।তাজা দেখে কানে গুজে তটিনি নিজের পা কাছে এনে দেখে ক্ষত টার কি অবস্থা।
বাপ্পি একটা পাউরুটি মুখে দিয়ে তখন কাছে এসে তটিনিকে কোলে নিতে চায় সেসময় তটিনি পিছিয়ে বলে,’আমি একাই পারবো।আপনি খান’

বাপ্পি আরও একবার জোর করে কিন্তু তটিনি এবারও মানা করে দেয়।তাই বাপ্পি আর কিছু না বলে খেতে বসে।
তটিনি নিজে নিজে পায়ে হেঁটে চলে গেলো।বাপ্পির কোলে উঠলে কেমন একটা ভয় কাজ করে মনের ভেতর।মনে হয় এই বুঝি সে লোকটার প্রেমে পড়ে যাবে।

তটিনির বাবা সেইসময় রুমে আসে।বাপ্পি ওনাকে দেখে খাওয়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো।

‘বসো বাবা।ব্যস্ত হইওনা’

তটিনির বাবা বাপ্পির পাশের চেয়ারে বসলেন এরপর ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বললেন,’তটিনি খুব জেদী তাইনা?’

‘সবাই একই কথা কেন বলে?’

‘কারণ সে জেদি’

‘আমার তো মনে হয়না।সে নরম মনের মানুষ।অল্পতেই গলে যায়’

‘যদি তাই হয় তবে সে তোমায় ভালবেসে ফেলেছে।নাহলে তটিনি গলে যাওয়ার মতন মেয়ে না।সর্বদা নিজের কথাতে অটল থাকে সে।তবে ভাল। হাসিল করতে পারলে তোমার আর কিছু করতে হবেনা।চোখের সামনে মনের মতন একটা মেয়েকে দেখবে।প্রশংসা করছিনা।সব খারাপ তো একটা মানুষের মধ্যে থাকেনা।’

বাপ্পি তটিনির বাবার হাত ধরে বলে,’তটিনি যেরকম সেরকম টাই দেখে আমি বিয়েটা করেছি।আমি জানি ওর অতীত বর্তমান সব!আপনি চিন্তা করবেন না।তাকে ভাল রাখার সব চেষ্টা আমি করবো’

তটিনির বাবার চোখ ছলছল করে ওঠে।মুচকি হেসে বাপ্পির মাথায় হাত রেখে দোয়া করে উঠে চলে যান।
বাপ্পি তখন দেয়ালে ঝোলানো তটিনির একটি ছবির দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে মুখে আরেকটা পাউরুটি দিয়ে পেছনে তাকালো।তটিনি সবেমাত্র বেরিয়েছে ওয়াশরুম থেকে।ভেজা মুখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।আর সে এদিক ওদিকে তোয়ালে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here